কথা খেলাপ বিরোধী আইন

শুভপ্রসাদ এর ছবি
লিখেছেন শুভপ্রসাদ [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ২৩/০৯/২০০৯ - ৪:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


প্রতি নির্বাচনে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন এমন ভোটার খুঁজে পাওয়া খুব একটা দুরূহ কাজ নয়। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি যাতে বারবার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে পার না পায়, তার জন্যে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা কেউ ভেবেছেন এমনটা কেউ শুনেছেন কি? এমন ঘটনাই ঘটল সম্প্রতি।

মুম্বাই নগরীর মাতুঙ্গা এলাকার বাসিন্দা তরুণ রাঠি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে আর্জি রেখেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দল ভোটের আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে এই মর্মে হলফনামা দিক যে নির্বাচনোত্তর সময়ে তারা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনে বাধ্য থাকবে। তিনি আরো বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলি যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলি দেয় তা কতটা বাস্তবসম্মত তা যাচাই করা একজন সাধারণ ভোটারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। সুতরাং তিনি আদালতের কাছে আর্জি রেখেছেন, ভোটের আগে কম্প্ট্রোলার এন্ড অডিটার জেনারেল বা কোনো নিরপেক্ষ সংস্থা/সংগঠনকে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির যুক্তিগ্রাহ্যতার শংসাপত্র নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করা হোক। বাধ্যতামূলক করা হোক, এ ধরনের শংসাপত্র পেলেই রাজনৈতিক দলগুলি পারবেন, নির্বাচনী ইস্তেহারে ওই প্রতিশ্রুতিগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে। শ্রীরাঠির মতে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে কোনো ধরনের বিধিবদ্ধ দায়বদ্ধতা না থাকায় দিনের পর দিন নির্বাচকমণ্ডলী এক ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমণ্ডলীকে এভাবে প্রতারণা করার কোনো অধিকার নেই রাজনৈতিক দলগুলির।

সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কে, জি, বালকৃষ্ণানের নেতৃত্বাধীন এক বেঞ্চ এই জনস্বার্থ মামলা গ্রহণ করেছেন গত মঙ্গলবার । আগামী ৮ মে এই মামলার শুনানির তারিখ নির্দিষ্ট হয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, ২০০৪ সালে মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে এনডিএ-র তরফে বিনামূল্যে কৃষকদের বিদ্যুৎ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ১৯৯৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ইস্তেহারে এনডিএ একটি ক্ষুধা ও ভয়মুক্ত ভারতবর্ষের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অন্যদিকে, ২০০৪ সালে ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচীতে ইউপিএ-এর তরফে সংসদে মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণ, সাম্প্রদায়িক হিংসা দমনের আইন, শ্রম আইন ও বিচারব্যবস্থার সংস্কার সংফান্ত আইন ও লোকপাল সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। বলা বাহুল্য, এ ক্ষেত্রে বামপন্থীদের ভূমিকা অনেক উজ্জ্বল। ২০০৪ সালে ইউপিএ সরকার গঠিত হওয়ার পর বামপন্থীরা ধারাবাহিকভাবে ন্যূনতম সাধারণ কর্মসূচী প্রণয়ণের জন্যে সংসদের ভেতরে ও বাইরে লড়াই চালিয়ে গেছেন। এই লড়াইয়ের ফলেই অনিচ্ছুক কংগ্রেস নেতৃত্ব যেমন একদিকে বাধ্য হয়েছেন জনস্বার্থবাহী নানা পদক্ষেপ নিতে, তেমনি লাভজনক রাষ্ট্রায়ত্ব ক্ষেত্রের বিরাষ্ট্রীয়করণ বা আর্থিক ক্ষেত্রে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ার মনোবাঞ্ছা কংগ্রেসের তরফে থাকলেও বামপন্থীদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে তা সম্ভব হয় নি।

পুরনো মানুষদের নিশ্চয়ই মনে আছে ১৯৭৭ সালে ৩৬দফা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি প্রদান করে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় এসেছিল বামফ্রন্ট । সিপিআই(এম)-এর তৎকালীন রাজ্য সম্পাদক প্রমোদ দাশগুপ্ত পরবর্তী পাঁচ বছর প্রায় সবক’টি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ৩৬দফার কতটা পূরণ হল এবং কতটা কেন করা যায় নি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতেন। শ্রীরাঠির মত নাগরিকদের জনস্বার্থ মামলার ফলেই এখন প্রতিটি প্রার্থীর নিজের সম্পদ ও আয় সম্পর্কে হলফনামা প্রদান বাধ্যতামূলক হয়েছে। বলা যায় না নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়েও আগামী দিনে বিধিবদ্ধ হলফনামা প্রদানের ব্যবস্থা হতে পারে আগামীদিনে। এতে নির্বাচন প্রফিয়া আরো ত্রুটিমুক্তই হবে হয়ত। তবে এমনটা হলে, অন্য রাজনৈতিক দলগুলি যে অসুবিধাতেই পরুক না কেন, বামপন্থীদের এ নিয়ে দুর্ভাবনার কোনো অবকাশ নেই। কারণ গভীরতর অর্থে এটা শেষ পর্যন্ত বামপন্থী রাজনৈতিক সংস্কৃতির স্বপক্ষেই যাবে।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সচলে স্বাগতম শুভ'দা।
সিলেটে দু'বার আপনার গান শোনার সুযোগ হয়েছিল। এছাড়া একবার আড্ডা হয়েছিলো শিলং এ পম্পাদি-কিশোর'দা দের বাসায়। সে অবশ্য বছর দশেক আগের কথা।
সচলায়তন ঋদ্ধ হোক আপনার লেখায়।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শুভপ্রসাদ এর ছবি

হারানো বন্ধুকে বোধহয় এভাবেই ফিরে পাওয়া যায়। যে যতই প্রযুক্তিকে গালিগালাজ করুক, আমি তা করি না। আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, প্রযুক্তির মানবিক অভিমুখ সারা পৃথিবী জুড়ে মানুষকে পরস্পরের সাথে যুক্ত করছে। প্রযুক্তির অপব্যবহারের জন্যে তো প্রযুক্তিকে গালি দেওয়া যায় না। ‌‌
'আবার দেখা যদি হল সখা, প্রাণের মাঝে আয়'।
ভালো থাকবেন।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

গ্রেট শুভদা
অবশেষে মহান আলসেমি ভাঙলো আপনার

এইবার আসেন তপোধীর দারে ধরি চেপে
আমি একা ঠেলে কিছু করতে পারিনি
আপনি একটা ঠেলা দেন গোরা দারে দিয়ে

শুভপ্রসাদ এর ছবি

ধন্যবাদ প্রাপ্য তোর, আর অবশ্যই করিম ভাইয়ের।

শামীম এর ছবি

জেনে ভালো লাগলো। বাংলাদেশে কনজ্যুমার এসোসিয়েশনটাও শক্তিশালী হওয়া উচিত .... ভেজাল/দুইনম্বরী কিনতে কিনতে জীবন শেষ হয়ে গেল ...

আর .... ন্যাতাদের জনসেবার ঠেলায় "ভিক্ষা চাইনা, কুত্তা সামলাও" অবস্থা হয়েছে।

এইতো ঈদের কয়েকদিন আগে অফিস থেকে ফেরার সময় (রাত সাড়ে দশটার পরে) রাস্তায় আমাদেরকে দর্শন দিয়ে গেলেন সাথে বোনাস হিসেবে ২৫ মিনিট ভি.আই.পি. জ্যাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

স্বাগতম

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

শুভপ্রসাদ এর ছবি

অসাধারণ।

নজমুল আলবাব এর ছবি

স্বাগতম শুভদা।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

রণদীপম বসু এর ছবি

প্রথমে সচলে স্বাগত জানাই শুভ দা।

বাংলাদেশের জন্য এই রকম কিছু আইন যে কতো বেশি দরকার ও জরুরি, তা ভুক্তভোগী মাত্রেই অনুধাবন করেন। সমস্যা হলো, যাঁরা এই আইন বানাবেন তাঁরা কোন ভুক্তভোগী নন। আর ভুক্তভোগীদের তো পাছার কাপড় সামলাতেই দিন পয়মাল, মুখে রা বের করবে কখন ! এই গেরো থেকে আমরা উত্তরণ চাই।

ধন্যবাদ দাদা। সচলে আপনাকে যেন নিয়মিত সচল পাই।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

s-s এর ছবি

শ্রদ্ধেয় শুভপ্রসাদ দা: আপনি কি বছর আট- নয় আগে কখনও ভারতীয় হাই কমিশনের এক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন? যেখানে শুভায়ু ঘোষ বাজিয়েছিলেন, আর মনোজ মূরলী ও মনীষা মূরলী নামে দু'টি অবাঙালী শান্তিনিকেতন পড়ুয়া সহোদর - স হোদরা চমৎকার রবীন্দ্র সঙ্গীত গেয়েছিলো? আপনার নামটা বড় চেনা চেনা লাগলো।
লেখার জন্য ধন্যবাদ আর সচলায়তনে স্বাগত জানাই।
আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।

শুভপ্রসাদ এর ছবি

আমি ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৯ অবধি মোট ১৩ বার বাংলাদেশে গিয়েছি অনুষ্ঠানের সুবাদে। কিন্তু যে অনুষ্ঠানের কথা আপনি বলছেন সেটায় আমি ছিলাম না। www.esnips.com/web/SubhaPrasadNandiMajumdar এই পেজে আপনি আমার গান, কিছু লেখা ও একটি সাক্ষাৎকার পাবেন। শুনবেন, আপনার মতামত জানাবেন।

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

স্বাগতম শুভদা

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সচলে স্বাগতম

বাংলাদেশে এরকম আইন একটা করতে পারলে ভালো হতো
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।