অন্তহীন ভাঙচুর

তাপস শর্মা এর ছবি
লিখেছেন তাপস শর্মা [অতিথি] (তারিখ: সোম, ১৬/০৪/২০১২ - ১০:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

হয়তো একদিন স্বপ্ন সোনালী ফসল কুড়াবে। হয়তো একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যাবে বদলে গেছে আকাশ রঙ কিংবা সভ্যতার ইতিহাসের প্রচ্ছদ। হয়তো ততদিন স্বপ্ন দেখতেই হবে। হয়তো একদিন আমিও বদলে যেতে পারি। হয়তো আমিও একদিন অকৃতজ্ঞ হতে পারি। হয়তো একদিন বহির্বিশ্বের খোঁজে নাবিক হতে পারি। হয়তো একদিন কলম্বাসকে থামিয়ে দিতে পারি। হয়তো একদিন চোখের জল শুকিয়ে দিতে পারি। হয়তো একদিন নিউট্রিনোকে শাসন করতে পারি। হয়তো আমিও একদিন তোমার আঁচল থেকে সাড়া দিতে পারি। হয়তো একদিন তোমার প্রতিটি অলিখিত চুমোর হিসেব চাইতে পারি। এভাবেই হয়তো আমিও একদিন বদলে যেতে পারি।

খন্ডচিত্রঃ ০১

আজ প্রকৃতি সবটাই দেখিয়ে দিল। ঘুম ভাঙল ঝুপঝুপ শব্দে। কাল বৈশাখীর অভিবাদন! সারাদিন কাটল মেঘের ডাকে আর অবিরাম বর্ষণে।''মেঘ পিয়নের ব্যাগের ভেতর মন খারাপের দিস্তা/ মন খারাপ হলে কুয়াশা হয় ব্যাকুল হলে তিস্তা'' আরও ঝড়ুক, ঝড়তেই থাকুক। উদ্যাম... একরোখা। আর যাতে না থামে। এভাবেই ঝরুক। এভাবেই উড়িয়ে নিয়ে যাক। আকাশ, মেঘ, ভরা টইটুম্বুর নদী... ''তবে এই হোক তীরে জাগুক প্লাবন/ দিন হোক লাবণ্য হৃদয়ে শ্রাবণ''...

বিকেলে দেখা দিল একটা লাল টুকটুকে সূর্য। একটু হালকা বাতাস। আর সন্ধ্যার পর আকাশজুড়ে বসন্ত তারার হাট বসেছে। একটু শীত শীত ভাব, সামান্য কুয়াশার আস্তরণ। এবং সবকিছুকেই ছাপিয়ে গেছে পূর্ণ দ্যুতিতে ভাস্বর আকাশের বিলাস, পূর্ণ অলংকারে চাঁদ।

এখন শ্রেয়া ঘোষালের “মেঘডাকে জানি দেখা হবে’’ মজে আছি। রাত গভীর হবে, তিয়াস পল্লবে বলাকা হাসির কল্লোলে প্রেমিকা হয়তো কোন অদূরে একাকী ভ্রমণে যাবে। তারপর সব শান্ত, গভীর, নীরব হয়ে গেলে তুমি আর আমি বাইরে বেরাতে যাব। অলীক হিল্লোল রঙমশালে তুই আর আমি পাতাঝরার গান শুনব। এবং সব বিবর্ণতা মুছে তুমি বলবে - ''তুমি কান্নার রঙ। তুমি জোছনার ছায়া।''

খন্ডচিত্রঃ ০২

কবিতা কবিতা - চিৎকার, কতই না নিভৃত আলাপন। সব পেয়েছির দেশে তাই আমি বোকা হয়ে যাই। জীবনকে ডাকবাক্সে বন্দি হতে দেখি বারবার। কিন্তু চিঠির হদিশ পাইনা। খামগুলিও খালিখালি, ঠিক পাতা ঝড়ার গানের মতো; উদ্ভ্রান্ত কিংবা হতাশ। যেতে দিতে চাইনি, হয়তো চেষ্টায় ত্রুটি ছিলনা। শেষ হয়ে গেছে কবিতার বাউলিয়ানা। হঠাত একটা ঝঞ্ছা থেকে ঠিকরে নিয়েছে আলো। উত্তরণ ! তবে চলে গেছে , সবাই চলে গেছে...

খন্ডচিত্রঃ ০৩

স্বপ্নগুলি ইতিহাসের জীবাস্ম হয়ে যায়। কত গান ফরিওলার কন্ঠে কি মিষ্টি শুনায়। রঙ নয় ধূসরতা কিছু কাল পরেই চেপে ধরে। তবুও আমি হাঁটছি এই শহরে। প্রতিদিন আমি হাসি, প্রতিদিন আমি কাঁদি। সিগারেটের ধোঁয়া উড়ে যায় হর্কাস কর্ণারে। পায়ের ধূলায় ব্যাস্ততা চলতে থাকে রাজবাড়ি হয়ে প্যারাডাইস চৌমহনী, আর.এম.এস কিংবা বটতলায়। তবু ক্লান্তি আসেনা। উমাকান্তের সবুজ ঘাস সারাদিন ফুটবল নিয়ে গড়াগড়ি খেলে। তবুও তার বিরাম নেই, ক্লান্তি নেই। এখন অনেক বেশী কাছের মনে হয়। শ্বাস নিতে একটা তৃপ্তি আসে। তবে ব্যস্ততা অনেক কিছু মুছে দেয়। আর তাই কখনও কখনও আঁধারের কাছে যেতে ইচ্ছে করে। হ্যাংওভার কাটাতে বিয়ারের বোতলের মধ্যে সুখের সন্ধান। রাত্রি আড়াইটে নাগাদ একটু খুনসুটি, একটু চিৎকার, চেঁচানো। তারপর ঘুম আর ঘুম। তারপর আবার পরের দিন সেই ইঁদুর দৌড়। যেন একটা ম্যারাথন। সেই দৌড় আজও অব্যাহত। ভাবি একদিন না একদিন কোন ইভেন্টে হয়তো জিতে যাব। ততদিন হারকে বরদাস্ত করেই যাই আহম্মকের মতো...

খন্ডচিত্রঃ ০৪

একজন ছেলের সাফল্যের পেছনে নাকি একজন মেয়ের হাত থাকে সবসময় - এটাই চিরন্তন সত্য। কিন্তু একজন অসফল ছেলের পেছনেও যে একজন মেয়ের হাত থাকে সেটা কেউ বলেনা। আর ম্যাথস এ বিশেষজ্ঞ না হয়েও বলা যায় যে এই পৃথিবীতে সাকসেসফুল ছেলেদের চেয়ে আনসাকসেসফুল এর সংখ্যাটাই বেশী। কিন্তু এই নিয়ে মনে হয়না মেয়েদের সাথে ডিসকাসন হতে পারেনা, কেননা মেয়েদের সাথে প্রতিটি ডিসকাশন মানেই হল একটি আর্গুমেন্ট...

- তুমি একটা মেইল শভেনিস্ট।

- রিয়েলি।

- গুড বাই।

- হুম। বাই, বাই।

খন্ডচিত্রঃ ০৫

বিশ্বাস ভাঙে, কথা হারিয়ে যায়। মধ্যেমাঝে মনে একটু জ্ঞান এর বৃক্ষ ফলাই। কত মিছে স্বপ্ন বোনা হয়ে যায় প্রতিদিন। বোকা, তুই ভীষণ অপদার্থ। অস্বীকার করতে পারবি? মনে হয় তুই সব বুঝিস না'রে?

বেপরোয়া গতিতে লং শট খেলতে গিয়ে মিড অন-এ চিরকাল কট হওয়া তোর অহংকার নাকি জেদ? তুই নিজেই ভালো করতে বলতে পারবি তুই কি বলতে চাস আর কি নয়? তবে তুই একটা গর্তে তলিয়ে যাবি নির্ঘাত।

পৃথিবীর সমস্ত শ্রেষ্ঠ কবিতাকে একত্রিত করেও আর একটি কবিতার খাতা সাজানো হয়না। সব হেরে যায় কোথাও উদ্ভান্ত। তুই উদ্ভ্রান্ত। তাই তুই কবি হতে পারবি না। তাই তোকে একমুঠো ভাত মুখে এনে দিতে পারেনা কবিতা। তোর চিতায় হয়তো একদিন জাগবে কবিতা। সেদিন তোর জনৈক প্রেমিকা বলতে আসবে না আর - ''আমাকে ভালোবাসার পর আর কিছুই আগের মত থাকবে না তোমার..."

খন্ডচিত্রঃ ০৬

যা কখনো বলতে চেয়েছি... হয়তো বরবাদ হয়ে গেছে শব্দ। কখনো কখনো লাগে এই দুনিয়াটা একাটা ম্যাজিক। যেটা আছে আবার নাও থাকতে পারে। এই খেয়া, গান, কল্পনা, বিশ্বাস, স্মৃতি, মেঘ পিয়ন, আদুরে স্বর্ণলতা। আমাকে ইশারা করে যেন, কিন্তু কাহিনীটা বুঝিয়ে বলতে পারিনা। ঠিক কিংবা ভুল - কোনটাই এখন আর বোঝতে ইচ্ছে করেনা। অনেক হল বেহুদা সব ক্যাচাল, অনেক হয়রানি। এইবার একটু ডুব মারি...

কেন?

বাঁচতে এবং ভুলতে...

খন্ডচিত্রঃ ০৭

মানুষ জীবনে কতবার মরে?

প্রচলিত বিশ্বাসে কিংবা জাগতিক সত্যে - একবার,

--কিন্ত আমার একজন স্যার ছিলেন, খুব ছোট ছিলাম, বুঝতাম না তখন। উনি বলতেন - মানুষ যতবার হারে ততবার মরে।

সেই স্যার এখন জাগতিক জগতে মৃত। স্যার আজ বুঝছি, আপনি যেখানেই থাকুন আপনি কি শুনছেন - আমি আজ মরে গেছি আরেকবার...

খন্ডচিত্রঃ ০৮

মৃতগদ্যের মহাশ্মশানে চিতা জ্বলবে একদিন। দাউ দাউ...

যন্ত্রণা থেকে উত্তরণ পেতে এক হাঁড়ি আতপ চাল আর কচ্ছপের ডিম দরকার। এরপর নানা রঙে পাল তোলা হিঙ্গুরের বেশে তর্পণ সারব এবং প্রায়শ্চিত্তের শেষে পেট পুরে ভাত খাব। সবই সহজ, সবই সরল। এরপর আর বাবা বলতে পারবে না - তোরার লাইগা খাটতে খাটতে বালের জীবনডা শেষ কইরা দিলাম।

খন্ডচিত্রঃ ০৯

... তুই নির্বোধ কেন মন। কেন একটা হেঁয়ালি দিয়ে গেলি। তুই হেরেছিস, সত্যিই হেরেছিস, যেমন ভেঙে পড়ে হঠাত কোন একটা তারা। তোর চোখের জল, এই রাস্তা, সমস্ত দুর্বলতা তোর ভাগ্যেই আছে। স্বপ্নগুলি কেন চোখের জল হয়েই বয়ে গেলো! সব আকাঙ্খা মনেই রয়ে গেলো তোর। তুই তবুও সেই ব্যাথা বুঝলি না, কখনোই বুঝলি না।

একলা কেঁদেই তোর সময় কেটে গেলো। নদী ঝড় আনলো না, সময় গতি নিল না। তুই তবুও ডাক দিলি না। গভীর সেই নীরবতায় সাথে কিছুই ছিল না। একলা একলাই কথা বলে গেলি কতকাল। তবুও তুই বুঝলি না... শূন্যতায় আড়ালে ভালোবাসার ক্যানভাস এঁকে দিয়েই একলা রয়ে গেলি।

খন্ডচিত্রঃ ১০

ভোর তুমি কেন হলেনা আমার শিশির ভেজা গন্ধ। সকাল কেন তুমি হলে না বিশ্বাসের মুগ্ধতা। দুপুর কেন তুমি হলে না ঘামে ভেজা ব্যস্ততা। বিকেল কেন তুমি হলে না শাপলা বিলাস। সন্ধ্যা কেন তুমি দিলেনা একটু মন, একটু কথা। রাত কেন তুমি হলে না ময়ূরপঙ্খী ভালোবাসা, উজানের সুখ, একটু আশ্রয়...

''I'm dreaming, I'm dreaming out loud, I’m searching the missing part of my life...''

---------------------
১৬। ০৪। ২০১২


মন্তব্য

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আগেও বোধহয় আপনার লেখায় এরকম বলেছি।
আবার বলি, প্রথম খন্ডচিত্রটা একবারে কবিতার মতো লাগলো। দুর্দান্ত। হাসি

আর খন্ডচিত্র ০৫ যে দু'টো হয়ে গেলো, তাপস'দা।

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ।

কবিতা হয়ে উঠে কিনা জানিনা। কবিতা লেখা বড্ড শক্ত কাজ......

ঠিক করে দিয়েছি। আবারও থ্যাংকস।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

চলুক

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ।

পুেপ এর ছবি

ড্রিম অন,

ড্রিম অন,

ড্রিম অন , আনটিল ড্রিমস কাম ট্রু (ইংরেজি লিখতে পারছিনা)

তাপস শর্মা এর ছবি

হ্যাঁ, স্বপ্ন তো দেখতেই হবে...... হাসি

কল্যাণ এর ছবি

চলুক

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

তাপস শর্মা এর ছবি

ধন্যবাদ কল্যাণ ভাই। অনেক দিন পর হাসি

কর্ণজয় এর ছবি

হাততালি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- মন খারাপ চোখ টিপি হো হো হো ম্যাঁও হাততালি

তাপস শর্মা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। হাসি

দাদা দেখি সবকটি ইমো দিয়ে দিলেন। হাসি আপনার সাহিত্যধর্মী লেখাগুলি অনেক ভাবনার খোরাক জোগায়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।