প্রিয়মুখ পুড়ে যায় না-চেনার ভানে

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি
লিখেছেন আনন্দী কল্যাণ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/০৫/২০১০ - ১১:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কতখানি ফাঁকা তুমি?
আমার মতই কি জলে আঁকা সুখ?
প্রিয়মুখ পুড়ে যায় না-চেনার ভানে।

তোমাকে দেখে ঠিক আমার মতই মনে হয়।
অবিকল বিকল ডানা।
হাতে পায়ে একই করাতের দাগ।
চোখ তুলে তাকালে দেখলাম, চোখ নেই, আছে যশোর।
একটা আস্ত শহর চোখে এঁটে এঁটো কুড়াচ্ছ কুকুরদের সাথে।
ঘুরেফিরে শহরের বিভিন্ন ডাস্টবিনে আমাদের দেখা হয়।
মৃত শিশু, জলের বোতল বা গহন কাঁকন।
সুধীজনের কোঁচকানো মুখের পরিপাটি বসার ঘরেও পাই
সেই একই কুষ্ঠ গন্ধ।
প্লেটে সাজানো সন্দেশের সাথে এক টুকরো ফ্রি উন্নাসিকতা চেটেপুটে খাই।
আমাদের বড় ক্ষিদা পায়, আমাদের চোখ নেই, আছে যশোর।
ওরা নিয়ে নেয় সব জলে আঁকা সুখ, মাধবীর বন, পাখিদের সাজ।
শহরের ডাস্টবিনে বিকল মানুষ, চল ফাঁকা হই, চিনে নেই প্রিয়মুখ।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বান্ধায়া রাখনের মতো একটা কবিতা পড়লাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

কবিতা-পড়া মানুষদের কাছ থেকে এমন কথা শুনলে দিনটা খুশিয়াল হয়ে যায় হাসি, কথা মিথ্যা হলেও।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমাকে মিথ্যুক বলায় তেব্র দিক্কার...
আমি কিন্তু মিছা কই নাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তিথীডোর এর ছবি

"শহরের ডাস্টবিনে বিকল মানুষ,চল ফাঁকা হই,চিনে নেই প্রিয়মুখ।"

গুরু গুরু

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অন্নেক ধন্যবাদ হাসি

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

প্লেটে সাজানো সন্দেশের সাথে এক টুকরো ফ্রি উন্নাসিকতা চেটেপুটে খাই

কষ্টে গিলতে হয় এমন এক বাস্তবতা। সন্দেশের মতই গলায় আঁটকে যায়।

চোখ নেই, আছে যশোর

এই শহরটাকে চিনি মনে হয়। অনেকটা আমাদের যে কারো চেনা শহরটার মত। যে অনায়াসে ঢুকে যায় চোখে অথবা মগজে।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

যশোর না হয়ে হতে পারে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী। বসিয়ে নিন যে যার ফেলে আসা শহর, যে শহর চোখে নিয়ে ঘুরি, মনেমনে ডাকি।

বাংলাদেশের অনেক শহরে গেছি, যশোর কখনো যাইনি। আমার ধারণা শহরে পিচের রাস্তার বদলে শীতলপাটি বিছানো। আর অনেক তালপুকুর শহর জুড়ে।

ফারাবী [অতিথি] এর ছবি

কবিতাটা পড়তে পড়তেই পাউল সেলানের একটা কবিতার কথা মনে পড়ল- 'বছরগুলো তোমার থেকে আমার দিকে'।


তোমাকে দেখে ঠিক আমার মতই মনে হয়।
অবিকল বিকল ডানা।
হাতে পায়ে একই করাতের দাগ।
চোখ তুলে তাকালে দেখলাম, চোখ নেই, আছে যশোর।
একটা আস্ত শহর চোখে এঁটে এঁটো কুড়াচ্ছ কুকুরদের সাথে।
ঘুরেফিরে শহরের বিভিন্ন ডাস্টবিনে আমাদের দেখা হয়।
মৃত শিশু, জলের বোতল বা গহন কাঁকন।

অনুভূতির চূড়ান্ত প্রকাশ, প্রায় অলৌকিক, এর থেকে বেশি যেন নেয়া যায় না, কিংবা একজন কবিই নিতে পারে। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি একটা পরীক্ষা চালিয়েছিলাম, 'গ্রাস' নামে একটা কবিতায়, কতটা উতরেছিল জানিনা, তবে এধরনের কবিতা প্রসবের সুখই আলাদা, এটা বুঝেছিলাম।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

হুম, কবিতাটা লিখতে খুব আরাম লেগেছে এটুকু বলতে পারি হাসি

আপনি লেখেননা কেন? দিয়ে দিন এখানে "গ্রাস" কবিতা, পড়ি, পড়তে ইচ্ছা করছে।

মনামী এর ছবি

আপনি অসাধারণ! আর কিছু বলার ভাষা পাচ্ছিনা।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

গল্প চাই, "মনামীর গল্প" হাসি

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

গল্প চাই, "মনামীর গল্প" হাসি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ডুপ্লি দেঁতো হাসি

-------------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

স্নিগ্ধা এর ছবি

আনন্দী - তোমার কবিতা আর তোমাকে কেন যেন মেলাতে পারি না! খুব সম্ভবত সেটাই হওয়ার কথা, সেখানেই কবি আনন্দীর সার্থকতা। কথা বলার সময় যে নরম সরম আনন্দীকে চিনি, তোমার লেখা, বিশেষ করে কবিতা (গল্পও না) পড়লে একদম অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়! আমি জানি, কবিতা পড়ে পাঠকের তো আর কবিতার পেছনের মানুষটাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কথা নয়, কবিতাতেই মনোসংযোগ করবার কথা - মানিও সেটা। তারপরও বলেই ফেললাম ......

আর, তোমার গল্প পড়লে একদম একজন তৈরী গদ্যকারকে টের পাই, কবিতা পড়লে মনে হয় - in the making .....

আশা আছে, এসব চরম মাতব্বর মার্কা কথাবার্তা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে হাসি

সেই গল্পটা দিলে না?

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

যাও মাফ করে দিলাম, দিদিভাইই তো দেঁতো হাসি

আমি জীবনে কোনদিনও গল্প লিখিনাই, সচলে প্রথম লিখলাম, আর বলে কীনা তৈরি গদ্যকার !!!! সবকিছুই in the making....

কবিতা লিখতে সবচেয়েয়েয়ে স্বস্তি পাই, সবচেয়ে সৎভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারি। কবিতার আড়ালের সুযোগে রাগ, ঘৃণা, অন্ধকারগুলো বলতে খুব সহজ লাগে। অনেক ভেবে দেখলাম, সবকিছুর বিনিময়ে কবিতাই লিখতে চাই, আর কিচ্ছুনা। তোমাদের ভাল লাগলে এখানে দেব পড়তে, নয়তো খাতায় জমবে, তবে লিখবো।

গল্পটা লিখিনি এখনো, একটু সময় নিয়ে লিখবো।

আমাকে "কোমল" ভেবে ভুল করোনা একদম, সাবধান হাসি

অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ মাতব্বরিটুকুর জন্য দেঁতো হাসি

স্নিগ্ধা এর ছবি

কী মুশকিল, তোমাকে কবিতা লিখতে নিরুৎসাহিত করসি নাকি মন খারাপ তোমার গল্প আমার বেশি ভাল্লাগে এটাই বললাম। লিখো বাবা লিখো, পাতার পর পাতা কবিতাই লিখো নাহয়, আর এখানে দিবা না তো কী??!!

এহহহহ, আবার সাবধান করে!

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

দেঁতো হাসি

সবজান্তা এর ছবি

প্লেটে সাজানো সন্দেশের সাথে এক টুকরো ফ্রি উন্নাসিকতা চেটেপুটে খাই।

এই লাইনটুকু বাদে কবিতাটা ভালো লাগলো।


অলমিতি বিস্তারেণ

যুধিষ্ঠির এর ছবি

ভালো লেগেছে কবিতাটা।

অতিথি লেখক এর ছবি

অনেকদিন পর একটা কবিতা পড়লাম। ভালো লাগলো।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশ লাগল কবিতাটা।

কৌস্তুভ

জি.এম.তানিম এর ছবি

চলুক
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

সবজান্তা, যুধিষ্ঠিরদা, পলাশ রঞ্জন সান্যাল, কৌস্তুভ, তানিম সবাইকে
একসাথে ধন্যবাদ হাসি

সারওয়ার রেজা এর ছবি

'শহরে পিচের রাস্তার বদলে শীতলপাটি বিছানো। আর অনেক তালপুকুর শহর জুড়ে।'- আমিও যশোর যাইনি। এরপর কি যাওয়া ঠিক হবে? পৌরাণিক নগরের মতো দৃশ্যকল্পটা ভেঙে যায় যদি!

আপনার এই কবিতাটা আমার সবচে পছন্দ।

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

ওরা নিয়ে নেয় সব জলে আঁকা সুখ, মাধবীর বন, পাখিদের সাজ।
শহরের ডাস্টবিনে বিকল মানুষ, চল ফাঁকা হই, চিনে নেই প্রিয়মুখ।

অসাধারন ।

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।