গনতান্ত্রিক ভোটপ্রথা, তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশ ও জার্মানী

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০৪/২০০৮ - ২:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতিটি গনতান্ত্রিক দেশেই ভোটাভোটির মাধ্যমে সরকার নির্বাচন করা হয়। তবে এই ভোটাভোটির পদ্ধতি সব দেশে এক নয়।
জার্মানী, বাংলাদেশ, রাজনীতিজার্মানী, বাংলাদেশ, রাজনীতিঅনেক দেশে নানা প্রক্রিয়ায় সংখ্যালঘু ভোটও গনতান্ত্রিক বিচারে আনার চেষ্টা করা হয়। জার্মানীর ভোটপদ্ধতি আমাদের দেশের চেয়ে অনেকটাই অন্যরকম। আমার কাছে এ পদ্ধতি বেশ যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। আপনাদের কাছেও হয়তো সুবিধাজনকই ভালোই মনে হবে।

ধরুন, একটি দেশে পার্লামেন্টে ৬০০ আসন নির্ধারিত। ধরুন সে দেশে রাজনৈতিক দল রয়েছে তিনটি। দল ক, দল খ ও দল গ। সে দেশটি বাংলাদেশ হলে দেশটিকে ৬০০ ভোট এলাকায় ভাগ করা হতো। প্রতিটি এলাকা থেকে প্রতি দলের একজন করে প্রার্থী জনগনের ভোটপ্রার্খী। ভোটাভোটি শেষ হলো কোন একদিন। ক দল পেলো ৪২০ টা আসন। খ দল পেলো বাকী ১৮০ টি আসন। গ দল কোন আসনই পেলো না। কিন্তু দেশে প্রদত্ত সমস্ত ভেটের হার (পাওয়া আসনের হার নয়) হিসেব করে দেখা গেল যে ক দল পেয়েছে ৫০%, খ দল পেয়েছে ৩০%, গ দল পেয়েছে ২০%। অর্থ দাড়াচ্ছে এই যে গ দলকে যে ২০% জনগন ভোট দিলেন, তাদের কোন কথাই পার্লামেন্টে পৌঁছালো না। বিরোধী দল হিসেবেও নয়।

এবার তুলনামূলক বিচারের জন্যে ধরে নিই দেশটা জার্মানী। ধরুন, সেখানেও তিনটি রাজনৈতিক দল, ক, খ ও গ, আর পার্লামেন্টে ৬০০ আসন। এক্ষেত্রে দেশটিকে ভাগ করা হবে আগের উদাহরণের ৬০০ বদলে ৩০০ ভোট এলাকায়। প্রতি এলাকা থেকে একজন প্রার্থী এখানেও জনগনের ভোটপ্রার্থী, তাদেরকে সরাসরি প্রার্খী বলা যেতে পারে। তাহলে বাকী ৩০০ আসন কাদেরকে দিয়ে পূর্ন করা হবে ? মজাটা সেখানেই।

সরাসরি প্রার্থী ছাড়াও প্রতিটি দলেও সম্ভাব্য সাংসদের একটি তালিকা করা হয় । তালিকাটি ও তার ক্রমানুসার নির্ভর করে সে প্রার্থির রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দলের ভেতরে নিজের অবস্থানের উপর। এবার আসছে ভোটারদের কথা। প্রতিটি ভোটারকে দুটি করে ভোট দিতে হয়। প্রথম ভোট এলাকার সরাসরি প্রার্থীর জন্যে, দ্বিতীয় ভোট কোন একটি পছন্দসই দলের জন্যে। সরাসরি প্রার্থীরা প্রথম ভোটে নির্বাচিত হন। পছন্দসই দলের প্রাপ্ত দ্বিতীয় ভোটকে শতকরা হিসেবে প্রতিটি দলের জন্যে ভাগ করে দেয়া হয়। সে অনুযায়ী সরাসরি প্রাপ্ত আসনের পাশাপাশি বাকী তিনশো আসন সে শতকরা হারে তিনটি দলের মাঝে ভাগ করে দেয়া হয়। সম্ভাব্য সাংসদের তালিকা থেকে ক্রমানুযায়ী একেকটি দল তাদের সাংসদ পার্লামেন্টে পাঠায়।

লাভ হলো এই যে, বাংলাদেশের নির্বাচনে যে দল ২০% ভোট পেয়েও সংসদে কোন আসন পেলোনা, জার্মানী হলে তারাও বেশ কয়েকটি আসন পেয়ে যেত। জনগনের যে অংশ তাদেরকে ভোট দিলেন, তাদের সিদ্ধান্তও পুরোপুরি অগ্রাহ্য রইল না। তারা হয়তো অন্য একটি দলের সাথে কোয়ালিশন করে সরকার গঠনেও অংশ নিতে পারে। জনগনের দেয়া ভোট অনুযায়ী আসনের ভাগাভাগিও অনেকটা সুসম। তবে ৫% এর নীচে কোন দল দ্বিতীয় ভোট পেলে তাদেরকে কোন আসন দেয়া হয় না।

গতবছরের নির্বাচনে ছোট দলগুলো প্রাপ্ত ভোটের প্রভাবেই এখানকার বড় দুটো দল কোয়ালিশন করতে বাধ্য হয়েছে। তারা তাদের পারস্পরিক বিরুদ্ধ মতামতে সত্বেও সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছে ও একটি এ অবধি সফল সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের বি এন পি ও আওয়ামী লীগ কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করেছে, এমন কিছু আমরা কখনো কল্পনা করতে পারি না। কিন্তু এক্ষত্রে জনগনের রায়কে যথাসম্ভব প্রাধান্য দিয়ে দেশ শাসনের চেষ্টাই করে রাজনৈতিক দলগুলো।


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমার কাছে কেনো জানি জার্মানীর এই বন্টনগত বৈশিষ্ট্যটা আগুন লাগে। যারা গনতন্ত্র বলে চিল্লায় তারা এটা ফলো করে দেখতে পারে। আখেরে বহুত ফায়দা হবে।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

তীরন্দাজ এর ছবি

আমারও একই কথা মনে হয়।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

পুতুল এর ছবি

আমাদের দেশের রাজনিতীবিদদের গনতন্ত্র নিয়ে মাথা ঘামাবার সময় কৈ? নিজের পকেট ভরার তন্ত্রেই ব্যাস্ত। ধন্যবাদ তীরুদা।
হয়তো আমি বেশী কথা বলি বলেই আমার কাছে মনে হল; লেখাটি আরো একটু বিস্তারিত হতে পারতো।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তীরন্দাজ এর ছবি

বিস্তারিত করতে হাতে ব্যাথা হয়...! শক্তি কম!
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।