বিদ্যুৎ চাই, কিন্তু সুন্দরবনকে ভাসান দিয়ে নয়

আয়নামতি এর ছবি
লিখেছেন আয়নামতি [অতিথি] (তারিখ: বুধ, ০২/১০/২০১৩ - ২:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাহির এই প্রথম এসেছে এদিকে। ঢাকা থেকে এতদূর কেউ পিকনিকে আসে না। কিন্তু মাহির আর ওর কিছু বন্ধু ছোট মামাকে ম্যানেজ করে এই ট্রিপটা বাগিয়েছে। বুদ্ধিমান ছেলে সে। বইতে পড়ে তার খুব ইচ্ছে জেগেছে এই জায়গাটায় বেড়াতে আসার। কিন্তু এখানে আসার পর তার নিজেকে বোকা বোকা মনে হচ্ছে। এই প্রথম তার মনে হচ্ছে পাঠ্যবইকে বিশ্বাস করাটা বিরাট ভুল। যে পাঠ্যবইতে টলটলে জল বুকে নিয়ে সবুজ বনের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা এক নদীর স্বর্গীয় বর্ণনা পড়েছে সে নদীর এমন হাল সে কল্পনাও করেনি। তার খুব অভিমান হলো। কার উপর সে নিজেই জানে না। ছোটমামা এত করে বলেছে এখানে দেখার কিছুই নেই আর, সব শেষ, বইতে ইতিহাস লিখেছে, সে বিশ্বাসই করেনি ছোটমামাকে।

এখন হাড়ে হাড়ে টের পেলো ইউনেস্কো ঘোষিত পৃথিবীর অন্যতম দর্শনীয় স্থানটি ধ্বংসের পথে। এখানে মাইলের পর মাইল মৃত বন, বয়ে চলা নদীর কুৎসিত ময়লাঘন জল, পাখপাখালির কোন চিহ্ন নেই, বাতাসে বিকট অস্বস্তিকর গন্ধ ভেসে বেড়াচ্ছে। এমন জায়গায় সে একদিনও থাকতে চায় না। কিন্তু আজ ফেরার উপায় নেই। এই রাতটা কষ্ট করে থেকে যেতেই হবে মামার এক বন্ধুর বাংলোয়। রাতে শুয়ে শুয়ে মাহির ভাবছিল, জায়গাটার নাম এখনো সুন্দরবন!

*** *** ***

গল্পটা কাল্পনিক। কিন্তু বাস্তবতা মনে হয় সেই কল্পনাকে ছুঁয়ে ফেলবে অবিলম্বেই। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন, আমি রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের প্যাচাল লিখতে বসেছি।

ভারত সরকার যেখানে ২০১০ এ মধ্যপ্রদেশে ন্যাশন্যাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন(এনটিপিসি)এর প্রস্তাবিত রামপালের অনুরূপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রস্তাব বাতিল করে দেয় সংশ্লিষ্ট এলাকার পরিবেশ এবং জনগণের জীবন হুমকীর মুখে পড়বে এই বাস্তবতাকে স্বীকার করে। সেখানে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রামপালে ভারতের উক্ত অঞ্চলের দ্বিগুন জনসংখ্যার বসতি আছে জেনেও এনটিপিসির সাথে হাসিমুখে এমন একটি মরনফাঁদে বাগেরহাটের রামপাল তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চলকে সঁপে দিলো!

হায় সেলুকাস। এরা নাকি জনগণের জিম্মাদার! জনগণের সুখদুঃখ লাঘবের অঙ্গিকার জলাঞ্জলি দেবার এমন নজির সত্যি বিরল। যারা মানুষের নিরাপত্তা দিতে জানে না তাদের কাছে রামপাল থেকে প্রায় ৯ কিঃমিঃ(সরকারি হিসাবে ১৪ কিঃমিঃ) দূরের 'সুন্দরবন' নিতান্তই জঙ্গল বৈ আর কিছু নয়। আর বনের নিরীহ পশু প্রাণীদের নিরাপত্তা রক্ষায় তারা যে সেভাবে সচেষ্ট নন সে তো বহু আগেই প্রমাণিত। নইলে প্রশাসন পিকনিক পার্টি, ডিজেলচালিত ভটভটি ইত্যাদির দ্বারা সংঘটিত নানান ক্রিয়াকর্ম যা বনের প্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনাচরনের ক্ষেত্রে বাঁধা সৃষ্টি করে সেসব বন্ধের ক্ষেত্রে আন্তরিকতা দেখাতো। এসব নির্বিচারেই চলছে। এতসব অত্যাচারের উপরে মহা বিপদ সংকেত হিসেবে 'রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের' ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী ২২শে অক্টোবর।

এই প্রকল্পের অর্থায়নে পিডিবি ১৫%, এনটিপিসি ১৫% আর ৭০% ঋণ নেয়া হবে। যে নীট লাভ হবে সেটা ভাগ করা হবে ৫০% হারে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনবে পিডিবি। বিদ্যুতের দাম নির্ধারিত হবে একটা ফর্মুলা অনুসারে। কী সে ফর্মুলা? যদি কয়লার দাম প্রতি টন ১০৫ ডলার হয় তবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ এর দাম হবে ৫ টাকা ৯০ পয়সা এবং প্রতি টন ১৪৫ ডলার হলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৮ টাকা ৮৫ পয়সা। অথচ দেশীয় ওরিয়ন গ্রুপের সাথে মাওয়া, খুলনার লবন চড়া এবং চট্টগ্রামের আনোয়ারা তে যে তিনটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের যে চুক্তি হয়েছে পিডিবির সাথে সেখানে সরকার মাওয়া থেকে ৪ টাকায় প্রতি ইউনিট এবং আনোয়ারা ও লবন চড়া থেকে ৩টাকা ৮০ পয়সা দরে বিদ্যুৎ কিনবে। সরকার এর মধ্যেই ১৪৫ ডলার করে রামপালের জন্য কয়লা আমদানির প্রস্তাব চূড়ান্ত করে ফেলেছে। তার মানে ৮ টাকা ৮৫ পয়সা দিয়ে পিডিবি এখান থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ কিনবে। এরপর পাবলিক কত করে কিনবে সেটা বলাই বাহুল্য।

তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে পরিবেশে। আমি পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নেই। তবে বিভিন্ন পত্রিকা ইত্যাদি ঘেটে যা জেনেছি তা হলো -

এ ধরনের কয়লাভিত্তিক প্রকল্প প্রতি ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ২.২ বিলিয়ন গ্যালন পানির প্রয়োজন হয়। রামপালের প্রকল্পের ক্ষেত্রে তা নিঃসন্দেহে মেটানো হবে পশুর নদী থেকে। পশুর নদীর পানি নোনা ও মিঠা জলের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের প্রয়োজন মেটাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই নদীটির সাথে ওই গোটা অঞ্চলের সামগ্রিক জীববৈচিত্র্যের সংযোগ রয়েছে। এটি ওই অঞ্চলের জনবসতির ক্ষেত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি নদী। কিন্তু এই প্রকল্প তৈরি করতে গিয়ে আমরা সেই নদীর অস্তিত্বকেই বিপন্ন করে ফেলছি।

বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মালামাল ও যন্ত্রপাতি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নদী পথে পরিবহন করা হবে। ফলে বাড়তি নৌযান চলাচল, তেল নিঃসরণ, শব্দদূষণ, আলো, বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি সুন্দরবনের ইকো সিস্টেম বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, ডলফিন, ম্যানগ্রোভ বন ইত্যাদির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে ইআইএ রিপোর্টে আশংকা করা প্রকাশ হয়েছে। ড্রেজিং এর ফলে নদীর পানি ঘোলা হবে। ড্রেজিং সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে তেল- গ্রীজ ইত্যাদি নিঃসৃত হয়ে নদীর পানির দূষিত হবে। পশুর নদীর তীরে যে ম্যানগ্রোভ বনের সারি আছে তা নির্মাণ পর্যায়ে জেটি নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে কাটা পড়বে। নদী তীরের ঝোপঝাড় কেটে ফেলার কারণে ঝোপঝাড়ের বিভিন্ন পাখি বিশেষকরে সারস ও বক জাতীয় পাখির বসতি নষ্ট হবে। এর পরে আসছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র অপারেশনে থাকার সময়কার প্রভাব-ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৪২ টন বিষাক্ত সালফার ডাই-অক্সাইডও ৮৫ টন বিষাক্ত নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড নির্গত হবে।
এনটিপিসিই যখন ভারতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রনির্মাণ করে তখন 'জিরো ডিসচার্জ' নীতি অনুসরণ করে অথচ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে- "পরিশোধন করার পর তরল বর্জ্য বা ইফ্লুয়েন্ট ঘন্টায় ১০০ ঘনমিটার হারে পশুর নদীতে নির্গত করা হবে।" যা গোটা সুন্দরবন এলাকার পরিবেশ ধ্বংস করবে। ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে ২৭৫ মিটার উচু চিমনী থেকে নির্গত গ্যাসীয় বর্জ্যরে তাপমাত্রা হবে ১২৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস ফলে আশেপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যাবে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বছরে ৭,৫০,০০০ টন ফ্লাই অ্যাশ ও ২ লক্ষ টন বটম অ্যাশ উৎপাদিত হবে। এতে বিভিন্ন ভারী ধাতু যেমন আর্সেনিক, পারদ, সীসা, নিকেল, ভ্যানাডিয়াম, বেরিলিয়াম, ব্যারিয়াম, ক্যাডমিয়াম, ক্রোমিয়াম, সেলেনিয়াম, রেডিয়াম মিশে থাকে।

কিন্তু আরো ভয়ংকর ব্যাপার হলো, একদিকে বলা হয়েছে এই বিষাক্ত ছাই পরিবেশে নির্গত হলে ব্যাপক দূষণ হবে অন্যদিকে এই ছাই দিয়েই প্রকল্পের মোট ১৮৩৪ একর জমির মধ্যে ১৪১৪ একর জমি ভরাট করার পরিকল্পনা করা হয়েছে! এই বর্জ্য ছাই- এর বিষাক্ত ভারী ধাতু নিশ্চিত ভাবেই বৃষ্টির পানির সাথে মিশে, চুইয়ে প্রকল্প এলাকার মাটি ও মাটির নীচের পানির স্তর দূষিত করবে যার প্রভাব শুধু প্রকল্প এলাকাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। এই বিপদ সমগ্র সুন্দরবন এলাকার!

আবু ইসহাকের 'বনমানুষ' গল্পের কথা মনে আছে? মানুষই আসলে মানুষের সবচে' বড় ভয় কিংবা বিপদের কারণ হয় সময়ে।বনের হিংস্র পশু ক্ষুধার কবলে পড়লেই মানুষের উপর চড়াও হয়। কিন্তু মানুষ লোভ আর স্বার্থপরতার চুড়ান্তে উঠে বাকী মানুষদের সর্বনাশ করে। কারণ মানুষ নামের এইসব কীর্তিমানেরা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে বসবাসকারী ক্ষমতার বৃত্তে ঘুরে মরা কিছু চোখ সর্বস্ব অন্ধমানুষ। এদের কাছে জনগণ 'ভাত খেতে পায়না'র অর্থ হলো 'জনগণ পোলাও খাচ্ছে'র অলীক গালগপ্প। যে কারণে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ হলে রামপালের জনবসতির, সুন্দরবনের কিচ্ছুটি হবে না'র মত অশিক্ষিত প্রচারণা প্রাণ পায়। এইসব স্বার্থান্ধ এলিটদের মাথায় একবারের জন্যও এটা আসে না যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আরো বিকল্প স্থান থাকলেও আরেকটি সুন্দরবন সৃষ্টি করা অসম্ভবের অসম্ভব।

'সুন্দরবন' নামটা শুনলে প্রথমেই চোখে ভাসে রাজকীয় ভঙ্গির রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মুখ, শত শত নাম নাজানা পাখপাখালি, ভীতচোখা হরিণের ঝাঁক, আলসে ভঙ্গির কুমির কিংবা দুষ্টু মিষ্টি বানরের দল। পৃথিবীর সবচে' বড় এই ম্যানগ্রোভ বনটি আজকে হুমকির মুখে। এমনিতেই আইলা, সিডরে সুন্দরবনের পরিবেশের যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে গেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপরে আমাদের হাত থাকেনা। কিন্তু, মানুষের সৃষ্ট অনাসৃষ্টি রুখবার ক্ষেত্রে গলা তুলতে পারি। প্রতিবাদে প্রতিবাদে অন্ধের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হতে পারি। সামান্য এই লেখাটি সেই অক্ষম দৃষ্টি আকর্ষণী প্রচেষ্টা। সরকারের সুবুদ্ধির উদয় হোক। বন্ধ হোক সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ। পোস্টারের ছবি দেখে নয়, বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে আমি আমার অনাগত সন্তানের হাত ধরে 'সুন্দরবন আমাদের অহংকার' এই গর্বের অংশীদার হতে চাই। আমরা বিদ্যুত চাই, কিন্তু তা কিছুতেই সুন্দরবনের অস্তিত্বের বিনিময়ে নয়।

*** *** ***

এবার সূচনার গল্পে ফিরি। আকাশ থেকে তোলা সুন্দরবনের একই এলাকার দুটো ছবি দেখুন।
দুটোর মাঝখানে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধান।


ছবি-১

মাহির ও বন্ধুরা যে ছবি দেখে মুগ্ধ হয়ে ছুটে গিয়েছিল সুন্দরবন।


ছবি-২

মাহির ও তার বন্ধুদের মুগ্ধতা ছুটিয়ে দিয়েছে যে সুন্দরবন।

আমরা কোন সুন্দরবন বেছে নেবো?

(** সুন্দরবনের স্যাটেলাইট ছবি দুটো গুগল আর্থের সৌজন্যে প্রাপ্ত)


মন্তব্য

কল্যাণ এর ছবি

কুবুদ্ধি গুলো দেয় কারা!

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

আয়নামতি এর ছবি

গৌরিসেন শয়তানী হাসি

আয়নামতি এর ছবি

যেমনখুশি বুঝ দিলেই তো হলো রে তিথী। আমরা তো বুকারাম সব কিচ্ছুটি বুঝিনা। ঘোড়ার ডিম সবগুলো রেগে টং
নিশ্চিত রে মহামান্য মন্ত্রী সচলের নিয়মিত পাঠক। সজীব ভাইয়ের বিলুপ্ত প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার পোস্ট পাঠেই তার মাথায় এহেন বুদ্ধির উকুনের কুট্টুশ হচ্ছে চোখ টিপি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হো হো হো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তিথীডোর এর ছবি

নিউজে পড়োনি? সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান বলেছেন--"রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সুন্দরবনের কোনো সমস্যা হবে না। আর যদি হয়, সেক্ষেত্রে কৃত্রিম সুন্দরবন তৈরি করা হবে"। হো হো হো

কৃত্রিম বাঘহরিণবানরকুমির, দরকারে এসবও উনারা বানাতে পারবেন কিনা সে ব্যাপারে অবশ্য এখনো কোন ঘোষণা শুনিনি।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

কৃত্রিম সুন্দরবন তৈরি করা হবে!!!! অ্যাঁ
গবুচন্দ্র রাজার দেশেও তো এর থেকে ভালো মন্ত্রী ছিল!

____________________________

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সুন্দরবনেই কেন বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে হবে? আর জায়গা নেই? এব‌্যাপারে আলোকপাত করতে পারেন কেউ?

____________________________

আয়নামতি এর ছবি

এটা জানবার আগ্রহ আমারও প্রচুর। কেউ বিষয়টা নিয়ে লিখলে এত হোল্লাগোল্লা হয় না।

গান্ধর্বী এর ছবি

কৃত্রিম পশু সাপ্লাই দেয়াটা তো আরো সহজ হবে!
সেই অরণ্য আর ফিরে পাব না। আমি এখনো সোঁদর বন দেখিনি, এখন মনে হচ্ছে কখনো দেখতে পাবও না মন খারাপ

আয়নামতি এর ছবি

কৃত্রিম পশু সাপ্লাইয়ের টেণ্ডারবাজি এবং সেই সংক্রান্ত নাটিকাসমূহ শুরু হয়ে গেলো বলে খাইছে
হালকার উপর ঝাপসা একটুখানি দেখা হয়েছিল সুন্দরবন। ওটাকে ঠিক দেখাও বলেনা।
জানিনা কপালে পোস্টার দেখেই দুধের স্বাদ মেটাতে হবে কিনা।

গান্ধর্বী এর ছবি

মন খারাপ

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

প্রয়োজনীয় সময়োচিত লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
আমিও আপনার সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই,

বিদ্যুৎ চাই, কিন্তু সুন্দরবনকে ভাসান দিয়ে নয়

বিষয়ান্তর : আপনার নিকটা, 'আয়নামতি', দেখলেই আমার সেই ছোটবেলায় দাদী-নানীর কাছে শোনা রূপকথার নায়িকার কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে, ছোটবেলায় দাদী অথবা নানী বাড়ি বেড়াতে গেলে আমাদের শোবার জন্য কাঁথা-বালিশ বার করতে যখন ছাপবাক্সটি (আগেকার দিনে গেরস্থ বাড়িতে লেপ-তোষক, কাঁথা-বালিশ ইত্যাদি রাখার জন্য বিরাটাকার কাঠের বাক্সবিশেষ) খুলতেন তখন সেই বাক্সটির মধ্য থেকে একরকম সোঁদা গন্ধ বেরুতো। 'আয়নামতি' দেখলে আমার নাকে সেই সোঁদা গন্ধটিরই যেন আবেশ পাই !

আয়নামতি এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ প্রোঢ় ভাবনা। কন্ঠ ছাড়ুন জোরে!

অতিথি লেখক এর ছবি

পরিবেশ,ইকোসিস্টেম এগুলো কি আমার মনে হয় আমাদের জনপ্রতিনিধিরা জানে না আর জানলেও এগুলো বিসর্জন দিয়ে দিয়েছেন স্বার্থের কাছে। আমি ঠিক ভেবে পাই না কি করে এমন আত্নঘাতী একটা কাজ সরকার করতে উদ্যত হয়। কতটা অজ্ঞতা আর কতটা অসৎ উদ্দেশ্য থাকলে এমন জনবিরোধী,পরিবেশ বিরোধী একটা কাজ করা হয়? রামপালে বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন করলে কারা লাভবান হবে? পরিবেশ বিপর্যয় তো থাকছেই আর বিদুতের যে দাম পড়বে তাতে ও জনসাধারণ এর চার আনাও লাভ নেই, তারপরও কেন? আমরা চাই সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, এমন ধ্বংসাত্নক ভবিষৎমুখী কর্ম থেকে বিরত থাকুক।

আপনার লেখা পড়ে অনেক কিছু জানা হলো, আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

মাসুদ সজীব

আয়নামতি এর ছবি

গোয়াতুর্মিকে প্রাণ দিতে গেলে হটকারী কাজ করতেই হয়। এঁরাও সেপথের যাত্রী।
আরেকজন তো সাফারি পার্কের চিন্তায় বিভোর শুধু আসতে দেন তাকে।
সবই নেটের দান ভাই। আমি তেমন কিছুই লেখিনি। ধন্যবাদ।

বান্ধবী এর ছবি

প্রকৃতির কোন ক্ষতি না করে, সভ্যতা বিস্তার করার কৌশল আমরা এখনও শিখি নি। আর দূরদর্শী পরিকল্পনা করতে আমরা অক্ষম। সবসময় আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে - অল্প সময়ে অধিক মুনাফা।
কোন এক দেশের, নাম না জানা কৃষক বলেছিলেন - "মানুষ একদিন বুঝবে টাকা খাওয়া যায় না। আর ততদিন পর্যন্ত প্রকৃতি ধ্বংস করে শহর নির্মাণ করে যাবে।"

লেখায় চলুক

আয়নামতি এর ছবি

"মানুষ একদিন বুঝবে টাকা খাওয়া যায় না। আর ততদিন পর্যন্ত প্রকৃতি ধ্বংস করে শহর নির্মাণ করে যাবে।"

চলুক

তানিম এহসান এর ছবি

চলুক
সুন্দরবনের ছবি দুইটা দেয়ার জন্য আলাদাভাবে ধন্যবাদ প্রাপ্য আপনার। বাইরে থেকে যাই মনে হোক, উপর থেকে সুন্দরবন দেখে কি পরিমাণ কষ্ট পেয়েছিলাম বলে বোঝাতে পারবো না; এই বছর আবার দেখলাম, একই দশা। আরও লিখুন।

আয়নামতি এর ছবি

তানিম ভাইয়া চামে শুনাইয়া দিলেন আপ্নে পেলেন চড়ে ঐদিকে গেছিলেন খাইছে
ছবিতো গুগলমামার আমি ওধার কা জিনিস শুধু এধারে এনেছি দেঁতো হাসি

তানিম এহসান এর ছবি

হ! এইরকম সুযোগ কেউ ছাড়ে? রেগে টং

বিষয়টা এমন নয়, সুন্দরবনের উপরই একটা কাজ ছিল, যা দেখেছি তাতে স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম; ভেতরে শুধুই ফাঁকা, গাছ নেই, সবুজ নেই।

গত কয়েকবছরে সাইক্লোনগুলো (বিশেষ করে সিডর) সুন্দরবনের কতটা ক্ষতি করে দিয়ে গেছে তা চিন্তার বাইরে, প্রকৃতি নিজ থেকে মানিয়ে নেয়, মানিয়ে নিচ্ছিল, কিন্তু তখন সরকারের মাননীয় এক মন্ত্রণালয়ের মহামূর্খ চিন্তাবিদ’রা সেখানে নৌ-চলাচলের পথ খুলে দিলেন। এবছর জুন মাসে যখন গেলাম তখন জায়গায় জায়গায় তৈলাক্ত জল দেখলাম, আগে প্রচুর বানর কিংবা শুশুক চোখে পড়তো, সেগুলোও চোখে পড়েনি।

আরও কিছু লিখুন এই নিয়ে।

আয়নামতি এর ছবি

শয়তানী হাসি

***
----------দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছুই করার নেই। ঐ পথে নৌযান চলাচল বন্ধের ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) মারফৎ ‘ঘসিয়াখালী খাল খননের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে'র পুরানো রের্ডক বাজিয়েই খালাস আজ প্রায় দু'বছর ধরে। এসব বিষয়ে আমার তেমন জ্ঞান নেই বললেই চলে ভাইয়া। থাকলে নিশ্চয়ই লিখতাম। লিখেই যেতাম...

রাহী এর ছবি

লেখাটা দরকারি কিন্তু শেষে যে ইমেজ দুটো ব্যবহার করেছেন তা মনে হয় ঠিক সঠিক মনে হল না। আপনি যদি বুঝাতে চান যে আগে অনেক সবুজ ছিল আর এখন সবুজ নাই, তা হলে এটা ভুল - গুগল আর্থের ইমেজ সবুজ বা গ্রে হলে তা তেমন কোন অর্থ বহন করে না।

লেখায় চলুক

আয়নামতি এর ছবি

আপনার কথা বুঝতে পারছি। তবে ছবি দুটো এখানে গল্পের খাতিরে ব্যবহার করা। সুন্দরবনের চেহারা কিরকম বদলে যেতে পারে বিরূপ পরিবেশে সেটা বোঝানোর জন্য। ধন্যবাদ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

যদ্দুর জানি সুন্দরবন একটা রামসার সাইট। সম্ভবতঃ বাংলাদেশ রামসার কনভেনশানে সই করেছে ১৯৯২ সালে। সেই হিসেবে বাংলাদেশ সরকার এমন কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যাতে সুন্দরবনের ক্ষতি হয়। সুন্দরবন সমগ্র দক্ষিণবঙ্গের প্রাকৃতিক ঢালের মতো। এটা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া মানে বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি। মশিউর সাহেবদের বাণী আমাদের বিনোদনের খোরাক হতে পারে কিন্তু সরকারের নীতি নির্ধারনী প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখলে তা বাংলাদেশের তলায় আবারো ফুটো তৈরী করবে। পিডিবি নিজে নিজে এরকম কোন চুক্তি ফাইনাল করতে পারে না। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত ছাড়া এ ধরনের প্রকল্প পাশ হয় না। কিন্তু সরকারে যদি এরকম কয়েকটা মশিউর থাকে, তাহলে যে কোন বটমলেস প্রজেক্ট পাশ হতে পারে।

অরণ্যে রোদন হলেও বলছি - রামপাল বিদ্যুত প্রজেক্টটা রিলোকেশান করা অতি জরুরী। এনটিপিসির প্রচুর টাকাপয়সা আছে, তারা চাইলে বিকল্প লোকেশানে প্রজেক্ট করতে পারে। আমাদের সরকারের শুধু ডিপ্লোমেটিক মেরুদণ্ডটা সোজা রাখতে হবে। পারবে না?

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আয়নামতি এর ছবি

আপনার সব কথার সাথেই প্রায় সহমত নীড় সন্ধানী। যতদূর দেখা যাচ্ছে, আন্তর্জান্তিক এবং জাতীয় আইন ভঙ্গের দায় চেপে বসতে পারে এই প্রকল্পের কাঁধে। এনটিপিসি ভারতীয় পরিবেশ আইন লংঘন করে এই চুক্তি করেছে। আর শেষ প্রশ্নের উত্তরটা হবে না, মেরুদণ্ড থাকলেই সোজা কিংবা বাঁকার প্রশ্ন আসে। এক্ষেত্রে, এখন পর্যন্ত ওটা নিখোঁজ

অতিথি লেখক এর ছবি

রামপালে বিদ‌্যুত কেন্দ্র হবেনা। মানুষ রুখে দাড়াবেই।

তাহসিন রেজা

আয়নামতি এর ছবি

প্রমাণ হয়ে যাক ফের, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস!

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যেরকম ভয়াবহ একটা ভবিষ্যত চিত্র অংকন করলেন, তাতে মনে হচ্ছে সারা পৃথিবীর সিংহভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র এই মূহুর্তে ধংস করে ফেলা দরকার, কারন সেগুলো কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র। কোন সন্দেহ নাই, বিদ্যুৎকেন্দ্রটা রামপালে না করে সাহারা মরুভূমিতে করতে পারলে খুব ভাল হতো। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের কোন সাহারা মরুভূমি নাই, পর্যাপ্ত গ্যাসও নাই, অথচ আমাদের প্রচুর বিদ্যুৎ প্রয়োজন। দু একটা বিষয়ে কিছুটা খটকা লেগেছে, যেমন-

১। নদীতে প্রচুর নৌযান চলাচল করবে, সে কারনে বাড়তি নৌযান চলাচল, তেল নিঃসরণ, শব্দদূষণ, আলো, বর্জ্য নিঃসরণ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু এই নদী তীরে তো একটি আন্তর্জাতিক নৌ বন্দর(মংলা) বহু আগে থেকেই স্থাপিত, ভারী জাহাজ তো এ নদীতে আগে থেকেই চলাচল করছে এবং সে বন্দরের পূর্ন ব্যবহার করে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো ছাড়াও নেপাল, ভূটান এবং পশ্চিম বাংলার জন্য ব্যবহার করার আকাঙ্খা আমাদের রয়েছে। সে ক্ষেত্রে কিন্তু উল্লেখিত ক্ষয় ক্ষতির দুঃশ্চিন্তা আমাদের নেই- কারন হয়তো এই যে নদীর ব্যাপ্তি এখানে অনেক বেশী।
২। এ ধরনের কয়লাভিত্তিক প্রকল্প প্রতি ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ২.২ বিলিয়ন গ্যালন পানির প্রয়োজন হয় এই পরিমান পানি কি প্রতি সেকেন্ডে প্রয়োজন হয় নাকি প্রতি বছরে? এই সংক্রান্ত লিংকটা দিতে পারেন? যাই হোক, পানির প্রয়োজন মূলতঃ প্লান্ট শীতলীকরনের প্রয়োজনে, সাধারনভাবে এতে পানি দূষন হয় না বললেই চলে। বাংলাদেশের যেখানেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে, সেখানেই কুলিং সিষ্টেমও আছে, সংগত কারনেই সে বিষয়ে কোন অভিযোগ নেই।
৩। বায়ু দুষনের ব্যাপারে দ্বিমত নেই, কিন্তু সেটা কি সুন্দর বন ধ্বংস করে ফেলার মত তীব্র? এ ব্যাপরে কোন সুনিদ্রিষ্ট তথ্য থাকলে তা দেয়া প্রয়োজন ছিল।

ইআইএ রিপোর্ট টা কি জিনিস? এটার একটা লিংক দেয়া প্রয়োজন ছিল।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

লইজ্জা লাগে

আয়নামতি এর ছবি

ভয় পেলে চলবে কেন! এটা তো সামান্য ট্রেলার। সঠিক পদক্ষেপ না নিলে, পূর্ণাঙ্গটা হয়ত সময়ের ক্যানভাসেই দেখতে হবে। সাহারায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র!!! পানি বিনা এধরনের বিদ্যুৎ স্বপ্নেই সম্ভব ভাই! তাই সাহারা নেই বলে দুঃখ করিনা। সুন্দরবন থাকবার গর্বটা ধরে রাখবার চেষ্টায় একটা ইকো তুলেছি মাত্র। না পৃথিবীর সিংহভাগ বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে আপাতত মাথা ঘামাচ্ছিনা। এ সংক্রাম্ত লেখালেখিগুলো থেকে যতদূর জানেছি, অন্যান্য দেশে এ ধরনের প্রকল্পগুলোর কারণে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটার সম্ভাবনা থেকে যায় বলে সংরক্ষিত বনভূমি এবং জনবসতির ১৫ থেকে ২০ কিঃমিঃ মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিমার্ণের অনুমোদন দেয়া হয়না। তাছাড়া এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রকে কয়লা খনির কাছাকাছি থাকতে হয়; নতুবা গভীর সমুদ্রবন্দরের কাছে বা রেললাইনের পাশে। কিন্তু রামপালের কাছে মংলা বন্দর থাকলেও ঝামেলাটা হয়ে গেছে সুন্দরবন নিয়ে। আমরা সুন্দরবনকে বাঁচাতেই এই চিৎকারগুলো করছি।

১. মংলা নৌ বন্দরের জন্য সুন্দর বনের ক্ষতি হয়নি বা হচ্ছে না' বলছেন? এমনতেই এই বন্দরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা নৌযান গুলোকে প্রায় ১৮০ কিঃমিঃ ঘুরে সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। নিয়মিত প্রায় ১৫০ থেকে ১৬০টি নৌযান চলাচলের প্রভাব হিসেবে পরিবেশ ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্হ এবং সুন্দর বনের পূর্বাংশ ইতিমধ্যেই প্রাণী শূন্য হয়ে আসছে। তারপর বোঝার উপরে শাকের আঁটির মত শত শত টন কয়লাবাহী নৌযান চলাচলের ফলে কি অবস্থা দাড়াবে, ভাবা যায়? আপনি নিশ্চয়ই জানেন কয়লাবাহী জাহাজের দূষণ আর সাধারণ পন্যের জাহাজের দূষণের মাত্রার মধ্যে কয়েকগুন পার্থক্য।

২. প্রতি ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ২.২ বিলিয়ন গ্যালন পানির বিষয়টা জেনেছি নিন্মোক্ত সুত্র থেকে। আপনিও দেখে নিতে পারেন http://www.ucsusa.org/clean_energy/coalvswind/brief_coal.html

৩. এ প্রশ্নটা পরিস্কার নয় আমার কাছে। অর্থাৎ আপনি বলছেন বায়ু দূষণ হবে কিন্তু সেই বায়ুদূষণ সুন্দরবন ধ্বংস করতে পারে না? যদি তাই-ই হয় তবে তো আর এত কথার প্রয়োজন ফুরালো। তবে এই লিংকে গেলে বিস্তারিত তথ্য পাবেন কিভাবে দূষণটা ছড়াতে পারে। http://ncbd.org/?p=794

সবশেষে ইআইএ রিপোর্ট নিয়ে আপনার কৌতুহল। ঠিক বুঝতে পারছিনা আপনি মজা করেই এ প্রশ্নটা করেছেন কিনা। EIA হচ্ছে Environmental Impact Assessment) এই জাতীয় প্রকল্পগুলি করবার আগে একটা ইআইএ রিপোর্ট তৈরী করা হয় যার ভিত্তিতে প্রকল্পের পরিবেশ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলোর পরিকল্পনা করা হয়। পিডিবির ওয়েবসাইটে রামপালের ইআইএ রিপোর্ট দেয়া আছে। চাইলে দেখে আসতে পারেন।

পোস্ট পড়বার জন্য ধন্যবাদ।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

সুন্দরবন নিয়ে আশংকা যেমন একটা বাস্তবতা, সহনীয় খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চাহিদাও তেমনি একটি অতি গুরুত্বপূর্ন বাস্তবতা। সাহারা মরুভূমি বলতে আমি বুঝাতে চেয়েছি, কোন বিরান ভূমিতে যদি আমাদের বড় বড় কয়লা খনি থাকতো এবং সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যেত, তাহলে সেটাই হতো সবচেয়ে ভাল, কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং গ্রীন হাউস এফেক্টের যে ঝুঁকি, তার অন্যতম প্রধান কারন হলো কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কিন্তু তবুও বর্তমান বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪১ শতাংশই কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র। বিচ্ছিন্ন ভাবে এ সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কোন কোনটি হয়তো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হয়ে দেখা দিয়েছে, কিন্তু এমন অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র আছে যেগুলো গুরুত্বপূর্ন অঞ্চলেই অবস্থিত এবং পরিবেশের কোনই সমস্য সৃষ্টি করে নি। আপনি যে সকল আশংকার দিকগুলো তুলে ধরেছেন, সেগুলো আক্ষরিক অর্থে ঘটলে শুধু সুন্দরবন কেন, ঘনবসতির এই দেশে যে কোন স্থানেই তা মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি করার কথা। বড় পুকুরিয়ায় এখন যে ২৫০ মেঃওঃ এর বিদ্যুৎ কেন্দ্র চলছে, তার আশে পাশে পরিবেশের বিন্দুমাত্র ক্ষতিকর প্রভাব কেন পড়লো না, সেটাও কি এ প্রসংগে একটু খতিয়ে দেখার প্রয়োজন আছে? গত রাতে টিভি টক শো তে আনু মাহমুদের প্রস্তাবনা শুনলাম, তাঁর অভিমত হলো আমাদের দেশে কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা প্রয়োজন। তাঁর প্রস্তাব মেনে নেয়ার চেষ্টা করলে আর যাই হোক, বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা কোন কালে মিটবে বলে মনে হয় না।

আপনি যে নিবন্ধটি লিখেছেন, সেখানে ইআইএ রিপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান, তাই এর একটা লিংক দিয়ে দিলে পাঠকদের জন্য সুবিধা হতো, আপনার লেখা পড়তে যেয়ে যদি গুগল খুঁজে খুঁজে দেখতে হয়, সেটা খুব একটা ভাল হয় না।

তানিম এহসান এর ছবি

১) কারন হয়তো এই যে নদীর ব্যাপ্তি এখানে অনেক বেশী। না, ব্যাপ্তি আগে হয়তো বেশি ছিল কিন্তু এখন আগের মত নেই। যেমন ‘চালনা’ নৌ-বন্দর, চালনার পাশে ‘পশুর’ নদীর একসময় যে ব্যাপ্তি ছিল এখন কিন্তু সেটা নেই।

২) পুরো বিষয়টা নিয়ে সরকারের তরফ থেকে একটা যথাযথ ব্যাখ্যা পেলে হয়তো আমাদের আরও একটু শান্তি হতো। সেটা রামপালে না হয়ে ভিন্ন কোথাও হলে কি সমস্যা হতে পারে?

৩) পটুয়াখালী’র রামনাবাদ চ্যানেলে সরকার সমুদ্র বন্দরের কাজ শুরু করেছে, চারপাশে বিস্তীর্ন এলাকা জুড়ে ঘনবসতি নেই, সুন্দরবন নেই, সেখানে এই একই জিনিসটা নিয়ে যাওয়া যায় কিনা তার ফিজিবিলিটি স্টাডি কি হয়েছে?

সুন্দরবন শুধুমাত্র একটা বন নয়, কিংবা পর্যটন কেন্দ্র নয়, সাইক্লোন উপদ্রুত এই দেশে সমগ্র দক্ষিণের রক্ষাকবচ যেমন সুন্দরবন তেমনি সুন্দরবন ঘিরে যে জনপদ সেখানকার মানুষের বেঁচে থাকাও নির্ভর করে সুন্দরবনের উপর। কয়রা, দাকোপ সহ আরও বহু জনপদ কেবলমাত্র আইলার পর যে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলো (সিডর এর কথা বাদই দিলাম) সেই পরিস্থিতির তেমন চোখে পড়ার মত কোন পরিবর্তন এখন পর্যন্ত ঘটেনি।

বিদ্যুৎ প্রয়োজন আমাদের। আমাদের বহু কিছু প্রয়োজন, তার চাইতে বেশি প্রয়োজন বর্তমান প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা। এই একটা জিনিস নিয়ে চারিদিকে যে পরিমাণ হল্লা হচ্ছে তাতে কোনটা গুজব আর কোনটা সত্য তার সাথে মাঝেমাঝে তাল মেলানো মুশকিল। ছাগু পেজগুলো এই নিয়ে যে পরিমাণ মায়াকান্না করছে তাতে মনে হচ্ছে রামপাল থেকে বিদ্যুৎ-কেন্দ্র উঠিয়ে নিয়ে গেলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এর কথা ভুলে যাবে! আমরা একটা জটিল সময় পার করছি কিন্তু।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

বিদ্যুৎ প্রয়োজন আমাদের। আমাদের বহু কিছু প্রয়োজন, তার চাইতে বেশি প্রয়োজন বর্তমান প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর যথাযথ ব্যবস্থাপনা। এই একটা জিনিস নিয়ে চারিদিকে যে পরিমাণ হল্লা হচ্ছে তাতে কোনটা গুজব আর কোনটা সত্য তার সাথে মাঝেমাঝে তাল মেলানো মুশকিল। ছাগু পেজগুলো এই নিয়ে যে পরিমাণ মায়াকান্না করছে তাতে মনে হচ্ছে রামপাল থেকে বিদ্যুৎ-কেন্দ্র উঠিয়ে নিয়ে গেলে তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এর কথা ভুলে যাবে! আমরা একটা জটিল সময় পার করছি কিন্তু।

চলুক চলুক চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

@ আবদুল্লাহ ভাই, সব কিছু খতিয়ে তবেই যেকোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পক্ষে মূল ফোকাসটা ছিল। সেভাবে গুছিয়ে লিখতে পারিনি সেটা আমার ব্যর্থতা। গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের মেলা হ্যাপা, খরচও প্রচুর। ওটা নিয়ে তাই কিছু বলার নেই । একটা পোস্ট পড়ে শুধু গুগল না মাঝেমধ্যে ভূগোলও ঘাটতে হয় আমাকে। বুঝতে পারছি আপনি এট্টুক না বেশ আলসে খাইছে তাই এই নিন আপনার লিংক। সুবিধামত একটাতে ক্লিক করবেন। http://www.bpdb.gov.bd/download/coal_EIA_report_rampal_khulna/EIA%20of%202x%20(500-660)%20MW%20Coal%20Based%20Thermal%20Power%20Plant%20at%20Rampal%20in%20Bagerhat%20District,%20Khulna.pdf

http://www.slideshare.net/probirbidhan/environmental-impact-assessment-report-on-rampal-1320mw-coalbased-power-plant-near-the-sundarbans-site

আয়নামতি এর ছবি

চলুক

তানিম ভাইয়া, গুজবে কান দিবেন না।
'শুনলেও তো হাসি পায়
ছাগুরাও নাকি বাংলাদেশের ভালু চায়' শয়তানী হাসি
ছাগুপাগু মানিনা, শুধু জানি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও চাই
অক্ষত সুন্দরবনও চাই। ব্যস!

শিশিরকণা এর ছবি

পরিবেশ রক্ষা করেও বিদ্যুৎ কেন্দ্র বানানো যায়, সেজন্য সেভাবে পরিকল্পনা করতে হয়, খরচও বেশি লাগতে পারে। আসল সমস্যা আমরা সরকারকে বিশাস করতে পারি না যে তারা পরিবেশ এর ভারসাম্য বজায় রাখাকে প্রাধান্য দিয়ে বিদ্যুৎ উত্তপাদনের ব্যাপারটি নিশ্চিত করবেন।

এটাও সত্যি দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতেই হবে। সুন্দরবনের বিকল্প বিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্থানের কথাও আলোচনায় আসতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে জায়গা খুঁজে পাওয়াই মুশকিল। যেখানেই বসান কারও না কারও অসুবিধা হবে। এজন্যই হয়ত কেউ বিকল্প কোন জায়গার নাম প্রস্তাব করছে না।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

আয়নামতি এর ছবি

দেখো শিশির, সত্যিটা হচ্ছে যে সরকার যুদ্ধোপরাধীদের বিচারের মত এমন চমৎকার একটা পদক্ষেপ নিতে পারে তার প্রতি আস্হা আছে বলেই আমরা তাদের এই হটকারী সিদ্ধান্তে বিস্মিত; এবং একারণেই অকপটেই দাবী জানাতে উৎসাহ পাচ্ছি। ঘনজন বসতি দেশের একটা সমস্যা, কিন্তু বিশ্বাস করি সেটারও একটা সুরাহা নিশ্চয়ই বের করা সম্ভব। কারণ দেখো, ঐসব জনগণকে সরিয়ে অন্যত্র নেয়া যায়, এটা অসম্ভব না। কিন্তু সুন্দরবনকে সেটা করা সম্ভব? লবনচর বা এই জাতীয় একটা(স্মৃতিশক্তি প্রতারণা করলে দুঃখিত) জায়গাকে কিন্তু রামপালের আগে নিবার্চন করা হয়েছিল। পরে ঘনজনবসতির কারণে ওখান থেকে রামপালের কথা ভাবা হয়েছে। আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে, জাতীয় সমস্যার ক্ষেত্রেও 'আমরা' হতে না পারা। 'তোমরা' 'আমরা'র বিভেদটা এইসব জাতীয় ইস্যুর ক্ষেত্রে যদি ভুলে থাকা সম্ভব হতো তবে দেশটার চেহারা অন্য রকম হতো। এতসবের পরও বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ একটা বিপুল সম্ভাবনার দেশ।

শিশিরকণা এর ছবি

সরকার বাহাদুরের কখনোই নিজেদের রাজনৈতিক পরিচয় ভুলতে পারেন না। সরকারের উপর আপনার এতখানি আস্থা আছে এখনো তাই তারা সবসময় জনগনের ভাল প্রাধান্য দিয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন সেই আশা করতে পারেন, কিন্তু আমি তাদের থেকে দায়িত্বশীল সিদ্ধান্ত পাবার ব্যাপারটা জেনারালাইজড বলে ধরে নেই না। তবে যখন তারা ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তখন তাকে সাধুবাদ দিয়ে বলতে চাই এমনই হওয়া উচিত। আর হটকারী সিদ্ধান্ত নিলে সঠিক সিদ্ধান্তের রাস্তা বাতলে দেয়া প্রয়োজন ( উদাহারণঃ শাহবাগ)। তাই বলে বলে সবসময় আমার পথই যে সঠিক পথ তা ধরে নিলে বিপদ।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

যেখানেই বসান কারও না কারও অসুবিধা হবে। এজন্যই হয়ত কেউ বিকল্প কোন জায়গার নাম প্রস্তাব করছে না।

আমারও ঠিক তাই মনে হয়... ফুলবাড়িতে স্থানীয়দের মূল ভয় এটাই ছিল... উচ্ছেদ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

সেভাবে উচ্ছেদ না করে সমঝোতার মাধ্যমে স্হানীয় জনগণকে স্হানান্তরিত করা যায় কিনা,
সেটা নিয়ে আলোচনা কিংবা ভাবনা চিন্তার প্রয়োজন ছিল/ আছে বলে মনে করি। বিভিন্ন লেখালেখি পড়ে যতটুকু জেনেছি এসবের কিছুই নাকি মানা হয়নি। অবশ্য এসব ছাগুদের গুজব কিনা সেটা অবশ্য জানিনা।

আয়নামতি এর ছবি

ভাই, আপনার এই ষোলটা পয়েন্ট সরকারের মুখপাত্র পিডিবির চেয়ারম্যান সাহেব প্রায় প্রত্যেক মিটিং এ বলে আস্বস্ত করেছেন। কিন্তু এতে সুন্দরবন নিরাপদ বোধ করছে না এবং বাংলাদেশের মানুষ ঠিক আস্থা রাখতে পারেনি বলে এত চিৎকার করতে হচ্ছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রশ্ন ১. প্রস্তাবিত প্রকল্পটি কি সুন্দরবন এবং ইউনেস্কো "ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট" থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থিত? এই প্রকল্পটি কি 'এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন রুলস (ECR) ১৯৯৭ এর পরিপন্থী?
উত্তর: প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সুন্দরবনের নিকটতম সীমানা থেকে ১৪ কিলোমিটার এবং নিকটতম ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট থেকে ৬৯.৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। "এনভায়রনমেন্টাল কনজারভেশন রুলস (ECR) ১৯৯৭" এর মোতাবেক কোনো স্থাপনা সুন্দরবনের সীমানার ১০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে নির্মাণ করা যাবে না। এই ১০ কিলোমিটার জায়গাকে “ইকোলজিকেলি ক্রিটিক্যাল এরিয়া” হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যেহেতু প্রস্তাবিত প্ল্যান্ট এর দূরত্ব সুন্দরবনের সীমানা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, সেহেতু এই প্রকল্প “ECR 1997” এর সাথে সম্পূর্ণরূপে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

প্রশ্ন ২:প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রকল্পের চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়া কি স্থানীয় এলাকার তাপমাত্রায় কোনো প্রকার প্রভাব ফেলবে?
উত্তর: না।
চিমনি থেকে নির্গত "ফ্লু গ্যাস" এর তাপমাত্রা হবে সর্বোচ্চ ১২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড যা অন্যান্য সমসাময়িক প্রযুক্তি থেকে অনেক কম। পরিবেশ অধিদপ্তরের মান অনুযায়ী চিমনির মুখ ২৭৫ মিটার উচ্চতায় রাখার কারণে এই ফ্লু গ্যাসকে সহজেই বায়ুমন্ডলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যেহেতু প্রস্তাবিত প্রকল্পের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ভৌগলিক প্রতিবন্ধক নেই, যেমন পাহাড়-পর্বত, উঁচু দালান বা ঘনবসতি, সেহেতু উষ্ণতা আটকা পরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।

প্রশ্ন: ৩ ক) মজুদ করে রাখা কয়লা থেকে সূক্ষ্ম চূর্ণ (কোল ডাস্ট) কি আশেপাশের এলাকায় বা স্থানীয় জনসাধারণ পর্যন্ত পৌছাবে? খ) কয়লা পরিবহনের সময় সূক্ষ্ম চূর্ণ (কোল ডাস্ট) কি হাওয়ায় মিশে সুন্দরবনের বাতাস দূষিত করবে?
উত্তর: না। ·
প্রস্তাবিত প্রকল্পের বিভিন্ন স্তরে (যেমন কয়লার টার্মিনাল, স্টক ইয়ার্ড, মূল প্রকল্প ও অ্যাশ ডিসপোজল পন্ড) অত্যাধুনিক 'ডাস্ট সাপ্রেশন সিস্টেম' থাকবে যা সয়ংক্রিয় সেন্সর এর মাধ্যমে বাতাসে ছাই এর পরিমান তদারক এবং নিয়ন্ত্রণ করবে। কনভেয়র বেল্ট (যা দ্বারা কয়লা প্রকল্পের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় স্থানান্তর করা হবে) সম্পূর্ণভাবে আবৃত বা ঢাকা থাকবে। স্থানান্তরের জায়গাগুলোতে "Water Sprinkler" (পানি ছিটানোর যন্ত্র) থাকবে। "ওয়াটার স্প্রিন্কলার" যখনই দরকার তখনই নিয়ন্ত্রণ করার স্বার্থে "ওয়াটার স্প্রিন্কলার জেট" থাকবে। যেখানে কয়লার মজুদ রাখা হবে (স্টক ইয়ার্ড), সেই পুরো এলাকা সয়ংক্রিয় আর্দ্রতা সেন্সর সম্বলিত "ওয়াটার স্প্রিন্কলার" এর আওতায় থাকবে। সুতরাং, জাহাজের খোল থেকে, বা কয়লা নামানোর সময়, বা মজুদ থেকে অথবা কনভেয়র বেল্ট থেকে সূক্ষ্ম চূর্ণ আশেপাশের এলাকায় বা সুন্দরবনে পৌছানোর সম্ভবনা নেই বললেই চলে।
প্রশ্ন ৪- বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ছাই আশেপাশের জনবসতি কিংবা সুন্দরবনের বায়ু দুষিত করবে কি?
উত্তর- না।
শক্তিশালী Electrostatic Precipitator (ESP) যন্ত্র লাগানো হবে যার ফলে উৎপন্ন ফ্লাই অ্যাশ এর ৯৯.৯% গ্যাসীয় জ্বালানী থেকে শোষণ করে নেয়া যাবে। এই ESP ২৭৫ মিটার উঁচু চিমনি থেকে ফ্লাই অ্যাশ নির্গমন ১০০ মাইক্রোগ্রাম/ Nm³ এ কমিয়ে আনবে। এই মাত্রা ECR 1997 এর নির্ধারিত মানদন্ড- ২০০ মাইক্রোগ্রাম/Nm³ এর চেয়ে অনেক কম। একইভাবে চুল্লীর তলায় জমা হওয়া ছাইও (Bottom ash) স্বয়ংক্রিয় অ্যাশ কালেকশন এন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের দ্বারা সরিয়ে ফেলা হবে।
প্রশ্ন ৫- সালফার ডাই অক্সাইড এবং নাইট্রাস অক্সাইড নির্গমন কি আশেপাশের বায়ুর স্বাভাবিক গুনাগুণ নষ্ট করবে?
উত্তর- না। সকল গ্যাসের নির্গমন হার পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্ব ব্যাঙ্কের নির্ধারিত মানদণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে সালফার ডাই অক্সাইড ও নাইট্রাস অক্সাইডের নির্গমন হার হবে যথাক্রমে- ৮১৯ g/s এবং ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম/Nm³। যেখানে বিশ্বব্যাঙ্কের মানদন্ড অনুযায়ী ১৫৯৭g/s এবং ৭৫০ মাইক্রোগ্রাম/Nm³ পর্যন্ত নিরাপদ। বিদ্যুতকেন্দ্র পরিবেষ্টনকারী পরিবেশের বায়ুর ওপর এই গ্যাসের প্রভাব হবে নগণ্য। এছাড়া বছরের বেশিরভাগ সময় বাতাসের প্রবাহ থাকে উত্তরমুখী, যেখানে সুন্দরবন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। তাই সুন্দরবনে বায়ু দূষণের সম্ভাবনাও খুবই কম।
প্রশ্ন ৬- নির্গত ছাই কি আমাদের দেশে কোনও কাজে ব্যাবহার করা যাবে? উত্তর- হ্যা। বর্তমানে আমাদের দেশের সিমেন্ট কারখানা গুলোতে প্রতিবছর ২.১ মিলিয়ন টন ছাই প্রয়োজন হয়। ২০২০ সাল নাগাদ এই চাহিদা দাঁড়াবে ৩.৭৫ মিলিয়ন টন। প্রস্তাবিত বিদ্যুত কেন্দ্র হতে প্রতি বছর উৎপাদিত ছাইয়ের অনুমিত পরিমান ০.৭৫ মিলিয়ন টন। তাই উপজাত ছাই সহজেই সিমেন্ট কারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যাবহার করা যাবে। এছাড়াও এই ছাই সার হিসেবে, মাটি ও বালির সাথে মিশিয়ে বাঁধ তৈরী, মাটি ভরাট ও ইট তৈরিতে কাজে লাগানো সম্ভব।
৭- গ্লোবাল ওয়ারমিং বা বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কি ভুমিকা হবে?
উত্তর: প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে সুপারক্রিটিকাল বয়লার প্রযুক্তির ব্যাবহার করা হবে যেখানে পানিকে উত্তপ্ত করে বিদ্যুৎ উপাদন করা হবে। এ প্রযুক্তি ব্যাবহারের ফলে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বছরে প্রায় ৭.৯ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত করবে, যা প্রচলিত কয়লাভিত্তিক প্রযুক্তির বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে ১০ শতাংশ কম। প্রস্তাবিত বিদ্যুতকেন্দের কার্যক্রম পরিচালনার কারনে জাতীয় কার্বন নির্গমনের বৃদ্ধির পরিমাণ অতি সামান্য হবে বলে নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলস্বরূপ প্রচলিত কয়লাচালিত তাপীয় বিদ্যুতকেন্দ্র অপেক্ষা এ বিদ্যুতকেন্দ্রের আবহাওয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে কম ভূমিকা থাকবে। তবে, কার্বন নির্গমনের ক্ষতিপূরণস্বরূপ সবুজ বেষ্টনী (Green belt) স্থাপন করা হবে, অর্থাৎ বিদ্যুতকেন্দ্রের চারপাশে বন, খোলা মাঠ, গাছপালার জন্য নির্দিষ্ট জমির ব্যাবস্থা করা হবে।
৮- বিদ্যুতকেন্দ্রটি কি ভারী ধাতু নির্গমন করবে?
উত্তর: না। কয়লায় ভারী ধাতুর ঘনত্ব খুবই সামান্য।
ভারী ধাতুর মৌলিক অংশ কয়লার ছাইয়ের মধ্যেই রয়ে যাবে , পরবর্তীতে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেই ছাই নিয়ন্ত্রন ও নিষ্কাশনের ব্যাবস্থা করা হবে। সুতরাং, ভারী ধাতু দ্বারা পরিবেশ দূষণের সম্ভাবনা অনেক কম।
৯- বিদ্যুতকেন্দ্রটির জন্য কি এ্যাসিড রেইন বা ক্ষারীয় বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে? উত্তর: এ্যাসিড রেইনের কোন সম্ভাবনা নেই। যেহেতু প্ল্যান্টটির চারপাশে ২০ কিমি পর্যন্ত কোন ভূখন্ডের প্রভাব এবং বিল্ডিং, জনবহুল শহরের মত বাধা নেই তাই জ্বালানী ও অন্যান্য কার্য পরিচালনা করার জন্য সৃষ্ট দূষিত ধোয়া (এসিড বৃষ্টি ঘটাতে সক্ষম এমন দূষিত পদার্থ) সহজেই অপসারণ করা যাবে।
১০- মইদারা ও পশুর নদী ভরাট বা দখলের কোন পরিকল্পনা কি আছে? উত্তর: না। উল্লেখিত ২টি নদীর একটিরও কোন অংশ দখল করা হবে না। বরং, পশুর নদী ড্রেজিং-এর মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি করে নদীপথে যাতায়াত ব্যাবস্থা উন্নয়নের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ১১- সুন্দরবনে/ আকরাম পয়েন্টে কয়লার মজুতঘর বানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে?
উত্তর: না।
সুন্দরবনের কোন এলাকাতে এবং ইকলজিক্যালি ক্রিটিকাল এরিয়াতে কয়লার মজুতঘর স্থাপন করা হবে না। কয়লার মজুতঘর প্ল্যান্ট সাইটে নির্মাণ করা হবে।
১২- সুন্দরবনের মাঝ দিয়ে কয়লা পরিবহন কি সুন্দরবনের ক্ষতি করবে?
উত্তর: না।
কয়লা পরিবহন করা হবে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের বর্তমানে প্রচলিত (existing) নৌপথ দিয়ে। কয়লা পরিবহনের উদ্দেশ্যে সপ্তাহে শুধুমাত্র একটি বড় জাহাজ (Mother vessel) আকরাম পয়েন্টে আসবে এবং প্রকল্পের নির্ধারিত স্থানে মালবাহী বড় নৌকার সাহায্যে কয়লা খালাস করবে যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (ECR) ১৯৯৭, আন্তর্জাতিক নৌ-সংস্থা (IMO) কনভেনশন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।
১৩. পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে উত্তপ্ত পানি নির্গত হবে কি ?
উত্তর: না।
বিদ্যুৎ প্রকল্পের নকশা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে উত্তপ পানি বন্ধ থাকা অবস্থায় চক্রাকারে ঘুরে ক্রমান্বয়ে ঠান্ডা হবার পর নির্গমন হবে ।এবং কোনভাবেই উত্তপ্ত পানি সরাসরি নদীতে নির্গত হবেনা ।
১৪. এই প্রকল্পের কারণে পাশুর নদীর পানি দুষিত হবার সম্ভাবনা আছে কি ?
উত্তর : পাওয়ার প্ল্যান্টের করনে পাশুর নদীর পানির গুণগত মান পরিবর্তিত হবেনা, কারন- *একটি সমন্বিত পানি এবং বর্জ্য পানি শোধনাগার প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে । * ময়লা পানি পুনর্ব্যাবহারের (reusing) লক্ষে পানি বিশুদ্ধকরণ (recycling) প্রক্রিয়ার বাস্তবায়ন হবে । * প্রকল্পটি এমনভাবে সাজানো হবে যাতে এখান থেকে কোনো বর্জ্য পদার্থ এবং ময়লা পানি অব্যাবস্থাপনায় নির্গত না হয় । * কোনভাবেই উত্তপ্ত পানি সরাসরি নদীতে নির্গত হবেনা ।
১৫. ঐখানে কি কোনো কালো ধোঁয়ার সৃষ্টি হবে যার ফলে বায়ুমন্ডল এবং সুন্দরবনের উপর প্রভাব পড়বে ?
উত্তর : কালো ধোঁয়া এবং বাষ্প তৈরির সম্ভাবনা খুবই কম, কেননা- *এটি ECA ১৯৯৫ এর দূষণকারী কেন্দ্রীকরণ মান নিশ্চিত করে । * জ্বালানি গ্যাস বায়ুমন্ডলের স্তর হতে ২৭৫ মিটার উপর থেকে নির্গত হবে যা কালো ধোঁয়াশা কাটাতে সহায়ক * প্রকল্পের আশপাশে কোনো ভৌগলিক বাধা নেই যেমন- পাহাড়, ঘনবসতি শহর যা প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। * ঘুর্নিঝড় এবং নিম্নচাপ (সাধারনত যে অঞ্চলে হয় ) এর কারণে দীর্ঘমেয়াদে দূষিত পদার্থ আটকে গিয়ে বা অন্য কোন উপায়ে বায়ুদূষণ ঘটাতে সক্ষম হবে না।
১৬.পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কি রপ্তানী হবে ?
উত্তর : না, তবে ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে এবং তখন বিদ্যুৎ রপ্তানি করা যাবে ।

(মাসুদ সজীব)
তথ্যসূত্র: GOVERNMENT OF THE PEOPLE’S REPUBLIC OF BANGLADESH MINISTRY OF POWER, ENERGY & MINERAL RESOURCES POWER DIVISION BANGLADESH POWER DEVELOPMENT BOARD Final Report on Environmental Impact Assessment of 2x (500-660) MW Coal Based Thermal Power Plant to be Constructed at the Location of Khulna Dhaka

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমেই বলে নেই যেকোন বিদুৎ কেন্দ্র পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কতটা ক্ষতি সাধন করে? নূন্যতম ছাড় দিয়ে আমাদের কে আমাদের চাহিদা মিটাতে হবে। এই নীতিতেই সারা বিশ্বে বিদুৎ কেন্দ্রগুলো স্থাপিত হয়েছে, হচ্ছে। যারা বিভিন্ন পত্রিকায়, ব্লগে, কিংবা ফেসবুকে বলে বেড়াচ্ছেন যে রামপালে বিদুৎ কেন্দ্র করলে সুন্দর বন ধ্বংস হয়ে যাবে তাদের সাথে আমি একমত নই. আসলে ঐকমত হতে হলে আমাকে আগে জানতে হবে পরিবেশ বিজ্ঞান, আমাদের আইন এবং সারা বিশ্বের বিদুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া. শুধু আবেগ দিয়ে বললে হবে না সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে. যারা লং মার্চ করছে কিংবা পত্রপত্রিকায় সুন্দরবনের জন্য মায়া কান্না করছে তাদের কিছু অসাধারন পর্যবেক্ষন কিংবা অভিযোগ আছে.তার মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু নিম্নরুপ:
১. রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত সালফার এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ই আই এ রিপোর্টে ধরা হয়েছে ৫৩.৪ মাইক্রোগ্রাম/কিউবিক মিটার। কিন্তু এটার গ্রহণযোগ্য মাত্রা বনাঞ্চলের জন্য ৩০ মাইক্রোগ্রাম/কিউবিক মিটার। (পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৭) এর ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে, ধ্বংস হবে সুন্দর বন.
২. ভারত কেন তাদের দেশে সুন্দর বনে ২৫ কি.মি. এর মাঝে বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে দিলো না? অথচ আমাদের দেশে ঠিকি ১৪ কি.মি. এর মাঝে সেটা করতে হলো?
৩. পশুর নদীর থেকে যখন মিষ্টি পানি উত্তোলন করবে, শুষ্ক মৌসুমে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি নদী দিয়ে অনেক উত্তরে উঠে আসবে। এছাড়া নদীতে ড্রেজিং করার কারনে নদীর পরিবেশ নষ্ট হবে.
৪. বিদুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত ash বায়ুতে ভারী ধাতু যেমন ক্যাড়িয়াম,আর্সেনিক, টিন, প্রভৃতির পরিমান বাড়িয়ে দিবে. যার ফলে পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে. আমেরিকাতে ৪০টি বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্রকে চিন্হিত করা হয়েছে এই অভিযোগে.

ব্যাখা/উত্তর
১. বলা হচ্ছে সালফার এবং নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের গ্রহণযোগ্য মাত্রা বনাঞ্চলের জন্য ৩০ মাইক্রোগ্রাম/কিউবিক মিটার। (পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৭). এই তথ্যটা যে কতটা হাস্যকর আর কতোটা অসৎ উদ্দেশের সেটা একটু পড়ার ক্ষমতা থাকলেই জানা যায়. http://www.google.com.bd/url?sa=t&rct=j&q=&esrc=s&source=web&cd=1&cad=rja&ved=0CCgQFjAA&url=http%3A%2F%2Fwww.moef.gov.bd%2Fhtml%2Flaws%2Fenv_law%2F178-189.pdf&ei=0v5MUrO2AomVrAeWyoCYBA&usg=AFQjCNGCW4BKo5oAln9DGDTcKwxUHpYLZg
এই লিংকে গিয়ে ২০৪ নং পৃষ্ঠায় গ্রহনযোগ্য মাত্রার সীমা উল্লেখ আছে. কষ্ট কম করার জন্যে আমি পৃষ্ঠা নাম্বার ও বলে দিলাম.সেখানে ৩০ মাইক্রোগ্রাম/কিউবিক মিটার দেখে ইউরেকা বলে লাফিয়ে উঠার মতো কিছু নেই. ৩০ লিমিট আছে কিন্তু সেটা সেনসিটিভ এলাকার জন্যে. তাহলে এখন আপনাকে জানতে হবে পরিবেশ সংরক্ষন আইন ৯৭ এ সেনসিটিভ এলাকা বলতে কাকে বুঝায়. কষ্ট করতে হবে না, নিচে নোটে সেনসিটিভ এরিয়ার সংজ্ঞা দেওয়া আছে. মিলিয়ে দেখুন, সেই সংজ্ঞা মতে সুন্দরবন সেনসিটিভ এরিয়াতে কখনো পড়ে না. সেখানে উল্লেখ করা আছে At national level, sensitive area includes monuments, health center, hospital, archeological site, educational institution, and government designated areas রামপাল ক্রিটিকাল এড়িয়ার বাহিরেই আছে. রামপাল সেন্সেটিভ এরিয়ার (ক্রিটিকাল এড়িয়ার ৪ কিমি) বাহিরেই আছে
সেন্সেটিভ এরিয়ার একটু বিশধ আমার কাছে আছে
To maintain concentration of Sulfur in ambient air below the MoEF standard (80 µg/Nm3 and 30 µg/Nm3 for Sundarbans world Heritage
কি বুঝলেন, ৩০ হচ্ছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্টান্ডার্ড আর হেরিটেজ সাইট থেকে রামপাল ৬৯/৭০ কিমি দূরে, আর কোন কনফিঊশন আছে ?

২. এটা হলো সেই পুরোনো ভারত বিরোধী নীতি. যাইহোক ব্যাখাটা দেই, ভারতের পরিবেশ সংরক্ষন আইনে আছে ২৫ কিলোমিটারের বাইরে করতে হবে তাই তারা অনুমতি দেয়না বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে. কিন্তু আমাদের পরিবেশ সংরক্ষন ৯৭ আইনে স্পষ্ট করে বলা আছে বন থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বিদুৎ কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে. তাই দুই দেশে এমন ব্যবধান. বিষয়টা হচ্ছে আইনের. সব দেশে পরিবেশের জন্যে একি আইন হয় না.পরিবেশ সংরক্ষন আইনটা একটু কষ্ট করে পড়ে দেখলে বুঝতে পারবেন কি করে ভুল তথ্য দিয়ে আপনার মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খাওয়া হচ্ছে.

৩. নদীর পানি নিয়ে যে কথা বলা হচ্ছে সেটাই সবচেয় সস্তা অভিযোগ.কারণ আপনাকে জানতে হবে কতটুকু নদীর পানি ব্যবহার করবে রামপাল. শুষ্ক মৌসুমে পশুর নদীর ১% পানি ব্যবহার করা হবে.(http://www.ucsusa.org/clean_energy/our-energy-choices/energy-and-water-use/water-energy-electricity-cooling-power-plant.html) সব বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্রেই পানি শোধনাঘার থাকে. ব্যবহৃত পানিকে শীতল করে তারপর সেটাকে আবার নদীতে ছেড়ে দেওয়া হয়. এই ১% পানি কতটুকু লবনাক্ততা বাড়িয়ে দিবে একটু ভেবে দেখেন.আর বর্ষায় সেটার পরিমান আরো কম. আর ড্রেজিং করলে নদীর পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যায় যারা বলে তারা আসলে জলজ বাস্তুসংস্থান কি বুঝে না.ড্রেজিং করার উদ্দেশ্য হলো নদীর নাব্যতা বাড়ানো, নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি. এটা ‍বুঝেও যারা বুঝেনা তাদের কে আসলে বুঝানো অনেক কঠিন.

৪. আমাদের সব কিছুতেই আমেরিকাকে উদাহারন হিসাবে টানতে হয়. যাক ভালো, আমেরিকার সাথে তুলনা করে যদি শান্তি পাওয়া যায়. আপনার কথা সঠিক, ৪০টি বিদুৎ কেন্দ্র পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক হিসাবে চিন্হিত হয়েছে. এখন আসুন জেনে নেই তাদের আর আমাদের রামপালের মাঝে পার্থক্য কোথায়. কেন বলছি রামপাল ওই পরিমান দূষন করবে না. প্রথম কথা হলো ওরা ব্যবহার করছে 2nd generation প্রযুক্তি আর রামপাল হবে 3rd generation প্রযুক্তির. আপনার কি মনে হয় যে ২ ক্লাস প্রযুক্তির পাশে মানুষ বাচতে পারে সেখানে বন বাচবে না, আম্রিকার পরিবেশবীদরা কি ফিডার খায়? কেন বললাম মানুষ বাচতে পারে? কারণ আমার জানামতে ১৫ বিশ্ববিদ্যালয় আছে আমেরিকায় যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতর কয়লা ভিত্তিক বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্র. (তার কিছু নাম দিলাম কষ্ট করে গুগলে সার্চ দিয়ে সত্যটা যাচাই কইরেন. 1. Ben J. Atkinson Power Plant is a coal-fired power station owned and operated by the University of Alaska on UA-Fairbanks campus in Fairbanks, Alaska. 2. Iowa State University Power Plant is a coal-fired power station owned and operated by Iowa State University on Iowa State campus in Ames, Iowa. The plant uses 155,000 tons of coal and generates 28,000 tons of coal ash per year and capacity is 46 MW 3. T.B. Simon Power Plant at Michigan State University campus is a coal-fired power station owned and operated by Michigan State University on MSU campus in East Lansing, Michigan. The T.B. Simon Power Plant is among the 500 largest coal plants in the United States. Rated at 61 megawatts. The plant burns 250,000 tons of coal a year, making it the largest on-campus coal-burning plant in the country. 4. Miami University's Steam Plant in Oxford, Ohio, is located behind Peabody Hall on Western campus, and supplies the University with all of its steam through burning coal. 5. Abbott Power Plant is a coal-fired power station owned and operated by the University of Illinois, UI campus in Champaign, Illinois was built in 1941 and capacity is 85 MW 6. Purdue University Wade Utility Plant is a coal-fired power station owned and operated by Purdue University on Purdue campus in West Lafayette, Indiana. The Wade Power Plant consisting of two coal units, one oil/gas-fired unit, and one fluidized-bed coal boiler, also called a "clean coal" unit. The plant burns more than 150,000 tons of Indiana coal per year) এটা বাদেও ওরা ব্যবহার করছে অপরিশোধিত কয়লা আর আমরা করবো পরিশোধিত কয়লা. এই প্রজেক্টে যে ESP ব্যাবহার করা হবে সেটা দুনিয়ার সেরা হবে এইটা নিশ্চিত থাকেন, ফ্লাই এস নিয়া ১০০% দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকেন.মজার ব্যাপার হলো এই প্রযুক্তির একটা দেশিয় ভার্সন পর্যন্ত আছে, যার দ্বারা ইটকলের চিমনির কার্বন ডাইড অক্সাইড ৯৯ ভাগ ধরে ফেলা যায়, মাত্র ৪০ হাজার টাকায় ওরা ঐ প্রযুক্তি যেকোন চিমনিতে বসিয়ে দেয়. তাহলে ESP কতোটা পরিশোধিত করবে এবার বুঝতে পারছেন.

কয়লা ভিত্তিক কেন্দ্র তো এইটা দুনিয়ার প্রথম না , যুক্তরাস্ট্রের রাজধানী , ওয়াসিংটন DC নগরী তেও ১৯১০ সাল থেকে কয়লা ভিত্তিক "Capitol Power Plant" বিদ্যুত তৈরী ও সরবরাহ করে আসছে! যুক্তরাস্ট্রের রাজধানীর বিদ্যুত কেন্দ্রে তেল ও গ্যাস জ্বালানী ব্যবহার এর দিকে ঝুকলেও ২০০৭ সালেও রাজধানীর বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্ধেক জ্বালানী ছিল কয়লা!
এখনো দুনিয়াতে ২৮% বিদ্যুট এই উপায়ে উতপাদন হয়, তার অসংখ্য কেন্দ্র আছে বনভুমির পাশে, আপনি ওইগুলা থেকে ডাটা নেন.

অনেক বড় লেখা লিখে ফেললাম. কষ্ট করে এতোটুকু পড়ে আসার জন্যে ধন্যবাদ. আশা করি বুঝতে পারবেন কিভাবে তথ্যের ফাঁকি দিয়ে আমাদেরে দেশের কিছু মানুষকে বোকা বানিয়ে কারা এই ঢং মার্চ পরিচালনা করছে.ভালোথাকবেন,সত্যে সাথে থাকবেন. জয় হোক সত্যের.

মাসুদ সজীব

অজানা এর ছবি

vv

অতিথি লেখক এর ছবি

১) EIA report by Bangladesh DoE states that a radius of 10 kilometres from the Sunderbans is considered the Environmentally Critical Area (ECA) and the proposed spot for the plant is 14 kilometres away from the forest, making the plant not risky as it is 4 kilometres away from the Sunderbans’ ECA. But our findings through Geographical Information System (GIS) software exhibit that this distance is between 9 and 13 kilometres.

[Photo 2: Location map of Rampal Coal Based Thermal Electricity Plant showing distance from Sundarbans] Courtesy: anonymous blog
আমার চাকরিসুত্রে নিয়মিত gis use করতে হয়। যারা use করেন তারা রামপালের location shape google earth থেকে নিয়ে gis এ মিলিয়ে দেখতে পারেন। কারো কথা শোনার দরকার হবে না। কেউ বলছেন ৬৯ কিমি...এটা কি সুন্দরবনের centre থেকে? Kindly asking them, only centre of the forest would be effected? Not the peripheral ones?
আর যারা বলছেন ১৪ কিমি আর ৯/১০/১৪/ ১৫ এর difference নিয়ে গবেষণা করছেন তারা মনে হয় safety factor শব্দটা কখনো শোনেননি। To calculate impact assessment always a safety factor is assumed to ensure the reliability of assessment...this kind of marginal distance is never accepted. Finally air pollutants will disperse according to its physical characteristics…not according to Regulatory laws of BD or India…সব দেশে আইন এক হয় না কিন্তু green house gas একই emitted হয় আর একইভাবে বনকে effect করে। So whoever maintains more safety during law establishment, they are the gainer.

অতিথি লেখক এর ছবি

২) আপনার ২০৪ নং পাতা পড়ে বলছি, আপনি কি ২ নং নেটটি পড়েননি? না পড়লে আবার দেখুন,
Industrial units located in areas not designated as industrial areas shall not discharge pollutants which may contribute to exceeding the standard for air surrounding the areas specified at Sl. nos. c and d above. C for residential & Rural and D for sensitive area.
আপনার কথামত মানলাম সুন্দরবন sensitive area না ( যদিও Wikipedia বলছে largest single block of tidal halophytic mangrove forest in the world… একমাত্র সম্পদ তাও তাকে sensitive হতে হলে ECR দ্বারা certified হতে হবে!!!) তাহলেও industrial power plant তাকে c & d দুটোই মানতে হবে। তার মানে ৩০ ও ৮০ দুটো criteria ই satisfy করতে হবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

৩) বলা হচ্ছে, পশুর নদী থেকে ১% water withdrawal হবে...১% বলতে কি বুঝানো হচ্ছে? Heated water will never be directly discharged into the river …. This has to be implemented must because temperature increase in water means oxygen content of water will reduce drastically on which all the aquatic plants & animals survive. The main purpose of this water to cool the plant so that 1% water you are talking, will never get back to source due to evaporation. As we know the salinity intrusion is a threatening problem in our southern region, with time, withdrawal of water will increase due to high salinity and also due to tidal effects. ভাটার সময় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে অথবা জোয়ারের সময় এত বেশি withdrawal হবে যে নদীর তলদেশে salt accumulation হবে যা কিনা প্রাণীদের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি সঠিক জায়গায় হাত দিয়েছেন. আমাদের আইনের মাঝে শুভংকরের ফাঁকি রয়ে গেছে.সেই ফাঁকটাকেই কাজে লাগিয়েছে সরকার. সব দেশের পরিবেশ আইন এক হয় না বলেছি ভিন্নতা আছে বলে, কিন্তু সত্যিকার অর্থে দূষিত পদার্থ সবখানেই সমভাবে পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্থ করে. কিন্তু আমাদের পরিবেশ সংরক্ষন আইনে সেটা মানা হয়নি. তাই সংশোধন হতে পারে এই আইন. সেই আইন যখন পাশ হলো কই ছিলো পরিবেশবিদ রা? কেন তারা দেখেনি এমন অসমান্জস্য?

কোন এরিয়া কিসের আওতায় পড়বে সেটা নির্ধারন করবে কে? যখন আপনি পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৭ মানছেন সেখানে উইকিপিড়িয়া আসবে না. কারন আমাদের আইনেই সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে কোন এলাকা কিসের মাঝে পড়বে. আপনি বার বার পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৭ এর রেফারেন্স দিবেন অথচ যখনি কিছু আপনার মতের সাথে মিলবে না তখন উইকিপিড়িয়া কিংবা অন্যখানে যাবেন এটাতো গ্রহনযোগ্য নয়.

মূল সমস্যা আমাদের পরিবেশ সংরক্ষন ৯৭ আইনে. এটাকে সংশোধন না করে আপনি রামপাল বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন আইনগত ভাবে কখনো বন্ধ করতে পারবেন না. আমি প্রথমেই বলছি এটা পরিবেশের ক্ষতি সাধন করবে. কিন্তু যেভাবে বলা হচ্ছে ঠিক সেইভাবে নয়. আমাদের আন্দোলকারীদের উচিত ছিলো এই প্রকল্পকে রামপাল থেকে পরিবেশগত ভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ অন্যত্র সরিয়ে নিতে নতুন এলাকার নাম প্রস্তাব করা. কিন্তু কেউ সেটা করেনি, এখনো করছে না, কেন? আপনি সরকারকে কিভাব আটকাবেন ?সরকারতো আইনের মাঝেই আছে? দেশীয় আইনে সরকারকে আটকাতে হবে, উইকিপিড়িয়া দিয়ে পারবেন না ভাই.

আমাদের আসল করণীয়;
পুরোনে সেই মান্দত্বা আমলের আইন সংশোধন করা. যেখানে সুন্দরবনের পরিবেশ আর জীববৈচিত্রের জন্যে আলাদা একটা আইন থাকবে, কারণ সুন্দর বন একটাই. আমরা চাইলেই শত শত মাইল সবুজ বনায়ন তৈরী করতে পারবো কিন্তু সুন্দরবন নয়. যে সমস্ত উপদেষ্টা বলেন যে আমরা কৃত্রিম ভাবে সুন্দরবন তৈরী করবো তারা আসলে অতি উচ্চ মর্গের জ্ঞানশূণ্য মানুষ. ভালোথাকবেন

মাসুদ সজীব

Nat এর ছবি

২ নং ব্রাকেটের লেখাটা বাদ দিয়ে পরেন। as an industrial area Rampal has to satisfy both criteria of distance 30 & 80 km according to ECR 97. আপুত এই সিম্প্ল কথাটাই বল্লেন সুন্দরবন একটাই, ক্ষতি হবে সব্বাই বুঝ্তাচি তারপর ও ।।।।।।।

আয়নামতি এর ছবি

ধন্যবাদ মাসুদ সজীব এবং অন্যন্য আলোচকদের যারা বিস্তারিত তথ্য যোগ করেছেন। যারা আস্বস্ত করছেন রামপাল সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না, তাদের আস্বস্ত তথ্যে সুন্দরবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে আর কোন সমস্যাই হতো না। কিন্তু ততটা নিশ্চিন্ত সুন্দরবন হতে পারবে কিনা সেটা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরো এক দশক।

রামপালকে যারা রাজনীতির ইস্যু করে আমি তাদের সাথে একমত নই। আবার রামপাল প্রজেক্ট বিরোধী আন্দোলনকে শুধু ভারত বিরোধীতা মনে করে যারা রামপাল প্রজেক্টকে পরিবেশবান্ধব বলে তাদের সাথেও একমত হতে পারি না। এটা রাজনীতির বিষয় না। এটা একটা দেশের ভৌগলিক পরিবেশ রক্ষার বিষয়। একদল বলছে কোন অসুবিধা হবে না, আরেকদল বলছে সুন্দরবন সম্পূর্ন ধ্বংস হয়ে যাবে - এই দুই দলের মাঝখানে একটা খালি জায়গা আছে আমাদের মতো কিছু বোকা মানুষ সেই খালি জায়গাটায় দাঁড়িয়ে গলা ফাটাই। আমাদের গলা শুধু রামপালে নিবদ্ধ থাকবে তা হতে পারে না। আমাদের কন্ঠ ছাড়তে হবে এরকম যে কোন জীববৈচিত্র খাদক প্রকল্পের বিরুদ্ধে।

আরেকটি বিদ্যুত প্রকল্প নিয়ে সামান্য যোগ করছি। সেদিন জেনে অবাক হয়েছি রামপাল নিয়ে যতটা হৈ চৈ হচ্ছে রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্র নিয়ে সেরকম কিছুই হচ্ছে না। অথচ রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রও বাংলাদেশের জন্য মুর্তিমান বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের যুক্তিতে সরকার বলছে,
"বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ ও গ্যাস এবং ফার্নেস ওয়েল ভিত্তিক কেন্দ্রের তুলনায় এক-পঞ্চমাংশ খরচ কম হবে। তিন টন কয়লা পুড়িয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তা কেবল ১ গ্রাম ইউরেনিয়াম পুড়িয়ে পাওয়া সম্ভব। যেহেতু উৎপাদন খরচ কম তাই এ কেন্দ্রে বিনিয়োগকৃত অর্থ ১৫ বছরের মধ্যেই উঠিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। দেশের জ্বালানি সংকট নিরসনে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিকল্প নেই। রাশিয়ান ফেডারেশন দ্য স্টেট এটোমিক এনার্জি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক সের্গেই ভি কিরিয়েনস্কোও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিকল্প নেই। রোসাটম এ পর্যন্ত ২৯টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে। এখানকার কেন্দ্রগুলো ডিজাইনে নিরাপত্তাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হবে। প্রকল্পটিতে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বলয় গড়ে তোলা হবে। এ কেন্দ্রটি কোন দুর্ঘটনার মুখোমুখি হলে অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে ৪০ হাজার বিমানের যে শক্তি সেই শক্তির সমান শক্তি আঘাত করলেও এর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এছাড়া সবচেয়ে ক্ষতিকর বর্জ্য ফিরিয়ে নেয়ার অঙ্গীকার করা হয়েছে রোসাটমের পক্ষ থেকে। ফকুশিমা দুর্ঘটনার ব্যাখ্যায় রোসাটম বলেছে, ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৪০ বছরের আগের প্রযুক্তিতে নির্মিত। এখন প্রযুক্তি অনেক দূর এগিয়েছে। সেই কারণেই রূপপুর অনেক বেশি ঝুঁকিমুক্ত।"

সরকারের এই আশ্বস্ততার বিপরীতে শোনা যাচ্ছে-
"- বাংলাদেশ এমনিতেই জলবায়ু পরিবর্তনে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে রয়েছে। তারওপর এ দেশে যদি বড়মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে তাহলে রূপপুর থেকে যে ভয়াবহতা ছড়াবে তা কল্পনাকে হার মানাবে। এলাকাটা ভূমিকম্পপ্রবণ। রূপপুরের খুব নিকটেই মধুপুর ফাটল থাকায় এ আশঙ্কাকে আরও উসকে দিবে।
- রূপপুরে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সমপরিমাণ টাকা দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপন করা গেলে চারগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। যা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারবে অনায়াসে।

- ১ গ্রাম ইউরেনিয়াম পুড়িয়ে যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে সমপরিমাণ বিদ্যুৎ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পেতে হলে ৪ লাখ টন কয়লা পুড়তে হবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে কার্বন নিঃসরণ হয় না। কিন্তু পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে যে বর্জ্য বের হয় তা ব্যবস্থাপনা শুধু জটিলই নয় দুরূহ ব্যাপার। কারণ পারমাণবিক বর্জ্য দুই-তিনশ’ বছরেও এর বিনাশ ঘটে না। যে জায়গায় এ বর্জ্য পড়বে সে স্থানসহ আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা দুই-তিনশ’ বছরের জন্য বিপজ্জনক বলে বিবেচিত হবে।"

আমেরিকার উদাহরন টানতে হচ্ছে প্রসঙ্গক্রমে। আমেরিকার মতো দেশ পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। ১৯৭৯ সালে পেনসিলভানিয়ার পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের (http://en.wikipedia.org/wiki/Three_Mile_Island_accident) এক দুর্ঘটনার পর থেকে সেখানে নতুন পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল দীর্ঘ তিন দশকের জন্য। আর আমরা সেরকম একটা বিপজ্জনক প্রকল্প হাতে নিয়েছি যার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষমতা আদৌ আমাদের আছে কিনা জানা নেই। এবছর ফেব্রুয়ারীতে জামাতী তাণ্ডবে চাপাইনবাবগঞ্জে পল্লীবিদ্যুত পুড়িয়ে দেবার মতো চরম হটকারী ঘটনা যদি রূপপুরেও কোনদিন ঘটিয়ে দেয়, তাহলে কোথায় পালাবে এই ঘনবসতির ছোট্ট দেশের মানুষ।

দেশের বিপুল পরিমান বিদ্যুত ঘাটতি মেটাতে আমরা একের পর এক বিপজ্জনক প্রকল্প হাতে নিয়ে কোথায় পৌঁছাতে যাচ্ছি?

অনেক কথা হলো। আসুন এবার এট্টু গান শুনি :

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি একবার এই প্রসঙ্গটা একবার আনতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটা আনলে কেউ কেউ আমাকে কোন দলের দালালের ট্যাগ মারতো হয়তো। কারণ রুপপুর এর চেয়েও ভয়ংকর একটা প্রজেক্ট কিন্তু সেটা নিয়ে বাম দলগুলোর কোন আওয়াজ নেই। বাম দলগুলোর এমন দ্বিমুখী নীতি যারা দেশের প্রাকৃতিক আর খনিজ সম্পদ নিয়ে একটু তথ্যাদি ঘাটে তারে বলতে পারবে। রামপাল বিদুৎকেন্দ্র অবশ্যই সুন্দর বনের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্রকে হুমকির মুখে ফেলবে তবে সেটা দীর্ঘ একটা সময়ের মাঝে। কিন্তু সরকার আইনের সীমাবদ্ধতাকে কাজে লাগিয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করেছে। আইনগত ভাবে রামপাল বিদুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকারের কোন ত্রুটি নেই। সরকারকে কেও আটকাতে পারবে না আইনগত দিক থেকে। কিন্তু শুধু আইন দিয়ে পরিবেশ সংরক্ষন করা যায়না। আইনের পাশাপাশি সেফটি নিয়ে ও ভাবতে হয়।

সেফটি বিষয় নিয়ে উপরে একজন ভাই বলেছিলো। আমি যেহেতু একটা ফার্মাসউটিক্যালস ওষুধ নিয়ে কাজ করি তাই আমি বলতে পারি সেফটি আর আইন এর মাঝে পার্থক্য কোথায়। একটা উদাহারন দেই, ফার্মাসসিউটিক্যালস গাইড লাইন অনুসারে(BP, USP,EU) যে কোন প্রোডাক্ট(ট্যাবলেট/ইনজেকশান) এর পটেন্(কার্যকারীতা) লিমিট যদি ১০০ এর ± ১০ হয় তাহলে কোন প্রোডাক্ট পটেন্সী আইনগত ভাবে ৯১ থাকলে পাশ আবার ১০৯ থাকলেও পাশ। কিন্তু বাস্তবতা এটা নয়। কোন কোম্পানি এভাবে প্রোডাক্ট মার্কেটে ছাড়তে পারে না। তাদের লিমিটি হতে হয় ১০০ ±২। যে পানি দিয়ে ওষুধ বানানো হয় তাতে মাইক্রো অরগানিজম এর লিমিট থাকে ১০CFU/১০০ml। কিংবা ১০০CFU/ml (Cfu=Colony forming unit) । কিন্তু ‍৬ অথবা ৬০ এর বেশি অরগানিজম থাকলে আমরা সেটাকে আর ব্যবহার করি না, কারন ৬ অথবা ৬০ মানুষের শরীরের জন্যে নিরাপদ নয়, তখন সংস্কারের কাজ করতে হয়। আপনি যদি কোন বিদেশি সংস্থাকে এই রিপোর্ট দেখান তাহলে সে আপনার ওষুধ নিবে না। কিন্তু আইনগত ভাবে আপনি ঠিক আছেন। এটাই হলো সেফটি। শুধু আইন দিয়ে ওষুধ তথা মানুষের সেফটি নিশ্চিত করা যায় না। ঠিক তেমনি পরিবেশে তথা জীববৈচিত্র ক্ষেত্রেও আইন দিয়ে আপনি সেটাকে পুরোপুরি সংরক্ষন করতে পারবেন না।আমাদের সরকারগুলোর সেফটি বিষয়ে কোন ধারণা নেই বলে আমার মনে হয় তা না হলে তারা আইন নিয়ে এতো জ্ঞান কপচাতো না।

রুপপুর নিয়ে কেন আসলে বামরা আন্দোলন করছে না ? কারণ তাদের রুপপুর প্রজেক্ট করছে তাদের গুরু রা অর্থাৎ চীন। চীন আছে বলেই তাদেরও কোন আওয়াজ নেই। এটা যদি ভারত হতো তাহলে সেটা নিয়ে তখন প্রচারমুখী আরেকটা ঢং মার্চ করতো। আমি এটাকে ঢং মার্চ বলছি কারন তারা শুধু তাদের স্বার্থের বাইরে যেটা গেছে তার প্রতিবাদ করছে বাকীটা করছে না। এরা টেলিভিশন আর প্রচারের দেশপ্রেমিক। এভাবেই চলছে, রাতের আধাঁরে এখানে সবাই এক হয়ে তেতো পানীয় গিলে আর দিনের আলোতে আমাদেরকে আদর্শ, নীতি এবং দেশপ্রেম শিখায়। ধন্যবাদ ভাই, ভালোথাকবেন।

মাসুদ সজীব

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

রূপপুরে আনুমানিক খরচ ধরা হয়েছে প্রায় দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সমপরিমাণ টাকা দিয়ে সোলার প্যানেল স্থাপন করা গেলে চারগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।

খুবই আশা জাগানিয়া তথ্য, কিন্তু দুঃখের বিষয় এ তথ্যের স্বপক্ষেও কোন নির্ভরযোগ্য সোর্স উল্লেখ করেন নি। সাধারনভাবে আমরা জানি সোলার প্যানেলের প্রধান সমস্য হলো এর অতি উচ্চ স্থাপনা ব্যায়, যা গ্যাস ভিত্তিক পাওয়ার প্লান্টের চেয়েও অনেক বেশী।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আব্দুলাহ ভাই, সোলার প্যানেলের চাইতে তার ব্যাটারির দাম বেশি... এবং সেটা বদলাতে হয়... আরেকটা সমস্যা জায়গা... ১ মেগাওয়াটের জন্য প্রায় ৩ একর জায়গা লাগে

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মুখেমারি এর ছবি

ভাই, রামপালে কেন, গোপালগন্জে করেন না প্রজেক্টটা, আমরা সাধুবাদ জানাব।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।