চোর

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: সোম, ২৬/১১/২০০৭ - ১০:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

০১
আলোর রেখা ফুটেছে আকাশের গায়ে।
চোর আর চোরের বউ (মমতাজ) এর কন্ঠ ভেসে আসে চোরের বাড়ি থেকে।
মেয়েটা(চোরের বউ) : আমগো প্রাসাদে না হাতি থাকবে হাতি. ছোটবেলায় একটা হাতি দেখছিলাম সেইরকম একটা হাতি ..
লোকটা (চোর) : দুর প্রাসাদে হাতি থাকপো ক্যান.. ওতো থাকে হাতিশালে .. গল্পে শুনিস নি .. হাতিশালে হাতি ঘোড়াশালে ঘোড়া...
আকাশ থেকে চোরের ঝুপড়ির উপর দৃষ্টি নেমে আসে। একটা বিবর্ণ ছেড়া খোড়া ঝুপড়ি।

চোরের ঘরের ভেতরে চোর আর চোরের বউ ঘনিষ্ট হয়ে গল্প করছে। তারা কোন স্বপ্নে বিভোর। ছোটবেলার রূপকথার রাজ্য গড়ে ওরা যেন তার রাজা রাণী।

চোর : আমি একটা ময়ূরপঙ্খী নাও বানামু। তারপর নাও ভাসামু .. সেই নাও ভাসতে ভাসতে..
বউ : দেখ আমারে রাগায়ো না..
চোর : কেন তোমার আবার কি হইলো।
বউ : আমারে ফেলাইয়া তুমি সাত সমুদ্র কইর‌্যা বেড়াবা আর আমি বসে বসে রাজপ্রাসাদে একা একা আটকাইয়্যা থাকুম..
চোর : আহ তোরতো সখীরা থাকবে .. ওদের সাথে ফুলবাগানে ঘুরে বেড়াবি।
বউ : আহ শোন না .. আমি না কুলসুমকে বলছি।
চোর উঠে পড়ে ধরপর করে বসে। বউকে বলে
চোর : কি
আমরা একটা রাজপ্রাসাদ বানামু.. সেখানে তোমারে লইয়্যা যামু ..
চোর : সব্বোনাশ
বউ : সব্বোনাশ এর কি হইলো ও আমার সখী না ..
চোখ বড় করে চোর বলে
চোর : যদি জাইন্যা ফেলে

কুশীলব পরিচিতির প্রথম অংশ
( এখানে চোর এর নাম আর নাটকের নাম থাকবে না..)

দৃশ্য ০২ (ক)
দিন / চোরের বাড়ি

একটা বড় বোঝা খুলে চোরের বউ দেখে।
বেশ কিছু গয়না, আর একটা পুতুল। কয়েকটা সুন্দর পুতুল।
পুতুল দেখে চোরের বউ এর মন খারাপ হয়ে যায়।
চোর বিছানা থেকে সেটা দেখে
নিচে নেমে পুতুল হাতে নিয়ে বলে
চোর : চল আমরা ছোট বেলার মতো পুতুল খেলি
চোর পুতুল নিয়ে জুতোর বাক্স খুজে পুতুল খেলতে বসে।
কিন্তু বউ এর মন কেমন উদাস ।
চোর : কিরে কি হইছে
বউ কিছু বলে না
চোর : দেখ খেলার সময় গোমরামুখো হয়ে থাকলে ভালো লাগে না।
কিছুন পর বউ বলে
বউ : দেখ - তুমি একটা বিয়ে কর।
চোর : কি কইলি
বউ : তুমি একটা বিয়ে কর।
চোর : তোর মাথা খারাপ হইছে
বউ : আমি কিছু মনে করবো না .. তুমি আর একটা সংসার পাত - তোমার ঐ ঘরে ছেলে হইলে ও আমারও
ছেলে হইবো।
চোর : দ্যাখ ফালতু কথা বলবি না ৃ.
চোর গট গট করে বেরিয়ে যায়।
বউ বসে থাকে

দৃশ্য ০২ (খ)
দুর দিগন্তে মেঠো পথে সে হাটতে হাটতে হারিয়ে যায়।
সন্ধ্যা নামে।

দৃশ্য ০২ (গ)
রাত
বউ একা একা বসে আছে। তার চোখ ফোলা।
ঠক ঠক শব্দে সে উঠে দরজা খুলে আবার ফিরে আসে
চোর ঢুকে বলে
চোর : আচ্ছা – বিয়ের পর দিন ঘাটলায় বসে তোর সঙ্গে যে কথা হইছিল মনে আছে

ফ্যাশ ব্যাক

দুজনে বসে আছে। সামনে একটা নদী অথবা মাঠ।
চোর : কি ভাবছিস
বউ : ভাবতাছি – পুরুষ মানুষের মন ...
চোর : কি ?
বউ : লোকে বলে পুরুষের মন নাকি পাখির মতো .. খালি উড়ে আর উড়ে
চোর : তাতো ঠিকই
বউ : তুমিও আমাকে ফেইল্যা একদিন উড়াল দিবো
চোর : দিমু ঠিকই কিন্তু আবার ফিরা আসমু .. পাখিগোতো বাসা বাড়ি থাকে না
বউ : কিন্তু উড়তে উড়তে যদি তোমার চোে নতুন রঙ লাগে.. অন্য কিছুতে যদি তোমার মন বসে
চোর : না গো .. তুইতো আমার কাছে খালি বউ না
বউ : তাইলে
চোর : তুই আমার বাচ্চাও .. তোরে আগলায়ে বড় করুম সারাজীবন

দুজনে আবার বাস্তবে ফিরা আসে।
চোর : শোন - আমার বচ্চার দরকার নাই – তুই আছোস না..
বউ কোন কথা বলে না
চোর : শোন - তাড়াতাড়ি খাবার দে- আজকা মিঞাবাড়ি যামু - লোকটা না...

দৃশ্য ০২
রাত/ মিয়া বাড়ি
রাত নেমেছে। নিঝুম নিশুতিতে ঝিঝি পোকার ডাক। মিঞাবাড়ির বড়কর্তার ঘুম আসে না। জানালা দিয়ে জোৎস্নার আলো ঘরে আছড়ে পড়ছে। ঘরের কোণে একটা ছবির উপরে চাদের আলো পড়ে। সেখানে একটা পুরনো ছবি। বড়োকর্তার গিন্নীর পুরনো দিনের ছবি। বড়কর্তা উঠে আলো জ্বালান। একটা আলমারী খুলে একটা গয়নার বাক্স খুলে একটা হার দেখেন। পুরনো দিনের ভারী হার। গলায় হারটা স্পর্শ করে পুরনো দিনে ফিরে যান। হারটা হাতে তুলে নেন। শূন্যে তাকিয়ে আছেন.. । তার পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে।
এই হারটা - তোমার জন্য নিয়ে এসেছি ...
তিনি কিছুন হারটাকে নিয়ে দাড়িয়ে থাকেন। তারপর বাক্সটার মধ্যে হারটা রেখে আলমারীর দরজা বন্ধ করেন। ধীর পায়ে এগিয়ে দরজা খোলেন। বাইরে কেমন নীল আলো। তিনি চাদের নীল আলোর মধ্যে এসে খানিকন দাড়ান। তারপর আবার ঘরে ফিরে দরজা বন্ধ করে দেন। ঘরে ঢুকেই দেখেন আলমারীর দরজাটা খোলা। তিনি হন্তদন্ত হয়ে গিয়ে দেখেন তার গয়নার বাক্সটা নেই।
বৃদ্ধের মুখ থেকে চিৎকার বের হয় চোর আর ঠিক সেইসময় নাটকের নাম আসে

চোর
কুশীলব পরিচিতির দ্বিতীয় অংশ

দৃশ্য ০৩
দিন/ নদীর ধার, পুকুর পাড়, েেতর আল বা এমনই কোন পথের মাঝে
দুইটা লোক বলতে বলতে যাচ্ছে।
১. চোরটা না হাওয়ায় বাস করে।খান সাহেবকো বাড়িতে শহর থেইক্যা মেহমান আইলো .. অনেক লোকে
ঘুমায় নাই ঐদিন .. তাও ভোর হইতেই দেখা গেল এর কি কি সব হারাইছে ..অনেককিছুতো হারাইছেল
সেদিন তারপর চিনু চেয়ারম্যানের বাড়ি...
২. চোখে দেখা যায় না। মনিরের বউ এর কথা মনে আছে না – মনিরের পাশ থেইক্যা ওর নতুন বউ এর গলার
ভারী চেনটা উধাও- টেরটাও পায় নাই - মনিরের বউ এর খালি মনে হয়ছিল মনির তার ঘাড়ে একটু
আদর করছিল
১. চোরে সামনেই সে নাকি চুরি করতে পারে.. নিজাম দারোগার হোণ্ডা থেইক্যা গণেশ মাঝির চোরাই মূর্তি হাপিশ ..একবারও দারোগা তার হোণ্ডা ছাইড়ে নড়ে নাই/ বাপরে .. এলেম আছে লোকটার ..
২. ওর যা গল্প শুনি তাতে তো মানুষ মনে হয় না। শুনছি জ্বীন পুষে ওদের দিয়ে কেউ কেউ চুরি করে
১. কি জানি হতে পারে

দৃশ্য ০৪
দিন/ চোরের বাড়ি

চোর আর চোরের বউ শুয়ে আছে। তাদের হাতে রূপকথার বই।
চোর রূপকথার বই এর পাতা উল্টে উল্টে ছবি দেখাচ্ছে।
চোর : রাণী
বউ : এখনও হই নাই
চোর : হয়ে যাবি, যেভাবে সুখের রাত নামতাছে বেশিদিন লাগবো না
বউ : আর কতদিন বল না
চোর : এক মাসও হইতে পারে আবার বছরও হইতে পারে। আমি হিসাবে খুব কাচা। একটা রাজ্য গড়তে ঠিক
কতো টাকা লাগবো ঠিকঠাক বুঝতে পারতাছি না
বউ : ও আমি না শুনছিলাম মসলিনকাপড় হইলো পৃথিবীর সবচাইতে দামী কাপড়। আমারে মসলিন আইন্যা
দিবা।
চোর :দিমু।
চোর আনমনা হয়্যা যায়-
বউ : কি ব্যাপার .. কি হইলো তোমার
চোর : ভাবতাছি সারা পৃথিবীর সেরা গাতকগো লইয়্যা একটা আসর বসামু .
আমি সিংহাসনে বইসে আছি - সামনে এক এক রাজ্য থেইক্যা সেরা সেরা গায়ক আয়া গায়া যাইতাছে ..
চোরের মন খারাপ হয়া যায়...
চোর : আমগো আসাদ কি সুন্দর সুন্দর গান গাইতো .. ওর ইচ্ছা ছিল সোনার বাংলা অপেরা হাউজে গায়কের
পাঠ নিবে .. বাপের অসুখ হইলো আর ও গানের দলের বদলে কাজ নিল চালের মিলে
চোর দাড়িয়ে পড়ে
চোর : আমগো রাজত্বে যত গায়ক ওদের কোন কাজ করতে হইবো না... সারাজীবন গান গাইবো .. ওগো গানে
পাখির সুর থাকবো..ওগো সুরে ফুল ফুটবো ..
এমন সময় কে জানি আসে।
শাহজাহান ...
চোর উঠে দরজা খুলে দেয়।
চাচা এসেছে
চোর : স্লামালাইকুম, আসেন
চাচা: কি খবর বাবা, অনেকদিন কোন খবর পাই না,
চাচা ভেতরে ঢুকেন, চোরের বউ এসে তাকে সালাম করে।
চাচা : থাক থাক.. ভাল আছিসতো
চোরের বউ :ভাল আছি চ্চাা, তুমি ভালোতো ..চাচী ? সোহানা ...
চাচা : ভাল সবাই ভাল, চাচীর শরীরটা মাঝে একটু খারাপ করছিল
চোরের বউ এর গলায় অভিমান ঝরে পড়ে
চোরের বউ : আমারে খবর পাঠাইলা না .. আমারে পর করে দিছ তোমরা
চাচা : আরে না না - বয়স হইছেতো , সবসময়ই একটা না একটা কিছু লাইগ্যা আছে.. চিন্তার কি শ্যাষ আছে
এরমধ্যে মমতাজ গিয়ে চাচার জন্য নাস্তা আর সরবত বানায়।
চাচার চোখে পড়ে খাটের কোণায় একটা রূপকথার বই পড়ে আছে .. কোনায় কয়েকটা পুতুল আর বাচ্চাদের খেলনা
চাচার মুখে একটা প্রসন্নতার হাসি বেজে ওঠে।
চাচা : তোর চাচী আমারে পাঠাইলো - শহরে যাইতাছো -যাওয়ানের পথে একটু মমতাজরে দেখে আসো
নাস্তা নিয়ে আসতে আসতে মমতাজ বলে
মমতাজ : তুমি থাকবা না..
চাচা : না রে ... ফিরতি লঞ্চে শহর যামু - হারান শেখের লগে জমির মামলাটা শুনছি কোর্টে উঠবো.. উকিল
সাহেব খবর পাঠাইছে -
মমতাজের কণ্ঠে রাগ ঝমঝম করে
মমতাজ : আমি তো পরই হইয়া গেছি- অন্য কাজের লগে না মিললে আসা যায় না
চাচা : শোন মেয়ের কথা - বিয়ের পর তো মেয়ে পরই হইয়্যা যায় -
শাহজাহান :না চাচা - কইন্যা আপনারই আছে .. আপনি আরাম করেন আমি একটু আসি
শাহজাহান বেরিয়ে যেতে গেলে
চাচা : না আমাকে এখুনি বের হতে হইবো - আমি শহর থেইক্যা ফিরা তোমার চাচীকে নিয়া আসুম
মমতাজ গাল ফুলিয়ে গজগজ করে
মমতাজ : আর আসতে হবে না
চাচা : ঠিক আছে আর আসবো না - দেখি তখন তুই কি করে থাকতে পারিস
চাচা মমতাজকে আদর করে চলে যান। চাচা চলে যান ,

দৃশ্য ০৫
দিন / পথ

শাহজাহান তাকে এগিয়ে দিতে একসঙ্গে এগোয়...
বেরিয়ে চাচা বলেন
চাচা : একটা বকুল ফুলের গাছ ছিল না , কাইটা ফেলাইছো
শাহজাহান : হ্যা, বকুল গাছের গন্ধে মমতাজের ঘুম ঘুম লাগে
চাচা আর শাহজাহান এগোচ্ছে।
চাচা বলছে
চাচা : তোমারে দেখে না - তোমার নাম শুনে আমার মনে আসছিল কথাটা – শাহজাহান ... মমতাজের যোগ্য নাম
তোমার চাচী রাজি ছিল না.. আমি তারে বুঝালাম – শাহজাহান আর মমতাজ নামের মধ্যেই জোড়
আছে। সম্রাটের নামে নাম – তাজমহল না বানাইতে পারুক মেয়েটাকে সুখে রাখার চেষ্টা করবে। বাপ মা মরা মেয়েটা সুখেই থাকবে। সেই দিন এখন পূর্ণ হতে চলেছে - মাসাল্লা
শাহজাহান বোকার মতো চাচাার কথা শোনে। সে বুঝতে পারে না চাচা ঠিক কি বলতে চাইছেন।
চাচা : কয়দিন বাকি?
শাহজাহান : জ্বি?
চাচা : - ঘরে রূপকথার বই দেখলাম - নাতির জন্য আগেই সব ঠিক করে রাখতেছো -
ভাল আমাগো সময়ে আবার এমনি ছেল না। তোমার চাচী খুব দুশ্চিন্তা করতেছিল .. এতদিন বিয়া
হইছে -ছেলেমেয়ে নিতেছে না কেন... তোমার চাচী বড় খুশি হইবো.. মমতাজের মা তার হাতেই তো
মমতাজকে তুলে দিয়া গেছিল - তারে নিয়া তার চিন্তাটা বেশি
শাহজাহানের মাথাটা নিচু হয়ে যায়। মুখে কালো অন্ধকার জমে।
রিক্সা রাস্তার মোড়ে একটা রিক্সা ঠিক করে ঘাট পর্যন্ত। শাহজাহান তাতে উঠতে গেলে চাচা তাকে নিবৃত্ত করেন
চাচা : এই সময় বউ এর কাছে থাকা ভালো। যাও ঘরে ফিরা যাও - এই একটা সময় বউ এর সেবা করতে হয়
আর বাকীটা সময় বউ এর সেবা খাওয়ন লাগে -এইটাই নিয়ম ..
চাচার রিক্সা এগিয়ে যায়।
শাহজাহান বাড়ি ফেরার পথে মাঠে দেখে ছোট ছোট ছেলেরা খেলছে।
শাহজাহান দেখে একটা আইসক্রীমওয়ালা ঠুন ঠুন করে ঘন্টা বাজিয়ে যাচ্ছে। একটা বাচ্চা বড় বড় চোখ মেলে আইসক্রীমের বাক্সের দিকে তাকিয়ে আছে।
শাহজাহান : মালাই খাবা
ছেলেটা ঘাড় নাড়ে
শাহজাহান আইসক্রীমওয়ালাকে বলে তাকে সবচাইতে দামী আইসক্রীমটা দিতে।
বাচ্চাটা আইসক্রীম খেতে থাকে।
শাহজাহান দাড়িয়ে দাড়িয়ে ছেলেটার আইসক্রীম খাওয়া দেখে।

দৃশ্য ০৬
বিকাল / চোরের বাড়ি

মমতাজ আয়নার সামনে বসে গলায় মোটা একটা হার দিয়ে নিজেকে দেখে।
আর মনের সুখে গান গায়।
সখী কুলসুম এসে তার নাম ধরে ডাকলে সে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে হারটা রেখে দেয়।
দরজা খুলে দিলে সে বিছানায় বসে মমতাজের দিকে তাকায়।
কুলসুম : মনে রঙ লাগছে মনে অয় ..
মমতাজ : গান গাইতে কি রঙ লাগে মনে..
কুলসুম : তোমার সম্রাট কই.. শাহজাহান মিঞা
মমতাজ : চাচা আসছিল -ঘাটে পৌছায়ে দিতে গেছে
কুলসুম : তাইলে রাত অইবো -...
মমতাজ : হ - তুই থাক - গল্প করি
কুলসুম : বেশিন থাকতে পারমু না ..
মমতাজ : ও বুঝি চিৎকার জুড়ে দেবে
কুলসুম : নারে, পোলাপান হইলে আর মনে রঙ থাকে না ..
মমতাজ ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা চিরুণী বের করতে গেলে একটা বড় গলার হার কুলসমের চোখে পড়ে
কুলসুম : কি রে নতুন হার গড়ায়ছিস নাকি
মমতাজের মুখ একটু বিবর্ণ হয়ে যায়।
কুলসুম : দেখি দেখি
কুলসুম গিয়ে সখীর ড্রয়ার খুলে হারটা বের করে।
আয়নার সামনে গিয়ে নিজের গলায় হারটা দিয়ে বলে
কুলসুম : কি সুন্দর হার - সোনার
মমতাজ মাথা নাড়ায়
কুলসুম : আমাকে কেমুন লাগছে বল না..
মমতাজ : গয়নায় মাইয়া মানুষরে সুন্দরই দেখায়, তুই নিবি –
কুলসুম বিশ্বাস করে না মমতাজ এটা বলছে
কুলসুম :ধুর যা
মমতাজ : আমরা যখন চলে যাবো এর চেয়েও বড় একটা গয়না তোকে বানিয়ে দিব
কুলসুম : কই যাবি
মমতাজ : বললাম না তোরে- একটা নতুন দ্যাশে যাবো..ঐখানে তোরেও নিয়ে যাবো...

দৃশ্য ০৭
সন্ধ্যে /রাত/ হাটের কোন দোকান

শাহজাহান একটা দোকানে বসে চা খাচ্ছে।
পেছনে কারা গল্প করছে – ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। বোঝা যায় শিতি ছোড়ার দল।
তাদের আলাপ আলোচনার বস্তু চান্দে মানুষ সত্যিকার গিয়েছিল কিনা। চায়ে চুমুক দিতে দিতে শাহজাহান শাহজাহানের কানে ভেসে আসে টুকরো টুকরো কথা।
চান্দে যাওয়ার গল্পোটা মিছা –
ছবি - ধুর,বানাইনা আরে চান্দে যে লোকটার ছবি -হাতে যে পতাকা সেটা বাতাসে কাপতাছে-
আরে চান্দে বাতাস আছে নাকি যে ওইটা উড়বো..
ছায়াটা নিয়াও কথা আছে – একটা পত্রিকায় পড়ছিলাম এইটাও হিসাব এ মিলে না...

শাহজান আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দেয়। ওইপাশে দুজন মানুষ নিচুস্বরে কি জানি কথা বলছে। শাহজানের কান খুব খাড়া। একটা শব্দ ওখান থেকে ধরতে পারে জমি বিক্রি - বাকি কথা ছেলে ছোকরার গলার নিচে চাপা পড়ে যায়। শাহজাহান টেবিলের কাছে যায়

সেখান থেকে দুইজনের কথোপকথন স্পষ্ট শোনা যায়।
- আগামী পরশুই যে লাগপো.. পুরাটাই
- এক দুইদিন দেরী করলে হয় না
- না এমনিতেই দেরী হয়্যা যাইতেছে – তাছাড়া বিপদে কম দামে
- কম ! তিন ল ২০ হাজার টেকা কম। এই দামে তুমি শহরেই জমি পাইবা ..কেবল ঐ গ্রামে আমার বাবার মৃত্যু হইছিল বইলা
শাহজাহান দাম মিটিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে একটা ছায়াময় অন্ধকারের কোণে যায়।
মোড়ে দাড়িয়ে দোকান থেকে কারো বের হওয়ার জন্য অপো করে। দেয়ালে একটা সিনেমার পোষ্টার লাগানো। সে পোষ্টার দেখতে থাকে।
ঐ লোক দুইটা বের হয়্যা আসে।/যে লোকটা জমি বিক্রি করেছে সে যেই রিকসা ঠিক করে শাহজাহান রিকসাওয়ালাটাকে ভাল করে দ্যাখে।
রিক্সা চেপে লোকটা রওনা দেয়।

দৃশ্য ০৮
রাত / চোরের বাড়ি

খাটের নীচে পুরনো বাসন আর কি কি সব পরিত্যক্ত জঞাল রাখা।
কুলসুম খাটের নীচে ঢুকে বাসন সরিয়ে একটা বাক্স দেখে।
বাক্সটার ডালি খুলে ভেতরে দেখে সবকিছু ঠিক আছে কিনা।
অলংকার আর টাকায় ভর্তি হয়ে আছে বাক্সটা।
সে বাক্সটার গায়ে হাত বুলায়।
আবার যতœ করে তাকে আড়াল করে রাখে।

দৃশ্য ০৯
রাত / রাস্তা

শাহজাহান বাড়ি ফিরে।
মমতাজ তাকে খাবার দেয়।
শাহজাহান খাবার মুখে দিয়ে বলে
শাহজাহান : আইজক্যা তোমার মন খারাপ মমতাজ।
মমতাজ : ক্যান- নাতো
শাহজাহান : না - তোমার মন খারাপ হইছে। খাবার মুখে দিয়াই বুঝছি।
মমতাজ : ভুল বুঝছো..
শাহজাহান : আমি ঠিক বুঝছি . শুনো..
মমতাজ : কি
শাহজাহান : ইরান দেশের গালিচা নাকি পৃথিবীর সবচাইতে ভাল.. আমি ভাবছি তোর ঘরে ইরান থেকে গালিচা
নিয়ে আসপো ..
মমতাজ : ঠিক আছে ..
শাহজাহান : আমাদের দ্যাশে চাচা - চাচ রে নিয়া যাইতে হইব্যো .. সারাজীবন অনেক কষ্ট করছে
শেষ বয়সে একটু আরামের মুখ দেখুক
মমতাজ : সত্যিই নিবা
শাহজাহান : বাহ – তুমি বলবা আর আমি নিমু না-
মমতাজ : চলো না তাড়াতাড়ি চইল্যা যাই – এইখানে আর ভালো লাগে না...
শাহজাহান : হ তাড়াতাড়ি যাইত্যে হবো

দৃশ্য ১০
রাত / রাস্তা
একটা পহারাদার হাতে হেরিকেন আর একটা মোটা লাঠি নিয়ে ঠোটের উপর হুইসেল ঠেসে ঘুরে বেড়াচ্ছে...
হটাৎ সে দেখে একটা লোক..
সে খামোকা একটা হাক ছাড়ে
হেই হো..
অন্ধকার আধা শহর আধা গ্রামের রাস্তায় তার সেই চিৎকার ছড়িয়ে পড়ে।
সে এগিয়ে যেতে শাহজাহানকে দেখা যায়
পাহারাদার তাকে বলে
হেই কে তুমি
- যাদু দেখাই
- বলো কি
- হ্যা
- এই রাতে এইখানে কি
- লঞ্চ আসছে দেরীতে .. এখন কই যাই দিনের বেলা ছাড়াতো যাদু দেখার লোক নাই
- আচ্ছা আমি আছি .. আমিই তোমার যাদু দেখুম
- যাদু দেখবা নাকি শিখবা
- শিখমু
- এই যে আঙ্গুলটা দেখছো- এই যে আমার বুড়ো আঙ্গুল - এটা উধাও করে দিতে পারি
- দাওতো
শাহজাহান বুড়ো আঙ্গুলটা তুলে ধরে ।
- দেখছোতো এই আঙ্গুলটা
- হ
অন্যহাত দিয়ে বুড়ো আঙ্গুলটা শাজাহান ঢেকে রাখে।
- কি দেখা যায় -উধাও হয়া গেছে না
- ধুর এইটা যাদু হইলো
- তুমি তো শিখবার চাইছো - দেখবার না - বাড়িতে গিয়া দেখাও বৌ ঝি খুশীই হইবো
পাহারাদারের সামনে দিয়া শাজাহান চলে যায়।
পাহারাদারটা বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।

দুর থেকে চোর চোর শব্দ ভেসে আসে।
পাহারাদারটাও চোর চোর করতে বাশি বাজিয়ে দৌড় দেয়।

দৃশ্য : ১১
দিন/ চোরের বাড়ি

শাহজাহান পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
কুলসুম আসে।
দুই বান্ধবী ঘরের বাইরে কোথাও বসে। যেতে যেতে কুলসুম শেফালীর কথা বলে।
কুলসুম : শেফালী আসছে। যাবি নাকি ওর বাড়িতে।
মমতাজ : তাই নাকি - কে কইলো
কুলসুম : রাবেয়ার ননদ আইছে - সেই খবর দিলো
মমতাজ : কেমুন আছে ও
কুলসুম : বললো তো .. কুলসুম লজ্জ্বা পায়।
শাহজাহান বলে
শাজাহান : আমি একটু বের হলাম... তোরা গল্প কর
শাহজাহান বের হয়ে যায়।
রাজরাণীর মতো .. আরব দেশের সুখ .. গায় থেকে নাকি সোনা গড়ায়ে পড়তাছে
শাহজাহান ঘুম ভেঙে ওঠে বাইরে আসে
শাহজাহান : কার গা দিয়ে সোনা গড়ায়ে পড়তাছে রে কুলসুম
কুলসুম : যাবি নাকি
মমতাজ : দেখলি না বাইর হয়্যা গেল
কুলসুম : আচ্ছা তুই বাড়ি ছেইড়া বাইর হস না কেন.. যরে ধনেরর মতো কি আগলে রাখস
মমতাজ হাসে।
মমতাজ : বাড়ি ঘর - আমি ঘরের বাইরে যাই ও পছন্দ করে না। বলে বের যদি হও একটু সবুর করো.. যেই
দ্যেশে যামু তখন খালি বেড়াপো
কুলসুম : আচ্ছা শাজাহান ভাই কি করে রে
মমতাজের চোখ সরু হয়ে যায়
মমতাজ : কেন
কুলসুম : এমনি..কখনওতো কিছু করতে দেখি নাই - শুনিও নাই সারাদিনইতো ঘরে না হয় বাইরে এমনি এমনি
মমতাজ : পুরুষ মানুষগো কাম, সবসময় দেখতি হয় না আর তাছাড়া
আমরাতো থাকতেছি না
কুলসুম তা তোর সেই যে কি জানি দেশের কথা বলছিলি
ঐ যে নিয়ে যাবি বললি - তা ওখানি গেলে ওই ছাওয়ালটা আর তার বাপরে নিয়ে যাওয়া যাপে
মমতাজ : হ যাইবো
কুলসুম : তা কিসে করে‌্য যেতে হবে .. উড়োজাহাজে নাকি
মমতাজ : উড়োজাহাজে ..(বিভ্রান্ত) কি জানি মনে হয় যেতে পারবি .. তয় ও বলছিল কি একটা জাহাজ
বানাবে ময়ূরপঙ্খী নাও .. ওইটা পাঠায়ে দিমু তোর জন্য - ঐটাতেই তোরা যাস
কুলসুম : ওই দেশটার নাম কি জানি বললি আমি ভুলে গেছি
মমতাজ কুলসুমের জিজ্ঞাসার সাথে পাল্লা দিতে পারে না।
মমতাজ : এইটাতো জিজ্ঞাসা করি নাই ..
কুলসুম : আমরিকা-
মমতাজ : না এতো বিচ্ছিরি নাম না অনেক সুন্দর নাম হবে ঐ দেশটার
ধর দেশটার নাম স্বপ্নের দেশ
কুলসুম : বুঝছি
মমতাজ : কি
কুলসুম : রাজুর বাপ কইতেছিল - তোমাগো শাজাহান ভাই মনে হয় ডিবি পাইছে
মমতাজ : সেটা আবার কি?
কুলসুম : একটা লটারি - জিতলে নাকি কুন একটা দ্যাশে যাইতে পারে। ওইখানে গেলে কাজের অভাব নাই
সত্যি তোগো সাথে আমগো নাম ঢুকায়া দিবি
মমতাজ : নারে - যেই দ্যাশ না এ এক নতুন দেশ - সেই ছোটবেলার গল্পের মতো -

দৃশ্য : ১২
রাত / রাস্তার ধার কিংবা নির্জন জায়গা

একটা মাফলার বের করে গলায় ঝুলায়। আর কোমর বন্ধনী খুলে বের করে এক জোড়া মোচ আর দাড়ি। সে মোচ দুইটা টর্চ দিয়ে দ্যাখে একটা বাছে ..দাড়িটা মুখে লাগায়। ছোট্ট একটা আয়নায় নিজেকে টর্চ মেরে / মোম জ্বালায়ে নিজেকে দ্যাখে। তারপর রওনা দেয়...
সে এগিয়ে এগিয়ে চলে যায়
দৃশ্য : ১৩
রাত / চোরের বাড়ি

মমতাজ রাণীর মতো সাজে।
আয়নার সামনে বসে।
মমতাজ কুলসুমকে ডাকে
মমতাজ : কুলসুম
কুলসুম আসে। তারও পরণে উজ্জ্বল সাজ।
মমতাজ : কেমুন লাগছে আমাকে ...
কুলসুম : একবারে রাজরাণী
মমতাজ : অন্য সখীদের খবর দাও আজ ফুলবাগানে পূর্ণিমা দেখবো
কুলসুম : দিচ্ছি
কুলসুম চলে যায়।

দৃশ্য : ১৪
রাত / নির্জন রাস্তা এবং শাপলার বাড়ি

শাজাহান নির্জন রাস্তা ধরে একটা বাড়ির সামনে এসে দাড়ায়।
শুনশান চারিদিক। দুর থেকে একটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক ভেসে আসে।
সে দেয়াল টপকে নিঃশব্দে ভেতরে ঢোকে।
শূন্য ঘর। জানালা দিয়ে আর পাশের ঘর থেকে আবছা আলোয় বোঝা যায় এ ঘরে একটি মেয়ে থাকে। দেয়ালে একটা পাখির ছবি টানানো। কয়েকটা পুতুল বিছানায় পড়ে আছে। টেবিলে পড়ার বই যতœ করে সাজানো। একটা ফুলদানীতে অনেকদিনের বাসী ফুল।
পায়ের উপর দিয়ে একটা ইদুর চলে যায়। সে চমকে নড়ে ওঠে। একটা কিচ কিচ আওয়াজ তুলে ইদুরটা দৌড়ে পালায়।
সে টেবিলের কাছে যায়
একটা অ্যালবামে একটা মেয়ের হাসিমুখ। অন্ধকারে তার দিকে চেয়ে আছে।
সে হটাৎ শোনে কারও যেন কান্নার আওয়াজ।
সে চমকে ওঠে। লুকিয়ে ভাল করে শুনলে বুঝতে পারে একটা নারী কণ্ঠের আওয়াজ।
পাশ দিয়ে কেউ চাপা স্বরে একটু ধমক দেয়
পুরুষ কণ্ঠ : আহ কেন্দে কি করবা -যা হইবার তা হইবো
মহিলা কন্ঠ : ধার দেনা করেও যোগাড় করা যায় না
সে পাশের ঘরে উকি দিয়ে দেখে সেই মেয়েটা শুয়ে আছে আর তার শিওরে বসে আছে মা। একটু দুরে বাবা।
বাবা : ভিটে মাটি সব তো বিক্রি করলাম। সবাই জানে – একটা কপর্দক আর অবশিষ্ট নাই। কেউ আর একটা
টাকাও দিব্ োনা। যা আছে এই শেষ।
মা : তাইলে শাপলা
বাবা : আল্লাকে ডাকো .. আমরা যা করার সবইতো করলাম
মা : আমি বাড়ি বাড়ি ভিা করুম ...
বাবা কোন কথা বলে না।
তার মুখ দেখে বোঝা যায় তিনি নিয়তিকে মেনে নিয়েছেন।
খানিকন চুপ থেকে বলেন
বাবা : দোয়া করো - দোয়া করা ছাড়া আর কিছু নাই।
শাহজাহান অপো কওে কিন্তু জননীর কখনও মৃদু কিংবানিরব কান্নায় রাত কেটে যেতে থাকে।
বাবা ভেঙে গেছেন – তিনি বুঝে গেছেন তার কন্যা আরোগ্যের সামর্থ্য তিনি অর্জন করতে পারেননি।
তিনি ত্রƒর মাথায় সান্তনার হাত রাখেন সেই হাতে না থাকে শক্তি, না থাকে স্বান্তনা, সে হাত শুধুই ভেঙে পড়ার।
শাহজাহান আর একবার মেয়েটার দিকে তাকায়। নিষ্পাপ মুখটি যেন তার ভেতরেও ঐ বাবার ক্রন্দন ছড়িয়ে দেয়।

সে এগিয়ে যেতে গিয়ে মনে হয় সে এক চোর - সে ঐ মেয়েটির কেউ নাৃ সে আবার নিঃশব্দে যেভাবে এসেছিল সেভাবে চলে যায়।

দৃশ্য : ১৫
রাত / রাস্তার ধার কিংবা নির্জন জায়গা

চোর ফিরছে ।
ফিরতে ফিরতে তার মনে বার বার শিউলির কথা মনে হচ্ছে।
জোরে জোরে হাটতে গিয়ে সে খানিকটা হাপিয়ে যায়। পাশেই একটা পুকুর
একটা গাছের আড়ালে সে দাড়িয়ে বিড়ি ধরায়।
সে দেখতে পায় শিউলি দুরের ঘাটে বসে আছে। একটা নীল আলোয় চারদিক ভরে আছে।
সে এগিয়ে যায় তাকে দুর থেকে ডাকে।
শাহজাহান : শাপলা - এই শাপলা
মেয়েটা পেছন ফিরে তাকায়
শিউলি : তুমি আমার নাম জানলে কি করে।
শাহজাহান : আমি জানি - আমি যে তোমাকে চিনি
শিউলি : কিন্তু আমি তোমাকে যে চিনতে পারছি না
শাহজাহান একটু থমকে যায়
শিউলি : তুমি কে ?
শাহজাহান নিজের মনের ভেতর সাহস এনে বলে
শাহজাহান : আমি তোমার বাবা
শিউলি বাবাকে ডাকে
শিউলি : বাবা বাবা
শিউলি র বাবা আসেন
বাবা : কি হয়েছে মা
শিউলি : এই লোকটা না বলছে ও আমার বাবা
বাবা চারিদিক তাকিয়ে লোকটাকে খুজে
শাহজাহান গাছের আড়ালে মুখ লুকোয়

দৃশ্য : ১৬
রাত / রাস্তার ধার কিংবা নির্জন জায়গা

শাহজাহান আবার হাটতে থাকে

দৃশ্য : ১৭
রাত / চোরের বাড়ি
মমতাজ তার পরণের মহারাণীর মূল্যবান গয়না তার সিন্দুকে ভরে রাখতে যায়। কি ভেবে সে গয়নাটি পড়ে থাকে
সিন্দুকটি সে লুকিয়ে রাখে তার গোপন জায়গায়।
বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শাহজাহানের জন্য অপো করে।

দৃশ্য : ১৮
রাত / রাস্তার ধার কিংবা নির্জন জায়গা

শাহজাহান এগিয়ে যেতে যেতে দেখে শাপলা দাড়িয়ে আছে। পাশে তার বাবা
মেয়েটা তাকে দেখিয়ে বলে
শিউলি : এই সেই লোকটা
বাবা তার দিকে তাকিয়ে এগিয়ে আসেন
বাবা : কি চান আপনি
শাহজাহান : বাবা কাকে বলে
বাবা : যে একজনের জন্ম দেয়
শাহজাহান : এই মেয়ের দিকে তাকান .. খুকি
শিউলিকে দেখা যায় বিমর্ষ।
শাহজাহান : এই মেয়েটি কয়েকদিন পর্ইে মারা যাবে।
বাবার মুখ বিমর্ষ হয়ে যায়।

বাবার মাথা নিচু হয়ে যায়।
শাহজাহান : এশবছর পর এই মেয়েটি অতীত হয়ে যাবে
বাবা কথা বলতে পারেন না।
শাহজাহান : ধরুন যদি সে আপনার মেয়ে মরলো না .. আর একজন তার আয়ু বাড়ায়ে দিল – তখন তার বাবা কে?
বাবা তার দিকে তাকায়।
শাহজাহান : আমি আপনার মেয়েকে বাচাতে পারি ... কিন্তু
বাবা নিশ্চুপ .. চোখ তুলে তাকালে দুজনের চোখাচোখি হয়
শাহজাহানের মুখে মিটিমিটি হাসি
শাহজাহানকে খুব নিষ্ঠুর মনে হয়
বাবা মেয়ের দিকে তাকান।
সজল চোখের মেয়েটি।
বাবা আর পারেন না। তিনি বলে ওঠেন।
বাবা : আপনি যদি ওকে বাচায়ে তুলতে পারেন তাইলে শিউলি আপনার
বাবা মেয়ে উধাও হয়ে যায়।
শাহজাহান ওদিকে তাকিয়ে বসে পড়ে।
শাহজাহান স্বপ্ন দেখতে থাকে
দুটো লোক তাএক মাতাল ভাবে
লোক : পেটে পড়ছে মনে হয় বেশি
লোক (২) : দুই ঘা দিয়া দেখমু নাকি?
লোক : না না -এইগুলারে বিশ্বাস নাাই - দিল গায়ের উপর বমি কইর‌্যা .. চল চল

দৃশ্য : ১৯
দিন/ বাড়ি

শাহজাহান শহরে যাবে। তৈরী হচ্ছে
শিউলি এসে বলে
শিউলি : বাবা
শাহজাহান :কি মা
শিউলি : আমি না টিভি দেখুম
শাহজাহান : দেখবি
শিউলি : তুমি টিভি আইনা দাও

দৃশ্য : ১৯ (খ)

শাহজাহান হাতে একটা টিভি ধরে শিউলিকে ডাকতে ডাকতে হেটে আসছে।

দৃশ্য : ২০
রাত / রাস্তার ধার কিংবা নির্জন জায়গা

আগের ফ্রেমের সাথে মিল রেখে শাহজাহান আবার ঘোরের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যায়।

দৃশ্য : ২১
দিন/ বাড়ি

শিউলি এখন অনেক বড়। তার বিয়ের দিন।
মমতাজের ব্যস্ততার শেষ নেই।
শাহজাহান মেয়ের ঘরে ঢুকে। মেয়ে কনের পোষাকে কাদছে
শিউলি : বাবা আমি তোমাকে ছেড়ে যাবো না
শাহজাহান : ধুর মা, তাই কি হয়.. মেয়ে হলে বাপের বাড়ি একদিন পর হয়ে যায়
শিউলি : না বাবা..
বাবা মেয়ে কাদতে থাকে

দৃশ্য : ২২
রাত/ বাড়ি

শাহজাহান বাড়ি পৌছে গেছে।। অন্যদিনের মতো সে মমতাজকে এশবার ডাকতে গিয়ে আবার চুপ কওে যায়। তার কানে আবার বেজে ওঠে সেই শব্দগুলো
আপনি যদি ওকে বাচায়ে তুলতে পারেন তাইলে শিউলি আপনার
সে খানিকন দাড়িয়ে থাকে।
তারপর সন্তর্পণে বাড়ির ভেতরে চোরের মতো ঢুকে।
গিয়ে দেখে মমতাজ আধোঘুমে আধো জাগরনে তার জন্য অপো করছে।

দৃশ্য : ২৩
রাত / বকুল গাছ

সে আবার বের হয়ে গিয়ে একটা বকুল গাছের থেকে বকুল ফুল পাড়ে

দৃশ্য : ২৪
রাত / ঘর

শাহজাহান ঘরের মধ্যে বকুল ফুল ছড়ায়।
যেন তার ঘুম আসে।
মমতাজ ঘুমিয়ে পড়লে ।
শাহজাহান তাদের সঞ্চিত সমস্ত কিছু নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

দৃশ্য : ২৫
রাত / শিউলিদের বাড়ি

শিউলি ঘুমিয়ে আছে। বাবা ও মা তেমনি ভগ্নমনে বসে আছে। মনের ধকলে তারা যেন কান্ত হয়ে পড়েছে।
কোথাও একটা ধূপ করে শব্দ হলে বাবা যেন জেগে ওঠেন।
বাবা : কিসের জানি শব্দ হলো মনে হয়
মার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।
তিনি উঠে গিয়ে দেখেন মেয়ের বিছানায় একটা বাক্স। আর তার উপর লেখা
শিউলির জন্য

বাবা কম্পিত হাতে বাক্সটা ধরেন

দৃশ্য : ২৬
রাত / বাড়ির কাছের রাস্ত

শাজাহান বাড়ি ফিরছে।
পাগলের মতো আনন্দে সে মাঝে মাঝে কেপে উঠছে। সে কি একটা গান গলায় গুণগুণিয়ে গায়।
হটাৎ একটা তীè চিৎকারে... সে জমে যায়।
মমতাজের চিৎকার।
আমাদের সবকিছু চোরে লইয়া গেছে গো
মমতাজের কান্নার স্বর। চারদিক বিদীর্ণ করে ছুটে যায়।
শাহজাহান ধীরে ধীরে পা ফেলে চলে।


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার দুস্তরে লইয়া নাটক লিখেছেন। খাড়ান, আগে পইড়া লই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আন্ধার থাইকা বাইর হইয়াই চোর নিয়া নাটক!
জব্বর
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দ্রোহী এর ছবি

ভাল্লাগছে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইটা অভিনিত অবস্থায় দেখতে হইবো।



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

দ্রোহী এর ছবি

হ, তবে রোমান্টিক দৃশ্যগুলারে আরেকটু গরম করতে পারলে ভাল হইতো। লগ্নিকৃত পয়সা উঠে আসবে একদিনেই হাসি


কি মাঝি? ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।