বাং-নাৎসিদের নিয়ে আমরা গর্বিত!

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৬/২০০৭ - ৪:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রিন্স হ্যারি নাৎসিদের পোশাক পরে এক পার্টিতে গেলে ভারী গোলমাল শুরু হয়ে গিয়েছিল।

বিচিত্র জাতি এরা! সামান্য পোশাকে কি আসে যায়? এই নির্বোধরা আমাদের দেখে শেখে না কেন? বাং-নাৎসিদের গাড়িতে পতপত করে উড়ানো পতাকায় আমরা স্যালুট করি, সেলাম ঠুকতে ঠুকতে কুঁজো হয়ে যাই।
হালুয়া-পুরি খেতে খেতে এদের ভোট দিতে যাই। এদের নির্বাচিত করতে না পারলে মহা সর্বনাশ হয়ে যাবে যে- ইসলাম ধর্ম পগারপার হবে। তাই কি হয়, না হতে দেয়া যায়- বড়ো সাচ্চা মুছলমান(!) যে আমরা!

তো, হ্যারীর কুকীর্তির জন্য ইহুদিদের ক্ষুদ্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ ব্রিটিশদের কাছে হিটলারের সময়ে এই নাৎসি প্রতীক অত্যন্ত ঘৃণার ছিল।
প্রিন্স হ্যারির পোশাকটি ছিল জেনারেল এরউইন রোমেলের মরুযুদ্ধের ইউনিফর্মের অনুকরণে তৈরি। নাৎসি রোমেলকে বলা হতো ‘মরুশৃগাল’। তার ‘আফ্রিকা করস’-এর হাতেও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীসহ প্রচুর লোক মারা যায়।

সেই রোমেলের পোশাক পরে হ্যারির পার্টিতে যাওয়াটাকে নিয়ে এ বার ব্রিটেনের রাজ পরিবারও বিরক্ত। তাছাড়া এই মাসেই উদযাপন করবার কথা অসউইটজ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে মুক্তির ষাটতম বার্ষিকী। এই কুখ্যাত ক্যাম্পটিকে রাশিয়ার রেড আর্মি এসে জার্মানদের হাত থেকে মুক্ত করে পোল্যান্ডকে। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২৭ জানুয়ারী সেন্ট জেমস প্যালেসে আহবান করেছিলেন তাঁদের, যাঁরা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প থেকে বেঁচে ফিরেছিলেন। এ ছাড়াও আমন্ত্রিত থাকছেন সেই সময়কার ব্রিটিশ সেনারা।

১৯৩৩ সালে হিটলারের বাহিনী জার্মানিতে ক্ষমতায় আসে গণতান্ত্রিক প্রথায়। ১৯৩৯ সালে জার্মানি চেকোস্লোভাকিয়া আক্রমণ করে এবং আরম্ভ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সব মিলিয়ে চার কোটি লোক মারা যায়। তার মধ্যে আনুমানিক ষাট লক্ষ ইহুদি। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের নৃশংস, ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। শুধু ইহুদি নয়, বেছে বেছে অত্যাচার করা হয়েছিল রুশ সৈনিক এবং পোলদের উপরেও।

ক্লারেন্স হাউসের প্রেস অফিস দেরি না করে হ্যারির ক্ষমা চেয়ে লেখা একটি চিঠি প্রকাশ করেছিল।
তাতে হ্যারি লিখেছিলেন, ‘সরি, আমার পোশাকের নির্বাচন অত্যন্ত বাজে হয়েছিল। যদি এতে কারও কষ্ট হয়ে থাকে, তা হলে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করি’।

ইংল্যান্ডের ‘সান’ ম্যাগাজিন খবরটা প্রথম ফাঁস করে। বৃহস্পতিবারের কাগজে বড় বড় করে ছবি। হ্যারির এক হাতে ধরা মদের গ্লাস আর অন্য হাতে সিগারেট। হ্যারির হাসিমুখ ছবি। হাতের বাজুতে বাঁধা ব্যান্ডে স্বস্তিকার চিহৃ। কলারে ব্যাজও আঁটা রয়েছে জার্মান ভারমাখট অর্থাৎ নাৎসি প্রতিরক্ষা বাহিনীর। পাশে হেডলাইন ‘হ্যারি দ্য নাৎসি’। প্রথমে যে জ্যাকেট পরে গিয়েছিলেন তিনি, তাতে ছিল নাৎসিদের পতাকা। আর জ্যাকেট খুলতেই ভেতরে খাকি শার্টে নাৎসি ব্যাজ আর আর্মব্যান্ড।

‘সান’ কাগজ বৃহস্পতিবারে বের হয়, কিন্তু কাহিনীটা ভাল ভাবে করার জন্য ’সান’ তাদের প্রথম পাতার ছবি ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় আগের দিন রাতেই। টিভি, ইন্টারনেট সব জায়গাতেই হ্যারির খবর। রাজপরিবার চুপসে ফাটা বেলুন হয়ে গিয়েছিল। কে জানে, রাজপরিবার এটা ভাবছিল কি না, স্বদেশ দু'ভাগ হউ!

তবে যাই বলুন, আমরা বঙ্গালরা বাং-নাৎসিদের নিয়ে গর্বিত!


মন্তব্য

নজমুল আলবাব এর ছবি

শুভ এসেছে ফিরে।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হ্যারির সেই ঘটনাটা মনে আছে। অনেক তোলপাড় হলো।
জা.মো. আদেল বাসার ছাদে পাকিস্তানের পতাকা উড়ালে এরকম হয়েছিলো। কিন্তু পরে মামলায় মনে হয় আদালত আদেল পরিবারের দোষ খুঁজে পাননি। জানেন নাকি শুভ?

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নজমুল আলবাব এর ছবি

হু, আদেল পরিবারকে নির্দোষ বলে রায় দেয়া হয়।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

হয়তো হাজার বছরের পরাধীনতাই জাতি হিসেবে আমাদেরকে হীনমন্য করেছে । হয়তো সে কারনেই নিজেদের বিজয়গাঁথা উচচকিত হয়ে আমরা উচচারন করতে পারিনা, নিজেদের গৌরব প্রাঙ্খুলে উদযাপন করতে গেলে ও আমাদের দ্বিধা হয় । ডিসেম্বর,মার্চ,ফেব্রুয়ারীতে মাসব্যাপী আয়োজন চললে আমরাই কেউ কেউ ঠিক যেনো স্বস্তি পাইনা । ইয়ে, কি দরকার এতো এতো । টিভিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনুষ্ঠান চললে ও একই অবস্থা । দেশে বসে আমরা রেফারেন্স টানি- পাশ্চাত্যের দেশগুলো অতীত ভুলে সামনে তাকায় সে জন্যই এতো উন্নতি আর আমরা খালি অতীত টানি!

ভুল ভাবনা । পুরো নভেম্বর মাস জুড়ে এদেশে সকল নাগরিক বুকে লালপপি গোঁজে রাখে,দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাঁদের নিহত সৈনিকদের সম্মানে । প্রত্যেক এলাকায় বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের সম্মানে আয়োজন হয় বিশেষ প্যারেড । টিভি চ্যানেলগুলোতে ও সারাবছর ধরেই চলতে থাকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে প্রোগ্রাম। হয়তো বৃটিশরা কোনোদিন পরাধীন ছিলোনা বলেই তাদের এই অহংকার প্রকাশে কোনো দ্বিধা নেই ।

হয়তো কোন একদিন আমরা ও দ্বিধাহীন হবো ।

--------------------------
আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোনকালে?

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।