দ্বিদ্রিম

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি
লিখেছেন অনিন্দ্য রহমান (তারিখ: শুক্র, ১১/০৯/২০০৯ - ১১:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্বপ্নের উপর রং চড়িয়ে লিখছি। একথা আগেই বলে নিই। পরে বললেও, ক্ষতিবৃদ্ধি হত না।

এখানে দুটো স্বপ্ন একসাথে করা। প্রথমটা প্রথমে, দ্বিতীয়টা আরেকদিন দেখি। প্রথমটা শেষরাতে। দ্বিতীয়টা দিবাস্বপ্ন। এখন যখন লিখছি - খুব একটা রাত নয়, ১০ টা ২৩।

প্রথম সত্য অতীত। কারণ আমাদের যাবতীয় দুর্যোগের কারণ খুঁজি আমরা, প্রথমে। কারণ, যা কেবল অতীতেই ঘটে থাকে। আমরা আমাদের দশাগুলোকে যেমুহুর্তমাত্র দুর্যোগ বলে চিহ্নিত করিম সেমুহুর্তমাত্র আমরা প্রথম সত্যের দেখা পাই, অতীত। কিন্তু বিষয়টা কী, আমাদের যাবতীয় দুর্যোগের কোনো কারণ নেই। আমরা কোনো দুর্যোগে নেই। আমাদের বর্তমান দশা কোনো অতীত পাপের ফল নয়, কারণ আমাদের বর্তমান, ভবিষ্যতের কারণ, তার জন্মদাতাজননী। তাই প্রথম সত্যই সত্য নয়। এইমতো হলে, স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?

আমি প্রথম স্বপ্নটা দেখি আমার পুরাতন প্রেমিকাকে। আচ্ছা প্রথম দ্বিতীয় ভুলে যাই। সে আমাকে বলল, আমি তোমার পুরাতন প্রেমিকা। আমি বললাম তাই নাকি? বসে ছিলাম একটা নামহীন রেস্টুরেন্টে। এই সময় কফি খাওয়া ভাল। যখন সামনের জনকে হয় চিনি না, নয় চিনতে চাই না। চিনি। এক চামচ ? বললাম দাও। সে গুছিয়ে বলল, তুমি আমাকে চিনতে পারছো না এনিয়ে আমার দুঃখ তেমন নেই। তুমি আর আমি শীতের সকালে মানালিতে এভাবেই কফি খেয়েছিলাম। হিড়িম্বার মন্দিরে। দুঃখিত, মনে করতে পারছি না। সে বলল, আমি এই মানালিতে নতুন। এখানে আমার কেউ নেই। তুমি ছাড়া। আমি বললাম, ঠিক আছে, মেনে নিলাম।

এখানে আমার দুজন লোককে নিয়ে সমস্যায় আছি। একজন যাকে আমি ভালবাসি। আরেকজন যে আমাকে ভালবাসে। আমি দুজনকে নিয়ে টিকতে পারছি না। আমি বললাম, আমি কি করতে পারি? সে বলল, দেখ আমার দুদিকেই স্বার্থরক্ষা হয়। দুদিকেই জয়। তা যেহেতু সম্ভব নয়। তোমাকেই মারতে হবে এদের একজনকে।

আমি কোনো একদিন ভোররাতে আবিষ্কার করি আমি লাতিন আমেরিকায় চলে এসেছি। জায়গার নাম : গুয়ামারাখা।

সেখানে মিনিস্টার দিপুমিনি। ভ্যানগাড়ির উপর দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেয়। আমাদের জাতীয় সম্পদ আমরা কাউকে দেব না। ভাইসব। আমি জানালা দিয়ে দেখি। ওয়াইড স্ক্রিন। মিনি মিনিস্টার বক্তৃতা দেয়। ভ্যানগাড়ি চলে। তারপর ভ্যানগাড়ি একটা রেস্টুরেন্টের পাশ দিয়ে যাচ্ছে। লা মানালি রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আসল ইল বুয়োনো। পিস্তল হাতে। একটা গুলি সোজা মিনি স্টারের গোড়ালিতে। খেলা শেষ। একিলিসের গোড়ালি।

জানালায় কয়েকবার রিপ্লে দেখানো হল। তিন ক্যামেরায়। পর্তুগীজ ভাষায় কমেন্টারি দিচ্ছে, তেমন কোনো শব্দই বুঝতে পারছি না, বহত-খুব ছাড়া। এটা কি পর্তুগীজ না স্প্যানিশ?

গুয়ামারাখা-তে এটা আমার বীভৎসতম অভিজ্ঞতা।

তারপর দুঃস্বপ্নের মধ্যে শুনতে পাই, পালাও অ্যামেরিকানরা আসছে। পালাও পালাও পালাও।

তুমি আর আমি শীতের সকালে মানালিতে এভাবেই কফি খেয়েছিলাম। হিড়িম্বার মন্দিরে। দুঃখিত, মনে করতে পারছি না। সে বলল, আমি এই মানালিতে নতুন। এখানে আমার কেউ নেই। তুমি ছাড়া। আমি বললাম, ঠিক আছে, মেনে নিলাম। (এই জায়গাটা কপি পেস্ট)

সে বলল আমাকে একজনকে মারতে হবে । আমি মারলাম। অ্যামেরিকানরা আসার আগে এটাই আমার একমাত্র ভাল কাজ হয়ে থাকুক। মিনি মিনির খুনেকে অ্যামেরিকানরা এসে চড়া বেতনে দলে নেয়। কিলারের কী দাম! তাই আমিও মারলাম।

তার আগে সন্দেহভাজন পুরাতন প্রেমিকাকে বললাম - যে তোমাকে ভালবাসে তাকে আমি মারব না। সে বলল, ভালো। তুমি যাকে ভালবাসো তাকে মারি, কি বল? সে বলল, ভালো। তার আগে, হন্ডুরাসের দিকে একবার তাকালাম। এসব জায়গায় এতদিন ম্যাপেট্যাপে দেখেছি। ন্যাটজিওতেও দেখিনি। দেখে নিলাম। তারপর গুলি করলাম। সোজা গোড়ালিতে।

হিড়িম্বার মন্দিরের শতসিঁড়ি গড়িয়ে পড়ে মরলাম, আমি। এখন ১১ টা ৩৩ বাজে।

প্রথম সত্য অতীত। কারণ আমাদের যাবতীয় দুর্যোগের কারণ খুঁজি আমরা, প্রথমে। কারণ, যা কেবল অতীতেই ঘটে থাকে। আমরা আমাদের দশাগুলোকে যেমুহুর্তমাত্র দুর্যোগ বলে চিহ্নিত করিম সেমুহুর্তমাত্র আমরা প্রথম সত্যের দেখা পাই, অতীত। কিন্তু বিষয়টা কী, আমাদের যাবতীয় দুর্যোগের কোনো কারণ নেই। আমরা কোনো দুর্যোগে নেই। আমাদের বর্তমান দশা কোনো অতীত পাপের ফল নয়, কারণ আমাদের বর্তমান, ভবিষ্যতের কারণ, তার জন্মদাতাজননী। তাই প্রথম সত্যই সত্য নয়। এইমতো হলে, স্বপ্নের ব্যাখ্যা কী?


মন্তব্য

এনকিদু এর ছবি

বেচারা দিপুমিনি ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

তুলিরেখা এর ছবি

ওরে বাবা! লাতিন আমেরিকার জায়গাটার নামটা কি ভয়ানক!
হো হো হো)
আপনি মশাই উপন্যাস লেখেন না কেন? স্বপ্ন গুলো গুছিয়ে গাছিয়ে মাঝেমধ্যে রাজনীতি ইতিহাস প্রেম ঝগড়া মারামারি যুদ্ধ চমচম লুচি এইসব মালমশলা ঢুকিয়ে দিয়ে? সবই তো আসলে প্রতীকী, আজ যা বোঝা যায় না কাল তা নিয়ে লোকে এমন মাতামাতি করবে যে বলার না!
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

উপন্যাস লেখার মতো ধৈর্য্য কিংবা সাহস কোনোটাই আমার নাই। আপনার মন্তব্যের সাথে একমত, একটা জায়গা ছাড়া। কোনো কিছুর মধ্যে রাজনীতি ঢুকিয়ে দেয়ার কিছু নেই। সবকিছুই রাজনীতি। রাজনীতির বাইরে কিচ্ছু নেই। আমার কাছে। ধন্যবাদ আবারো হাসি
______________________________________________
to be or not to be - that was never a question (jean-luc godard)


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

চিন্তিত

রণদীপম বসু এর ছবি

কী মন্তব্য করবো ? মন্তব্য করতে এসে দেখি যা পড়ে এসেছি আমি অর্থাৎ অতীতক্রিয়াটা ভুলে গেছি। সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকাই, অর্থাৎ কী মন্তব্য করবো সে-দিকে। কিছুই দেখি না। শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না, মানে কোন মন্তব্যই করা হয না। অর্থাৎ আমি যেমন ছিলাম তেমনই রয়ে গেছি ! অথচ যখন পড়তে শুরু করেছিলাম সেই সময় থেকে বেশ কতকগুলো মিনিট পেরিয়ে গেছে। কিন্তু.....? হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

স্মৃতি - সত্তা - ভবিষ্যৎ । স্মৃতি আর ভবিষ্যতের ক্রস সেকশন হচ্ছে সত্তা। ইগো। তবু, সাইকোঅ্যানালিসিস অনেক বেশি অতীত নির্ভর। সাইকোঅ্যানালিসিসের বড়ো বড়ো টেকস্টে ডিজায়ারের কথা গুরুত্বের সাথে উল্লিখিত হলেও, স্বপ্নকে অতীতের ঘটনাপ্রবাহের লক্ষণমাত্র বলেই বেশি গ্রাহ্য করা হয়। আমি এই ভাবনা থেকেই একটা 'চিন্তাশীল' লেখা লিখতে চেয়েছিলাম। হলো না। দেখতেই পেলেন। টি এস এলিয়টের ওয়েস্ট ল্যান্ডে যেমন আছে 'মিক্সিং মেমরি অ্যান্ড ডিজায়ার' - ওইরকম একটা অপরিণত 'মিক্স' হল। আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
______________________________________________
to be or not to be - that was never a question (jean-luc godard)


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।