প্রশ্নবিদ্ধ বিশ্বাস বনাম অবিশ্বাসের অধিকার

আয়নামতি এর ছবি
লিখেছেন আয়নামতি [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ০৩/১১/২০১৫ - ৫:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি আস্তিক, আমার পরিবার আস্তিক, এবং আমার চোদ্দগুষ্টি আস্তিক ছিলো বলেই জানি। আস্তিকতা হলো ধর্মের প্রতি বিশ্বাস, নাস্তিকতা হলো ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস। অধিকাংশ আস্তিক উত্তরাধিকারসুত্রে এবং জন্মগতভাবে। নাস্তিক হয়ে কেউ জন্মায় না, বড় হয়ে নিজস্ব উপলব্ধি, পড়াশোনা, পরিপার্শ্ব ইত্যাদি বিচার করে কেউ কেউ ধর্মে আস্থা হারিয়ে নাস্তিক হয়ে যায়। যারা আস্তিক তাদের কেউ কেউ খুব বেশী ধার্মিক হয়ে যায়, আর কেউ গা বাঁচিয়ে চলে সুবিধাবাদী পন্থায়। সুবিধাবাদী হতে হয় সুনির্দিষ্ট কিছু কারণে। প্রথম কারণ হলো মানুষের আয়ু খুব সীমিত। এই সীমিত আয়ুতে পৃথিবীর আলো বাতাসে যতোটা সম্ভব সুস্থভাবে বাঁচার চেষ্টা করা উচিত প্রতিটি মানুষের। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র একটা দেশের মূল সমস্যা অন্ন বস্ত্র বাসস্থান। এদেশে এই তিন চাহিদা ঠিকঠাক পাওয়ার জন্য লড়ছে বিশাল জনগোষ্ঠী। এরকম একটা দেশে জন্মে ধর্ম জাতীয় ব্যাপার নিয়ে ক্যাচাল করাটা বিলাসিতার নামান্তর।

আস্তিক হবার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সমাজে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের দলে থাকা। বড় দলে নিরাপত্তা বেশী সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। আবার আস্তিকদের একটা বড় অংশ ধর্মে বিশ্বাস করেও ধর্মকর্ম পালন করে না। ধর্মে বিশ্বাস করা মানে পরকাল বিশ্বাস, পরকালে আছে স্বর্গ নরকের আশ্বাস। ধর্মকর্ম ঠিকভাবে করলে স্বর্গ মিলবে, না করলে নরক। আস্তিক হয়েও ধর্মকর্ম ঠিকভাবে না করার অর্থ হলো বিশ্বাসটা সেভাবে পোক্ত হয়নি। সেটা আবার নাস্তিকতার ঝোঁক। আমাদের সমাজে ঠিকভাবে ধর্মকর্ম পালন করা মানুষরা সংখ্যালঘু। শুক্রবারে জুমার নামাজের সাথে সাধারণ ওয়াক্তের নামাজের মুসল্লীর সংখ্যা তুলনা করে দেখুন। ধরা যাক পার্থক্যটা প্রায় ৮০ ভাগ। মানে শতকরা ২০ ভাগ নিয়মিত ধর্মকর্ম করেন, বাকী ৮০ ভাগ জুমার মুসল্লী। সেই ২০ ভাগও বেহেশতে যাবে তাও নিশ্চিত না। কেননা সেখানে আছে এমন সব ভণ্ড ধার্মিক যারা চুরিতে কঠিন, ধর্মেও কঠিন।

এই প্রসঙ্গে আমার এক আত্মীয়ের পুরোনো একটা অভিজ্ঞতা তাঁর নিজের মুখেই শুনুন- 'এক সরকারী অফিসে গিয়েছি রোজার দিনে। কাজটার জন্য ঘুষ লাগে, যদিও ওরা বলে স্পীড মানি। লুকোনো কোন টাকা না, টেবিলের উপরেই ফিক্সড রেটে কাজ হয়। আমার কাজটা(জিএসপি সার্টিফিকেট) হয়ে গেছে, টাকা দেবার লাইনে দাঁড়িয়েছি। আরো কয়েকজনও টাকা দেবার জন্য তৈরী। এমন সময় জোহরের আজান দিল। অফিসার বললেন, আজান হয়ে গেছে টাকাটা হাতে দিয়েন না, ড্রয়ারে রাখেন। বলে ড্রয়ারটা খুলে দিলেন। আমরা সবাই টাকাগুলো ওখানে রাখার পর তিনি অজু করে নামাজ পড়তে চলে গেলেন'।

এদেরকে নিয়ে সৃষ্টিকর্তা কী করবেন সেটা তিনিই জানেন। কিন্তু আমরা জানি এরকম অনেকের টাকায় মসজিদ তৈরি হয় এবং কেউ একটা মসজিদ তৈরী করলে কেয়ামত পর্যন্ত তার কবর আজাবে ছাড় আছে এবং শেষ বিচারের দিনে বিশেষ সুবিধা প্রাপ্তির কথা বলা আছে। যাই হোক সেটা আমার বিবেচ্য বিষয় না। কিন্তু আমি দেখলাম আস্তিক সমাজেও বিরাট বৈষম্য। বাকী ৮০ ভাগের কী হবে? তাদের শুধু বিশ্বাসটা আছে কিন্তু কোন আমল নাই, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নাই। আমল মানে ধর্মকর্ম সঠিকভাবে পালন করা। তাদের জন্য কি বেহেশতের দরজা খোলা থাকবে? গড নোজ্।

একসময় এরকম কথা বললে গালি শুনতে হতো কমিউনিস্ট বলে। এখন শুনতে হবে নাস্তিক। আর আপনি যদি ব্লগিংয়ের সাথে জড়িত হন, তবে তো হয়েই গেলো! ব্লগার আর নাস্তিক শব্দ দুটো এখন দু'জন দু'জনার, আশেপাশে কেউ নেই, কিচ্ছুটি নেই। নাহ, ভুল বললাম। আছে, আশেপাশে কোপ মারার জন্য উৎ পেতে আছে প্রবল অনুভূতির ঠিকাদার। সত্যিকার নাস্তিক হওয়া কিন্তু কঠিন সিদ্ধান্ত। যিনি নাস্তিক তিনি দুটো বিপদ মাথায় নিয়ে থাকেন। একটা হলো ইহকালের, আরেকটা পরকালের। ইহকালের বিপদটা হলো সংখ্যালঘু হওয়া এবং মাথার উপর যে কোন সময় চাপাতির হুমকি নিয়ে ঘোরা। আর পরকালের বিপদ হলো যদি ‘শেষ বিচারের দিন’ ব্যাপারটা সত্যি হয়, তাহলে অবিশ্বাসের দায়ে নিশ্চিত দোজখ প্রাপ্তি। দায়সারা নাস্তিকতা (মডারেট নাস্তিক) আবার অপেক্ষাকৃত সহজ। স্বর্গ নরক কোন কিছুতে বিশ্বাস না করে ইহকালটা আরাম করে কাটিয়ে মরে যাবার পর ঘাসপাতার সাথে মিশে গিয়ে অস্তিত্বের বিনাশ হবার মতো সুখ আর কি আছে। ধর্মের মতে মৃত্যু পরবর্তী প্রথম ধাক্কা মাটির চাপ। এতোদিন মধ্যাকর্ষণের চাপে যে মাটির উপর হেঁটেছেন, মাটি সেই চাপের প্রতিশোধ নেবে একটা মড়াৎ চাপে। যেহেতু মৃত্যু একবার হয়ে গেছে, আর মরার সম্ভাবনা নেই। তারপর শুরু হবে কঠিন সওয়াল-জবাব। দুনিয়াতে যা করেছেন তার হিসেব নেবার পালা, তারপর কেয়ামত তক ভয়াবহ কবর আজাব। সুতরাং কবরেই একদফা নরকবাস হয়ে যাবে। নাস্তিক বা অবিশ্বাসী হলে এসবে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। সুতরাং নাস্তিক হওয়াটা এদিক দিয়ে সুবিধাজনক। এরকম নাস্তিকের সংখ্যা মনে হয় পৃথিবীতে বেশী। পৃথিবীর অনেক দেশে ‘নো রিলিজিয়ন’ পরিচয় প্রকাশের স্বাধীনতা চালু আছে। দক্ষিণ কোরিয়ার উদাহরণ দেই। ওখানে ধর্মের পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৪৬ ভাগ ধর্মহীন, ২৩ভাগ বুড্ডিস্ট, ৩০ভাগ খ্রিস্টান। ধর্ম নিয়ে কোন মারামারি আছে ওখানে? নেই। কেননা কর্মই ধর্ম এসব দেশে। অস্ট্রেলিয়ায় ২০১১ আদমশুমারী মতে ৩১% এর বেশি সংখ্যক মানুষ ধর্মে বিশ্বাস রাখে না। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে ৩৩% মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করে না(২০১২'র হিসাব মতে)এরকম আরো অনেক দেশ আছে যেখানে ধর্ম গুরুত্ব হারাচ্ছে।

আমি আস্তিক সমাজের অধিকারী হলেও খানিকটা সেই জুমার মুসল্লী ধাঁচের মানুষ। স্কুলের ধর্মশিক্ষা থেকে স্বর্গ নরক বিষয়ে একটা সুবিধাজনক আইডিয়া পেয়ে গেছি। সেই কারণেই আমি ৮০ ভাগের দলে ভিড়ে গেছি। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি খুব বেশী ধর্ম পালন না করেও যদি শুধু ঈমান ঠিক রাখা যায় তাহলেও বেহেশতে যাওয়া সম্ভব। তবে তার আগে কিছুকাল দোজখে কাটিয়ে যেতে হবে দুনিয়াতে সারাজীবনের পাপের প্রতিফল হিসেবে। তাতে আমি রাজী। আমার আলটিমেট ডেসটিনি যদি বেহেশতের দিকে যায়, তাহলে কিছুকাল কষ্ট করতে অসুবিধা কি! তাছাড়া, মরলেই তো আর ওপারে আমার জন্য ৭২টা হুর অপেক্ষায় থাকছে না, একজন ঈমানদার পুরুষের জন্য যেমনটা থাকবে, কাজেই অত তাড়া কিসের। পৃথিবীতে পাপহীন মানুষ ক'জন আছে। একটা বড় অংশের বেহেশতের রাস্তা তো সেই দোজখের গলি হয়েই যাবে। সুতরাং বিশ্বাসগুলো যদি আমি ঠিকঠাক রেখে দুনিয়ার কাজকর্ম বিজ্ঞানসম্মতভাবে করি, তাহলে দুই কূলই রক্ষা হলো।

কিন্তু ধর্ম পালন নিয়ে কেউ আমাকে ফতোয়া দিলে বিরক্ত হই। আমাকে হেদায়েত করার দরকার নাই। আমি নিজের ভালো নিজেই বুঝি। এমনকি আমি যদি স্বেচ্ছায় নরকবাসও করতে চাই, আপনি বলার কে? সব ধর্মেই তো স্বর্গ নরক দুটো ব্যাপারের কথা বলা আছে। সবাইকে যদি পিটিয়ে বেহেশতে নিয়ে যেতে চান, তাহলে দোজখবাস করবে কে? পৃথিবীতে পাপী মানুষের সংখ্যা যে অন্ততঃ অর্ধেক হবে সেটা তো সৃষ্টিকর্তাই ঠিক করে রেখেছেন। নইলে ৮ বেহেশতের বিপরীতে ৭ দোজখ সৃষ্টিই করা হতো না। সুতরাং একজন অবিশ্বাসীকে পিটিয়ে কতল করে আপনি কি খোদার উপর খোদকারী করছেন না? বর্তমান পৃথিবীতে যতোগুলো হানাহানি, হিংসাত্মক নৈরাজ্য তার মধ্যে সিংহভাগই হলো ধর্মোন্মাদদের জন্য। দুঃখের সাথে বলতে হয় আমার ধর্ম এগিয়ে আছে এক্ষেত্রে।

বিশ্বাস একটি কঠিন ব্যাপার। বিশ্বাস দিয়ে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে। বিশ্বাসের মাত্রার উপর নির্ভর করে সে কতোটা করতে পারবে। বিশ্বাসের সাথে আগুনের তুলনা করা যায়। আগুন আলোর উৎস আবার আগুন ধ্বংসেরও সূত্র। আগুনটা কার হাতে আছে তার উপর নির্ভর করে সে কি আলো হবে না দাবানল হবে। যারা কেরোসিন কুপিতে পড়াশোনা করে তারা অবশ্যই জ্ঞানের সাধক। আবার যারা কেরোসিন আগুনে মানুষ পোড়ায় তারা নিশ্চিত অন্ধকারের সাধক। বিশ্বাসও খানিকটা সেরকম। কঠিন ধর্মবিশ্বাস দিয়ে কেউ নিজের স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে। আবার আমার ধর্মবিশ্বাসে কেন বাকীরা সামিল হয়নি সেই কারণে যখন আমি তাদের উপর আক্রমণ করি, তখন আমি পৃথিবীতেই একটা নরক তৈরী করি। দোষটা বিশ্বাসের নয়, দোষটা আমার। মানুষের মঙ্গলের নিমিত্তে ধর্ম তৈরী হয়েছিল, ধর্মের মঙ্গলের জন্য মানুষ সৃষ্টি হয়নি। কিন্তু এখন ধর্মের মঙ্গলের জন্য হরদম মানুষ খুন করা হয়। যারা খুন করে তারা হয়তো বিশ্বাস করতে পারে না যে ধর্মের সুরক্ষা করার জন্য একজন মহা মহা শক্তিমান বিশ্ববিধাতা রয়েছেন। যদি সেই বিশ্ববিধাতার উপর বিশ্বাস না থাকে তাহলে সেই খুনীও নাস্তিক। যে নেতার আদর্শ ঠিক নেই সেই নেতার প্রতি বিশ্বাস রেখে যদি কেউ প্রাণও দেয় তাতে মানব সমাজের কোন মঙ্গল হয় না। কিন্তু যে প্রাণ দিল তার বিশ্বাস এতই কঠিন ছিল সে ভুলটাকেই সত্য বলে ধারণ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। মানুষের চরিত্রের মৌলিক একটা অংশ নিজের সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে বিশ্বাসে প্ররোচিত করে। ভুল সিদ্ধান্তে অটল থাকা প্রচুর মানুষ আছে পৃথিবীতে। তাদের বিশ্বাস এতটাই কঠিন যে পুনর্বিবেচনা করার কোন সুযোগই তারা দিতে চায় নি। ভুল জেনেই মরে যায়। ভুল বিশ্বাসে মরে যাওয়া লোকদের জন্য করুণা ছাড়া আর কিছু নেই।

আমার মতে, পৃথিবীতে যতগুলো অপ্রয়োজনীয় কাজ আছে তার একটি হলো ধর্ম নিয়ে গবেষণা করা। মানুষ যখন অসভ্য ছিল তখন ধর্মটাই ছিল একমাত্র শিক্ষার আলো যা দিয়ে মানুষকে বর্বরতা থেকে রক্ষা করা হতো। কিন্তু বর্তমান পৃথিবী ধর্ম দিয়ে শাসিত হবার যোগ্য নয়। জ্ঞান বিজ্ঞানে মানুষ এত বেশী এগিয়ে গেছে, দেশ শাসন করার এতো চমৎকার সব সংবিধান হয়ে গেছে, এখন দেশ শাসন করার জন্য ধর্মের কোন প্রয়োজন নেই। ধর্ম নিয়ে রাজনীতির ব্যাপারটা পরিত্যাগ করা তাই বুদ্ধিমানের কাজ। দেশের প্রচলিত আইন মেনে চললেই সব ঠিক থাকে। পৃথিবীর সবচেয়ে কম অপরাধপূর্ণ দেশের মধ্যে একটাও ধর্মশাসিত নয়। কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ অপরাধী দেশগুলো সব ধার্মিক বিশ্বাসীতে পরিপূর্ণ। তাতে বোঝা যায় পরকালের লোভ দেখিয়ে মানুষকে ফ্যানাটিক বানানো গেলেও, পরকালের ভয় দেখিয়ে মানুষকে খুব বেশী লাইনে আনা যায় না।

ধর্মে অবিশ্বাসীরা ধর্মের খুঁত, ধর্মগ্রন্থের মধ্যে উগ্রতা আবিষ্কার কিংবা ধর্মপ্রবর্তকের মধ্যে লাম্পট্য নিয়ে অপ্রয়োজনীয় গবেষণা বাদ দিয়েও কিন্তু ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। ধর্মের আচারে যদি কোন অবিচার থাকে সেই অবিচারের প্রতি প্রশ্ন তোলা উচিত। কেননা ধর্ম ঈশ্বরপ্রদত্ত বলা হলেও হাজার বছরের মনুষ্য সঞ্চালনায় সেটির আদিরূপ কতটুকু অক্ষত আছে সেটি একমাত্র ঈশ্বরই বলতে পারেন। ফতোয়া দিয়ে কথিত শান্তির ধর্মকে হিংস্রধর্মে রূপান্তরিত করলে তার জন্য সমাজ প্রশ্ন করতে পারে কেন এবং কেন? যৌক্তিক কারণেই প্রশ্নগুলো আসতে পারে। প্রশ্ন তোলা মানেই নাস্তিকতা বা ধর্মবিরোধিতা নয়।

অথচ প্রশ্ন করবার চর্চাটা আমাদের সমাজে সেভাবে উৎসাহ দেয়া হয় না কেন জানি। যে কারণে ছোট বেলায় যে শিশু সব কিছুতেই বিস্মিত প্রশ্ন করতো ওটা কি? সেটা কেন? বড় হতে হতে সে জেনে যায় তার বিস্ময়ের কার্য কারণগুলো, যে কারণে শিশুতোষ কৌতুহলে সে আর এটা ওটা নিয়ে প্রশ্ন করে অন্যের কাছ থেকে উত্তর খুঁজতে চায় না। এটা যেমন একটা কারণ হতে পারে প্রশ্ন না করার পেছনে। আরেকটা কারণ প্রশ্ন করাকে উৎসাহ দেয়ার আগ্রহ নেই সমাজ আচরণে। ধর্ম সংক্রান্ত প্রশ্নের বেলায় সেটা আরো বেশি রক্ষণশীল। আরো বেশি বিরুদ্ধ মনোভাবের স্বীকার। যে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে জানবার আগ্রহকে রুদ্ধ করা হয় সে বিষয়ে পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জন কতটুকু সম্ভব সত্যিকার অর্থে?

জন্ম সূত্রে মুসলিম হবার কারণে ইসলাম ধর্ম আমার বিশ্বাসের ভিত্তি। পবিত্র কোরান মজিদ আমার জীবন বিধানের পরিপূর্ণ জ্ঞানভাণ্ডার। এমন একটা ধারণা নিয়েই বড় হওয়া। কিন্তু সে জ্ঞান আমাকে নিতে হয় ভিন্ন একটা ভাষা শিখে, যেটা আমার মাতৃভাষা না। ছোটবেলা থেকেই শুনে এসেছি আমার আল্লাহ, পুস্পিতার ভগবান, ম্যাকের ঈশ্বর সবার সব ভাষাই তিনি জানেন। অথচ কোরান শিক্ষাকালে যখন মনের ভেতর থাকা প্রশ্ন মুখে জানতে চেয়েছিলাম আরবিতে কেন পড়তে হবে? কেন আমার মাতৃভাষায় পড়া হবে না? নিজের ভাষায় না পড়লে তো আমি একবর্ণও বুঝতে পারবো না কি পড়ছি! 'এই মেয়ে বেশি কথা বলে। আল্লার কিতাব তাঁর ভাষাতেই পড়তে হয়।' চোখ পাকিয়ে ওস্তাদজী থামিয়ে দিয়েছিলেন। আল্লার ভাষা তবে আমার মাতৃভাষায় না হয়ে কেন জীবন দেয়া বাংলাকে আমার মাতৃভাষা করা হলো? 'একদম চুপ! গুনাহগারী প্রশ্নের উত্তর আমি দেইনা।' ওস্তাদজীর ধমকে চুপসে গিয়ে আল্লাহর ভাষা শিক্ষায় মন দিতে হয়। কিন্তু যে ভাষা আমার নিজের না, সে ভাষার প্রতি কেন জানি সেভাবে মমতা গড়ে ওঠেনি আমার। সে কারণে কিনা জানিনা। এক সময় খতম করা কোরান পড়তে বেশ কষ্ট হয় এখন।

আমি সেভাবে আরবি ভাষায় দক্ষ নই তাই কোরানের বিভিন্ন আয়াতে কি বলা আছে সেটা অন্য ভাষার অনুবাদ না দেখলে আমার পক্ষে বুঝে নেয়া কঠিন। এক্ষেত্রে ইংরেজি কিংবা বাংলার সাহায্য নিয়েই অর্থ বুঝতে হয়। ইংরেজিও আমার মাতৃভাষা না। কিন্তু পড়াশোনার মাধ্যম হিসেবে এর ব্যবহার থাকায় এটা বুঝতে আমাকে আরবির মতো বেগ পেতে হয়না। যদিও আবেগ প্রকাশে এ ভাষা প্রয়োগে তেমন স্বাচ্ছন্দ বোধ করিনা। সেক্ষেত্রে বাংলা আমার স্বাচ্ছন্দ প্রকাশের ভাষা।

যেহেতু তোতা পাখির মতো এক বর্ণ না বুঝেই পড়েছি তাই যথার্থ সাহায্য ছাড়া কোরান মজিদের বিভিন্ন আয়াতের অর্থ বুঝতে আমি অক্ষম। কিন্তু যিনি বা যারা অর্থ বুঝে কোরান পড়েন তারা তো আল্লাহপাক তাঁর পবিত্র গ্রন্হে কী বলছেন সেসব বুঝতে সক্ষম। আল্লাহর ভাষা বুঝতে সক্ষম মানুষেরা অন্যদের শিক্ষা দেবার ক্ষেত্রে নিজের জানা জ্ঞান যে অন্যদের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে প্রয়োগ করেন না সেটা বুঝতে রকেট সায়েন্স লাগে না। যেকারণে হুজুরের নির্দেশ পরকালের অশেষ নেকিলোভী ছাত্র অন্ধভাবে পালন করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করে না। তার পড়া সূরা কাফেরুনের ৬নং আয়াত 'লাকুম দ্বিনুকুম ওয়ালিয়া দ্বিন।' 'তোমার ধর্ম তোমার কাছে, এবং আমার ধর্ম আমার কাছে' এই সত্য ভাষণ পবিত্র গ্রন্থের পাতাতেই থেকে যায়। কোরানে হাফেজ একজন শফী হজুর কিভাবে সুরা বাকারাহ'র ২৫৬ নং আয়াত 'লা ইক্রাহ্ ফিদ্দীন' (ধর্মের ব্যাপারে কোন জোরাজোরি নেই/ there shall be no compulsion [acceptance of] in the religion)কে পাশ কাটিয়ে বলেন ' নাস্তিক হত্যা করা ওয়াজিব'? তিনি তো শুধু মাত্র খোদার উপরই খোদগারী করছেন না, যে রাস্ট্র ব্যবস্হার ভেতরে তিনি বসবাস করেন তারও বিরুদ্ধাচারণ করেছেন। 'স্বদেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ' ইসলামের এই জ্ঞান তিনি ঠিক কোন ভূমির উদ্দেশ্যে উৎসর্গে আগ্রহী? এমন প্রশ্ন কেন তাকে/তাদের করা হয়না? রাসুলে করিম(সাঃ) এর সুন্নত কেবল মাত্র চার বিবাহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। তিনি আরো অনেক কর্তব্য বিষয়ে বলে গেছেন। সৎকাজে উৎসাহ এবং অসৎ কাজে নিরুৎসাহী করবার বিষয়ে তাঁর উপদেশ ছোটবেলার পাঠ্য বই আমাদের জানিয়ে দেয়। হত্যার মত জঘন্য কাজ যদি অসৎ না হয় তবে আর কী হতে পারে ? এমন কাজে কেন মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অন্যের অজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে? এটা কি সত্যিই ইসলাম স্বীকৃত? যদি নাই হবে তবে ধর্ম প্রাণ(!) এইসব মুসলমানেরা ব্লগিংয়ের দায়ে কিংবা ইসলামকে কটাক্ষ করার ভ্রান্ত অজুহাতে সংশ্লিষ্ট ব্লগ না পড়েই চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে কোন যুক্তিতে? অথচ সেখানে তাদের চোখের সামনে বসে একজন শফি হজুর কিংবা তার মতো আরো কেউ হত্যার মতো অসৎ বিষয়ে ফতোয়া দেন কিভাবে? অসৎ কাজে প্রতিবাদের সততা কেন দেখা যায়না এক্ষেত্রে? প্রশ্ন করতে কেন এতো কুন্ঠা? এক সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কাউকেই তো ভয় করার কথা না। কিসের ভয়ে তবে চুপ থাকি আমরা? ঈমানদার মুসলমানসকল? কেন ভুলে যাই, অন্যায় যে করে আর যে সে অন্যায় সহ্য করে তারা দু'পক্ষই দোষী?


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

তোমার আত্মীয়ের অভিজ্ঞতা পড়লাম, আমার বন্ধুর অভিজ্ঞতা বলি। বছর দেড়েক আগে আমার এই বন্ধু তার বেশ বিখ্যাত কলেজের চাকুরিটা ছেড়ে দেয় এক সরকারি চাকুরিতে যোগদানের জন্য। অন্য জায়গায় কোনো ঘুষ না লাগলেও মেডিকেল টেস্টের আগে তার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা চাওয়া হয়, দেন দরবারের পর ১০ হাজার টাকা রফা হয়। টাকা দেওয়ার দিন ও নিজেই উপস্থিত ছিল, আমার বাসায় এসে একটা কথা বারবার বলছিল, “ওই নূরানি চেহারার মানুষটা কী করে ঘুষ নিলো? মানুষটা ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, আমাদের সামনেই নামাজ পড়তে গেল!”

লেখাটা ভালো হয়েছে তবে দুটো জায়গায় খটকা -
১।

আমার মতে, পৃথিবীতে যতগুলো অপ্রয়োজনীয় কাজ আছে তার একটি হলো ধর্ম নিয়ে গবেষণা করা।

যদি ‘গবেষণা’ শব্দটা তার নিজের অর্থেই ব্যবহার করে থাকো, তাহলে গবেষণার দরকার আদৌ কি নেই? আমার তো মনে হয় বিস্তর দরকার আছে। ধর্মের বিষয়গুলো নিজের কাছে পরিষ্কার করে নেবার জন্য হলেও।

২।

যদি নাই হবে তবে ধর্ম প্রাণ(!) এইসব মুসলমানেরা ব্লগিংয়ের দায়ে কিংবা ইসলামকে কটাক্ষ করার ভ্রান্ত অজুহাতে সংশ্লিষ্ট ব্লগ না পড়েই চাপাতি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে কোন যুক্তিতে?

এখানে মূল আপত্তি ওই ‘সংশ্লিষ্ট ব্লগ না পড়েই’ অংশে। সংশ্লিষ্ট ব্লগ পড়ে যদি ঠিকঠাক মনে না হয় তাহলে কি চাপাতি চালানো যাবে?

প্রশ্নগুলোতে বিরক্ত হবে না নিশ্চয়ই। খটকা লেগেছে বলেই উল্লেখ করলাম, সদুত্তর পাবো সেই আশায়।

দেবদ্যুতি

আয়নামতি এর ছবি

১। হ্যাঁ ওটা কথা প্রসঙ্গেই বলা।

২। না, সেটা যে করা যাবে না তা শিরোনামই বলছে।

তোমার মতের সাথে আমার মত না মিলতে পারে। সেজন্য যুক্তি পাল্টা যুক্তির পথে না হেঁটে কোপাকুপি কোনো আধুনিক সমাজের রীতি হতে পারে না।

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক

দেবদ্যুতি

অতিথি লেখক এর ছবি

ধর্মে অবিশ্বাসীরা ধর্মের খুঁত, ধর্মগ্রন্থের মধ্যে উগ্রতা আবিষ্কার কিংবা ধর্মপ্রবর্তকের মধ্যে লাম্পট্য নিয়ে অপ্রয়োজনীয় গবেষণা বাদ দিয়েও কিন্তু ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।

একজন গবেষক ধর্মের কোন দিকটা গবেষণা করবেন সেটা তার উপর ছেড়ে দিলেই ভাল নয় কি? তার গবেষণার বিপরীতে আর হাজারটা গবেষণা হতে পারে, কিন্তু যেটা কোন ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় তা হলো কলমের বিরুদ্ধে চাপাতি। দুখিঃত, কিন্তু আপনার এই লাইনটা পড়ে কেন যেন মনে হলো যারা কলমের বিরুদ্ধে চাপাতি ধরাকে হালাল করতে চায় তারা যে ধরনের যুক্তি দেয় এই লাইনটা তার একটা মাইল্ড ভার্সন। উদাহরন স্বরূপ বিখ্যাত চিত্রপরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী স্ট্যাটাসের একটা অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি -

আস্তিক কতো বোকা, আস্তিকের নবী রসুল কতো খারাপ, আর নাস্তিক কতো মেধাবী- এই সব বালখিল্য জ্ঞানের চর্চা বাদ দিয়ে জগতের হাজার বিষয় আছে বেছে নেন। কিছু খুঁজে না পেলে অল্প পরিশ্রমে ঢেঁড়স চাষের পদ্ধতি আবিস্কার নিয়া গবেষণা করেন। ওতে জাতির উপকার হবে।

আমি তোমাদের কেউ নই-> আতোকেন

আয়নামতি এর ছবি

নাহ্ আমি কোনোভাবেই কোনো কিছু চাপিয়ে দেবার পক্ষপাতী নই। সেটা গবেষকের নিজস্ব সিদ্ধান্ত।
ব্যক্তি আক্রমণকে প্রধান করে ক্যাচাল দেখে বিরক্ত হয়ে বলা ওটা। অবশ্যই পারেন, এবং সেটা বলার জন্যই তো পোস্ট লেখা। যুক্তির বিপক্ষে পাল্টা যুক্তি আসুক সমস্যা নাই। নবী রসুলের খারাপ দিক, ভুলভ্রান্তি থাকলে অবশ্যই বলা হোক। তার পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি আসুক। কিন্তু ব্যক্তি আক্রমণটাকেই মূল করে তর্কের খাতিরে তর্ক করে গেলে লাভের লাভ কিছুই হবে না। এমনটা দেখে বিরক্ত হয়েই বলা। ফারুকীর বেইল নাই আমার কাছে। কাজেই তিনি কী কইলেন না কইলেন সেটা মুখ্য না আমার কাছে। ধন্যবাদ।

সাফায়ার আহমেদ এর ছবি

ধর্মীয় বাণী, বই এসব সবাই নিজের মত ব্যবহার করে, নিজের মত ব্যাখ্যা করে। আপনি লেখায় খুব শান্তিময় আয়াতের উল্লেখ করেছেন। কোন ধর্মান্ধ মোল্লা কিন্তু অন্য আয়াত বের করে বুঝিয়ে দেবে, ধর্ম বিরোধীদের হত্যা করাই ঈমানী কর্তব্য। সব ধর্ম নিয়েই চুলচেরা তর্ক বিতর্ক হতে হবে, গবেষণা হতে হবে। আমরা জীবনের সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিই, তাহলে ধর্মটা কেন শুধু বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে হবে?

আয়নামতি এর ছবি

ধর্ম নিয়ে যারা সংঘাতে যায় তারা ফ্যানাটিক।
আর ফ্যানাটিক কখনো শান্তির আয়াতের দিকে তাকায় না। সেটাই সমস্যা। ধন্যবাদ।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

জুডা ধর্মমতে আছে (ইহুদিদের ধর্মমত),
"তোমার ভাই, তোমার সহোদর বা তোমার ছেলে বা মেয়ে কিম্বা তোমার প্রিয়তমা বধু বা তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু যদি গোপনে উস্কানি দিয়ে বলে, এসো, আমরা গিয়ে অন্য দেবতাদের সেবা করি, তোমার অজানা ও তোমার পিতৃপুরুষদের অজানা দেবতা, তোমার চারপাশে অবস্থিত কিম্বা নিকটবর্তী বা তোমা থেকে দূরবর্তী, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত যে কোন জাতির দেবতা হোক, তেমন দেবতার বিষয়ে যদি এই কথা বলে, তবে তুমি তার প্রস্তাবে সম্মত হয়োনা, তার কথায় কান দিওনা; তোমার চোখ তার প্রতি যেন দয়া না দেখায়; তুমি তাকে রেহাই দিয়োনা, তার অপরাধ লুক্কায়িত করোনা। বরং তাকে বধ করবেই; তাকে বধ করার জন্য প্রথমে তুমিই তোমার হাত বাড়াবে, তারপর গোটা জনগণ হাত বাড়াবে। তুমি তাকে পাথর ছুড়ে মারবে, সে মরুক, কেননা তোমার পরমেশ্বর প্রভু, যিনি মিশর দেশ থেকে, দাসত্ব ব্যবস্থা থেকে তোমাকে বের করে এনেছেন, তাঁর অনুগমনের ব্যাপারে সে তোমাকে ভ্রষ্ট করার চেষ্টা করেছে।" (জুডা ধর্মমতের গ্রন্থ তানাক এর দ্বিতীয় বিবরণ (Deuteronomy)১৩:৭-১১)।

ইসলাম ধর্মমতে,
২৭২৪/ইসহাক ইবন মুহাম্মদ ফারবী(র)........আবদুল্লাহ ইবন উমর(রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, তোমরা ইয়াহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। এমনকি তাদের কেউ যদি পাথরের আড়ালে আত্মগোপন করে তাহলে পাথরও বলবে, 'হে আল্লাহর বান্দা, আমার পিছনে ইয়াহুদী রয়েছে, তাকে হত্যা কর।' বুখারী শরীফ, পঞ্চম খন্ড, পৃ:৮৩ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কতৃক প্রকাশিত।

সনাতন ধর্মমতে,
"ব্রাহ্মণো জায়মানো হি পৃথিব্যামধি জায়তে।
ঈশ্বরঃ সর্ব্বভূতানাং ধর্ম্মকোষস্য গুপ্তয়ে৷৷" ( (মনুসংহিতা: ১/৯৯)
অর্থাৎ,
ব্রাহ্মণ জন্মগ্রহণ করিবামাত্রই পৃথিবীস্থ সকল লোকের অপেক্ষা শ্রষ্ঠ হয়েন, যেহেতু, সকলের ধর্ম্মসমূহের রক্ষার জন্যই ব্রাহ্মণের উৎপত্তি হইয়াছে।
"মঙ্গল্যং ব্রহ্মণস্য স্যাৎ ক্ষত্রিয়স্য বলান্বিতম্।
বৈশ্যস্য ধনসংযুক্তং শূদ্রস্য তু জুগুপ্সিতম্৷৷" (মনুসংহিতা: ২/৩১)
অর্থাৎ,
ব্রাহ্মণের মঙ্গলবাচক, ক্ষত্রিয়ের বলবাচক, বৈশ্যের ধনবাচক এবং শূদ্রের নিন্দাবাচক নাম রাখিবে।

এমন আরও কিছু উদাহরণ দেওয়া যায় বটে। আর একটা কথা, আমি ধর্ম নিয়ে গবেষণা করিনে তবে বিভিন্ন ধর্মমত সম্পর্কে জানার আগ্রহ থেকেই সামান্য জ্ঞান আহরণ।

হ্যাঁ, লেখাটি প্রাসঙ্গিক এবং সময়োপযোগীও বটে। চলুক

আয়নামতি এর ছবি

অনেক কিছু জানলাম ভাবনাদা। সেজন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

ধর্মে অবিশ্বাসীরা ধর্মের খুঁত, ধর্মগ্রন্থের মধ্যে উগ্রতা আবিষ্কার কিংবা ধর্মপ্রবর্তকের মধ্যে লাম্পট্য নিয়ে অপ্রয়োজনীয় গবেষণা বাদ দিয়েও কিন্তু ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।

এই অংশটুকুতে স্পষ্ট দ্বিমত পোষণ করছি। একটু পরেই বলেছেন ধর্মের আচারে অবিচার থাকতে পারে এবং ধর্মের অবিকৃতি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হওয়া যায় না। তাহলে ধর্মের আচারে সমস্যা কি প্রকারান্তরে ধর্মের খুঁত? কেননা, মুশকিল হল প্রতিটি ধর্মানুসারীই নিজের ধর্মকে "অবিকৃত" জ্ঞান করেই বিশ্বাস করে। এইটা ধর্মের বেসিক এজাম্পশন, এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। ধর্মগ্রন্থের মধ্যে উগ্রতা আবিষ্কার নিধার্মিকেরা করেন না, গোঁড়া ধার্মিকেরাই করেন। চাপাতিবাজেরা সেটাকে কার্যকর করেন। নিধার্মিকেরা এ ব্যাপারটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে কি সেটি অপ্রয়োজনীয় গবেষণা হবে? লাম্পট্য প্রেক্ষিতেও একই সমস্যা, কেননা ঐ অংশকে ছহীহ রেফারেন্স জ্ঞান করে অনেক চাপাতিবাদীই নিষ্ঠার সঙ্গে সেটি ধর্মের আদেশ অথবা অনুমতি হিসেবেই দেখেন। এই "অপ্রয়োজনীয়" গবেষণাটুকু না হলে সেটির মাত্রা আরও বাড়বে। বড়জোর, ভাষার ব্যাবহার নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অপ্রয়োজনীয় বলে এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

আপনার দ্বিমতে আমি সহমত জানাই। আমি অপ্রয়োজনীয় বলছি এটা নিয়ে ক্যাচাল হয় বলে। আমি নিজে ডরপুক মানুষ, যা নিয়ে ক্যাচাল হয়, তা এড়িয়ে যাই। বাকিটা তোমাদের কেউ নই-> আতোকেন এর উত্তরে বলেছি।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমাকে আতোকেন নামে সম্বোধন করলেই হবে। সচলায়তনে নিবন্ধনের সময় আমি তোমাদের কেউ নই নামে নিবন্ধিত হয়েছিলাম, পরে দেখি সহব্লগারদের জন্য নামটা বেশ বড় হয়ে গেছে, তাই সংক্ষেপ করার চেষ্টা।

আমি তোমাদের কেউ নই-> আতোকেন

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আয়নাদি,
এটা ক্যাচাল বাধায়া এটি সত্য। যেকোনো ধর্মাবলম্বীই মনে করেন তাঁর ধর্মটি নিখুঁত, দুধে ধোয়া এবং শ্রেষ্ঠ। ইট'স আ চয়েজ কিংবা সেট অফ এজাম্পসন্স। এই পর্যন্ত সমস্যা নাই। লোকে যেকোনো চয়েজ কিংবা এজাম্পশন কোলে নিয়া বসে থাকতেই পারে, সেটা ব্যাক্তিস্বাধীনতা। সেই এজাম্পশন কিংবা চয়েজ অন্যকেও মেনে নিতে হবেই হবে এই গ্রাউন্ডে এসে ঝামেলাটা বেধে যায়।

আবারও বলছি, এই ব্যাপারটি যেকোনভাবেই স্পর্শকাতর তাতে দ্বিমত নেই। সেকারণেই এটির ব্যাপারে কথা বলার কোড অফ কন্ডাক্ট নিয়ে চিন্তা করা যেতেই পারে। কোনোভাবেই অপ্রয়োজনীয় ভেবে পাশ কাটানো নয়। বাচ্চারা যদি ছুরি কিংবা আগুনের বিপদ সম্পর্কে অবহিত না থাকে সেক্ষেত্রে বাচ্চাদের উপযোগী ভাষায় তাক বোঝানো যেতে পারে। বড় হয়ে বুঝে নেবে এমনটা ভেবে নিয়ে বোঝানোর কাজটা অপ্রয়োজনীয় মনে করাটা বিপজ্জনক। জানি না, বোঝাতে পারছি কিনা।

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সুমনা  এর ছবি

আপনার লেখা পড়তে ভালো লাগে, সাহস করে কয়েকটা প্রশ্ন করলাম ( লেখার সাথে সম্পর্কযুক্ত)
“আবার আমার ধর্মবিশ্বাসে কেন বাকীরা সামিল হয়নি সেই কারনে যখন আমি তাদের উপর আক্রমন করি, তখন আমি পৃথিবীতেই একটা নরক তৈরী করি। দোষটা বিশ্বাসের নয়, দোষটা আমার” ।
ধর্মগ্রন্থে যদি সেই আক্রমনের নির্দেশ দেওয়া থাকে তবে এই দোষের দায় কি ধর্মগ্রন্থের উপরও বর্তায় না!
“ ধর্ম অবিশ্বাসীরা ধর্মের খুঁত, ধর্মগ্রন্থের মধ্যে উগ্রতা আবিস্কার কিংবা ধর্মপ্রবর্তকের মধ্যে লাম্পট্য নিয়ে অপ্রয়োজনীও গবেষণা বাদ দিয়েও কিন্তু ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। “
ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য কি নির্দিষ্ট ফরম্যাট মেনে চলতে হবে?
“ কিন্তু যিনি বা যারা অর্থ বুঝে কোরান পড়েন তারা তো আল্লাহপাক তাঁর পবিত্র গ্রন্থে কী বলছেন সেসব বুঝতে সক্ষম।“ আপনার এই কথাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের আরবীভাষায় কথা বলতে পারা ইসলামী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো তাহলে কেন “শান্তির” কথা বাদ দিয়ে পবিত্র ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে, এইটা আমারও প্রশ্ন!

মাসুদ সজীব এর ছবি

দোষটা বিশ্বাসের নয়, দোষটা আমার।

যে বিশ্বাস বিধর্মী মানুষ কে হত্যা করলে স্বর্গ বলে, যে বিশ্বাস ভিন ধর্মী মানুষকে ঘৃণা করতে শিখায়, যে বিশ্বাস সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে দেয়াল তুলে দেয় তাকে কেন দোষারপ করা যাবে না?

মানুষের মঙ্গলের নিমিত্তে ধর্ম তৈরী হয়েছিল, ধর্মের মঙ্গলের জন্য মানুষ সৃষ্টি হয়নি।

কিন্তু ধর্ম সৃষ্টির ইতিহাস অন্য কথা বলে, ইতিাস বলে ধর্ম মানেই ছিলো যুদ্ধ, অন্যকে কতল করে নিজেকে-নিজের ধর্ম কে প্রতিষ্ঠা করা। আজও কিন্তু তাই হচ্ছে।

পৃথিবীতে যতগুলো অপ্রয়োজনীয় কাজ আছে তার একটি হলো ধর্ম নিয়ে গবেষণা করা।

এ লাইনের সাথে দ্বিমত করছি ভীষনভাবে। কারো ধর্ম যদি বলে ছয়দিন পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে, পৃথিবী মহাবিশ্বের প্রাণ, মানুষের কোন বিবর্তন হয়নি তাহলে আমি কেন সেটা মেনে নিবো? কোন কিছু সত্য বলে স্বীকার করে নিতে হলে তার পক্ষে প্রমাণ লাগে। আর সেই প্রমাণের জন্যে প্রয়োজন গবেষনা। আপনার কথা যদি সবাই মেনে নিতে তাহলো বিজ্ঞানের জন্ম হতো না, বিজ্ঞানী উদ্ভব হতো না, মানুষ কে আর সভ্যতার শিখরে উঠতে হতো না।

মানুষ যখন অসভ্য ছিল তখন ধর্মটাই ছিল একমাত্র শিক্ষার আলো যা দিয়ে মানুষকে বর্বরতা থেকে রক্ষা করা হতো।

বর্বতা বলতে কি বুঝায়? ছয় বছরের কিশোরী কে বিয়ে করা, ধাসীদের সাথে অবাধ যৌনতা এগুলো কি উৎকর্ষতা? ধর্ম যদি এতই শিক্ষার আলো হয়ে থাকে তাহলে ধর্মের ইতিাসের পাতায় পাতায় এত রক্ত কেন? হাবিল-কাবিল দিয়ে নিজেদের মাঝে যে হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে সেটা কি থেমেছে?

দেশ শাসন করার এতো চমৎকার সব সংবিধান হয়ে গেছে, এখন দেশ শাসন করার জন্য ধর্মের কোন প্রয়োজন নেই। ধর্ম নিয়ে রাজনীতির ব্যাপারটা পরিত্যাগ করা তাই বুদ্ধিমানের কাজ। দেশের প্রচলিত আইন মেনে চললেই সব ঠিক থাকে।

এটা ইসলামের সাথে যায় না, ধর্ম রাষ্ট্রে ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথাই কথাই বলা আছে। দেশের প্রচলিত আইন মেনে চললে সব ঠিক থাকলেও ধর্মের মৌলিক নীতির সাথে তা ঠিক নেই। যেমন ধরেন শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া, স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া এগুলো স্বাভাবিক মনে হলেও ধর্মে এটি নিষিদ্ধ।

ধর্মে অবিশ্বাসীরা ধর্মের খুঁত, ধর্মগ্রন্থের মধ্যে উগ্রতা আবিষ্কার কিংবা ধর্মপ্রবর্তকের মধ্যে লাম্পট্য নিয়ে অপ্রয়োজনীয় গবেষণা বাদ দিয়েও কিন্তু ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।

কোন টা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে আর কোনটা নিয়ে পারবে না তা কিন্তু কেউ ঠিক করে দেওয়ার অধিকার রাখে না। যেটা নিখুঁত বলা হবে তাতে কেন খুঁত থাকবে? যাকে পবিত্রতার প্রতীক বলা হবে তাতে কেন লাম্পট্য থাকবে? যেটা কে শান্তির আধার বলা হবে তাতে কেন উগ্রতা থাকবে?

লেখকটার নাম আয়নমতি বলে লম্বা একখান মন্তব্য করেছি এবং কিছুটা হতাশ হয়েছি। আমরা কি বিশ্বাস করবো আর কি করবো না সেটি সবার ব্যক্তিগত বিষয় কিন্তু কে কি নিয়ে গবেষনা করবে, কথা বলবে সেটা বলার আমরা কেউ না।

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

আয়নামতি এর ছবি

আপনি বুঝতে একটু ভুল করেছেন। পোস্টে কিন্তু ধর্মের অসঙ্গতি বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার নিয়ে বলতে চেয়েছি। প্রশ্ন তোলা উচিৎ, তুলতে গেলে কেন নাস্তিক বলা হবে..নাস্তিক হওয়ার অধিকার কেন দেয়া হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি...বুঝতে পারছি প্রকাশের ক্ষেত্রে ল্যাজেগোবরে করে ফেলে হতাশা বাড়িয়েছি কারো কারো। সেটার দায়ভার স্বীকার করে নিচ্ছি। মজার ব্যাপার হলো, এই হতাশা আমার ফেসবুকের বন্ধুলিস্টের দু'একজনকেও আঘাত করেছে। একজন আমি নাস্তিক নই আস্তিক, এটা মানতে না পারায় আমাকে বন্ধু লিস্টে রাখা যাবে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তিত। অন্য আরেক অজানা মেসেজ প্রেরক বেশি বাড়াবাড়ির ফল ভালো হয় না জানিয়ে ঠিক কী বলতে চাইলেন বুঝিনি। এসব নিয়ে হতাশ হচ্ছি না বরং মজা পাচ্ছি। মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস রাখাটা আধুনিকতা বলেই জানি। কাজেই প্রশ্ন তোলার ক্ষেত্রটাও আমি নিদির্ষ্ট করে দেবার কেউ নই। যেগুলো বলেছি, সেটা নিতান্তই ব্যক্তিগত বিরক্তিকর অভিজ্ঞতার কারণে। ধন্যবাদ সজীবভাই।

মাসুদ সজীব এর ছবি

আমি কোথায় ভুল করলাম সেটার কিন্তু উল্লেখ নেই, তার উপর আমার কোটকরা অংশে অনেক প্রশ্ন ছিলো সেগুলোর ও উত্তর নেই।

আমি অাস্তিক মানুষ এমন ঘোষনা দিয়ে লেখা শুরু করা দু:খজনক। কে আস্তিক, কে নাস্তিক এটা ঘোষনা দেওয়ার কিছু নেই, আস্তিক কিংবা নাস্তিক ভেদাভেদটাই সাম্প্রদায়িক মনোভাব। মন খারাপ

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

এক লহমা এর ছবি

"আমি আস্তিক মানুষ এমন ঘোষনা দিয়ে লেখা শুরু করা দু:খজনক। কে আস্তিক, কে নাস্তিক এটা ঘোষনা দেওয়ার কিছু নেই, আস্তিক কিংবা নাস্তিক ভেদাভেদটাই সাম্প্রদায়িক মনোভাব" - ভাল লেগেছে কথাটা। চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি এর ছবি

১. তা হবে কেন, তবে আমার মতটা কেন তা উপরে সাক্ষীদার জবাবে বলেছি।
২. সেরকম আক্রমনের নির্দেশ দেয়া থাকলে অবশ্যই দোষ ধর্মগ্রন্থের উপর দিয়ে যায়।
৩. ঠিক বলেছেন, সে প্রশ্নটা আমারো।

সৌরভ কবীর এর ছবি

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান চাইছেন। বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্যে চাইছেন। সেজন্যে ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ লাগে। সবকিছু কোন ক্যাচাল ছাড়া পেয়ে যেতেন যদি সেই ফল না খেয়ে বিতাড়িত না হতেন।

__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে

আয়নামতি এর ছবি

অন্ন, বস্ত্র, বাসস্হানের আগেও আরেকটা চাওয়া আছে, ধর্ম নামের বিষমুক্ত একটা আকাশ!
ফল খাইলো কারা, ফলভোগ করে কারা। পিথিমির ঈমান নাই!

নীড় সন্ধানী এর ছবি

শিরোনাম দেখেই ডরাইছি। এরকম কোপাকুপি সময়ে অবিশ্বাসের অধিকার চেয়ে পোস্ট দেয়া চরম দুঃসাহসী কাজ। সেই সাহসী কাজটার জন্য চলুক

পারিবারিকভাবে লালিত বিশ্বাসের বাস করেও তার একটু বাইরে এসে কথা বলার একটা সমস্যা হলো এখানে অনেক কিছু নিজের বিরুদ্ধে চলে যায়। নিজের মতটা সততার সাথে প্রকাশ করতে গেলে সবাইকে খুশী রাখা যায় না। তবু নিজস্ব মত প্রকাশে দ্বিধা করার কোন কারণ নেই। ধর্ম বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাঝখানে অনেক গ্রে এরিয়া রয়ে গেছে। সেখানে প্রচুর মানুষ তার নিজস্ব চিন্তাধারা নিয়ে বাস করে। সেই চিন্তাগুলোও আমাদের জানা দরকার। কিন্তু সেই মতামত জানাতে গিয়ে যখন তোপ-কোপের মুখোমুখি হতে হয় তখনই বিপদ। বাংলাদেশ এখন সেই বিপদ মাথায় নিয়ে আছে। আমার চেয়ে ভিন্ন লাইনে চিন্তা করা মানে তুমি আমার আদালতে দণ্ডিত, শাস্তির দায়িত্বও আমার নিজের। আপাততঃ এই মুশকিল আসানের কোন সম্ভাবনা নাই, তবুও কলম চলুক হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

এক লহমা এর ছবি

চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি এর ছবি

হে একলহমা, এই গায়েবি উঁচানো আঙুল কাহার উদ্দেশ্যে চিন্তিত

এক লহমা এর ছবি

নীড় সন্ধানীর কথায় সমর্থন জানিয়ে। ওনার মন্তব্যের নীচেই বসিয়েছি, তাই না?

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চলুক চলুক

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

সাহস না ভাইয়া, এ আমার অনেকদিনের চেপে রাখা রাগের বহিঃপ্রকাশ(ছ্যাড়াব্যাড়া) বলতে পারেন।
ধর্মের নামে এতোসব অধর্ম, ভণ্ডামী অসহ্য। ধন্যবাদ জানুন।

এক লহমা এর ছবি

বহিঃপ্রকাশটি কিন্তু প্রকৃতই "ছ্যাড়াব্যাড়া" হয়ে গেছে। মাসুদ সজীব, কৌস্তুভ এবং অরফিয়াস ভালভাবে বলেছেন লেখার দুর্বলতাগুলি। আরও কেউ কেউ হয়ত বলেছেন। লেখার নামটা ভাল লেগেছে, এই কঠিন সময়ে মুখ খুলতে সাহস করাটা ভাল লেগেছে। কিন্তু নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়ার যে ছবিটা এই লেখায় ফুটে উঠেছে সেটা লেখার নামের প্রতি সুবিচার করেছে বলে মনে হয়নি।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি এর ছবি

ইয়ে, মানে...

কৌস্তুভ এর ছবি

বেশ দুর্বল লেখা, বায়নামতি ম্যাডাম। উপরে অনেকেই কয়েকটা পয়েন্ট বলেছেন।

ধর্মে অবিশ্বাসীরা ধর্মের খুঁত, ধর্মগ্রন্থের মধ্যে উগ্রতা আবিষ্কার কিংবা ধর্মপ্রবর্তকের মধ্যে লাম্পট্য নিয়ে অপ্রয়োজনীয় গবেষণা বাদ দিয়েও কিন্তু ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন।

আপনার এই কথাটার প্রতিবাদ যারা বলেছেন তাদেরকে আপনি বলেছেন,

আপনার দ্বিমতে আমি সহমত জানাই। আমি অপ্রয়োজনীয় বলছি এটা নিয়ে ক্যাচাল হয় বলে।

ক্যাচাল অনেক নায্য দাবী নিয়েও হয়, যেমন সমকামীদের সম অধিকারের কথা উঠলেই অনেক রক্ষণশীলেরা প্রতিবাদ করে, মামলা মোকদ্দমা হয়, ক্যাচাল হয়। গ্যালিলিও যখন বলেছিল, সূর্য নয়, পৃথিবী ঘোরে, তখনও ক্যাচাল হয়েছিল। আর তখন দুটোর কোনটা ঘোরে এইটা জানা সাধারণ মানুষের জন্য অপ্রয়োজনীয় ছিলও বটে। তা সেসব বাদ দিয়ে গেলেই ভাল হত, কী বলেন?

নাস্তিক হয়ে কেউ জন্মায় না, বড় হয়ে নিজস্ব উপলব্ধি, পড়াশোনা, পরিপার্শ্ব ইত্যাদি বিচার করে কেউ কেউ ধর্মে আস্থা হারিয়ে নাস্তিক হয়ে যায়।

এইটা সম্পূর্ণ ভুল। একটা সদ্যোজাত শিশু ধর্মের কী জানে? সব শিশুই জন্মগতভাবে নাস্তিক, কারণ কেউই ধর্ম বা ঈশ্বর সম্পর্কে জন্মগত জ্ঞান নিয়ে মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে আসে না। যতক্ষণ না কেউ তাকে ধরে বসিয়ে ধর্ম, ঈশ্বর, ধর্মাচার এসব সম্বন্ধে জ্ঞানদান করছে ততক্ষণ পর্যন্ত সে স্বভাবতই নাস্তিক।

আস্তিক হবার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো সমাজে সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের দলে থাকা।

এইটাও দুনিয়ার সব দেশের ক্ষেত্রে সত্যি না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বটে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার উন্নত দেশগুলোয় আস্তিকের সংখ্যা ২০% এর আসেপাশে। https://en.wikipedia.org/wiki/Importance_of_religion_by_country

আরো অনেক ত্রুটি নিয়ে কথা বলা যেত তবে কমেন্টগুলো পড়ে মনে হল আপনি 'আমার মত আমার থাকুক, আপনার মত আপনার' রীতিতে উত্তর দিচ্ছেন, তাই আর বেশি কথা বাড়িয়ে লাভ নেই মনে হয়।

এক লহমা এর ছবি

সহমত।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

অরফিয়াস এর ছবি

লেখাটি আগেই দেখেছি, মূলত নিজের বিশ্বাসের সাথে দ্বন্দ্ব নিয়ে লিখতে গিয়ে লেখক ল্যাজেগোবরে করে ফেলেছেন। সচলে এতদিন ধরে লিখছেন, অন্তত একটু যৌক্তিকতা এধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে আশা করা যায়, যেটা এই লেখাতে দুর্লভ। তর্ক এড়ানোর জন্য মন্তব্য করা হয়না আজকাল কিন্তু কিছু স্পর্শকাতর বিষয়ে অবস্থান পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন, তাই মন্তব্য করছি।

আস্তিকতা হলো ধর্মের প্রতি বিশ্বাস, নাস্তিকতা হলো ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস। অধিকাংশ আস্তিক উত্তরাধিকারসুত্রে এবং জন্মগতভাবে। নাস্তিক হয়ে কেউ জন্মায় না, বড় হয়ে নিজস্ব উপলব্ধি, পড়াশোনা, পরিপার্শ্ব ইত্যাদি বিচার করে কেউ কেউ ধর্মে আস্থা হারিয়ে নাস্তিক হয়ে যায়।

এই ধরনের শুরু থাকলে লেখা পড়ার রুচি থাকেনা। চরম ভ্রান্ত ধারনা। আস্তিকতা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস, ধর্ম সেই ঈশ্বরে বিশ্বাসের কায়দা কানুন। ধর্ম পালন না করেও ঈশ্বর কিংবা হায়ার পাওয়ার এ বিশ্বাস সম্ভব। মানব ইতিহাসে প্রচুর উদাহরণ আছে, সুফিজম, ফকির, লালন ইত্যাদি। নাস্তিকতা ধর্মের প্রতি অবিশ্বাস নয়, সুপারন্যাচারাল এন্টিটি এর বিরুদ্ধে যৌক্তিক অবস্থান। ধর্মের বিরুদ্ধে অবস্থান সঙ্গত কারনে আসে কারন সকল ধর্মই একটি সুপারন্যাচারাল এন্টিটিকে কেন্দ্র করে আবর্তমান। নাস্তিক হয়েই সবাই জন্মায়, যতক্ষণ না পর্যন্ত পরিবারের পালন করা ধর্মের বীজ সেই মানুষটির মস্তিষ্কে বপন করা না হয়। নাস্তিক হয়ে যাওয়ার কিছু নেই।

ধর্মে বিশ্বাস করা মানে পরকাল বিশ্বাস, পরকালে আছে স্বর্গ নরকের আশ্বাস। ধর্মকর্ম ঠিকভাবে করলে স্বর্গ মিলবে, না করলে নরক।

যিনি নাস্তিক তিনি দুটো বিপদ মাথায় নিয়ে থাকেন। একটা হলো ইহকালের, আরেকটা পরকালের। ইহকালের বিপদটা হলো সংখ্যালঘু হওয়া এবং মাথার উপর যে কোন সময় চাপাতির হুমকি নিয়ে ঘোরা। আর পরকালের বিপদ হলো যদি ‘শেষ বিচারের দিন’ ব্যাপারটা সত্যি হয়, তাহলে অবিশ্বাসের দায়ে নিশ্চিত দোজখ প্রাপ্তি।

নাস্তিকতা, বিশ্বাস, অবিশ্বাস নিয়ে যদি বিন্দুমাত্র পড়াশোনা থাকে এধরনের লেখা হাস্যকর। আপনার এই উক্তি Pascal's wager হিসেবে পরিচিত এবং অনেক পুরনো একটি বিতর্ক। সময় করে পড়ে নেবেন এই বিষয়ে। এই পৃথিবীতে ধর্ম আছে হাজার খানেক। সকল ধর্মই বলে তাদের ঈশ্বর একমাত্র সত্যি, তাদের পালন করা আচার আচরণই একমাত্র পথ! কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখুন আপনার ঈশ্বর এবং ধর্মই যে সত্যি তার কি কোন নিশ্চয়তা আছে? আবার ঈশ্বর যে আছে তারও কোন নিশ্চয়তা নেই। সেই হিসেবে আপনি যেই ধর্মই পালন করুন, যেই ঈশ্বরকেই মানুন, যদি ধরে নেই শেষ বিচারের দিন বলে কিছু আছে তা হলেও আপনার ছাড় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভেবে দেখুন, যদি আপনার ঈশ্বর সত্যি না হয়ে অন্য কোন ঈশ্বর সত্যি হয় তাহলে কি অন্য ধর্ম পালন করে তাকে আপনি প্রতিদিন অবমাননা করছেন না?

এই ধরনের ফ্যালাসি খুব চলে হালকা বিতর্কের জায়গায় কিন্তু বর্তমানে লেখালেখি কিংবা একটু ম্যাচিউর লেভেলে এসবের আসলেই কোন মূল্য নেই।

আমার আলটিমেট ডেসটিনি যদি বেহেশতের দিকে যায়, তাহলে কিছুকাল কষ্ট করতে অসুবিধা কি! তাছাড়া, মরলেই তো আর ওপারে আমার জন্য ৭২টা হুর অপেক্ষায় থাকছে না, একজন ঈমানদার পুরুষের জন্য যেমনটা থাকবে, কাজেই অত তাড়া কিসের।

একবার ভেবে দেখুন কতটা রিডিকুলাস শোনাচ্ছে। স্পষ্টই ধর্মগুলো পুরুষতান্ত্রিক। যেখানে একজন নারীকে শুধু ইহকালেই না পরকালেও ধর্মে চরম অবমাননা করা হচ্ছে, তার অধিকার পুরুষের তুলনায় কিছুই না, সেখানেও এধরনের বৈষম্যমূলক বিশ্বাস আপনি ধারন করতে প্রস্তুত!

সুতরাং বিশ্বাসগুলো যদি আমি ঠিকঠাক রেখে দুনিয়ার কাজকর্ম বিজ্ঞানসম্মতভাবে করি, তাহলে দুই কূলই রক্ষা হলো।

হাসালেন! ধর্মের শেকড় যেখানে সুপারস্টিশন সেখানে আপনি সেটা মেনে বিজ্ঞানসম্মতভাবে জীবন চালাবেন! হিপক্রেসির একটা সীমা থাকা উচিত। বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সংঘর্ষই এখানে। বিজ্ঞান মানুষের জীবন থেকে সুপারস্টিশন এর প্রয়োজনীয়তা দূর করেছে। ধর্মের উদ্ভবই ব্যাখ্যা করতে না পারা প্রশ্নগুলোর আপাত উত্তর এর জন্য। প্রাচীন যুগে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও এখন এর কোন মূল্য নেই। অন্ধ বিশ্বাসকে পুঁজি করে যেই ধর্মের উত্থান তাকে আঁকড়ে থেকে বিজ্ঞানসম্মত হওয়া যায়না, দুঃখিত।

কিন্তু ধর্ম পালন নিয়ে কেউ আমাকে ফতোয়া দিলে বিরক্ত হই। আমাকে হেদায়েত করার দরকার নাই। আমি নিজের ভালো নিজেই বুঝি। এমনকি আমি যদি স্বেচ্ছায় নরকবাসও করতে চাই, আপনি বলার কে? সব ধর্মেই তো স্বর্গ নরক দুটো ব্যাপারের কথা বলা আছে। সবাইকে যদি পিটিয়ে বেহেশতে নিয়ে যেতে চান, তাহলে দোজখবাস করবে কে? পৃথিবীতে পাপী মানুষের সংখ্যা যে অন্ততঃ অর্ধেক হবে সেটা তো সৃষ্টিকর্তাই ঠিক করে রেখেছেন। নইলে ৮ বেহেশতের বিপরীতে ৭ দোজখ সৃষ্টিই করা হতো না। সুতরাং একজন অবিশ্বাসীকে পিটিয়ে কতল করে আপনি কি খোদার উপর খোদকারী করছেন না? বর্তমান পৃথিবীতে যতোগুলো হানাহানি, হিংসাত্মক নৈরাজ্য তার মধ্যে সিংহভাগই হলো ধর্মোন্মাদদের জন্য। দুঃখের সাথে বলতে হয় আমার ধর্ম এগিয়ে আছে এক্ষেত্রে।

ভেবে দেখুন, স্বর্গ নরকের ধারনা কতটা ত্রুটিপূর্ণ। ঈশ্বর যদি সব কিছু সৃষ্টি করে থাকেন, সর্বজ্ঞ হন, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই সম্ভব না হয় তাহলে আপনি যাই করে থাকেন না কেন সেটা ঈশ্বরেরই ইচ্ছা! সেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে আপনার কিছু করার ক্ষমতা নেই বলেই ধর্ম গুলো প্রচার করে। তাহলে ঈশ্বর তার নিজের ইচ্ছার মাধ্যমেই কাউকে দিয়ে খারাপ কাজ করাচ্ছে, আবার তাকেই নরকে পাঠাচ্ছে। এটা তো কোন বিচারই না! সেই হিসেবে নরকে পাঠানোর মানেই হচ্ছে অবিচার! ধর্মগুলো এই স্বর্গ নরকের ধারনা তৈরিই করে মানুষকে একটি ভ্রান্ত ধারনা দিয়ে বশে রাখার জন্য। একটু চিন্তা করলেই এই ধারনার শূন্যতা বোঝা সম্ভব!

বিশ্বাস একটি কঠিন ব্যাপার। বিশ্বাস দিয়ে মানুষ অসাধ্য সাধন করতে পারে। বিশ্বাসের মাত্রার উপর নির্ভর করে সে কতোটা করতে পারবে। বিশ্বাসের সাথে আগুনের তুলনা করা যায়। আগুন আলোর উৎস আবার আগুন ধ্বংসেরও সূত্র। আগুনটা কার হাতে আছে তার উপর নির্ভর করে সে কি আলো হবে না দাবানল হবে। যারা কেরোসিন কুপিতে পড়াশোনা করে তারা অবশ্যই জ্ঞানের সাধক। আবার যারা কেরোসিন আগুনে মানুষ পোড়ায় তারা নিশ্চিত অন্ধকারের সাধক। বিশ্বাসও খানিকটা সেরকম। কঠিন ধর্মবিশ্বাস দিয়ে কেউ নিজের স্বর্গপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে।

বিশ্বাস কোন কঠিন ব্যাপার না, এটি একটি ভাইরাস। মানুষের মস্তিষ্ক এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার নিজের চিন্তাশক্তি লোপ পায়। বর্তমানে নিউরোলজিস্ট এর গবেষণাগুলো ঘেঁটে দেখুন। বেশ ভাল কিছু স্টাডি আছে কেন মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করে নিজেকে নেশাগ্রস্থের মত করে রাখে। মানুষ অসাধ্য সাধন করে নিজের দক্ষতায়। এর সাথে সুপারন্যাচারালে বিশ্বাসের কোন যোগসূত্র নেই! প্রার্থনা কিংবা ঈশ্বরে বিশ্বাস যে মানুষের কোন কাজে কোন প্রভাব ফেলে না এই বিষয়ে গবেষণা হয়ে গেছে যথেষ্ট। এর সাথে নিজের উপর আস্থাকে গুলিয়ে ফেললে তো মুশকিল।

আপনার লেখার প্রতিটি প্যারা এধরনের ভ্রান্ত এবং কন্ট্রাডিক্টরি তথ্যে ভরপুর। পুরোটা নিয়ে লিখতে গেলে আমার নিজেরই একটা লেখা দাঁড়িয়ে যায়! আর লিখছি না।

প্রথমত এধরনের লেখা লিখতে গেলে যে পড়াশোনা করতে হয় সেটা আপনি করেন নি। নিজের মনের দ্বন্দ্বগুলো আগে নিজের সমাধান করা প্রয়োজন। সেটা না করেই আপনি চেষ্টা করেছেন স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে লেখার। দুঃখজনক হলেও আপনাকে সাধুবাদ জানাতে পারলাম না।

আর সচলের মডারেশন পার করে এই ধরনের লেখা প্রকাশিত হলে আশ্চর্য হই!

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

কৌস্তুভ এর ছবি

সহমত, এই লেখার ধরন তুষারীয় বা ফারুকীয় এর থেকে খুব আলাদা না, সচলে এরকম অর্থহীন লেখা আশা করি না।

আয়নামতি এর ছবি

সাড়ে সব্বোনাশ! করেছেন কী আপনারা ইয়ে, মানে... মন্তব্যের তোপে তো উড়ে যাবার অবস্হা। যাইহোক, ত্যানা প্যাঁচাইতে ইচ্ছা করলো না জনে জনে মন্তব্যের উত্তরে, তাই এক সাথেই সবার মন্তব্যের উত্তর দিলাম।

দীপনের বাবা কেন ছেলে হত্যার বিচার চান না, সেটা নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। অনেকেই যে যার মত করে তাদের বক্তব্য নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চেয়েছেন। আমি যে ভাবনা ভাবিইনি সেরকম একটা খোপে জোরপূর্বক ঠেলে দিয়ে আপনারাও যেন একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে চাচ্ছেন। আপনাদের মন্তব্যগুলো পড়ে সেরকমই মনে হচ্ছে।

সদ্যোজাত শিশু যেমন ধর্ম নিয়ে জন্মায়না, একইভাবে যৌক্তিকতা সম্পর্কেও সব জ্ঞান নিয়ে মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে আসে না কিন্তু। সে জন্য তাকে অনেকটা সময় পেরুতে হয়। যথেষ্ট জ্ঞানপ্রাপ্ত হবার পরই তার পক্ষে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয় কোন পথ বা মতের প্রতি বিশ্বাস রাখতে আগ্রহী। তাই ঠেসে ধরে জন্মের পর কাউকে ধর্মের আফিম খাওয়ালেও সেরকম জ্ঞান প্রাপ্ত হয়ে সে মানুষ ঠিকই নিজের পছন্দ মত পথে পা বাড়ায়। Bertrand Russell যেমনটা বলেছেন Religion is something leftover from the infancy of our intelligence. It will fade away as we adopt reason and science as our guidelines.

এই লেখার প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ, আর এটা তো বলার অপেক্ষা রাখেনা বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ট দলে কারা আছেন। সেটা স্পষ্ট করে বলাটা অন্যায় হয়েছে কিনা বুঝলাম না। যেন এটা বলা মাত্রই ভেদাভেদ শুরু হয়ে গেল। তার আগে সবাই 'কি সুন্দর দিন' কাটাইতেন! লেখার টোনে এটুকু তো স্পষ্ট হবার কথা, অবস্হানগত সুবিধা আদায়ের আগ্রহ নিয়ে আমি লিখিনি। বরং নিজের ধর্মকে প্রশ্ন করতে চাই, প্রশ্নের স্বাধীনতা চাই। কেন অন্ধের মত আমাকে সব মেনে নিতে হবে? ফারুকী কিংবা তুষার কী এমনটাই বলছেন? সন্দেহ আছে আমার। তারা সুবিধাবাদী অবস্হান থেকে যা বলার বলছেন। এই পার্থক্যটাই আসল আমার কাছে। আওয়ামীলীগের সমালোচনা করলেই যেমন আমি বামাতী বা জামাতিপন্থী হয়ে যাইনা। একইভাবে কোথায় কে কী বললেন তার সাথে আমার মিল খুঁজে এভাবে ট্যাগিত করাটা অন্তত আপনাদের কাছ থেকে আশা করিনা। দয়া করে ফারুকী কিংবা তুষারের মতের সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলার বিরক্তিকর কাজটি করবেন না। মতের সাথে না মিললেই দিয়ে দাও ট্যাগ- যা আখেরে প্রগতিশীলদের বিভক্তই করছে। ধর্মীয় অন্ধত্ব নিয়ে যেখানে আমাদের সরব হবার কথা সেখানে অহেতুক আমার মধ্যেই সব সমস্যা ভেবে সময়ক্ষেপন করা বুদ্ধিমানের কাজ না। আমি জ্ঞানহীন মানুষ, আমার ভুলভ্রান্তি হতে পারে, কিন্তু আপনারা কেন তেমনটা করছেন, বুঝতে অক্ষম।

ধর্ম হলো অনেকটা মর‍্যাল গ্লু'র মত। কেউ যদি সেটায় জুড়ে থেকে শান্তি পেতে চান, আমি আপত্তি করার কেউ নই। কিন্তু যখনই সেটা অশান্তির কারণ ঘটাবে আমাদের আপত্তি করাটা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে, তাই লাফাতে লাফাতে লেখাটা জমা দিয়েছিলাম সচলে। একটা কমিউনিটি লেখক ফোরাম বা ব্লগে নানান ধরনের লেখা আসে। এখানে(সচলে) শুধু জ্ঞানী স্কলার মানুষেরা লিখবেন, সেরকম কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই বলেই না আমি আবজাব লিখি।

স্ববিরোধীতা মনে হয় মানুষ মাত্রেই কমবেশি আছে। নইলে যে লেখা পড়তে রুচিতে বাধে, সে লেখা পড়ে সময় নষ্টের মানে তো দেখিনা, অন্তত আমি হলে করতাম না ভাই। এটাও কিন্ত আপনার/আপনাদের এক ধরনের স্ববিরোধীতা হয়ে গেল। আপনি/আপনারা যে শুধু পড়েছেন তাই নয়, লাইন বাই লাইনের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের আগ্রহও দেখিয়েছেন। আর যেভাবে লেখার লাইন ধরে ধরে প্রশ্ন করা(কিছু বিশ্লেষণ পড়ে আমি ফিক করে হেসেও ফেলেছি। ৭২টা হুরী বা বিজ্ঞানসম্মতভাবে জীবন পাড়ের বিষয়টা যে ঠাট্টাচ্ছলে বলা সেটা না বুঝেই কেমন দিব্যি সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দেখেই মজাটা পাওয়া) হয়েছে, ওভাবে অনেক লেখাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা চলে।

আর এরকমের অখাদ্য, অরুচিকর লেখা কিভাবে মডারেশন প্যানেল পেরিয়ে এলো সে বিষয়ে আমি একেবারেই অন্ধকারে, আপনাদের সাথে আমিও প্রশ্নটা রাখছি তাঁদের কাছে। ব্লগারদের 'কলম চলবে' তে সংহতি জানিয়েই আমি নিজের মতামত দিয়ে একটা লেখা লিখেছি। লেখাটা সর্বজনগৃহীত হবে তেমন আশা করিনা। আমার মত শ্রেষ্ঠ মত তাও বলছি না। আপনি অমত করবেন, দ্বিমত করবেন, সমস্যা নাই। কিন্তু আপনার সাথে আমার মত না মিললে এ ধরনের লেখা সচলে দেখতে চাই না, এ ধরনের লেখা পড়ার রুচি হয় না- এরকম অসহিষ্ণু কথা অন্তত মুক্তমনের মানুষদের কাছ থেকে শুনতে ভালো লাগে না। এটাও একধরনের প্রতিক্রিয়াশীলতা হয়ে যায় কিন্তু।

এই লেখার একাংশ হয়তো আমার বিশ্বাসের সাথে আমার স্ববিরোধিতা। সব মানুষ একশোভাগ সুবিচার করতে পারে না নিজের প্রতি। আমি আস্তিক ঘোষণা দিয়েছি দম্ভ করার অর্থে নয়, বরং আস্তিকদের জানান দিতে যে আমি আস্তিক হয়েও ধর্মের বিরুদ্ধে বলার অধিকার রাখি। কিন্তু আপনাদের মন্তব্যের সুর দেখে মনে হচ্ছে আস্তিক হওয়া একটা অপরাধ। তাছাড়া আমি আস্তিক হলেও আর কারো উপর আমার বিশ্বাস চাপাবার মতো কিছু বলিনি। আমার এই লেখার প্রায় পুরোটাই স্বগোতক্তির মতো। অশিক্ষিত ধর্মান্ধদের কোপের সামান্য এট্টু ভয় যে কাজ করেনি তা না, কিন্তু সুশিক্ষিত সহসচলদের এতটা তোপের মুখে পড়তে হবে ভাবিনি।

কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই পোস্টটা লিখেছি যে কারণে অন্নেক দুর্বল, ছেলেখেলা টাইপ হয়েছে। ধর্মসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে খুব আগ্রহী নই বলে পড়াশোনার ধারও ধারিনি। আমার মনে হয় এটা নিয়ে আরো লেখালিখি হোক। আমার মত একদম ফালতু লেখার সাথে সাথে স্কলারের দাঁতভাঙা জবাব সমৃদ্ধ লেখাও আসুক। কারণ আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস বা অবিশ্বাস এখানে প্রধান বিষয় নয় একেবারেই। প্রধান বিষয়টা হচ্ছে দেশের একটা বিশাল অংশ অন্ধের মত করে কিছু ভুল ধ্যান ধারণা নিয়ে বড় হচ্ছে, বুড়ো হচ্ছেন। আমাদের ভাবনাটা তাদের নিয়ে হোক। একটা ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ রেখে গেলাম, দেখুন এবং ভাবুন এরা ঠিক কোন শিক্ষা নিয়ে বড় হচ্ছে? এদের জন্য আমাদের করণীয় কিছু আছে কী নেই! ভালো থাকুন সবাই, ধন্যবাদ।

বি:দ্র: একটা পেপারের কাজে বেশ কিছুদিন ব্যস্ততার মধ্যে থাকতে হবে, তাই এরপর যদি মন্তব্য করেন কেউ, উত্তরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আর এ প্রসঙ্গে বলার আর কিছু আছে বলেও মনে হয় না। ভালো থাকুন সবাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

ধর্ম নিয়ে সমালোচনা করে লেখার জন্য লেখক, প্রকাশকদের খুন হয়ে যেতে হচ্ছে এমন একটা সময়ে জনগনের থেকে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া আসছে তাকে মোটামুটি ভাবে নিচের কয়েকটা ভাগে ভাগ করা যায়।

১। ঠিক আছে, উচিত সাজা হইছে, আরও এই রকম হওয়া দরকার। (চাপাতিওয়ালাদের সরাসরি সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া)

২। ইসলাম শান্তির ধর্ম। যারা এই গুলা করে তারা সহীহ পথে নাই। ধর্মান্ধ চাপাতিওয়ালারা যা করতেছে তা মোটেই ঠিক না, কিন্তু বল্গারাই বা ধর্ম / ধর্মপ্রচারকদের নিয়ে এত আজেবাজে কথা লিখতে গেল কেন? আরেকটু সংযতভাবে লিখলেই পারত, আর দুনিয়াতে এত বিষয় থাকতে এইসব নিয়েই লিখতে হবে কেন? (তুষারীয় বা ফারুকীয় / যারা কলমের বিপরীতে চাপাতি ধরাকে হালাল করতে চায় / ধর্ষিতার কাপড় ঠিক ছিলনা টাইপের লোকদের প্রতিক্রিয়া)

৩। কলমের বিরুদ্ধে চাপাতি কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য নয়। (যারা সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পছন্দ করেন তাদের প্রতিক্রিয়া)

এই লেখাটায় আপনার অবস্থান ২ আর ৩ এর মাঝামাঝি কোন জায়গায় বলে আমার মনে হয়। যখন দেশে শান্তি শান্তি ভাব ছিল তখন এই ধরনের একটা লেখা লিখলে লেখক হয়ত এতটা কঠিন প্রতিক্রিয়া পেতেন না। কিন্তু এই সময়ে এই বিষয়ে লিখলে ৩ নম্বর অবস্থান ছাড়া লেখক যাই লিখেন তার ঝোল শেষ পর্যন্ত চাপাতিওয়ালাদের পাতেই যায়, এই কারনেই ধারনা করি এখন পর্যন্ত অধিকাংশ পাঠক হতাশ হয়েছেন সচলায়তনে এমন একটা লেখা পড়ে। সত্যি বলতে কি এই লেখার শিরোনামটা ছাড়া আর কোন কিছুই ৩ নম্বর অবস্থানের সাথে মানানসই নয়। এই লেখাটা শিরোনাম ছাড়া পড়লে ২ নম্বর টাইপের লোকদের কথাবার্তা থেকে আলাদা করা খুবই কষ্টসাধ্য। লেখক যে অবস্হানগত সুবিধা আদায়ের জন্য এই লেখাটি লিখেননি তা কেবলমাত্র লেখার মেরিট থেকে বোঝা সম্ভব না বলেই আমার মনে হয়।

আপনি অনেক অনুযোগ সহকারে যে কয়েকজনের মন্তব্যের উত্তরে যে প্রতিমন্তব্যটা দিলেন তার কিছু অংশ বেশ আপত্তিজনক, যেহেতু প্রতিমন্তব্যটা আমাকে উদ্দেশ্য করে নয় তাই সেগুলো নিয়ে কথা বলাটা শোভন দেখায় না। শুধু একটা প্রশ্ন করি - বি:দ্র:দিয়ে যে দুটি লাইন লিখেছেন তা একটা কমিউনিটি লেখক ফোরাম বা ব্লগের একটি অন্যতম চালিকাশক্তি লেখক-পাঠক মিথস্ক্রিয়া কে অনুৎসাহিত করবে না?

আশা করি ভাল থাকবেন,আরও লিখবেন।

আমি তোমাদের কেউ নই -> আতোকেন

সত্যপীর এর ছবি

ঠিক আছে।

..................................................................
#Banshibir.

অরফিয়াস এর ছবি

আপনার পুরো মন্তব্যের প্রতি মন্তব্যে যাওয়ার আগে শুধু শেষের আগের প্যারা নিয়ে বলছি।

কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই পোস্টটা লিখেছি যে কারণে অন্নেক দুর্বল, ছেলেখেলা টাইপ হয়েছে। ধর্মসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে খুব আগ্রহী নই বলে পড়াশোনার ধারও ধারিনি।

নিজেই স্বীকার করে নিচ্ছেন পড়াশোনা না করে প্রস্তুতি ছাড়াই লিখেছেন। সচলে এতদিন ধরে আছেন, জেনে যাওয়া উচিত আর দশটা ব্লগের সাথে এর পার্থক্য লেখার মানে, এখানে লেখকরা পরিশ্রম করে লেখেন। যেই স্পর্শকাতর বিষয় সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে এতগুলো মানুষের মৃত্যুর কারন সেই বিষয়ে লিখতে এসে এধরনের না জেনে লিখেছি তো কি হয়েছে ধরনের আচরন হাইলি অব্জেকশনেবল। তারপরেও আপনি খুবই আপত্তিজনকভাবে নিজের এই আচরণকে জাস্টিফাই করে যাচ্ছেন।

যাইহোক, ত্যানা প্যাঁচাইতে ইচ্ছা করলো না জনে জনে মন্তব্যের উত্তরে, তাই এক সাথেই সবার মন্তব্যের উত্তর দিলাম।

বাহ দুর্দান্ত। আসলেই নিজের লেখাতে যে পরিমান ত্যানা পেঁচিয়েছেন মন্তব্যে তার থেকে আর বেশি কি প্যাচাবেন।

আপনার বাকি মন্তব্য আপনার লেখার গোঁজামিলের প্রতিফলন। আপনাকে যে প্রশ্নগুলো করা হয়েছে সেগুলো পয়েন্ট হিসেবে যৌক্তিকভাবে লেখা আছে। যদি দেয়ার মত মানসিকতা থাকে, উত্তর দিতে পারেন, না থাকলে তির্যক মন্তব্য করে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা জারি রাখুন।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মাসুদ সজীব এর ছবি

আয়নাদি, আপনার লেখা নিয়ে করা মন্তব্য কে আপনি ব্যক্তি আক্রমন হিসেবে নিয়েছে। এখানে আলোচনা হয়েছে লেখা নিয়ে, আপনাকে নিয়ে নয়।

যে কোন যৌক্তিক আলোচনায় পয়েন্ট বাই বাই আলোচনায় করতে হয়। দশটা প্রশ্নের উত্তর সারমর্ম করে আমি এটা বলিনি, ওটা বলিনি বললে আলোচনা টা আর যৌক্তিক থাকে না, হয়ে যায় ভাবাবেগের প্রতিফলন। আপনি সেটাই করছেন বারবার। আমি আমার প্রথম মন্তব্যে অনেকগুলো বিষয়ে দ্বিমত জানিয়েছি, আপনি সেগুলোর উল্টো যুক্তি দেননি, সেগুলোর ব্যাখা দেননি। আশা করি প্রথম মন্তব্যে আমি যে বিষয়গুলো নিয়ে দ্বিমত জানিয়েছি আপনি সেগুলোর পাল্টা যুক্তি/ব্যাখা দিবেন। এবং আপনার মূল লেখা থেকে কোট করা আপনার এই উপলব্দি তে কি আপনি এখনো অবিচল কি না জানাবেন।

পৃথিবীতে যতগুলো অপ্রয়োজনীয় কাজ আছে তার একটি হলো ধর্ম নিয়ে গবেষণা করা।

আর দ্বিতীয়ত, আপনি প্রতি উত্তরের ভুল ব্যাখা করছেন। আস্তিক হওয়া অপরাধ কিংবা নাস্তিক হওয়া পূর্ণ্য এমন কিছু আমি বলিনি। মানুষের পরিচয় মানুষ থাকুক, আস্তিক-নাস্তিক নয়, আমি এমনটা বুঝিয়েছি। আপনাকে একটা উদাহারণ দেই, ধরেন কেউ হিন্দু ধর্মের নানান অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা করে একটা লেখা লিখবেন, তো লিখতে গিয়ে কি তিনি প্রথমে বলবেন আমি হিন্দু তারপরও আলোচনা করছি? কোন যৌক্তিক আলোচনায় কোনদিন ধর্ম তথা আস্তিকতা-নাস্তিকতা আসার প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন যুক্তির, প্রয়োজন প্রমাণের। আমি সেই দিকটি বিবেচনা নিয়ে আপনাকে বলেছি এমন ঘোষনা দু:খজনক।

আপনার বি:দ্র: সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে। ব্লগ হলো লেখকের লেখা আর মন্তব্য-প্রতিমন্তব্যে ভরে ওঠা একটি স্থান। লেখকের দায়িত্ব যতক্ষন পাঠকের প্রশ্ন থাকবে ততক্ষন তার উত্তর দেওয়া। পাঠকের সাথে সরাসরি সংযোগ থাকে বলেই ব্লগের আলোচনাগুলো এত প্রাণবন্ত হয়, কখনো কখনো লেখায় চেয়ে মন্তব্য শক্তিশালী হয় এবং তাতে পাঠক-লেখক সকলের অনেকগুলো বিষয় জানা হয়। এখন আপনি যদি বলেন এ প্রসঙ্গে আর কিছু বলার নেই তাহলে আলোচনার পথ বন্ধ, এমন টা হওয়া উচিত?

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

মন মাঝি এর ছবি

এই লেখাটা পড়ে আমার মনে হয়েছে এটা একজন বিশ্বাসী আরেকজন / অন্য বিশ্বাসীর/দের জন্য লিখেছেন। ভাল উদ্দেশ্য নিয়েই লিখেছেন। এদিক দিয়ে দেখলে এরকম লেখা যেরকম হওয়া দরকার, এটা বোধহয় সেরকমই হয়েছে। একজন বিশ্বাসী অন্য বিশ্বাসীদের ভায়োলেন্স থেকে নিবৃত রাখার জন্য লিখেছেন, অবিশ্বাসীদের দর্শন গলধকরণ না করে বা তাঁর নিজের কোর বিশ্বাস বিসর্জন না দিয়ে তার পক্ষে যা লেখা সম্ভব তা-ই লিখেছেন। এমন লেখা যার মূল উদ্দেশ্য ধর্মপ্রচার নয় এবং যার অন্যবিধ কিছু বাস্তব সামাজিক মূল্য বা পজিটিভ ইফেক্ট থাকলেও থাকতে পারে হয়তো (এই শেষের পয়েন্টটা হয়তো বিতর্কযোগ্য, তাই ধরে নেই এটা নাও থাকতে পারে) - বিশেষ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ বিশ্বাসীদের একটা দেশে। সমস্যা হলো অবিশ্বাসীদের এটা রুচিতে বাঁধছে, বাঁধছে বিশ্বাসীদের জন্য লেখা একজন বিশ্বাসীর শান্তিপূর্ণ পার্স্পেক্টিভ এমনকি শুনতেও। প্রশ্ন উঠছে, সচলায়তন কি এমন ধরণের লেখার মাধ্যম বা ভেহিকল হতে পারে? এখানে কি শুধু অবিশ্বাসীরাই লিখতে পারবেন বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে সবার জন্য যে-কোন বিষয়ে এবং এটাকে শুধুমাত্র তাঁদেরই লেখালেখির প্লাটফর্ম হতে হবে, কিন্তু বিশ্বাসীরা যেকোন বিষয়েই - এমনকি অবিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে লিখতে গেলেও - তাঁদের বিশ্বাস বিসর্জন দিয়ে তবেই শুধু লিখতে হবে? এমনকি তাঁর টার্গেট অডিয়েন্স যদি বিশ্বাসীরা হন, তাহলেও? আমি যদ্দুর বুঝি, একটা লেখার টার্গেট অডিয়েন্স দুনিয়ার সবাই হতে হবে, বা পরস্পর-বিরোধী দু'টো গ্রুপের উভয়েই হতে হবে সবসময়, এমন কোন বাধ্যবাধকতার দরকার নেই বা থাকা সবসময় বাস্তব-সম্মতও না। কিন্তু প্রশ্ন এসেই যাচ্ছে - উপরে বলা সমস্ত শর্ত পূরণ না হলে কি লেখা মডারেশন পার হবে না বা হওয়া উচিত না? আমি এই প্রশ্নটা কোন পক্ষ নিয়ে বা জাজমেন্টাল দৃষ্টিকোন থেকে করছি না, বরং উপরের কমেন্টগুলি দেখে এবং আগেও এরকম অনেক কমেন্ট দেখে ঐ কমেন্টগুলির কখনও এক্সপ্লিসিট কখনও ইমপ্লাইড অর্থগুলি প্রশ্নবোধক আকারে মাথায় এসে যাচ্ছে। এদিক থেকে দেখলে, প্রশ্নগুলি শুধু আমারই না - বরং আরও অনেকেরই মনে হয়। তাই এ বিষয়ে সচলায়তন কর্তৃপক্ষের চিন্তাভাবনা.... না শুধু চিন্তাভাবনা না, সুস্পষ্ট কোন নীতিনির্ধারণী বক্তব্য বা দিকনির্দেশনা থাকলে বোধহয় ভাল হতো। তাহলে, আয়নামতি বা ভবিষ্যতে তাঁর মতো আর কোন মতসাপেক্ষে রুচিহীণ, রিডিকুলাস, সীমাহীণ হিপোক্রেট, নিউরোলজিস্টসম্মতভাবে চিন্তাশক্তিহীণ ও নেশাগ্রস্ত সংক্রামক ভাইরাসবাহীরা সদুদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের বিবেকমত (অন্তত তাঁদের নিজেদের দৃষ্টিকোন থেকে) কিছু লিখতে এসে তাঁদের চিন্তাশক্তিহীণতা আর নেশাগ্রস্ততার ভাইরাস আমাদের মধ্যে সংক্রমিত করে আমাদেরকে এভাবে বিপদাপন্ন বা বিবমিষাগ্রস্ত করতে পারবেন না, এবং তাঁদের নিজেদেরকেও কোন অপ্রত্যাশিত বিব্রতকর পরিস্থিতি্র মুখোমুখি পড়তে হবে না। অথবা, আমরা জেনে যাবো আমাদের সীমানা কোথায়, আমাদের ব্যক্তিগত রুচি-অরুচির উপর অন্যের লেখা-না লেখার অধিকার কতটা নির্ভর করে এখানে, সহ-লেখকদের প্রতি কত বিচিত্র ধরণের বিশেষণ আর সুমধুর বাক্যবান আমরা প্রয়োগ করার অধিকার রাখি। তারাও বাঁচেন, আমরাও বাঁচি।
=================================

পুনশ্চঃ ও হ্যাঁ, আরও একটা প্রশ্ন বাকি রয়ে গেছে। এই প্রশ্নে আমার নিজেরও খানিকটা স্টেক আছে বটে। আমরা জানি হাতের পাঁচটা আঙুল সমান হয় না। মানুষের বিদ্যাবুদ্ধি-পড়াশোনা একইভাবে সমান হয় না। কোনদিনও বোধহয় হবে না। প্রায়ই শুনি, আপনি কিছু জানেন না, আপনি কম জানেন, পড়াশোনা করেন নাই, আরও লেখাপড়া করে আসেন এখানে লেখার আগে, ইত্যাদি। আসলে সচলায়তনে লেখার জন্য বিদ্যাবুদ্ধি, জ্ঞান ও মেধা, ইত্যাদির একটা নৈর্ব্যক্তিক ও অব্জেক্টিভ এন্ট্রি-লেভেল কি হতে পারে? সচলায়তনদা এ বিষয়েও একটু আলোকপাত করলে ভাল হত, কারন আমার নিজেরও বোধবুদ্ধি কম বিধায় সবসময় আতঙ্কে থাকি!

ধন্যবাদ।

****************************************

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।