শব্দার্থ বিষয়ক প্যাঁচাল

নৈষাদ এর ছবি
লিখেছেন নৈষাদ (তারিখ: সোম, ২১/০৯/২০০৯ - ১০:১০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছু দিন আগে ভারতের বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শশী থারুরের ‘গরু-ছাগলের শ্রেণী’ (ক্যাটল ক্লাশ) বিষয়ক বিতর্কের ব্যাপারে কেউ কেউ পড়ে থাকবেন আশাকরি। লেখক হিসাবে তাঁর গ্রেট ইন্ডিয়ান নভেল পড়েছিলাম সম্ভবত ২০০৪ সালের দিকে। ভাল লেগেছিল, তারপর প্রচুর কলাম পড়েছি তাঁর এবং তিনি লেখক হিসাবে আমার প্রিয় একজন ব্যাক্তি। ২০০৬ সালের শেষের দিকে জাতিসংঘের মহাসচিব পদের জন্য বান কি মুনের সাথে তাঁর প্রতিযোগিতা অনুসরন করছিলাম মনযোগ দিয়ে। তারপর আর খুব একটা কিছু পড়িনি শশী থারুরের ব্যাপারে অনেকদিন। ইদানিং হঠাৎ করে মজার বিতর্ক্ টা দেখলাম।

খুব সংক্ষেপে বিতর্কের ব্যাপারটা একটু বলে নেই। খরচ কমানোর জন্য সোনিয়া গান্ধী এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ইদানিং বিমানে ইকনমি ক্লাশে যাতায়াত করেছেন এবং দলের অন্যান্য মন্ত্রীদেরও ইকনমি ক্লাশে যেতে বলেছেন (অথবা নির্দেশ দিয়েছেন)। তো কেউ একজন ওয়েবসাইটে ট্যুইটারে শশীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কি পরের বার কেরেলা যাওয়ার সময় ‘ক্যাটল ক্লাশে’ ভ্রমন করবেন? (উড ইউ ফ্লাই ক্যাটল ক্লাশ নেক্সট টাইম ইউ ট্র্যাভেল কেরেলা)। বলার অপেক্ষা রাখে না প্রশ্নকর্তা ‘ক্যাটল ক্লাশ’ বলতে ইকনমি ক্লাশকে বুঝিয়েছেন। শশী থারুরের উত্তর ছিল, অবশ্যই। ‘হোলি কাউ’দের প্রতি একাত্মতা জানাতে ক্যাটেল ক্লাশেই যাব। (অ্যাবসলিউটলি, ইন ক্যাটল ক্লাশ আউট অভ সলিডারিটি উইথ অল আওয়ার হোলি কাউজ)। এবং বিতর্ক শুরু, কংগ্রেসের অস্বস্থি, অবশেষে মাফ চেয়ে অবস্থার কিছুটা উন্নতি। সমস্যাটা কোথায় ছিল? ‘গরু-ছাগলের শ্রেণী’ বলতে ইকনমি ক্লাশের যাত্রীদের দুর্দশার চিত্রটা বুঝাতে তাঁদের পক্ষে সিস্টেমটাকে কটাক্ষ করেও বলা যায়। আবার আরেক অর্থে ইকনমি ক্লাশের যাত্রীদেরও কটাক্ষ করা হয়েছে বলে ধরা যায়। তারপর আছে হোলি কাউ। ক্যাটলের সাথে সম্পর্ক রেখে ইকনমি ক্লাশের যাত্রীদেরও বুঝানো যায়। আবার মন্ত্রীরা যারা এর মধ্যে ইকনমি ক্লাশে যাত্রা করেছেন তাঁদেরও বুঝানো যায়। এগুলো শব্দার্থ বিষয়ক প্যাঁচাল। কী বুঝাতে চেয়েছেন শশী থারুর তা এই লেখার প্রতিপাদ্য বিষয় না। শব্দের অর্থ যে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে তারই দু একটা মজার গল্প বলা যাক। আমার চাকুরীজীবনে দেখেছি কন্ট্রাক্টের একেকটা শব্দের অর্থ যে কতটা সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু এসব গুরুগম্ভীর আলোচনা করব না আজ। ‘সেক্স’ শব্দটা নিয়ে তিনটি মজার ঘটনা। ঘাবড়াবার কিছু নেই, সেক্স বলতে আমি শুধু লিঙ্গের ইংরেজী শব্দটা বুঝাতে চাচ্ছি, অন্য কোন দ্যোতনা না। প্রথমটা পাশ্চাত্যের পটভুমিকায়, বাকি দু’টা দেশী।

এক
ছয় বছরের মেয়ে যখন এসে মার কাছে জানতে চাইল, ‘মা সেক্স মানে কী’, মা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তিনি জানতেন তাঁকে একদিন না একদিন এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতেই হবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ভাবেন নি। এত দিনের প্রস্তুত করা ব্যাখ্যাটা যতটা পারা যায় বায়লজিক্যাল ব্যাপার গুলো বাদ দিয়ে ছয় বছরের মেয়ের উপযোগী করে বললেন। খুব কঠিন একটা কাজ। যাই হোক, ছয় বছরের মেয়ের কাছে ব্যাখ্যা শেষ করার পর মনে হল যেন মাথার উপর থেকে একটা পাথর নেমে গেল। মেয়ে বড় বড় অবাক চোখে মার কাছ জানতে চাইল, ‘কিন্তু আমার ফর্মে তো সেক্সের পাশে দু’টো ছোট ঘরের (টিকবক্স)পাশে M এবং F লেখা আছে, এত কথা লিখব কেমন করে?’

দুই
আশির দশকে ভদ্রলোক একটা বিদেশী এনজিওতে চাকুরী করতেন (এখন প্রবাসী)। হঠাৎ করেই ইমার্জেন্সী রেসপন্স করতে ছোটা একটা দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আফ্রিকাতে নিয়ে যেতে হল। দলে একজন অজপাড়াগায়ের মধ্যবয়সী স্কুল শিক্ষক ছিলেন। ধার্মীক এবং সজ্জ্বন ব্যাক্তি। বাংলাদেশে ব্রিফিং শেষে দলের সবাইকে এক পাতার একটা করে ‘মেডিক্যাল ইনফরমেশন’ জাতীয় ফর্ম পুরন করতে দেয়া হল। বয়স টয়স ইত্যাদির পর একটা ঘর ছিল ‘সেক্স’। শিক্ষক ভদ্রলোক কিছুটা ইতস্তত করে দলনেতার দেখাদেখি M লিখলেন। তারপর লজ্জ্বা মেশানো ইতস্তত ভঙ্গিতে বললেন, ‘আপনার দেখাদেখি M লিখলাম।‘ ‘অন্য কিছু লেখার ইচ্ছা ছিল নাকি আপনার?’ - কিছুটা বিভ্রান্ত হয়ে জানতে চাইলেন নেতা ভদ্রলোক। ‘জী, আসলে তো আমি H’। লজ্জ্বায় মাথা নত ভদ্রলোকের। এবার সম্পুর্ন বিভ্রান্ত হলেন দলনেতা। ছোট একটা অবিশ্বাস্য চিন্তাও উঁকি দিল মনে। ট্রান্স-জেন্ডার? অসম্ভব। তিনি ইতস্তত ভঙ্গিতে জানতে চাইলেন ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করা যায় কিনা। ‘জী, আমার ধারনা উত্তর তিন রকম দেওয়া যায়, হাই (H) মিডিয়াম (M) এবং লো। আপনার দেখাদেখি মিডিয়াম (M) দিলাম’। লজ্জ্বায় মাটির সাথে প্রায় মিশে যেতে যেতে বললেন শিক্ষক ভদ্রলোক, ‘আমার কিন্তু হাই… ভেরি হাই’। (অবশ্য পরে ভদ্রলোক স্বীকার করছেন এধরনের ফর্ম কখনো পুরন করতে হয়নি। লিঙ্গের ইংরেজী শব্দ তাঁর কাছে জেন্ডার এবং ‘মেডিক্যাল ইনফরমেশন’ ব্যাপারটা তাঁকে বিভ্রান্ত করেছে।)

তিন
কৌতুক হবারই সম্ভাবনা, অথবা অতিরঞ্জিত কোন ঘটনাও হতে পারে। ষাটের দশকে সিলেট থেকে একব্যাক্তি বন্ধুর আমন্ত্রণে লন্ডন যাচ্ছন। সাথে আছে লন্ডন প্রবাসী বন্ধু। দুজনের কেউই লিখতে পারেন না। সিলেটি ভদ্রলোক আবার ‘ম্লেচ্ছ’ দেশ সম্ভন্ধে ভাল ধারনা ধারন করেন না। এয়ারপোর্টে নেমে ইমিগ্রেশন ফর্ম ফিলা-আপের জন্য একজন বিদেশী রমণী সাহায্য করছে। ইন্টারপ্রেটর প্রবাসী ভদ্রলোক। সিলেটি ভদ্রলোকের জ্ঞান দানের এবং ‘এসে ধন্য করলাম তোমাদের’ মনভাবে আমোদ পাচ্ছে তরুণী। (যেমন, গ্রামের নাম খালি লেখলেই হইতো নায় গো আফামনি, আগে ভিল (Vill, Village এর সংক্ষেপ, লেখতে অইব ইত্যাদি)। তো তরুণী মজা করবার জন্য ‘সেক্স’ কলামে এসে ভ্রূ উঁচিয়ে জানতে চাইল, ‘সেক্স’? হতাশ সিলেটি বন্ধুটি প্রবাসীর দিকে চেয়ে বললেন, বেশরম ফুরীন (মেয়ে), কিতা কয় দেখ। তারপর তরুণীর দিকে তাকিয়ে অসহায় ভাবে বললেন, ‘অখন ফারতাম নায় গো আফামনি, লং জার্নি, টায়ার্ড’। (এখন পারব না আপামনি)।


মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

হা হা হা হা হা ! কোন মন্তব্য নাই রে ভাই ! মন্তব্যের জন্য দ্রোহী'র অপেক্ষা করি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রেনেসাঁ [অতিথি] এর ছবি

ধন্যবাদ লিখেছেন সুমন সবুজের কাছে। শোনা গল্প তারপরেও আপনার উপস্থাপনা মুগ্ধ করেছে। আপনার লেখা পড়ার পর ২ ও ৩ নং গল্পের মাঝামাঝি একটা মনে পড়ছে-

সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরছে এক শ্রমিক। এ্যামবারকেষন কার্ডটা নিয়ে বিমান বালাকে বললো- আপা, লেখাপড়া জানিনা এইড্যা পুরণ কইরা দ্যান।
বিমান বালা তার নাম, পিতার নাম, ঠিকানা পুরণ করার পর সেক্স জিজ্ঞাসা করতেই সে একটু লজ্জা পেল। বিমান বালা আবার জিজ্ঞাসা করলো- সেক্স?
এবার সে তারপর লজ্জ্বা মেশানো ইতস্তত ভঙ্গিতে বললো- বুঝেন তো আপা দুই বছর পর দেশে ফিরছি, ঐডাতো একটু হাই !

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

মূলত পাঠক এর ছবি

মজার।

স্বপ্নহারা এর ছবি

হাহাহাহাহাহাহ...মজা পাইলাম
-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

লেখাটা ভালো লেগেছে- পড়তে একটু দেরী হলো অবশ্য...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সেক্সের ঘরে 'হেভি স্ট্রং' লেখা একটা ফর্ম দেখেছিলাম একবার
দেখেছেন এমন?

নৈষাদ এর ছবি

ধন্যবাদ। নাহ্ , দেখা হয়ে উঠেনি। আমার পরিচিত লোকজন লো এর দলে। একজন আবার খনার (!) বচনও বলেছে, ‘বারো মাসে বারো বার, চেষ্টা কর কমাইবার’।

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

হাহাপগে গড়াগড়ি দিয়া হাসি
-----------------------------
আমার ফ্লিকার

---------------------
আমার ফ্লিকার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।