মী র্জা গা লি বে র স ঙ্গে ট্রে নে

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/১১/২০০৭ - ৭:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দৃশ্য-১
কবিরের ঘর

মঞ্জুর এসে ঘরে ঢুকে। তার হাতে একটা চিঠি। কবির বিছানায় বসে। মঞ্জুর তার হাতে চিঠিটা দিয়ে জানালার কাছে দাঁড়ায়। কবির চিঠিটা পড়তে থাকে। মঞ্জুর জানালা দিয়ে আকাশ দেখে। কবিরের গলা ভেসে আসে
কবির : তাহলে তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল?
মঞ্জুর : হ্যাঁ
কবিরকে দেখা যায়। খানিকটা বিরক্ত।
কবির : মেয়েটাকে চিনিস না। এমন কি একবার দেখিসওনি।
মঞ্জুরের চোখ কি জানি ভাবছে।

দৃশ্য-১(এ)
রাত/ রাস্তা

একটা লম্বা নির্জন রাস্তায় মঞ্জুর আর একটা মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। রাতের অস্পষ্ট আলোয় তাদের ছায়ামূর্তির মতো মনে হয়।

মঞ্জুরের গলা শোনা যায়।
একটা মেয়ের কথা ভাবতে গেলেই চোখে ভেসে ওঠে একটা নির্জন রাস্তা দুপাশের গাছের সারি— রাতের আবছা আলোয় দুজন পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছি কেউ কোনো কথা বলছি না। শুধু হেঁটে যাচ্ছি মাঝে মাঝে হালকা বাতাসে ওর চুল উড়ে এসে আমার গায়ে পড়ছে।

দৃশ্য-১(সি)

মঞ্জুর বলছে : কখনও ওর মুখ দেখিনি।
দেখার চেষ্টাও করিনি।
কেবল জানি
আমার জীবনে যে আসবে সেই
হলো সে।
মঞ্জুর এবার কবিরের দিকে তাকায়।
মঞ্জুর : তাছাড়া মেয়েটা ভাল।
কবির : বুঝলি কেমন করে।
মঞ্জুর : কেন চিঠিতে পড়লি না?
কবির : সেতো তোর বাবা মার কাছে। মঞ্জুর জানালা থেকে সরে আসে। সোফায় বসতে বসতে বলে।
মঞ্জুর : বিয়েটা হলো ( পার্ট অব লাইফ)। জছি স্কুলে গিয়েছি জেনেছি ভালো রেজাল্ট করতে হবে— লেখাপড়া শেষ হলো— ভালো একটা চাকরি করতে হবে তাও হলো— সবকিছুই তো বাসার ইচ্ছেতেই চললো— তাতে আমার লস তো কিছু হয়নি বরঞ্চ অনেকের চেয়ে ভালো জায়গাতেই ভালোভাবে আছি। এেেত্র কেন অন্যরকম করতে হবে। তাছাড়া তাদের চেয়ে তো আমার ভালো অন্য কেউ বেশি চায় না।
কবির : তাই বলে একটা মানুষের সাথে আজীবন থাকবি
মঞ্জুর : love - লাভমেকিং ছাড়া কিছু না। ভালো লাগলো— আর হয়ে গেলো তাতো নয়। এটা এক ধরনের সিস্টেম। তুই এই সিস্টেম। এর মধ্য দিয়ে যাচ্ছিস কি যাচ্ছিস না এটা ইম্পরটেন্ট। কার সাথে মিললো কি মিললো না, দুজনে দুজনের জন্য কতটুকু এপ্রোপ্রিয়েট এটা ইম্পরটেন্ট না। ব্যাপার হচ্ছে দুজন তারা একই প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যাবে কিনা .. আর কনজ্যূগাল লাইফের ভেতর দিয়েও এর শুরু হতে পারে তিতো কিছু নেই।
কবির : হয়তো বা— তা যাচ্ছিস কবে?

দৃশ্য-২
ট্রেনের কামরা

আসাদ ট্রেনের কামরায় ঢুকে। আসাদের পরনে একটা পাঞ্জাবি গায়ের উপর দিয়ে একটা চাদর জড়িয়ে নিয়েছে। কাঁধে একটা ব্যাগ। জিন্সের প্যান্ট।
আসাদ কামরায় উঠে কামরার দিকে তাকায়। পুরো কামরা ফাঁকা কেবল একটা সিটে মঞ্জুর বসে আছে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
আসাদ করিডোর দিয়ে এগিয়ে একটা সিটে বসে পড়ে। এখান থেকে মঞ্জুরকে দেখা যায়। মঞ্জুর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়েই আছে।

আসাদ পায়ের উপর পা তুলে দিয়ে আরাম করে বসে চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে।

ট্রেনের হুইসেল শোনা যায়।
ট্রেন্টা চলতে শুরু করে।

দৃশ্য-৩
ট্রেনের কামরা

মঞ্জুর একটা ইংরেজি গল্পের বই-এর পৃষ্ঠা উল্টায়। জানালা দিয়ে একবার বাইরে তাকায়।

আসাদ একবার চোখ মেলে আবার চোখ বন্ধ করে।

দৃশ্য-৪

ট্রেন ছুটে চলেছে।

দৃশ্য-৫
ট্রেনের কামরা

মঞ্জুর উঠে দাঁড়ায়। ক্যারিয়ারে রাকা ব্যাগটা নামিয়ে ভেতর থেকে একটা পানির বোতল বের করে সিটে রাখে। আসাদ মঞ্জুর ল্য করে। মঞ্জুর বোতলটা মুখের কাছে এনে গলায় পানি ঢালে :
আসাদ পকেট থেকে একটা সিগারেট বের করে মুখে দেয় জ্বালায়। জানালা দিয়ে মুখ বের করে। ট্রেনটা যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।

দৃশ্য-৬
ট্রেনের কামরা

মঞ্জুর বই পড়ছে। আসাদের গলা শুনে মঞ্জুর চোখ তুলে।
আসাদ : এখানে একটু বসতে পারি।
আসাদের গলা একটু যেন তন্দ্রাচ্ছন্ন চোখে ঈষৎ নেশা জড়ানো।
মঞ্জুরের মেজাজ একটু খারাপ হয়ে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে—
মঞ্জুর : হ্যা- সিটতো ফাঁকাই পড়ে আছে।
আসাদ বসে পড়েন। গায়ের চাদরটা দিয়ে শরীরটা ভালো করে জড়িয়ে নেন।
আসাদ : জানালাটা বন্ধ করে দেব
মঞ্জুর : না থাক।
মঞ্জুর বই-এ চোখ রাখে।
আসাদের কণ্ঠে মঞ্জুরের পড়ায় বাধা পড়ে।
আসাদ : ট্রেনটা এত ফাঁকা। কেমন দম বন্ধ লাগে।
মঞ্জুর বই থেকে মুখ সরায় না।
মঞ্জুর : একা থাকার অভ্যাস নেই বুঝি!
মঞ্জুরের কথায় আসাদের মুখ হাসিতে ভরে উঠে।
আসাদ : মানুষ তো একাই। এই জন্যই সে অন্যকে খুঁজে।
মঞ্জুর একবার মুখ তুলে আসাদকে দেখে আবার মুখ নামিয়ে নেন। আসাদ আবার জানালার বাইরে তাকান। বাইরে অন্ধকার কিংবা আলো।

দৃশ্য-৭
ট্রেনের কামরা

আসাদ পকেট থেকে সিগারেট বের করেন। ম্যাচ থেকে কাঠি বের করে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে দুইটি কাঠি নিভিয়ে ফেলেন। ম্যাচের কাঠি ফুরিয়ে গেছে।
আসাদ : আপনার কাছে কি ম্যাচ হবে?
মঞ্জুর : না।
আসাদ হেঁটে তার আগের জায়গার ক্যারিয়ার থেকে ব্যাগটা নেন। ব্যাগের পকেট থেকে ম্যাচটা নিয়ে ব্যাগটা ওখানেই রেখে দিয়ে আসে।
মঞ্জুর : ব্যাগটা নিয়ে আসলেই হতো।
আসাদ এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে জানালাটা বন্ধ করে সিগারেটটা ধরায়। মুখ ভর্তি ধোঁয়া নিয়ে এমনভাবে ধোঁয়া ছাড়েন দেখে মনে হয় জীবনের সবচাইতে মূল্যবান আর আনন্দময় কাজটা করছেন।
মঞ্জুর আসাদের সিগারেট টানা দেখে।
মঞ্জুর : আপনি মনে হয় খুব সিগারেট খান।
আসাদ : হ্যাঁ- খুউব বেশি।
মঞ্জুর : এটাতো ভালো নয়।
আসাদ : ইয়ে কহা-কী দোস্তী হ্যায় কেহ্ বনে হ্যায় দোস্ত নাসেহ্?
মঞ্জুর কিছু বুঝতে পারে না। বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
মঞ্জুর : মানে
আসাদ : কবিতা— মীর্জা গালিবের।
মঞ্জুর : আমি হিন্দী বুঝি না।
আসাদ : হিন্দী না— উর্দু। এর মানে হলো
একটু চুপ থেকে আসাদ বলেন
আসাদ : বন্ধু যদি উপদেষ্টা হয়ে উপদেশই দেন তবে তাহলে সে কি রকম বন্ধুত্ব হলো?
মঞ্জুর একটু লজ্জা পায়।

দৃশ্য-৮
ট্রেন ছুটে যায়।

দৃশ্য-৯
ট্রেনের কামরা

কামরার মধ্যে নিস্তব্ধতা। মঞ্জুর আসাদকে দেখে। আনমনে বসে।
মঞ্জুর : আপনার বাড়ি কি ঢাকাতেই
আসাদ : না—
মঞ্জুর : ঢাকায় যাচ্ছেন কাজে।
আসাদ : না
মঞ্জুর : বেড়াতে
আসাদ : তাও না
মঞ্জুর : তাহলে?
আসাদ : সব পথই এক জায়গায় মিলে।
মঞ্জুর : কোথায়?
আসাদ : কবরে।
মঞ্জুর : আপনি মনে হয় জীবনের প্রতি খুব হতাশ তাই না।
আসাদ : কেন আপনি হতাশ না?
মঞ্জুর : আমি? না!
আসাদ : আপনি এইটুকু জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট। এই সত্তর কিংবা আশি বছর। আমার এত ছোট্ট মনে হয়— বুঝে পাই না কি ফেলে কি করবো।
[কিছুণ চুপ থেকে] আসলে আমি যাচ্ছি খুলনা। খুলনা যেতে ঢাকা ছাড়া কি উপায় বলুন।

দৃশ্য-১০(এ)
ট্রেনের কামরা

টিকিট চেকার আসেন। একটু হোঁচট খেয়ে থমকে দাঁড়ান। দুজনের আলাপের মৃদু কণ্ঠস্বর পাওয়া যায়। চেকার একটু দাঁড়িয়ে দুজনের আলাপ শোনেন। আসাদ বলছেন।
আসাদ : আমি দেখি চাঁদের কান্না। সে কান্না জমিনে জমাট বেঁধে যাচ্ছে। যেমন রক্ত জমাট বেঁধে যায়। কেউ দেখে না।
মঞ্জুর আসাদের কথা যেন হৃদয়াঙ্গম করার চেষ্টা করে।
আসাদ : আসল কথা কি জানেন প্রদীপের জ্বালা কেউ বোঝে না। আমরা সবাই যে যার সুখের বিছানায়।
টিকিট চেকার এসে টিকিট চায়।
মঞ্জুর টিকিটটা পকেট তেকে বের করে। আসাদ উঠে ব্যাগ থেকে টিকিট আনতে যান।
আসাদ টিকিটটা ব্যাগ থেকে বের করে চেকারকে দেখিয়ে সিটে বসে পড়েন। চেকার টিকিটটা দেখে দাগ কেটে চলে যান।

দৃশ্য-১০(বি)

আসাদ কিছু বলেন না। চুপচাপ উপরে তাকিয়ে থাকেন।

মঞ্জুর : কিছু ভাবছেন।
আসাদ মঞ্জুরের দিকে তাকান।
আসাদ : না
মঞ্জুর : তাহলে চুপ করে গেলেন?
আসাদ : কিছু বলছিলাম নাকি?
মঞ্জুর : হ্যাঁ— ঐ যে কেউ কারো ব্যথা বোঝে না।
আসাদ : পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো কথা এটা। আমরা সবাই বলি। একবার না বারবার। বলে ভুলে যাই তারপর আবার বলি।
মঞ্জুর : আলে আমরা কি কেউ কাউকে বুঝি না?
আসাদ চোখ বুজে একটু চুপ করে কি জানি ভেবে আরেকটা কবিতা আওড়ালেন।
আসাদ : আদম নহী হ্যায়, সুরৎ এ আদম বহুৎ হ্যায় ইহাঁ
মঞ্জুর : লাগিব?
আসাদ ইষৎ হেসে মাথা নাড়েন
আসাদ : মীর— মীর তকিউল্লাহ মানে বুঝেছেন?
মঞ্জুর এবার মাথা নাড়ে। বোঝেনি।
আসাদ : মানুষ নেই— মানুষের মতো দেখতে অনেক আছে।
মঞ্জুর : বেশির ভাগ অবশ্য সেরকমই।
আসাদ : আপনার তাই মনে হয়।
মঞ্জুর : চারপাশের যা অবস্থা তাতে তো এরকমই মনে হয়।
আসাদের মুখে একটা দুষ্টু হাসি খেলে যায়। মঞ্জুরের দিকে তাকিয়ে বলেন—
আসাদ : মীরই আরেকটা কবিতায় লিখেছিলেন—
‘আলাম হ্যায় সভী ইয়ার, কহী ইয়ার নহ পায়া’—
দুনিয়া বন্ধুতে ভর্তি কিন্তু কোথাও বন্ধু পাওয়া গেলো না। আসলে খুঁজতে জানা চাই। বন্ধু লুকিয়ে থাকে। ভালো করে খুঁজলে পাওয়া যায়
মঞ্জুর কথাটা নিয়ে মনের মধ্যে নাড়াচাড় করে।
‘মানুষ নেই, তবে মানুষের মতো দেখতে অনেক আছে।’
‘দুনিয়া বন্ধুতে ভর্তি, কিন্তু কোথাও বন্ধু পাওয়া হলো না।’
শেষে মুখ তুলে আসাদের দিকে তােিয় বলে
মঞ্জুর : এ তো কন্ট্রাডিক্টরী কথা হলো।
আসাদ একটু আনমনে ‘কন্ট্রাডিকশন’ শব্দটা উচ্চারণ করে উঠে পড়েন। মঞ্জুর আসাদের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকে।
আসাদ আপনমনে প্যাসেজ ধরে বগির অন্যপ্রান্তে চলে যান। ঘুরে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে মঞ্জুরের দিকে তাকিয়ে বলেন—
আসাদ : কোথায় কন্ট্রাডিকশন’ নেই বলুন। আলো আর অন্ধকার দুই-এ মিলেই তো পৃথিবীটা শাসন করছে না কি। আর মানুষের কথা বলছেন— যার মধ্যে কন্ট্রাডিকশন’ নেই সে তো মানুষই হলো না— সে হলো যন্ত্র।
ট্রেনের হুইসেল বাজিয়ে থেমে যাবার শব্দ হয়। আসাদ সাহেব এক মুহূর্ত চুপ করে ট্রেনটার থেমে যাওয়া অনুভব করলেন। তারপর মঞ্জুরের দিকে তাকিয়ে বললেন—
আসাদ : একটা স্টেশনে থামলো। নামবেন নাকি?
মঞ্জুর : নাহ। আপনার কিছু কেনাকাটা থাকলে করে আসুন।
আসাদ নামতে নামতে বলে—
আসাদ : বাজার দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি কিন্তু এ বাজারে সওদা করার কিছু নেই।
মঞ্জুর আসাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।

দৃশ্য-১১
স্টেশন

মফস্বলের স্টেশন। হকাররা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছে। এক-দুইবার আসাদকে দেখা যায় আপনমনে হেঁটে যেতে। ট্রেনের হুইসেল শোনা যায়। ট্রেনটা স্টেশন ছেড়ে দেয়। ফাঁকা স্টেশন পড়ে থাকে।

দৃশ্য-১২
টেনের কামরা

আসাদ আর মঞ্জুর কথা বলছে—
আসাদ : এরপর একবারে ঢাকা।
মঞ্জুর : এখানেও কেউ উঠল না। কেবল আমরাই দুজন।
আসাদ : কে জানে।
মঞ্জুর : আর তো কোনো স্টেশন নেই। কে উঠবে।
আসাদ : আমরা কি আসলেই একা একা যাচ্ছি?
মঞ্জুর : মানে?
আসাদ : আপনি প্রেম করেছেন?
আসাদরে চোখে মুখে কৌতুক খেলা করে।
(এখানে মঞ্জুরকে দেখিয়ে ওর সেই নির্জন রাস্তার কল্পনার শট দেখাতে হবে)
মঞ্জুর একটু দ্বিধাজড়িত লজ্জার স্বরে বলে—
মঞ্জুর : এবার বিয়ে করতে যাচ্ছি।
আসাদ : ঈড়হমৎধঃঁষধঃরড়হ তবেই ভাবুন। আপনি নিশ্চয় মনে মনে ভাবছেন এবার তার সাথে দেখা হলে কি বলবেন। কিংবা একটু পর পর আগেকার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। আর সাথে সাথে সেও এই ট্রেনের যাত্রী হয়ে আপনার সঙ্গে চলেছে।
মঞ্জুর একটু অস্বস্তি বোধ করে। সামান্য জড়তা বোধ করলেও পরমুহূর্তেই কাটিয়ে ফেলে।
মঞ্জুর : তার সাথে এখনও পরিচয় হয়নি।
আসাদ একটু যেন অবাক হন।
আসাদ : সেটেল ম্যারেজ।
মঞ্জুর : হ্যাঁ।
একটু চুপ থেকে—
আসাদ : একদিক থেকে ভালই।
মঞ্জুর : অন্যদিক থেকে
আসাদের কণ্ঠ একটু যেন গম্ভীর শোনায়।
আসাদ : একটু দুর্ভাগ্যই বলতে হবে।
মঞ্জুর : কেমন?
আসাদ : সে েেত্র আপনি মানুষের অর্ধেক অংশই জানতে পারবেন না।
মঞ্জুর : কেন? বিয়ের পর কি চেনা যায় না?
আসাদকে একটু সিরিয়াস মনে হয়।
আসাদ : দেখুন বিয়েটা হচ্ছে এক ধরনের একটা চুক্তি। চুক্তিতে স্বামী আর ¯ীর কর্তব্য আর অধিকারকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। দুজনের মধ্যে দুজনের ভূমিকাকে বেঁধে দেয়া হয়। দুজনেই সেই ভূমিকা পালন করে যায়।
মঞ্জুর : বিয়ের পর কি ভালোবাসা যায় না।
আসাদ : দুইজন মানুষ পাশাপাশি অনেকদিন থাকলেও দুজনের জন্য মায়া জšে§ যায়। হতো ভালোবাসাও জšে§ যায়। সেটার কথা আমি বলছি না। আমি বলছি— জানার কথা। একজন আরেকজনকে জেনে বুঝে একটা রিলেশন তৈরি করে সেখান থেকে জানা-বোঝার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে।
মঞ্জুর কিছু একটা চিন্তা করে। নিজের মধ্যে জুৎসই একটা উত্তর খোঁজে। শেষে যেন সে নিজের পে একটা যুক্তি খুঁজে পায়।
মঞ্জুর : কিন্তু প্রেমেও এরকম বাধ্যবাধকতা থাকে।
আসাদ : থাকে কিন্তু সেটা বিয়ের মতো ফিক্সড কোনো কিছু না। প্রেমকে কিন্তু একেকজন একেক ভাবে দেকতে পারে। কারো কাছে প্রেম হয়তো বিয়ের ধরনেরই একটা চুক্তির মতন— কিন্তু কেউ এটাকে চুক্তি না ভেবে এটাকে এক ধরনের আন্ডারষ্ট্যান্ডিং কিংবা দুজনের মধ্যে একটা কম্যূনিকেশন হিসেবেও ভাবতে পারে। বিয়েতে এটা সম্ভব নয়। বিয়ের সংজ্ঞা আছে— প্রেমের নেই।
মঞ্জুর চুপ করে আসাদের কথা শুনে। আসাদের কথা শেষ হবার পরও কিছুণ কথা বলে। এবার আসাদরে দিকে মুখ তুলে জিজ্ঞাসা করে
মঞ্জুর : আপনি প্রেম করেছেন?
রেলগাড়িটা তখুনি একটা হুইসেল দিয়ে একটা ব্রিজ পার হয়ে যায়।
আসাদের মুখ আবার কেমন ঝলমল করে তার মুখে কৌতুক আর যন্ত্রণার তীব্র অভিব্যক্তি খেলা করে।
আসাদ : শতবার প্রেমের বন্ধন থেকে মুক্ত হলাম কিন্তু কি করি হৃদয়ই মুক্তির পরিপন্থী কি হবে আমার কাহিনী শুনে?
মঞ্জুর : না— মানে কথা যখন উঠলই...
(দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে)
আসাদ : আপনিই ভালো আছেন ভাই। দিব্যি একটা বউ পেয়ে যাবেন? কিন্তু প্রেমিকার হৃদয় সারাজীবন খুঁজে যাবেন কিন্তু কোনোদিন নাগাল পাবেন না।
আসাদ সাহেব সিগারেট ধরিয়ে ধোঁয়াটা মুখ দিয়ে বের করতে করতে বলেন—
আসাদ : আকাক্সা আর প্রতীা এই হলো এর পরিনাম।
আসাদ মঞ্জুরের দিকে তাকিয়ে দেখেন মঞ্জুরের চোখে কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টি।
আসাদ : ঠিক আছে বলছি। কিন্তু ভাববেন না এ বেদনাটুকু শুধু আমার একার কাহিনী— আমি নিজের সঙ্গে হাজার জনের কাহিনী বলে যাচ্ছি।

দৃশ্য-১৩
সুবর্ণার ঘর/রাত

বাইরে ঝড়। বিদ্যুৎ চলে েেগছ। অন্ধকার ঘরের মধ্যে অনেক মোমবাতি জ্বলছে। মোমবাতির আলোয় আয়নার সামনে বসে সুবর্ণা শাড়ি পরে সাজছে। ঝড়ো বাতাসের শব্দের সাথে সাথে মাঝে একটা বাজ পড়ার শব্দ ভেসে আসে। ব্যাকগ্রাউন্ডে আসাদের কণ্ঠ বেসে আসে।
ঘটনাটা প্রায় পাঁচ বছর আগে। আমি তখন ময়মনসিংহ শহরে নতুন চাকরি পেয়েছি। ও তখন বি.এ পড়ত। প্রায়ই আসত আমার কাছে। ওর বাবা কোর্টে ওকালতি করতেন। প্রোগ্রেসিভ ফ্যামিলি। আমার সঙ্গে ওর সম্পর্কের কথাটা বাড়ির সকলেই জানত। আর আমাদের বিয়ের ব্যাপারেও কোনো পরে আপত্তি ছিল না। কিন্তু ও ছিল এক অদ্ভুত প্রকৃতির নারী। সুন্দরী, অনুরাগিনী কিন্তু খেয়ালি আর দারুণ দাম্ভিক। হঠাৎ এমন সব কাণ্ড করতে যার ফলে আমার মেজাজ খারাপ হয়ে যেত। মাঝে মাঝে এমন এক মোহময় দৃষ্টিতে তাকাত মনে হতো আমি যেন রঙিন প্রজাপতি হয়ে গেছি— এখনই উড়ে গিয়ে ওর ঠোঁটের উপর বসব। আর ঠিক তখনই ও হঠাৎ এমন বলদে যেত যে আমার সেই অনুপম অনুভূতিতে আগুন ধরে যেত।
দরজা ধাক্কানোর আওয়াজ পাওয়া যায়। সুবর্ণা সাজতেই থাকে।
দরজা ধাক্কানোর শব্দের সাথে সাথে আসাদের গলার আওয়াজ পাওয়া যায়।
আসাদ : সুবর্ণা দরজা খোল— সুবর্ণা— আমি ভিজে যাচ্ছি তো।
কাজের বুয়ার আওয়াজ পাওয়া যায়।
বুয়া : আফা দরজা খুলুম।
সাজতে সাজতেই সুবর্ণা ঘাড় ঘুরিয়ে বলে
সুবর্ণা : একটু পরে খুলে দিও।
সুবর্ণা আবার সাজতে থাকে। আসাদের গলা একটু চড়ে যায়। ধাক্কানোর সাথে ভেসে আসে।
আসাদ : কি ব্যাপার দরজা খুলছে না কেন? কেউ কি নেই নাকি বাসায়।
সুবর্ণা কপালে টিপ পরে।
আসাদ এসে ঢোকে। চুল ভেজা উস্কোখুস্কো চেহারা।
আসাদ : কি ব্যাপার। আসবে বলে সারাদিন ঘরে বসিয়ে রেখে এখন এই ব্যবহার।
সুবর্ণা কোনো কথা না বলে চুল ঠিক করতে থাকে আসাদ ক্রমশ রেগে ওঠে।
আসাদ : কি হলো? কথা বলছো না কেন? এই সবের মানে কি?
সাজতে সাজতে একটু পর—
সুবর্ণা : দেখলাম।
আসাদ : কি?
সুবর্ণা : আমার জন্য কেমন পাগল হতে পার তুমি।
আসাদ বিছানায় ধপাস করে বসে পড়ে।
আসাদ : আশ্চর্য!
সুবর্ণা : শোন তুমি চলে যাবার সময় বুয়াকে বোলো দরজাটা যেন আটকে দেয়।
আসাদ : কি
স্বাভাবিক স্বরে
সুবর্ণা : চলে যাবার সময় বুয়াকে বোলো যেন দরজাটা আটকে দেয়। ক্রুদ্ধ আসাদ তড়িৎ বের হয়ে যায়।
সুবর্ণা আয়নার সামনে সাজতেই থাকে।

দৃশ্য-১৪
ট্রেনের কামরা

প্যাসেজের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আসাদ বলছেন
আসাদ : অথচ তার পরদিন সকালেই

দৃশ্য-১৫
আসাদের ঘর

আসাদ চোখ খুলে শুয়ে আছে।
কাউকে দেখে উঠে বসে।
আসাদ : তুমি?
সুবর্ণা দাঁড়িয়ে আছে। সুতির শাড়িতে তাকে øিগ্ধ ভোরের মতই লাগছে। তেমন কোনো সাজ নেই কপালে শুধু টিপ দেয়া। খোঁপায় একটা ফুলের মালা জড়ানো। মুখে দুষ্টু হাসি।
সুবর্ণা : আসতে নেই বুঝি?
সুবর্ণার এই মূর্তি দেখে আসাদ আর রাগ ধরে রাখতে পারে না।
আসাদ : না- না- বসো।
সুবর্ণা বসে না। তেমনি দুষ্টু হাসি মুখে আসাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আসাদকে একটু বিভ্রান্ত মনে হয়।
আসাদ : কি?
সুবর্ণা : বলো তো আজকে কি?
আসাদ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
সুবর্ণা : তোমার না কিচ্ছু খেয়াল থাকে না।
আসাদ : আমি সত্যি বুঝতে পারছি না।
সুবর্ণা : ২৩৭
আসাদ : ২৩৭ দিন!
সুবর্ণা : তোমার সঙ্গে পরিচয়ের ২৩৭ দিন হলো আজকে।
আসাদ : তাতে কি হলো?
সুবর্ণা েেপ ওঠে।
সুবর্ণা : কেন তাতে কিছু হলো না। ৩৬৫ দিনই শুধু পালন করতে হবে এমন কোনো কথা আছে। আমরা এখন থেকে প্রত্যেকটা দিন পালন করবো বুঝতে পেরেছো। তাড়াতাড়ি ওঠো রেডি হয়ে নাও—
আসাদ : অফিস।
সুবর্ণা : আমার চাইতে অফিস বড় হলো। দরকার হলে চাকরি ছেড়ে দাও।
আসাদ : পাগলামি করো না তো।
সুবর্ণা গম্ভীর হয়ে উঠে। শান্ত স্বরে বলে
সুবর্ণা : ঠিক আছে
বলে সুবর্ণা বেরিয়ে যায়। আসাদ পেছন থেকে সুবর্ণা সুবর্ণা বলে ডাকে। সুবর্ণা আসাদের ডাক শোনে না।

দৃশ্য-১৬
ট্রেনের কামরা

মঞ্জুর শুনছে। আসাদ বলছেন। মঞ্জুরের চোখে তš§য়তা
তাদের উপো আর উদাসীনতা তো আজকের কাহিনী নয়। একদিন যে এমনভাবে উপেক্সা করতো সে সত্যিই সন্দেহ হতো যে সত্যিকারই সে ভালবাসে কিনা—

দৃশ্য-১৭
সুবর্ণার রুম/দিন

আসাদ বসে আছে।
ব্যাকগ্রাউন্ডে আসাদের কণ্ঠ ভেসে আসে।
আসাদ : একদিন সকালবেলা ওর ঘরে বসে আছি। দুজন মিলে আমার এক বন্ধুর বাসায় যাবার কথা। ছোটবেলার বন্ধু দেশের বাইরে চলে যাবে। এক মিনিটের কথা বলে সেই যে গেল—
আসাদ বসে আছে। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। ঘরের পর্দা নড়ছে। পাশ থেকে একটা বই তুলে নেয়। বই-এর পৃষ্ঠা একের পর এক উল্টে যায়। সুবর্ণা ঘরে ঢুকে। ওপাশ থেকে টেলিফোন আসে। সুবর্ণা চলে যায়। আসাদ তাকিয়ে দেখে। ঘড়িতে ১১টা বাজে। অ্যাসট্রেটা সামনে নিয়ে সিগারেট ধরায়।
অ্যাসট্রেতে সিগারেট গুঁজে দেয়। টেলিফোনে সুবর্ণা কথা চলছে।
‘রাঙা খালা— এখনো বিশ্বাস করে’ সুবর্ণা হেসে গড়িয়ে যায়।
অ্যাসট্রেতে তিনটা সিগারেটের টুকরা। আসাদের অধৈর্য চেহারা।
সুবর্ণা টেলিফোনে কথা বলছে।
‘সুমিটার এত কিছুর পরও হুঁশ হলো না।
আসাদ জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
বাইরে অনেক বেলা হয়েছে।
সুবর্ণা টেলিফোনে বলছে। ‘এত কিছু কি টেলিফোনে বলা যায়। তুই বরঞ্চ চলে আয়।’
আসাদ মাথা নিচু করে বসে আছে।
সুবর্ণা স্বাভাবিকভাবে ঘরে ঢুকে। যেন হঠাৎই আসাদকে দেখে এইভাবে বলে—
সুবর্ণা : ও তুমি। ঝড়ৎৎু। এক কাজ করো তুমি বরঞ্চ আজ চলে যায়। আমার এক বান্ধবী আসবে।

দৃশ্য-১৮
ট্রেনের কামরা

আসাদ : বিবাহিত জীবনে ঈর্ষা আর সন্দেহ একটা সর্বনেশে ব্যাপার। দুপই ব্যাপারটা মন থেকে দূরে রাখতে চায়। কিন্তু প্রেমের েেত্র এটা যেন অমোঘ নিয়তির মতো। ছায়ার মতো মনের মধ্যে ঘোরাফেরা করে।

দৃশ্য-১৯
নির্জন জায়গা/বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা/সন্ধ্যে-রাত/বাগান/পার্ক

আসাদ : এখানে?
সুবর্ণা : একটা ছেলের কাছে। খুব সুন্দর গান করে। এখানেই নাকি গান করে। চলো না খুঁজে দেখি। আশেপাশেই কোথাও আছে।
এমন সময় একটা গানের কলি ভেসে আসে। গিটারে কেউ গান ধরেছে।
‘অসীম শূন্যতার মাঝে কে বাজায় আর কে বাজে
কেউ না কেউ না নিজে নিজে’
সুবর্ণা হাত ধরে আসাদকে প্রায় টেনে নিয়ে যায়। দেয়ালে হেলান দিয়ে একটা ছেলে গিটার বাজিয়ে গান গাচ্ছে। সুবর্ণা পাশে গিয়ে বসে। আসাদ একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখে। সুবর্ণার চোখে মুগ্ধতা। ছেলেটা গান গেয়েই চলে
‘সাধের এ বনভূমি ছাই
প্রিয় আগুনে ভিজে ভিজে।’

দৃশ্য-২০
ট্রেনের কামরা

আসাদ : বঞ্চনা আর যন্ত্রণা বেঁচে থাকা মানুষের ইতিকাহিনী। হয়তো গভীর কষ্ট পেয়ে হৃদয় ত বিত তার কাছে গেছি সান্ত্বনার আশায়। হয়তো কোনো মর্মপীড়ায় কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছি।

দৃশ্য-২১
সুবর্ণার ঘর/দিন

সুবর্ণা বসে আছে।
আসাদের কণ্ঠ থেকে ক্রোধ ঝরে পড়ে
আসাদ : সে কিনা আমার ছোটবেলার বন্ধু।
সুবর্ণা উঠে টেবিল থেকে লাল কাগজ খুঁজে বের করে।
আসাদ : বস্তা বোঝাই কসমেটিক্স চকলেট আনতে পারলো অথচ একটা বই এর জায়গা হলো না।
সুবর্ণা সেই লাল কাগজটা দিয়ে একটা নৌকা বানাতে থাকে। আসাদ আপন মনে বলতে থাকে
আসাদ : বইটা জোগাড়ের জন্য আমি কিনা করেছি। কোথাও পাইনি বইটা কত প্রয়োজন ছিল তুই সেটা জানতি— অথচ স্রেফ ব্যাগে জায়গার জন্য বইটা আনলি। আর ওর জন্য আমি কম করেছি। আচ্ছা তুমিই বলো... এটা কোনো বন্ধুত্বের নমুনা হলো?
সুবর্ণার আসাদকে বানানো নৌকাটা দেখিয়ে বলে
সুবর্ণা : এই নৌকাটা দেখছো?
আসাদ অবাক হয়ে বলে
আসাদ : কি?
সুবর্ণা : মেঘনার জল না তোমার খুব প্রিয়?
আসাদ বোকার মতো চেয়ে থাকে।
সুবর্ণা : এই নৌকাটা মেঘনার বুকে ভাসিয়ে দিয়ে আসতে পারবে?
আসাদ : এখন!
সুবর্ণা : হ্যাঁ।
আসাদকে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ মনে হয়।
আসাদ : তুমি কোনদিন আমার কথা কি মন দিয়ে শুনবে না?
সুবর্ণা বসে আছে। তার মুখে গাম্ভীর্য আর চোখে কৌতুকের ছটা।
সুবর্ণা : আমি কোন নিপীড়িতের কাহিনী শুনি না।
ব্যাকগ্রাউন্ডে আসাদের কণ্ঠ
আসাদ : আমি েেপ উঠলাম
আসাদ বেদনা যন্ত্রণাসিক্ত চোখে সুবর্ণার দিকে তাকিয়ে থাকে। ধীরে ধীরে তার মুখে ক্রোধের চিহ্ন ফুটে ওঠে।
ধীরে ধীরে সে অনেকটা চেবানো চেবানো স্বরে বলে ওঠে
আসাদ : চোখ তো নয় বিষের পেয়ালা
পাশে রাখা ফুলদানিটা সুবর্ণা তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মারে। আসাদের কান ছুঁয়ে ফুলদানিটা দেয়ালে লাগে। ঘরময় ভাা কাচ পানি আর ফুল একাকার হয়ে পড়ে থাকে।

দৃশ্য-২২
রেল কামরা

আসাদ : সেই আমি চলে এলাম— ও ডাকলো না আমারও ফেরা হলো না।
মঞ্জুর অবাক হয়ে আসাদের কাহিনী শুনছিল।
তার ভেতর থেকে বলে উঠে
মঞ্জুর : এতো রীতিমত নিষ্ঠুরতা।
আসাদ হাঃ হাঃ করে উচ্চকণ্ঠে হেসে উঠেন। নিষ্ঠুরতা বলে আবার হাসেন।
আসাদ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে যান।
আসাদ : আপনি তো একপরে কাহিনী শুনলেন। অন্যপরে কাছে হয়তো আরেক নিষ্ঠুরতার কাহিনী শুনতে পাবেন।
আসাদ সিগারেট ধরান।
মঞ্জুর চুপচাপ বসস থাকে।
আসাদ জানালা দিয়ে বাইরে তাকান
মঞ্জুরের গলা শোনা যায়।
মঞ্জুর : এরপর তার আর খোঁজ রাখেন নি।
আসাদ মঞ্জুরের দিকে চেয়ে বলে
আসাদ : ঈর্ষা বলে অন্যের সঙ্গে তার হৃদ্যতা বুদ্ধি বলে সে নির্দয় কারো কাছের হতে পারে না।
মঞ্জুর কি বলবে বুঝতে পারে না। কিছুণ নীরবতা পুরো কামরাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। আসাদই নীরবতা ভাঙেন।
আসাদ : প্রেম আসলে চাইতে শেখায়। যুক্তিহীন অনন্ত চাওয়া একজন আরেকজনের কাছে যা কিছু পায় তা সে মনে রাখে না— না পাওয়ার যন্ত্রণাটাই বুখে বিঁধে থাকে। আমাদের এই চলে আসা ওর ফিরে না ডাকা এই বিরহ এই অনন্ত চাওয়ারই ফল। একজন মানুষের কাছে আরেকজন কত বড় হতে পারে প্রেম ছাড়া কিছুতেই টের পাওয়া যায় না।

দৃশ্য-২৩

ট্রেন স্টেশনে এসে থামে।

দৃশ্য-২৪
রেলের কামরা

মঞ্জুর : আমরা এসে গেছি
আসাদ : অবশেষে পৌঁছুনো গেল।
আসাদ উঠে যান। মঞ্জুর ক্যারিয়ার থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলেন— চলেন নামা যাক।
দুজনে ফ্রেম আউট হয়ে যায়।
ফাঁকা কামরা পড়ে থাকে।

দৃশ্য-২৫
মঞ্জুরে বাড়ি

মঞ্জুর কলিংবেল টেপে।
দরজা খুলে যায়— মা দাঁড়িয়ে।
মা : এসেছিস।
মঞ্জুর ঢুকে। দরজা বন্ধ হয়ে যায়।

দৃশ্য-২৬
মঞ্জুরের ঘর

মঞ্জুর বসে আছে।
মা মঞ্জুরের সামনে নাস্তা এনে রাখেন।
মা : খেয়ে নে। আমার আবার মেলা কাজ পড়ে আছে।
মা ঘরে এলোমেলো করে ফেলে রাখা মামুনের জামাকাপড়গুলো গুছাতে গুছাতে বলেন—
মা : বড় জামাই গত সপ্তাহে এসেছিল।
মঞ্জুর : একা?
মা : হ্যাঁ, অফিস থেকে নাকি এক মাসের ছুটি পাওনা ছিল। বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ইন্ডিয়া বেড়াতে গেছে।
মঞ্জুর : আপাকে নিয়ে গেলেই পারতো
মা : ও নাকি খুব যেতে চেয়েছিল। আলমই নিলো না— বলল খামোকা ঝামেলা বাড়বে। এখনতো টুনিও একা আসতে পারবে না।
মঞ্জুর : দুলাভাই জানি কেমন
মা : কেমন আবার বড় চাকরি করে তাই একটু গম্ভীর হয়ে থাকে।
মঞ্জুর : না মা... আপাকে দেখে... মনে হয় তোমরা ঠিক জায়গায় আপাকে বিয়ে দাওনি।
মা : ঠিক জায়গায় না মানে এরচেয়ে ভালো পাত্র পাওয়া যেত নাকি।
মঞ্জুর কিছু বলতে গিয়ে চুপ করে যায়। নীরবে খেয়ে যায়।
মা মঞ্জুরের কয়েকটা কাপড় সাথে নিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে—
মা : তোর আর কিছু ধোবার থাকলে দিয়ে দে।
মঞ্জুর : না— এতেই হবে।
মা বেরিয়ে যান। মঞ্জুর চুপচাপ খেয়ে যায়।

দৃশ্য-২৭
ড্রয়িং রুম

রেহানা ফোনে কথা বলছে
রেহানা : আমি কোনো কথাই শুনছি না।
মঞ্জুর এসে ঢুকে দেখে রেহানা কথা বলছে
রেহানা : তা তোমার পোস্টিং হবে কোথায়?
রেহানা : সৈয়দপুর! আমি এখানে থাকবো আর তুমি সৈয়দপুরে থাকবে। অসম্ভব— তোামর ইন্টারভিউ দেওয়ারই দরকার নেই।... তিন মাস
মঞ্জুর ঘরে ঢুকে সোফায় বসে।
রেহানা : তিন মাস কেন একদিনের জন্য হলেও না— কেন চাকরি কি আর নাই। দরকার হলে টিউশনী করে চলতে হবে... আমার কোনো সমস্যা হবে না। আজকে... ফোন করে জানার... ভাইয়া এসেছে... হ্যাঁ... তুমি কিন্তু শুক্রবারই বাসায় যাবে... ভয় করলে চলবে না। সবাই থাকবে তুমি থাকবে না... আচ্ছা রাখছি দুইঘণ্টা পর... ঘড় ছেড়ে বেরোবে না ঠিক আছে। খোদা হাফেজ।
রেহানা ফোন রেখে ঘুরেই মঞ্জুরকে দেখতে পায়।
রেহানার মুখ একটু ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
রেহানা : ও ভাইয়া...
মঞ্জুর : কার সাথে কথা বলছিলিরে?
রেহানা : ... ও... আমার এক বন্ধুর সাথে।
মঞ্জুর : ওমা দাঁড়িয়ে রইলি কেন? বয়
রেহানা বসে। তার সঙ্কোচ এখনো কাটেনি। দুইজনেই চুপ করে থাকে। রেহানা সাহস করে কথা বলে—
রেহানা : ছবি দেখেছো?
মঞ্জুর : ছবি? কার?
রেহানা : তোমার বউ এর।
মঞ্জুর : রেহানা— তোর ঐ বন্ধুটা কে রে?
রেহানা একটু কুণ্ঠিত হয়। গলায় একটু অস্বস্তি খেলা করে
রেহানা : ও— ওকে তুমি চিনবে না।
মঞ্জুর : ওকে বলে দিস— শুক্রবারে ঐ বাড়িতে ওর যাওয়ার দরকার নেই।
রেহানার মুখ অপমানে রাগে থমথম করে। মঞ্জুর এটা খেয়াল করে
মঞ্জুর : তোর অপমানের কিছু নেই। ব্যাপারটা হলো আমি বিয়ে করছি না।
রেহানা মঞ্জুরের কথায় আকাশ থেকে পড়ে
রেহানা : মানে?

দৃশ্য-২৮
কবিরের ঘর

মঞ্জুর জানালায় দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছে।
মঞ্জুর : শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়ে করবো না।
কবির বসে। মঞ্জুরের কথায় অবাক হয়ে যায়।
কবির : বিয়ে করবি না!
মঞ্জুর ঘুরে দাঁড়ায়। কবিরের দিকে তাকিয়ে বলে
মঞ্জুর : বিয়ে করবো তবে এখন না
কবির : এখন করবি না— তবে কবে করবি
মঞ্জুর : যদি কোনোদিন প্রেম হয়।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

শেষপর্যন্ত পড়ে গেলাম ।
অনেকদিন নাটক পড়া হয়নি ।
পড়লাম । গল্প পড়ার মতোই টানটান ।
ভালো লাগলো ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ঝরাপাতা এর ছবি

অনেকদিন পরে আপনার লেখা পড়লাম। আসাদ চরিত্রটা বেশ ইন্টারেস্টিং। এমনভাবে ব্রেইনওয়াশ করে গেলো!!


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পুরোটা পড়তে পারলাম না
কিন্তু গালীবের নামটা শুনেই আবু হেনা মোস্তফা কামালের গালীবের ইচ্ছা অনিচ্ছা কবিতার কথা মনে পড়লো

যখন তিনি থাকবেন না তখনও মেয়েরা অষ্টাদশী হবে
এই কথা ভেবে গালীব খুব কষ্ট পেয়েছিলেন
এবং ঠিক করে রেখেছিলেন মৃত্যুর পরে ঈশ্বর যখন তাকে দোষারোপ করবেন যাবতীয় পাপের জন্য
তখন তিনি বলবেন- হে আল্লাহ আমাকে ফের পৃথিবীতে পাঠাও যে সকল পাপ করতে পারিনি তা করবার জন্য
...........

গালীব আমার প্রিয় কবি
এইজন্যই সারক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকি
কেননা গালীবের মতো অত সাহসী হতে পারবো না কোনোদিন

(লাইনগুলো এলোমেলো এবং শব্দ ইদিক সেদিক হয়ে গেছে হয়তো। ক্ষমা করবেন কবি এবং তার পাঠকরা)

অনিন্দিতা এর ছবি

ভালো লাগলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।