গাজার শিশুরা মরিয়া প্রমাণ করিল...

আনু-আল হক এর ছবি
লিখেছেন আনু-আল হক [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২৬/০৭/২০১৪ - ১:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সম্প্রতি ইজরাইল-পরিচালিত বিধ্বংসী হামলায় গাজায় নারী-শিশুসহ অসংখ্য মানুষের প্রাণহানীর প্রেক্ষিতেই এই লেখা। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই অজস্র লেখা প্রকাশিত হয়েছে। নতুন করে লেখবার কী আছে! নতুন কিছু লেখার আছে কি না এই নিয়ে আমিও দ্বিধান্বিত বলে পুরনো কিছু নিয়ে খানিকটা পেছন ফিরে দেখা...

নিজেদের মত করে ছোট্ট একটা মানচিত্র পেতে মাত্র নয় মাসে আমাদের ত্যাগের তালিকা অত্যন্ত দীর্ঘ। আরো দীর্ঘ ছিল সেই সময়ে পরিচালিত গণহত্যাসহ যুদ্ধাপরাধের বিচার করবার প্রক্রিয়া। আমরা অতএব এই বিষয়টিকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করে যে-যার জায়গা থেকে সমর্থন-সহযোগিতা করতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। আমাদের বিশ্বাস ছিল রাজনৈতিক বা অন্য-কোনো-নৈতিক পার্থক্য ভুলে আমরা এই বিষয়ে অন্তত সবাই এক হব। যুদ্ধাপরাধের বিচার চাইবার ক্ষেত্রে আপত্তি থাকবে-এ ও কি বিশ্বাস করা যায়!

কিন্তু বিশ্বাসের ভিত্তি কেবলই বিশ্বাস যেহেতু, আমরা অচিরেই টের পেলাম, আমাদের বিশ্বাসে ভয়াবহ ত্রুটি ছিল। সবাই হঠাত করেই অত্যন্ত খুব বড় বেশি অ-রাজনৈতিক হয়ে উঠলেন। মিলেমিশে একাকার হয়ে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে অতীতের কথা ভুলে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন তাঁরা। আমরা শিখলাম গণহত্যা নিয়ে কথা বলা রাজনৈতিক, কিন্তু গণহত্যা নিয়ে কথা যাতে না হয় সেই প্রয়াস জারি রাখা খুব একটা অরাজনৈতিক। শেখার আসলেই কোনো শেষ নাই।

কিন্তু আমরা আমাদের সেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখলাম। অ-রাজনৈতিকরা শুধু ঘাস-ফুল-প্রকৃতি-রানা প্লাজা-হ্যাপাজোট ইত্যাদি অ-রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে বেস্ত থাকেন। কেউ বলল, ইনারা অতিশয় সজ্জন বেক্তি, কেউবা বলল, এদের মধ্যে মানবতা বলে কিছু নাই। ইনারা সজ্জন কি না এই নিয়ে বিতর্ক থাকলেও পক্ষে বা বিপক্ষে এম্পিরিকাল কোনো তথ্য-প্রমাণ এখনো প্রতিষ্ঠিত না, কিন্তু ইনাদের মধ্যে যে মানবতা আছে সেটা সম্প্রতি প্রমাণিত হযেছে। গাজায় হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে ইনারা পর্যাপ্ত মুখর হয়ে উঠেছেন। #আইসাপোর্টগাজা লেখার পাশাপাশি এমনকি এদের প্রত্যেকেই নিজেকে হিউমেন বিয়িং হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, এবং মানবতার ধারক হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরে নিশ্চয়ই কারুর কোনো সন্দেহ থাকার অবকাশ নাই।

খুব স্বাভাবকি। এত হত্যাযজ্ঞের পর মানবতাবোধ জেগে না ওঠার কারণ নেই; সুপ্ত-প্রতিভার মত জেগে উঠতে বাধ্য, সে আপনে রাজনীতি করেন আর না-ই করেন। আমরাও এই সাধারণ কথাটাই বলতে চাইসিলাম; আপনে শোনেন নাই। শুনলেও আপনার ত্যানা মুবারক নিয়ে প্যাঁচাইতে আগ্রহী হইসেন। যা হোক, গাজার শিশুরা মরিয়া প্রমাণ করিল মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞ বলে পৃথিবীতে কিছু আছে যাহা আপনার মানবতাবোধ জাগ্রত করিতে পারে।

পুনশ্চ: পিয়ার রিভিউয়ার তথা নিন্দুকেরা বলতেসেন, এই জাইগা ওঠার কারণ গাজায় মুসলিম হত্যা করা হইসে বৈলা। একই কারণে বা অন্য কারণে আরেকদল নিরোপেক্ষ তথা সুশীল সাইজ বৈসা আছে (এইবার বুঝছেন তো সুশীল কি জিনিস?)... এই দুই পক্ষের মধ্যে আবার ব্যাপক মিল: জাতিসংঘ এবং নব্য-মানবতাবাদীদের কেউ-ই বাংলাদেশের ধ্বংসযজ্ঞকে গণহত্যা বলতে রাজি না! তো এইভাবে বিভিন্ন পক্ষকে গণহত্যা বিষয়টা পরিষ্কার বুঝাইতে গেলে, এবং সবার মধ্যে মানবতা জাগাইতে গেলে তো পৃথিবীর সকল শিশুকেই মরিয়া যাইতে হইবে। পরিবার পরিকল্পনার মত ধর্মদ্রোহী নীতির এই জমানায় অত শিশু আমরা কোথা হইতে পাইব?


মন্তব্য

রনি এর ছবি

একটা সম্পুরক প্রশ্নঃ সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশিরা কি সবচেয়ে বেশি মানবতাবাদী?

প্রশ্ন এর ছবি

দুঃখজনক, আমাদের দেশের হিন্দু-বৌদ্ধরা মরে তেমন কিসু "প্রমাণ" করতে পারে নাই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।