অশান্ত পাহাড়

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি
লিখেছেন আনন্দী কল্যাণ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২১/০৪/২০১১ - ৩:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করছিলাম। কারো বিয়ের ছবি, গ্র্যাজুয়েশনের ছবি, জন্মদিনের শুভেচ্ছা ইত্যাদি দেখছিলাম, টুকটাক মন্তব্য করছিলাম। এই ফেসবুক জায়গাটা আমার খুবই আজব লাগে। একটা নিউজ ফিডে হয়ত দেখছি, কেউ লিখেছে "অন ক্লাউড নাইন"। আর তার ঠিক নিচেই রক্তাক্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম। এখন ভাল থাকার উপায় হল, সুখবরগুলি দেখা, এবং দুঃসংবাদগুলি এড়িয়ে যাওয়া। যে কোন খারাপ ঘটনাতেই আমার খুব প্রতিক্রিয়া হয়, আমি সাধারণত ফেসবুকে কম ঢুকি, নিজেকে ভাল রাখার চেষ্টা করি। আজ হঠাৎ আমার একজন স্কুলের বন্ধুর ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে ভয়ানক ধাক্কা খেলাম। আমার বন্ধুটি একদম নরম-সরম নিপাট ভালমানুষ, সে এখন এফ শব্দ দিয়ে গালি দিচ্ছে বাঙালিদের। বুঝতে পারছি “বাস্তবতা” নামে একটা বিচ্ছিরি শব্দ ওকে পালটে দিয়েছে, কতটা ক্রোধ জমা হলে একটা অমন নরম মানুষ পালটে যেতে পারে, সেটা বুঝতে পেরে আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। খুব অবাক হয়ে উপলব্ধি করছি, আমি বাঙালি, আর ও আদিবাসী। এই অপরিচয় আমি চাই না। "আমি" ও "সে" দুইটি পক্ষ, আমরা কি সবাই মিলে "আমরা" হতে পারি না?

বছরের পর বছর ধরে পাহাড়ে অস্থিরতা চলছে। মিডিয়ার পরিসংখ্যান বাদ দিই, ব্যক্তিগত সূত্রে জানি, আমার আদিবাসী বন্ধুরা প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। যখন বান্দরবন, রাঙামাটি, টেকনাফ, কক্সবাজার বেড়াতে গিয়েছি প্রতিটা জায়গায় দেখেছি অধিকাংশ ব্যবসা-বাণিজ্যের মালিকানা বাঙালিদের। যারা ওখানকার আদি বাসিন্দা, তারা অনেক জায়গাতেই কোণঠাসা হয়ে আছেন। সাম্প্রতিক কালে আবার অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়, এবং প্রচারমাধ্যমে বাঙালি-নিধনের খবরই ফলাও করে আসছে। আদিবাসীদের উপর হওয়া নিপীড়নের খবরগুলি ব্ল্যাক-আউট করা হচ্ছে। যারা দেশে আছেন, মূলধারার প্রচারমাধ্যমের সাথে যুক্ত আছেন, অনুরোধ করছি দুই পক্ষের ঘটনাগুলিই তুলে ধরতে।

আদিবাসী বন্ধুদের সাথে কথা বললে বুঝতে পারি, ধীরে ধীরে অনেক ক্রোধ আর ঘৃণা জমে উঠছে ওদের মাঝে, আমাদের দখলদারি মানসিকতার কারণে। চিরকাল অরাজনৈতিক চিন্তা-ভাবনা করা আমার নিরীহ বন্ধুটিও সশস্ত্র আন্দোলনের স্বপ্ন দেখে। স্বাধিকার-বোধ, দীর্ঘদিনের শোষণ মানুষকে তা করতে বাধ্য করে, যা করেছিল চল্লিশ বছর আগে এদেশের মানুষ। আয়রনি। আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম শুধু একটা “অসাম” বেড়াতে যাবার জায়গা হিসেবে না ভেবে, সেখানকার আদি মানুষদের ভাল থাকা নিয়ে কতটা ভাবি? কাপ্তাই লেকে নৌ-বিহার করার সময় কখনো কি ভাবি ওই পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য কত মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন? পাকিস্তান ক্ষমা চাইছে না দেখে আমাদের যত লেখালেখি, আর সেই একই অপরাধ কি আমরা দিনের পর দিন করে চলছি না? এই প্রশ্নগুলি শুধুমাত্র নিজেকেই করা, অন্য কাউকে না। ভাবছি, ফেসবুকে, ব্লগে যখন যুদ্ধাপরাধীর বিচার, পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া ইত্যাদি নিয়ে লিখছি, লিঙ্ক শেয়ার করছি, কথা বলছি, কেমন লাগে আমার আদিবাসী বন্ধুটির তখন? ও যদি আমাকে বলে বসে, আমার বাড়ি পুড়ছে, আমার উপাসনালয় পুড়ছে, আমার ভাই-বোন মৃত, তুমি চল্লিশ বছর আগের অপরাধের বিচার চাইবার আগে আমার সাথে বর্তমানে যে অপরাধ হচ্ছে, তা নিয়ে একটি অক্ষরও কি লিখেছ? আমার কোন উত্তর নেই।

লিঙ্ক ১

লিঙ্ক ২


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

পাহাড়ের নিহত নির্যাতিত আমার আদিবাসী ভাই বোন! কার দেশ এটা! শ্বাপদের!?

অনেক তথ্য দিয়ে এই বিষয়ে লেখা দরকার। মিডিয়ার গলা চেপে ধরা। ব্লগেই লিখতে হবে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

লেখার নিচে দুইটি লিঙ্ক দিয়েছি, একটি ফেসবুক গ্রুপ আর ব্লগ, সেখানে বেশ কিছু তথ্য পাবেন।

ashraf.bsk এর ছবি

দেখুন রাজনৈতিক দলগুলো এখনো পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু বলছে না। পাহারীদের একটা গ্রাম পুরিয়ে দেয়া হল। কোন পুলিস,বর্ডার গার্ড কেউ কোন প্রতিরোধ করলোনা। মিডিয়ার উপর কোন সাহসে ভরসা করি????

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

................................................

সারওয়ার েরজা এর ছবি

ধন্যবাদ লেখাটার জন্য

আয়নামতি1 এর ছবি

আপনার লেখার একদম শেষে উঠে আসা এরকম প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলাম কিছুদিন আগে, বন্ধুটির প্রশ্নের উত্তরে শব্দ খুঁজে পাইনি। আমি আমরা সোচ্চার হলেই যদি প্রলয় ঠেকানো যায় আসুন কন্ঠ ছাড়ি জোরে............

অনীক ইকবাল এর ছবি

হাহ! ১৭৫ বার পঠিত, মন্তব্য মাত্র একটা। কি চমৎকার দেখা গেলো! আমি এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলে 'উপজাতিদের পেইড ব্লগার' আখ্যায়িত হয়েছি। কেউ কেউ আমাকে এদেশ ছেড়ে অন্য কোথাও গিয়ে বসবাস করার পরামর্শ দিয়েছেন। বাকিরা চুপ থেকেছেন। এসব কথা কেউ শুনতে চায়না।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

হ্যাঁ, এই বিষয়ে লিখলে এই ধরনের কথাবার্তা শোনার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়। আবার কখনো কখনো অত্যাচারের অনেক অতিরঞ্জিত খবর শোনা যায় বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে গুজব ছড়ানো হয়, এটাও ঠিক। অনেকে হয়তো চুপ থাকেন এই ভেবে যে এসব নিয়ে বেশি কথা বললে হয়ত পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে। ক্রোধ, ঘৃণা আরো ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু, সত্যি ঘটনাগুলি সামনে আসা দরকার। সেনাবাহিনীর কাজকর্ম, সরকারের ভূমিকা ইত্যাদি নিয়ে আমাদের সবার কথা বলা প্রয়োজন।

ফাহিম হাসান এর ছবি

উদ্দেশ্যমূলক গুজব ছড়ানো হয় মাঝে মাঝে - ঠিক। কিন্তু অত্যাচারের খবর অতিরঞ্জিত করা হয় এমন ঘটনা নগণ্য। বরং এর উল্টোটাই ঘটে বেশি। আমার বেশ কিছু আদিবাসী বন্ধু আছে যাদের সাথে মিশেছি ঘনিষ্ঠ ভাবে। অবাক হয়ে যেতে হয় তাদের সহ্যশক্তি দেখি।

নাশতারান এর ছবি

"উপজাতি" শব্দটাই আপত্তিকর।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

নাশতারান এর ছবি

ভুল জায়গায় মন্তব্য

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

খুবই দুখঃজনক পরিস্থিতি। পাহাড়ী ভাই বোনদের এগিয়ে এসে এই অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে অনুরোধ করছি। সনাতন মিডিয়া ডিস্ক্রিমিনেইট করলে ইন্টারনেট মিডিয়াতেও হলেও সরব হোন। আমরা আছি আপনাদের সাথে।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

হ্যাঁ, আদিবাসী বন্ধুদের অনুরোধ জানাচ্ছি তাদের কথাগুলি সবার সাথে ভাগ করে নেবার জন্য।

মীর মোশাররফ হোসেন এর ছবি

আমাদের দ্রুতই রি-এক্ট করা দরকার....দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান বের করা জরুরী...নইলে বাতাসে জোর গুজব আবারো যুদ্ধ শুরু হতে পারে পাহাড়ে...দুষ্কর্মের ভাগীদারদের তাতে কোনো ক্ষতি নেই কিন্তু নিশ্চিত ভাবেই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে সহজ সরল আদিবাসী, নির্বিবাদী কিছু বাঙালী আর সবুজ আবাস....লেখাগুলোর প্রত্যাশায় থাকলাম

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

এত বছর ধরে এই সমস্যা চলে আসছে, আর কতদিন?

তাসনীম এর ছবি

পাহাড়ে আমাদের এই পাকিপনা বন্ধ হোক।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

বন্ধ হোক পাকিপনা।

ফাহিম হাসান এর ছবি
ফাহিম হাসান এর ছবি

আপনার পোস্টটা পড়ে মন খারাপ হল খুব। পাহাড়ের সমস্যাটা এখন আর কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক।

পাহাড়ের আদিবাসীদের সম্পর্কে গড়পরতা মানুষের (শিক্ষিত মানুষেরই বেশি) মনে অনেক ভুল ধারণা। কয়েকটা বলি -

# আদিবাসীরা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের সহায়তা করেছিল।
# আদিবাসীরা বাংলাদেশের অখন্ডতায় বিশ্বাসী না। ওরা সবাই স্বায়ত্তশাসন চায়।
# আদিবাসীরা ভারত, মায়ানমারের সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয় এবং নিজেরাও এধরনের কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত।

সবশেষে- "আদিবাসীরা হল অসভ্য একদল নেংটিপুংটি পরা মানুষ। এরা মদ খেয়ে নাচা গানা করে। ছুটি-ছাটা পেলে এদের অঞ্চলে ঘুরতে যাওয়া ব্যাপক অ্যাডভেঞ্চার। সুন্দর সুন্দর মেয়ে আর কিউট পোলাপানের ছবি তুলে ফেইসবুকে পোস্ট করা যায় !!"

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

আপনার উল্লেখ করা কথাগুলি অনেককেই বলতে শুনেছি। আসলেই, অনেকে অনেককিছু ভুল জানেন। জ্ঞানী মানুষ, সভা-সেমিনার করা মানুষরা এইসব নিয়ে লিখছেন, কথা বলছেন, সত্যি কথাগুলো জানেন। কিন্তু, যারা সাধারণ, নাগরিক মানুষ, আমজনতা, শিক্ষিত শ্রেণী, তাদের অনেককেই সত্যিটা না জেনে অফেন্সিভ মন্তব্য করতে দেখেছি। আর আমাদের আদিবাসী বন্ধুদের কিন্তু এই আমজনতা পরিবেষ্টিত সমাজেই বাস করতে হয়, পড়াশোনা বা চাকরি করতে হয়, এবং মানুষ না জেনে ওদেরকে নিয়ে অনেক খারাপ মন্তব্য করে বসে, যেটা ওদের জন্য অনেক কষ্টের।

পাহাড়ের সমস্যাটা এখন আর কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক

একদম সহমত।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ভার্সিটিতে আমার এক চাকমা বন্ধু ছিল। সে কারো সাথে মিশতো না। একা আসতো একা যেতো। গম্ভীর থাকতো। তার ঘরবাড়ি কোথায় কাউকে বলতো না। তখন শান্তিবাহিনীর যুগ। কেউ কেউ সন্দেহ করতো তার সাথে শান্তিবাহিনীর যোগ আছে। বাকী ছেলেরাও এড়িয়ে থাকতো। আমি কিছুদিন দেখার পর প্রায় জোর করে তার সাথে বন্ধুত্ব পাতিয়ে ফেলি। আন্তরিকতার স্পর্শ পেয়ে বোধহয় সে আমাকে নিদারুণ বিশ্বাস করে ফেলে। আমাকে তার পাহাড়ের বাড়িতে পর্যন্ত দাওয়াত করে। আমি দেখলাম, সন্দেহ আর অবিশ্বাসই যত নষ্টের মূল।

পাহাড়ীদের দুরাবস্থা নিয়ে লিখছে অনেক বাঙালীই। কিন্তু তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আসলেই কোন সুবিচার করতে পারছি না। শান্তিচুক্তির পক্ষে বিপক্ষে দুটি রাজনৈতিক মত থাকলেও, সরকারে থাকার সময় দুই পক্ষকেই যার যার সময়ে অভিন্ন অবস্থান নিতে দেখেছি। সেটা বিএনপি হোক বা আওয়ামীলীগ।

পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি কেবল পাহাড়ের শান্তি নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির মঙ্গলের জন্যও বিরাট প্রয়োজনীয় ব্যাপার।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

সন্দেহ আর অবিশ্বাসই যত নষ্টের মূল

বিএনপি, আওয়ামীলীগ, সেনাবাহিনী, মিডিয়া, বাঙালি সেটলার, আদিবাসী এতগুলি পক্ষ মিলে নানামুখী সমস্যা তৈরি হয়েছে। পারস্পরিক বিশ্বাস হয়তো আবার সব ঠিক করে দেবে, আশা রাখি। কিন্তু, সেই বিশ্বাস আবার ফিরে আসবে কি করে?

নির্লীপ্ত বহুদুর এর ছবি

আমার বহু বন্ধুই বিশ্বাস করে না যে পাহাড়ে বাঙ্গালিরা নির্যাতন করে বরং ওদের মনোভাব টা হল পাহাড়িরা বহিরাগত এই টাইপ । খুবই কষ্ট লাগে । কিন্তু এরকম চিন্তা ভাবনার লোকদের সংখ্যা টা আশঙ্কাজনক ভাবে বেশি । তাই পাহাড়ে নির্যাতন হলে কেউ কিছু বলে না ।পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনী এক সময় যে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছিল তার খুব কমই প্রকাশ পেয়েছে । আমরা শান্তি চুক্তি করে পাহাড়ি দের প্রতিরোধ কে দমিয়েছি , তাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়েছি , এরপর নিজেরাই চুক্তিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাচ্ছি ।

সজল এর ছবি

ঢাবির ক্যাম্পাসের দেয়াল লিখনঃ "পাহাড়ে গণহত্যা ভুলি নাই" দেখে এটা বিশ্বাস করা শক্ত যে আমরা নির্যাতন আর নিপীড়নের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি।

খাগড়াছড়ি শহরে রিকশা করে ঘুরছি, কিন্তু পাহাড়ি মানুষ খুব একটা দেখছি না, অবাক হয়ে সহযাত্রীকে জিজ্ঞেস করতে যাব, তখনি দেখি তর্জনী উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জিয়াউর রহমানের মূর্তি।

কর্ণফুলি'র কান্না ডকু দেখে খুবই খারাপ লাগছিলো, বিশেষত ওই অঞ্চলের লোকেরা বিশ্বাস করে আছে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন হলেই তাদের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কিন্তু আদৌ বাস্তবায়ন হবে?

কর্ণফুলি'র কান্না ডকুমেন্টারির লিংক এখানে

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

১৯৪১ সনে বাঙালিদের সংখ্যা পার্বত্য চট্টগ্রামে ছিল ২%, আর এখন নিশ্চই অর্ধেকের ও বেশি।

ডকুমেন্টারির লিঙ্ক দেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। যারা দেখেন নি, দেখার অনুরোধ করছি।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

উপজাতি নয়, আদিবাসী নয়, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী নয়, পাহাড়িও নয় - জাতি। লোকসংখ্যা বিচারে এক জন হলেও জাতি, পনের কোটি হলেও জাতি। ত্রিপুরা, মনিপুরীরা ভারতে যেমন জাতি; বাংলাদেশেও তেমন জাতি। যেমন বাঙালীরা ইউরোপ-আমেরিকায় বাস করলেও জাতি; ঢাকা-কুমিল্লায় বাস করলেও জাতি। বাংলাদেশ একটা বহু জাতির দেশ এই সরল সত্যটা স্বীকার করতে হবে, বাংলাদেশের নাগরিক সব জাতির সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান বন্দুকের জোরে হয় না। ঘোষিত বা অঘোষিত সামরিক সামরিক শাসন দুনিয়ার কোথাও কোনোদিন কোন রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। আমাদের মিডিয়াগুলো এই খবরগুলোতে এক ধরনের সেলফ সেন্সরশিপ আরোপ করে। এর জন্য দায়ী তাদের মানসিকতা। বাঙালী ভিন্ন অন্য জাতির মানুষগুলোর প্রতি আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এই বৈষম্য, অনভিপ্রেত আচরণ চলতেই থাকবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

"আমি" ও "সে" দুইটি পক্ষ, আমরা কি সবাই মিলে "আমরা" হতে পারি না?

অসাধারণ উদার চিন্তা, কুর্ণিশ!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পাহাড়ে পাকিপনা বন্ধ হোক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নাশতারান এর ছবি

ক্লাস থ্রিতে পাঠ্যপুস্তকে বাঙালির জাতিগত বৈচিত্র্য বিষয়ে পড়ার ছিলো। বাংলাদেশের আদিবাসীদের কথা লেখা ছিলো অবধারিতভাবেই। আমাদের স্কুলে অনেক চাকমা, মারমা, গারো মেয়ে পড়ত। আমার এক বন্ধু খুব উৎসাহ নিয়ে বললো যে তার মা গারো। আমাদের ক্লাসটিচার হাঁ হাঁ করে তেড়ে এসে তাকে বললেন যে প্রকাশ্যে নাকি এ কথা বলতে নেই। আমাদের স্কুলে এটা আপাতবিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা হলেও বৃহৎ পরিসরে এমন সাম্প্রদায়িক আচরণ বিরল নয়। পাহাড়িদের "উপজাতি" ট্যাগ দিয়ে পরগাছা ভাবার মানসিকতা কোত্থেকে তৈরি হয়েছে আমার জানা নেই।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

অদ্রোহ এর ছবি

ব্লগগুলো পড়লাম। এসব নৃশংস ঘতনাগুলো কীভাবে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে ভাবতেই স্তব্ধ হয়ে যেতে হয়।

আরও একবার বলি, পাহাড়ে পাকিপনা বন্ধ হোক।

--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

পাহাড়ে পাকিপনা বন্ধ হোক

...........................
Every Picture Tells a Story

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

খারাপ লাগলো। এই যদি হয় শান্তিচুক্তির ফল তবে কি প্রয়োজন ছিলো এই নাটকীয়তার?

নির্যাতিতের পক্ষে আমি সবসময় ছিলাম, আছি আর থাকবো।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

স্বাধীন এর ছবি

চরম হতাশা জনক। আদিবাসীদের উপর নির্যাতন বন্ধ হোক অবিলম্বে।

ব্লগের মানুষগুলোকে একত্র করে কোন মানববন্ধনের আয়োজন করা যায় না?

Nipun Chakma এর ছবি

ধন্যবাদ, পাশে থাকার জন্য । আপনাদের মন্তব্য পড়ে খুব ভাল লাগলো ।

মুনিয়া এর ছবি

বাঙ্গালী-আদিবাসী ফোরাম ধরণের একটা গ্রুপ দরকার। ফেসবুক রেভোলুশন ধরণের।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

গ্রুপ আছে একটা।

টিউলিপ এর ছবি

স্কুলে আমার এক বন্ধু ছিলো, আদিবাসী। সারাক্ষণ মুখে হাসি লেগেই থাকত তার। হোস্টেলে থাকত, প্রায়ই ওর রুম থেকে উপকরণ এনে আমভর্তা করে খেতাম। আমাদের ও ওর ভাষা শেখাত, ওদের উপকথা শোনাত। স্কুল ছাড়ার পরে কোথায় হারিয়ে গেছে কে জানে। আমি যতবার এই খবরগুলো পড়ি, ততবার আমার সেই বন্ধুটার হাসিমুখ আমার মনে পড়ে, আর আমি লজ্জায় অসহায়ত্বে মাথা নত করি।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

হিমু এর ছবি

পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাত নিয়ে আমাদের শহুরে শিক্ষিত মানুষের আশ্চর্য রেসিস্ট মনোভাব রীতিমতো নার্ভের ওপর চাপ ফেলার মতো।

পাহাড় সম্পর্কে মানুষ যে জিনিসটা বোঝেই না, সেটা হচ্ছে একজন পাহাড়ির জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাহাড়ের মাটিতে সমতলের তুলনায় অনেক কম। চারজনের একটা পরিবারের জীবনধারণের জন্য পাহাড়িদের কয়েকটা পাহাড়ে জুম চাষ করতে হয়, তারজন্যে প্রতিদিন কুড়ি থেকে তিরিশ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি দিতে হয়। তার এই হাড়ভাঙা খাটুনির চাষের ফসল তাকে বিক্রি করতে হয় পাহাড়ের বাজারে, যেখানে প্রায় সব আড়তদার সেটলার বাঙালি। এক মণ আদা নিয়ে মাইলের পর মাইল পাহাড়ি পথ পাড়ি দিয়ে দরিদ্র একজন পাহাড়ি যখন বাজারে পৌঁছায়, আড়তদার হারামজাদা তার আদা না কিনে তাকে বসিয়ে রাখে, নয়তো ঘোরায়। সাধারণ পাহাড়িদের হাতে ক্যাশ টাকা থাকে না খুব বেশি, এরা সারাদিন অভুক্ত বসে থাকে বাজারে। সন্ধ্যায় যখন সে ক্ষুধাতৃষ্ণায় মোটামুটি অস্থির, তখন তাকে আদার বাজার দরের দশ ভাগের এক ভাগ দাম সাধে আড়তদার। বেশির ভাগ সময় ঐ দামেই তাকে জিনিসটা বিক্রি করে টুকিটাকি শুঁটকি মাছ বা অন্যান্য বাজার করে বাড়ির পথে হাঁটা দিতে হয়।

আমি কয়েক বছর টানা ট্রেকিং করেছি বান্দরবান আর রাঙামাটিতে। পাহাড়িদের গ্রামে তাদের কুটিরে রাতে থেকেছি, তাদের দেয়া খাবার খেয়েছি, কী কঠোর পরিশ্রম তারা করে, নিজের চোখে দেখেছি। পাহাড়ে আমাদের বাঙালি সেটলাররা কয়টা পাহাড় নিজেরা সাফ করে থাকা শুরু করেছে? বেশির ভাগ বসতিই পাহাড়িদের হাড়ভাঙা খাটুনিতে তৈরি করা বসতি থেকে তাদের খেদিয়ে দিয়ে দখল করা।

যে সৈনিকেরা পাহাড়ে দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে, তারা পাহাড়িদের প্রবলভাবে অবিশ্বাস করে। জনৈক নন-কমিশণ্ড অফিসার একবার আমাদের ট্রুপ লিডারকে (তিনিও সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন) চোখ রাঙিয়ে বলেছিলো, আপনি কি জানেন যে এইসব জায়গা এখনও স্বাধীন হয় নাই? ক্ষক্ষ্যংঝিরি থেকে বান্দরবানে ফেরার পথে আমাদের সঙ্গের মারমা গাইডকে দেখিয়ে লিফট চাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা বলেছিলো, এদের কাছ থেকে সাবধানে থাকবেন। ঐ গাইড আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন একাধিকবার।

যতবার পাহাড়ে বাঙালিদের অপকর্মের কথা পড়ি, নিজেকে একটা পাকি মনে হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরা কেন চুপ করে ছিলো, এ প্রশ্ন কেউ জানতে চাইলে আয়নার দিকে তাকান, সেখানে উত্তর আছে।

টিউলিপ এর ছবি

আজকেই দেখছিলাম ফেসবুকে, শেয়ার করা এই লেখার নিচে একজনের কমেন্ট, এগুলো নাকি সব মিথ্যা, অপপ্রচার। আরেকজনের কমেন্ট, এইরকম কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে বটে, কিন্তু সেইগুলো এত বড় করে দেখার কিছু নেই। আর এগুলো দিয়ে পাকিস্তানীদের সাথে আমাদের তুলনা, সেটা তো হাস্যকর। আমরা তো ওদের মত বড় আকারে কিছু করছি না। এদের কে বুঝাবে একটা লোককে খুন করা, একজনের উপরে জাতিসত্ত্বা চাপিয়ে দেওয়া, একটা মেয়েকে ধর্ষণ করাই অপরাধ? আর সেটাকে ধামাচাপা দেওয়া আরো বড় অপরাধ?

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

নাশতারান এর ছবি

আমার ফেসবুক কমেন্টটাই তুলে দিচ্ছি।

"এখানে অত্যাচারের মাত্রা বা ধরন নয় বরং দখলদারী অ্যাটিচুডের কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তানের জনগণ একাত্তরে তাদের দখলদার সরকারের বিরোধিতা বা সমালোচনা করেনি। এটা কোনো বিবেকসম্পন্ন সচেতন জাতির লক্ষণ না। আম্রিকান জনতা কিন্তু ঠিকই ইরাক যুদ্ধের বিরোধিতা/সমালোচনা করেছে। আমরা যদি শুভবুদ্ধিতে বিশ্বাসী হই, তাহলে পাহাড়ে বাঙালির এই আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। পাকিস্তানের কাছ থেকে ক্ষমা-ক্ষতিপূরণ প্রত্যাশা করা আর বাঙালির পাহাড়িদমন-নির্যাতনের বিরোধিতা করা কোনো পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী ইস্যু না, বরং দুটো একই সূত্রে গাঁথা।"

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

টিউলিপ এর ছবি

উত্তম জাঝা!

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

চলুক

ব্লগের অনেক মহারথীও দেখি সরাসরি পাহাড়ি হত্যার ইন্ধন দেয়। মহিমান্বিত ব্লগার ফিউশন ফাইভ এ ব্যাপারে এগিয়ে। এটা যদি একটা ফালতু রিভার্সও হয়ে থাকে তবু ওনাদের মধ্যে মহিমান্বিত পাঁচজনকে একজন আরেকজনের কান ধরে পাহাড়ে দৌড়াবার প্রস্তাব করছি।

দুর্দান্ত এর ছবি

যতবার পাহাড়ে বাঙালিদের অপকর্মের কথা পড়ি, নিজেকে একটা পাকি মনে হয়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরা কেন চুপ করে ছিলো, এ প্রশ্ন কেউ জানতে চাইলে আয়নার দিকে তাকান, সেখানে উত্তর আছে।

চলুক, ফেসবুকের স্ট্যাটাসের জন্য ধার নিলাম।

নিবিড় এর ছবি

পাহাড়ে পাকিপনা বন্ধ হোক

কুঙ্গ থাঙ এর ছবি

চলুক

পাহাড়ের সমস্যাটা এখন যতোটা রাজনৈতিক, তার চেয়ে বেশী মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক বলে আমার ধারনা । এই একটি বিষয়ে রাস্ট্র এবং সংখ্যাগুরু মনস্তত্ত্বের দারুন মিল। সবারই দেশপ্রেম কিছু পাহাড়, পাহাড়ের মাটি, পাহাড়ি কিছু নদী, হ্রদ, কিছু গাছপালা-ফুল-লতাপাতার প্রতি ভালবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ঐ দেশপ্রেমের ভেতর পাহাড়ে বাস করা মনুষ্যপ্রজাতির তেমন কোন স্থান নেই।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

অপারেশন সার্চলাইটের পোড়ামাটি নীতির সাথে মিলে যায়।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

সবারই দেশপ্রেম কিছু পাহাড়, পাহাড়ের মাটি, পাহাড়ি কিছু নদী, হ্রদ, কিছু গাছপালা-ফুল-লতাপাতার প্রতি ভালবাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ। ঐ দেশপ্রেমের ভেতর পাহাড়ে বাস করা মনুষ্যপ্রজাতির তেমন কোন স্থান নেই।

আমার কাছে দেশ মানে দেশের মানুষ, তাদের হৃদয়, যুক্তি, আবেগ। নদী, মাটি, পাহাড় তো পৃথিবীর সবখানেই এক। কিন্তু, এই মানুষগুলাই দিন দিন কেমন অদ্ভুত হয়ে যাচ্ছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না।

guest_writer এর ছবি

একটা সময় ছিল যখন আমাদের বলা হত পাহাড়ি আদিবাসি মাত্রই শান্তিবাহিনী, স্কুলের পাঠ্যবইয়ে আদিবাসিদের বলা হত 'উপজাতি', টিভি তে দেখানো হত বাংলাদেশের বীর সেনারা কিভাবে এইসব 'উপজাতি'দের 'সন্ত্রাস' মোকাবেলা করছে। নাটক, সিনেমায় দেখানো হত পার্বত্য চট্যগ্রামের অপরূপ সুন্দর প্রকৃতি আর চাটনি হিসাবে ঢুকানো হত বাঙ্গালী নায়কের সাথে পাহাড়ি মেয়ের প্রেম।

আমরা জানতাম না বা জেনেও নীরব থাকতাম কয়েক দশক ধরে চলা ভূমিহীন বাঙ্গালীদের পাহাড়ে পাঠিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় আদিবাসিদের উচ্ছেদ করে নিজভূমে পরবাসি বানানোর নির্মম, অমানবিক, মধ্যযুগীয় প্রক্রিয়ায়। যেমন আমরা নীরব থেকেছি চার দশক ধরে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু তাড়ানোর সফল প্রয়াসে। আমরা হিন্দুদের, আদিবাসি দের জমি আর সম্পদ চাই, মানুষ চাই না। আমরা বাংলাদেশ কে আবার সাচ্চা মুসলমানদের পুন্যভুমি বানাতে চাই, প্রাণ ভরে গাইতে চাই, পাক সার জামিন...

নীল সমুদ্র

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পাহাড় আর সমতলের জাতিসমূহের সমস্যার মধ্যে অনেককিছু কমন পাওয়া যায়। তাদের দিকে নির্যাতনের ট্যাকটিকগুলার মধ্যেও মিল দেখবা। গণহত্যার সংজ্ঞার মধ্যে গণধর্মান্তকরণও নাকি পড়ে। এনজিও উভয়ধরণের জাতির উপরেই এই নির্যাতন চালাইতেছ। অবশ্যই রাষ্ট্র এইখানে পার্টনার হয়। আমি বিরিশিরি গিয়া এইটা দেখছি। একদিন বিস্তারে লিখতে চাই। তবে আরো জানতে চাই।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

হাসান মোরশেদ এর ছবি

দুপয়সা যোগ করিঃ-
বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আদি সংবিধানে অবাঙ্গালী জনগোষ্ঠীকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মপ্রক্রিয়ায় বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটার উল্লেখ রেখেই পাহাড় ও সমতলের অবাঙ্গালী সকল জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও অধিকার নিশ্চিত করা দরকার ছিলো। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ফাউন্ডিং ফাদার্সরা বাজে কাজ করেছেন।এখন সংবিধান সংশোধনের কথা চলছে, ৪০ বছর পরে হলে ও এটি করা উচিত।

জেনারেল জিয়া তার অবৈধ সামরিক শাসনকে 'ডিভাইড এন্ড রুল' পলিসি দিয়ে পাকাপোক্ত করতে চেয়েছিলো, সে কারনেই দেখা যায় বেহুদা সে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ নামে একটা ফাতরামী আমদানী করে জাতিগত সংখ্যাগরিষ্ঠদের পরিচয়ে সংশয় ও বিভাজন তৈরী করেছে আবার পাহাড়ের আদি মানুষদের উচ্ছেদ করে ভূমিহীন বাঙ্গালীদের বসিয়েছে। এর পেছনে জেনারেল জিয়ার বাঙ্গালী প্রেম খোঁজা অপ্রাসঙ্গিক।

সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর পাহাড়ের মানুষদের সশস্ত্র প্রতিরোধকে আমি বিনা প্রশ্নে সমর্থন করি। একদিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আরেকদিকে শান্তিবাহিনী- মাঝখানের টার্গেট সাধারন পাহাড়ি মানুষ আর বাঙ্গালী সেটেলার। কতো হাজার পাহাড়ের মানুষ, কতো হাজার সেটেলার মরলো- পরিসংখ্যান তেমন স্পষ্ট নয়।
মিজোরাম বেড়াতে গিয়েছিলাম। ২০০০ সালেও চাকমা শরনার্থীদের দেখেছি। শান্তিচুক্তির ঠিক আগে আগেও আঠারো জন বাঙ্গালী কাঠুরিয়ার লাশের ছবি দেখেছি পত্রিকায়।

শান্তিচুক্তি প্রয়োজন ছিলো। একটা দেশের ভেতর বছরের পর বছর সশস্ত্র সংঘর্ষ চলতে পারেনা। শতভাগ সফল না হোক, অন্ততঃ একটা উদ্যোগের প্রয়োজন ছিলো রাষ্ট্রপক্ষ থেকে।
কিন্তু চুক্তি হওয়ার পর একপক্ষ বাংলাদেশ সরকার যেমন সবটুকু শর্ত পালন করেনি তেমনি পাহাড়ীদের একটা অংশ ও চুক্তি মানেনি- এখনো তারা সশস্ত্র আছে।

পাহাড় থেকে যেমন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার জরুরী তেমনি জরুরী সকল পাহাড়ী গোষ্ঠী থেকে অস্ত্র উদ্ধার। যেমন প্রয়োজন পাহাড়ের সাধারন মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তেমনি প্রয়োজন সেটেলার বাঙ্গালীদের সঠিক ব্যবস্থা করা- এই মানুষগুলো জোর করে সেখানে যায়নি, রাষ্ট্র তাদেরকে নিয়ে গেছে।

যে অন্যায় রাষ্ট্র করেছে, যে অন্যায়ের ভুক্তভোগী পাহাড়ী-বাঙ্গালী উভয়পক্ষ সেখানে জাতীয়তাবাদী ডগমা বাজানোর চেয়ে দরকারী কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা তার অন্যায়ের প্রতিকার করার।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

একজন পাঠক 12 এর ছবি

পাহাড় থেকে যেমন সেনাবাহিনী প্রত্যাহার জরুরী তেমনি জরুরী সকল পাহাড়ী গোষ্ঠী থেকে অস্ত্র উদ্ধার।

তাহলে কাজটা করবে কে?

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কোন কাজটা? সেনাবাহিনী প্রত্যাহার নাকি সশস্ত্র পাহাড়ীদের নিরস্ত্রকরন?
দুটোই সরকারের দায়িত্ব।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

যে অন্যায় রাষ্ট্র করেছে, যে অন্যায়ের ভুক্তভোগী পাহাড়ী-বাঙ্গালী উভয়পক্ষ সেখানে জাতীয়তাবাদী ডগমা বাজানোর চেয়ে দরকারী কাজ হচ্ছে রাষ্ট্রকে বাধ্য করা তার অন্যায়ের প্রতিকার করার।

অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান কথাগুলি যোগ করার জন্য।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

পাহাড়কে যদি উদাহরণ হিসাবে নেই, তাহলে কার্যত আমাদের প্রশাসনযন্ত্র এখনো 'দিলমে পাকিস্তানী'। এবং এই পাকি মানসিকতা শুধু পাহাড়ীর নয়, আমার আপনার সবার নাগরিক অধিকার খর্ব করে চলেছে প্রতিদিন প্রতিক্ষন।

অসংখ্য ধন্যবাদ।

দুর্দান্ত এর ছবি

বাংলাদেশের সংবিধানে শুধু সকল নাগরিকের সমান অধিকারের কথাই বলা হয়নি, আগ্রহী সরকার যদি নাগরিকদের অনগ্রসর অংশকে অতিরিক্ত সুযোগসুবিধা দিতে চায়, তার রাস্তাও পরিষ্কার করে রেখেছে। তদুপরি পার্বত্যচট্টগ্রাম শান্তিচুক্তিতেও কিছু কার্যকর প্রক্রিয়ার প্রতিশ্রুতি করা হয়েছে, যেগুলো সংবিধানের সেইসব সুযোগসুবিধা প্রদানে মাঠ-পর্যায়ের বাধাগুলোকে সরিয়ে দেয়।

সুতরাং সংবিধান আর শান্তিচুক্তি - এই দুটোকেই যদি আন্তরিকতার সাথে বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়, তাহলে নতুন কোন আইন/কাঠামো ছাড়াই পাহাড়ির অশ্রুপাতের অনেকগুলো কারণ আর থাকবেনা।

যেটা পাহাড়িদের নিজেদের আরো ভাল করা উচিত সেটা হল, তাদের অন্তর্কোন্দল কমিয়ে আনা। মার্মা-চাকমা সার্কেল কাইজা তাদের সামষ্টিক সমস্যা সমাধানের চাইতে সমতলের সেটলারদের আগ্রাসন হাসিলের কাজে আসে বেশী।

আমার চোখে পাহাড়িদের প্রতি বাংলাদেশী সরকার ও সামরিক/পুলিশ বাহিনীর আচরণ পাকিস্তানের কেন্দ্রশাসিত উপজাতীয় অঞ্চলে তাদের সামরিক/পুলিশ বাহিনীর আচরণের ভুত এর মত মনে হয়। পাকিস্তান কাঠামোতে ব্রিটিশ সীমান্ত অপরাধ আইন অথবা চিটাগাং হিলট্রাক্ট রেগুলেশানগুলো পাকিস্তানী অভিজাত অফিসার/জমিদারদের বেশকিছু উপযোগিতা দিয়েছিল বলেই এগুলোকে জিইয়ে রাখার দরকার ছিল।

পাকিস্তান-ফেরত সরকারি/সামরিক অফিসারেরা যেটা উজিরিস্তান/কাফিরিস্তানে দেখে এসেছে, সেটাই কি তারা তারা আমাদের পাহাড়েও বলবত রাখতে চেয়েছে? সেখানে যেমন উপজাতীয় এলাকাগুলো যেমন কেন্দ্রীয় অফিসারের মৌজ-মেডাল-প্রমোশন-আত্মসাতের ফ্যাক্টরি হিসাবে কাজে লাগে, আমাদের পাহাড়েও তো তাই। যে আইনগুলো এখনো পাহাড়ে অত্যাচারের সুযোগ করে দেয়, সেগুলো এশুর মত পাকিস্তান-ফেরত স্বৈরাচারী প্রশাসকের হাত গলে বেরিয়েছে। কিন্তু আমাদের গণতান্ত্রিক সরকারের নেতারা নিজেদের জমিজিরাত আর গ্যাস-বিদ্যুৎ লাইনের যেভাবে আগ্রহ নিয়ে এশু'র আইন পরিমার্যনায় হাত দেয়, এইসব 'মামুলি' বিষয়ে অতটা আগ্রহী হয়না।

পাহাড়কে যদি উদাহরণ হিসাবে নেই, তাহলে কার্যত আমাদের প্রশাসনযন্ত্র এখনো 'দিলমে পাকিস্তানী'। এবং এই পাকি মানসিকতা শুধু পাহাড়ীর নয়, আমার আপনার সবার নাগরিক অধিকার খর্ব করে চলেছে প্রতিদিন প্রতিক্ষন।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

উত্তম জাঝা!

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

দময়ন্তী এর ছবি

চলুক
আমাদের উত্তর-পূর্ব নিয়েও এই এক ব্যপার৷ মন খারাপ

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।