রাবার ড্যাম ব্রেক ও বাংলাদেশ প্রসংগ

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: শনি, ২৪/০৭/২০১০ - ১:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.

সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এরিজোনা স্টেটের টেম্পিতে রাবার ড্যাম ব্রেক হয়েছে। একটি কনফারেন্সে যোগদানের জন্য ২০০৯ এর জানুয়ারীতে ফিনিক্স গিয়েছিলাম, তখন সৌভাগ্য হয়েছিল টেম্পি টাওন লেকের এই রাবার ড্যামটি দেখবার। সল্ট রিভারের যে অংশটি টেম্পিতে এরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তার পূর্ব ও পশ্চিম দিকে রাবারের বাঁধ দিয়ে  কৃত্রিম ভাবে এই লেক তৈরী করা হয়েছ। লেকের দুই দিকেই রয়েছে রাবারের তৈরী চারটি করে ব্লাডার যার প্রত্যেকটির দৈর্ঘ্য ২৪০ ফুট। এই ব্লাডারগুলোকে কনক্রীটের তৈরী ভিত্তির উপর স্থাপন করে বাতাস দিয়ে ফুলানো হয় ফলে তা উঁচু হয়ে বাঁধের মত আকার ধারণ করে। যখন উজানে বেশি পানি আসে তখন বাতাস বের করে দিয়ে ড্যামের উচ্চতা কমানো হয় ফলে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়, আবার প্রয়োজনে বাতাস ভরে ড্যামের উচ্চতা বাড়ানো হয়।

 

ছবিঃ টেম্পি লেকের পশ্চিম অংশের বাঁধ (২০০৯ এর জানুয়ারিতে তোলা)

লেকের পশ্চিম পারের চারটি ব্লাডারের একটি গত ২০ জুলাই স্থানীয় সময় রাত ১০ টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। মূহুর্তের মধ্যেই প্রায় এক বিলিয়ন গ্যালন ধারন ক্ষমতা বিশিষ্ট লেকটি থেকে সেকেন্ডে ৪০,০০০ ঘনফুট হারে পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হতে থাকে। ভাটিতে মূলত সল্ট রিভারটি শুষ্ক থাকে বলে এই ড্যাম ব্রেকের কারনে তেমন কোন হতাহত বা ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, কিন্তু বাঁধ মেরামত, নতুন করে লেক ভরাট করা, লেকের মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নেহায়েত কম নয়। টেম্পির এর রাবার ড্যামের ব্লাডার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছিল জাপানের ব্রিজস্টোন কর্পোরেশন। তথ্যমতে এই ব্লাডারগুলোর আয়ুষ্কাল ৩০ বছর, সেক্ষেত্রে ১৯৯৯ সালে নির্মিত এই ড্যামের মাত্র ১১ বছরেই ফেটে যাওয়া দূঃখজনক।

ছবিঃ টেম্পি লেকের পশ্চিম অংশের বাঁধ ( ব্রেকের পরে , ছবিসুত্র)

 

 ভিডিওঃ টেম্পি টাওন লেক ড্যাম ব্রেক ( সিএনএন ভিডিও)

 

২.

এবারে যে প্রসংগে উপরের আলোচনার অবতারণা তাতে ফেরত আসি। বিভিন্ন কারনে রাবার ড্যাম ইদানিং বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। কারনগুলি হচ্ছে [১]

  • স্বল্প খরচ ( গতানুগতিক বাঁধ নির্মানের চেয়ে অন্তত শতকরা ৩০ ভাগ খরচ কম)
  • সহজ নিয়ন্ত্রন ও রক্ষণাবেক্ষণ
  • তুলনামূলক ভাবে স্বল্প নির্মান সময়
  • ভূমিকম্পের প্রভাব কম
  • বন্যা সময়ে বাঁধের উচ্চতা কমিয়ে বাঁধা নামিয়ে আনা

বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৯৯৫ সালে প্রথম কক্সবাজারের বাকখালী নদীতে পরীক্ষামূলক ভাবে রাবার ড্যাম প্রকল্প বাস্তবায়ন করে।এর পর থেকে বাংলাদেশে অনেক রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য মতে রাবার ড্যাম  বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে বেশ অবদান রাখছে [২]

 

কিন্তু সম্প্রতি টেম্পিতে রাবার ড্যাম বিস্ফোরণের পর বাংলাদেশে এই ড্যামগুলোর গুনগত মান ও নিরাপত্তা নিয়ে আরো পর্যালোচনা করা উচিৎ। কারন বাংলাদেশে এরকম একটি ড্যাম ব্রেক হলে তার প্রভাব আরো অনেক বেশি হবে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও প্রবল হবে। হঠাৎ ড্যাম ব্রেক বিপুল এলাকা প্লাবিত করতে পারে, বিনষ্ট করতে পারে আবাদী জমি ও ফসলের। বুয়েটে শিক্ষকতা করার সময়কালে সম্ভবত ২০০৬ এর দিকে একবার ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষাসফরে নিয়ে গিয়েছিলাম নারায়ণগঞ্জের ব্রহ্মপুত্র নদে নির্মিত একটি রাবার ড্যাম প্রকল্পে। যতদূর মনে পড়ে তেমন কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা চোখে পড়েনি। কিন্তু টেম্পির এই উদাহরণ বাংলাদেশে রাবার ড্যামের রক্ষণাবেক্ষন এ উপর গুরুত্ত্বারোপের প্রয়োজনীয়তাকে আরো বাড়িয়ে দেবে সেই আশা ব্যক্ত করি।

 

 

ছবিঃ ব্রহ্মপুত্র নদ রাবার ড্যাম,নারায়ণগঞ্জ ( ২০০৬ সালে তোলা, ছবির জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ সাজিদ জামান)

 

তথ্যসুত্রঃ

[১] Rubber Dams in Bangladesh Harness Surface Water for Farmers to Irrigate at Lesser Cost

[২] PERFORMANCE EVALUATION OF RUBBER DAM PROJECTS OF BANGLADESH IN IRRIGATION DEVELOPMENT

কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ গাজী সৌরভ ইসলাম


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই টেম্পি লেকে আমরা আড্ডা দিতে যাইতাম। ড্যামের পাশে একটা পার্ক আছে। সেখানে রাত বিরাইতে ঘুরতে যাইতাম। পিকনিক ও করছি। পার্কের পাশে একটা নতুন ভবন করতে দেখে আসছি। নিশ্চয়ই আরো জমজমাট হইছে জায়গাটা!

আই মিস অ্যরিজোনা! মন খারাপ(

অফ-টপিক: আবির সেদিন আপনার কথা বলতেছিল। হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সচল জাহিদ এর ছবি

আমিও যে কয়েকদিন ছিলাম বেশ কয়েকবার গিয়েছি লেকটির ধারে। রাতের বেলা অপূর্ব লাগে বিশেষ করে পূর্বদিকে ব্রিজের আলোতে।

অফটপিকঃ ফিনিক্সে যেয়ে প্রতিদিন আবির আর সৌরভদের সাথে আড্ডা দিতাম। গাইজার ভাই, সুতপা ওদের সাথেও দেখা হয়েছে। তোমাদের ব্যান্ড আর নাটকের অনেক ছবি দেখেছি আবিরের কাছে।।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

দ্রোহী এর ছবি

বিস্ফোরণের মূল কারণ কী? ব্লাডারের ভেতর বাতাসের অনিয়ন্ত্রিত চাপের কারণে কি বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে?


কি মাঝি, ডরাইলা?

সচল জাহিদ এর ছবি

এখনো কারণ জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে প্রচন্ড তাপ আর চাপে আর সেই সাথে সময়ের সাথে সাথে ব্লাডারের রাবারের আস্তরণ ফেটে গিয়েছে।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

সন্ন্যাসী [অতিথি] এর ছবি

টেম্পি লেকের এই একটি ড্যাম ব্রেকের মতো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটলে ক্ষতি হবে তুলনামুলক ভাবে হাজারগুন বেশী। সেচের জন্য শুষ্ক মৌসুমে জল ধরে রাখার ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে রাবার ড্যাম স্হাপন খরচ কম হওয়ার কারনে এই মূহুর্তে এটি বাংলাদেশের সরকারী বেসরকারী মহলে বিপুল জনপ্রিয়।
কিন্তু সেমস্যা যেটি সবচেয়ে বেশী বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় সেটি হল উজানের জল ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি না করেই এই ড্যামগুলো স্থাপন করা হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কথা নাই বা বললাম। ফলে ড্যাম চালুর কিছুদিনের মধ্যেই এটি উজানের জনগনের প্রতিরোধের মূখে পড়ে। জলমগ্ন দেশ হিসাবে অন্যান্য ড্যামের চেয়ে রাবার ড্যামের উপযোগীতা বাংলাদেশে বেশী। তবে এর জন্য যে সুষ্ট ব্যবস্থাপনা থাকা, প্রয়োজনীয় ডাটা ব্যাংক থাকা দরকার এই মূহুর্তে সেটা তৈরী করার কোন লক্ষণও সংশ্লিষ্টদের নেই।

সচল জাহিদ এর ছবি

চমৎকার একটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন রাবার ড্যামের সেইফটি নিয়ে সেজন্য ধন্যবাদ রইল। যেকোন বাঁধই আসলে একদিকের মানুষের রোষানলে পড়ে। তবে সেক্ষেত্রে রাবার ড্যামের সুবিধে হচ্ছে এটার উচ্চতা ইচ্ছামত পরিবর্তন করে পানির স্তর সহজেই পরিবর্তন করা যায়। তার পরও ড্যামের সেইফটি নিয়ে এলজিইডির আরো সাবধানী হওয়া উচিৎ।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।