যখন লেখকের মৃত্যু হয়...

আড্ডাবাজ এর ছবি
লিখেছেন আড্ডাবাজ (তারিখ: মঙ্গল, ০২/১০/২০০৭ - ১১:২১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

না, এখনও সবাই বেঁচে আছেন। জানামতে ইদানীং কারও মৃত্যু হয়নি। তারপরও সর্বত্রই কবরস্থানের নীরবতা চলছে। সবাই খুব নীরব, শান্ত আর নি:শব্দে সময় কাটিয়ে দিচ্ছেন। জিগ্যেস করতেই একজন বন্ধু বললেন, "বুঝেন না? সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে? রয়েসয়ে"। হঠাৎ করে ফোন ভীতি খুব বেশী। ফোন করলে ধরে না। ধরলে বলে, "দেখছি উনি আছেন কি না"? আজকাল আজরাইল কি ফোন করে জান কবজ করতে আসে? না হলে, এতো ভয়ের কারণ কি? হলেও হতে পারে। ওয়ারিদ, গ্রামীণ আর একটেলের অ্যাডে রেট কমানো নিয়ে কম্পিটিশন চলছে। কম রেটের সুবিধা নিয়ে স্বয়ং আজরাইলও যদি ফোন করে জান কবজ করতে আসে, তাতে মন্দ কি? মরার আগেই যদি মৃত হয়, তাহলে কাজটা আজরাইলের জন্য সুবিধাজনক।

ক'দিন আগে এক কলামিস্টের লেখা ব্লগে পড়ে তাকে জিগ্যেস করে বসলাম, পত্রিকায় আপনার কলাম আর দেখি না? ঘটনা কি? লেখা ছেড়ে দিয়েছেন? অবাক হয়ে গেলাম তার উত্তর শুনে। বলে পত্রিকায় লেখা দিলেও তারা ছাপায় না। বলে, এখন ছাপানো যাবে না। সময়টা খারাপ যাচ্ছে। আহারে অভাগা আমরা!! আমাদের সময় সবসময় খারাপই যায়। ভাল সময় কবে গেছে বলে কিছু স্মৃতিশক্তিতে নেই। আমার অবাক হবার পালা তখনও শেষ হয়নি। ইফতার পার্টিতে দেখা হয়ে গেল এক সাংবাদকি বন্ধু প্রতিমের সাথে। এক পাশে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে তাকে খামচে ধরলাম। কি রে ফোন করলে জবাব দিস না কেন? বলে ফোন আর এখন ইউজ করি না। ফোন তুলতেই আরেক সাইডে ক্লিক করে শব্দ হয়। মনে হয, কেউ আড়িপাতি দিয়ে শুনছে। স্বাচ্ছন্দ্য পাই না। পত্রিকার সম্পাদক সাহেব ডেকে বলেছেন, নিজ দায়িত্বে রিপোর্ট করতে। বাহবা!! যারা জলপাই শাখার আশ্রয়ে আছে, তারা ছাড়া আর কেউ নিরাপদ না।

আমি অবাক হই না। পাথর হই না। নীরব হয়ে থাকি। বন্ধুর কথা স্মরণ করে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আওড়াতে থাকি, ঠিকই সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। আজকের কাগজ বন্ধ। ইত্তেফাক ছাঁটাই শুরু করেছে। প্রথম আলোর কোমড়ে রশি বেঁধে খতিব ওবায়দুল হকের কাছে জিম্মা দেওয়া হয়েছে। এখন হিজবুত তাহরির মিছিল করবে। নিজামী ইফতার পার্টিতে জামাতী রাজনীতির কামিয়াবীর কথা বুক ফুলিয়ে বলবে। এদের কাওকে ভয় স্পর্শ করে না। নির্ভয়ে আর নির্লজ্জভাবে বলতে পারে, "জামাতী রাজনীতি বন্ধের দাবী কি মামার বাড়ীর আবদার?"

সন্ধ্যা বেলার জনাকীর্ণ ঢাকা শহরের সমস্ত কোলাহল আমাকে ক্লান্ত করে না। নি:শব্দে আমি নিজ গন্তব্যের দিকে রওয়ানা দেই। মনে হয়, সকল কোলাহলে মাঝে এক ধরণের নি:শব্দতা জেঁকে বসছে। গ্রাস করে নিচ্ছে মুখের শব্দ। কারণ, অন্ধকারের নেকড়েরার আজকাল খুব নীরবে শিকার করে। আজরাইলের মতো ফোন করে আসে মৃত্যু সংবাদ নিয়ে। তাই, মৃত্যুর আগেই মরার মতো পড়ে আছে সচেতন জনপদ। ভাবছে, নিষ্কৃতি পাবে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে। বেঁচে থাকার স্বপ্ন আগলে রেখে মৃত্যুর ভান করে এভাবেই বেঁচে থাকে একজন লেখক। আর অকর্মণ্যের দলরা মৃত্যু সংবাদটি ড্রাফট করে রাখার জন্য খসখস করে লেখতে থাকে: যখন লেখকের মৃত্যু হয়...।


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

বড্ড ভয়ংকর সময় পাড়ি দিচ্ছি আমরা এখন।

-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

শ্যাজা এর ছবি

খুব ভাল লিখেছেন।


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ঘোর নিদান ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।