আলু পটল সংক্রান্ত দিনলিপি

নজমুল আলবাব এর ছবি
লিখেছেন নজমুল আলবাব (তারিখ: বুধ, ১২/০৩/২০০৮ - ৫:৩৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দরজা লাগাইলেই বউ বদলায়া যায়। ক্ষমতায় গেলে...

তুমি মিয়া সকালে ঘুমের ঘোরে বউ গালে হাত দিছে বইলা একেবারে গইলা গেলা! পিরিতি উথলায়া উঠলো। খবরদার বউয়ের গালে গাল ঘসতে যাইওনা। খসখসা দাড়ি লাইগা তার ঘুম ভাঙলে খবর আছে, হুঁ।

দরজা লাগাইলে বউ বদলায় এই কথা শুনে গদগদ হওয়ার জামানা শেষ। শব্দটায় যৌনতার ঘ্রাণ থাকলেও এখন আর সেইসব পাওয়া যায়না। দরজার ওইপাশে আম্মা আম্মা ডাইকা গলায় রক্ত তুইলা বউ দরজা লাগায়, তারপর সে আর আম্মা থাকেনা। তোমার আম্মা দিয়া শুরু হয় ঠেকে... পোয়াতিসময়ে যে আম্মা পেটে তেল মালিশ করে দিল সেই আম্মায় রান্ধনের কালে তেল কেন মাইপা দেয় এইটাই হইল বিষয়, সোয়াবিনের লিটার একশ হোক কীবা দেড়শ বউয়ের তাতে কি? আর মায়েরইবা কি?

এক লোক কোন দুরদেশে যাইতেছে। (এইটা কিন্তু আগের জামানার কিচ্ছা। নানাজানের কাছ থাইকা শোনা)। পায়ে সুন্দর জুতা, কাঁধে চাদর। রাস্তায় কাদা। পার হওনেরর কোন উপায় নাই। বেশ কিছুক্ষন লোকটা দাঁড়াইলো। তারপর চাদরটা বিছায়া কাদার উপর দিয়া হাইটা গেল। অন্য আরেকজন ঘটনা দেইখা অবাক হয়। প্রশ্ন করে, ভাই এইটা কী করলেন? জবাব আসে, আরে ভাই কাদা থেকে জুতাটা বাঁচাইতে হবেনা। দুইশ টাকা দিয়া কিনছি। সেই লোক বেকুব হয়ে আবার প্রশ্ন করে, চাদর? আরে ওইটাতো বাবায় কিনছে...

আব্বায় তার শশুরের কাছ থাইকা এই গল্প শিইখা রাখছে। সময়মত বলবে। লগে ফুটনোট যোগ হয়, এইটাতো বাপের টাকা, যা ইচ্ছা কর, নিজের টাকা হইলে দেখা যেত। একেকজনতো মিনিস্টার হইয়া গেছ। পাব্লিকের টেকা যেমন ইচ্ছা উড়ায়া দেওন। আমার ঘরে এইসব চলবে না... আহা, আব্বার হাই প্রেশার। কেনযে এইভাবে চেচামেচি করে! ঠিক আছে, আইজ থাইকা আমি ফখরুদ্দি তত্বাবধায়ক। আর বাড়ন্তি টাকা খরচা করুমনা। আইজ থাইকা বেগুন খাওয়া বন্ধ। আলু কেনাও বন্ধ।
তাইলে খামু কি? হাওয়া? সাইফুর রহমানরে ধরতে হবে। এই লোক খাবার অভ্যাস বদলানোর অনেক লেকচার দিছে। টেকা নিয়াও তার বিতঙ ছিল নানান কিসিমের, যদিও নিজেই টেক্স দিতনা। হা... হা... হা...

খাদ্য উপদেষ্টা শওকত আলীর কাছে যাওয়ার চান্স পাইলে সেইটাও করা যাইত। এই লোক সাইফুর রহমানের থাইকা কয়েককাঠি সরেস। সে বলছে খানা খাদ্য কমায়া খাইতে। বোরো ধান উঠলে নাকি পোষায়া দেয়া যাবে পেটরে, তার আগে পেট বাবাজি ঘন্টা বাজাও। এইবার আর হাসি আসতেছেনা... এরচেতো আল্লার মালই ভাল আছিল।

তুমিতো শালা বাপ হয়া গেছ! মাইয়ার লগে খাতির আছে তোমার? রোজ কামলা শেষে বাড়িত আসার সময় তার লাইগা লেবঞ্চুস আনতে হয় সেইটা জান? জাননা। কেমনে জানবা, তোমার বাপতো কোনদিন আনেনাই। পকেট ঠন ঠন লইয়া অবশ্য তোমারও কিছু করার নাই। সাম্প্রতিক ওয়াশিং অপারেশনে তুমি যে কেমনে সান্দায়া গেলা..., দুঃখ হয়। কিন্তু কিছু করার নাই। পাওটা কি ভাল হইছে? টাইন্না টাইন্নাই হাটো। দেশ তোমার পায়ের উপর দিয়াই পবিত্র হইছে, এই কথা মনে কইরা বীরপুরুষদের ক্ষমা কইরা দেও। ওহহো নেপথালিন নিতে ভুইলনা আবার, বউয়ের মাথায় উকুন হইছে, নারকেল তেলের লগে মিশায়া মাথায় দেবে। নারকেল তেলের দাম জান? জানার দরকার নাই। সেইটা বউ নিজেই জোগাড় করবে।

রিকশায় উঠলেইকি নিজেরে রাজা বাশশা মনে করন লাগে? পৌরুষ জাগনা দেয়? এই লোকটারে গাইল দিতেছ কেন? আরে আরে, শালা বল কোন সাহসে? বয়েস দেখছ কত হবে তার? এর বড় বইনেতো তোমারে কোলে নিছে। এখনকার অবস্থা তাইলে চিন্তা কর। হা...হা...হা...। অশ্লীল, অশ্লীল।

তোমার বস আজকে মুজমায় আছে এইটা জানো? রিসিপশনের মেয়েটা এখন তার রুমে। সে এখন দীপাবলী সাদা জামার সাথে লাল রঙের ব্রা কেন পইরা আসছে এই গবেষনায় ব্যস্ত। একটু কি কাঁপলা তুমি? কেন তোমার কাঁপাকাঁপি করে কেন? আরে বাবা কোন এক কালে তারে তোমার মনে ধরছিল বইলাকি এখনও এইভাবে কাঁপবা? সেতো তোমারে লাই দেয়নাই। তুমিও বেটাগিরি দেখাইতে গিয়া বিয়া একখান কইরা ফালাইলা। তার কিন্তু কোনকালেই প্রেমভাব ছিলনা। সে এখন যেভাবে আছে এইভাবেই সুখ পায়। লাল ব্রা নিয়া প্রশ্ন শুনলে সে পুলক অনুভব করে। তার লাল ব্রা দেখার শখ নাইতো আবার তোমার?

তুমি কিন্তু আইজ বেশি সময় থাইকনা অফিসে। আজকে মাল খালাসের দিন। এইসবে তুমি কোনদিনই পারঙ্গম না। শেষে কি ভেজাল লাগায়া দিবা। আর শোন সন্ধায় কিন্তু আড্ডায় বসবানা। আজকে নেপথালিন নিতে হইব বাসায়। ওহহো কবজ নিছিলা পরশু? নেওনাই। কবে যে তোমার মাথাটা ঠিক হবে! আজকে না নিলে খবর আছে। তোমার আম্মাজানে আজকে ছেচা দেবে তোমারে। কবজ নিবা মনে কইরা, লগে মারভেলন। চরিত্রটাতো ঠিক করতে পারলানা এখনতারি। স্বপনের দোকানে ভুলেও বসবানা। জরুরি আইন এখতারি তুইলা নেয়নাই। খাসলততো ঠিক হবেনা কোনদিনই। উল্টাপাল্টা বলবা আর আবার নিয়া যাবে। আগেরবার পায়ের উপর দিয়া শেষ হইলেও এইবার আর সেই আশা কইরোনা কিন্তু।

-----------------------------------------------------------------
১৩ মার্চ বাদ ফজর এই খবরটা পড়ে কিছু সম্পাদনা করা হলো।


মন্তব্য

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

ভালো লাগলো।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ টুটুল ভাই। সম্পাদক সাথে প্রকাশক এমন একজনের পছন্দ হওয়াতো বিশাল ঘটনা।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

রাকিব হাসনাত সুমন এর ছবি

বুঝার চেষ্টা করতাছি

নজমুল আলবাব এর ছবি

বুঝা শেষ হইলে একটু জানাইয়েন।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

পরিবর্তনশীল এর ছবি

সুন্দর
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

নজমুল আলবাব এর ছবি
মাহবুব লীলেন এর ছবি

জটিলাইজড বিন্যাসে কঠিনেকচুয়াল বিষয়গুলো বেশ কায়দা করে ঝাপসালাইজড করে দেয়া

চমৎকার

নজমুল আলবাব এর ছবি
ধূপছায়া এর ছবি

কঠ্...ঠিন!!

নজমুল আলবাব এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

যথারীতি অত্যন্ত সুখপাঠ্য।

সচলায়তনকে চিনেছি বেশীদিন হয়নি। আপনাকেও তাই চিনতে পেরেছি মাত্র কিছুদিন আগে। আপনার ব্যক্তিগত ব্লগের হোমপেজে "বিভিন্ন মিতভাষন" লেখাটা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম এবং ভেবেছিলাম আপনার প্রিয় কোন লেখকের প্রিয় কোন লেখা। একবারও মাথায় আসেনি যে এটা আপনার লেখা হতে পারে। "বউ, বাটা, বলসাবান" পড়ে আমার সেই ভ্রান্তি দূর হয়েছে। আমি বিষ্মিত, অভিভূত এবং আপনার পাঙ্খা। আপনার লেখার ধরণটা চমৎকার!

-রুহি

নজমুল আলবাব এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ।

ঘুরে এসেছি আপনার ব্লগবাড়ি। ভালো লেগেছে। আপনি বাংলা লিখলে চমৎকার হত বলে আমার বিশ্বাস। ভাল থাকবেন।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অতিথি লেখক এর ছবি

ঘুরে এসেছি আপনার ব্লগবাড়ি

কথাটা বুঝতে পারলাম না। সম্ভবত আপনি অন্য কোন রুহির সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলেছেন।

আপনাকে ধন্যবাদ।

-রুহি

নজমুল আলবাব এর ছবি

মন খারাপ

তাহলেত ভুল হয়ে গেল। আমার ব্লগস্পটে অপরিচিত একজনরে দেখে ভাবলাম আপনি...
যাক, যা গিয়েছে তা যাক।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

ভাল্লাগ্লো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নজমুল আলবাব এর ছবি
লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

হুমম ... বেশ বেশ।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

নজমুল আলবাব এর ছবি
রানা মেহের এর ছবি

এইতো গিদড়
ঠিক পথে এগুচ্ছিস।
"আমার কিছু হবে না" টাইপ বাদ দিয়ে
এরকম কিছু লেখা দে।
তোর কিছু না হোক
পাবলিকের কিছু উপকার হবে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নজমুল আলবাব এর ছবি
জাহিদ হোসেন এর ছবি

আমাদের জীবনটি বোধকরি উটের কাঁটাগাছ খাওয়ার মতো। চিবুতে চিবুতে কষ বেয়ে রক্ত পড়ে, তবুও আবার সেই কাঁটাগাছের কাছেই ফিরে আসি। কেননা পলায়নের কোন সুবন্দোবস্ত নেই।
লেখাটি পড়ে আনমনা হয়ে গেলাম।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

নজমুল আলবাব এর ছবি
শেখ জলিল এর ছবি

জীবনটা এরকমই টানাপোড়েন। সকাল-সন্ধ্যা অফিস। বসের মন জুগিয়ে চলা। বাসার সবাইকে সামলানো। তারপরও বাঁচতে হবে জলপাই মামাদের থেকে!
...যথারীতি সুখপাঠ্য। ভালো লিখেছেন।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

নজমুল আলবাব এর ছবি
শামীম হক এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটি। অন্যরকম।

নজমুল আলবাব এর ছবি
মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

উত্তম রচনা। যথারীতি ইঙ্গিতবাহী। তবে সব মিলিয়ে একটু ঘোলাটে আকাশের মতো রয়ে গেলো, আরেকটু আলোর ছটা থাকলে মনে হয় ভালো হতো।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ জুবায়ের ভাই।

আমাদের আকাশটা এত বেশি ঘোলাটে এখন যে, অনেক চেষ্টা করেও আলোর রেখা পেলামনা।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ভাষারীতিতে পরিবর্তন হলেও বর্ণনটা আলবাবীয়।
পড়ে ভালো লাগলো।
তবে কেনো জানি মনে হয়েছে - মূল সুরটা 'দুধ চা খাওয়া হবে না'র আশেপাশেই প্রলেপ লাগিয়েছে।
আগামী গল্পটা এ গন্ডি পেরিয়ে যাক।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

চক্কর থেকে বের হও এবার ।
নিজেকে অতিক্রম করার একটা ব্যাপার আছে । ওটা পারলে যা হয় সেও কিন্তু নিজেরই । আবার এবং আবার
----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নজমুল আলবাব এর ছবি

ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ এবং শিমুল।

আসলেতো গল্প একটাই এই জীবনে। বিভিন্ন ভাবে, ভিন্ন ভাষায় তার বয়ান হয়। তবু রেশ থেকেই যায়। এই লাল চা'ময় জিন্দেগিতে ঘটে যাওয়া গল্পগুলোই এখনও শেষ করতে পারলামনা। যেদিন এই গল্প শেষ হয়ে আলবাব নতুন গল্পে প্রবেশ করবে সেদিন হয়ত সে দুধ চা নিয়া একটা গল্প লিখবে।

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

শেখ জলিল এর ছবি

আমিও বলি তাই। জীবনের নতুন বাঁকই টেনে নিয়ে যাবে নতুন আঙ্গিকের গল্পে।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

নজমুল আলবাব এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।