আধঘন্টা সকাল থেকে কাটা

কর্ণজয় এর ছবি
লিখেছেন কর্ণজয় (তারিখ: শুক্র, ২০/০৬/২০০৮ - ১:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৫.
লোকটা একটু হেসে কুনুই এর উপর ভর দিয়ে আলতো করে বিছানায় শুয়ে মাথাটা একট পেছনে টেনে টুপ করে নিজেকে ছেড়ে দেয়। নিজেকে বোকার মত লাগে। এত সহজে মানুষ মরে যায়। বৃষ্টির পর হাসপাতালের সামনের রাস্তাটা যেন একটা প্রিজম। মেঘভাঙা রোদ সাতটুকরো হয়ে লুটোপুটি খায় .. হাওয়ায় উড়তে থাকে। আমি অপেক্ষা করতে থাকি। বাসগুলো সব বোঝাই। আমার হাতে অফুরন্ত সময়। লোকটার কথা মনে হয়।১০০ বছর পরের কথা ভাবি। চারপাশের এদের কেউ তখন থাকবে না। একটা বাস এসে থামে ...স্বপ্নের মত ফাকা। আমি বুঝতে পারি না ঠিক কোন সিটটা সবচেয়ে আরামদায়ক হবে। দুই তিনটা সিট বদল করে শেষমেশ একটায় থিতু হয়ে বসতেই চোখ পড়ে- ম্যাজিক। নয়ফুটি এক লোক ঠক ঠক করে রাস্তা পার হয়ে গেল। আক্ষেপটা খুব খারাপ লাগছিল না .. দ্য কাউ ইজ আ ডোমেষ্টিক এনিম্যাল .. বাবাকে শুনিয়ে শুনিয়ে গুনগুন করে সুর তুলে রচনা পড়ার তালে তালে কল্পনার আমার আর রনপা পায়ে হাটা হলো না .. কন্ডাকটরের কর্কশ স্বরে পকেটের পাড় ভেঙে একটা দোয়েল পাখি আর একটি সুখী পরিবার ভাসিয়ে দিয়ে জানালায় ফিরি। একগুচ্ছ লাল গোলাপ স্বশব্যস্ত সড়কের গাড়িঘোড়ার ফাক গলে ওপারে যাবে বলে চকচকে মেরুন পাঞ্জাবী গায় এক কিেশারের হাতে অপেক্ষা করছে তখন ..


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি
কর্ণজয় এর ছবি

আগের ৪টা চোরাবালিতে লিখেছিলাম ..
মনে পড়ার জন্য .. আবার উল্লেখ করা যেতে পারে

১.
আমি একটা মেয়েকে ভালবাসতাম। মেয়েটা আমাকে খালি কষ্ট দিত।
আমি একটা ঘরের মধ্যে সারাদিন -ঘুলঘুলি দিয়ে একটা সরু আলো ঘরের মধ্যে পড়ে। টেপরেকর্ডারে খালি সুবিনয় রায়ের দুইটা গান বাজে.. বিছানার উপর বালিশে স্বপ্নতাড়িতের মতো মুখ গুজে পড়ে থাকি। সারাদিন একই দুইটা গান ঘটর ঘটর... আমার মধ্যে আমার জন্য কেমন একটা মায়া জন্মায় ... এই মায়াটা আমার ভাল লাগে .. মেয়েটার মুখ মনে পড়ে .. আমাকে মনে পড়ে... শুয়ে শুয়ে আমি হেটে যাই ওর কাছে।

২.
বাড়তে বাড়তে পুরো ঘরটাতেই অর্ধেক জল। টের পাই ছোট ছোট মাছ আসছে। একটা বড় মাছ পাশ দিয়ে চলে গেল। জল বাড়ছে। একটা কালো বিড়াল কোথা থেকে আসে। ঘরের কোনে কাফকার বইটার ঠিক উপরে বসে আছে। হটাৎ শুনি কিচির মিচির শব্দ। ঘুলঘুলি দিয়ে অনেক পাখি আসছে। হাজার হাজার পাখি। পুরো ঘর পাখিতে ভরে গেছে।একটা বই কি ভাবে পানির নিচে ডুবে গেলে অক্ষরগুলো ভাসতে ভাসতে ঘরময় ছড়িয়ে পড়ে।
আমার ঘুম ভেঙে যায়। যাক দারুন একটা স্বপ্ন দেখা হলো। আমি অফিসে যাই। বড় কর্তা আমাকে জিজ্ঞাসা করেন আমি কালকে আসি নি কেন? কিন্তু আমিতো কালকে এসেছি। না - কালকে আসেন নি ... আমি মনে করতে পারি না একদিনে কি হয়েছিল? আমিতো কেবল একটা স্বপ্ন দেখছিলাম।এর পরেই অফিস। হটাৎ দেখি বড় কর্তার পকেট থেকে একটা একটা করে পাখি বেরুচ্ছে। আমি ভাবতে থাকি তাহলে স্বপ্নটি কি সত্যি?

৩.
একটা প্লেন উড়ে যায় মাথার উপর দিয়ে। ছোট্ট একটা প্লেন। একটা বালক দুহাতে প্লেনটাকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমার দিকে তাকিয়ে সে মিষ্টি করে হাসে। আমি ওকে হাত নাড়ি। পেছনের আমগাছটার আড়ালে সে উড়ে চলে যায়। আমগাছটায় সোনালী মুকুল এসেছে। একটা কাক এসে বসে ওর ডালে। একটা কাচা আমের গন্ধ পুরো শহর জুড়ে। আমি গিয়ে ওকে বলি সেই বালকটা আমার দিকে চেয়ে হেসেছিল। ও কেমন চোখে আমার দিকে তাকায়। এ শহরর মানুষগলো কেমন। সবকিছুতেই শুরুতে অবিশ্বাস করে।

৪.
চিন্তাগুলো পাখির মতো। আমি ভাবছিলাম কাল অফিস শেষে একটা প্যান্ট কিনব। কিন্তু বাড়ি ফেরার পথে একটা মাঠ পাড়ি দিতে হয়েছিল। কুয়াশার মধ্যে কারা জানি আগুন জ্বালিয়ে ওম নিচ্ছিল। আমিও গেলাম ওদের কাছে। আগুনের আচে সবার লালমুখ। আমাকে দেখে ওরা জায়গা করে দেয়। পট পট আগুন জ্বলতে থাকে। আর শীত লাগে না। একটু সময় পর আগুন নিভে যেতে থাকে। চারপাশে খুজে আর কোন ছেড়া কাগজ, ঝরা পাতা খুজে পাওয়া যায় না। নিভু নিভু আগুনটা থেকেও ফুলকি ওড়ে। আমার কাছে বাবার শেষ দিনগুলোর কথা মন পড়ে। একটু বাতাস শরীরে নেবার চেষ্টায় তার রগগুলো ফুলে ফুলে উঠতো। কেমন একটা ঘড় ঘড় শব্দ। আমি মানিব্যাগ থেকে টাকাগুলো বের করে এক এক ছড়িয়ে দেই। আগুনটা আর একটু জ্বলে ওঠে। আমাদের মুখ লালচে হয়ে ওঠে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইবার মনে পর্ছে দেঁতো হাসি



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

জি.এম.তানিম এর ছবি

মন খারাপ
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

তারেক এর ছবি

আগেরগুলো পড়া হয়নি। সবগুলো একসাথে দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা। কী বলবো আর? জানি না সত্যি... _________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমার মধ্যে আমার জন্য কেমন একটা মায়া জন্মায় ...

এইটা হয়, এইটা সত্য।

অসাধারণ!!!

পরের চারটাকে সম্পাদনায় গিয়ে সিরিয়ালি সাজিয়ে দেয়া যায় না?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হ অসাধারণ...
অসাধারণই...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হিমু এর ছবি

কর্ণজয়ের কর্ণ ধরে আকর্ষণ করা উচিত!

অনেকদিনপর একটা কবিতা পড়ে খুব ভালো লাগলো। অনেক অনেক বিরতি দিয়ে এরকম আবার লিখুন। এমন লেখা রোজ পড়া উচিতও না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।