গল্প: পর্দা

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/০৫/২০০৮ - ৩:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইদানীং চোখের সামনে প্রায় মাঝে মাঝেই একটা ঝলমলে পর্দা দেখতে পাই। তারপরেই চোখটা কেমন করে যেনো আটকে যায় সেটার গায়ে। অনেক সময় মনে হয় পর্দাটাই যেনো আটকে যায় চোখে। তখন ডানদিক, বাঁ’দিক যেদিকেই তাকাই না কেনো, স্বাধীনভাবে আর অন্যকিছু দেখতে দেয় না ওটা। যতোটা অদ্ভুত সে পর্দার তার ডিজাইন, তারচে’ বিকট তার রংএর সমারোহ। মনে হয় যেনো বেছে বেছে পৃথিবীর সবগুলো বেমানান রং, আর সে রংগুলোর সবচে’ বেমানান সংমিশ্রণের কদাকার মাপের স্লাইডগুলো পাশাপাশি সাজানো হয়েছে। পর্দাটা সামনে আসার মূহুর্তের মাঝেই তীক্ষ্ণ এক যন্ত্রণায় অবশ হয়ে আসে চোখদুটো, তারপর ছড়িয়ে পড়ে সে যন্ত্রণা আরো তীব্র হয়ে কপাল বেয়ে মাথার পেছন দিকটায়। কোনকিছু স্থিরভাবে করার আর ক্ষমতা থাকে না তখন আর। তারপরেও সে পর্দার কোন এক অজানা আকর্ষনে বন্দী হয়ে যাই সময়গুলোতে। এ আকর্ষন কোনো, বুঝতে পারিনা একেবারেই। রং আর ডিজাইনের প্রশ্নে মোটামুটি রুচিবান বলেই নিজেকে জানি, অন্যরাও সেরকমই জানে। আমার পোষাক-আসাক, চাকুরী, ড্রয়িংরুমের সাজসজ্জা, এমনকি স্ত্রীভাগ্য নিয়ে অনেকেই ঈর্ষা করে, দরকারে পরামর্শ নিতে দ্বিধা না করলেও। তারপরেও এই বিবর্ণ রংচঙ্গে পর্দার আকর্ষণ থেকে আমি আমার চোখকে একেবারেই মুক্ত করতে পারিনা। নিজের ক্ষমতার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি, পর্দার ক্রীতদাস যেনো হয়ে যাই তখন। যতোক্ষন ওটা থাকে, ততোক্ষন এমনি চলে, সরে গেলে ফিরে আসি আমার আগের জায়গায়।

দিন রাতের বিশ্রামের সময় থেকে শুরু করে কাজের জীবনেও প্রভাব ফেলা শুরু করলো পর্দাটা। স্থিরভাবে কোন কিছু করাই কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। সেদিন ক্লাশে এটমিক এনার্জীর একটা চ্যাপ্টার নিয়ে বেশ মেতে ছিলাম ছাত্রদের সাথে। ভালো শিক্ষক হিসেবে আমার যথেষ্ট সুনাম, যে কোন রসহীন বিষয়কেও রসালো করে মাতাতে জানি ছাত্রদেরকে। কিন্তু হঠাৎ করেই পর্দাটা চোখের সামনে এসে ওলটপালট করে দিল সবকিছু। ক্লাশ, ছাত্র সবাইকে ভুলে গিয়ে চোখদুটো ওটার শরীরে রেখে কোথায় যে চলে গেলাম কে জানে! ছাত্রদেরই কেউ একজন হঠাৎ কিছু বলে মনযোগ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলো। তাতে কতোটা কাজ হলো, তা জানা নেই। কিন্তু আমি সে পর্দার শরীরে চোখ রেখে সাঁতার কেটে গেলাম আরো অনেকক্ষন। একসময় ফাঁকা হয়ে গেলো ক্লাশ। দারোয়ান এসে না ডাকলে হয়তো ওখানেই থেকে যেতাম। বাইরে এসে দেখলাম শায়লা অপেক্ষা করছে বারান্দায়।

- কি হলো। সবাই তো বেরিয়ে গেলো। তোমার এতোক্ষন?
আমি শায়লার মুখের দিকে তাকালাম। চৈত্র মাসের ভ্যপসা গরমে বিন্দু বিন্দু ঘাম ওর কপালে। চোখে রাজ্যের ক্লান্তির ছাপ।
- কাগজপত্র গোছাতে তো দশ মিনিটের মতো লাগেই।
উত্তর শুনে অবাক হয়ে আমার চোখের দিকে তাকালো ও। হাতের রুমালটা দিয়ে মুখ মুছলো আবার।
- দশ মিনিট, কিন্তু আমি তো প্রায় আধঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলাম বাইরে।

আমি অবাক হলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঠিকই বলছে শায়লা। একটু আদর করলাম ওকে। ওর সমস্ত রাগ গলে গিয়ে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন বাড়তি রাখলো মাত্র। সেটাকে ভাঙতে খুব একটা দেরী হলোনা আমার।

- তোমার ক্লাশ কেমন হলো ?
- বেশ ভালো। কিন্তু ক্লাশের ভেতরে গরমে কষ্ট হয়েছে খুব। লোড শেডিং ছিলো।

উত্তর দিলো শায়লা। গাড়ীতে উঠলাম ওকে নিয়ে। স্টার্ট দিয়ে এসি পুরোটা ছেড়ে দিলাম। ওর কপালের বিন্দু বিন্দু ঘাম বাতাসে উড়ে গেলো একসময়। আবার কমনীয়তা বাসা বাঁধলো ওর চেহারায়। আমার মনটাও ভালো হয়ে উঠলো একটু। গাড়ীর ভেতরের শীতলতায় ও শায়লার সান্মিধ্যে ক্লাশের সেই গ্লানি ভুলে গেলাম ধীরে ধীরে।

খুব ভালো মেয়ে শায়লা। সহজভাবেই দেখতে চায় জীবনকে, তাই বাড়তি চাহিদা নেই তেমন একটা। সামাজিক সন্মান, শাড়ি, গহনার প্রতি আকর্ষণ থাকলেও সেটাকে লোভ বলা চলেনা, একটু আদর পেলেই মনে হয় সন্তুষ্ট। রাঁধতে ভালোবাসে যদিও খাবার দাবারে আমার তেমন একটা লোভ নেই। একটা কলেজে ইংরেজী পড়ায়, শিক্ষিকা হিসেবে ভাল সুনাম। অন্যান্য ভালো ভালো কলেজ, এমনকি ’ভার্সিটি থেকেও ডাক আসে ওর। আমাকে ছাপিয়ে অনেক আগেই অনেক উপরে উঠে যেতে পারতো। কিন্তু করেনি। হয়তো বাধ্য স্ত্রী হিসেবে স্বামীকে ছাড়িয়ে যাওয়া ঠিক নয় বলেই মনে করে। আমি এসব নিয়ে খুব একটা ভাবি না, নাকও গলাই না, কিন্তু উপভোগ করি।

সকালে ’ভার্সিটি যাওয়ার তেমন একটা তাড়া ছিলনা। প্রথম ক্লাসটিই এগারোটার দিকে শুরু হওয়ার কথা। শায়লা চলে গেছে অনেকক্ষন হলো। টেবিলে নাস্তা রেখে গিয়েছিল। আমি খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে আরাম করে বসলাম। খবর আর কি থাকবে? দেশে খুন, ধর্ষন আর অরাজকতা, বিদেশে সাদ্দাম হোসেন, তালিবান আর এগারোই সেপ্টেম্বর। তারপরেও প্রতিদিন পড়ি, পড়তে হয়। শিক্ষক হিসেবে দেশে বিদেশের খবর রাখতে হয় বৈকি। শায়লাকে খুব একটা খবরের কাগজ পড়তে দেখি না। কিন্তু তারপরেও দেশবিদেশের খবর আমার চেয়ে কম রাখে বলে মনে হয়না। এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে প্রথম পাতাটায় চোখ রাখার সাথে সাথেই রঙ্গিন পর্দাটা এসে ঢেকে দিল কাগজটাকে। খালেদা জিয়া, বুশ আর বিন লাদেন আর যা কিছু ছিল, সবই পর্দার কর্কশ রংএর সাথে একাকার হয়ে গেলো। ঘর ছেড়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। পর্দাটাও আমাকে অনুসরণ করে সামনের বাড়ী, তার এক চিলতে বারান্দা ও রাস্তার দাঁত বের করা ইটগুলোর উপর তার বিচিত্র রং ঢেলে দিল। বাথরুমে গিয়ে মুখে জল ঢেলেও কাজ হলোনা কোন। অনেকক্ষন সোফায় হেলান দিয়ে বসে বসে একসময় ঘুমিয়েই পড়লাম। প্রথম ক্লাশটায় পৌঁছাতেই দেরী হলো বেশ।

বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম। কখন যে পর্দাটা চোখের সামনে এসে হাজির হতে পারে, সেই ভয়েই তটস্থ থাকতাম সারাক্ষণ। যতোদিন পারা যায় নিজের কাছে রেখে একদিন শায়লাকেই খুলে বললাম নিজের সমস্যার কথা। শুনে খুব চিন্তিত হলো ও। ডাক্তারের কাছে যেতে বললো, আমার খাবার দাবারে পুষ্টির পরিমাণ বাড়িয়ে দিল, সেসাথে শুরু করলো বিশ্রাম ও ঘুমের দিকে আরো বেশী নজর রাখার। এক সপ্তাহের মাঝেই আমার ওজন বেড়ে গেলো বেশ কিছুটা, কিন্তু পর্দার দৌরাত্ব কমলো না একেবারেই। ডাক্তারের কাছে গেলাম অবশেষে। বেশ নামী একজন ডাক্তার। তার চেম্বারের ঠিকানা, দামী ফার্নিচার, ফি’র পরিমাণ সবকিছুই তার পেশার সাফল্যের প্রমাণ। মাথায় ব্যকব্রাশ করা কাঁচাপাকা চুল। চোখে দামী সোনালী ফ্রেমের চশমা। বয়েস পঞ্চাশ থেকে পঞ্চান্নর মাঝে। আমার সমস্যাটা বাইরে বাইরে বেশ মনোযোগের সাথে শুনলেও, তার লুকানো বাঁকা হাসিটা আমার চোখ এড়াতে পারলো না। ওনি আমাকে তীর্যক কিছু প্রশ্ন করলেন।
- আপনার পেশা কি?
- আমি একজন টিচার।
- কোন স্কুলে?
- স্কুলে নয়।
- তাহলে?
- ’ভার্সিটিতে।
ওনি এতোক্ষনে আমার দিকে একটু সমীহ নিয়ে তাকালেন। একটু গর্বিত বোধ করলাম তাতে। আমাদের দেশের সবচে’ ক্ষমতাধর হচ্ছেন সফল রাজনীতিবিদ ও তাদের আমলারা, তারপরেই ডাক্তারদের স্থান। তাদের মতো একজন যদি সমীহের দৃষ্টিতে তাকান, গর্ববোধ তো হতেই হবে।
- আপনি কি বিবাহিত?
- হ্যা।
- বাচ্চা ক’জন?
- বাচ্চা নেই।
- কেনো?
- বাচ্চা চাইনা বলেই।
- স্ত্রীকে ভালোবাসেন?
- আমার স্ত্রী সুন্দরী।
একটু ভ্রু কুঁচকালেও আর কোন প্রশ্ন করলেন না ডাক্তার। আমার জিব দেখলেন, নাড়ি টিপলেন। চোখের উপর টর্চ ফেললেন। তার মনোযোগের আওতায় থাকার পরও চেম্বারটাই যে পর্দায় ঢেকে গেলো, তা আমি আর তাকে বলতে সাহস পেলাম না। ওনি আমাকে কিছু ভিটামিন লিখে দিয়ে পরামর্শ দিলেন একজন সাইক্রিয়াটিক্সের কাছে যাবার। আমি তার প্রেস্কিপশানটা পকেটে পুরে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এলাম।

শায়লা খুব সুন্দরী তো বটেই। ওকে আরো সুন্দর দেখার জন্যে কোন এক শিক্ষাসফরে ভারতে গিয়ে অন্যান্য শাড়ীর সাথে খুব সুন্দর আকাশী রংএর একটা শাড়ী কিনে দিয়েছিলাম। শায়লাও অন্যান্য শাড়ীগুলোর চেয়ে এই শাড়ীটাই পছন্দ করলো বেশী। সুযোগ পেলেই পরতো ওটা। ঘরে বাইরে সবখানেই। নিজের পছন্দে কেনা বলে আমারও ভালো লাগতো প্রথম প্রথম। ওর সুন্দর দেহের আকাশী রংএর নিপূন বাঁধন বেশ পাগলই করে তুলতো । শাড়ীর ভাঁজের ভেতরে লুকানো শরীরের ভাঁজগুলোকে উন্মুক্ত করতে করতে সে ভাঁজেই বিলীন হয়ে যেতাম আমি। এসব ব্যপারে আমার ভেতরে এমনিতেই একটু বাড়াবাড়ির ধাঁচ রয়েছে। সেটা জেনেই একটু ন্যকামো করে মাঝে মাঝে বকতো শায়লা।
- কি পাগলের মতো করছো। এতো আদিখ্যেতা ভালো না।
- ভালো না কেনো ?
আমি অবাক হয়ে তাকাতাম ছেলেমানুষের মতো। তাতে আরো বেশী বকার ভান করতো সে।
- যদি ভেঙ্গে পড়ে আকাশটা তোমার আদরের চাপে ?
আমাদের শোবার ঘরটা শায়লার মনের মতো সাজনো। বিছানা, চাদর, ড্রেসিং টেবিল যা কিছু আছে আমাদের এই ঘরে, সবকিছুই ওর মনের মতো প্লান করে, যত্ন করে কেনা। আমি নিজে কখনো কিছু বলিনি, প্রয়োজনও মনে করিনি।
- এতো রাতে আমাদের এই শোবার ঘরে ভেঙ্গে পড়বে আকাশ?
শায়লা হাসতো আওয়াজ করে। আমি আদর করতাম, চোখ বুজে সে আদর নিতো ও। পাগলের মতো বলতাম,
- শালু, শালু, কি সুন্দর তুমি।
এতেই খুশী হয়ে যেতো ও। নিজেকে সমর্পন করতো নির্দ্বিধায়। আরেকটু বাঁধা পেলে হয়তো ভালোই লাগতো আমার। কিন্তু শায়লা কখনোই তা করতো না বা করতে সাহস পেতো না। আমি একসময় চুপ হ’তাম। শায়লাও তাই। কিন্তু ওকে মনে হতো যেনো একটা মৃত প্রজাপতি তার উজ্জল রংবিন্যাস নিয়ে শুকিয়ে আছে আমার চোখের সামনে। একটা মালিন্য আসতো নিজের ভেতর। কিন্তু সে মালিন্যের উৎস কোথাও না খুঁজে পেয়ে অস্থির হতো মন।

সত্যি কথা বলতে কি, শায়লা আমাকে আমি যা চেয়েছি, অকাতরে তাই দিয়েছে। হাত বাড়নোর আগেই বুঝে নিয়েছে, কিসের জন্যে হাত বাড়াতে চাই আমি। কোথাও কোনকিছুর কমতি ছিলনা। আমার বন্ধুরা, আত্মীয়রা আমার এই স্ত্রীভাগ্যের কথা জেনে, কেউ খুশী হয়েছে, কেউ কেউ হয়েছে ঈর্ষায় জর্জরিত। কেউ কেউ বলতো, স্ত্রীভাগ্যে মাটিতে পা পড়েনা ওর। কোন অনুষ্ঠানে একা যোগ না দিতে চাইলেই স্ত্রৈণ আখ্যা পেয়ে যেতাম অনায়াসে। শায়লা সামনে থাকলে লজ্জা পেতাম, না থাকলে অপ্রস্তুত হতাম। শায়লাকে কিন্তু এসব ক্ষেত্রে খুশী ও সপ্রতিভ বলেই মনে হতো। সেদিন একটা বড়সড় পার্টি ছিল আমাদেরই এক কলিগের বাড়ীতে। সস্ত্রীক দাওয়াত ছিল সবার। আমরাও গেলাম। হরহামেশা হয়েই যাচ্ছে এ ধরণের পার্টি, বড় ধরণের কোন বৈচিত্র না থাকায় অনেক সময় উদ্ভট কিছু একটা বেরিয়ে আসে কারো মাথা থেকে। আর এবার বেরুলো এমনি একজনের মাথা থেকে, যার এ বিষয়ে কোন কথা বলারই থাকতে পারে না। নিতাই কুন্ডুর বয়স তেতাল্লিশ পেরূতে চললো, অথচ কোন সঙ্গীনি দেখা মেলেনি এ পর্যন্ত। অংকের শিক্ষক হলেও রসবোধের প্রশ্নে তার জুড়ি নেই কেউ। ক্লাশের ভেতরে নিতাই অংক ছাড়া কোনকিছু ভাবতে পারে বলে মনে হয়না, কিন্তু এর বাইরে আমরা তো বটেই, অনেক ছাত্ররাও ওর রসিকতার জন্যে ওকে দেখতে পেলেই হাসে। নিতাই কুন্ডু সে পার্টিতে বিশাল এক ফুলের তোড়া টেবিলে রেখে বললো,
- আজকের পার্টিতে সবচে’ সুখী দম্পতির পুরস্কার এটা।
হই হই করে সম্মতি জানালো সবাই। এমনকি যারা সঙ্গী বা সঙ্গীনিহীন তারাও। সাথে সাথে উপস্থিত দম্পতিদের একটা তালিকা করা হলো, নম্বর দেয়া হলো। প্রত্যেককে একটা করে কাগজ দেয়া হলো, তাদের পছন্দসই নম্বর গোপনে লেখার জন্যে।

হাততালি উচ্ছাসের মাঝে বিজয়ী দম্পতিকে তাদের পুরষ্কার দেয়া হলো। কারো কারো দৃষ্টিতে ঈর্ষা থকলেও তা প্রকাশ করার মতো বোকামী করলো না কেউ।

গোলাপের তোড়াটা গাড়ীর পেছনে রেখে অনেক রাতে ঘরে ফিরলাম আমরা দু’জন। ক্লান্তিতে বা কি কারণে এতোটা চুপচাপ ছিলাম, জানিনা। আমাদের নীরবতাকে গাড়ীর একঘেয়ে ঘড়ঘড় আওয়াজও ভাংতে পারলো না। মধ্যরাতের চরিত্রের সাথে একাত্ম হয়ে অনেকটা নীরব ঢাকার রাস্তাঘাট, তারপরেও ধোঁয়াটে একটা আবরণে মলিন ল্যাম্পপোষ্টের আলোগুলো। মাঝে মাঝে দুরন্ত গতিতে ছুটে যাচ্ছে একটা দু’টো ট্রাক ধোঁয়ার আস্তরণে সে আলোকে আরো মলিন করে। পথে একবার আমার হাত ধরলো শায়লা। আমি কতোক্ষন পর গাড়ীর গিয়ার পাল্টাতে গিয়ে সরিয়ে ফেললাম হাত। বাকী পথটুকুতে শায়লা আর সে হাত ধরলো না।

জামা কাপড় পাল্টে বিছানায় গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম শায়লাকে। কোন আপত্তি জানালো না ও। তৃপ্ততার ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম কিছুক্ষনের মাঝেই।

ভোররাতের দিকে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার। টের পেলাম পাশে নেই শায়লা। বিছানা থেকে উঠে দেখলাম বারান্দায় একটা চেয়ারে মাথা এলিয়ে বসে আছে। ওর বসার ভঙ্গীটাই মনে হলো ওর কষ্টের সত্যিকারের প্রকাশ। আমার বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো মুহূর্তের মাঝেই। মনে হলো ওকে এখন একা থাকতে দেয়াই ভালো, তারপরেও কাছে গিয়ে ডাকলাম,
- শায়লা।
ও চমকালো না একটুও আমার ডাক শুনে। একবার তাকালোও না। বাইরের দিকে তাকিয়েই মৃদু গলায় বললো,
- রাতের কোন বন্ধু নেই কেনো বলতো ?
ওর কন্ঠস্বরের বিষাদ আমাকে চকিত করলেও ওর বেদনার কাছাকাছি পৌঁছুতে পারলাম না আমি। বারান্দার রেলিংএ হেলান দিয়ে দাঁড়ালাম যাতে ওর মুখ দেখতে পারি। কিন্তু সে মুখ আমার কাছে অনেক অনেক দূরের বলে মনে হলো।
- রাতের বন্ধুরা রাতের মতোই একা, তাই।
উত্তর শুনে আমার দিকে তাকালো একবার শায়লা। বাইরে ঝলমলে পূর্ণিমার আলো, আশে পাশের বাড়ীর ছাদগুলোতে, আমাদের হাস্নাহেনা গাছের ফুলে-ডালে ঝলসে পড়ছে সে আলো, কিন্তু আমাদের বারান্দায় আবছা আঁধার। ওর মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম না । হয়তো সেকারণেই ওর ভেতরের বিষাদের দেয়ালটা আরো বেশী অনুভব করলাম। এই প্রথমবারের মতো ওর পাশাপাশি নিজেকে অসহায় মনে হলো। তারপরেও কোনক্রমে আলতো করে ওর হাতটা ছুঁয়ে বললাম,
- শায়লা, আমরা কি ভুল করেছি এতোদিন ?
- না সুজন, ভুল আমরা করিনি। রাত আর দিনের আবর্তনে আমাদের যেখানে অবস্থান ভুলের অবকাশ কোথায়?
রাতের শিশিরের মতো ভেজা শায়লার গলার আওয়াজ। একটা টোকা দিলেই যেনো কান্নার মতো ঝরে পড়বে শিশিরের বিন্দুগুলো।
- নিজেরা ভূল না করেও কোন এক ভুলের সীমানাতেই আবদ্ধ আমরা।
- হ্যা, তাইতো ভাবি, মুখোমুখি আমরা, অথচ একজন আরেকজনকে দেখতে পাইনা কেনো?
এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের কারোই জানা ছিলনা। থাকার কথাও না। যদি থাকতো, তাহলে কাছে থেকেও এতোটা দূরত্বের যন্ত্রনা সইতে হতোনা আমাদের। শায়লার দৃষ্টি যেনো আবার জোৎস্নার উজ্জল আলোতে ফিকে হয়ে যাওয়া তারাগুলোকে আকাশের গায়ে গায়ে খুঁজে বেড়ালো। চাঁদটা এতটু হেলে যাওয়ায় আলোতে শায়লার মুখটা দেখতে পেলাম। সে মুখে যন্ত্রনা আর একাকীত্বের যে ছবি দেখলাম, তা সহ্য করার ক্ষমতা আমার আর রইলো না। কোন কথা না বলে তাই ঘরে ফিরে গেলাম আবার।

বাকী রাত ঘুম হলোনা আর। কিছুক্ষন পর শায়লাও এলো পাশে। সে ও জেগে রইলো। কিন্তু সে বিনিদ্র রাতের সাক্ষী হিসেবে আমরা কেউ কাউকেই রাখতে চাইলাম না।

কোথায় কোন সমুদ্দুরের অতলে হারিয়ে গেলাম আমরা কে জানে ! একজন আরেকজনকে ধরে রাখার চেষ্টা করে ব্যর্থ হ’লাম বারবার। প্রতিবারই কি এক অজানা প্রতিরোধে আলাদা হলো আমাদের মুষ্টিবদ্ধ হাত। একসময় হাল ছেড়ে দিয়ে কোন এক লুকোনো স্রোতের খাঁচায় এলিয়ে দিলাম আমরা আমাদের শরীরকে।

পরদিন ক্লাশ থেকে ফিরে এসে বাড়ীতে পেলাম না শায়লাকে। সাধারণতঃ ওর এসময় বাইরে থাকার কথা নয়। বিছানার উপর রাখা একটা খামে ওর চিঠি পেলাম।

সুজন,
গত রাতে আমরা দু’জনেই উত্তর খুঁজে পেয়েছি আমাদের প্রশ্নের। মনে হলো দূরত্বকে ধরেই ভালো থাকবো আমরা আমাদের নিজস্ব বৃত্তে। আমাকে কাছে চেয়ে কষ্ট পেয়োনা আর। আমাকেও তা দিয়োনা। একজন আরেকজনকে তো কখনোই ভালোবাসতে পারিনি। রাতের মতোই একা ছিলাম তাই পাশাপাশি থেকেও।
আমাদের বাগানের গাছগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে একটার পর একটা। আমরা চুপচাপ দেখেই গেলাম, করতে পারলাম না কিছুই।
ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করো, সেকথা কি বলবো তোমাকে ? কখনোই না। আমি নিজেও সে চেষ্টা করার সাহস পাবোনা। জীবনের পাঁচটি বছর কি ভুলে থাকা যায় কখনো?
তুমি তো যতটুকু পেরেছো দিয়েছো আমাকে। পারলে এবারও ক্ষমা করো।
শায়লা

আচমকা একটা ব্যাথার চিহ্ন রেখে আমার চোখের সামনের পর্দাটা সরে গেলো হঠাৎ। চোখদুটো স্থির রেখে অনেক দূর পর্যন্ত তাকালাম জানলা পেরিয়ে। অনেক দুরে, আকাশের প্রান্তসীমার প্রায় কাছাকাছি, বাতাসের গায়ে দোল দেয়া, হেলে দুলে নাচা একটা রঙ্গীন ঘুড়ির শরীরে আটকে থাকলো আমার দৃষ্টি। জানলাটা বড় করে খুলে দিতে গিয়েও সে ঘুড়ি থেকে চোখ সরলো না আমার।


মন্তব্য

শাহীন হাসান এর ছবি

তুমি তো যতটুকু পেরেছো দিয়েছো আমাকে। পারলে এবারও ক্ষমা করো।
শায়লা

দেবীরা এরকমই বলেন হয়তো বা শেষপর্যন্ত ....?

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ শাহীন!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সুমন চৌধুরী এর ছবি
তীরন্দাজ এর ছবি

কেমন আছেন?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

স্পর্শ এর ছবি

অসাধারণ!!
-----------------------------
এখনো নজরবন্দী!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

অতিথি লেখক এর ছবি

হু! সুখে থাকলে ভূতে কিলায়! ময়েন ভালো।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

অতিথি লেখক এর ছবি

দারুন গল্প।
খাঁচা ভাঙ্গার চেষ্টা আছে একটা। কিন্তু শায়লা যত সহজে খাঁচাটা ভাঙলো, সত্যি জীবনে কি আর এত সহজে খাঁচা ভাঙা যায়?

কীর্তিনাশা

তীরন্দাজ এর ছবি

তা বলতে পারবো না। সহজে না হলে হয়তো কষ্টে ভাংবে খাঁচা। পড়া ও মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হু... অসাধারণ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আকতার আহমেদ এর ছবি

অসাধারণ !

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

বেশ লাগলো গল্পটা! লিখুন না আরো...


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

তীরুদা, লেখার ভঙ্গি তো অসাধারণ, সেকথা আর কয়বার বলব? কিন্তু শায়লার চলে যাওয়া জীবন বাস্তবতার পর্যায়ে পড়ে না। এত সহজে ঘরের টান এড়াতেও পারে না মানুষ, একমাত্র গল্প-সাহিত্যে ছাড়া! ব্যর্থ প্রচেষ্টা হলেও শুকনো বাগানে ফুল ফোটাবার চেষ্টা করে যায় বার বার... এটাই বোধহয় জীবনের বাস্তবতা!
বস, গরিবের অনুরোধ... আপনি কি ব্যাপারটা নিয়ে আরেকবার ভাববেন? আপনার লেখা নিয়ে অনেক মাথা ঘামাই বলেই বলছি, ভালো গল্পকার তো অনেক আছে, কিন্তু আপনাকে দেখতে চাই জীবনবোধসম্পন্ন এক লেখক হিসেবে...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনাকে আর স্নিগ্ধাকে প্রথমেই এই গল্প নিয়ে এত নিগুঢ় ভাবনার জন্যে ধন্যবাদ জানাই। এ গল্পটি অনেক পুরোনো। ২০০২ এর দিকে লিখেছিলাম। এখনকার গল্পগুলো আপনাদের পড়া, সেখানে অনেক সরাসরি মূল কথায় চলে যাবার অভ্যাসটি রপ্ত করেছি।

এ গল্পের শুরুতে আমি দুটো চরিত্র সাজিয়েছিলাম গল্পের শেষ না ভেবেই। সাজনোর পরই, 'আমি' চরিত্রকে আমার কাছে কর্মজীবনে সফল হলেও বেশ স্বার্থপর আর ভোতা বলে মনে হয়েছে। "বৌ তার চেয়ে সফল হবার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে স্বামীর চেয়ে উপরে তুলতে চায়না", তা জেনেও সে সুযোগ গ্রহণ করছে নির্বিঘ্নে। এটা সুবিধাবাধি অপরাধ। তারপরও লোকটির শিক্ষা আছে, ভাবার ক্ষমতা আছে, আর সেজন্যেই একটা হীনমন্যতা কাজ করে নিজের ভেতরে। সেটা তাকে কুরে কুরে খেলেও বৌএর সামনে প্রকাশ করে না। আর এই শিক্ষার কারনে তার চরিত্রের ভোতা দিকগুলোও ঢেকে রাখতে পারে সহজে। পাঁচটি বছর তাই করে এসেছে। এখন উল্টো পাল্টা রং এর পর্দার মাঝে পচকাশ পাচ্ছে তার ভেতরের অস্থিরতা আর হীনমণ্যতা।

শায়লা অনুভুতিপ্রবণ, স্বামীর মতোই শিক্ষিত একটি সত্তা। তার চিন্তাভাবনায় গভীরতা, ভালোবাসার প্রতা নিগুঢ় ক্ষুধা থাকলেও স্বামীর কথা ভেবে এ নিয়ে মাথা না ঘামালেও নিজের ভেতরে যন্ত্রণা ভোগ করে। তার চিন্তার ভেতরের সুক্ষতা আর জীবনের জন্যে জরুরী, এটা ঢাকার চেষ্টা করেছে পাঁচ বছর। না পেরে বিদায় নিল এভাবে।

এদের ভেতরে স্বামী, স্ত্রী হিসেবে মিল থাকলেও ভালবাসা ছিল অনেকটা কেনা বেচার মতোই। বিনিময়মূল্য ছিল নিজেদের অনুভুতিকে তার যথাযোগ্য স্থান না দেয়া।

এ ধরণের সংসারজীবন আমাদের দেশে সর্বত্রই। নিজেদের মাঝে বলার কিছু না থাকলেও এরা পাশাপাশি "দিব্যি" জীবন কাটিয়ে যাচ্ছে। এই দিব্যি শব্দটির মাঝে বিরাট এক ফাঁকি রয়েছে, যা বাইরে চোখে পড়ে না। এ ফাঁকি ধরা পড়লেও আমাদের সামাজিক জীবন তাকে আড়াল করে রাখতে বাধ্য হয়। কিন্তু যাদের আত্মার ভেতরে স্বাধীন চেতনা রয়েছে, সামাজিক প্রভাবে যারা পিষ্ট নয়, তারা এ জীবন থেকে বেরুনোর চেষ্টা করে। শায়লাও তাই করেছে। এটা স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের সমাজ জীবনের দৈনন্দিন চরিত্রকে বহন করে না। কিন্তু অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হলে ধীরে ধীরে আরো বেশী করেই করবে। মোদ্দা কথা হচ্ছে, "ভালবাসাহীন জীবন কোন জীবন নয় বলেই সংসার ছেড়েছে শায়লা।"

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

স্নিগ্ধা এর ছবি

মৃদুল আহমেদের সাথে একমত - আর সাথে আমার ছোট্ট আরেকটা মতামত দিই?

এরকম abstract ধরনের চাইতে, আপনার আসল strength আমার ধারনা 'সরাসরি গল্প বলা'তে বা যেটাতে আবহ নির্মাণের চাইতে ঘটনা বা চরিত্রের narration স্পষ্টভাবে বর্ণিত থাকে। আপনি বোধহয় আপনার নিজের ধরনের বাইরে অন্যরকম কিছু একটা করতে চাইছিলেন ?

এটা একদমই একটা ব্যক্তিগত মত - এবং জানেনই তো (আমার মত) ব্যর্থ লিখিয়েরাই সমালোচক হয় বলে বনফুলের (খুব সম্ভবত) বাণীটা কিন্তু খুব ভুল না হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

মৃদুল ভাই, আপনার সাথে দ্বিমত করার যোগ্যতা আমার নেই। তারপরও বলি - খাঁচা ভাঙা জীবনে খুব শক্ত কিন্তু কেউ কেউ তো ঠিকই ভাঙে। সবাই তো আর একরকম না। রবীন্দ্রনাথের স্ত্রীর পত্রের কথা মনে আছে? সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে অমন গল্প হতে পারলে - তীরুদার শায়লাও পারে শৃঙ্খল ভাঙতে। আর এজন্যই এটা গল্প হয়ে উঠেছে। নইলে তো আমাদের জীবনের আর দশটা সাধারণ ঘটনার মতো এটাও একটা সাধারণ ঘটনা হয়ে থাকতো।

কীর্তিনাশা

স্নিগ্ধা এর ছবি

আমি যেহেতু মৃদুল আহমেদের সাথে ঐকমত্য প্রকাশ করেছি তাই আমি এ ব্যাপারে আমার চিন্তাটা একটু বলি। ভাঙ্গা অবশ্যই সম্ভব, সেকালের চাইতে একালে সহজতর তো বটেই, কিন্তু কথাটা তা নিয়ে না। শায়লাও যে একইভাবে ভালোবাসাবিহীন এই সম্পর্কে হাঁপিয়ে উঠেছে সেটা - একদম শেষেই আসুক, তাতে অসুবিধা নেই - কিন্তু আরো একটু জোরালো ভাবে উপস্থাপিত হওয়া দরকার ছিলো। শায়লা এখানে মুখ্য চরিত্র না কিন্তু তারপরও তার প্রতি আরেকটু নজর দিলে গল্পটা আরো বেশী মনোগ্রাহী হতো বলে আমার ধারনা।

তীরন্দাজ এর ছবি

হয়তো তাই। শায়লার কথাটি জোরালো করলে হয়তো ভালো হতো। কিন্তু 'আমি' চরিত্রটি এই গল্পের মূখ্য চরিত্র। এই চরিত্রটিই যা বলার, বলে আসছে। তার নিজের সাথে শায়লার পার্থক্যও সূচনা করেছে এই 'আমি'ই। আমি তার নিজের কথাতেই শায়লাকে কাহিনীর মাঝে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

এ ব্যাপারে আমি সম্পুর্ন একমত, স্নিগ্ধা আপনার সাথে। শায়লার দিকে তীরন্দাজ ভাই আরেকটু মনোযোগ দিতে পারতেন।
কীর্তিনাশা

তীরন্দাজ এর ছবি

পথে একবার আমার হাত ধরলো শায়লা। আমি কতোক্ষন পর গাড়ীর গিয়ার পাল্টাতে গিয়ে সরিয়ে ফেললাম হাত। বাকী পথটুকুতে শায়লা আর সে হাত ধরলো না।

নিজেকে সমর্পন করতো নির্দ্বিধায়। আরেকটু বাঁধা পেলে হয়তো ভালোই লাগতো আমার। কিন্তু শায়লা কখনোই তা করতো না বা করতে সাহস পেতো না। আমি একসময় চুপ হ’তাম। শায়লাও তাই। কিন্তু ওকে মনে হতো যেনো একটা মৃত প্রজাপতি তার উজ্জল রংবিন্যাস নিয়ে শুকিয়ে আছে আমার চোখের সামনে।

এখানে চেষ্টা করেছি শায়লার ভেতরের দন্ধকে সামনে আনার। হয়তো যথেষ্ট ছিল না তা। আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানাই। শায়লাকে নিয়ে আরেকটু মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করবো।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।