ঘোড়সওয়ার। ১৯

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শনি, ১৪/১১/২০০৯ - ১০:৫৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

‘ঘোড়সওয়ার।২৭’ কবিতাটি আমি লিখে ফেলেছিলাম হঠাৎ। একটানা কলম চালিয়ে।লাইনের পর লাইন মাথায় এসে ভর করে। শেষমেষ কিছু একটা দাঁড়ায়। লেখা শেষে আমি পড়ে চমকে উঠি। ব্যলীক (কামুক) ইন্দ্র, কবিকুল, ঘোড়সওয়ার, জনতা, প্রকৃতি – কবিতায় এই কয়টি চরিত্র এসে গেছে। আপনাআপনি। যতিচিহ্ন তুলে দিয়ে কবিতাকে একটু দুর্বোধ্য করি। কয়েকবার পড়ি। একটা গতি খেয়াল করি। ক্রিয়াপদে কিংবা ক্রিয়াপদের পরবর্তী শব্দ বা শব্দগুচ্ছের পর বিরাম দিয়ে দিয়ে পড়লে বুঝে নিতে কষ্ট লাগে না।পাঠক কি বুঝবেন? ভাবলাম- দেখা যাক ছাপিয়ে।

কবিতার গৌরচন্দ্রিকা নিয়ে আমি বারোজগিরির দ্বিতীয় পর্বে বলেছি। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘একটি কবিতা লেখা’ অনেকের পড়া। কবিতার অংকুরোদ্গম নিয়ে কবি বিস্তারিত লিখেছেন সেই টীকাওয়ালা কবিতায়। এখানে আমি ও কথা বলে নিচ্ছি। কবিতার সাফাই হিসাবে।

কবিতাটি লেখা শেষে নাম দিই ঘোড়সওয়ার। পরে খানিক পালটে নাম করি ‘ঘোড়সওয়ার।২৭’ ; ভেবেছিলাম এই নিয়ে একটা সিরিজ কবিতা লিখবো। তারপর দিন যায়। সপ্তাহ পার হলো। কোন নতুন লাইন মাথায় আর আসে না। আজ দুপুরে একটানে লিখে ফেললাম দ্বিতীয় কবিতা। নাম করলাম ‘ঘোড়সওয়ার।১৯’ – সাতাশ কিংবা উনিশের আপাত কোন মূল্য নেই। কেবল সংখ্যা মাত্র।কবিতা দুটা কয়েকবার পড়লাম। ভাবছি পাত্রপাত্রীদের সাথে আপনাকে পরিচয় করিয়ে দিই।

ইন্দ্র -রাজা। গোত্রপিতা। স্বেচ্ছাচারী।ব্যলীক।শত্রুপক্ষ। কবিদের কাছে ঘৃণ্য।
পথিক -মানুষ। কখনো কাজলচোখ মেয়ে কিংবা বিশ্বসিত পঙ্গু অথবা স্রেফ ক্লান্ত পথিক।
ঘোড়সওয়ার –বিপ্লবী। ডানপন্থী।বামপন্থী।দর্শক। ত্রাতা। পলায়নবাদী। দা আদার।
কবিকুল -বয়ানকারী। আবেগপ্রবণ। ভাববাদী।শান্তিকামী।
জ্যেষ্ঠ কবি -কবিকুলের জ্যেষ্ঠ জন। দল ত্যাগকারী।
বজরা -কবিদের বাহন। পঙ্খীরাজ।
প্রকৃতি -নির্লিপ্ত। সটান। মাঝে মাঝে প্রলয়রূপী। অন্যথায় সৌম্য, স্নিগ্ধ। নির্বাণপ্রাপ্ত। নারকীয় হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী ফুলগাছে পরদিন ভোরে ফোটে তাজা কৃষ্ণচূড়া।

এই হলো পরিচয়।
ভাবনা জাগে। কবিতা কি? অচেতনে কি এর নির্মাণ?

----------------------------------------------------------------------------------

পৃথিবীর গাণিতিক ছায়ায় শৈত্য নামে ধীরে সহিজঙ্গ শেষে
ক্লান্ত পথিক দেখে পিঙ্গল জনপথ একটা প্রত্যুত্তরের আশায়
হিম বিছানায় বিশ্বসিত পঙ্গু শরীর দেবোচিত মুখ করে
থাকে সুঠাম সুন্দর আলো নিভে যায় অদূরে রাতবাতি জ্বলে
ওঠে আঁধার নগরীতে পূর্ণিমার গাঢ় গাঢ় রোদ শুষে নেয়
বিষাক্ত বায়ু আকাশ তার অসীম বলয়ে নন্দিত বলিরেখা আঁকে
কাজলচোখ মেয়ে আয়নায় টিপ জমা রেখে শুন্যতায় করে
আয়েশ উদোম পাহাড়ে বাতাসের স্রোত স্রোত খেলায় বউলধরা
মেঠোফুল দেখে নেয় নগরীয় দৃপ্তসখা যষ্টি আজ নৈমিত্তিক
আহরণে জ্যেষ্ঠ কবি অন্যপুরে আমরা কবিকুলের বাকীরা
ইতস্তত বিচরণ শেষে বজরায় উঠি ভেসে পড়ি মেঘের
দূতালয়ে নগরী তার ক্লান্তি সেরে আড়মোড়া করে গোলার্ধে
দেখা দেয় ভয়াল উৎপাত অনিবার্য মৃত্যু আর মৃতের
পাহাড়ে আলিঙ্গন করে শোক দেবোত্তর কবিকুল নেমে পড়ি
রক্তের হোলিখেলায় হই রক্তস্নাত ঘোড়সওয়ার দিক পাল্টে
হয়ে যান অদৃশ্য আমাদের আহত নক্ষত্র থেকে যায় অধোমুখে
আত্মহনন শেষে জ্যেষ্ঠ কবি এসে দাঁড়ান অন্য বারান্দায়

----------------------------------------------------------------------------------

ঘোড়সওয়ার।২৭


মন্তব্য

 সংসপ্তক এর ছবি

অসাধারণ কবিতা!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি !

জুঁই এর ছবি

আপনার কবিতা melancholic এবং rhythmic ; আমি অনেক ক'বার পড়ে তারপরে rhythm বুঝলাম। পরিচয়পর্বটা বেশ।
আপনার প্রতিটা পোস্ট খুব ভালো হচ্ছে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

যতিচিহ্ন না দেয়ায় পড়া একটু কষ্টের। তাও আপনি পড়েছেন দেখে ভালো লাগলো। কোথায় কোথায় থামতে হবে তা এখানে দিলাম।

পৃথিবীর গাণিতিক ছায়ায় শৈত্য নামে ধীরে/ সহিজঙ্গ শেষে
ক্লান্ত পথিক দেখে পিঙ্গল জনপথ/ একটা প্রত্যুত্তরের আশায়
হিম বিছানায় বিশ্বসিত পঙ্গু শরীর দেবোচিত মুখ করে
থাকে সুঠাম সুন্দর/ আলো নিভে যায় অদূরে/ রাতবাতি জ্বলে
ওঠে আঁধার নগরীতে/ পূর্ণিমার গাঢ় গাঢ় রোদ শুষে নেয়
বিষাক্ত বায়ু / আকাশ তার অসীম বলয়ে নন্দিত বলিরেখা আঁকে/
কাজলচোখ মেয়ে আয়নায় টিপ জমা রেখে শুন্যতায় করে
আয়েশ/ উদোম পাহাড়ে বাতাসের স্রোত স্রোত খেলায় বউলধরা
মেঠোফুল দেখে নেয় নগরীয় দৃপ্তসখা যষ্টি/ আজ নৈমিত্তিক
আহরণে জ্যেষ্ঠ কবি অন্যপুরে/ আমরা কবিকুলের বাকীরা
ইতস্তত বিচরণ শেষে বজরায় উঠি/ ভেসে পড়ি মেঘের
দূতালয়ে/ নগরী তার ক্লান্তি সেরে আড়মোড়া করে/ গোলার্ধে
দেখা দেয় ভয়াল উৎপাত/ অনিবার্য মৃত্যু আর মৃতের
পাহাড়ে আলিঙ্গন করে শোক দেবোত্তর/ কবিকুল নেমে পড়ি
রক্তের হোলিখেলায় হই রক্তস্নাত/ ঘোড়সওয়ার দিক পাল্টে
হয়ে যান অদৃশ্য/ আমাদের আহত নক্ষত্র থেকে যায় অধোমুখে/
আত্মহনন শেষে জ্যেষ্ঠ কবি এসে দাঁড়ান অন্য বারান্দায়/

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

চোরাবালি আমি দূর দিগন্তে ডাকি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

জনসমুদ্রে নেমেছে জোয়ার,
হৃদয়ে আমার চড়া।
চোরাবালি আমি দূর দিগন্তে ডাকি
কোথায় ঘোড়সওয়ার?
- বিষ্ণু দে

সাফি এর ছবি

ইয়ে মানে কিসু বুঝিনাই দেঁতো হাসি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

বারান্দায় অন্য দাঁড়ান এসে কবি জ্যেষ্ঠ শেষে আত্মহনন

এভাবে পিছন থেকে সামনে আগাইতে থাইকলে সব ফকফকা হইয়া যাইবো হো হো হো

ফটাফট কমেন্ট করলেই অইবো, আপনের লেখা কই?

অতিথি এর ছবি

এই সিরিজের কবিতাগুলোর কন্সেপ্ট ভালো।
একটা অন্যরকম রিদম আছে যেটা কয়েকবার পড়লে তারপর কিছুটা বোঝা যায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।