প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে প্রথম আলোর এলিটিস্ট রিপোর্টিং

যূথচারী এর ছবি
লিখেছেন যূথচারী (তারিখ: বুধ, ৩০/০৭/২০০৮ - ৭:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে প্রথম আলোর এলিটিস্ট ভাব কাটছেই না। এমনকি সিনিয়র রিপোর্টার প্রণব সাহা আজকে যে রিপোর্টটা করলেন, তা রীতিমতো শিশুসুলভ। যেকোনো বিষয়ে রিপোর্ট করার আগে যে তার পূর্বাপর জানতে হয়, সেটা প্রণব সাহার মতো একজন সিনিয়র রিপোর্টারকেও কি মনে করিয়ে দিতে হবে? তার রিপোর্টের শিরোনামটি রীতিমতো মর্মভেদী। যেকোনো ঐতিহ্য অনুরাগী পাঠককেই তা নাড়া দেবে, আর সেটাকেই ব্লাকমেইল করেছেন প্রণব সাহা। শিরোনামটি এমন- "সেই প্রত্ননিদর্শনগুলো এখন বরেন্দ্র জাদুঘরের খোলা বারান্দায়"। কী সাংঘাতিক কথা!!!!!!! যে নিদর্শন নিয়ে সারাদেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রত্নসম্পদ বিষয়ে সচেতন মানুষেরা তিনভাগে বিভক্ত হয়ে গেলেন, একজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করলেন, সেই মহামূল্যবান প্রত্নসম্পদগুলো জাদুঘরের খোলা বারান্দায়?????? হক কথা, খাটি কথা, জব্বর প্রশ্ন!!!!
প্রণব সাহা এতোটাই শিশুসুলভ, তিনি এই তথ্যটি সংগ্রহ করলেন না যে, গত ৮৯ বছর ধরে নিদর্শনগুলো এই খোলা বারান্দাতেই ছিল। প্রণব সাহা এতোটাই মিত্থুক, যে বারান্দাতে ঢুকতে আপনাকে পেরুতে হবে চারটি তালামারা দরজা, তাকে বলে দিলেন ‍‍ "খোলা" বলে!!!!!!! এবং মিথ্যাকে সত্য প্রমাণের জন্য তিনি একটি ছবিও দিয়েছেন। ছবিটিও আংশিক। আরেকটু প্রশস্ত করে, আরেকটু ওপর থেকে ছবিটি তুললেই তার প্রতিবেদনের শিরোনামটি মিথ্যা হয়ে যেতো। আরেকটু ওয়াইড এঙ্গেল থেকে তোলা এই ছবিটি দেখুন। বরেন্দ্র জাদুঘর
বরেন্দ্র জাদুঘরের স্থাপত্য নকশা না জানলে এই প্রত্নসম্পদ রাখার ব্যাপারটিতে আপনার সন্দেহ জন্মাবে। প্রথমে একটি মূল ফটক পার হয়ে আপনাকে যেতে হবে আরেকটি ফটকে, সেটি পার হলে একটি ঘরের দরজা, তার পর আরেকটি দরজা পার হয়ে বারান্দা। পুরনো আমলের বাড়িগুলোর মতো এই ভবনটির ভেতরে রয়েছে একটি বর্গাকার উঠান, যার চারদিকেই বারান্দা। সুতরাং বারান্দা বললে যেমন বাহির বাড়ি বোঝায়, বরেন্দ্র জাদুঘরের ১৯১৬ সালে স্থাপিত (১৯১৯ সালে উদ্বোধন) এই ভবনটির বারান্দা মানে আসলে একদম ভেতরে। আর এই বারান্দাতেই গত প্রায় একশ বছর ধরে রয়েছে প্রত্ননিদর্শনগুলো। (সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে নতুন কিছু ঘর)। জাতীয় জাদুঘর থেকে নিদর্শন চুরি হলেও বরেন্দ্র জাদুঘর থেকে নিদর্শন চুরি হয়নি কখনও। তবে নিদর্শনগুলোর ক্ষয় হচ্ছে, এটা সত্যি। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন সেই বিষয় নিয়ে নয়, তাদের আপত্তি বারান্দা নিয়েই।

আগের লেখাতে যেমন বলেছি, প্রথম আলো আসলে দেশীয় প্রত্নতত্ত্ব চর্চা বা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে যারা প্রত্নতত্ত্ব চর্চা করছে, তাদের বিরুদ্ধে একটা মিশনে নেমেছে। প্রথম আলোর এইসব রিপোর্টিং প্রকারান্তরে আমরা যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে ডিগ্রি অর্জন করেছি, এক অর্থে তাদের জন্য পজেটিভ, কিন্তু প্রত্নতত্ত্ব চর্চার মূলসুর থেকে তা অনেক দূরবর্তী। প্রত্নতত্ত্ব চর্চা মূল উদ্দেশ্য হলো, মানুষের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য মানুষের সমাজের নিয়মগুলোকে আবিষ্কার করা। কিভাবে প্রাচীনকালে মানুষ তার সমাজের সাথে সম্পর্কিত ছিল সেই সম্পর্ক সূত্রগুলোকে বের করা। প্রতিটি বিজ্ঞানই সেই রকম, পদার্থবিজ্ঞানী পদার্থের মধ্যকার সম্পর্কসূত্রগুলো বের করার চেষ্টা করেন আর আমরা মানুষের সংস্কৃতির। আর সব বিজ্ঞানের মতোই আমাদেরকেও আমাদের পূর্বপ্রজন্মের কাজগুলো স্বীকার করতেই হবে। ১৯১১ সাল থেকে যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে, তাদের কাজের স্বীকৃতি না দিয়ে তাদের ছিদ্রানুসন্ধানের কী অর্থ? হাবীবুল্লা পাঠান, উয়ারী-বটেশ্বর, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর- এই প্রতিটি বিষয়ের প্রতি আমাদের সম্মান দেখানো দরকার। কারণ এরা প্রত্যেকেই আমাদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে ঋদ্ধ করেছেন। প্রথম আলো বাংলাদেশের সেই ঋদ্ধ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে লেগেছে সংস্কৃতির দোহাই দিয়েই।


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

মিডিয়া সব সময়ই তার শিরোনামে আতংক ছড়াতে অভ্যস্ত। তারা শীতকালে শুকিয়ে যাওয়া নদী নিয়ে আতংক ছড়ায় আর বর্ষায় ছড়ায় প্রমত্তা স্রোতধারাকে নিয়ে।

প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে আশংকিত হওয়ার মত আরো অনেক খবরই আছে। সেক্ষেত্রে বিষয়টির গভীরে যাওয়া প্রয়োজন। সে সময় কই। অথবা প্রণব সাহারা মনে করেন যে, তাদের অগ্রসর (?) পাঠকের কাছে মেসেজটা ঠিকঠাক পৌঁছাবে যদি সংবাদটাকে এই দিকে মোচড় দেয়া হয়। বারান্দায় পড়ে রয়েছে প্রত্নমূর্তি। (শুনেই যে কারো চোখ বিস্ফারিত হবে।) সাথে ছবি থাকলে তো চোখ-কানের বিবাদ ঘুঁচে গেল। পাঠক নিজের চোখেই দেখে নিল কী ভয়ানক পরিস্থিতি।

বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা এখনও হয়তো এমন পর্যায়ে যায়নি যে প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে তত্ত্বীয়/ব্যবহারিক জ্ঞান আছে এমন কাউকে এরকম সংবাদ সংগ্রহের জন্য চাকুরি দেবে। প্রত্নতত্ত্বের মত সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সাংবাদিক জড়ো করা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এর বিকল্প অনেক উপায় তো আছেই।

প্রত্নতত্ত্বের বিট-টা এ বিষয়ে আগ্রহ আছে -পড়াশোনা আছে - বা এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞদের সাথে নেটওয়ার্ক আছে এমন সাংবাদিককে দিলেই সমস্যাটা কমে আসবে সন্দেহ নাই। তবে মিডিয়ার চিরপুরাতন লাইন - আতংক ছড়ানোর মাধ্যমে কাটতি- আর বাংলাদেশের সাংবাদিকদের যেকোনো স্টোরি তাদের পাঠক বুঝে টুইস্ট করার প্রবণতা খুব সহজে বন্ধ হওয়ার কথা নয়।

আরেকটা দৃষ্টিকোণ থেকে সংবাদটাকে দেখতে হয়। প্রণব সাহা/প্রথম আলো হয়তো এই সংবাদের মাধ্যমে মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিদেশে প্রদর্শনী হতে দিলো না প্রতিবাদকারীরা আর এখন সেই মূর্তির দৈন্যদশায় তাদের কোনো রা নেই। এই সংবাদটার পেছনে নিছক প্রত্নতত্ত্বের আগ্রহ নয় বরং রাজনীতিই হয়তো বেশি চাবি ঘুরিয়েছে।

আলো ফেলার জন্য যূথচারীকে ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

হুমম....

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

বজলুর রহমান এর ছবি

প্রথম আলোকে আমি কখনোই একটি সৎসাংবাদিকতার প্রতিনিধি, সম্মানিত পত্রিকা মনে করি না, যদিও বাংলাদেশের সর্বাধিক প্রচারিত এই কাগজে অনেক স্বনামধন্য গুণী ব্যক্তি কাজ করেছেন এবং করেন। আপাত-মিনমিনে মতি এবং তাঁর পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ানো "নারীনেত্রী" স্ত্রীর জ্বালায় অনেক খবর এদিক ওদিক করা হয়, অনেক বিখ্যাত লোককে দিয়ে পক্ষপাতপূর্ণ উপসম্পাদকীয় বা কলাম লেখানো হয়। এই এন,জি,ও, ব্যাবসায়ীদ্বয়ের মূল আনুগত্য বাংলাদেশের প্রতি নয়।

তবে 'খোলা বারান্দা' প্রসঙ্গে আমার মনে একটা দ্বন্দ্ব আছে। চারটি সুরক্ষিত দরজার ভেতর দিয়ে যেতে হলে চুরির দিক থেকে এই নিদর্শনগুলোকে মোটামূটি নিরাপদ মনে করা যায়, যদি অন্দরের লোকের যোগসাজস না থাকে। তবে এ ধরণের নিদর্শন বারান্দায় থাকলে রোদ-বৃষ্টিতে কি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে? তাপমাত্রার পরিবর্তনে আর পানির ধারাবর্ষণে পাথরের ওপরের সূক্ষ কাজও হয়তো তত দীর্ঘস্থায়ী হবে না, যতখানি একটি আর্দ্রতামুক্ত, শীততাপ-নিয়ন্ত্রিত কক্ষে সম্ভব।

যূথচারী এর ছবি

আর্দ্রতামুক্ত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে মূর্তিগুলো ভাল থাকবে নিঃসন্দেহে। আপনার সাথে আমি একমত। কিন্তু আর্দ্রতামুক্ত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে মূর্তি চুরি হবে না আর বারান্দায় রাখলে হবে, সে বিষয়ে আমি একমত না। বরং আমাদের সামনে নজির আছে, আর্দ্রতামুক্ত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘর থেকে এবং চরম নিরাপদ বেষ্টনী থেকে মূর্তি চুরি হয়েছে, কিন্তু এই বারান্দা থেকে হয়নি।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

রণদীপম বসু এর ছবি

যাকে আমরা বিশ্বস্ত মনে করি, মিডিয়ায় মিথ্যাচার করলে শেষ পর্যন্ত আমাদের বিশ্বাসের জায়গাগুলো এভাবে ছোট হয়ে আসতে থাকলে সমস্যা বৈ কি ! আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাসবোধই তো নষ্ট হয়ে যাবে ! শেষ পর্যন্ত অন্ধকার ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ভালো পয়েন্ট!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

যূথচারী এর ছবি

আমার লেখাতেও ব্যাপারটা আমি লিখেছি, নিদর্শনগুলোর ক্ষতি বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, কিন্তু প্রথম আলো নিদর্শনগুলোর ক্ষতি বিষয়টা আলোকিত করেনি, তাদের মূল বক্তব্য ছিল নিদর্শনগুলোর নিরাপত্তা বিষয়ে।
বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের স্থান সঙ্কুলানের বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন মহলে আমরা যতো কথা বলেছি, আর কেউ মনে হয়, কখনও তা বলেনি। এমনকি আমরা এই জাদুঘরটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও নিতে চেয়েছি। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে তা আমরা করে দিতে চেয়েছি। প্রয়োজনীয় অনুমতি না পেয়ে জাদুঘরের ভারপ্রাপ্ত কিউরেটরের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আমরা কিছু টুকিটাকি কাজ-ও করেছি। প্রথম আলোর প্রতিবেদনের বিষয় হতে পারতো, দেশের প্রাচীনতম জাদুঘরটির সংরক্ষণ ও সংস্কার বিষয়ে। কিন্তু তাদের প্রতিবেদনটি পুরোপুরিভাবেই জাদুঘরটিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে, কেউই এই জাদুঘরটিকে নিজের বলে স্বীকার করতে চাইছেন না (প্রতিবেদনের শেষ দিকে মন্তব্যগুলো পড়ুন), অথচ নিজেকে এই জাদুঘরের অংশ মনে করে সকলের ধন্য হয়ে যাওয়ার কথা।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনার লেখাটা একটা গভীর এবং জটিল বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত নির্দেশ করে। প্রণব সাহাকে যেভাবে ধোলাই করেছেন সেটা খারাপ লাগলেও যুক্তির আলোকে করেছেন বলেই আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে প্রতীয়মান হচ্ছে। এটাকে এপ্রিসিয়েট না করে পারছি না।

কিন্তু এই একটা (কিংবা আরো কয়েকটা) লেখার ভিত্তিতে প্রথম আলোকে এলিটিস্ট ট্যাগিংটা একটু বেশী জেনারেলাইজড হয়ে যাচ্ছে। এই জায়গাটায় আরেকটু যুক্তি দিলে পুরো পোস্টটা আনবায়সড কিন্তু ঝাঁঝালো বলা যেত।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

যূথচারী এর ছবি

আমি তো প্রথম আলোকে এলিটিস্ট বলিনি, আমি বলেছি, প্রত্নতত্ত্ব বিষয়ে প্রথম আলোর এলিটিস্ট দৃষ্টিভঙ্গীর কথা।
প্রথম আলো যে একটা এলিট শ্রেণীর রিপ্রেজেন্টেটিভ পত্রিকা, সে বিষয়ে বলার কী আছে?


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

পত্রিকায় শিরোনামটা দেখে আমিও আৎকে উঠেছিলাম। ভুল ধারণা ভাঙল এখন। ধন্যবাদ।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

বিদেশে প্রদর্শনী হতে দিলো না প্রতিবাদকারীরা আর এখন সেই মূর্তির দৈন্যদশায় তাদের কোনো রা নেই।

হুমম্
------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

যূথচারী এর ছবি

বললেন না তো কিছুই, আরো অনেক কিছুই বলা যেত। আমার আগের একটা পোস্ট দেখতে পারেন (আইয়ুব কাদরীর পদত্যাগের পর যেটা লিখেছিলাম), সেখানে যা বলেছিলাম, আবারো বলছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য-মণ্ডিত ভবনগুলোকে যখন সংস্কারের নামে ঐতিহ্যহানি করা হলো, তখন যারা কিছু বলেনি এবং এমনকি সেই সংস্কার কমিটিতে যারা ছিল, তারাও ফ্রান্সে প্রদর্শনীর সময় উচ্চকণ্ঠ ছিল। এইসব মৌসুমী ঐতিহ্য-অনুরাগীরা অতিথি পাখির মতো এলিট। মাঝে মাঝে তাদের ঐতিহ্যের তাড়ণা হয়, যেমনটা প্রথম আলোর হয়।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

অগ্নি এর ছবি

প্রথম আলোর উদ্দেশ্য যে রাজনৈতিক এতে কোন সন্দেহ নেই। তবে প্রত্ননিদর্শনগুলো ভাল থাকুক, এটুকু প্রত্যাশা নিশ্চয়ই তাদের আছে। এই অংশটুকু পুরোপুরি সমর্থন করি-"তাপমাত্রার পরিবর্তনে আর পানির ধারাবর্ষণে পাথরের ওপরের সূক্ষ কাজও হয়তো তত দীর্ঘস্থায়ী হবে না, যতখানি একটি আর্দ্রতামুক্ত, শীততাপ-নিয়ন্ত্রিত কক্ষে সম্ভব।"

কিন্তু যে কোন প্রত্ননিদর্শনকে ভালবাসতে হলে যতটা সংস্কৃতিশিক্ষিত হওয়া উচিত, আমরা কি ততোটা হতে পেরেছি। আমাদের শিক্ষা ও অর্থনীতি এখনও ততোটা সমৃদ্ধ হতে পারেনি। বাংলাদেশের বেশিরভাগ প্রত্নসম্পদ বেশ অবহেলায় কালভ্রমণ করছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র কয়েকবৎসর হল বিষয়টা চালু করা হয়েছে। আরও কয়েক বছর যাক, তারপর যদি যাদুঘরগুলোতে কিছুটা পরিবর্তন আছে।

অপ্রাসঙ্গিক হলেও এই সুযোগে জানাচ্ছি যে, আমরা (সাধারণ জনগণ, দর্শক) যে সাংস্কৃতিকভাবে অশিক্ষিত তার প্রমাণ বরেন্দ্র যাদুঘরেই রয়েছে। হয়ত লক্ষ্য করেছেন যে, সবকটি মূর্তির শরীরে হালকা ধুলোর ছাপ থাকলেও দেবীমূর্তিগুলোর বক্ষদুটো বেশ পরিষ্কার। অর্থাৎ মাঝেমধ্যেই কেউ না কেউ হাত দিয়ে বক্ষদুটো মথিত করে নারীশরীরের স্পর্শসুখ পাবার চেষ্টা করে। এটা আমাদের মানসিক দীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়।
অতএব এমন দর্শকের পরিচালকরা যে কেমন হবেন তা বলাই বাহুল্য।

ধন্যবাদ

সৌরভ এর ছবি

বিগ সি যেমনটা বলেছেন, শীতকালে নদী নিয়ে আতংক ছড়ানো যখন "উদ্দেশ্য" হয়, তখন নদীর শুকিয়ে যাওয়ার উপরেই বেশি করে আলো ফেলাই স্বাভাবিক।

কিন্তু দুটো কথা আছে।
প্রথম আলোর রিপোর্ট সাতসকালেই পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। খুব একটা কিছু না ভেবেই পড়া রিপোর্টে কোন দোষ পাই নি। আমি উনিশশ নব্বই থেকে রাজশাহী শহরে ছিলাম। এখনো দেশে ফিরলে সেখানেই ফিরি। বরেন্দ্র জাদুঘর আমার বাসা থেকে মিনিট দশের দূরত্বে।

জাদুঘর ভবন এর দৈন্যদশা কিংবা নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ নাগরিক হিসেবে এমনিতেই আশংকা হয় ভীষণ। যতদূর জানি, জাদুঘর এর দায়িত্বে থাকা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর হাতে পর্যাপ্ত বাজেট বা সম্পদও নেই এসব সমস্যা দূর করার।

সেই অর্থে প্রথম আলোর রিপোর্ট এর দুটো ভালো পয়েন্ট
১. বরেন্দ্র জাদুঘর এর দৈন্যদশা তুলে ধরা
২. এতো হৈচৈ হয়ে গেলো যে মূল্যবান পুরাকীর্তি নিয়ে, তার ফলোআপ


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

প্রথম আলো-কে ডিফেন্ড করা আমার উদ্দেশ্য নয়, আগেই জানিয়ে রাখি। যূথচারীর অভিযোগ (তিন দিনে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার, গতবারে ইত্তেফাকও ছিলো), আমাদের সংবাদপত্রগুলি "উদ্দেশ্যমূলক" রিপোর্টিং করছে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি "এলিটিস্ট" (এটা বলা বোধহয় এক ধরনের নতুন ধারার ফ্যাশন)।

প্রথম আলোর রিপোর্ট সম্পর্কে কিছু বলার থাকলে তা সরাসরি তাদের কাছে প্রতিবাদ/ব্যাখ্যা হিসেবে পাঠানো উচিত নয় কি? যদি তারা প্রকাশ না করে, তাহলে অন্যত্র তা নিয়ে কথা বলা যায়। রীতি এরকমই জানি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

যূথচারী এর ছবি

প্রথম আলো বা কোনো সংবাদমাধ্যমের কোনো লেখা বা প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে তো কিছু লিখছি না। তা লিখলে প্রথমে ঐ পত্রিকাতেই পাঠাতাম। আমি লিখছি, তাদের দৃষ্টিভঙ্গীর বিরুদ্ধে আমার ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং দৃষ্টিভঙ্গীর কথা। প্রথম আলো দেখছে খোলা বারান্দা আমি দেখছি বদ্ধ বারান্দা। অর্ধেক পূর্ণ এক গ্লাস পানিকে কে কিভাবে দেখবে সেটা তো তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
আর দ্বিতীয়ত, ব্লগে লেখার একটা বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়, তা হলো মন্তব্য। আমার সহকর্মী প্রত্নতাত্ত্বিকরা অনেকেই আমাকে আপনার মতো সংশ্লিষ্ট কাগজেই লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি তাদেরকে যা বলেছিলাম, এখানেও সেটাই আবার বলছি, কাগজে হয়তো অনেকেই পড়বে, কিন্তু এখান থেকে আমি পাবো এই বিষয়ে সরাসরি কিছু মানুষের অভিমত, যেটাকে আমি আমার কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করি।


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...


চোখের সামনে পুড়ছে যখন মনসুন্দর গ্রাম...
আমি যাই নাইরে, আমি যেতে পারি না, আমি যাই না...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আপনার যুক্তি মেনেও বলছি, সংশ্লিষ্ট কাগজে ব্যাখ্যাগুলি উপস্থাপন করলে দুটি উদ্দেশ্য সাধিত হয় বলে মনে করি। প্রথমত, পাঠকের বিভ্রান্তি তাতে কমে বা প্রশমিত হয়। দ্বিতীয়ত, সংশ্লিষ্ট কাগজ এ বিষয়ে ভবিষ্যতে সতর্ক হতে পারে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির একটা ব্যাখ্যাও হয়তো তারা দিতে পারে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

মুজিব মেহদী এর ছবি

প্রত্নসামগ্রী বিদেশে পাচারের ঘটনা ঘটার সময় প্রথম আলোই সম্ভবত বিষয়টিকে দেশের সংবাদপত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাভারেজ দিয়েছিল। সে বিবেচনায় ফলোআপ সংবাদ ছাপাটা ওদের একটা দায়িত্ব বটে। সে দায়িত্ব ওরা পালন করেছে।
জানা কথা যে, একেক সংবাদ মাধ্যমের একেকটা রাজনীতি থাকে। কারা কোথায় আলো ফেলবে সেটা তাদের রাজনীতিই ঠিক করে দেয়। যে কারণে একই ঘটনার সংবাদের ফোকাস বিভিন্ন পত্রিকায় বিভিন্ন রকম হয়। যূথচারী তাঁর এ লেখায় প্রথম আলোর ওই অবস্থানটি স্পষ্ট করেছেন। ধন্যবাদ তাঁকে।

ব্যক্তিগতভাবে আমার কখনোই বরেন্দ্র জাদুঘরে যাওয়া হয় নি। কাজেই সংবাদটা পড়ে এর সত্যমিথ্যা আন্দাজ করা সম্ভব ছিল না। প্রণব সাহা যা লিখেছেন, তাতে মিথ্যা থাকলেও তিনি তাকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন। যেজন্য এটি পড়ে সকালবেলাই আমার বেশ মন খারাপ হয়েছিল। আমরা যে মৌসুমী জিকিরই বেশি পছন্দ করি, তাই মনে হয়েছিল, যা অনেকটাই লোকদেখানো-মিডিয়ামারানো। এ লেখা পড়েও মন ভালো হবার তেমন কোনো কারণ ঘটেনি। আমরা যে মূল্যবান প্রত্নসামগ্রীগুলোর যথেষ্ট যত্ন নেই না বা গুরুত্ব দেই না (সেটা কেবল বরেন্দ্র জাদুঘরের বেলায় নয়, সর্বত্রই), এ বিশ্বাস আমার অটুটই আছে। আশা করি, কখনো উলটোটা বিশ্বাস করার মতো কোনো প্রমাণ পাব।

এই লেখাটা এখানে পোস্ট করা দোষের হয় নি, তবে জুবায়ের ভাইয়ের মতো আমারও মনে হয়, প্রতিবেদনটিকে প্রথম আলোতেই চ্যালেঞ্জ করা উচিত। এক্ষেত্রে প্রকৃত সত্য তুলে ধরে জাদুঘর কর্তৃপক্ষেরই ওখানে প্রতিবাদ পাঠানো উচিত বলে মনে করি। ধারণা করি, আমার মতো প্রথম আলোর সিংহভাগ পাঠকই সংবাদটি বিশ্বাস করেছেন। পাঠকদের এ বিশ্বাসটাকে ভেঙে দেয়া দরকার, কারণ প্রতিবেদনটি সর্বাংশে সত্য নয় (যূথচারীর মতে)।

................................................................
জেতা মৎস্য গিলে বকে মনুষ্য খায় বাঘ-ভালুকে
রহস্য বোঝে না লোকে কেবল বলে জয়।
(দীন দ্বিজদাস)

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।