হরতাল হরতাল

ঈয়াসীন এর ছবি
লিখেছেন ঈয়াসীন [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০৮/০৪/২০১৩ - ৮:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বর্তমানে বাংলাদেশের একটি মানুষও আর হরতাল চায় না। গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী, নাশকতা-নেশাগ্রস্তকে এই তালিকায় রাখছি না। আমার ধারণা যারা বিএনপি কিংবা জামাত সমর্থন করে তারাও এই ‘হরতাল’ নামক বিভীষিকা হতে মুক্তি চায়। আমিও আর একটি হরতালও চাই না। যদিও হরতাল একটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারা, তবু আধুনিক হরতাল এখন কেবল গণতন্ত্র আর স্বাধিকার আদায়ের শানিত অস্ত্র নয়, এখন হরতাল মানেই জ্বালাও-পোড়াও আর ককটেল উৎসব। নতুন করে এসব বলবার কোনো প্রয়োজন নেই। জামাত ইসলাম আর বৃহত্তর জামাত ইসলামের বিএনপি শাখা আর ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত ১৮ দলের বাকী দলগুলোর গত কয়েক সপ্তাহের হরতালে জনগন অতিস্ট, তাই আর কোনো হরতালই কারো কাম্য নয়। একটু আগে খবর পেলাম আসছে শুক্র-শনিবার জুড়ে ২৪ ঘণ্টার হরতাল, তাও আবার এ হরতাল সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ভাবে ডেকেছে ঘাদানিক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষীয় অরাজনৈতিক দলগুলো। এ কথা জেনে পরিচিত মহলে অনেকের ভ্রু কপালে উঠেছে। যারা এ ক’দিন হরতালের বিপক্ষে কথা বলেছে সেই তারাই যদি হরতাল ডাকে আর তাতে যদি কারো ভ্রু কপালে ওঠে, তবে তাকে কিংবা ভ্রুকে কাউকেই দোষারোপ করবার উপায় নেই। আমার ভ্রু যথাস্থানেই আছে, বরঞ্চ আশার মাত্রা কয়েক ধাপ উঠতে উঠতে কপাল ছাড়িয়ে আকাশের পানে ছুটে চলেছে। কেন? খুলে বলি-

৫২, ৬৯, ৭১, ৯০-এ হরতাল ছিল বাঙ্গালীর সত্য অধিকার আদায়ের শানিত হাতিয়ার। গত প্রায় কুড়ি বছরে এর যাচ্ছেতাই অপব্যাবহারে ‘হরতাল’ তার ঐতিহাসিক মহিমা হারিয়েছে; বিশেষ করে গত দু’মাসে রাজাকার সমর্থক আর রাজাকারদের বাংলার মাটিতে প্রতিষ্ঠাকারী দলটির অর্বাচীন, অন্যায্য হরতাল প্রয়োগ সকল প্রকার গ্রহণযোগ্যতার সীমা ছাড়িয়েছে। কেননা স্বাধিকার আর গনতন্ত্র উদ্ধারের সঙ্গে এই হরতালগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই, এগুলো নিছক রাজাকার উদ্ধারের খাতিরে পালিত হয়েছে। নতুন প্রজন্ম রাজাকারের বিচারের দাবীতে যে উত্তাল গণজাগরণের ঢেউ তুলেছে, তাকে অর্থাৎ সেই নৈতিক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রতিষ্ঠা করতে উক্ত দলদ্বয় আমাদের সবচেয়ে নাজুক দিকটি ব্যাবহার করেছে। ধর্মীয় অনুভূতির মিথ্যে ধুয়া তুলে গণজাগরণ মঞ্চকে ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিতে তারা উঠে পড়ে লেগেছে। অতি দুঃখজনক ভাবে এ মুহূর্তে সরকারও শাহবাগ-এর প্রতি তার সাম্প্রতিক সমর্থন তুলে নিয়েছে। ‘হেফাজতে ইসলাম’-এর হুমকি ধামকিতে সরকার যতটা না ভয় পায় তার চেয়ে সরকারের বড় ভয় সেনাবাহিনীকে নিয়ে। দেশে চলমান সহিংসতা আর নাশকতা যেভাবে ক্রমাগত বাড়ছে তাতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আওয়ামীলীগ, বিএনপি যা করছে তার সবটাই ভোটের রাজনীতি। এমন ক্ষেত্রে সরকারী লাই পেয়ে হেফাজতে ইসলাম কোন মগডালে উঠবে সরকার তা সাময়িক সুবিধাকে প্রাধান্য দিতে যেয়ে খতিয়ে দেখছে না। কিন্তু এ বিষয়টি খতিয়ে দেখবার জন্যে এখনও এ পোড়া দেশে কিছু স্বপ্নাতুর মানুষ অবশিষ্ট আছে; তারা হেফাজতে ইসলাম এর আসন্ন শনিবারের ‘লং মার্চ’ রুখে দিতে চায়। শুক্রবার ছুটির দিন সন্ধ্যায় দাওয়াত কিংবা শপিং ছাড়া জরুরী কাজ আমাদের খুব একটা থাকে না। হরতালে যাতে মানুষের দুর্ভোগ কম হয় সেটা মাথায় রেখে সময়টা বেছে নেয়া হয়েছে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা অবধি। রাতভর হরতালে লাভ কি? এ প্রশ্ন যারা ভাবছেন, তারা একটু ভেবে দেখুন; মফস্বল থেকে ঢাকা শহর মুখী লং মার্চে যারা আসবে তারা ঐ সময়টাই বেছে নেবে আর তাদের আগমন ঠেকাতেই মূলত এ হরতাল। চট্টগ্রাম থেকে ধেয়ে আসা ১০০০ বাস ও ৭০০ মাইক্রোবাস কে ঠেকাতেই এই হরতাল। এ হরতাল যৌক্তিক, এ হরতাল অধিকার সমুন্নত রাখবার।

সকলের কাছে আবেদন, আমাদের সাময়িক সমস্যা হলেও আসুন এই হরতালটি আমরা সামগ্রিকভাবে সমর্থন করি। যে যেভাবে পারি কাটমোল্লাদের এই লং মার্চ ঠেকিয়ে দিই। সব রাজনৈতিক দলও যদি তাদের সাথে সমঝোতায় আসে তবু আমরা যারা বুকে চেতনার প্রদীপ জ্বেলেছি তারা যেন অন্তিম মুহূর্তাবধি আপোষহীন থাকি। আসুন আমরা প্রমান করি আমাদের এই বাংলা ঘাতকের জন্যে নয়। এর পরও হয়তো লং মার্চ সফল হবে, তবু একটা চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি! ঘাতকদের আমরা কোনোভাবেই সফল হতে দেবো, এ আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন। এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই জিততে হবে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

হরতাল হোক ন্যায্য কারণে! আপামর জনসাধারণের জন্য যে হরতাল সে হরতালে এ দেশের সকল মানুষই সমর্থন দেবে, যেমন দিয়েছে এই হরতালে ৷

বটতলার উকিল ৷

ঈয়াসীন এর ছবি

বিলক্ষণ

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

ঈয়াসীন এর ছবি

লেখাটি ৪ এপ্রিল রাতে পোস্ট করা, ব্ল্যাক আউটের কারণে আজ প্রকাশিত। গত ৫-৬ এপ্রিলের যৌক্তিক হরতাল এর আস্থা রেখেই লেখাটি লেখা হয়েছিল।

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।