ছোটগল্প: অচেনা নিলয়

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: বুধ, ০৯/০৭/২০০৮ - ১০:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আচমকা একটা মেঘের আড়ালে বিকেলটা হঠাৎ করেই যেনো নি:শ্চিহ্ন হয়ে গেলো। জানলাটা ভেজানো ছিল ঘরের। দমকা হাওয়ায় খুলে গেলো সেটা। একরাশ ধুলো বালি এসে ঢুকলো ঘরের ভেতরে। নীরা জানলাটা চেপে বন্ধ করে বাইরের দিকে তাকালো। পাশের বাড়ীর ছাদে যে ছেলেটা এতোক্ষন যে ঘুড়িটা উড়োচ্ছিল, সুতো ছিড়ে তা এখন অনেক দুরে বাতাসের গায়ে ভর করে উড়ছে নেচে নেচে। হয়তো ছেলেটি আগেই নাটাইয়ে সুতো গুটিয়ে নিয়েছিলো। এখন তাকিয়ে আছে বিষন্ন চোখে তার হারিয়ে যাওয়া ঘুড়ির দিকে। নীরা সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই ছেলেটির মা এসে নীচে নিয়ে গেলেন তাকে। আবার বই নিয়ে বসতে চাইলো নীরা। কিন্তু ততক্ষনে অন্ধকার নেমেছে অনেকটা। সুইচ্ টিপলো আলোর জন্যে, কিন্তু লোড শেডিং দ্বৌরাত্বে অন্ধকারই থেকে গেলো ঘর। বাইরে দমকা বাতাস তখনও, কিন্তু বৃষ্টির কোন শব্দ পাওয়া নেই ।

ইদানীং নীরার মন প্রায় সারাক্ষণই খারাপ থাকে। কুয়াশার একটা সাদা চাদর যেনো সবখানেই সঙ্গী হয়ে থাকে। ঢেকে থাকে নীরাকে তার সমস্ত বিষন্নতা নিয়ে। সবার মাঝেও নিজেকে ভীষণ একা মনে হয়। কোন কারণ ছাড়াই দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে চারপাশের মানুষজন। বাড়ীতে, পাড়ায়, এমনকি কলেজেও। ক্লাশের ফাঁকে ফাঁকে আগের মতো সে আনন্দ আর উচ্ছাস নেই। মাঝে মাঝে পরীক্ষার ব্যাস্ততার জন্যে আনন্দে কমতি পড়ে বটে। কিন্তু তেমন কোন পরীক্ষাও সামনে নেই। হঠাৎই সবাই তাদের ভবিষ্যত সংসার-জীবন নিয়েই ছক কাটা শুরু করেছে বেশী। একজন, দু’জন বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তারা কলেজে এসে তাদের স্বামী, সংসার, শাশুড়ী আর সম্পদের গল্প করে সারাক্ষণ। এই নিয়েই মেতে আছে বাকীরাও। মাঝে মাঝে এমন সব কথাও বলে যে, মুখ কান লাল হয়ে ওঠে নীরার। ভালো লাগেনা এসব। কিন্তু যখন তখন তাকে নিয়েই হাসাহাসি শুরু হয়ে যায়। নীরা তার সবচেয়ে কাছের শায়লাকে বলে,

- এসব নিয়ে ভাবতে চাইনা রে। বাবা, মা, ভাই নিয়ে তো আনন্দেই আছি!

কিন্তু শায়লা ওর কথা, ভেতরের ভাবনা একেবারেই বুঝে উঠতে পারে না। নিজে প্রেম করছে চুটিয়ে, বিয়ের দিনক্ষণ নিয়ে কথা চলছে দুই পরিবারের মাঝে।

- ওদেরকে নিয়ে ভাল থেকে কি লাভ হবে? এসব তো দু’দিনের, আসল জীবন তো সামনে। দেখছিস না, সুতপা এতোদিন তার ছোটভাইয়ের গল্পই করতো, এখন স্বামীর গল্প ছাড়া আর কিছু শুনেছিস ওর মুখে?
- সেটা সুতপার ভাবনা। সে ভাবনা আমাকেও ভাবতে হবে?
- শুধুমাত্র সুতপার ভাবনা হতে যাবে কেন। এদেশের সব মেয়েদেরই ভাবনা।
- আমি হয়তো একটু আলাদা!

বলেই সরে পড়ে নীরা। পেছনে হাসির রোল পড়ে। মেজাজ খারাপ হলেও আজকাল সেদিকে আর তাকায় না সে। কেউ কেউ টিটকিরি মেরে বৈষ্ণবী নাম দিয়েছে তাকে। ওর নাকি জীবনের আনন্দে কোন আগ্রহই নেই।

বাড়ীতেও একই বিপত্তি। যে ছোট ভাইয়ের সাথে একঘরে থাকতো, তাকে বাইরের ঘরে দেয়া হয়েছে। নীরার নাকি আপাতত: নিজের একটি ঘর দরকার। নিজস্ব ঘর, ভালো কথা! এই আপাতত: শব্দটিতেই আপত্তি নীরার। মাকে বলে,

- সোহেলকে অন্য ঘরে পাঠাচ্ছ, পাঠাও! কিন্তু আপাতত: শব্দটি কেন বলছো?

মা হেসে ফেলে। ঘর গুছোতে গুছোতে নীরার দিকে তাকায়। চোখে তারায় কোন এক নিগূঢ় ইশারা। বলে,

- আপাতত: নয়তো কি মা! বিয়ে হলে তো স্বামীর ঘরই তোর নিজের ঘর হবে। তখনতো এখানে শুধু বেড়াতেই আসবি।
- তাতে কি হয়েছে? যে ক’দিন আছি, শান্তিতে থাকতে দাও মা! পরের কথা পরেই বলো!

বলে আরো বেশী রেগে যায় নীরা। মা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। তারপর মৃদু হসে বেরিয়ে যায় ঘর ছেড়ে। নীরার চোখে যে জল আসে, সেদিকে নজর করে না।

এমনকি ছোট্ট ভাইটারও একই রকম কথাবার্তা। এতোদিন বোনকে ছাড়া চলতোই না তার। রাতের বেলা গল্প না শুনলে ঘুমোতেই পারতো না। এখন নিজের ঘরেই কম্পিউটর নিয়ে পড়ে থাকে সারাক্ষণ। নিজের কোন দরকার ছাড়া এদিকে পা মাড়ায় না একেবারেই। একদিন এসে বলে,

- আপু, তুই চলে গেলে তোর বুকশেলফটা দিবি আমাকে?
- চলে যাচ্ছি, একথা কে বললো তোকে?
- বাহ্! সেদিন মা আর বুয়া মিলে এই নিয়েই তো বলাবলি করছিল।
- কি বলাবলি করছিল।
- তুই বিয়ে হলে চলে যাবি এবাড়ী ছেড়ে, এসব।

নীরা অবাক হয়ে ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই একটুখানি ছেলের মুখে এসব কথা কি করে আসে? কষ্ট হয়, নিজের উপর রাগও হয়, তারচেয়ে বেশী রাগ হয়ে মেয়ে হয়ে জন্মানোর উপর। রাস্তাঘাটে চলাফেরা করাটাই তো কষ্টের। বাসে সুযোগ পেলেই তো শরীরের এদিক ওদিক খোঁচা খেতে হয়। মাঝে মাঝে রাগ করে তাকায়। তখন খ্যাক্ খ্যাক্ করে হাসে ইতরের দল।

একদিন নিজ থেকেই বুয়াকে সাথে করে শেল্ফটি ভাইয়ের ঘরে দিয়ে এলো নীরা। কিন্তু নিজেরও দরকার, তাই জমানো টাকা থেকে কিনে নিল একটি। ভাই তো পেয়ে মহাখুশী। ব্যাস! এইটুকুই। তারপর আবার কম্পিউটর নিয়ে ব্যস্ত।

একদিন বাবাও শুরু করলো এসব। অফিস থেকে এসেছে মাত্র। নীরাকে সোফায় পাশে বসিয়ে কাঁধে হাত রেখে আদর করতে করতে বলে,

- আমার মা স্বামীর ঘরে গেলে কেমন করে থাকবো ওকে ছেড়ে!

নীরা একবার বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে কোন উত্তর না দিয়ে হাত সরিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে। দরজা বন্ধ করে বিছানায় উপুড় হয়ে কাঁদে। সবাই এমন করে কেন উঠেপরে লেগেছে ওকে বিদেয় করতে, বুঝতে পারে না কিছুতেই। এবাড়ীর কি কোনকিছুই তার নিজস্ব নয়? এজন্যেই কি কলেজের বান্ধবীরা বিয়ের পর কাউকে একান্ত নিজের করে পেয়ে এতো খুশী? মেয়েদের জীবনের ঠিকানা কি এই একটাই? মাঝে মাঝে ভাবে, ওদের কথাই হয়তো ঠিক।

একদিন সত্যি সত্যিই সে সময়টি ঘনিয়ে এলো। বাবার অধস্তণ এক কর্মচারীর ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হলো তার। ইন্জিনীয়রিং পাশ করে, চাকুরী করছে। এর মাঝে নাকি বিদেশ যাবার অফারও পেয়েছে। এক খালার সাবধানী চোখের সামনে রানার সাথে পরিচয় হলো তার। ফর্সা, একহারা চেহারা, মাথায় একঝাক কোকড়ানো চুল। কেমন যেন উড়ু উড়ু দৃষ্টি। কিন্তু একটু গম্ভীর বলে মনে হলো। কিন্তু তাতে কি? নীরা নিজেও তো কিছুটা গম্ভীরই বটে। কথা খুব বেশী না হলেও অবশেষে যাকে একান্ত করে নিজের কাছে পাবে, তাকে বেশ ভালোই লাগলো নীরার। এতোদিনে নিজের ভেতরে যে দ্বন্দ্ব ছিল, তা দূর হলো অনেকটা। এবার সত্যিই নিজের একান্ত জীবনই শুরু হতে যাচ্ছে ভেবে শিহরিতই হলো। বিয়েকে ঘিরে যে এক বিরক্তি সৃষ্টি হয়েছিল নিজের ভেতরে, তা এবার প্রতীক্ষায় পরিণত হলো।

সে প্রতীক্ষার পালাও শেষ হলো একদিন। বেশ জাঁকজমক করেই বিয়ে হলো ওদের। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতায় ক্লান্ত নীরা ফুলশয্যায় রানার অপেক্ষায়। বেশ আনন্দ আর রোমাঞ্চ মেশানো ভয় নিজের ভেতরে। বিয়ের রাতে কি কি ঘটে, তার বিবরণ আগেই পেয়েছে বান্ধবীদের কাছে। সেটা ভেবেও এক শিরশিরে অনুভূতি আর লজ্জা শিরায় শিরায় জাগান দিচ্ছে বারবার। এমনি সময়ে এলো রানা। বেশ গরম বাইরে। পান্জাবীটা খুলে ঝুলিয়ে দিল আলনায়। তারপর বিছানার ফুলগুলো সরিয়ে বসার জায়গা করে বসলো এক কোনে। নীরার দিকে না তাকিয়েই বললো,

- তোমাকে একটা কথা বলবো?
- বলো

লজ্জায় লাল হয়ে আস্তে উত্তর দিল নীরা। বুকের ভেতরটি কি অজানা কারণে যেন কেঁপে উঠলো একবার।
- ভেবেছিলাম বলবো না। কিন্তু তোমাকে এভাবে দেখে মনে হলো তুমি খুব ভাল একজন মানুষ। তাই না বলেও পারছি না। আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি। তারপরও তোমার বাবার প্রভাব আর আমার বাবার অনুরোধে তোমাকে বিয়ে করলেও, ভালবাসতে পারবো না একেবারেই। আমাকে একান্ত করে কখনোই পাবে না নীরা।

বাইরে তখন বিয়ের আলোকসজ্জা একেএকে নেভানোর পালা চলছে। পাশের ঘরে যে বাজনা বাজছিল, সেটাও থেমে গেল হঠাৎ। অন্ধকার একটু একটু করে আরো জমাট হয়ে ঘিরে ধরছে নীরাদের বাড়িটিকে। পাশের বাড়ীগুলো আর আবছা ছায়ায় সে বাড়িটিকে কেমন একা একা বলে মনে হলো।


মন্তব্য

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

ইসস্‌ !নীরার জন্য খুবই খারাপ লাগছে!


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

নিঝুম এর ছবি

এইটা বাংলাদেশের জঘন্যতম বাস্তবতা । গল্পটি চমত্‌কার । দাগ কেটে যাবার মতন ।
---------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব সীমান্ত আমায় বিরক্ত করে। আমার বিশ্রী লাগে যে, আমি কিছুই জানিনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

রাফি এর ছবি

পুরাতন কাহিনী, নতুন সাজে।
তবে বর্ণনাভংগীর জন্য বেশ ভাল লাগল।

------------------------------------------
অর্থ নয়, কীর্তি নয় ,স্বচ্ছলতা নয়-
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভেতরে
খেলা করে;
আমাদের ক্লান্ত করে;

---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
তোমার বাবার প্রভাব আর আমার বাবার অনুরোধে তোমাকে বিয়ে করলেও, ভালবাসতে পারবো না একেবারেই। আমাকে একান্ত করে কখনোই পাবে না নীরা।

বাংলা সিনেমার মতন হইয়া গেল দাদা!দেঁতো হাসি

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

তীরন্দাজ এর ছবি

বাংলাদেশে তো এমনই হয়! আমার পরিচিত একজনের বেলাতেই ঘটেছে। অবশ্য সেই ছেলেটা সমকামী ছিল।

তারপরও কথোপকথন সাজানোই নিজের দূর্বলতাকে স্বীকার করে নিচ্ছি। ধন্যবাদ!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

স্নিগ্ধা এর ছবি

তীরন্দাজ, অনেকদিন পর আপনার ছোটগল্প পড়লাম মনে হলো? নাকি, আপনি লিখেছেন ঠিকই কিন্তু আমারই চোখ এড়িয়ে গেছিলো?

আপনার বর্ণনা বা আবহ সৃষ্টির ব্যাপারে অনায়াস দক্ষতার প্রশংসা আমি আগেও করেছি। এই গল্পটিতেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। শুধু কাহিনীর progression (বাংলা প্রতিশব্দটা কিছুতেই মাথায় আসছে না) যেভাবে হচ্ছিলো তার সাথে শেষটা কেমন একটু আচম্বিত লাগলো। বুঝতে পারছি, নীরার ক্রমশঃ বিয়ের ব্যাপারে অনাসক্তি কাটিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠা এবং একেবারে সবচাইতে উম্মুখ মূহুর্তে এরকম একটা ধাক্কা খাওয়ার কথাই আপনি বলতে চেয়েছেন - কিন্তু তারপরও কেন যেন একটু হোঁচট খাচ্ছি হাসি

আর নীরার চাইতেও আমার বেশী দুঃখ হচ্ছে তার স্বামীর জন্য - এমন একখানা কেঁচোসদৃশ মানুষেকে করুণা না করে কি থাকা যায়? হাসি

তীরন্দাজ এর ছবি

স্নিগ্ধা, আপনার স্নিগ্ধ সমালোচনার জন্যে অশেষ ধন্যবাদ। তাড়াহুড়ো করার স্বভাব আমার চিরন্তনের। তা কাটিয়ে ওঠা যে ভীষন জরুরী, তা মেনে নিচ্ছি নির্দিধায়।

তবে আমি হয়তো শিখব না কোনদিনই!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শেখ জলিল এর ছবি

তীরন্দাজের মতোই শক্তিশালী গদ্য। খুব ভালো লাগলো।
তবে গল্পের শেষটা হঠাৎ করেই যেন থেমে গেলো। ছেলেটির চরিত্র আরও বিশদ করলে তার উপর হয়তো এতো দায় চাপানো যেতো না। বিশেষ করে নীরাকে না ভালোবাসার কারণটা খোলাসা হয় নাই।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

তীরন্দাজ এর ছবি

ছেলটির বাবা নীরার বাবার অধস্তন একজন। হয়তো তার প্রভাবই পড়েছে এ বিয়েতে। ছেলেটি হয়তো তাই বাধ্য হয়েছে বিয়ে করতে।

আমি পুরো গল্পটি একেবারে একান্তভাবে নীরার দৃষ্টিভঙ্গী থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। নীরা মনেও হয়তো এই প্রশ্নটিই বারবার আসবে, তাহলে রানা তাকে বিয়ে করলো কেন? এ প্রশ্নটি আমার মনেও আসে। মনে হয়, এখানে রানার অবস্থান পরিস্কার করার তেমন সুযোগ আমার ছিল না। একটি ছোটগল্পের শেষে কিছু প্রশ্ন জমাটা কি অস্বাভাবিক? তবে মনে হচ্ছে, আমি একটু বেশী প্রশ্নই জমিয়ে ফেলেছি।

আপনার সমালোচনা পরামর্শের জন্যে ধন্যবাদ জলিল ভাই। অতিরিক্ত তাড়াহুড়ো করা যে আমার একটা দোষ, তা স্বীকার করে নিচ্ছি।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

আকতার আহমেদ এর ছবি

তীরুদা, আপনার গল্পের যে বিষয়টা আমাকে মুগ্ধ ও বিস্মিত করে তা হলো টুয়িস্টিং.. যা একবারেই তীরন্দাজীয় । কিন্তু কেন জানি এই গল্পটি অনেক বেশি সরলই মনে হলো । দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি লেখায় ভর করেছিল বলেই কী ! শুভ কামনা আপনার জন্য । দুর্ধর্ষ সব তীরন্দাজীয় গল্পের অপেক্ষায় থাকলাম ।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

কিছু মনে করবেন না, এই গল্পটি অন্য যে কেউ লিখলে কিচ্ছু বলতাম না। আমার কাছে কেমন যেন হুট করে লেখা জিনিস মনে হোল। স্বামীটি এই কথাটি কেন বললো? সারাজীবন মেয়েটিকে কষ্ট দেবার জন্য? নাকি পরদিন ডিভোর্স ফাইল করার জন্যে?
আপনার গল্পের চিরাচরিত স্বাদটি পাইনি।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

তীরন্দাজ এর ছবি

জাহিদ, আপনার মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। গল্পটি লেখার সময় আমি একটি চরিত্রের সাথেই পরিচিত। তা হচ্ছে নীরা। নীরা রানাকে যেভাবে দেখেছে, আমিও সেভাবেই দেখেছি ও ততটুকুই চিনি। এর বাইরে নীরা বর্ণনাঅনুযায়ীই রানা যে নীরার বাবার অধস্তন কারো ছেলে, তার একটু ধারণা দিয়েছি। হয়তো সেকারণেই নীরাকে বিয়ে করায় কোন এক চাপ ছিল রানার উপর। এর বাইরে নীরার যেমন জানা নেই, আমার বেলাতেও একই কথা খাটে। তারপর রানা নীরাকে কেন বিয়ে করলো, কেন তা করতে বাধ্য হলো, নীরাও জানে না, গল্পকার হিসেবে আমি নিজেও জানি না। আমার চোখের সামনে নীরাই, এর বাইরে নীরা যাকে দেখে, যতটুকু দেখে, আমিও ততটুকুই দেখি। রানা সম্পর্কে এর চেয়ে বেশী জানা না থাকলে, ওর কথা আরো বেশী কি করে লিখি?

এধরণের ঘটনা আমাদের সমাজে হরহামেশা ঘটছে। বিশেষ করে মেয়েদের বেলায়। আমরা বেশীরভাগই জানতে পারি না। আমি সেই সাধারণ ঘটনাটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। তাড়াহুড়ো করার দোষ অম্লান বদনে স্বীকার করে নিলাম।

আমার কাছে আপনার বড় প্রত্যাশা শুনে কিন্তু আমি নিজেকে স্বার্থক মনে করছি। তারপরও শখের বশে লিখি, মাঝে মাঝে তাই দূর্বলতা এসে ভর করে।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

রণদীপম বসু এর ছবি

গল্পে কোন সাসপেন্স পাওয়া যায় নি। একটু বেশি মতোই সিনেমা সিনেমা গন্ধ। এটাতে তীরন্দাজীয় নতুনত্ব পাই নি কিন্তু। অতএব এভাবে আপনাকে ছেড়ে দেয়া যায় না।
আরেকটা লিখে ফেলুন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তীরন্দাজ এর ছবি

সাসপেন্স তৈরী করা উপাদান এই গল্পে নেই, তা স্বীকার করে নিচ্ছি। তাছাড়া একটি সাধারণ মেয়ের জীবনের ভাল লাগা, মন্দ লাগা, কষ্ট, সপ্ন, সপ্নভঙ্গ.... এর মাঝে নিজেকে একই কাতারে টেনে সাসপেন্স তৈরী করার ক্ষমতাও আমার নেই।

যদি উপর থেকে নীরাকে দেখতাম, তাহলে হয়তো সাসপেন্সও আনতে পারতাম!

সে যাই হোক, আমাকে এভাবে ছাড়তে চাইছেন না, এটা আপনার আন্তরিকতা। আমি তাতেই খুশী..। অবশ্যই লিখব। অনেক ধন্যবাদ।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নিরিবিলি এর ছবি

অনেক্টুকুই বাস্তব। নীরাকে মনে হলো নিজের চোখে দেখলাম। ভালো লাগলো।

রানা মেহের এর ছবি

ছেলের নাম রানা হওয়ায় আমি তারই পক্ষে। (চামহাসি)

তীরন্দাজ,
কিছু মনে করবেননা।
এ গল্পটা একদম ভালো লাগেনি।
কেমন একটু ইমদাদুল হক মিলন টাইপ।
আপনার মতো একজন শক্তিশালি লেখককে
এরকম লেখা মানায় না।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তীরন্দাজ এর ছবি

তারপরও ইমাদাদুল হক মিলনের সাথে তুলনা করলেন আমাকে? বাংলাদেশের তিন নম্বর জনপ্রিয় লেখক?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

শাহীন হাসান এর ছবি

উত্তাপহীন একটা মহা অঘটন ঘটে গেল গল্পটির চূড়ান্ত পর্যায়ে, ‌‌‌'আমি অন্য একজনকে ভালোবাসি'....। গল্পের নায়ক রানার এই অভাবিত আকস্মিক বক্তব্যে। নববধূ নীরা তখনো স্বপ্নাচ্ছন্ন। লেখকের উচ্চারণ অনাড়ম্বর, কিন্তু আশেকড় গভীরতাসঞ্চারী। উত্তাপহীন উত্তাপই প্রকাশ পেয়েছে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে গল্পটিতে। আধুনিক প্রকাশ বলেই আমার মনেহয়।
সামাজিক দিকগুলো অত্যন্ত উক্ত না হলেও অনুক্ত নয়। সাসপেন্সতো সিনেমারই প্রধান বিষয় বাণিজ্যিক মস্তিষ্কটাকে খেয়াল করে, শিল্পকে নয়। আর এ জাতীয় গল্পের অবিভাবক শিল্প। কয়েকটি সমালোচনার পরিভাষা পরিমিতির মাত্রা রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। অভিযোগ নয়। সৌন্দর্য রক্ষার প্রসঙ্গ এসে পড়ে তাই। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ আক্রান্ত না হলে কৃতজ্ঞ থাকবো।
সচলে তীরন্দাজের অবস্থান কোথায় আমরা এখানকার পাঠকরা তা জানি বা বুঝি।
নীরা আর লেখক তো একই ব্যক্তি, নীরাই লেখক লেখকই নীরা। অদ্ভুত রকমের সমন্বয়। আমার তো মনেহয় নীরা যা বলছে, বলতে চয়েছে, দেখেছে, প্রকাশ করেছে, লেখক তাই বলেছেন, প্রকাশ করেছেন আঙুলের দক্ষতায়।
জীবনের ঘোরপ্যাচে কতকিছুইতো করে ফেলে মানুষ? আমার বাবার একমাত্র ভাই, আমার চাচার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হুমায়ূন চাচা, বাবা মায়ের যুগল আত্মহত্মা ঠেকাতে গভীর রাতে এক ভয়ানক পরিস্থিতির চাপে পড়ে মামাতো বোনেকে বিবাহ করতে সম্মত হয়ে ছিলেন, প্রায় ১৬/১৭ বছর আগে। নীরার ভাগ্যটাই পেয়েছিল সেই মেয়েটিও। অথবা সেই মেয়েটার কপালটাই ফিরে পেয়েছে তীরন্দাজের গল্পের নায়িকা, নীরা। এটা সমাজ বিচ্ছন্ন নয়, সমাজের বলিই বটে। এমন কিছু হয়তো রানার জীবনেও থাকতে পারে? যা নীরা জানেন না, লেখকের জানারই বা কতটুকু অবকাশ থাকে?
যদিও নীরার জন্য দু:খ হয় ....!

তবে, আর একটু সময় নিতে পারতেন বোধহয় তীরুদা?
ধন্যবাদ, গল্পের জন্য।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ শাহীন হাসান!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

ঘটনাটা আমার কাছে বেশ বাস্তব মনে হয়েছে !
আমার খুব প্রিয় একজন বন্ধুর সাথে ঘটেছে এমন ঘটনা। আমাদের সমাজে যেন অনেকটাই স্বাভাবিক এগুলো। তবে আমার কাছে জঘন্য লাগে। কবে যে আলোর মুখ দেখতে পারব !!!

[ভূঁতেঁরঁ বাঁচ্চাঁ]

কীর্তিনাশা এর ছবি

ভালো লাগলো তীরুদা।
--------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

খুব ছোট এবং একটু দার্শনিক গল্পে আপনার ধার সবচে টের পেয়েছি আমি... এত ধার যে কেটে রক্তপাতও ঘটেছে বেশ কয়েকবার... আমার মনে হয় আপনার প্লটগুলো ভালো বাছা উচিত! গল্পে যে টুইস্টটি আপনি দিতে চেয়েছিলেন, সেটা সিনেম্যাটিক হয়ে গেছে! ছেলেটির ডায়লগটি বাস্তবসম্মত না হওয়াতে।
নীরা ছেলেটির এই মানসিকতা যদি অন্যভাবে আবিষ্কার করত, কারো কাছে লেখা কোনো চিঠি আচমকা হাতে পড়ে যাওয়াতে... কিন্তু তাতেও গল্পের অ্যাপিল কী করে তৈরি হত বুঝতে পারছি না!
মজার এন্ডিং হত এরকম যে, পাত্রের বাবা নীরার বাবাকে কিছুদিন এরকম প্রস্তাব দিল, পাত্রের বাবার চাকরির মেয়াদ শেষ, তাদের আর্থিক অবস্থা তত ভালো নয় বলে দেশের বাড়ি চলে যেতে হচ্ছে! পাত্রও চাকরিতে ততটা সুবিধে করতে পারছে না... যেহেতু তারা বিয়ের সময় যৌতুক নিয়ে ততটা আবদার করে নি, তাই এখন তাদের ইচ্ছে ছেলে তার বৌকে নিয়ে ঘরজামাই হয়ে নীরাদের বাড়িতেই থাকুক। পাত্রের নিজেরই বক্তব্য এটা।
তারপর নীরা আবার ফিরে এল তাদের বাড়িতে। কিন্তু এবার আর সে ফিরে আসতে চাচ্ছিল না, যে বাড়িতে সে এত বেশি থাকতে চাইত, সেই বাড়িতেই!
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।