'আলিগড়' - অসহিষ্ণু সমাজে, অনাহুত শুদ্ধচারিতার গল্প

আয়নামতি এর ছবি
লিখেছেন আয়নামতি [অতিথি] (তারিখ: শুক্র, ০৩/০৩/২০১৭ - ১২:৫২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সহস্র বছরের স্হির বিশ্বাসের হেজিমনিতে যে কোনো আঘাত আমরা সইতে পারিনা। সংস্কারের মিথ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখলে আমরা কেমন একাট্টা হয়ে হৈ হৈ করে উঠি। নিজে আমিষভোজী বা বিবাহের বিপক্ষের বলেই যেন বিপরীত অবস্হানের মানুষের পছন্দকে প্রশ্নবিদ্ধ করায় আমার রায় দেবার অধিকার জুটে যায়।এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির একান্ত ব্যাক্তিগত যৌন আচরণের সাথে যদি আমাদের ছকবন্ধ পছন্দের ঠোকাঠুকি লাগে তবে তো হয়েই গেল! ধাঁ করে তখন কেমন মিলেমিশে একাট্টা হয়ে যায় প্রচলিত ধ্যাণ ধারণার আল্লা-ভগবান-ঈশ্বর বিশ্বাসীরা। বিপরীত বিশ্বাসের মানুষটার অবস্হান তখন নো ম্যানস ল্যান্ডে। তার বাস্তব জীবনে রোজকেয়ামত টেনে হিঁচড়ে নামাতে আমাদের গলা তখন একই স্কেলে। মানুষটার সব পরিচয় তখন স্হির হয়ে যায় তার বিপরীত যৌন প্রবৃত্তির নিক্তিতে।

ঠিক এমনটাই হয়েছিল আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের(পরিচালক সযত্নে মুসলিম শব্দটা এড়িয়ে গেছেন অবশ্য) ৬৪ বছর বয়স্ক ভাষা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শ্রীনিবাস রামচন্দ্র সিরাসের সাথে। তার অপরাধ তিনি সমপ্রেমী ছিলেন। সিরাস সেখানে মারাঠি ভাষা পড়াতেন। কিন্তু তার একান্ত নিজস্ব যৌনপ্রবৃত্তির বিষয়টিকে কেন্দ্র করে শুচিবাইগ্রস্হ সমাজ তথা সিরাসের দীর্ঘকালীন কর্মস্হল তার প্রিয় আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় অবসরের মাত্র কিছুদিন আগেই তাকে বরখাস্ত করে। সাত দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার ছাড়ার নোটিশ দেয়া হয়। আর যে ক'দিন তিনি কোয়ার্টারে থাকবেন সে ক'দিনের জন্য বিদ্যুতের উপর রেশনিং ব্যবস্হা চাপিয়ে দেয়া হয়। শারীরিকভাবে অসুস্হ মানুষটি ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েও বঞ্চিত হন চিকিৎসার অধিকার থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টার ছেড়ে যে বাড়িটি ভাড়া নেন, সেখান থেকেও অযথা অজুহাতে তুলে দেয়া হয়। মোটামুটি এভাবে তাকে নো ম্যানস ল্যাণ্ডে ঠেলে দেবার চেষ্টা চলে। ২০১০ এর ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল, এই তিন মাসের বাস্তবতা নিয়ে পরিচালক হনসল মেহতা ডঃ শ্রীনিবাস রামচন্দ্র সিরাসের জীবনের সত্যি কাহিনি 'আলিগড়' এ শুনিয়েছেন আমাদের।

গল্পের শুরু ১০ ফেব্রুয়ারি'র রাতে, যখন অধ্যাপক সিরাস সারাদিনের কর্মযজ্ঞ সেরে বাজারসহ তার সঙ্গী রিকশাচালকটিকে নিয়ে ঘরে ঢোকেন। কয়েক মিনিট পরেই রহস্যময় দু'জন লোক অর্তকিতে তার ঘরে ঢুকে পড়ে, তারা কিভাবে কোন অধিকারে অন্যের বাড়ির অন্দরে ক্যামেরাসহ ঢুকে পড়লো ইত্যাদি যৌক্তিক প্রশ্ন উত্থাপনে অক্ষম, ঘটনার আকস্মিকতায় বিমূঢ় অধ্যাপক ও তার সঙ্গীর বিব্রতকর কিছু মুহূর্ত রেকর্ড করে। কিছু রেকর্ডিং হয় তাদের নির্দেশিত ভঙ্গিতেও। একই সময়ে সেখানে ধূমকেতুর মত উপস্হিত হয়ে যান সিরাসের চারজন সহকর্মী! যারা রেকর্ডকারীদের কোনো রকম চ্যালেঞ্জের মুখে না ফেলে আগ্রহভরে রেকর্ডকৃত ভিডিও দেখেন ও তাদের নিয়ে আড়ালে আলোচনা করে অধ্যাপককে জানান পরিস্হিতি সামাল দেয়া হবে। পরে তার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা পরিস্হিতি সামালের নমুনা দেখান বিষয়টি স্হানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের মধ্যে দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিরাসকে বহিস্কার করা হয়।

এই ছোট্ট খবরটি নজরে আসে ইণ্ডিয়ান পোস্টের এক সাংবাদিক দীপু সেবাস্টিনের। মুখরোচক গল্পের হলদেপনায় না মেতে দীপু মানবিকতা নিয়ে এগিয়ে যান কোণঠাসা অধ্যাপকটির কাছে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে সিরাসের বরখাস্ত কতটুকু ন্যায়সঙ্গত তার পক্ষে গণমানুষের সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে স্হানীয় সংবাদটি জাতীয় পর্যায়ে টেনে নিয়ে যান। যা বিপুল মানুষকে সেবরখাস্ত বিরোধী এবং তার ব্যক্তিগত যৌনপ্রবৃত্তির স্বাধীনতার পক্ষে প্রতিবাদী হতে সাহায্য করে। সিরাসের পক্ষে আইনি লড়াইয়ের জন্য এগিয়ে আসেন '২০০৯ সালের শেষে দিল্লি হাইকোর্ট কর্তৃক ঘোষিত ইন্ডিয়ান পিনাল কোডের সেকশন ৩৭৭ অনুযায়ী সমকাম আর অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত না হওয়া রায়ের' পেছনের একজন বিজয়ী আইনজ্ঞ আনন্দ গ্রোভার৷এই লড়াইয়ে সিরাস স্বপ্রণোদিত হয়ে নামেন না, তাকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অনুরোধ রাখতে এ লড়াইয়ে নামতে দেখি আমরা। সবক্ষেত্রে সংখ্যালঘুত্বের সীলছাপ্পর নিয়ে 'হেসে ওঠে দস্যু কবি অক্রোধের ক্লীবলজ্জা ছেড়ে, তামসীর তৃপ্তির দিন সাঙ্গ হলো তমসার তীরে!' এমনটা সিরাসের পক্ষে ঠিক সম্ভব ছিল না। ভাষাবিদ সিরাস, কবি সিরাস, আপাত নিরীহ নির্জন সিরাস প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কোণে নির্বিবাদে নিজের মত থাকতেন। অর্তকিতে নেমে আসা দুর্যোগ তাকে কোণঠাসা করে দেয়। কেড়ে নেয় অর্জিত যাবতীয় সম্মান। অভিমানী সিরাস তাই এক পর্যায়ে অসহায়ের মত বলেন, 'রিটায়ারমেন্টের পর আমেরিকা চলে যাবো, আমার মতো লোকেরা সেখানে সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে।' অধ্যাপক সিরাসের স্বপ্নপূরণ হয়েছিল কিনা, তিনি নিজের মত বেঁচে থাকবার অধিকার পেয়েছিলেন কিনা সে গল্প বরং তোলা থাকলো যারা সিনেমাটি দেখতে আগ্রহী তাদের জন্যে। বাস্তবের সিরাসের কাহিনি যারা জানেন তারা সাক্ষী, আমাদের অসহিষ্ণুতা একজন মানুষের কতটা কেড়ে নেয়, কোন পরোয়ানা লিখে দেয়া হয় তার কপালে।

'আলিগড়' হোমোফোবিক সোসাইটি, হোমোসেক্সুয়ালিটি কিংবা সেক্সুয়ালিটির ঝাণ্ডা ওড়ানোর গল্প না, এর মূল ফোকাসটা একজন মানুষের পদে পদে মৌলিক অধিকার খর্বের আর সেটি ফিরে পাবার লড়াইয়ের। একই সাথে 'আলিগড়', কর্মক্ষেত্রের নোংরা রাজনীতি, সংখ্যাগুরুদের মাঝখানে বাইরের একজনের উড়ে এসে জুড়ে বসা'টাকে ভালোচোখে না দেখা, অন্যের অন্দরমহলের খবরের প্রতি আমাদের বিকৃত কৌতূহল; আর সব ছাপিয়ে একজন একাকী মানুষের প্রতি আরেকজন মানুষের ভীষণ মানবিক আচরণের গল্প। তবে এগল্পে একতরফা ভাবে সিরাসকে ঘিরে ঘটে যাওয়া কাহিনির প্রতিই হনসল মেহতার ক্যামেরা স্হির থাকেনি। ব্যক্তি শ্রীনিবাস রামচন্দ্র সিরাসের কবি মানসকে তিনি যেমন সামনে এনেছেন, একই সাথে তার স্ববিরোধীতা, ধর্মীয় শুচিবাইগ্রস্হতাকেও টেনে হাজির করেছেন। আবার অন্যদিকে, স্কুপ, গসিপ, ইত্যাদির পেছনে ছুটতে থাকা সাংবাদিকদের একজন দীপু সেবাস্টিনের ভীষণ দরদী মানবিক দিকটাতে আলো ফেলেছেন। দেখিয়েছেন দু'জন সম্পূর্ণ ভিন্ন রুচির, ভিন্ন মানসিকতার আর অসমবয়সীর মধ্যেও কেমন চমৎকার সেতু গড়ে ওঠা সম্ভব 'ভালোবাসা' বা 'লাভ' এর হাত ধরে। সিরাসের ভাষায় যার অর্থ অক্ষরের বিচারে মাপা সম্ভব না কিছুতেই। অসম্ভবই বটে। তবুও আমরা জাজমেন্টাল হয়ে সেভাবে বিচার করতে মুখিয়ে থাকি। চট্ করে ট্যাগ দিয়ে বিরাট কর্মসাধনের তৃপ্তি পেতে চাই।

বাস্তবের শ্রীনিবাস রামচন্দ্র সিরাসের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনোজ বাজপায়ী। ব্যথায় গুমড়ে ওঠার দৃশ্যে, কেমন ভীতু, একেবারে লস্ট অভিব্যক্তিগুলো এত চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছে কী বলবো! বিশেষ করে একটা দৃশ্যের কথা না বললেই না, যেখানে নির্জন ঘরে একলা সিরাস, ক্যাসেটে বাজছে প্রিয় লতা মঙ্গেশকর, হাতে দুঃখ-শোক চাপা দেবার সঙ্গী মদ, ভেতরের উথলে ওঠা ব্যথা গিলছেন আর গুনগুনিয়ে গাইছেন; একাকীত্ব-দুঃখ-যন্ত্রণার কী অসামান্য অভিব্যক্তির সেলুলয়েডীয় প্রকাশ!! অনেকদিন মনে রাখবার মত অভিনয় করেছেন তিনি। টুপিখোলা অভিবাদন সে জন্যে।

হনসল মেহতার অল টাইম ফেভারিট রাজকুমার রাও বাস্তবের দীপু সেবাস্টিনের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। মূল চরিত্রের দাপুটে উপস্হিতির পাশাপাশি তুখোড়-অভিনন্দনযোগ্য অভিনয় করেছেন তিনি। হনসল কোর্টের দৃশ্যে ভীষণ সাবলীল এটা তার 'শাহিদ' সিনেমাতেই বোঝা গিয়েছিল। আরেকবার সেটার ঝলক দেখা গেলো। আইনজীবী হিসেবে আনন্দ গ্রোভারের চরিত্রে থাকা আশিষ বিদ্যার্থীর দাপুটে অথচ পরিমিত অভিনয় অভিনন্দনযোগ্য। বিপক্ষের আইনজীবীটির অভিনয়ও প্রশংসার দাবী রাখে। কোর্টে নোংরা ইঙ্গিতপূর্ণ পুরুষের একচেটিয়া প্রশ্ন করবার ট্যাবুটা ভেঙে তার ব্যাটনটা মহিলাদের হাতে তুলে দেবার জন্যেও হনসলের সাহসিকতার প্রংশসা করা যায়। ক্ষমতার দাপট দেখানো শাসকের খামোখাই রোষ কাউকে কাউকে পুড়িয়ে ফেলতে ব্যর্থ হয়। ছাই ঠেলে কেউ কেউ হয়ে উঠতে পারেন আগুনপাখি। যেমনটা বলেছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শহীদ সাংবাদিক লেখক শহীদুল্লাহ কায়সার, 'আইয়ুব খান জেলে পাঠিয়েছিলেন, তাই আমি সাহিত্যিক হতে পেরেছি'। হনসল মেহতাও যেন খানিকটা সেভাবে বলে ওঠেন, জ্বলে ওঠেন তার উপর ঘটে যাওয়া শিবসেনাদের অসভ্য আচরণ পরবর্তী সময়ে। একের পর এক চপেটাঘাতে জানান দিচ্ছেন তিনি তার ক্ষোভ। যে আগুন তার ভেতর জ্বালিয়ে দিয়েছিল অসভ্য সংস্কৃতি, তিনি তার সপাট জবাব দিয়ে যাচ্ছেন সেলুলয়েডে। হনসল মেহতার সৌভাগ্য তাকে জাফর পানাহির ভাগ্যবরণ করতে হয়নি! শুভকামনা, সে দুঃসময় যেন না আসে। 'আলিগড়' এ সিরাসের কাহিনি শেষে, আবারও ভারতে সমকাম আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণার অস্বস্তিকর সংবাদটি পর্দায় ভেসে থাকে। বলা বাহুল্য, 'আলিগড়' আর দশটা বাজার চলতি চানাচুর সিনেমার সাথে পাল্লা দিয়ে সেরকম সুবিধা করতে পারেনি। অতসবের ভীড় ঠেলে আলিগড়ের কাছে পৌঁছাতে ঢের দেরী হয়ে গেলেও শেষমেশ দেখে ফেলবার তৃপ্তিটুকু পুরোদমে উপভোগ করেছি। কবি বলেছেন, 'বেটার লেট দ্যান নেভার।'


মন্তব্য

সোহেল ইমাম এর ছবি

ছবিটা দেখতে ইচ্ছে করছে আর সেই সাথেই উপরি পাওনা আপনার যাদুকরী গদ্যের মুগ্ধতা। ভালো লিখেছেন। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

আয়নামতি এর ছবি

দেখার সুযোগ পেলে দেখে ফেলুন, ভালো লাগবে গ্যারান্টি। আয়হায়! এই লেখারে কী খাইয়া এমন উপাধি দিলেন ভায়া অ্যাঁ
পোস্ট পাঠপূর্বক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানুন। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

রিভিউতে পাঁচ তারা! বিশেষত মুভির বাইরে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো আলোচনা করার জন্য।

এমন ঘটনাগুলোর আলোচনায় আমার একটা কথা প্রায়ই মনে হয়, ঘটনার দায় ভোগকরাদের মধ্যে যাদের ওপর আলো পড়লো না, তাদের আসলে কী হয়? যেমন, এখানে রিক্‌শাচালকটির পরিণতি কী হয়েছিল? সেটা আর কোথাও আলোচিত হয়নি। অথচ তাঁর জন্য বিষয়টা হ্যান্ডেল করা সিরাসের মতো মানুষদের তুলনায় বহু বহু গুণ কঠিন। আরও কঠিন তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য। ঢাকায় একবার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রভাষক খুন হয়েছিলেন। সন্দেহের ভিত্তিতে পুলিশ ধরেছিল মৃতের এক বৃহন্নলা সঙ্গীকে। মিডিয়াগুলো কিছু দিন এটা নিয়ে কিছু রসঘন রিপোর্ট করে অন্য কোন রসের ভাঁড়ারের খোঁজ পেয়ে সেদিকে চলে গেছে। আমি ভাবি, ঐ অতিসংখ্যালঘু বৃহন্নলা ব্যক্তিটির কী হলো? এই 'অস্বাভাবিক' সম্পর্কের জন্য আইনের রক্ষকদের কাছ থেকে তিনি কী রকম ব্যবহার পেয়েছেন (পাচ্ছেন)? ভাবতেই মনটা তেতো হয়ে যায়।

মন মাঝি এর ছবি

উলটোটাও হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই কোন স্পিসিফিক ঘটনায় ঐ রিকশাচালকদের মত লোকদের জন্য বিষয়টা হ্যান্ডেল করা সিরাসের মতো মানুষদের তুলনায় তুলনামূলকভাবে সহজও হতে পারে সামাজিক অবস্থানের পার্থক্যের কারনে। ঐ রিকশাচালকটির হয়তো কিছুই হয়নি। বড়জোর দু'চারটি চড়-থাপ্পড় হয়তো। এই অঞ্চলের দেশগুলিতে ভণ্ডামির কোন শেষ নাই। একদিকে এদের বিরুদ্ধে মৌখিক, মিডিয়াগত, সামাজিক ও আইনি ঘৃনাচর্চায় কোন লাগাম নেই, আবার অন্যদিকে দিব্যি নানাভাবে ও নানা ধরণের অন্যবিধ কারনে টলারেটও করা হয়। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সম্মানিত অধ্যাপকের এহেন হেনস্থায় আপনি স্তম্ভিত এবং হতবাক হচ্ছেন? আউটরেজ্‌ড হচ্ছেন? ভাবছেন, তাহলে সমধর্মী একজন গরীব মানুষের জন্য আরও কত বহুগুণ ভয়ঙ্কর ভবিতব্য অপেক্ষা করছে? তাহলে আরও বেশি ধার্মিক বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের এলাকার ঠিক বাইরে বেশ রাত করে আসুন এবং পায়ে হেটে চারপাশে ঘুরুন। অনেক কিছুই দেখতে পাবেন। এখানে আপনার ভাষায় বৃহন্নলারা তাদের পসার সাজিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়, এমনকি বিক্রয়চর্চাও করে প্রকাশ্য স্থানে। কোন কোন স্পটে আপনাকে সময়মত একা পেলে, আপনি খদ্দের না হলেও আপনার উপর তাদের পসার সহ হামলেও পড়তে পারে আপনাকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে। কি বললেন? মুসলিম দেশ? আইনশৃঙ্খলা বাহিনি নাই? তারা জানে না এসব? তাও আবার এইরকম একটা হাই-সিকিউরিটি হাই-প্রেস্টিজ এলাকার কাছে?! আমার পালটা প্রশ্ন আপনাকে - আপনি কি মনে করেন, তাদের অজ্ঞাতে বছরের পর বছর এসব চলা সম্ভব? আরও অবাক হবেন জেনে যে, আপনি যদি এদের সাথে স্কোন সমস্যায় জড়ান এবং কাছেপিঠে উপস্থিত কোন আইনশৃঙ্খলা বাহিনির নিম্নপদস্থ সদস্যের সাহায্য চান (বা তারা দেখে), তাহলে হয় বিশুদ্ধ ইয়ার্কি মিশ্রিত উপেক্ষা পাবেন, কিম্বা উলটে নিজেই বিপদে পড়বেন। ঐ বৃহন্নলার কিছু হওয়ার সম্ভাবণা খুব কম, যদি না আপনার যথেষ্ট রেস্ত বা ক্ষমতা থাকে। সোজা কথায়, এই শ্রেণীর বৃহন্নলারা কোথাও না কোথাও থেকে ঠিকই পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকে। সম্ভবত কিছুর বিনিময়ে। তবে উচ্চশ্রেণীর এবং অবানিজ্যিক হলে বোধহয় বিপদ হবে।

আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রভাষক খুন হওয়ার কথা বলেছেন, তিনি সম্ভবত (স্পষ্ট মনে নেই যদিও) আইডিয়াল কলেজের প্রভাষক ছিলেন। যদ্দুর মনে পড়ে (মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী) তিনি তার বৃহন্নলা সঙ্গীকে উপরে বলা এলাকা থেকেই ঘরে নিয়ে এসেছিলেন। তবে "নারী" মনে করেই - "বৃহন্নলা" হিসেবে না। বাসায় এনে আসল সত্যটা আবিষ্কার করার পর তিনি তাকে বিনা পারিশ্রমিকে তাড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন প্রতারণার জন্য। এই পর্যায়ে ধাক্কাধাক্কি থেকে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লেগে তার মৃত্যু হয়। এটা "রসালো" মিডিয়া রিপোর্টের একটা ভার্শান ঠিকই, তবে মিথ্যে নাও হতে পারে। কারন এমন ঘটনা প্রকাশ্যেই আকচার ঘটে (বা কিছুদিন আগে পর্যন্তও অন্তত ঘটতো) সংসদ এলাকার বাইরে কিন্তু সন্নিহিত এলাকায়। এবং এসব ক্ষেত্রে খদ্দেরকেই আপোষ করে কেটে পড়তে হয় পুলিশের চোখের সামনে হলেও, জড়িত বৃহন্নলার কিছুই হয় না - হয়তো অল্প কিছু টাকা অন্য কাউকে ভাগ দেয়া ছাড়া।

সিরাসের বিশয়টা মনে হয় পুরোটাই সেটাপ, তাকে টার্গেট করেই করা হয়েছে এবং এর মধ্যে তার সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনের চেয়ে হয়তো দেখা যাবে অন্য কোন কারন আসলে বড় ছিল। এক্ষেত্রে ঐ রিকশাচালককে একটু চড়-থাপ্পড় দিয়ে বিদায় করে দেয়াটা অস্বাভাবিক না হয়তো। কিন্তু সিরাসদের মত মানুষদের জন্য, তাদের সামাজিক অবস্থান / সুনাম / পরিবার ইত্যাদির কারনে, এই পরিস্থিতি আসলেই ভয়ঙ্কর। অনেকে আত্নহত্যার দিকেও ধাবিত হন। অনেকে হয়তো সফলও হন।

****************************************

আয়নামতি এর ছবি

মন মাঝি ভাই,
হুম, সিরাসের ঘটনাটা সেটাপ সেরকম একটা আভাস আছে এখানে। তার পরিণতিও একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন রেখে যায়।

অ:ট: আপনার একটা 'বিরাট ধন্যবাদ' পাওনা ছিল হে মাঝিভাই। আজকে এখানে পেয়ে নগদে দিয়ে ঝাড়া হাতপা হলেম। হাসি

মন মাঝি এর ছবি

শুধু ধন্যবাদ না, একেবারে 'বি-রা-ট' ধন্যবাদ! কেন কেন, কি করেছি আমি?! চিন্তিত হাসি

****************************************

আয়নামতি এর ছবি

কিছু কথা থাক না গুপন চোখ টিপি

মন মাঝি এর ছবি

থাক! থাক! চোখ টিপি দেঁতো হাসি

****************************************

আয়নামতি এর ছবি

হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রিয় মন মাঝি, একটা বিষয়ে আপনার সাথে আমি প্রবল সহমত যে, “এই অঞ্চলের দেশগুলিতে ভণ্ডামির কোন শেষ নাই”। ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্ক খায় না কিন্তু আকণ্ঠ মদ গিলতে কোন আপত্তি নেই এমন ভণ্ড এই অঞ্চলে গিজ্‌গিজ্‌ করে। সিরাসের ঘটনায় আমি কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু স্তম্ভিত বা হতবাক হইনি। আলীগড়ের সমাজ সম্পর্কে খুব জোর দিয়ে কিছু বলতে না পারলেও ভারতবর্ষের এই তথাকথিত ‘শিক্ষিত’ শ্রেণীটির সমাজের আচরণ সম্পর্কে আমি অবগত আছি। সুতরাং সিরাস এই ঘটনায় তাঁর সমাজের কাছ থেকে কী রকম আচরণ পাবেন সেটা আঁচ করতে পারি। মুভিটি দেখিনি তাই জানি না সেখানে কী দেখানো হয়েছে, কিন্তু মিডিয়া মারফত এই ঘটনাটি জানা আছে। এখানে কি এটা খুব স্পষ্ট না যে হ্যারাসমেন্টের গোটা ঘটনা সাজানো! ভারতের মিডিয়া, আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, সর্বোপরি আলীগড়ের প্রশাসনের আচরণ থেকে এটা স্পষ্ট ষড়যন্ত্রের পেছনে যারাই থাকুক তাতে এদের আপত্তি তো নেই-ই বরং মদদ আছে। এই সরল কথাটা ভারতের সাধারণ নাগরিকেরা যে জানেন না তা নয়, কিন্তু যা কিছু ঘটনা ঘটানো হয়েছে তাতে তাদের বিশেষ আপত্তি নেই বলে এই ব্যাপারে তেমন উচ্চবাচ্য হয়নি। সংবিধানে ঘোষিত সেক্যুলার দেশ ভোটের হিসাবে তো আর এমনি এমনি গেরুয়া বর্ণ ধারণ করে না! রিকশাচালক লোকটি ইমপ্ল্যান্ট হতে পারেন, নাও পারেন। আমি এই ব্যাপারে যতটুকু পড়তে পেয়েছি তাতে সিরাসের কোন স্টেডি পার্টনারের কথা জানতে পারিনি। সুতরাং রিকশাচালকটি তাঁর কোন প্রকার পার্টনার ছিলেন কিনা সেটা স্পষ্ট কিছু বোঝা যাচ্ছে না। সিরাসের পরিণতি থেকে আর কী কী স্পষ্ট হয় সেটা আলোচনা করা যেতো কিন্তু এই পোস্টটা নিতান্ত মুভিটা নিয়ে আলোচনা বলে সেগুলো চেপে গেলাম।

রিকশাচালকটির পরিণতি নিয়ে আমি এতোটা ভাবিত কেন সেটা স্পষ্ট করি। রিকশাচালকটি ইমপ্ল্যান্ট হন বা না হন, এই ঘটনার পরে পুলিশের নিম্নপর্যায়ের লোকজন তার এবং তার পরিবারের অন্যদের জীবন সিম্পলি ‘নরক’ বানিয়ে ছাড়বে। এমন পর্যায়ের কিছু হ্যারাসমেন্টের ঘটনা জানা আছে। এখানে তার নামে কোন মামলা থাকা না থাকায় কিছু যায় আসে না। এই প্রসঙ্গ ‘চোরের বউ’ নামক বাংলা টার্মটি মনে পড়ে — ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। তাছাড়া তার সমাজের লোকজন যে বীভৎস রকমের ‘বুলি’ করবে তাতে তার পক্ষে সপরিবারে লাপাত্তা হওয়া ছাড়া গত নেই। কেউ যদি তাকে ইমপ্ল্যান্ট করেও থাকে তবে তারা খুব সহসাই মুখ ফিরিয়ে নেবার কথা। বাস্তবে কিন্তু এই ঘটনায় অমনটাই হয়েছে।

সংসদ ভবনের চারপাশ, খেজুর বাগান, মণিপুরী পাড়ার সামনে, চন্দ্রিমা উদ্যান এলাকাজুড়ে ভাসমান যৌনকর্মীদের (বৃহন্নলাসহ) তৎপরতা সম্পর্কে এই মহানগরের লোকজন অবগত আছেন। সেখানে কীভাবে তারা এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে সেটার উত্তরও আমাদের জানা। বঙ্গভবনের মতো হাই সিকিউরিটি এলাকার সামনের উদ্যানে দিনদুপুরে মাদক কেনাবেচা বা মাদকগ্রহন কীভাবে হয় সেটাও আমাদের জানা। এব্যাপারে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কিছু জিজ্ঞেস করলে তারা কী উত্তর দেবেন তাও আমাদের জানা, তাই এইসব ব্যাপারে আমরা নিশ্চুপ থাকি। এক সন্ধ্যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আড়াআড়ি হেঁটে পাড়ি দেবার সময় আমার এক বন্ধু ছিনতাইয়ের শিকার হন। তিনি নিকটস্থ পুলিশের কাছে অভিযোগ জানালে পুলিশ উলটো তার ওপর চোটপাট শুরু করে — “আপনে ভদ্রলোক হইয়া সন্ধ্যার সময় পার্কে ঢুকছিলেন ক্যান? বাইরে দিয়া হাইটা যাইতে পারেন নাই! নাকি **বাজী করতে গেছিলেন?” বন্ধুটি তখন টাকাপয়সামোবাইলের আশা বাদ দিয়ে নিজের সম্মান বাঁচাতে কেটে পড়েন। তিনি বুঝতে পারলেন, পার্ক হচ্ছে ছিনতাইকারী আর ভাসমান যৌনকর্মীদের জায়গা, ভদ্রলোকদের বেড়াবার জায়গা নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ প্রভাষক খুন হওয়ার ঘটনা আপনি যেটা বললেন আর আমি যেটার কথা বলেছিলাম দুটো এক নয়। তাঁদের পরিচয়ের যতটুকু মনে আছে আমি ইচ্ছাকৃতভাবে সেটা গোপন করে গেছি। গ্রেপ্তারকৃত বৃহন্নলাটি আসলেই নিহত প্রভাষকের পার্টনার ছিলেন; এবং হত্যাকাণ্ডে সম্ভবত তাঁর কোন ভূমিকা ছিল না।

মন মাঝি এর ছবি

ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারণে পর্ক খায় না কিন্তু আকণ্ঠ মদ গিলতে কোন আপত্তি নেই এমন ভণ্ড এই অঞ্চলে গিজ্‌গিজ্‌ করে।

এই উদাহরণের ইন্টারপ্রিটেশন বাদে বাকি বিষয়ে আমি আপনার সাথে মোটামুটি একমত। হাসি

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি যে বিষয়টাতে দ্বিমত পোষণ করছেন সেটা নিয়ে যদি বলতেন তাহলে বুঝতে সুবিধা হতো আমার চিন্তাপ্রক্রিয়াতে কোন গলদ আছে কিনা। আর যদি প্রসঙ্গটা ঐদিকে নিতে অনাগ্রহী হন তাহলে বিষয়টা এখানেই থাক।

আয়নামতি এর ছবি

দীপু রিকশাচালকের খোঁজে গিয়ে জানতে পারে তাকে পুলিশ ধরে নিয়েগিয়েছিল। ছাড়া পেয়ে সে লাপাত্তা।কাহিনির মূলে তার ভূমিকা অতটুকুই প্রয়োজন ছিল হয়ত। দীপুর সন্দেহমত হয়ত সেও কারসাজির একটা অংশ ছিল, যেকারণে সে গা ঢাকা দেয়। 'লিপস্টিক আণ্ডার মাই বোরখা' ব্যান করা ঠিক হয়েছে কিনা প্রশ্নের উত্তরে শাহরুখ খান বলেছেন, তিনি ভ্যাকেশনে ছিলেন তাই বলতে পারবেন না বিষয়টি নিয়ে। আপনার উল্লেখ করা বিষয় সম্পর্কেও সেরকম কিছু বলা যায় কিনা ভাবছি চিন্তিত

হে পঞ্চতারকা নিক্ষেপকারী ভ্রাত/ভগ্নি আপনার নামটি তো জানা হলো না। যাইহোক, ধন্যবাদ জানবেন। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

পাঠক তো লেখককে পঞ্চতারকা ছুঁড়ে মারে না, অঞ্জলী ভরে দেয়। গ্রহন করা বা না করা লেখকের ইচ্ছা।

'লিপস্টিক আণ্ডার মাই বোরখা' ব্যান করা ঠিক হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন শাহ্‌রুখকে জিজ্ঞেস করাটা অর্থহীন। এখানে শাহ্‌রুখ নীতিনির্ধারক নন্‌, নীতিপ্রয়োগকারীও নন্‌। এই প্রশ্ন বরং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি, সেন্সর বোর্ডের প্রধানদের জিজ্ঞেস করা যেতে পারতো। তবে সেন্সর বোর্ড তো তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে দিয়ে দিয়েছে — সেটা রাষ্ট্রের বক্তব্য। এখানে শাহ্‌রুখ খান, অরুন্ধতী রায়, বা ইরফান হবিব কী বললেন সেটা অর্থহীন। রিকশাচালকের পরিণতি সম্পর্কে আমার ভাবনার ব্যাপারে আপনার ভূমিকাও অনুরূপ। সুতরাং আপনার ভ্যাকেশনে না গেলেও চলবে।

আয়নামতি এর ছবি

ওহহো! দুঃখিত ভাইটি। আপনি দেখি কষ্ট পেয়েছেন! ওসব ভেবে বলিনি কিন্তু!

শাহরুখকে প্রশ্নটা করা অর্থহীন মনে হয়নি মোটেও। তিনি চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট একজন মানুষ, যেকারণে তার বক্তব্য চাওয়া হয়েছিল মনে করি। রাষ্ট্র বা সরকার যা খুশি চাপিয়ে দেবে আর সচেতন জনগণ চুপচাপ থাকবে এটা তো কাজের কথা হলো না রে ভাই। যাইহোক, রিকশাচালক নিয়ে আমি সেরকম কিছু বলিনি, বলেছি আপনার উল্লেখিত ঘটনা সম্পর্কে নিজের অজ্ঞতা নিয়ে। হয়ত টানা প্রসঙ্গটি উদ্ভব ছিল। আপনি পোস্ট লিখেন না কেন ভাই? লেখালিখি শুরু করে দেন। ধন্যবাদ।

অতিথি লেখক এর ছবি

মিডিয়ার একটা প্রবণতা দেখবেন ঠিক যেখানে গিয়ে প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করা উচিত প্রায়ই সেখানে না গিয়ে এমন জায়গায় যায় যেখানে এক ধরনের অকারণ সেনসেশন তৈরি হয়। প্রশ্নটা শাহ্‌রুখকে অবশ্যই করা যায়। যেমন করা যায় অমিতাভ বচ্চন, মেধা পাটেকর বা আন্না হাজারেকে; কিন্তু সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটি, সেন্সর বোর্ডের প্রধানদের জিজ্ঞেস না করে শাহ্‌রুখকে জিজ্ঞেস করার পেছনে ঐ রকম অকারণ সেনসেশন তৈরির প্রবণতা দেখা যায়। এই যুক্তিতে আমি সেটাকে 'অর্থহীন' বলেছি।

রিকশাচালকের পরিণতির ব্যাপারে আপনি যে আমার মতোই অন্ধকারে আছেন সেটা বুঝেছি। তাই আমিও বোঝাতে চেয়েছি যে এটা নিয়ে আপনার বিব্রত হবার কিছু নেই, আমারও হতাশ হবার কিছু নেই।

আয়নামতি এর ছবি

ইয়ে, মানে...

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ফাঁদ পেতে আসামী ধরার একটা কায়দা আছে পুলিশের, সেই কায়দাটার ভুলে গেছি এই মুহুর্তে। অপরাধ দমনে কার্যকর হলেও সেই কায়দাটিকেও খুব বেশী নৈতিক বলে ধরা হয় না। এই ঘটনা পড়ে মনে হলো আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক সেই রকমের একটা ফাঁদ পেতেছিলেন অধ্যাপক সিরাসের বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির চেয়ে শিক্ষক রাজনীতি আরো বেশী জটিল বলে জানতাম। কিন্তু তা এতটা কুৎসিত হতে পারে চিন্তা করা যায় না। একজন মানুষের বিশ্বাস অবিশ্বাসের অধিকার তার নিজের ঘরের দেয়ালের ভেতরও যদি নিরাপদ না হয়, সেটা খুব মর্মান্তিক। অবশ্য বর্তমান বাস্তবতায় বাংলাদেশেও নিরাপত্তা শব্দটি আপেক্ষিক হয়ে গেছে, নিরাপত্তা এখানে একটি অনিশ্চিত ধারণা। আমার মতের সাথে না মিললেই তুমি কতলযোগ্য।

আলোচনা পড়ে মুভিটা দেখার ইচ্ছে জেগেছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সত্যপীর এর ছবি

ফাঁদ পেতে আসামী ধরার একটা কায়দা আছে পুলিশের, সেই কায়দাটার ভুলে গেছি এই মুহুর্তে।

স্টিং অপারেশন। আমাদের কাজি নাফিসভায়াকে স্টিং অপারেশন দিয়া ধরছে দেখে অনেকে খুব খামোশ হইছিলেন। সচলেও এক বাম্পুষ্ট আসছিল। সাম্রাজ্যবাদী আম্রিকা ইত্যাদি।

..................................................................
#Banshibir.

আয়নামতি এর ছবি

আপনার ভুলে যাওয়া বিষয়খানা পীরভায়া মনে করিয়ে দিয়েছেন। তাকে ধন্যবাদ। হাসি

বিষয়টা সত্যি হতাশাজনক, পরিণতিটা নিদারুণ মন খারাপ

দেখে ফেলেন সুযোগ থাকলে। খারাপ লাগবে না মনে হয়। পোস্ট পড়বার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া ।

মন মাঝি এর ছবি

নাকি "এনট্র্যাপমেন্ট"?

****************************************

দেবদ্যুতি এর ছবি

রিভিউ পড়ে সেদিনই ট্রেলার দেখে নিয়েছি, সিনেমাটা দেখে নেবো রে সময়মতো। অনেকদিন পরে ফিরেছো আপাতত সেইটাই ভালো লাগছে। রিভিউ ভালো হয়েছে আপান, একদম আপনার নিজের হাতের লেখার মতো- ঠিকাছে?

...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”

আয়নামতি এর ছবি

সবই হিমুভাইয়ের কেরামতি। নইলে কতবার সচলে আসচ্ছি, পাস হারিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরেছি। একে বলি, তাকে বলি।কেউ একবারটি মুখ খুলেন না, ওরে বেকুব পাস হারিয়েছে অপশনটা ট্রাই করা হইছে কী! ভুলে বাংলা কীবোর্ডেই ক্যাপচা উড়িয়ে দিতে দিতে নাজেহাল হয়ে তাই ছাড়ান দিয়েছিলেম সচলে আসা। আবার এসেছি ফিরে ধান শালিকের তীরে এই বাংলায়' ফিলিং হচ্ছে কিন্তুক হামার। হাসি

হ ঠিকাছে দেঁতো হাসি ধন্যবাদ প্রিয়।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

রিভিউ হিসেবে অনবদ্য! এট পড়ে সবারই ছবিটি দেখার আগ্রহ জাগবে নিশ্চিত।

ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে কি আর বলবো। মানুষ সামাজিক জীব, কঠোর সামাজিক জীবন যাপনের মাধ্যমেই শ্রেষ্ঠ প্রাণী হিসেবে তার উত্থান। মানুষ হয়ে ওঠার তার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চিন্তা-চেতনার কোন মূল্য কখনো ছিল না, এখনও নেই। মানবাধিকার, মুক্তচিন্তা, ইত্যকার কিছু কিছু শব্দাবলীর যৎসামান্য কিছু চর্চা এখন হয় বটে, কিন্তু ব্যাক্তি ইচ্ছা বা ব্যাক্তি স্বাধীনতার বিষয়টি এখনও সুদূর পরাহত।

আয়নামতি এর ছবি

আমাদের মত সমাজে আপনার কথা খুব সঠিক আব্দুল্লাহ ভাই। তবে আশার কথা, এমন অনেক সমাজের জন্য ব্যক্তি স্বাধীনতা সোনার পাথরবাটি'র মত অসম্ভব না(সোনার পাথরবাটি যে অবাস্তব না সেদিন Kintsukuroi বিষয়ে ছোট্ট একটা শর্টফ্লিম দেখে- গুগল করে জানলাম, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় অবশ্য খাইছে )। সময়ের সাথে সাথে উন্নত রাষ্ট্র-সমাজে বিষয়টা গুরুত্ব পাচ্ছে। ২০০৬ এ 'ব্রুকমাউন্টেন' অস্কারের দৌঁড়ে পিছিয়ে পড়লেও এবার কিন্তু 'মুনলাইট'কে অস্কার ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। এখানে কিছু রাজনীতির আছে এমনটা শুনেছি অবশ্য। আসলে বলতে চাচ্ছি, ব্যক্তিস্বাধীনতা, ব্যক্তির যৌনপ্রবৃত্তির নিজস্ব অধিকারের বিষয়ে আমরা যোজন যোজন পিছিয়ে থাকলেও অনেক দেশ সেসব বিষয়ে স্বাধীনতা দিয়েছে-দিচ্ছে।

আপনার সপ্রশংস মন্তব্যে বড়ই আহ্লাদিত হলেম। অসংখ্য ধন্যবাদ জানবেন। হাসি

তাহসিন রেজা এর ছবি

তোমার চমৎকার রিভিউ পড়ে সিনেমাটি দেখার ইচ্ছে তীব্র হইল দিদি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”

অলীক জানালা _________

আয়নামতি এর ছবি

দেখে ফেলিস সময় সুযোগ হলে। তুই কী লেখালিখি ছেড়েই দিলি নাকি? কিল দেয়া দরকার তোকে!
পুস্ট পাঠপূর্বক মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ হাসি

এক লহমা এর ছবি

আরও একটা ভাল রিভিউ পড়া হল।
তোমার পাস হারিয়ে হেথা-হোথা ঘুরে বেড়িয়েছ জেনে খারাপ লাগল। তবে এখন যে পথ খুঁজে পেয়েছ সেইটা খুব ভাল হয়েছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আয়নামতি এর ছবি

ওটাকে রিভিউ না বলে চাঁছাছোলা সমালোচনা বলতে পারো। এটা রিভিউ লেখার চেষ্টা বটে। ভালো লেগেছে জেনে আনন্দ পেলেম হাসি .......এখন সম্মুখে সুন্দর আগামিকাল নাকি বলো! দেঁতো হাসি ভালো আছো দাদাই? পোস্ট পাঠের জন্যে অনেক ধন্যবাদ হে!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

যাক সচলে মতি ফিরেছে আবার, লিখতে থাকুন না পথ বা মতিভ্রষ্ট না হয়ে। দেখে পড়ব। হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

আয়নামতি এর ছবি

বলেন কী! সচলের মতি খোয়া গেছিলো নাকি অ্যাঁ
দু'আ রাইখেন কত্তা, পথ মত ঠিক রেখে যেন লক্ষীমন্তটি থাকতে পারি। চাল্লু
হ দেইখেন সুযোগ পাইলে। হাসি পড়েনাই তাই ধন্যবাদ দেবারও কিছু নাই দেঁতো হাসি

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

হঠাৎ করেই সচলে ঢুকে তোমার লেখাটা চোখে পড়লো। পড়ে ফেললামগো দিদি। আর চমৎকার রিভিউটা পড়ে সিনেমাটা দেখার খায়েশ চাপলো। দেখে ফেলবো নিশ্চয়। তারপর আমিও...

আয়নামতি এর ছবি

প্রথমেই আপনার সচলে আগমনকে সাধুবাদ, জাঝাবাদ দিলেম ভাবনাদা। খুব ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য দেখে।হ্যাঁ, দেখে ফেলুন তারপর একখানা চমৎকার রিভু লিখে সচলে দিয়ে দেন দেখি, অনেকদিন আপনি লিখেন না এখানে। অনেক অনেক ধন্যবাদ হাসি

তাপস শর্মা এর ছবি

আগেই পড়েছি।।লগইন করিনা বলে বহু বছর হয়ে গেল মন্তব্য করি না।

PINK মুভিটা দেখা হইছে তোমার? সেটা অবশ্যই দেখে সুন্দর আরেকটা রিভিও দাও

আয়নামতি এর ছবি

পিঙ্ক দেখেছি, সাথে পার্চড, এ্যাংরি ইণ্ডিয়ান গডেস ইত্যাদি। এখন অর্পণা সেনের Sonata' দেখবার অপেক্ষায় আছি। বহুদিন পরে তোকে সচলে দেখে সত্যিই ভালো লাগলো ভাই! পিঙ্ক নিয়ে তুই বরং লিখে ফেল, আনন্দ চারহাতপায়ে নেচে নিক এক পাক। পোস্ট পাঠপূর্বক মন্তব্যের জন্য ধইন্যা । হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।