তিস্তা চুক্তি ও তৃষ্ণার্ত বাংলাদেশ

সচল জাহিদ এর ছবি
লিখেছেন সচল জাহিদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৪/১০/২০১০ - ৩:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তিস্তা চুক্তি নিয়ে আমার এই লেখাটি ১৩ অক্টোবর ২০১০ তারিখে দৈনিক কালের কন্ঠের রাজকূট ফিচার ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ রচনা হিসেবে প্রকাশিত হয়। সচলায়তনের নীতিমালা মেনে লেখাটিকে প্রথম পাতায় প্রকাশ করিনি তবে পরবর্তীতে তথ্যসুত্র হিসেবে কাজে লাগতে পারে বলে এটিকে নিজের ব্লগে রেখে দিলাম।

গঙ্গার পরে তিস্তা, বাংলাদেশের আরেকটি বড় নদীর পানি নিয়ে শুরু হয়েছে ভারতের একতরফা উদ্যোগ। সভা-সমাবেশ-বৈঠক আর প্রেস কনফারেন্সে মিষ্টি কথার জালে ভারত আড়াল করছে বাংলাদেশের মূল সমস্যা, আর তিস্তা প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে নিজেদের মতো। যৌথ নদী নিয়ে একতরফা হচ্ছে ভারতের সব উদ্যোগ, বাংলাদেশের বাদ-প্রতিবাদ বন্দি রয়ে যাচ্ছে লালফিতার ফাইলে। 'তিস্তা প্রকল্পে বাংলাদেশের অবস্থান, সম্ভাব্য সমাধান' এসব নিয়েই রাজকূটের এবারের প্রচ্ছদ রচনাটি লিখেছেন বুয়েটের পানি সম্পদ কৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জাহিদুল ইসলাম।

---------------------

 

বাংলাদেশে নদীভিত্তিক সেচ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প একটি সফল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান অধিদপ্তরের ২০০১ সালের তথ্যমতে, এই দেশের মোট জনসংখ্যার ৮.৫ শতাংশের আবাসস্থল তিস্তা অববাহিকায় রয়েছে মোট আবাদি জমির শতকরা ১৪ ভাগ। এই অববাহিকার শতকরা ৬৩ ভাগ আবাদি জমি সেচের আওতাধীন, যেখানে দেশের গড় সেচ-আবাদি জমির শতকরা হার ৪২। সেচের পানির প্রাপ্যতা এই অঞ্চলে বছরে দুটি ফসল ঘরে তোলার সুযোগ করে দিয়েছিল। কৃষিতে উন্নতি এই অঞ্চলের কৃষক-শ্রমিকের জীবনযাত্রার মানে প্রভাব ফেলেছিল। এই প্রকল্প এলাকায় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা প্রায় ২৫ ভাগ। কিন্তু তিস্তায় পানির প্রবাহ ধীরে ধীরে হ্রাস পাওয়ায় এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উত্তরবঙ্গের মানুষ। শুরুতে পরিকল্পনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের দুটি ফেইজ ছিল, যার মধ্যে ফেইজ-১ সম্পন্ন হয়েছে; যা মূলত রংপুর ও নীলফামারী জেলায় সেচের সুবিধা দিচ্ছে। দ্বিতীয় ফেইজের পরিকল্পনা ছিল দিনাজপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও জয়পুরহাটকে অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু ভারতের গজলডোবায় ব্যারাজ নির্মাণের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়াতে সেই পরিকল্পনা এখন হুমকির সম্মুখীন। এই মুহূর্তে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি তাই বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

 


পানি বণ্টন আলোচনার ইতিহাসঃ

১৯৭২ সালে আন্তসীমান্ত নদীগুলোর উন্নয়নের দিককে সামনে রেখে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) প্রতিষ্ঠিত হয়োর পর থেকেই তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। ১৯৮৩ সালে তিস্তা নদীর ভারতীয় অংশে পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা ও বাংলাদেশ অংশে লালমনিরহাটের দোয়ানীতে প্রায় একই সময় গ্রীষ্মকালীন সেচের জন্য ব্যারাজ নির্মাণ কাজ শুরু হলে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আলোচনা অধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচিত হতে থাকে। ব্যারাজ নির্মাণ করলে যেহেতু দুই দেশই নদী থেকে পানি প্রত্যাহার করবে সে ক্ষেত্রে এই আন্তসীমান্ত নদীর অভিন্ন পানি বণ্টন অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়ায় মূলত ভাটিতে থাকা বাংলাদেশের কাছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে ১৯৮৩ সালে যৌথ নদী কমিশনের ২৫তম বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারত তিস্তার পানি বণ্টনের জন্য একটি এডহক চুক্তি করার বিষয়ে সম্মত হয়েছিল বলে জানা যায়। সে সময় তিস্তার মোট প্রবাহের ২৫ শতাংশ অবণ্টনকৃত রেখে বাকি ৭৫ শতাংশ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বণ্টন করার প্রস্তাব করা হয়েছিল, যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৩৬ শতাংশ আর ভারতের ছিল ৩৯ শতাংশ। তবে এই বণ্টন কোথায় এবং কী পদ্ধতিতে হবে, সেটি নিয়ে দ্বিমতের জের ধরে সেই এডহক চুক্তিটি বাস্তবের দেখা পায়নি।


১৯৮৭ সালে ভারতের গজলডোবায় ব্যারাজ নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ৯.২৩ লাখ হেক্টর এলাকায় সেচ প্রদানের প্রকল্প হাতে নিয়ে ভারত আস্তে আস্তে ৫.৪৬ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের জন্য ব্যারাজ দিয়ে তিস্তার পানি প্রত্যাহার শুরু করে। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে লালমনিরহাটের দোয়ানীতে তিস্তা ব্যারাজের নির্মাণ কাজ শেষ করে ১.১১ লাখ হেক্টর জমিতে সেচ প্রকল্প শুরু করে। শুরুতে ব্যারাজ নির্মাণের মাধ্যমে সেচ প্রকল্পে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের এই অংশে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা থেকে ভারতের পানি প্রত্যাহারের ফলে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার বাংলাদেশ অংশে পানি প্রবাহ আস্তে আস্তে কমতে থাকে। তবে এই সময়ে তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ইতিবাচক কোনো আলোচনা হয়নি।


১৯৯৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে গঙ্গাচুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে মূলত তিস্তার পানি বণ্টনের আলোচনা বেগবান হয়। গঙ্গাচুক্তির অনুচ্ছেদ ৯ অনুযায়ী, 'পক্ষপাতবিহীন ও সাম্যতাপ্রসূত এবং কোনো পক্ষেরই ক্ষতি না করে দুই সরকারই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান অন্যান্য আন্তসীমান্ত নদীর চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে একমত।' অর্থাৎ গঙ্গাচুক্তি মেনে নিলে এই ধারা অনুযায়ী অন্য নদীগুলো নিয়ে আলোচনার বাধ্যবাধকতা দুই দেশের ওপরই চলে আসে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সচিবপর্যায়ের বৈঠকে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। যৌথ নদী কমিশনের নির্দেশক্রমে এই কমিটির কাজ ছিল মূলত তিস্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে অন্যান্য অভিন্ন নদীর ক্ষেত্র স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি পানি বণ্টন ফর্মুলা প্রণয়ন করা। বিশেষজ্ঞ কমিটি ১৯৯৭ সাল থেকে শুরু করে ২০০৪ সাল পর্যন্ত প্রায় সাতটি বৈঠকে মিলিত হয়; তবে এই বিষয়ে কোনো ঐকমত্যে দুই দেশ পেঁৗছতে পারেনি। সর্বশেষ ৫ জানুয়ারি, ২০১০ ভারত-বাংলাদেশ যুক্ত নদী কমিশনের দুই দিনব্যাপী সচিবপর্যায়ের বৈঠক শেষে ইছামতি নদী খনন প্রকল্প ও ফেনী নদী থেকে পানি উত্তোলন নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ঐকমত্যে পৌঁছেছে, কিন্তু তিস্তার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইছামতি নদীতে পলির কারণে উজানে, বিশেষ করে ভারতীয় অংশে, সৃষ্ট বন্যা সমস্যা ও শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ কমে যাওয়ার সমস্যা সমাধানকল্পে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদোগে ইছমতি নদী খনন করবে। ফলে ভারতে বন্যা সমস্যা দূর হবে, সেই সঙ্গে ফেনী নদী থেকে ভারত ১.৮ কিউসেক পানি উত্তোলন করবে খাবার পানি প্রকল্পের জন্য। সুতরাং সহজ করে বলতে গেলে সর্বশেষ যুক্ত নদী কমিশনের বৈঠক থেকে বাংলাদেশের জন্য কিছুই আসেনি। যদিও দীর্ঘ সময় ধরে চলা আপস আলোচনায় ইছামতি ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সব সময় ছিল যে 'একমাত্র তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত সম্মত হলেই এই দুই নদীর বিষয়ে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে মতৈক্যে পৌঁছবে।'

দুই পক্ষের প্রস্তাবগুলোঃ
এই দীর্ঘ সময়ের আলোচনার ফলেও সফল একটি পানি বণ্টন চুক্তিতে না আসার মূল কারণ আসলে বাংলাদেশ ও ভারত পানি বণ্টন নিয়ে একটি একক ফর্মুলায় একমত না হতে পারা। পানি বণ্টনের ফর্মুলা নির্ধারণে মূলত কয়েকটি জিনিস চলে আসে।
প্রথমত, বণ্টন নদীর কোন স্থানের প্রবাহের ভিত্তিতে হবে; দ্বিতীয়ত, অতীতের কত বছরের প্রবাহের ভিত্তিতে বণ্টন করা হবে; তৃতীয়ত, বণ্টনে নদীর নিজস্ব হিস্যা এবং দুই দেশের হিস্যা কত হবে র চতুর্থত, পানি বণ্টনের সময়কাল কী হবে?
তিস্তা ব্যারাজের পানি বণ্টন আলোচনায় এই বিষয়গুলো নিয়ে বিশদ পর্যালোচনা হয়েছে। যৌথ নদী কমিশনের সিদ্ধান্ত মতে ভারতের দোমোহনী ও বাংলাদেশের ডালিয়াতে প্রবাহ পরিমাপ কেন্দ্রের ১৯৭৩-১৯৮৫ এই ১৩ বছরের হিস্টরিক্যাল প্রবাহের উপাত্ত নিয়ে পানি বণ্টন ফর্মুলা নির্ধারণ করা হবে। যেহেতু ভারত ১৯৮৭ সাল থেকে গজলডোবায় ব্যারাজ চালু করে তাই এর পরের বছরের প্রবাহের উপাত্ত বিবেচনায় আনা হয়নি। পানি বণ্টনের সময়কাল নির্ধারণ করা হয় প্রতিবছরের ১ অক্টোবর থেকে পরের বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে এই বণ্টনের মূল অংশ হচ্ছে হিস্যা নির্ধারণ। এ ক্ষেত্রে সাধারণ তিনটি হিস্যা নিয়ে আলোচনা হয়; প্রথমত, নদীর নূ্যনতম প্রবাহ যা কিনা মৎস্য, নৌ চলাচলসহ নদী খাত সংরক্ষণে রাখা হবে; দ্বিতীয়ত, ভারতের অংশের হিস্যা এবং তৃতীয়ত, বাংলাদেশ অংশের হিস্যা।

 

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যৌথ নদী কমিশনের সভায় এই হিস্যাগুলোর জন্য তিনটি প্রথম উত্থাপনের চিন্তা ভাবনা করা হয় :
প্রস্তাব ১ : ভারতের গজলডোবায় লব্ধ পানির শতকরা ২০ ভাগ নদী খাত সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ থাকবে, আর বাকি শতকরা ৮০ ভাগ পানি বাংলাদেশ ও ভারত সমভাবে ভাগ করে নেবে।

প্রস্তাব ২ : ভারতের গজলডোবায় লব্ধ পানির শতকরা ২০ ভাগ নদী খাত সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ থাকবে, আর বাকি শতকরা ৮০ ভাগ পানি ১৯৮৩ সালে প্রস্তাবিত এডহক চুক্তি অনুযায়ী ৩৬:৩৯ অনুপাতে বাংলাদেশ ও ভারত ভাগ করে নেবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ পাবে ৩৮ শতাংশ আর ভারত পাবে ৪২ শতাংশ।

প্রস্তাব ৩ : ভারতের গজলডোবায় লব্ধ পানির শতকরা ১০ ভাগ নদী খাত সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ থাকবে, আর বাকি শতকরা ৯০ ভাগ পানি ১৯৮৩ সালের এডহক চুক্তি অনুযায়ী ৩৬:৩৯ অনুপাতে বাংলাদেশ ও ভারত ভাগ করে নেবে। অর্থাৎ বাংলাদেশ পাবে ৪৩ শতাংশ আর ভারত পাবে ৪৭ শতাংশ।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মূলত প্রথম প্রস্তাবটিই যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে উত্থাপন করে। কিন্তু এই প্রস্তাব নিয়ে ভারত সম্মত না হওয়ায় বাকি দুটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা এগোয়নি। এর বিপরীতে ভারতের যুক্তি ছিল কিছুটা একপেশে। ভারত প্রস্তাব করে নদীর জন্য ১০ শতাংশ পানি রেখে বাকি ৯০ শতাংশ পানি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সেচ প্রকল্প এলাকার ভিত্তিতে বণ্টন করার। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য ভারতের গজলডোবায় প্রকল্প এলাকা (৫.৪৬ লাখ) আর বাংলাদেশের দোয়ানীতে প্রকল্প এলাকার (১.১১ লাখ) অনুপাত ৫:১। সুতরাং ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশের হিস্যা দাঁড়ায় ১৫ শতাংশ আর ভারতের ৭৫ শতাংশ। পরবর্তী সময়ে ভারত দাবি করে যেহেতু ভারতের গজলডোবা থেকে ছেড়ে দেওয়া পানি বাংলাদেশের ডালিয়া অংশে পৌঁছবে। সুতরাং এই দুইয়ের মাঝখানে নদী খাত সংরক্ষণের জন্য আলাদা করে কোনো প্রবাহ বণ্টন দরকার নেই। আর বাংলাদেশে তিস্তা নদীর ডালিয়া থেকে ব্রহ্মপুত্রে পড়ার আগ পর্যন্ত নদী খাত সংরক্ষণের জন্য আলাদা কোনো হিস্যার দরকার নেই।

নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যবচ্ছেদঃ

এখন পর্যন্ত আলোচনায় তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের প্রস্তাবের একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এবার নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই প্রস্তাবগুলোর একটু ব্যবচ্ছেদ করা যাক। উল্লেখ্য, আন্তসীমান্ত বা ট্রান্সবাউন্ডারি নদীর ক্ষেত্রে পানি বণ্টনের জন্য কোনো একক সূত্রের অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। একমাত্র আপস আলোচনাই এনে দিতে পারে একটি মানানসই পানি বণ্টন ফর্মুলা। এই বণ্টন নিয়ে দেশে দেশে এমনকি এক দেশের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে দীর্ঘ আপস আলোচনার নজির আছে। ভারত-বাংলাদেশের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ব্যবহার (নৌ চলাচল ব্যতিরেকে) সম্পর্কিত আইনেও আপস আলোচনার মাধ্যমে এই জাতীয় সমস্যা সমাধানের কথা বলা আছে। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে, প্রথমত, কোনো পক্ষের ক্ষতি না করে; দ্বিতীয়ত, সাম্যতা বা ইক্যুয়িটি এবং তৃতীয়ত শেয়ার্ড স্যাক্রিফাইস বা ক্ষয়ক্ষতি ভাগ করে নেওয়া।
একটি পানি বণ্টন চুক্তিতে প্রথমত লক্ষ রাখা উচিত, যেন বণ্টন এমন না হয় তা কোনো পক্ষের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সেইসঙ্গে বণ্টন এমনভাবে করা উচিত, যেন তা দুই দেশের মধ্যে সমভাবে বিস্তৃত হয়। এখানেই মূল বিপত্তি এসে দাঁড়ায়। আর তা হলো 'কোন ক্ষতি না করা' আর সমভাবে বণ্টন কিভাবে একসঙ্গে সিদ্ধ করা যায়। নিঃসন্দেহে প্রত্যেকটি দেশ তার নিজস্ব লাভ বা ক্ষতি নিয়ে সচেতন থাকে। অনেক সময় দেখা যায়, সমান ভাবে বণ্টন করলে কোনো দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়; আবার অসমভাবে বণ্টন করলে অন্য দেশটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এ ক্ষেত্রে শেয়ার্ড স্যাক্রিফাইস বিবেচনা করা হয়, যেখানে দুই দেশই তার কিছুটা স্বার্থ ছাড় দেবে একটি সফল বণ্টন ফর্মুলার জন্য।

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির আলোচনায় যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, এর ভারতীয় অংশে গজলডোবা ব্যারাজ ও সেচ প্রকল্প আর বাংলাদেশের অংশে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প। এখানে উল্লেখ যে তিস্তার ওপরে এই দুই সেচ প্রকল্প ছাড়াও রয়েছে ভারতীয় অংশে দুটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ। সুতরাং সেই বিচারে ভারতে তিস্তার প্রবাহের গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে আরো উল্লেখ যে তিস্তার ভারতীয় অংশে ব্যারাজ ভারতে এই নদীর একদম ভাটিতে অবস্থিত, অর্থাৎ এর পরে তিস্তার পানি ব্যবহার করার সুযোগ ভারতে আর নেই। পক্ষান্তরে বাংলাদেশে প্রবেশের পর তিস্তার পানির প্রথম ব্যবহার তিস্তা সেচ প্রকল্পের জন্য। এর পরে তিস্তা নদীকে আরো অনেক পথ পাড়ি দিয়ে তিস্তামুখঘাট নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্রে মিলিত হতে হবে। সুতরাং বাংলাদেশে তিস্তার পানির ব্যবহার শুধ সেচ কাজের জন্যই বরাদ্দ নয় বরং নৌ চলাচল, মৎস্য, গৃহস্থালী ও শিল্পকারখানার জন্যও পানির চাহিদা রয়েছে। সেই বিচারে নদী খাত সংরক্ষণের জন্য হিস্টরিক্যাল প্রবাহের ভিত্তিতে শতকরা ১০ বা ২০ শতাংশ পানির হিস্যার বাংলাদেশি প্রস্তাব যথেষ্ট যৌক্তিক এবং এর বিপরীতে ভারতের নদী খাত সংরক্ষণে কোনো হিস্যা না রাখার প্রস্তাব নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ ভারত থেকে শুধু সেচ কাজের জন্য বাংলাদেশে ছেড়ে দেওয়া পানি গজলডোবা থেকে লালমনিরহাটের দোয়ানী পর্যন্ত নদীখাত সংরক্ষণে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে বিবেচিত হলেও দোয়ানী থেকে তিস্তাঘাট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চল, যা তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল; তা এর ফলে পানির জোগান হারাবে।

এবারে আসা যাক ভারতের সেচ প্রকল্প এলাকার অনুপাতে পানি বণ্টনের যুক্তির আলোচনায়। প্রাপ্ত তথ্যমতে, ভারতের গজলডোবা প্রকল্পে পরিকল্পনাধীন কমান্ড এরিয়া ৯.২৩ লাখ হেক্টর আর বাস্তবায়িত হয়েছে ৫.৪৬ লাখ হেক্টর। বাংলাদেশে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের পরিকল্পনাধীন কমান্ড এরিয়া ৫.৪০ লাখ হেক্টর আর বাস্তবায়িত হয়েছে ১.১১ লাখ হেক্টর। ভারতীয় পক্ষের যুক্তি তিস্তার পানি বণ্টন হোক বাস্তবায়িত প্রকল্প এলাকার ভিত্তিতে। বাস্তবায়নের ভিত্তিতে ভারতের সেচ প্রকল্প বাংলাদেশের পাঁচ গুণ আর তাই ৫:১ অনুপাতে পানি বণ্টন করার প্রস্তাব দিয়েছে তারা। অথচ পরিকল্পিত কমান্ড এরিয়া তুলনা করলে এই অনুপাত দাঁড়ায় ১৭:১০। যেহেতু তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের জন্য নির্মিত ব্যারাজ, সংযোগ খাল কিংবা অন্য স্থাপনাগুলোর নকশা করা হয়েছে পরিকল্পিত কমান্ড এরিয়ার জন্য; তাই বাস্তবায়িত কমান্ড এরিয়ার ভিত্তিতে পানি বণ্টন না করে বরং পরিকল্পিত কমান্ড এরিয়ার ভিত্তিতে বণ্টন করলে তা অধিক যৌক্তিকতার দাবি রাখে। সুতরাং কোনো যুক্তিতেই ভারতের প্রস্তাব পানি বণ্টন চুক্তির সাম্যতা ও কোনো পক্ষের ক্ষতি না করে বা শেয়ার্ড স্যাক্রিফাইস নীতিতে পড়ে না।
এ পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবগুলোর একটি ব্যবচ্ছেদ করা যাক। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বয়ে যাওয়া অর্ধশতাধিক নদ-নদী থাকলেও আজ পর্যন্ত সফল পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছে একমাত্র গঙ্গার ক্ষেত্রে। আর গঙ্গা চুক্তিতেই যেহেতু অন্য আন্তসীমান্ত নদীগুলোর চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে একমত হওয়ার ধারাটি রয়েছে, তাই ভারতের সঙ্গে যেকোনো পানি বণ্টনের খসড়াতে গঙ্গা চুক্তির অনুকরণ যৌক্তিক বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। এবারে দেখি গঙ্গা চুক্তিতে ফারাক্কায় পানি বণ্টন কি অনুপাতে করা হয়েছে :

১. ফারাক্কায় পানির প্রবাহ ৭০ হাজার কিউসেক (১ কিউসেক= সেকেন্ড ১ ঘনফুট)-এর কম হলে ভারত ও বাংলাদেশের হিস্যার অনুপাত ১:১ বা বাংলাদেশ ৫০শতাংশ ও ভারত ৫০ শতাংশ।

২. ফারাক্কায় পানির প্রবাহ ৭০ হাজার-৭৫ হাজার কিউসেকের মধ্যে হলে বাংলাদেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক আর ভারত পাবে বাদবাকি। এ ক্ষেত্রে হিস্যার অনুপাত ১:১ থেকে ৮:৭ পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাব্য নূ্যনতম হিস্যা দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশ এবং

৩. ফারাক্কায় পানির প্রবাহ ৭৫ হাজার কিউসেকের ওপরে বা মধ্যে হলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক আর বাংলাদেশ পাবে বাদবাকি। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সম্ভাব্য নূ্যনতম হিস্যা দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশ।
অর্থাৎ গঙ্গা চুক্তিতে বাংলাদেশের নূ্যনতম হিস্যা ছিল ৪৭ শতাংশ। সে বিচারে তিস্তা চুক্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রথম প্রস্তাবে নদী খাতের জন্য শতকরা ২০ ভাগ পানি বরাদ্দ রেখে বাকি ৮০ ভাগ পানি ৪০ শতাংশ করে সমভাগে ভাগ করে নেওয়ার যুক্তি কোনোমতেই উচ্চাভিলাষী বলে বিবেচিত হয় না। সেইসঙ্গে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রস্তাব অর্থাৎ শতকরা ১০ ভাগ নদী খাত সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দ রেখে বাকি শতকরা ৯০ ভাগ পানি ১৯৮৩ সালের এডহক চুক্তি অনুযায়ী ৩৬:৩৯ অনুপাতে বাংলাদেশ ও ভারত ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব প্রকারান্তরে ভারতের প্রতি বাংলাদেশে বন্ধুভাবাপন্ন মতাদর্শের পরিচায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়।

বর্তমান পরিস্থিতি, 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু'র তৎপরতাঃ
২০১০-এর জানুয়ারিতে যুক্ত নদী কমিশনের দুই দিনব্যাপী সচিবপর্যায়ের বৈঠক শেষে দুই পক্ষ ইছামতি ও ফেনী নদীর ক্ষেত্রে একক সমঝোতায় পৌঁছলেও তিস্তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে না আসায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ ভারত সফরে তিস্তা চুক্তির সম্ভাব্যতার মৃত্যু ঘটে। গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০১০ কালের কণ্ঠের সম্পাদক আবেদ খান কলকাতা থেকে 'চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়নে মনমোহনের নির্দেশ' শীর্ষক প্রতিবেদনটিতে এ সংক্রান্ত শেষ খবরগুলো এ দেশে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে উলি্লখিত তথ্যমতে, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে সাম্প্রতিক একটি খসড়া তৈরি করেছে, যাতে তিস্তার পানির ৮৩ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গে রেখে ১৭ শতাংশ বাংলাদেশে ছাড়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়েছে।

এবারে এই খসড়া প্রস্তাবটিকে একটু বিশ্লেষণ করা যাক। ৮৩ শতাংশ ও ১৭ শতাংশের আনুপাতিক হার হচ্ছে ৫:১; অর্থাৎ ভারতের সর্বশেষ খসড়াটিতেও তিস্তার দুই পাশে সেচ প্রকল্পের বাস্তবায়িত কমান্ড এরিয়ার অনুপাতে পানি বণ্টনের পক্ষে তাদের আগের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি উপরন্তু ইতিপূর্বে যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটির বৈঠকে গৃহীত ১০ শতাংশ হিস্যা নদী খাত সংরক্ষণের জন্য বরাদ্দেরও বলি ঘটেছে এই খসড়ায়। উলি্লখিত প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্যমতে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেচ দপ্তরের মন্ত্রী সুভাষ নস্কর ওই খসড়ার নোটে লিখেছেন, 'যেহেতু বাংলাদেশ ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ, তাই শুকনো মৌসুমে তিস্তার পানির ২৫ শতাংশ বাংলাদেশকে দিলেও রাজ্যের কোনো ক্ষতি নেই।' মন্ত্রীর মন্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশের হিস্যা ২৫ শতাংশ হলেও ভারতের কোনো ক্ষতি হবে না; অথচ এই ২৫ শতাংশ পানির হিস্যা পেলে বাংলাদেশের কি ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে তারা আদৌ ওয়াকিবহাল নয় এবং হয়তো প্রয়োজনও অনুভব করেনি। এই হচ্ছে 'ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের' নমুনা! পারস্পরিক ছাড় দেওয়ার কোনো নমুনা এই খসড়ায় দেখা যায় না। অথচ ইতিপূর্বে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকে দুই পক্ষই এই মর্মে সম্মত হয় যে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন এই নীতির ভিত্তিতেই হবে।

বাংলাদেশের করণীয়ঃ
তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে একটি সফল সমাপ্তির ক্ষেত্রে আপস আলোচনার বিকল্প নেই। তবে সফল আপস আলোচনার জন্য সমস্যা সমাধানের মানসিকতা থাকতে হবে। বলতে দ্বিধা নেই প্রয়োজনীয়তার দিক বিবেচনায় তিস্তার পানি বণ্টন বাংলাদেশের জন্য অধিক জরুরি। কিন্তু সার্বিকভাবে প্রতিবেশী এবং বন্ধুপ্রতিম দুটি দেশের জন্য নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই চুক্তি উভয় দেশের জন্যই ইতিবাচক। তবে যেহেতু দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গা চুক্তির অনুচ্ছেদ ৯-এ উল্লেখ আছে 'পক্ষপাতবিহীন ও সাম্যতাপ্রসূত এবং কোনো পক্ষেরই ক্ষতি না করে দুই সরকারই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বহমান অন্য আন্তসীমান্ত নদীগুলোর চুক্তির ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার ব্যাপারে একমত', সে ক্ষেত্রে সাম্যতা বজায় রেখে ও শুধু এক পক্ষের ক্ষতি সাধন না করে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন করা দুই দেশের জন্যই কিছুটা বাধ্যবাধকতার পর্যায়ে পড়ে। তা ছাড়া ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ভারতকে ইছামতি ও ফেনী নদীর ক্ষেত্রে যে ছাড় প্রদান করেছে সেই বিষয়টিও আলোচনায় উল্লেখ করা উচিত। এখানে মনে রাখা উচিত, যে দুই পক্ষই তাদের স্ব স্ব অবস্থানে অনড় থাকলে এই প্রক্রিয়া শুধুই বিলম্বিত হবে। এ পর্যায়ে ভারত কর্তৃক উত্থাপিত সেচ প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ার ভিত্তিতে পানি বণ্টন ফর্মুলাকে সংশোধিত করে আলোচনা করা যেতে পারে।

দুটি প্রস্তাব বিবেচনা করা যেতে পারে
প্রস্তাব ১: ২০ শতাংশ হিস্যা নদী খাতের জন্য বরাদ্দ রেখে বাকি ৮০ শতাংশ পানি ভারত ও বাংলাদেশের সেচ প্রকল্পের পরিকল্পিত এলাকার ভিত্তিতে (ভারত কর্তৃক উত্থাপিত বাস্তবায়িত এলাকার ভিত্তিতে নয়) বণ্টন করার কথা প্রস্তাব করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১৭:১০ অনুপাতে বাংলাদেশের হিস্যা হবে ৩০ শতাংশ ও ভারতের ৫০ শতাংশ। নদী খাতের জন্য ছেড়ে দেওয়া পানি যেহেতু মূলত বাংলাদেশে প্রবেশ করবে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোট হিস্যা দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ আর ভারতের ৫০ শতাংশ।
প্রস্তাব ২: ১০ শতাংশ হিস্যা নদী খাতের জন্য বরাদ্দ রেখে বাকি ৯০ শতাংশ পানি ভারত ও বাংলাদেশের সেচ প্রকল্পের পরিকল্পিত এলাকার ভিত্তিতে (ভারত কর্তৃক উত্থাপিত বাস্তবায়িত এলাকার ভিত্তিতে নয়) বণ্টন করার কথা প্রস্তাব করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ১৭:১০ অনুপাতে বাংলাদেশের হিস্যা হবে ৩৪ শতাংশ ও ভারতের ৫৬ শতাংশ। নদী খাতের জন্য ছেড়ে দেওয়া পানি যেহেতু মূলত বাংলাদেশে প্রবেশ করবে সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মোট হিস্যা দাঁড়াবে ৪৪ শতাংশ আর ভারতের ৫৬ শতাংশ।
এ ক্ষেত্রে উল্লেখ যে শতকরা কতভাগ পানি নদী খাতের জন্য বরাদ্দ থাকলে তা নৌ চলাচল, শিল্পকারখানাসহ মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণে সহায়ক হবে_সে বিষয়ক তথ্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের থাকা উচিত। সেই মোতাবেক ওপরের প্রস্তাব দুটিকে পরিবর্তন করা যেতে পারে।

নদীর মৃত্যু মানে মায়ের মৃত্যুঃ
ভৌগোলিক আত্মপরিচয়ে বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসেবেই বিশ্বে পরিচিত। নদীর পলিতে গড়ে ওঠা এই দেশের অস্তিত্ব অনেকাংশেই নদীনির্ভর। আমাদের দেশের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি সরাসরি নদীর সঙ্গে জড়িয়ে আছে। একটি নদীর ওপর সামান্য আঘাতই এই দেশের কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি আঘাত করে।যৌথ নদীগুলোর পানিবণ্টন তাই কোনো স্বল্পমেয়াদি বিষয় নয়, এর সঙ্গে আগামী শত সহস্র বছরের বাংলাদেশের অস্তিত্ব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।নদীর পানির হিস্যা নিয়ে তাই বাংলাদেশকে দৃঢ় অবস্থান নিয়ে এগোতে হবে। দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক তৎপরতায় বাংলাদেশকে দেখাতে হবে তার সর্বোচ্চ দক্ষতা।প্রয়োজনে আন্তর্জাতিকভাবে ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন, যাতে করে ভারত দিনের পর দিন এই যৌথ নদীগুলোকে নিয়ে তাদের একতরফা পদক্ষেপ বন্ধ করতে পারে। তিস্তা প্রকল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে উত্তরাঞ্চলের মঙ্গাপীড়িত কোটি মানুষের জীবন। বাংলাদেশ আর বাংলাদেশের মানুষকে বাঁচাতে এই প্রকল্প নিয়ে আপস করার তাই কোনো সুযোগ নেই।

 

বিদ্রঃ কালের কন্ঠের অনলাইন ভার্শনে লেখাটি দুই লিঙ্কে ভাগ হয়ে গিয়েছে কোন সমস্যার কারনে।

প্রথম অংশঃ এই লিঙ্কে

দ্বিতীয় অংশঃএই লিঙ্কে ( পানি বণ্টন আলোচনার ইতিহাস এই প্যারার আগের প্যারা থেকে)

অথবাঃ কালের কন্ঠের ইপেপার এই লিঙ্ক থেকে

( রাজকূটের পৃষ্ঠা নম্বরঃ ৭-১১)

 

 


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।