লেস্ট উই ফরগেট

তানভীর এর ছবি
লিখেছেন তানভীর (তারিখ: শনি, ১৩/১১/২০১০ - ৫:২৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল ছিলো এখানে ভেটারানস ডে। আমেরিকায় যারা ভেটারান বা প্রাক্তন সৈনিক- আমরা যাদের বলি (অবঃ), তাদেরকে সবাই খুব সম্মান করে। এখানে সব জব এপ্লিকেশনে আলাদা ঘর দেয়া থাকে- আপনি কি একজন (অবঃ)? যদি হন, তবে আপনার জন্য আছে বিশেষ সুবিধা। তবে শুধু ভেটারান নয়, সেনাবাহিনীর প্রতিও এদের আলাদা একটা টান আছে। এর কারণ মনে হয় এখানকার প্রায় প্রতিটি পরিবারের সাথে সেনাবাহিনীর কিছু না কিছু স্মৃতি বিজড়িত আছে।

আমেরিকায় প্রয়োজনের সময় প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনো নাগরিককে বাধ্যতামূলকভাবে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেবার বিধান আছে- ‘ড্রাফট/ড্রাফটিং’ নামে যা পরিচিত। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ড্রাফটিং পুরোমাত্রায় চালু ছিলো। আমার পিএইচডি সুপারভাইজার দুবার ড্রাফটের চিঠি পেয়েছিলেন। প্রথমবার তাঁর স্ত্রী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা, সে অজুহাত দেখিয়ে বাং মেরেছিলেন। দ্বিতীয়বার যখন চিঠি এসেছিলো, তখন তিনি পোস্টডক করছিলেন জার্মানিতে। মুষ্টিযোদ্ধা মোহম্মদ আলী ড্রাফটে যেতে অস্বীকার করায় তাঁর বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের খেতাব ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও আমরা জানি। ইরাক যুদ্ধের সময় ড্রাফটিং আবার চালু হবার সম্ভাবনায় আমার কিছু বন্ধু কানাডা পাড়ি দেবার চিন্তাভাবনাও করছিলো।

তবে সবাই যে এমন তা নয়, রন কভিচের মতো অনেকে আবার শুধু দেশকে ভালবেসেও সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়, হয়তো রাজনীতির নোংরামির কারণে সময়ে সে ভালবাসা ফিকে হয়ে আসে। কিন্তু মোটামুটি এরা এদের সেনাবাহিনীকে বেশ পছন্দ করে, একে নিয়ে গর্ববোধ করে। এদের গাড়ির বাম্পারে, আয়নায় স্টিকার মারা থাকে- ‘উই সাপোর্ট আওয়ার ট্রুপস’। আমেরিকায় সেনারা এমনিতে বেশ দরিদ্র। কোথায় যেন পড়েছিলাম এদের বেতন শুরু হয় বছরে মাত্র দশ-বারো হাজার ডলার দিয়ে যা এখানে একটা বিদেশি গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টের চেয়েও কম। অনেকে সেনাবাহিনীতে যায় কলেজে পড়ার খরচ পায় বলে, পড়া শেষ হয়ে গেলে আবার ফিরে আসে। রাজনীতির মারপ্যাঁচের কারণে জীবন সংগ্রামে রত এসব তরুণদের দেশের জন্য জীবন বিলিয়ে দিতে হচ্ছে- এ কারণেও হয়তো তাদের প্রতি জনগণের একটা সহানুভূতি কাজ করে।

ভাবছিলাম আমেরিকায় সেনাবাহিনী জনগণের যে আস্থা অর্জন করেছে আমাদের সেনাবাহিনী তা পারে নি কেন? কেন আমরা এদের চোখে এখনও ‘ব্লাডি সিভিলিয়ান’ রয়ে গেলাম? আমাদের সেনাবাহিনী কেন এখনো ঢাকা শহরের বুকে ট্যাংক উঁচিয়ে খাড়া হয়ে থাকে? কেন এদের মধ্যে ‘এলিট’ ‘এলিট’ গন্ধ? আমেরিকায় সৈন্যদের সব কাজ নিজেদেরই করা লাগে। কিন্তু এদের আছে আর্দালি, ব্যাটম্যান, বাটলার আরো কত নানা নামের ভৃত্য। জনগণের সেবক হবার বদলে এরা জনগণকেই দাস বানিয়ে রাখে। এরা ফৌজি হয়ে বাণিজ্য করে। পৃথিবীর আর কোথাও এমন আছে বলে জানি না। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলতে গেলে আমরা বলি তিন রকম- বাংলা, ইংরেজি, আরবী। কিন্তু আসলে চার রকম। আমাদের এলিট সেনাবাহিনীর বদৌলতে ‘ক্যাডেট কলেজ’ নামক এলিট শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে যা আসে কৃষক-কুলি-মজুরের ঘাম ফেলা পয়সা আর জনগণের করের টাকায়। উপরে একটু ভুল বলেছি যে পৃথিবীর আর কোথাও এমন আছে কিনা জানি না। সে আরেক দেশ আছে এমন। তার নাম পাকিস্তান। সেখানেও ফৌজিরা বাণিজ্য করে, পাব্লিকের সাথে মাস্তানি করে, তাদেরও ক্যাডেট কলেজ আছে। বস্তুত আমাদের সেনাবাহিনীর সবকিছুই তাদের পদাংক অনুসরণ করে করা! কী লজ্জা!! অথচ দেশের জন্য এ সেনাবাহিনীর সদস্যরাই প্রাণ দিয়েছিলো, পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে চেয়েছিলো। আর আজ তাঁদের উত্তরসূরীরাই দেশটাকে পাকিস্তান বানিয়ে রেখেছে!

আমেরিকার কথায় ফিরে আসি। আমেরিকা প্রতি বছর ভেটারান’স ডে, মেমোরিয়াল ডে ইত্যাদি পালন করে জানায় যে সে তার সূর্যসন্তানদের ভোলে নি। আমেরিকা ভোলে না। কিন্তু ভোলে কিছু রাজনীতিবিদ। তাদের কারণে এদের মাথা নিচু হয়, যেমন মাথা নিচু হয় আমাদের মুক্তিযোদ্ধা সেনাদের তাঁদের উত্তরসূরীদের জন্য। রন কভিচের মতো ভেটারানরা তাই হুইল চেয়ারে বসেও এই দিনগুলোতে মানুষের কাছে ছুটে ছুটে যায়-

We're never, never gonna let the people of the United States forget that war, because the moment we do, there's gonna be another war, and another, and another. That's why we're gonna be there for the rest of our lives telling you that the war happened - it wasn't just some nightmare - it happened, and you're not gonna sweep it under the rug because you didn't like the ratings, like some television show. This wheelchair, our wheelchairs, this steel, our steel is your Memorial Day on wheels, we are your Yankee Doodle Dandy coming home...


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

কোনভাবেই মনে হয় আমেরিকা কানাডার সাথে বাংলাদেশের তুলনা চলে না। আমাদের সাথে তুলনা চলতে পারে একমাত্র ঐ নাপাকিস্তানের সাথেই। মন খারাপ
তবে ক্যাডেট কলেজ কিন্তু আরো অনেক দেশেই (আমি অন্তত একটা জানি, জ্যামাইকা) আছে। আর ফৌজিবাণিজ্য মনে হয় ইন্দোনাশিয়াতেও প্রবল।
প্রসংগত কানাডায়ও ১১ই নভেম্বর রিমেম্বারেন্স ডে।

পাগল মন

তানভীর এর ছবি

পাকিস্তানে (এবং সেই সাথে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে) 'ক্যাডেট কলেজ' প্রথা আইয়ুব খান চালু করেছিলো। প্রথম ক্যাডেট কলেজ হয় ১৯৫৪ সালে পাঞ্জাব প্রদেশে। ১৯৫৮ সালে চালু হয় চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার আগে চারটি ক্যাডেট কলেজ ছিলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আরো আটটি যোগ করে। নিচে একজন উইকির লিংক দিয়েছেন, দেখে নিতে পারেন।

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার লেখা তানভীর ভাই। চলুক

ফাকিস্তান তো আমাদের রোল মডেল।

আমরা সবাই "টালেবান"
বাংলা হবে ফাকিস্তান।


কাকস্য পরিবেদনা

তানভীর এর ছবি

হ।

অতিথি লেখক এর ছবি

কোথায় যেন পড়েছিলাম ৪৭ এ স্বাধীন হওয়ার পরপর ইন্ডিয়া গড়ে তোলে অনেকগুলা আইআইটি, আর পাকিস্তান ক্যাডেট কলেজ। কেউ মগজকে উঁচুতে টেনে তুলে আর কেউ টেনে হাঁটুতে নামায়। আর আমরা তো পাকিস্তানের উত্তরাধিকার বয়ে বেড়াচ্ছি এতদিন পরেও।

সজল

তানভীর এর ছবি

হুম। তবু সত্য কথা বলেছেন তো মরেছেন!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

বড়ই উপাদেয় লেখা। ভালো লাগলো।

তানভীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাদের দেশে মানুষ খারাপ, তাই সেনাবাহিনীও খারাপ! শুনতে অনেক কুত্সিত লাগে, কিন্তু অন্য কেউ বুঝুক অথবা নাই বুঝুক এই সত্যটা স্বীকার করতে গিয়ে খুব কষ্ট লেগেছে. বার বার মনে হয়েছে মিথ্যা বলি, আপনাকে দুটা কটু কথা বলি বাংলাদেশকে নাপাকিস্থানের সাথে তুলনা করার জন্য, আমিরিকার তুলনায় বাংলাদেশ নিচু এই জাতীয় তুলনা করার জন্য. কিন্তু করি নি, কারণ সত্যি কথা তিতাও ভালো... বাত্তির রাজা ফিলিপস ভালো...

তানভীর এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

অস্ট্রেলিয়ায়ও দেখেছি ভেটের‍্যানদের খুব সম্মান দেয়। কোন একটা দিবসে যেন যুদ্ধফেরত সব সৈনিকরা তাদের ইউনিফর্ম পরে দিনটা উদযাপন করে।
------
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে আমার অনুভূতি মিশ্র। আমাদের মত দেশে সেনাবাহিনীর আকার, প্রকার ও কার্যকারণ নিয়ে সম্ভবত ভাল রকম গবেষণা হওয়া উচিৎ।
তবে আপনার পোস্টের সরলীকৃত বক্তব্যের সাথে একমত নই। আমার মনে হয় দেশের অন্যান্য সরকারি বা বেসরকারি চাকুরেদের মাঝে যেরকম সৎ ও দুর্নীতিবাজ দুই প্রকারের লোকই রয়েছে, সেনাবাহিনীতেও তাই। তাই আলাদা করে তারা সম্মান কিংবা গালাগালের যোগ্য কিনা এটা ভেবে দেখার বিষয়। আর্দালি বা ব্যাটম্যানের যে উদাহরণ দিলেন আপনি, জেলা পর্যায়ের বড় সরকারি অফিসাররাও সম্ভবত একই সুবিধা পেয়ে থাকে। তাই ভৃত্য বানানোর অভ্যেসের খোঁজ শুধু সেনাবাহিনীতেই করা ঠিক না, প্রতিটা সরকারি অফিস, বা বাসভবনেও উঁকি দেয়া উচিত।
--------------
ক্যাডেট কলেজ নিয়ে আপনার বক্তব্য কেন জানি ব্যাক্তিগত বিদ্বেষপ্রসূত মনে হলো। মানে, আউট অব দ্য ব্লু, ক্যাডেট কলেজ এলো, সাথে আবার পাকিস্তানের ঝোল মিশিয়ে, কী মুশকিল।
বাংলা আরবি ইংরেজির পাশে ক্যাডেট কলেজ কেমন করে এলো বুঝে পাচ্ছি না। এটা তো কোন মিডিয়াম নয়, একটা সিস্টেম। যেমন রেসিডেন্সিয়াল মডেল একটা সিস্টেম, অথবা মাদ্রাসা, অথবা সরকারি বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়...।
আর যদ্দুর জানি মিলিটারি পরিচালিত স্কুল পৃথিবীর নানা দেশেই আছে, হয়ত ক্যাডেট কলেজ নামে নয়, অন্য নামে। আপনি যে দেশে বসে লেখাটা লিখছেন, সেই আমেরিকায়ও মিলিটারি স্কুল খুব প্রচলিত একটা শিক্ষা-ব্যবস্থা বলেই শুনেছি।

চট করে একটা সিস্টেমকে এলিট বা আর কোন সুশীল গালি দেবার আগে এর সঠিক কারণ উল্লেখ করা জরুরি বলে মনে করি। আমরা ক্যাডেট কলেজের সমালোচনা করতেই পারি, এর প্রয়োজন কী ভেবে দেখতে পারি, সেই সাথে পাবলিক পরীক্ষাগুলোয় এই কলেজগুলোর ফলাফল বিবেচনায় আনতে পারি। সব মিলিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতেই পারে। কিন্তু তার আগেই এলিট বলে, অথবা "যা আসে কৃষক-কুলি-মজুরের ঘাম ফেলা পয়সা আর জনগণের করের টাকায়" জাতীয় কথা বলে সহানুভুতি টানার প্রয়োজন দেখি না।ঘাম ফেলা পয়সা বা করের টাকার ভাগীদার শুধু ক্যাডেট কলেজগুলোই নয় বোধহয়। সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সব ছাত্রের খরচের টাকাই আসে কৃষক-কুলি-মজুরের ঘাম ফেলা পয়সা আর জনগণের করের টাকা থেকেই।

-----
আপনার পোস্টে এক তারাটা আমার দেয়া। লেখার মানের জন্যে দিইনি, ব্যাক্তিগত বিদ্বেষ হয়েছে, এ জন্যে দিলাম। হাসি

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

তানভীর এর ছবি

প্রিয় কনফুসিয়াস, লেখাটাকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন জেনে দুঃখ পেলাম। আপনার জ্ঞাতার্থে জানাই, আমার একমাত্র ভাইও একজন 'ফৌজিয়ান'। কাজেই আপনার বা অন্য কোনো ক্যাডেটের এটিকে ব্যক্তিগতভাবে নেয়ার প্রয়োজন নেই, যেমনটি নিচে সাইফ শহীদ ভাইও নেন নি। আমি নিশ্চয়ই আমার ভাইকে উদ্দেশ্য করে লেখাটি লিখি নি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে - লেখার বক্তব্য ছিলো এটুকুই।

ক্যাডেট কলেজ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে অবশ্যই একটি 'এলিট' শিক্ষাব্যবস্থা (মাধ্যম যদি বলতে না চান, সিস্টেমের বাংলা তো ব্যবস্থাই নাকি?) যেমন বাংলাদেশের ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো। পার্থক্য হচ্ছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো বেসরকারি আর ক্যাডেট কলেজ সরকারি। পাব্লিকের টাকা বাংলা স্কুলগুলোতে এবং মাদ্রাসাতেও ব্যয় হয়। কিন্তু মাথাপিছু একজন ছাত্রের পেছনে সেখানে যে খরচ হয়, ক্যাডেট কলেজগুলোতে মাথাপিছু দেশের কত টাকা খরচ হয় বলতে পারেন? আরো 'এলিট' কিনা 'ক্যাডেট কলেজ' নামক সিস্টেমটা উদ্ভবের কারণও উইকি থেকে দেখে নিতে পারেন- "Military and Royal aristocrats would send their children or wards to those cadet colleges for education and a career in the Royal Army"।

আপনি মিলিটারি স্কুলের কথা বলেছেন। মিলিটারি স্কুল নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নাই। মিলিটারি স্কুল বলতে আমি মিলিটারি একাডেমি বা নেভাল একাডেমি জাতীয় প্রতিষ্ঠানই বুঝি। এগুলো পৃথিবীর সব জায়গাতেই আছে। কিন্তু ক্যাডেট কলেজ কি মিলিটারি স্কুল? মিলিটারি পরিচালিত স্কুল বলতে পারেন, যেমন তারা দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যও পরিচালনা করে। বরং বলতে পারেন মিলিটারিতে ভবিষ্যতে রিক্রুট করার জন্যই তারা ক্যাডেট কলেজে মাথাপিছু এত ইনভেস্ট করে থাকে এবং সেজন্য ভর্তির সময় মুচলেকাও দিতে হয়। কিন্তু এই আপনারাই পাশ করার পর আইএসএসবিতে ইচ্ছাকৃতভাবে ফেল করে তাদের ইনভেস্টমেন্টকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাইরে চলে আসেন। অল্প কিছু ছাত্র মিলিটারিতে যাবে তাদের জন্য এই ৭ম-১২তম শ্রেণীর 'বিশেষ স্কুল' চালু রাখাটা কতটুকু জরুরী? এই অর্থে আরো কয়টা সরকারি স্কুল করা যেত এবং সেখানে আরো কতজন ছাত্র পড়াশুনার সুযোগ পেত সেটা ভেবে দেখতে পারেন।

-----
আর্দালি বা ব্যাটম্যানের যে উদাহরণ দিলেন আপনি, জেলা পর্যায়ের বড় সরকারি অফিসাররাও সম্ভবত একই সুবিধা পেয়ে থাকে।

অন্য কেউ সুবিধা পেলে যে একটা অন্যায় জিনিস হালাল হয়ে যায়, জানা ছিলো না। তবে ঠিকই বলেছেন ভৃত্য বানানোর অভ্যেস আমাদের মজ্জাগত। এটা সহজে দূর হবে না।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে আমার অনুভূতি মিশ্র।... আমার মনে হয় দেশের অন্যান্য সরকারি বা বেসরকারি চাকুরেদের মাঝে যেরকম সৎ ও দুর্নীতিবাজ দুই প্রকারের লোকই রয়েছে, সেনাবাহিনীতেও তাই

আপনি পাকিস্তানের ইতিহাসের ওপর কোনো বই পেলে পড়ে দেখবেন। সেখানে দেখবেন আর্মি কীভাবে পাকিস্তানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে আছে। এই যে জামাতে ইসলামি, মৌলবাদ নিয়ে এত হাউকাউ এদেরকেও আর্মি কীভাবে ব্যবহার করে উপরে নিয়ে এসেছে তার খোঁজও পেতে পারেন। পাকিস্তানের সেই আর্মির ভূত বাংলাদেশের ঘাড়েও চেপে বসে আছে। সেনাবাহিনীতে মুক্তিযোদ্ধা মেরে সাফ করা হয়েছে। মৌলবাদ, জামাত-শিবিরকে এদের মদদেই বাংলাদেশে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ক্যাডেট কলেজ, ফৌজি বাণিজ্য এগুলো পাকিস্তান মডেল অনুসরণের উদাহরণমাত্র।

--
আপনার 'একতারা' পেয়ে কৃতার্থ হলাম। হাসি

কনফুসিয়াস এর ছবি

অন্য কেউ সুবিধা পেলে যে একটা অন্যায় জিনিস হালাল হয়ে যায়, জানা ছিলো না।

আমি সেটা বলিনি। আমি একটা তুলনাচিত্র টেনেছি সেনাবাহিনীর সাথে আর সব সরকারি সেক্টরের। কোন কিছু হালাল বা হারাম করার দুরভিসন্ধি আমার নেই। আপনার নিজের কথা আমার মুখে বসিয়ে নিলে তো মুশকিল।

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সাইফ শহীদ এর ছবি

তানভীর,

একটা সুন্দর আবেগময় লেখা এটি। এ জন্যে তোমাকে ধন্যবাদ।

যদি আবেগ বাদ দিয়ে তোমার লেখাটি পড়তে যাই তবে কতগুলি ঐতিহাসিক সত্য আমাদেরকে জানতে হবে। মুখে মুখে এখানে (আমেরিকাতে) সবাই ভেটারেনদের জন্যে অনেক সন্মান দেখায় ঠিকই - কিন্তু কাজের বেলায় অনেক বঞ্চিত তারা। এখানকার 'হোমলেস' মানুষদের একটা বড় অংশ ভেটারেন। আমার বেশ কিছু ঘনিষ্ট বন্ধু আছে যারা ভেটারেন।

ভুললে চলবে না, বাংলাদেশ এক সময় পাকিস্তানের অংশ ছিল। ফলে অনেক পাকিস্তানী চিন্তা-ভাবনা আমাদের মধ্যে গেথে গেছে। সেই চিন্তার একটি হচ্ছে ভারতকে সন্দেহের চোখে দেখা। যার জন্যে আজও আমরা ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে হিমসিম খাচ্ছি। অথচ এক কালের চরম শত্রু ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স এখন প্রায় অনেকটা এক দেশের অঙ্গভুত হয়ে যাচ্ছে, সামরিক সহযোগিতার চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে।

আদিতে ক্যাডেট কলেজগুলি করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের ইটন, হ্যারো, ইত্যাদি 'পাবলিক স্কুলের' অনুকরনে। পৃথিবীর আরও অনেক দেশে এমন প্রতিষ্ঠান আছে। যেহেতু কঠিন ভর্তি পরীক্ষা পাশ করে এগুলিতে ঢুকতে হয়, তাই এখানকার ছেলে-মেয়েদের পরীক্ষার ফলাফল স্বাভাবিক ভাবেই ভাল হয়। সরকারের পক্ষে এদেরকে আর্থিক খরচ দিয়ে চালানোর অসুবিধা ফলেই এ গুলিকে প্রতিরক্ষার ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। এক দিক দিয়ে ভালই হয়েছে, নাহলে হয়তো সেই টাকাটা ব্যায় হত যুদ্ধ জাহাজ বা যুদ্ধ বিমান কিনে, এবং মন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চ পদস্থ ব্যাক্তিদের পকেটে যেত ঘুষ বা কমিশনের টাকা।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর ব্যাপারে লিখতে গেলে এই ক্ষুদ্র পরিসরে সেটা সম্ভব হবে না। সুযোগ পেলে আমার নিজের লেখাতো হয়তো কখনও এ ব্যাপারে লিখবো।

জিয়া, এরশাদ, মঞ্জুর, তাহের, খালেদ মোশারফ - এরা কেউ কিন্তু ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ছিল না। অন্য দিকে, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৮ জন ক্যাডেট নিহত হয়ে শহীদ হয় এবং একাধিক ক্যাডেট সক্রীয় মুক্তি যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে।

সাইফ শহীদ

সাইফ শহীদ

তানভীর এর ছবি

সাইফ ভাই, আপনার মন্তব্যটা খুব ভালো লাগলো। গতকাল (মানে এখন পরশু) ভুল করে অফিস চলে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি ছুটি। পথে ডাউনটাউনে দেখলাম প্যারেড হচ্ছে। সবাই সেজেগুজে মেডেল লাগিয়ে প্যারেডে যাচ্ছে। তাই হয়তো ভেটেরানদের নিয়ে একটু চিন্তাভাবনা হলো। ঠিক বলেছেন সবই আসলে মুখে মুখে। ভেটেরানদের কথা কেউ শুনলে তো আর এত যুদ্ধবিগ্রহ লেগে থাকত না।

আপনার লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। অনেক ধন্যবাদ।

আশরাফ [অতিথি] এর ছবি

সহমত কনফুসিয়াস। আমার জানামতে ক্যাডেট কলেজই একমাত্র সথান যেখানে ফোর্থ ক্লাস কর্মচারীর ছেলে আর মেজর জেনারেলের ছেলে টানা ছয়টি বছর একই মানে বেড়ে ওঠে।

সজলঃ ক্যাডেট কলেজ যদি মগজ হাঁটুতেই নামাতো তাহলে প্রতি বছর মেধাতালিকা'র কী হত একবার ভেবে দেখেছেন?

তানভীর এর ছবি

আপনি সজলের কথা ভুল বুঝেছেন। 'মেধাতালিকায়' স্থান পাবার জন্য তো আর বিশেষ স্কুলের প্রয়োজন নেই, তাই না? মগজ হাঁটুতে আছে বলেই আমরা ভারতের আইআইটি না বানিয়ে পাকিস্তানের ক্যাডেট কলেজ বানাই। তারপর ওদের আইআইটি বা এমআইটিতে পাঠিয়ে একেবারে নির্বাসন দিয়ে দিই।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি মেধাবীদের সেনাবাহিনীতে রিক্রুট করার পাকিস্তানি প্ল্যান বুঝাতে এটা ব্যবহার করেছি আসলে। ক্যাডেট কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা নিয়ে আমার কোন সন্দেহ নেই, তবে স্বীকার করছি আমার মন্তব্যে ভুল বোঝার অবকাশ থেকে যায়।

সজল

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাবনার খোরাক যোগালো লেখাটা।
ক্যাডেট কলেজ কি আসলেই পাকিদের আমদানি? উপমহাদেশে তো সবকিছুই ব্রিটিশরা আমদানি করেছিলো। সেক্ষেত্রে ব্রিটেনে ক্যাডেট কলেজ গোছের কিছু থাকার কথা। এটা আমার ধারণা। কেউ সঠিক তথ্য দিলে উপক্‌ত হই।

---আশফাক আহমেদ

তানভীর এর ছবি

ক্যাডেট কলেজ কি আসলেই পাকিদের আমদানি?

জ্বি ভাই। তথ্য আশা করি উইকিতে এবং মন্তব্যগুলো থেকে পেয়ে গেছেন। ধন্যবাদ।

কামরুল হাসান রাঙা [অতিথি] এর ছবি

বাংলাদেশেও অবসরপ্রাপ্ত সেনারা কম সুবিধা পায় না। তাছাড়া এদের অনেকেই বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যেও সম্পৃক্ত। এদের সামাজিক সম্মানও কম নয়।
আর ক্যাডেট কলেজ তো খারাপ কিছু নয়, এখানে অনেক বেসামরিক লোকের ছেলেমেয়েরাও পড়তে পারে। ক্যাডেটদের খুব অল্প অংশই তো পরবর্তীতে সামরিক বাহিনীতে যায়, অধিকাংশই অন্য পেশায় চলে যায়।

তানভীর এর ছবি

আমি দুর্বল লেখক। তাই কী বলতে চেয়েছি তাই হয়তো অনেককে বোঝাতে পারি নি। আমাদের অবসরপ্রাপ্ত সেনারা অবশ্যই বেশি সুবিধা পায়। কিন্তু তাদের তো আমরা (অবঃ) বলেও একটু হেয় করি, তাই না? চোখ টিপি

সামরিক বাহিনীতে রিক্রুট করার উদ্দেশ্যেই ক্যাডেট কলেজগুলোর সৃষ্টি। অন্য পেশায় চলে গেলে এগুলো রাখার কী প্রয়োজন?

আশরাফ [অতিথি] এর ছবি

"The idea behind the establishment of cadet colleges was to train the country's youth and instil in them high moral, sound mental capacity, breadth of vision, physical stamina, power of leadership and the capacity to run the rapidly expanding government administrative machinery. The cadet colleges were completely different from all existing types of secondary and higher secondary educational establishments, but soon became famous for their performance in terms of the excellent results of their students in public examinations. Such excellence was attributed mainly to rigorous scrutiny in intakes and the good quality of instruction."
(source: http://www.banglapedia.org/httpdocs/HT/C_0006.HTM)

আশরাফ [অতিথি] এর ছবি

আশফাক আহমেদ: সাইফ শহীদ ভাইকে কোট করছি, "আদিতে ক্যাডেট কলেজগুলি করা হয়েছিল ইংল্যান্ডের ইটন, হ্যারো, ইত্যাদি 'পাবলিক স্কুলের' অনুকরনে।"

আর উইকিপিডিয়া তো আছেই http://en.wikipedia.org/wiki/Cadet_Colleges_in_Bangladesh

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ।
সেই সাথে শহীদ আঙ্কেওকেও। উনার কাছে ক্যাডেট কলেজের ইতিহাস নিয়ে কিছু লেখা আশা করতেই পারি।
বাই দ্যা ওয়ে, আমার নিজেরও কিন্তু ক্যাডেটে পড়ার ব্যাপক শখ ছিল। ভাইভায় বাদ পড়ে গেছি মন খারাপ

বইখাতা এর ছবি

ক্যাডেট কলেজ নিয়ে আপনার মতামতের টোন আমার খারাপ লেগেছে। এই ব্যাপারে কনফুসিয়াসের মন্তব্যে সহমত। ক্যাডেট কলেজে যেমন উচ্চপদস্থ সেনাকর্মকর্তার ছেলেমেয়েরা পড়ে, তেমনি সরকারি চাকরি করা তৃতীয়/চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের ছেলেমেয়েরাও পড়ে; বড় ব্যবসায়ী, আমলা, সাধারণ বেসরকারী চাকরি করা মানুষজনের ছেলেমেয়েরা কিংবা প্রাইমারী/হাই স্কুলের শিক্ষকের ছেলেমেয়েরা, এরা পড়ে। এরা সবাই কিন্তু সেনাবাহিনীতে যায়না। এদের অনেকের রেজাল্টই কিন্তু বেশ ভাল। দেশের মানুষের করের টাকায় পড়ে, আবার পড়া শেষে দেশকেই সার্ভিস দেয় অনেকেই। তাই সমালোচনা করুন, ক্যাডেট কলেজ নিয়ে সমালোচনার সুযোগ তো আছেই, কিন্তু 'এলিট শিক্ষাব্যবস্থা' বা কৃষক-কুলি-মজুরের ঘাম ফেলা পয়সা আর জনগণের করের টাকায় শিক্ষাব্যবস্থা, এই কথাগুলোর সাথে নেগেটিভ টোনটা ভালো লাগলো না।

তানভীর এর ছবি

ক্যাডেট কলেজে কারা পড়ে আমি সেটা জানি। এখানে 'এলিট' হিসেবে আমি সিস্টেমের কথা বলেছি, কারো পারিবারিক অবস্থানের কথা বলি নি। ক্যাডেট কলেজ সামরিক বাহিনীতে রিক্রুট করার জন্যই সৃষ্ট, প্রত্যেককে সেজন্য মুচলেকাও দিতে হয়। সেখানে যদি উল্লেখযোগ্য অংশ না যায়, তবে এদের রাখার প্রয়োজনীয়তা আমি বুঝতে অপারগ। আর সপ্তম শ্রেণী থেকে সামরিক বাহিনী বিষয়ে একজন কিশোরের মগজ ধোলাইয়ের প্রয়োজনীয়তাও আমি সমর্থন করি না। আমেরিকা এত যুদ্ধ করে, কিন্তু এই জিনিস আমেরিকায়ও নাই। এগুলো হলো পাকিস্তানী বুদ্ধি। আমাকে এক পাকিস্তানি বলেছিল পাকিস্তান আর্মি ভারতের সাথে কখনো পারবে না জেনেও সবসময় যুদ্ধ লাগিয়ে রাখতে চায়। কারণ পাকিস্তান আর্মি এত বৃহৎ যে পাব্লিকের টাকায় এত বড় হাতি পুষতে হলে সীমান্তে সবসময় উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে হয়। ক্যাডেট কলেজগুলো তাদের তাই প্রয়োজন ছিলো তাদের সাপ্লাই চেইনে যেন ঘাটতি না পড়ে সেজন্য। আমাদের কী প্রয়োজন তা কি বলতে পারেন? জানতে আগ্রহী আমি।

বইখাতা এর ছবি

ঠিক আছে। আমার বোঝার ভুল থাকতে পারে। মতদ্বৈততা তো থাকতেই পারে তাই না? হাসি ক্যাডেট কলেজ নিয়ে আপনার কয়েক লাইনে আমি কী বুঝেছি সেটা আরেকটু পরিষ্কার করি।

'এলিট সিস্টেম' বলতে আপনি আসলে কী বুঝিয়েছেন আমার কাছে পরিষ্কার না। এই ব্যবস্থায় বেশি টাকা খরচ হয়, এটা? আপনার লেখার টোনে কিন্তু আমার এটা মনে হয়নি। মনে হয়েছে আপনি বুঝাচ্ছেন যে ক্যাডেট কলেজে পড়ে ধনবান শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা আর এখান থেকে বের হয় কিছু নাক উঁচু ছেলেমেয়ে। আবার বলছি, আমার বোঝার ভুল থাকতে পারে।

'ক্যাডেট কলেজ সামরিক বাহিনীতে রিক্রুট করার জন্যই সৃষ্ট, সেখানে উল্লেখযোগ্য অংশ যায় না, তাই ক্যাডেট কলেজের প্রয়োজন কী?' - ঠিক আছে, আপনার এমন মনে হলে আপনি এটা নিয়েই আলোচনা করতে পারতেন। আপনার পোস্টে ক্যাডেট কলেজ নিয়ে কয়েক লাইনে কিন্তু এই বক্তব্য বোঝা যায়না। অন্তত আমি বুঝতে পারিনি। আমার মতামত যদি জানতে চান তো বলবো এইরকম উঁচুমানের পড়াশোনা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, শৃংখলাবোধ জাগানো, খেলাধূলা, নিরাপত্তাসহ (মেয়েদের জন্য আরো বেশি ক্যডেট কলেজ/ বা এরকম স্কুল হওয়া উচিত) এরকম স্কুল ও কলেজ, ঢাকায় নয়, মফস্বলগুলোতে যদি বানানো যায় তো ক্যাডেট কলেজের মত স্কুলের/কলেজের প্রয়োজনীয়তা কমে যায়। আচ্ছা, বাকি সব বাদ দিলাম, শুধু পড়ালেখার মান আর নিরাপত্তার দিকটা রাখলাম। খেয়াল করুন, মফস্বলে, বিশেষ করে গ্রামের দিকে সব জায়গায় ভাল মানের স্কুল/কলেজ নেই। মেয়েদের স্কুল/কলেজে পড়া চালিয়ে যাবার পরিবেশ নেই, নিরাপত্তা নেই। ঢাকায় বা জেলা শহরে এসে ভাল স্কুলে/কলেজে পড়ার মত সুযোগ নেই। তীব্র প্রতিযোগিতা করে হলেও ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুযোগ পাওয়া তাদের জন্য কিন্তু বিরাট স্বস্তির ব্যাপার।

আর সপ্তম শ্রেণী থেকে সামরিক বাহিনী বিষয়ে একজন কিশোরের মগজ ধোলাইয়ের প্রয়োজনীয়তাও আমি সমর্থন করি না।

সামরিক বাহিনী বিষয়ে মগজ ধোলাই!!!! আপনি কি এই ব্যাপারে নিশ্চিত? আমি তীব্র দ্বিমত করছি। আর কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না।

আমাদের এলিট সেনাবাহিনীর বদৌলতে ‘ক্যাডেট কলেজ’ নামক এলিট শিক্ষাব্যবস্থা চালু আছে যা আসে কৃষক-কুলি-মজুরের ঘাম ফেলা পয়সা আর জনগণের করের টাকায়।

আপনি তো ক্যাডেট কলেজকে পুরো ভিলেন বানিয়ে দিলেন! আমার কাছে তাই মনে হলো। কৃষক-কুলি-মজুরের ঘাম ফেলা পয়সা আর জনগণের করের টাকায় পড়ে এরা সব দেশকে ভুলে যায় এমন কিছু? আপনার টোনটা আমার কাছে খুব নেগেটিভ লেগেছে। আমি এদের অনেককেই চিনি যারা পড়া শেষ করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এন জি ও কর্মী, পুরোদস্তুর থিয়েটারকর্মী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরিজীবি - এমন বিভিন্ন পেশায় থেকে দেশেই কাজ করে যাচ্ছেন, সরকারকে নিয়মিত কর দিয়ে যাচ্ছেন। হাসি

আরেকটা জিনিস। বাংলা, ইংরেজি, আরবির সাথে একই সমান্তরালে ক্যাডেট কলেজকে আরেক রকম শিক্ষাব্যবস্থা হিসাবে দাঁড় করালেন (!), এটা মানতে পারছি না।

ক্যাডেট কলেজের প্রসঙ্গেই পাকিস্তানকে টেনে আনলেন - এটাও আমার খারাপ লেগেছে। বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাবনা। লেখার টোন আমার খারাপ লেগেছে, ক্যাডেট কলেজকে পাকিস্তানের সাথে রিলেট করিয়েছেন যেভাবে, আমার ভাল লাগেনি।

যাইহোক, আপনার চিন্তাধারা, ক্যাডেট কলেজ সম্পর্কে মনোভাব আমার থেকে আলাদা হতেই পারে, এটা নিয়ে বেশি কথা বলেও আসলে লাভ নেই। যেটুকু না বললে খারাপ লাগতো, সেটুকু বলে ফেললাম। ভাল থাকবেন।

তানভীর এর ছবি

আপনার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা অবশ্যই। বাংলাদেশে সব সরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার বাজেট তো সরকার থেকেই আসে। পাব্লিকের টাকার বরাদ্দ সবখানে একই রকম হওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি। বাংলা-ইংরেজি-মাদ্রাসার বদলে একই রকম শিক্ষা ব্যবস্থার পক্ষেও আমি। যদিও বেসরকারি স্কুল কী করবে না করবে এটা তাদের ব্যাপার বলেই আমি মনে করি। ক্যাডেট কলেজ বেসরকারি হলে আমারও কিছু বলার ছিলো না। আমাদের সেনাবাহিনী পাকিস্তান বা আমেরিকার মতো এতো যুদ্ধবিগ্রহে নিয়োজিত নয় যে সেখানে সাপ্লাইয়ের জন্য দেশে আর্মির তত্ত্বাবধানে ক্যাডেট কলেজের মতো প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আপনি মেয়েদের ব্যাপারে যেটা বললেন তেমন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণও দেশে আছে- ভারতেশ্বরী হোমস। সদিচ্ছা থাকলে ক্যাডেট কলেজগুলোকে বেসরকারিখাতে এভাবেই গড়ে তোলা যেত।

আশরাফ [অতিথি] এর ছবি

আশফাক আহমেদ: ভাগ্যিস ভাইভাতে বাদ পড়েছিলেন; নাহলে "এলিট", "গরীবের নিমক খাওয়া নিমকহারাম", এইসব গালিগালাজ শুনতে হতো !

খুব সংক্ষেপে ক্যাডেট কলেজ নিয়ে বলতে গেলে- বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়া (মেধাবী বলছিনা) ছাত্রদেরকে একটা চমৎকার পরিবেশে টানা ছয় বছর ধরে সিজনিং করা হয়। ফলে যে শুধু রাঁধতে জানতো, সে চুল ও বাঁধা শেখে। ভাল রেজ়াল্ট একটা স্বাভাবিক আউটকাম; যেহেতু সারাদেশের বাছাই করা পড়ুয়া ছাত্ররা একসাথে হয়। ইদানীং প্রতি ব্যাচ থেকে গড়পরতায় শতকরা মাত্র ১০ - ২০ ভাগ ছাত্র সামরিক বাহিনীতে যোগ দিচচছে; বেশিরভাগই চলে যায় বুয়েট, বিআইটি, মেডিক্যাল কলেজ কিংবা অন্যান্য প্রতিষঠানে উচ্চশিক্ষারথে।

আশা করি সাইফ শহীদ ভাই সুন্দর কোনো লেখা নিয়ে আসবেন; যা আপনার মত মুক্তমনা মানুষের কৌতূহল নিবৃত্ত করার পাশাপাশি "অনধজনে দেহ আলো" এর কাজ ও করবে।

তানভীর এর ছবি

আপনিও বিষয়টা ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন বুঝতে পারছি হাসি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

কনফুসিয়াস এর ছবি

তানভীর ভাই,
আমি খেয়াল করে দেখলাম, ক্যাডেট কলেজ নিয়ে আপনি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছেন যে, এগুলোর কোন প্রয়োজন নেই। কেউ সিদ্ধান্ত নিয়ে হাত ও মাথা গুটিয়ে বসে থাকলে তাকে কিছু বোঝানো মুশকিল।

দেখলাম উইকির লিংক থেকে আপনি কোট করেছেন, কিন্তু প্রথম দুটো লাইন সম্ভবত ইচ্ছে করে বাদ দিয়ে গেছেন, যেখানে লেখা ছিলো-
The system of cadet college was first introduced in Germany in the era of Bismark. Napoleon Bonaparte introduced this in France.
কারণ এটা বাদ দিলে ক্যাডেট কলেজ পাকিস্তান থেকে আমদানীকৃত এটা প্রমাণে আপনার সুবিধা হয় বোধহয়।


আপনি মিলিটারি স্কুলের কথা বলেছেন। মিলিটারি স্কুল নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নাই। মিলিটারি স্কুল বলতে আমি মিলিটারি একাডেমি বা নেভাল একাডেমি জাতীয় প্রতিষ্ঠানই বুঝি।

আমেরিকা এত যুদ্ধ করে, কিন্তু এই জিনিস আমেরিকায়ও নাই। এগুলো হলো পাকিস্তানী বুদ্ধি।

আপনার জ্ঞাতার্থে জানাই, মিলিটারি স্কুল আর মিলিটারি একাডেমি এক জিনিস নয়। মিলিটারি একাডেমি হচ্ছে বিএমএ, বা বিএনএ ধরণের প্রতিষ্ঠান, যেখানে সামরিক অফিসারদের ট্রেনিং চলে। আর মিলিটারি স্কুল নিয়ে আপনার মাথাব্যথা নেই বলেই হয়তো এসোসিয়েশান অব মিলিটারি কলেজেস এন্ড স্কুলস অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস এর এই লিংকটা আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে।
অবশ্য আমার ভুলও হতে পারে। উইকি থেকে যেভাবে কোট করেছেন, দেখে মনে হলো, এড়ায়নি, হয়তো এক চোখ বুজেই ছিলেন আপনি!

'ক্যাডেট কলেজ আমাদের দেশে অপ্রয়োজনীয়'- এরকম একটা কথা ডিনারের পরে আয়েশী ঢেঁকুরের সাথে বলে ফেলা যায় হয়তো। কিন্তু এই সিদ্ধান্তে আসাটা বিস্তর পরিসংখ্যান ও রেকর্ড ঘেঁটে দেখার বিষয়। জোর করে পাকিস্তানের ছাতার তলে না ঢুকিয়ে যদি সেরকম শক্ত যুক্তি কখনও আনতে পারেন, তবেই এ বিষয়ে সামনে আলোচনা এগুতে পারে, তা না হলে ফি আমানিল্লাহ।
ভাল থাকবেন।

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

তানভীর এর ছবি

কিন্তু প্রথম দুটো লাইন সম্ভবত ইচ্ছে করে বাদ দিয়ে গেছেন

ইচ্ছে করে বাদ দেই নি। ওই দুটো লাইন থাকলেই তো বরং ব্যাপারটা যে রাজকীয় সেটা বেশ পোক্ত হয় হাসি

কারণ এটা বাদ দিলে ক্যাডেট কলেজ পাকিস্তান থেকে আমদানীকৃত এটা প্রমাণে আপনার সুবিধা হয় বোধহয়।

আমার প্রমাণ করার কিছু নাই, সুবিধা হওয়ারও কিছু নাই। ক্যাডেট কলেজ আমার লেখার বিষয় ছিলো না, উদাহরণ হিসেবে এসেছে। আপনি সেটাকে নিজেই নিজের গায়ের ওপর টেনে নিয়ে গেছেন। উইকির লিংকও আমি দেই নি। আর এটা যে পাকিস্তানের আমদানীকৃত সে ব্যাপারে তাতে পরবর্তী লাইনগুলোও হয়তো আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে বা জেনেও স্বীকার করতে চাইছেন না-

After partition in 1947 the new state of Pakistan, consisting of East and West Pakistan, the system was introduced by the then President of Pakistan Field Marshall Ayub Khan.

গুগলে 'ক্যাডেট কলেজ' নামে সার্চ দিলে শুধু বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের কলেজগুলোই পাওয়া যায়। এ জিনিস যে পাকিস্তান থেকে এসেছে তা বুঝতে বেশি গবেষণার প্রয়োজন হয় না। আর আম্রিকার মিলিটারি স্কুল সম্পর্কে জানানোর জন্য ধন্যবাদ। এগুলো এখানে না থাকলেই বরং অবাক হতাম। কিন্তু এগুলোর পেছনে সাধারণ স্কুলের চেয়ে বেশি বাজেট বরাদ্দ হয় কিনা সেটাও দেখার বিষয়।

জোর করে পাকিস্তানের ছাতার তলে না ঢুকিয়ে যদি সেরকম শক্ত যুক্তি কখনও আনতে পারেন, তবেই এ বিষয়ে সামনে আলোচনা এগুতে পারে, তা না হলে ফি আমানিল্লাহ।

আপনার বরং ব্যক্তিগত বায়াসনেসের কারণেই এ বিষয়ে আলোচনা না করা ভালো। নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি সকলেরই আলাদা একটা মমতা থাকে। পাকিস্তানের ছাতাটা তাই আপনি দেখতে পাচ্ছেন না- এতে আমি দোষের কিছু দেখছি না।

কনফুসিয়াস এর ছবি

আপনার প্রতিমন্তব্যগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং হচ্ছে, এবং কনফিউজিং।
যেমন এটা,

ইচ্ছে করে বাদ দেই নি। ওই দুটো লাইন থাকলেই তো বরং ব্যাপারটা যে রাজকীয় সেটা বেশ পোক্ত হয়

তাহলে কেন বাদ দিয়েছেন?
অথবা এটা-
উইকির লিংকও আমি দেই নি। আর এটা যে পাকিস্তানের আমদানীকৃত সে ব্যাপারে তাতে পরবর্তী লাইনগুলোও হয়তো আপনার চোখ এড়িয়ে গেছে বা জেনেও স্বীকার করতে চাইছেন না-

উইকি থেকে নিয়ে আপনি কিছু লাইন কোট করেছেন। সেটা হচ্ছে একটা প্যারার মাঝের কিছু লাইন। শুরু বা শেষের লাইন বাদ দেয়ার দায় তো আপনার, আমার নয়।
আম্রিকার মিলিটারি স্কুল সম্পর্কে জানানোর জন্য ধন্যবাদ। এগুলো এখানে না থাকলেই বরং অবাক হতাম।

কয়েক মন্তব্য আগেও আপনি সদর্পে ঘোষণা করেছিলেন পাকিস্তান আর বাংলাদেশ ছাড়া দুনিয়ার কোথাও এসবের নজির নেই। আর এখন লিংক দেয়ার পরে বলছেন এগুলো না থাকলেই অবাক হতেন!

আপনার বক্তব্যে স্থিরতা না পেয়ে আমি রীতিমত কনফিউজড হয়ে পড়ছি। এখন বসে বসে ভাবছি ঘরে ঘরে ক্যাডেট কলেজ বিরোধী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা যায় কি না। হে বঙ্গ সন্তান, তোমরা আর যাহাই করো, ক্যাডেট কলেজে পড়িও না।

-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

তানভীর এর ছবি

হা হা। আপনার মন্তব্যেও আমি বেশ মজা পাচ্ছি। আমার পোস্টের বিষয় ক্যাডেট কলেজ নয়। আপনি বারবার সেদিকেই বিষয়টা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।

ক্যাডেট কলেজে যেতে আমি কাউকে মানা করি নি। সিস্টেম আছে, যাবেন না কেন? সরকারি টাকায় দেশে আর্মি পরিচালিত এই সিস্টেম পছন্দ নয় এটুকুই। মাদ্রাসাও যেমন পছন্দ না। এক কাজ করুন মাদ্রাসার বিরুদ্ধেও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলুন। চোখ টিপি

কনফুসিয়াস এর ছবি

আমার পোস্টের বিষয় ক্যাডেট কলেজ নয়। আপনি বারবার সেদিকেই বিষয়টা টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।

ঠিক কথা। অন্তত আপনার পোস্ট পড়ে আমারও মনে হয়েছে আপনার পোস্টের বিষয় ক্যাডেট কলেজ নয়। পোস্টে বরং ক্যাডেট কলেজকে আপনি জোর করে টেনে এনেছেন, মানে একটা কিছু বলে দিলাম আর কী, এই ভঙ্গিতে। সেটার পেছনে উদ্দেশ্য কী ছিল জানি না, তবে আপনার ভঙ্গি স্বস্তিকর ছিল না।

আমার প্রথম মন্তব্যে কিন্তু আপনার পোস্টের সবগুলো বিষয়েই কথা বলেছিলাম, শুধু ক্যাডেট কলেজ নয়।

আর, মাদ্রাসার বিরুদ্ধে আমি আন্দোলন করব না। কারণ এই শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আমার ভালো ধারণা নেই। এবং স্বল্পজ্ঞান নিয়ে আমি কোন কিছু সম্পর্কে আলটপকা মন্তব্য করি না, পক্ষে বা বিপক্ষেও অবস্থান নিই না। হাসি
ভাল থাকবেন।
-----------------------------------
আমার জানলা দিয়ে একটু খানি আকাশ দেখা যায়-

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হক এর ছবি

আমাদের আর্মি কেন ক্ষমতা দখল করে আর ইন্ডিয়াতে করে না, এইটা স্রেফ পাকি উত্তরাধিকার, এমন সরল কোন উত্তর নাই। এমন উত্তর মেনে নেয়াটা কেবলই গভীরে যেয়ে সত্য খুজতে অস্বীকার করার মত।

৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সেনাবাহিনী একটা বেসামরিক সরকারের অধীনে ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে সেই সরকারই আমাদের দেশ চালানোর দায়িত্ব নেয়। এখন প্রশ্ন ওঠে এরপর আমাদের পলিটিশিয়ানরা আর্মিকে কিভাবে হ্যান্ডল করলেন।

যে কোন দেশের পলিটিশিয়ানরা দল-মত নির্বিশেষে আর্মিকে পলিটিক্সের বাইরে রাখেন। আর্মির সবচেয়ে বড় মোটিভেশন কিন্তু শ্রদ্ধা। সবদেশে সবযুগেই আর্মি সবচেয়ে বেশি আর্থিক, সামাজিক সুবিধা পায় এবং সবাই সেটাকে সম্মানের অংশ হিসেবেই দেখে। ৭১ এর পরবর্তী সরকার আর্মিকে দেখলেন শত্রু হিসেবে। চকচকে রক্ষী বাহিনীর সামনে লুঙ্গী, ছেড়া বুট পড়া আর্মির মোরাল খুব উন্নত থাকার তো কোন কারন নাই। আর্মির ট্র্যাডিশন ভেঙ্গে পাকিস্তান ফেরতা (যেমন এরশাদ) কে আর্মিতে পূনঃস্হাপন করলেন। আর জাসদ মাঠের রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে সেনাবাহিনীকে নিয়ে এলো ক্ষমতা পরিবর্তনের টুল হিসেবে। সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনৈতিক সঙ্গঠন জাসদেরই গড়ে তোলা। বামদল গুলোর সেনাবাহিনীর প্রতি যে বিদ্বেষ সেটাতো কেবল মাত্র ৭ই নভেম্বরের বিপ্লবের ব্যর্থতার কারনেই। ৭ই নভেম্বরকে আমি বিএনপি ধারার বিপ্লব নয়, বামদলগুলোর বিপ্লব বলেই মনে করি, যেটা ব্যাকফায়ার করেছে। আর্মিকে আর্মির মত আমরাই থাকতে দেইনি।

আর্মিকে বিচ্ছিন্ন করে উত্তর খোজার কিছু নেই। ভারত এবং বাংলাদেশের পলিটিক্স কেন ডিফারেন্ট, আমাদের ছাত্ররা কেন পরীক্ষা পেছানোর আন্দোলন করে, যেকোন ইস্যূতে গাড়ি ভাঙে, কেন এতো বছরেও আমরা স্রেফ আমদানি নির্ভর জাতি রয়ে গেলাম, সব কিছুরই একটা ফান্ডামেন্টাল উত্তর আছে। এই মৌলিক সমস্যা না তাড়িয়ে বাকি সব আলোচনা বৃথাই।

তানভীর এর ছবি

হালকা দ্বিমত থাকলেও আপনার বক্তব্য পছন্দ হলো। উত্তরাধিকার বলতে দুটো দেশের খানিকটা একই পথে আগানোর কথা বুঝিয়েছি। ক্যু, সামরিক শাসন, মৌলবাদ আমদানী, অস্থিতিশীল গণতন্ত্র। মাঝখানে ইউএন মিশনের মূলা ঝুলে যাওয়ায় আমরা কিছুটা রক্ষা পেয়েছি।

হক এর ছবি

রক্ষা পেলেন কই? ১/১১ এর পেছনে ইউএন মিশনের মুলোই তো আর্মির সবচেয়ে বড় মোটিভেশন ছিল নাক গলানোর।

আমার ব্যক্তিগত ধারনা হচ্ছে এইরকম। ৭৫ এ আমাদের সামরিক শাসন এলো, যেটা বিশ্ব-বাস্তবতায় এড়ানোর হয়তো খুব একটা উপায় ছিল না। ষাট কিংবা সত্তরের দশকে স্নায়ু যুদ্ধের বলয় বদলাতে সরকার পাল্টানোর জন্য সামরিক অভ্যূথান একটা পছন্দসই টুল ছিল। ৯০ এর পর যখন সামরিক বাহিনী অনেকটাই নিজেকে গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল, সেখানে আমরা কেন এগুতে পারলাম না। ৯০ এর পর আমাদের ব্যর্থতার লজ্জা ঢাকতে জলপাই রঙা আড়াল আর নেই। ৯০ এর আন্দোলনের সফলতায় আর্মির একটা গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা ছিল। আর্মি এরশাদের অনুরোধ ফিরিয়ে দিয়ে, জনগনের পাশে দাড়িয়েছিল। এইটা কেন আর্মিকে আমাদের কাছে আনতে পারলো না, সেইটে ভাবার বিষয়। আমি মনে করি, আর্মির সাথে আমাদের যে সম্পর্ক সেটা অসুস্হ। এটা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। এটা নিয়ে অনেক কাজ করার আছে। তবে এর জন্য বড় উদ্যোগটা আর্মি থেকেই আসতে হবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমাদের সেনাবাহিনী কী কী করেছে? এর লিস্ট বানাতে সবার আগে যেটা চোখে পড়ে তা হলো একের পর এক অভ্যুত্থান, রক্তপাত, ক্ষমতা দখল আর নিজেদের বাণিজ্য... এখন আর তারা ক্ষমতা দখলে উৎসাহী না, বাণিজ্য সম্প্রসারণ করে পুরো দেশের মালিক বনে যাওয়ার চেষ্টায় আছে।
এই সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধা থাকে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তানভীর এর ছবি

সাফি এর ছবি

ক্যাডেট কলেজে কি কোন শারীরিক প্রতিবন্ধী ছাত্র/ছাত্রী ভর্তি হতে পারেন?

আশরাফ [অতিথি] এর ছবি

না পারেনা। শারীরিক ও মানসিক ভাবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়াটা অন্যতম প্রধান শর্ত

jisan এর ছবি

এই পোস্টের কোনো এক কমেন্টে একটা ভুল তথ্য দেয়া হয়েছে। ক্যাডেট কলেজগুলো কখনই প্রতিরক্ষার বাজেট এ চলে না। বরং শিক্ষা বাজেট এর একটা বড় অংশ অযাচিত ভাবে ক্যাডেট কলেজগুলোতে খরচ করা হয়।

সোহেল  [অতিথি] এর ছবি

আপনার ধারনা ও জানা পুরোপুরিই ভুল। ক্যাডেট কলেজের খরচ প্রতিরক্ষা বাজেট থেকেই আসে। যেমনটা বিকেএসপি র খরচ স্পোর্টস খাত থেকে ও মেডিকেল কলেজের খরচ হেল্থ মিনিস্ট্রি থেকে আসে। আমি ক্যাডেট কলেজের এ ব্যাপারে ১০০% নিশ্চিত। যদিও শিক্ষা মন্ত্রনালয় এ খাতের খরচ ও সম্ভবত মেডিকেলের খরচ তাদের সমীক্ষায় দেখায় যেহেতু এটা শিক্ষার খরচ, কিন্তু এটা ডিফেন্স বাজেটের অংশ।

সোহেল [অতিথি] এর ছবি

আমেরিকার ভেটেরেন'স ডে নিয়ে আমেরিকানদের মনোভাব যথেষ্ট প্রশংসার দাবী রাখে, লেখক এখানে যেটা খুব ভালভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এরা দু'শ বছর ধরে যুদ্ধ করছে, সব যে ন্যায়ের তাও নয়, এত বছর ধরে আছে বলেই এদের এই ভেটেরেন প্রীতি - কারন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আরো কত।
আমাদেরও কিন্তু ভেটেরেন আছে যারা যুদ্ধ করেছেন। আমরাও তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

কিন্তু আমেরিকানরা সেনাবাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল এটা পরোপুরি সঠিক নয়। আমরা কি চাই আমাদের সেনাবাহিনী এভাবে বছর বছর যুদ্ধে যাক, তাহলে আমাদের সবার পরিবারেরও দু একজন তার মধ্যে থাকবেন - মারা যাবেন বা বেচে আসবেন, এবং আমাদের সেনাবাহিনীর মধ্যে অনেক ভেটেরেন থাকবেন ও সেনাবাহিনীর প্রতি আমাদের প্রীতিটা পোক্ত হবে। তাই আমেরিকার সাথে আমাদের সেনাবাহিনীর তুলনা করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত সেটা আলোচনার দাবী রাখে।

আমেরিকার বছরের সামরিক বাজেট ৭০০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের দেশের সব কিছুর পুরো বাজেট ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার। ওদের ১ বছরের বাজেট দিয়ে আমাদের দেশ ৪০ বছর চলতে পারবে। তাই আপনি সৈনিকদের সুযোগ সুবিধার তুলনাটা মন খারাপ করল। আমেরিকার সেনাবাহিনীর বেতন নিয়ে আপনার জানায় ভুল আছে। তাদের বেতন, সুযোগ সুবিধা কিন্তু ভাল - আপনি একদম লোয়েষ্ট পদের টেমপোরারি প্রাইভেটদের কথা বলছেন হয়তো - তাদেরও সব টাকা, সব সুযোগ সুবিধা যা পায় তা মিলিয়ে কমপেনসেশন ধরা হয় বছরে ৯৯,০০০ ডলার - আমেরিকান এজেন্সি goarmy.com থেকে এটা নেয়া - বাংলাদেশের যারা সেপাই পদবির (পার্মানেন্ট সৈনিক) এটা কি তাদের সাথে তুলনা করার মত? কমিশন্ড অফিসাররা অনেক বেতন ও সুযোগ সুবিধা পান।

আমাদের সেনাবাহিনীর অনেক দোষ আছে। মুল কাজের বাইরে এরা রাজনীতিতে নাক গলায়, এ রকম আরো অনেক। এগুলোর সমালোচনার জন্য আমার মনে হয় ঠিক আমেরিকার সাথে তুলনাটা ঠিক নয়। আমাদের সমসাময়িক বিবেচনায়ই এগুলো আলোচনা হতে পারে, গঠনমুলক ভাবে।

আপনার ক্যাডেট কলেজ টেনে আনাকে ভাল লাগলনা। এর পরের কমেন্টগুলো পড়ে মনে হল আপনার জানায় এখানেও অনেক ভুল আছে এবং এ ব্যাপারে আপনি অনেকটাই প্রেজুডিসড - আপনি আপনার মত প্রকাশ করেছেন ঠিক আছে। পরে সময় করে তা নিয়ে লিখব। আশাকরি পড়ে দেখবেন।

এই লেখাটা নিয়ে আমার মনে খটকা আছে। আপনি কি আমেরিকান ভেটরেনদেরকে ভুলে না যেতে বলছেন, কেন? এরা তো দরকার হলে ৭১ এ আমাদের দেশেও যেত, আমাদের বিরুদ্ধে। তাই নয় কি? আমাদের সৈনিকদের
ভাল খারাপ দুটোই আছে, নাকি। আপনি তো শুধু খারাপ দিকটাই বলেছেন, তাই আমার মনে হচ্ছে আপনি আমেরিকান নাগরিকের ভিউ থেকে এটা লিখেছেন।

তানভীর এর ছবি

আমেরিকান সিপাই ৯৯,০০০ ডলার বেতন পেলে তো হতোই, এই মন্দার বাজারে কেউ চাকরি ছাড়া বসে থাকত না! ইরাক যুদ্ধের সময় এখানকার টিভিতে সৈন্যদের বেতন নিয়ে একটা প্রতিবেদন দেখিয়েছিলো। সেটা ২০০৩ বা ০৪ সালের কথা। তাতে বেতন বছরে বারো হাজারই বলেছিলো। আমার সেটা স্পষ্ট মনে আছে, কারণ আমি তখন একজন গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট এবং মনে মনে ভাবছিলাম এখানে অন্তত একজন সৈন্যের চেয়ে ভালো আছি। এই বারো হাজার হয়তো এখন বেড়ে চৌদ্দ-পনের হাজার হতে পারে, এর বেশি না। গোআর্মির যে লিংক দিয়েছেন তাতে দেখুন ২০১০ সালে ২ বছরের কম অভিজ্ঞতার একজন সৈন্যের বেতন বছরে ১৭,৩৬৬ ডলার। পাশে আবার (**) দিয়ে লেখা আছে প্রথম কয় মাস বেতন এর চেয়ে কম হবে।

আমি এখানে আমেরিকান সেনাবাহিনীর সাথে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কোনো তুলনা করিনি। জনগণের *আস্থা অর্জনের* ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছি এবং সেটা যে একভাবে হবে সেরকম কিছুও বলিনি বা হওয়াও আমার ধারণা অসম্ভব। সেনাবাহিনীকেই সেটার সমাধান বের করতে হবে।

ক্যাডেট কলেজ যদি আর্মি প্রতিষ্ঠান হয়ে থাকে তবে এটাকে টেনে না আনার তো কিছু নাই। 'বাংলাদেশে ক্যাডেট কলেজের প্রয়োজনীয়তা' বিষয়ক কিছু 'জ্ঞানগর্ভ' প্রতিবেদন পড়ার ইচ্ছা থাকলো। দেখি আমার 'স্বল্পজ্ঞান' তখন আপনাদের দৌলতে কিছু বাড়ানো যায় কিনা।

নাশতারান এর ছবি

ভালো লাগলো।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

তানভীর এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সোহেল [অতিথি] এর ছবি

এই কথাটা লেখা আছে -
"The Congressional Budget Office (CBO) recently estimated that the average Active Duty service member received a compensation package worth $99,000."
এই লিংকে -
"http://www.goarmy.com/benefits/total-compensation.html"

আমিও কিন্তু বেতনের কথা বলিনি, সব সুবিধা মিলে কমপেনসেশনের কথা বলেছি যেটা এখানে বলা আছে। আর

"আমেরিকার বছরের সামরিক বাজেট ৭০০ বিলিয়ন ডলার। আমাদের দেশের সব কিছুর পুরো বাজেট ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার।" এত ভাল এক ফান্ডেড আর্মিকে আপনি বলছেন লো পেইড - আমি অবাক হলাম। সেপাই, প্রাইভেট, ড্রাফটিং, ইত্যাদি বা ওখানকার পদবী নিয়ে আপনার খুব কিছু জানা আছে বলে মনে হল না। যেটুকু নিজের মনের মত পেয়েছেন তাই লিখলেন। আমি আবারো বলছি এত ভাল এক ফান্ডেড আর্মিকে আপনি বলছেন লো পেইড - আমি অবাক হলাম - যেট টাকায় আমাদের পুরো দেশ ৪০-৫০ বছর চলতে পারব।

"লেস্ট উই ফরগেট" - কদেরকে এই নিয়ে কিছু বললেন না যে?

আমি এখানেই ক্যাডেট কলেজ নিয়ে আপনার মতামতের ব্যাপারে আমার কমেন্ট লিখব সময় নিয়ে।

তানভীর এর ছবি

পোস্টে তো এন্ট্রি লেভেল সৈন্যের বেতনের কথা লিখেছি। ভালো করে তো পড়েন নি। ক্যাচাল করার জন্য কম্পেনসেশন, বাজেট এগুলো নিয়ে টানাটানি করছেন। আমেরিকায় কম্পেনসেশন মোটামুটি বায়বীয় জিনিস। কাগজে-কলমে অনেক কিছু থাকে। চোখে দেখা যায় না। আমি নিজেও রিটায়ারমেন্ট প্ল্যান, হেলথ ইন্সুরেন্স, লাইফ ইন্সুরেন্স ইত্যাদি গালভরা অনেক বেনিফিট/কম্পেন্সেশন পাই। আপনার মত বেতনের সাথে সেটা যোগ দিলে যে অংকের সাইজ হয় তাতে কল্পনায় বেশ আত্মপ্রসাদও পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে ফলাফল হলো এগুলোর জন্য প্রিমিয়াম কাটার কারণে বেতনের সাইজ আরো অনেক ছোটো হয়ে আসে। ট্যাক্সের কথা নাহয় বাদই দিলাম। আর্মির জন্য সেটা হয়তো মওকুফ।

আমেরিকা বা বাংলাদেশের সেনাবাহিনী নিয়ে আমার বেশি কিছু জানার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমি আমপাবলিক হিসেবে বাইরে থেকে তাদের কেমন দেখি সেটাই লিখব। এতে সবার একমত হতে হবে এমন কোনো কথা নেই।

'লেস্ট উই ফরগেট' ধরে নিন আমাদের ভেটেরান মুক্তিযোদ্ধাদের কথাই লিখেছি। খুশি?

সোহেল  [অতিথি] এর ছবি

"Chart reflects Basic Pay only and does not include bonuses, allowances and other benefits. Learn about total Army compensation." এই কথাটাও ওখানে লেখা, যেটা আপনি এড়িয়ে গেছেন।

আর আপনার পছন্দের সবচেয়ে লোয়েস্ট এক পোস্টের কথা বলেছেন।
বিভিন্ন মিশনে এদের বোনাস, এলা্উয়েন্স ইত্যাদি থাকে। এসবও অনেক বেলায়ই ক্যাশ। আরো অন্যান্য সুবিধা আছেই। এরা খুব কমই আর্মিতে যেতে (প্রাইভেট হয়ে) চায়, তাই কলেজ টুইশন, ভাতা ইত্যাদি লুক্রেটিভ লোভ দেখিয়ে নেয়া হয়। যা হোক, এ সব আলোচনাই গৌণ।

আমার কথা হল - আপনি আপনার জানার বেসিসে একটা থিওরী দিয়েছেন। আর আমি বলছি, আপনার একটা পয়েন্ট ঠিক আছে আমাদের আর্মির অনেক দোষ আছে - কিন্তু সেটা নিয়ে কথা বলতে যেয়ে আপনি এক ধরনের 'প্রেফারেন্সিয়াল' বায়াস ও প্রেজুডিস দেখিয়েছেন। মন খোলা রেখে আপনি আপনার থিওরী মডিফাই করবেন আশাকরি - মন বদ্ধ রেখে একই জায়গায় পরে থাকবেন না। তাহলে তো কোনো কিছুই আর জেনে কোনো লাভ নেই, আপনি আমি সবাই যদি সবকিছুই অলরেডি জেনে থাকি।

তানভীর এর ছবি

একটা বিষয় জানিয়ে রাখি। আমেরিকায় মিলিটারি স্কুল নামে www.amcsus.org সাইটে যেগুলোকে বলা হচ্ছে সেগুলোতে দেখলাম আসলে কোনো মিলিটারি অবলিগেশন নাই এবং এর অনেকগুলো বেসরকারিভাবে পরিচালিত।

ওয়েবসাইটেই Q&A -তে দেয়া আছে-

Q: What is the military service obligation?

A: There is no military obligation when you enroll.
Some college preparatory schools have Junior Reserve Officers Training Programs (JROTC) but there is no military obligation for participation.

Q: What is an Independent School?

A: Many of our schools are independent and are designed to complement public schools by providing a quality education in a caring, supportive, nurturing learning environment.
...
Independent military schools are governed by an independent board of trustees, which includes parents.
...
Funding for independent schools does not come from taxes or churches but rather from tuition-paying families and charitable contributions.

মোটামুটি যেসব স্কুলে ROTC প্রোগ্রাম থাকে বা কোনোভাবে মিলিটারি এফিলিয়েশন থাকে সেগুলোই মিলিটারি স্কুল নামে পরিচিত। আমেরিকান মিলিটারির ROTC- প্রোগ্রামের সাথে বাংলাদেশ মিলিটারির BNCC প্রোগ্রামের তুলনা করা যায়, যেগুলো বাংলাদেশের অনেক স্কুলে আছে এবং এগুলোতে অংশগ্রহণও ঐচ্ছিক। আর মিলিটারি এফিলিয়েটেড স্কুল হিসেবে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল, শাহীন স্কুল, রাইফেলস স্কুল ইত্যাদির নাম বলা যায়। আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী এগুলো সবই মিলিটারি স্কুলের আওতায় পড়ে।

বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের ক্যাডেট কলেজ সিস্টেম তাই এগুলোর চেয়ে ভিন্ন।

সোহেল [অতিথি] এর ছবি

"মোটামুটি যেসব স্কুলে ROTC প্রোগ্রাম থাকে বা কোনোভাবে মিলিটারি এফিলিয়েশন থাকে সেগুলোই মিলিটারি স্কুল নামে পরিচিত।" আমেরিকার সব ইউনিভার্সিটিতেই (৮০%) কিন্তু ROTC প্রোগ্রাম থাকে। অনেক স্কুলেও সেটা থাকতে পারে, তার মানে সেটা মিলিটারি স্কুল না। আপনি বিএনসিসি সম্পর্কেও ঠিক জানেন বলে মনে হল না। নিচে আমেরিকার কিছু মিলিটারি স্কুলের নাম আছে।

http://en.wikipedia.org/wiki/Category:Military_high_schools_in_the_United_States

সহজ কথা হল আপনি 'জিলা স্কুল' নাম দিয়ে সার্চ দিয়ে বলতে পারেন যে শুধু বাংলাদেশ আর পশ্চিমবংগেই এটা আছে, আর দুনিয়ার কোথাও নেই। কথা সত্য, কিন্তু আরেকটু গভীরে গেলে দেখা যায়, জিলা স্কুল শুধু একটা নাম, এটা একটা হাইস্কুল। তেমনি 'ক্যাডেট কলেজ' নাম দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ মিলিটারি সিস্টেমের কিছু স্কুল বানিয়ে, হ্যা পাকিস্তান আমলেই - 'কলেজ' কারন এটাতে একাদশ, দ্বাদশ আছে - আর 'ক্যাডেট' কারন এদেরকে ক্যাডেট বলা চলে। মিলিটারি হাইস্কুল কিন্তু বিভিন্ন নামে অনেক দেশেই আছে।

"গুগলে 'ক্যাডেট কলেজ' নামে সার্চ দিলে শুধু বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের কলেজগুলোই পাওয়া যায়। এ জিনিস যে পাকিস্তান থেকে এসেছে তা বুঝতে বেশি গবেষণার প্রয়োজন হয় না।" আপনার এ কথাটা জিলা স্কুল সার্চের মত হয়ে গেল এবং প্রচন্ডরকম বায়াসড। আপনি বর্তমানের ক্যাডেট কলেজ গুলোকে পাকিস্তানের সাথে লিংকের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন, অথচ সেই একই সময়ে গোটা সাতেক 'রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল'ও সারা দেশে বানানো হয়েছিল। রাজশাহী, চিটাগাং, জাহাংগিরনগর, বুয়েট, ময়মনসিংহ এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটিও সে সময়েই প্রতিষ্ঠা/কনভার্ট করা হয়েছিল। সংসদ ভবনও সে সময়ের তৈরি। সেজন্য সেগুলো আইয়ুব খানের ছোয়ার জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় নি।

আপনার সমস্ত কমেন্ট পড়ে আমার মনে হয়েছে আমি এই নিয়ে দশ পাতা লিখতে পারি, কারন আপনার জানায় অসংখ্য ত্রুটি আছে। তার চেয়েও বড়, আপনি এক ধরনের ব্যক্তিগত বিদ্বেষ পোষন করেন ক্যাডেট কলেজের ব্যাপারে - আপনার কমেন্ট থেকে তা স্পষ্ট। আপনার ভাই ফৌজদারহাটে গেলেও সেই বিদ্বেষ কমার চাইতে বাড়ার সম্ভাবনাটাই আরো বেশি - কারন আপনার পারিবারিক কারেন আপনি ভাসা ভাসা অনেক কিছুই জেনেই ভাবছেন, কিন্তু দুখজনক হল আপনি ভাবছেন - এ ব্যাপারে আপনার মতামত প্রতিষ্ঠা বা প্রচারের জন্য সেটুকুই যথেষ্ট। আমি এখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ে কোনো কথা বলছিনা, আমি এখানে দেশের কিছু ভাল স্কুলের কথা বলছি, যেগুলো ঢাকা কেন্দ্রিক এক দেশে সব গুলোই ঢাকার বাইরে অবস্থিত। যারা ঢাকার নাগরিক সুবিধা ভোগ করেন আর ভাবেন আমরা তো ঢাকা, নটরডেমে যেতেই পারি, আর চিন্তা কি - সারা দেশের অধিকাংশ মানুষ অতি সাধারন স্কুল/কলেজে পড়ুক, আর যারা পয়সা ওয়ালা তারাই ভাল করুক, মুখে সমাজতন্ত্রের বুলি ফুটিয়ে।

ক্যাডেট কলেজের জন্য বেশি বরাদ্দ হয়, এ কথাটাই আপনি বারবার বলে যাচ্ছেন - কেন হয় সেটা এড়িয়ে। এটা একটা আবাসিক প্রতিষ্ঠান যেখানে ছেলেমেয়েরা বছরে নয় মাস থাকে। অন্য স্কুলের মত একই বরাদ্দ হলে তারা কি ন্যাংটা হয়ে ক্লাস করবে, আর তাবু খাটিয়ে থাকবে, আর না খেয়ে মরে যাবে? এটা নয় মাসের জন্য তাদের বাড়ি। ক্যাডেট কলেজের খরচের ৬০% ই খাবার খরচ। 'আবাসিক প্রতিষ্ঠান' - ইটন কলেজ, হ্যারো স্কুল এগুলোর হাউস সিস্টেমের কপি ক্যাডেট কলেজ। উইলিয়াম মরিস ব্রাউন, উইলিয়াম পিট - নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড থেকে এদের নিয়ে আসা হয়েছিল ফৌজদারহাট, মির্জাপুরের প্রথম প্রিন্সিপাল হিসেবে। তারা সেভাবে ক্যাডেট কলেজ গুলোকে সাজিয়েছেন - হাউস মাষ্টার, হাউস টিউটর, প্রিফেক্টশিপ, হাউস কম্পিটিশন, প্রেপ ক্লাস, ডিনার ড্রেস - ক্যাডেট কলেজের ৮০% ট্রেডিশনই সেখান থেকে নেয়া যেগুলো তারা চালু করে দিয়েছেন।

বুয়েট, ঢাকা ইউনিভার্সিটিও তো এলিট প্রতিষ্ঠান, যেখানে বেছে বেছে কিছু ছেলেমেয়েদের নেয়া হয়। এলিট প্রতিষ্ঠান কি শুধু প্রাপ্তবয়েস্কদের জন্য জায়েজ?

আর ক্যাডেট কলেজ এলিট ইনস্টিটিউট হয়েছে তাতে কি হয়েছে? এটা তো পজিটিভ ভাবেই কনট্রিবিউট করছে। জিয়া, এরশাদ কি সেখান থেকে বের হয়েছে? তারা তো 'ডে স্কুল' সিস্টেম থেকেই বের হয়েছে। তাতে কি বগুড়া আর রংপুর জিলা স্কুল ইভিল হয়ে গেছে। যদি তারা কোনভাবে ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হত, আপনি নিশ্চয়ই ক্যাডেট কলেজের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করতেন। তাহলে এখন করেন না কেন?

আর ক্যাডেট কলেজ থেকে আর্মিতে যায় না এটা একটা মিথ - যারা যায় না সব ভার্সিটি, মেডিকেল, বুয়েটে ভীড় করে তাই এক ধরনের ইল্যুশন তৈরি হয়। এ নিয়ে আমি পরে আলোচনা করব। আসল কথা 'যারে দেখতে নারি, তার চলন বাকা'। সব কিছুর মধ্যেই আপনি দোষ খুজবেন।

ইত্যাদি হাজারো তথ্য আমি জানি। আমি এই নিয়ে ডিসেম্বরের শেষে এখানে একটা আর্টিকল লিখব। এখানের অনেক কমেন্ট নিয়ে তখন আলোচনা করব। আশাকরি খোলা মন নিয়ে সেটা পড়বেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথম কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে, ক্যাডেট কলেজসহ যেকোন আবাসিক প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ পর্যায়ের) বন্ধ করে দেয়া উচিত
আমি আর্থ-সামাজিক কথাটা বলেছি, কারন ব্যাপারটার সাথে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক দুটো কারনই জড়িত। দরিদ্র দেশের অর্থ খুব বুঝেশুনে খরচ করা উচিত। যেখানে ইনভেস্ট করলে সর্বোচ্চ রিটার্ন আসবে সেখানেই বিনিয়োগ করা উচিত। যেই অর্থ ক্যাডেট কলেজের পেছনে খরচ হয়, তার ৬০ শতাংশ বাজে খরচ। ৬০ শতাংশ, আধিক্য বোঝানোর জন্য বললাম, পরিসংখ্যানের তথ্য হিসেবে নয়। ব্যাপারটা খোলাসা করি। যে অর্থ ক্যাডেট কলেজগুলোর পেছনে খরচ হয়, তার একটা বড় অংশ ব্যবস্থাপনায় খরচ হয়। গাছের গোড়ায় রঙ লাগাও। ঘাস কাটো। চুনকাম করো। ইত্যাদি ইত্যাদি। যারা আমাদের চুল কাটতো, তারা কলেজের ঘাসও কাটতো। সুতরাং, ব্যবস্থাটা কতোটা এলিট, সেটা দেখাই যাচ্ছে। ক্যাডেট কলেজের সাধারন শিক্ষকেরা যে ধরনের সুবিধা পান, ঢাকার অনেক স্কুল কলেজের প্রিন্সিপ্যালও সেই সুবিধা পান না। তার উপরে টু-পাইস কামানোর ধান্ধাতো আছেই।
আমাদের প্রিন্সিপ্যাল, গণিতের বিরাট বড়ো মাওলানা ছিলেন। অর্থাৎ শিক্ষক ছিলেন গণিতের, কিন্তু, প্রতি শুক্কুরবার খুতবা দিতেন। সোয়া দুই ঘন্টার বিভৎস খুতবা। তো তাঁর পাশের রুম থেকে সার্টিফিকেট ক্লিয়ারেন্স আনতে জন প্রতি ঘুষ দেয়া লাগতো।
ক্যাডেট কলেজে প্রতি ক্যাডেটকে তার বাবার আয়ের ১২ শতাংশ হারে বেতন দিতে হয়। সুতরাং, কথিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মার্কা ২০/২৫ টাকার বেতন সেখানে নেই। (বাংলাদেশে সত্যিই কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে?)
সামাজিক কারনটা বেশ ভয়াবহ। আমার মতে মানুষকে সমাজের ভাল-মন্দের ভেতর বড়ো হতে দেয়াটাই শ্রেষ্ঠ। মানুষ হইতে দাও ভাল-মন্দ সাথে। শুধু ক্যাডেট কলেজ নয়, যে সব ছেলেপেলে ক্যান্টনম্যান্ট বা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বড়ো হয়, এদের অধিকাংশের মাথায় ক্র্যাক থাকে।
যাঁরা, মেজর জেনারেলের আর আর্দালির ছেলে একসাথে পড়ে দেখে ভেবেছেন, বিশতলা আর গাছ তলা সমান হয়ে গেছে, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। মেজর জেনারেল লাগবে না, সামান্য লে: কর্ণেলের ছেলে যেরকম দাপট নিয়ে চলে, খুব সম্ভবত তারেক জিয়ার আস্ফালন ম্লান হয়ে যাবে। আগের লাইনটা আক্ষরিক অর্থে নিয়েন না। আসলে আর্মি অফিসারদের ছাওয়ালরা ভালো করেই জানে, ক্যাডেট কলেজ তাদের কিছুই করতে পারবে না। তাই তাদের হাবভাবও সেরকম থাকে। আর আমরা যারা পাব ছিলাম (well, আমি একেবারে পাব ছিলাম না, আমার নিকটাত্মীয় সেনা উপপ্রধান ছিলেন), তারা কাচুমাচু হয়ে থাকতাম। ভয়ে ত্রটস্থ থাকতাম। কখন গার্জিয়ান কল করে!
আমার খুব ইচ্ছা আছে এই ৬ বছরে ভয়ংকর অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু লেখার।
কতো কিছুই তো ইচ্ছা করে। জীবনটা যে খুব ছোট!

সাজ্জাদ বিন কামাল

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ভাবছিলাম আমেরিকায় সেনাবাহিনী জনগণের যে আস্থা অর্জন করেছে আমাদের সেনাবাহিনী তা পারে নি কেন? কেন আমরা এদের চোখে এখনও ‘ব্লাডি সিভিলিয়ান’ রয়ে গেলাম? আমাদের সেনাবাহিনী কেন এখনো ঢাকা শহরের বুকে ট্যাংক উঁচিয়ে খাড়া হয়ে থাকে? কেন এদের মধ্যে ‘এলিট’ ‘এলিট’ গন্ধ? .... .... .... কী লজ্জা!! অথচ দেশের জন্য এ সেনাবাহিনীর সদস্যরাই প্রাণ দিয়েছিলো, পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে চেয়েছিলো। আর আজ তাঁদের উত্তরসূরীরাই .... .... ....

আফসোস, এই প্রশ্নটাই এই পোস্টের বটমলাইন হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু ক্যাডেট কলেজ সংক্রান্ত আপাত-অপ্রাসঙ্গিক আলোচনায় সেটা ঢাকা পড়ে গেল।

ক্যাডেট কলেজ থেকে শুধুমাত্র সেনাবাহিনীতেই রিক্রুট হয় না, বিশাল এক অংশ আধা-সামরিক জীবনের শেষে আবার সিভিলিয়ান জীবনেই ফিরে আসে। (তাদের স্ব-স্ব সিভিলিয়ান ক্ষেত্রে অনেক কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখার উদাহরণও আছে। এমন উদাহরণ সম্ভবত যেকোনো প্রতিষ্ঠানেই খুজে পাওয়া সম্ভব।) কিন্তু, ১২ বছরের একটা ছেলেকে শুধুমাত্র "সেনাবাহিনীতে" যোগদানের মোটিভেশন দেয়াটা আমার কাছে আগেও বেখাপ্পা লাগত, এখনও লাগে। মোটিভেশন যদি দিতেই হয়, তাহলে অন্যান্য ক্ষেত্রে নয় কেন? এই প্রশ্নের উত্তরের সঙ্গে কি কোনও অর্থনীতি জড়িত??

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।