টোপ দিলেই যে কেঁচো মাছ খেয়ে ফেলবে তার গ্যারান্টি কি? ৭

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ১০/০৬/২০০৮ - ৮:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার জীবনে কোন নাটক নেই। কোন ড্রামা নেই। নিজ থেকে বড়ই গাছে না চড়লে গায়ে কাঁটাও বেঁধে না। আমার ঈশ্বরও নেই যে সালিশ বসাবো। পুরুন্দর ভাটকে স্মরণ করে তাই মাল খাই আর স্মৃতি চিবাই চুপচাপ। পুরুন্দর ভাট নামে কোন এক স্বল্প পরিচিত শক্তিমান লিখেছিলেন,

আমার জীবনে নাই কেন কোনো ড্রামা
তাই দিব আমি কার্পাস ক্ষেতে হামা

আমার জীবনে নাই কেন কোনো ড্রিম
টিকটিকি আমি, পোকা খাই, পাড়ি ডিম

আমার মরণে হয় না তো হেডলাইন
প্রাসাদ গাত্রে মুতিয়া ভাঙিব আইন

আমার মরণে কাঁদিবে না কোনো মেনি
লেডি ক্যানিং-এর নাম থেকে লেডিকেনি

এক পা স্বর্গে, এক পা নরকে, ঝোলা
একটি কামান, দুটি কামানের গোলা।

পুরুন্দর ভাট

আজ সারাদিন নানারকম দুনিয়াদারির কাজে ছ্যাঁচা খেয়েছি। তারপর একচক্কর ঘুরেছি কারণ ছাড়া। তারপর ঘরে আসতে আসতে দিনের আলো পড়তি। ঠিক এই সন্ধিক্ষণের সময়টা বাড়ি বসে থাকাটা আমার সবচাইতে অপছন্দের কাজগুলির একটি। কেমন যেন স্ক্রু হতে গিয়ে মাঝপথে অষ্টাবক্র থেমে থাকা। এসময় ঘরে ঢুকলেই মনে হয় কী যেন একটা অসম্পূর্ণ রেখে চলে এসেছি। অদ্ভুত ধরণের একটা অপূর্ণতার অনুভুতি। যেন প্রচুর মাল টানলেও টালত্ব দরজার বাইরে কোথাও ফেলে এসেছি।

এরম বিখাউজ পরিস্থিতিতে শুরু হয় স্মৃতি খাউজানি। পাহাড়ে আমিও গেছি। মোটেই নাটক করে না। নাটক না থাকার জন্য কাকে দায়ী করা যায় কপাল ছাড়া? কোন নাটক নেই। সিনেমা খানিক শুরু হয়ে দেখা গেল ফাইল দুই নম্বরী। ভর্তি স্ক্র্যাচ। হলো না তাই আর শেষ পর্যন্ত। নাটকো হলোনা ফিলিমো হলোনা। অর্থাৎ কেন্দ্রীভুত কোন কাঠামোবাদী প্রপঞ্চগুচ্ছ এক নজরে চেখে নেয়া গেল না। টুকরো টুকরো কিছু প্রবাহকণা, হয়তো কিছু অণুগল্প কিম্বা তাও নয়।

নয় বছর হয়ে এলো। সেই ১৯৯৯ সালের ২৫ অক্টোবর। বেতন ফী বৃদ্ধির প্রতিবাদে সংগঠিত আন্দোলন সামাল দিতে না পেরে ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে হল খালি করার ঘোষনা দেন তৎকালীন ভিসি ড. আলাউদ্দিন আহমেদ। বাড়ি ফিরলাম ভোদাই হয়ে। কবে এই লুহার তালা খোলে কে জানে? এর মধ্যে ভাই এর বিবাহে গেল কয়দিন। তারপর আবার ভোদাই। আসলে টানা হলে থাকতে থাকতে জাবির বাইরের জগতটাই অসহ্য লাগতো। কারো সাথে মানিয়ে নিতে পারি না। সবাই কেমন যেন শুধু অন্য অন্য কথা বলে। আগে টানা প্রায় দুমাস বিছানায় পড়েছিলাম। একটা কোন ব্রেকআপ জরুরি ছিল।

অক্টোবরের ২৩ তারিখের দিকে জয় মানে আমাদের সচল কর্ণজয়(দীর্ঘদিন অনুপস্থিত মন খারাপ ) এসে বললো বান্দরবনের রাজপুত্রের বিবাহ, সে কণ্যাপক্ষে আমন্ত্রিত, আমি এবং ইচ্ছে করলে আরো কেউ সচ্ছন্দে সহযাত্রী হতে পারে। ডিগবাজী দিয়ে রাজী হলাম। আমি আর জয় ছাড়া অপর ব্যক্তি দাদার বন্ধু আমাদের গ্রেট সেলিম ভাই, যিনি সপ্তাহজুড়ে এঁকে যেতে পারেন আর ছত্রিশ ঘন্টা নির্বিকার ঘুমাতে পারেন।

২৫ তারিখ সন্ধ্যা সাড়ে সাত নাগাদ থ্রীস্টুজেস রওনা হলাম আমাদের বাসা থেকে। পথে তিন দফা জ্যাম পেরিয়ে রাত পৌনে দশটায় পড়িমড়ি করে পৌছলাম কমলাপুর। টিকেট শেষ। বহু কসরৎ করে স্ট্যান্ডিং টিকেট মিললো। রাত সাড়ে দশটায় ট্রেন ছাড়লো গুটিশুটি। সীট নেই। তেজগাঁ গেলো। ক্যান্টনমেন্ট গেলো। সেলিম ভাই খালি হতে গিয়ে আবিস্কার করলেন সামনের বগীতে বামদিকের কোণায় গোটা তিন সীট আছে তবে অনিশ্চিত। অর্থাৎ পরবর্তী স্টেশনে কেউ দাবী করলে ছাড়তে হবে। পরবর্তী না উঠতে হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে। চোখ লেগে এসেছিল এক ভদ্রমহিলার ধাক্কায় চোখ খুলে দেখি বরিশালের ভাষায় ঝাড়ি,এএএই ..এইয়া মোর সীট...উঠে এসে দেখি জয় আর সেলিমভাই ইতোমধ্যেই দুইবগীর মাঝামাঝি ফ্লোরে জমিয়ে বসেছে। জনৈক শরীফুদ্দিন উপবিষ্ট সমাবেশকে নানারকম আধ্যাত্মিক জ্ঞান দিচ্ছেন। পৃথিবীর কোন কিছুই যে একক অর্থ ধারণ করেনা এই হলো তার অভিসন্দর্ভ। তার প্রিয়গান পথের বাপই বাপরে মনা পথের মা ই মা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পার করার পরে আর সীটে বসার কোন চান্স পাই নাই। শরীফুদ্দিনের গলা ভালো। একেরপর এক মাইজভান্ডারী গান চললো। তাতেই সময় কেটে যাচ্ছিল। টিকেটচোকারো যোগ দিল এক পর্যায়ে। কোরাস ধরা হলো, ভাবা মাইজবান্ঢারী
লাইন ছাড়া চলেনা রেলগাড়ি

ভোর ছটা নাগাদ ট্রেন চট্টগ্রাম পৌঁছল। নিশিজাগরণের ক্লান্তি খানিক ছিল বটে, তবে ক্ষুধা আরো খানিক বেশী। স্টেশন থেকে বেরিয়ে বায়ে মোড় নিতে সারি সারি রেস্তোরা। প্রথমটাতেই ঢোকা গেল। পরোটা-গরু। সাথে কাঁচা পেঁয়াজ। এক এক প্রস্থ পরোটাগরু...এক এক কামড় পেঁয়াজ কচ্ কচ্ খতম্! গলা না মোটামুটি চাঁদি পর্যন্ত ঠেসে হেলেদুলে সামনের বাস স্টপে পৌঁছলাম ত্রিমুর্তি। বান্দরবানের বাস ছাড়তে আর মিনিট পনের। জয়কে বললাম মুমুদের বাসায় একটা ফোন দিতে। ও বললো সারপ্রাইজ দিলে নাকি পাহাড়ীরা খুশী হয়। এদিকে সেলিম ভাই ঘুমে ঢুলে পড়ছিল। পারলে ট্রাফিক আইল্যান্ডেই কাৎ হয়। এক সময় বাস তৈরী হলো। উঠে বসলাম। বান্দরবান যেতে লাগবে প্লাসমাইনাস ঘন্টা তিন। সীট পেয়েছিলাম পেছনের দিকে। বাস ছুটছিল হৈ হৈ করে। কোন এক ফাঁকে চোখ লেগে এলো।

(চলবে চোখ টিপি)


মন্তব্য

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

প্রত্যেকের একটা করে শৈশব থাকে, আর সেটা সারাজীবন খুব জ্বালায়, টালায় আর গলায়। আমাদের আছে দুইটা শৈশব, দ্বিতীয়টা জাহাঙ্গীরনগরের শীতঘুমের কাল। এরে নিয়া যে কী করি? কোথায় রাখি? এই এক মুশকিল। তো একদিন শীতঘুম ভেঙ্গে গেলে হঠাত,
'হায়! কী ভুলে আলোয় জেগে উঠে, বয়স হারালাম বয়স হারালাম।'

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

মন খারাপ

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অমিত এর ছবি

ধুরো মিয়া। একটানে মহাকাব্য নামায় দিবেন। হলিউডি নায়িকার মতো ফেলো কড়ি মাখো যা ইচ্ছা, তা না বাংলা সিনেমার নায়িকার মতো, ছিঃ কেউ দেখে ফেলবে টাইপ অবস্থা।

দ্রোহী এর ছবি

এইটা কী হইল বদ্দা? আমাগোরে বাসে উঠাইয়া নিজেই ঘুমাইয়া পড়লেন? পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সৌরভ এর ছবি

চলবে মানে?
দৌড়াবে। না দৌড়ালে গুল্লি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍এই গুল্লিটা ক্যামনে দ্যায়?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হু কেমনে দেয়? ঐটা দিলাম আর কি দেঁতো হাসি

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ভাবা মাইজবান্ঢারী
লাইন ছাড়া চলেনা রেলগাড়ি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

"গঠনার গনগঠা"-র অপেক্ষায় রইলাম।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সুমন চৌধুরী এর ছবি
সৌরভ এর ছবি

থামেন।
কপিরাইট নিমু কি না ভাইবা লই।

(মডুরূপ আর মডুর্শেদ ভাইজানদের মেসেজ দিয়া দেখি, সবার হাতে এইটা ধরানোর ব্যবস্থা করা যায় কি না)


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

নজমুল আলবাব এর ছবি

কিসের মডুরূপ আর মডুর্শেদ। এক্খনি শিখায়া দে। নয়ত তোর মাথা মুতা ভাইঙ্গা ফালামু। জলদি গুল্লি মারা শিখা।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আগেরটার নাম ছিল গুলি....এইটার নাম দেয়া যাইতারে গুল্লি



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

কীর্তিনাশা এর ছবি

এইটা আমার আধা-সচল অবস্থার প্রথম মন্তব্য।

সুমন ভাই লেখাটা দারুন হইছে। কিন্তু বাসে উইঠাই আত্কা ব্রেক মারলেন ক্যান? তারাতারি এক্সিলারেটরে পা দাবান বস্ আপনার লগে বান্দরবন যাই!

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

ভালা হইছে

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নজমুল আলবাব এর ছবি

হ, ভালা হইছে।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভালো লাগছে।
বান্দরবানে যেতে আর কতক্ষন লাগবে?

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গানটাতে বোধহয় মাইজভান্ডারী লাগায় না...

বাবা ভান্ডারী
লাইন ছাড়া চলেনা রেলগাড়ি...

তবে ভিন্ন ভার্সন থাকতারে... পরের বাক্যগুলা ভুইল্যা গেছি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুমন চৌধুরী এর ছবি

মূল গানের কথাতো কৈ নাই! ঐটা শরীফুদ্দিনের ভার্সন। জয়ের কাছে কার্ড দিছিল। সে কোন এক গ্যারেজে কাজ করে, ঠিকানা ছিল শিকলবাহা...চট্টগ্রাম...



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তাইলে আমারই ভুল... আমি মূল গানেই গলা মিলাইছিলাম। মাইজ সহ ভান্ডারীরে কোনওভাবেই সুরে ফালাইতার্তাছিলাম না।
এখন ঠিকাসে...
তো চলুক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।