আত্মা নিয়ে ইতং-বিতং (চতুর্থ পর্ব)

অভিজিৎ এর ছবি
লিখেছেন অভিজিৎ (তারিখ: মঙ্গল, ১৫/০১/২০০৮ - ১০:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto
এ সিরিজের আগের পর্বটি শেষ করা হয়েছিল এই বলে -

কিন্তু তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে আত্মা যদি নাই থাকল, বিভিন্ন জনের মরণপ্রান্তিক অভিজ্ঞতাগুলোকে (এনডিই এবং ওডিই) কিভাবে ব্যাখ্যা করা যাবে? একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আমেরিকার শতকরা প্রায় ১৫-২০ ভাগ লোক মনে করে তাদের জীবনের কোন না কোন সময় ওডিই বা এনডিই –এর অভিজ্ঞতা হয়েছিল। এর কি ব্যাখ্যা?

এর ব্যখ্যা অবশ্যই আছে, এবং তা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানেই বেরিয়ে এসেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন মস্তিস্ক আমাদের দেহের এক অতি জটিল অংগ। কি রকম জটিল একটু কল্পণা করা যাক। মস্তিস্কের জটিলতাকে অনেক সময় মহাবিশ্বের জটিলতার সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। কোটি কোটি গ্রহ -নক্ষত্র ছরিয়ে ছিটিয়ে থেকে আমাদের পরিচিত এই সুবিশাল এই মহাবিশ্বে তৈরি হয়েছে বিশাল বপুর সব সৌরজগত কিংবা ছায়াপথের। ঠিক একই রকমভাবে বলা যায়, আমাদের করোটির ভিতরে প্রায় দেড় কিলো ওজনের এই থকথকে ধুসর পদার্থটির মধ্যে গাদাগাদি করে লুকয়ে আছে প্রায় দশ হাজার কোটি নিউরন আর কোটি কোটি সায়ন্যাপসেস, আর সেরিব্রাম, সেরিবেলাম, ডাইসেফেলন আর ব্রেইনস্টেমে বিভক্ত হয়ে তৈরি করেছে জটিলতম সব কাঠামোর। আমি যখন ২০০২ সালে আমার পিএইচডির কাজ করতে গিয়ে মস্তিষ্কের মডেলিং করছিলাম তখন ব্রেনের প্রায় তেতাল্লিশটি কাঠামো (প্রত্যংগ) সনাক্ত করে মডেলিং করেছিলাম। সেগুলোর ছিল বিদঘুটে সমস্ত নাম - কর্পাস ক্যালোসাম, ফরনিক্স, হিপোক্যাম্পাস, হাইপোথ্যাল্মাস, ইনসুলা, গাইরাস, কডেট নিউক্লিয়াস, পুটামেন, থ্যালমাস, সবাস্ট্যানশিয়া নাইয়াগ্রা, ভেন্ট্রিকুলাস ইত্যাদি ২৪। আমাদের চিন্তাভাবনা, কর্মমান্ড, চাল চলন এবং প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই মস্তিস্কের এই সমস্ত বিদঘুটে নামধারী প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্মকান্ডের এবং তাদের কাজের সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল। দেখা গেছে, মস্তিস্কের কোন অংশ আঘাতপ্রাপ্ত হলে, কিংবা এর কাজকর্ম বাধাগ্রস্থ হলে নানারকমের অদ্ভুতুরে এবং অতীন্দ্রীয় অনুভূতি হতে পারে। যেমন, কর্পাস ক্যালোসাম নামের গুরুত্বপুর্ণ কাঠামোটি মস্তিস্কের বামদিক এবং ডানদিকের কাজের সমন্বয় করে থাকে। আমরা সবাই জানি যে, আমাদের ব্রেন একটি হলেও এটি মুলতঃ ডান এবং বাম - এই দুই গোলার্ধে বিভক্ত। এই দুই গোলার্ধকে আক্ষরিক অর্থেই আটকে রাখে দুই গোলার্ধের ঠিক মাঝখানে 'কাবাব মে হাড্ডি' হয়ে বসে থাকা কর্পাস ক্যালোসাম নামের প্রত্যংগটি। কোন কারণে মাথার মাঝখানের এই অংশটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে মাথার বামদিক এবং ডানদিকের সঠিক সমন্বয় ব্যাহত হয়। ফলে রোগীর দ্বৈতসত্ত্বার (Split Brain experience) উদ্ভব ঘটতে পারে। ষাটের দশকে রজার স্পেরি, উইলসন এবং মাইকেল গ্যাজানিগার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বেরিয়ে আসে মজার মজার সব তথ্য। দেখা গেল মাথার বামদিক একধরনের চিন্তা করছে তো ডানদিক করছে আরেক ধরণের চিন্তা ৯, ২৫। মাথার দুই ভাগই আলাদা আলাদা ভাবে কনশাস বা চেতনাময়। মাথার বামঅংশ পেশাগত জীবনে ড্রাফটসম্যান হতে চায়, তো ডান অংশ হতে চায় রেসিং ড্রাইভার ২৫! এখন যারা আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, তাদের কাছে সহজেই এ প্রশ্নটি উত্থাপন করা যায়, মস্তিস্ক-বিভক্ত দ্বৈতসত্ত্বাধারী রোগীদের দেহে কি তাহলে দুটি আত্মা বিরাজ করছে? বাড়তি আত্মাটি তাহলে দেহে কোত্থেকে গজালো? বোঝাই যাচ্ছে, আত্মার অস্তিত্ব দিয়ে এই ঘটনার ব্যাখ্যা মিলে না, এর ব্যাখ্যা সঠিকভাবে দিতে পারে 'দ্বিখন্ডিত মস্তিস্ক' এবং মাথার মাঝখানে থাকা কর্পাস ক্যালোসাম নামের গুরুত্বপূর্ন অংগের কাজকর্ম।


চিত্রঃ আমার পিএইচডির কাজের অংশ হিসেবে মানব মস্তিস্কের বিভিন্ন অংশ সনাক্ত করে ত্রি-মাত্রিক মডেলিং করতে হয়েছিল। আমি ৪৩ টি অংশ সঠিকভাবে সনাক্ত করে মডেলিং করেছিলাম২৪। উপরের ছবিতে আমার করা সেই মডেলিং-এর অংশবিশেষ দেখনো হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের চিন্তাভাবনা, কর্মমান্ড, চাল চলন এবং প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই মস্তিস্কের এই সমস্ত প্রত্যঙ্গগুলোর সঠিক কর্মকান্ডের এবং তাদের সমন্বয়ের উপর নির্ভরশীল।

আবার বিজ্ঞানীরা এও দেখেছেন, হাইপোথ্যালমাস নামে মস্তিস্কের আরেকটি প্রত্যংগকে কৃত্রিমভাবে বৈদ্যুতিক ভাবে উদ্দীপ্ত করে (মূলতঃ মৃগীরোগ সারাতে এ প্রক্রিয়াটি ব্যবহৃত হয়) দেহবিচ্যুত অবস্থার সৃষ্টি করা যায়, অন্ততঃ রোগীরা মানসিকভাবে মনে করে যে সে দেহ বিযুক্ত হয়ে ভেসে ভেসে বেরাচ্ছে। এ ধরণের অবস্থা সৃষ্টি হয় মস্তিস্কে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে গেলে (হাইপারকার্বিয়া) কিংবা কোন কারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে (হাইপক্সিয়া)। কিছু কিছু ড্রাগ যেমন, ক্যাটামিন, এলএসডি, সিলোকারপিন, মেসকালিন প্রভৃতির প্রভাবে নানাধরনের অপার্থিব অনুভূতির উদ্ভব হয় বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ সমস্ত ড্রাগের প্রতিক্রিয়া হিসেবে অচৈতন্যাবস্থা থেকে শুরু করে দেহ-বিযুক্ত অনুভূতি, আলোর ঝলকানি দেখা, পূর্ব্জন্মের স্মৃতি রোমন্থন, ধর্মীয় অভিজ্ঞতা সবকিছুই পাওয়া সম্ভব। আমি এক ভদ্রলোককে চিনতাম যিনি যীশুখ্রীষ্টকে দেখাবার এবং পাওয়ার জন্য এলএসডি সেবন করতেন। আমার আরেক বন্ধু প্রথমবারের মত গাঁজা খেয়ে এমন সমস্ত কান্ড কারখানা করা শুরু করেছিল যে মনে পড়লে এখনো হাসি পায়। হাড় কাঁপানো শীতের রাতে 'গরমে পুইড়া যাইতাছি', 'আমারে হাসপাতালে নিয়া যা' বলে হাউ মাউ কাঁদতে আর চ্যাচাতে লাগল। আমাদের তখন সদ্যকৈশোর উত্তীর্ণ বয়স, কলেজ পালিয়ে 'গাঁজা খেলে কেমন লাগে' - এই রহস্য উদঘাটনে আমরা তখন ব্যস্ত। ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম সে দিন। যদিও শেষটা বন্ধুটিকে হাসপাতালে নিতে হয়নি, কিন্তু পরদিন তার পাংশু মুখের দিকে তাকিয়েই বুঝেছিলাম কি ধকলটাই গেছে তার উপর দিয়ে সারা রাত ধরে। সবাই মিলে চেপে ধরায় সে বলেছিল, 'সারা রাত ধরে আমি শুধু দেখছিলাম আমি একটা নিকষ কালো অন্ধকার টানেলের মধ্য দিয়ে হেটে চলেছি, আর সব কিছু আমার উপরে ভেঙ্গে পড়ছে'। গরম গরম বলে চ্যাচাচ্ছিলি কেন - এ প্রশ্ন করায় বলেছিল, তার নাকি মনে হয়েছিল টানেলের শেষেই দোজখের আগুন, সে আগুনে নাকি তাকে পুড়িয়ে ঝলসিয়ে কাবাব বানানো হবে! বলা বাহুল্য, এগুলো উদাহরণথেকে বোঝা যায়, মরণ-প্রান্তিক এবং দেহ-বিযুক্ত অনূভুতিগুলো আসলে কিছুই নয়, আমাদের মস্তিস্কেরই স্নায়বিক উত্তেজনার ফসল। আর এজন্যই শ্মশানঘাটের কোন কোন সাধু-সন্নাসী কেন গাঁজা, চরস, ভাং খেয়ে 'মা কালীকে পেয়ে গেছি' ভেবে নাচাচাচি করে, তা বোঝা যায়।

এ প্রসংগে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সুসান ব্ল্যাকমোরের কথা বলা যেতে পারে। সুসান ব্ল্যাকমোর মরণ-প্রান্তিক অভিজ্ঞতা বিষয়ে বিশেশজ্ঞ একজন মনোবিজ্ঞানী, ইংল্যান্ডের ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। এক সময় টেলিপ্যাথি, ইএসপি, পরামনোবিদ্যায় বিশ্বাসী থাকলেও, আজ তিনি এ সমস্ত অলৌকিকতা, ধর্ম এবং পরজগত সম্বন্ধে সংশয়ী। সংশয়ী হয়েছেন নিজে বৈজ্ঞানিকভাবে এগুলোর অনুসন্ধান করেই। তিনি 'ডাইং টু লিভ', 'ইন সার্চ অব দ্য লাইট' এবং 'মীম মেশিন' সহ বহু বইয়ের প্রণেতা। তিনি তার ডাইং টু লিভ : নিয়ার ডেথ এক্সপেরিএন্স' (১৯৯৩) বইয়ে উল্লেখ করেছেন অক্সফোর্ডে অধ্যয়নকালীন সময়ে (সত্তুরের দশকে) তিন বন্ধুর সাথে মিলে মারিজুয়ানা সেবন করে কিভাবে একদিন তার ‘আউট অব বডি’ অভিজ্ঞতা হয়েছিল, কিভাবে তিনি টানলের মধ্যদিয়ে ভেসে ভেসে বেরিয়েছিলেন, অক্সফোর্ডের বিল্ডিঙ্গের বাইরে ভাসতে ভাসতে আটলান্টিক মহাসগর পাড়ি দিয়ে নিউইয়র্কে পৌছিয়েছিলেন, তারপর আবার নিজের দেহে ফিরে গিয়েছিলেন ৮ । তার এ অভুতপূর্ব অভিজ্ঞতার কাহিনী লিপিবদ্ধ করে রাখা আছে The Archives of Scientists' Transcendent Experiences (TASTE) ওয়েবসাইটে। কিন্তু সুসান ব্ল্যাকমোর যা করেননি তা হল অন্যান্য ধর্মান্ধ ব্যক্তিবর্গের মত 'ধর্মীয় আধ্যাতিকতার অপার মহিমায়' আপ্লুত হয়ে যাওয়া, কিংবা এঘটনার পেছনে অকাট্য প্রমাণ হিসেবে স্রষ্টা, আত্মা কিংবা পরজগতের অস্তিত্বকে মেনে নেওয়া । বরং তিনি যুক্তিনিষ্ঠ ভাবে এনডিই এবং ওবিই-এর বৈজ্ঞানিক কারণ অণুসন্ধান করেছেন এবং উপসংহারে পৌছিয়েছেন যে, মরণ প্রান্তিক অভিজ্ঞতাগুলো কোন পরকালের অস্তিত্বের প্রমাণ নয়, বরং এগুলোকে ভালমত ব্যাখ্যা করা যায় স্নায়ু-রসায়ন (neurochemistry), শরীরবিজ্ঞান (physiology) এবং মনোবিজ্ঞান (psychology) থেকে আহৃত জ্ঞানের সাহায্যে২৭


চিত্রঃ মরণপ্রান্তিক অভিজ্ঞতার সময় অনেকেই টানেল বা সুরঙ্গ দেখে থাকেন ।

কেন মরণপ্রান্তিক অভিজ্ঞতাগুলোতে কেবলই টানেল বা সুরঙ্গ দেখা যায়? বিশ্বাসীরা বলেন, ওটি ইহজগত আর পরজগতের সংযোগ পথ। টানেলের পেছনে আলোর দিগন্ত আসলে পরজগতের প্রতীকী রূপ। কিন্তু তাহলে অবধারিতভাবে প্রশ্নের উদয় হয় - কেন কেবলই সুরঙ্গ? কেন কখনো দরজা নয় কিংবা নয় কোন বেহেস্তী কপাট কিংবা নয় গ্রীক মিথোলজীর আত্মা পাড়াপাড়ের সেই 'রিভার স্ট্যায়ক্স'? এখানেই সামনে চলে আসে আধ্ম্যাতিকতার সাথে বিজ্ঞানের বিরোধের প্রশ্নটি। বিজ্ঞানীরা বলেন, 'সুরঙ্গ দর্শন' আসলে মরনপ্রান্তিক কোন ব্যাপার নয়, নয় কোন অপার্থিব ইঙ্গিত। সেজন্যই মরনপ্রান্তিক অবস্থার বাইরেও মৃগীরোগ, মাইগ্রেনের ব্যাথার সময় অনেকে সুরঙ্গ দেখে পারেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, সুরঙ্গ দেখা যেতে পারে মস্তিস্ক যখন থাকে খুবই ক্লান্ত, শ্রান্ত, কিংবা কোন কাজে যখন চোখের উপর অত্যধিক চাপ পড়ে। আবার কখনো সুরঙ্গ দেখা যেতে পারে এলএসডি, সাইলোকিবিন কিংবা মেসকালিনের মর ড্রাগ-সেবনে। আসলে স্নায়ুজ-কল্লোল (neural noise) এবং অক্ষীয়-করটিকাল জরিপণের (retino-cortical mapping) সাহায্যে টানেলের মধ্য দিয়ে আঁধার থেকে আলোতে প্রবেশের আভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যা করা যায় ২৮ । শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নায়ুজীববিজ্ঞানী জ্যাক কোয়ান (Jack Cowan) ১৯৮২ সালে পুরো প্রক্রিয়াটিকে একটি বৈজ্ঞানিক জার্নালে গানিতিক মডেলের সাহায্যে ব্যাখা করেছেন ২৭ । তার মডেলের সাহায্যে কোয়ান দেখিয়েছেন, কর্টেক্সে ডোরা দাগ থাকলে তা আমাদের চোখে অনেকটা সর্পিল কুন্ডলী (spirals) আকারে রূপ নেবে। এগুলো আমরা ছোটবেলায় 'দৃষ্টি বিভ্রমের' (visual illusion) উদাহরণ হিসেবে দেখেছি। নীচে পাঠকদের জন্য এমনি একটি ছবি দেওয়া হল। ছবিটি দেখুন । বক্ররেখাগুলোকে সর্পিলাকার কুন্ডলী বলে বিভ্রম হবে। যদিও বাস্তবতা হল, বক্ররেখাগুলো একেকটি বৃত্ত।

চিত্রঃ বক্ররেখাগুলোকে সর্পিলাকার কুন্ডলীর টানেল বলে বিভ্রম হচ্ছে। যদিও বাস্তবতা হল, বক্ররেখাগুলো একেকটি বৃত্ত। প্রমাণ হিসেবে ওগুলোর উপর আঙ্গুল ঘুরিয়ে দেখতে পারেন।

মরণপ্রান্তিক অভিজ্ঞতা লাভের সময় প্রায় একই রকম বিভ্রম ঘটে মস্তিস্কের মধ্যেও। ড্রাগ সেবনের ফলে কিংবা অত্যদিক টেনশনে কিংবা অন্য কোন কারণে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে ভিজুয়াল কর্টেক্সের গতিপ্রকৃতি সততঃ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে এ সময় ব্যক্তিরা নিজেদের অজান্তেই টানেল-সদৃশ প্যাটার্ণের দর্শন পেয়ে থাকেন। এটাই সুরঙ্গ-দর্শনের মূল কারণ। সুরঙ্গ দর্শনের এই স্নায়ুজ-কল্লোল এবং অক্ষীয়-করটিকাল জরিপণের গাণিতিক মডেলটির পরবর্তীতে আরো উন্নতি ঘটান পল ব্রেসলফ, সুসান ব্ল্যাকমোর এবং ট্রস্কিয়াঙ্কো এবং অন্যান্যরা ২৮, ২৯

চিত্রঃ স্নায়ুজ-কল্লোল এবং অক্ষীয়-করটিকাল জরিপণের সাহায্যে সুরংগ দর্শনের আভিজ্ঞতাকে ব্যাখ্যা করা যায়।

কাজেই বোঝা যাচ্ছে সুরঙ্গ-দর্শনের মাঝে অলৌকিক বা অপার্থিব কোন ব্যাপার নেই, নেই কোন পারলৌকিক রহস্য, যা আছে তা মোটা দাগে একেবারে নিরস, নিখাঁদ বিজ্ঞান।

এখন কথা হচ্ছে, টানেল দর্শনের অভিজ্ঞতা যদি মস্তিস্ক সঞ্জাত হয়ে থাকে তবে ঈশ্বর দর্শন, দিব্যদর্শন, কিংবা ওহিপ্রাপ্তির মত অন্যান্য ধর্মীয় কিংবা অপার্থিব অভিজ্ঞতাগুলোও কি আসলে স্রেফ মস্তিস্কসঞ্জাত কিংবা ইল্যুশন? আর এ ব্যাপারগুলো পুরোটাই মস্তিস্কসঞ্জাত হয়ে থাকলে মস্তিস্কের মধ্যে কি এমন কোন বিশেষ জায়গা আছে, যেটি উদ্দীপ্ত করলে 'গায়েবী আওয়াজ' শুনবার মত অপার্থিব অনুভূতির জন্ম হতে পারে? বিজ্ঞান কি বলে?

এ নিয়ে আগামী পর্বে লিখবার আগ্রহ রইল।

চলবে ...


মন্তব্য

অভিজিৎ এর ছবি

আমার লেখায় সুরংগ দর্শনকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটি 'দৃষ্টি বিভ্রমের' (visual illusion) উদাহরণ হাজির করেছি যেখানে বক্ররেখাগুলোকে সর্পিলাকার কুন্ডলীর টানেল বলে বিভ্রম হচ্ছে ( যদিও বাস্তবতা ছিল, বক্ররেখাগুলো একেকটি বৃত্ত)। আরেকটা মজার ইল্যুশনের উদাহরণ দেই। নীচের ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হবে বৃত্তগুলো ঘূরছে । এটা কিন্তু আসলে এনিমেটেড জিফ ফাইল নয়। আঁকার কারণে এমন বিভ্রম হচ্ছে। আপনি পরীক্ষা করতে চাইলে ছবিটির যে কোন এক জায়গায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন, দেখবেন অন্ততঃ সে জায়গার ঘোরাঘুরি থেমে গেছে -



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ওরে বাব্বা! এত্তো কাণ্ডকারখানা!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সবজান্তা এর ছবি

আরেকটা অসাধারন কিস্তি ! তবে এই পর্বে কি একটু ফাকি দিলেন ? ইন্সটলমেন্টের সাইজ ছোট লাগলো দেঁতো হাসি

পরের পর্বের প্রত্যাশায় থাকলাম দেঁতো হাসি

------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

অভিজিৎ এর ছবি

হাঃ হাঃ ফাঁকি দেই নাই। নিজের পিঠের চামড়া বাঁচাইছি। ইন্সটলমেন্ট-এর সাইজ যত বাড়ে, মাইর খাওনের সম্ভাবনা গুনোত্তর হারে বাড়তে থাকে বইলা আমার ধারণা।

মন্তব্যের জন্য যথারীতি ধন্যবাদ।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

শেখ জলিল এর ছবি

বেশ ইন্টারেস্টিং। ভালো লাগছে পড়তে। চলুক আরও পর্ব।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অভিজিৎ এর ছবি

দেখি, যদি চালাতে পারি আরো কিছুদূর! গাড়ী চলতে চাইছে না যদিও হাসি



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছু ব্যাপার শেয়ার করি। মস্তিস্কের প্রকৃতি বা কিভাবে কাজ করে সেটা জানতে হলে আমাদের উচিত এর জীন এবং এর ইলেক্ট্রিক্যালের কন্ট্রাকে কোষের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিক্রিয়া সমূহ। এখানটা দেখা যাচ্ছে ব্রেন হচ্ছে একটা পিওর ইলেক্ট্রিক্যাল সার্কিট যার প্রতিটা কোষ স্নায়ুতন্ত্রের মাধ্যমে সংযোগ কৃত। এমআইটিতে ২০০৫ সালে কিছু প্রফেসর আর ছাত্র একটা প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছিলো যার প্রধান কাজ ছিলো ব্রেনের আদলে একটা সার্কিট তৈরী করা যার টেকটা হবে ন্যানো। এখানে মূলত একটা সুপার কম্পিউটারে আর কত প্রকার ইন্টার নেটওয়ার্ক সার্কিট ব্যাবহার করে মাইক্রোপ্রসেসর ডিজাইন করা। কিন্তু আমি যতদূর জানি কাজটা আটকে আছে। এর কারন হতে পারে জেনম ম্যাপিং যা এ পর্যন্ত ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
আসলে মহাবিশ্বের কম্প্লেক্সিটির সাথে হিউম্যান ব্রেনের তুলনা হয় না। কারন ম্যাক্রো লেভেলের কম্প্লেক্সিটি মাইক্রো লেভেলের কম্প্লেক্সিটি থেকে অনেকখানি আলাদা- কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স অনুসারে একটু ঘুরিয়ে বললে। সেই ক্ষেত্রে এ লেখায় যেটা তুলে ধরা হয়েছে চেতনার বহিঃপ্রকাশের কিছু তুলনা। কিন্তু আত্না বলতে আমরা অপার্থিব যেটা বুঝি সেটা হলো এর মধ্যে বেশ কিছু বৈশিস্ট্যের সম্বিলন থাকতে হয়। কনফিউজড চেতনা থেকে আত্নাকে আড়াল করা যায় না। আর কে কি বললো বা দেখলো হেলুসিনেশন বা কনফিউজড অবস্হায় সেটা নিয়ে তাত্বিক বিজ্ঞানীরা কাজ করে না। তারা যেটা নিয়ে কাজ করতে চায় সেটা এর মৌলিক জিনিস গুলো নিয়ে। আসলে আত্নার ব্যাপার গুলো হলো অনেকটা হোয়াইট হোলের অস্তিত্বের মতো। এটা থাকতে পারে নাও থাকতে পারে। তবে এটার আবিস্কার বা এটা সম্পর্কে ডিসিশনের আসতে হলে আমাদের আরো কিছু সময় ওয়েট করতে হবে আমাদের নিজেদের এ্যাডভান্সমেন্টের যেটা হতে পারে টেকনোলজিক্যাল এ্যাডভান্সমেন্ট অথবা অন্য অপশনের পসিবিলিটি খতিয়ে দেখা!

তবে আপনার লেখাটা বেশ গভীরের হয়েছে!

বিনীত

রনি রক!

অভিজিৎ এর ছবি

আসলে মহাবিশ্বের কম্প্লেক্সিটির সাথে হিউম্যান ব্রেনের তুলনা হয় না। কারন ম্যাক্রো লেভেলের কম্প্লেক্সিটি মাইক্রো লেভেলের কম্প্লেক্সিটি থেকে অনেকখানি আলাদা- কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স অনুসারে একটু ঘুরিয়ে বললে।

আমি আক্ষরিক অর্থ মহাবিশ্বের সাথে মস্তিস্কের তুলনা করিনি। সাধারণ পাঠকদের কাছে মস্তিস্কের জটিলতাকে বোধগম্য করার জন্য প্রতীকী তুলনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারটাকে বলে 'অ্যানালজি'। এই 'অ্যানালজি'র ব্যাবহার জনপ্রিয় ধারার বিজ্ঞানে খুবই ব্যাপক। আপনিও আপনার লেখায় ব্রেনকে 'পিওর ইলেক্ট্রিক্যাল সার্কিট'-এর সাথে তুলনা করেছেন, এটিও একটি অ্যানালজি। সুক্ষ ভাবে দেখলে এ অ্যানালজিও যে পুরোপুরি বাস্তবতাকে তুলে ধরে তা কিন্তু নয়। ব্রেন শুধু একটি ইলেক্ট্রিকাল সার্কিটই নয়, সেই সাথে আরো অনেক কিছু। ব্রেনের সাথে কনশাসনেসের ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে, ইলেকট্রিকাল সার্কিটে যা হয় না। আর গঠনেও রয়েছে অনেক পার্থক্য। ব্রেনের শতকরা ৭৭ ভাগই হচ্ছে পানি, ১০-১২% হল লিপিড, ৮% প্রোটিন আর বাদবাকীটুকু হচ্ছে জৈব লবন। ইলেক্ট্রিকাল সার্কিটে তা নয়। তবুও আমরা প্রয়োজনের খাতিরে অনেক সময় তুলনা টানি। এটাকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ না করাই সমীচীন হবে।

আর কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স-এর ব্যাপারটা ব্রেনের ক্ষেত্রে না আনাই বোধ হয় ভাল। যদিও পেনরোজ-হ্যামারফেরা প্রায়শই ব্রেনকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার হিসেবে চিহ্নিত করেন, কিন্তু ম্যাক্স টেগমার্ক Physical Review পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত তাঁর গবেষণামূলক প্রবন্ধে হিসাব কষে দেখিয়েছেন যে, ব্রেনের গতিবিধি বুঝতে হলে ক্ল্যাসিকাল ফিজিক্স দিয়েই করতে হবে, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সম্ভবতঃ দরকার নেই।

আর কে কি বললো বা দেখলো হেলুসিনেশন বা কনফিউজড অবস্হায় সেটা নিয়ে তাত্বিক বিজ্ঞানীরা কাজ করে না। তারা যেটা নিয়ে কাজ করতে চায় সেটা এর মৌলিক জিনিস গুলো নিয়ে।

ব্যাপারটা এত মোটা দাগে ঠিক নয়। হেলুসিনেশন , আউট অব বডি এক্সপেরিয়েন্স, রিলিজিয়াস এক্সপেরিয়েন্স ইত্যাদি নিয়ে বহু বিজ্ঞানীরই আগ্রহ রয়েছে। কনশাসনেস নিয়ে ফ্রান্সিস ক্রিকের মত হার্ডকোর নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী যেমন কাজ করেছেন, তেমনি কাজ করেছেন মনোবিজ্ঞানী সুসান ব্ল্যাকমোর, স্টিভেন পিঙ্কার, দার্শনিক ডেনিয়েল ডেনেট, নিউরোবায়োলজিস্ট জেরাল্ড এডেলমেন, রামাচন্দ্রন, কিংবা ফার্মাকোলজিস্ট সুসান গ্রীনফিল্ডের মত বিজ্ঞানীরা। এরা সবাই একাডেমিক লোকজন। এদের অনেকেরই গবেষনার বড় অংশ হচ্ছে কৃত্রিম উপায়ে মস্তিস্ককে উদ্দীপ্ত করে কি করে অপার্থিব অনুভূতি পাওয়া যায়, এবং এর সাথে সচেতনতার সাথে সম্পর্ক কি এগুলো খুঁজে বের করা। মস্তিস্ক বহির্ভুত সচেতনতার (আত্মা?) অস্তিত্ব কি সম্ভব, নাকি পিঙ্কারের ভাষায় - 'মাইন্ড ইজ ওহাট ব্রেন ডাজ?'অঙ্কের মতে আবার হয়ত কনশাসনেসের পুরো ব্যাপারটিই একটি ইল্যুশন। অ্যারিয়ান ম্যাক, আরভিন রক, ব্ল্যাকমোর সহ অনেকেই মনে করেন কনশাস্নেস ব্যাপারটা হয়ত আমাদের ইল্যুশন ছাড়া কিছু নয়। কাজেই এগুলো নিয়ে 'তাত্বিক বিজ্ঞানীরা কাজ করে না' - এমন ধারনা সম্ভবত ঠিক নয়। আগ্রহ না থাকলে ফ্রান্সিস ক্রিকের মত বিজ্ঞানী কখনই 'Astonishing Hypothesis: The Scientific Search for the Soul,' টাইপের বই লিখতেন না। আগ্রহ আছে বলেই রিচার্ড ডকিন্সের মত বিজ্ঞানী লরেন্টিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মাইকেল পারসিঙ্গারের বানানো গড হেলমেট মাথায় পরে তার ল্যাবে 'গিনিপিগ' হয়ে বসেছিলেন।

আসলে আত্নার ব্যাপার গুলো হলো অনেকটা হোয়াইট হোলের অস্তিত্বের মতো। এটা থাকতে পারে নাও থাকতে পারে।

কি জানি, আমি তো আত্মার ধারণার সাথে ফিজিক্সের পরিত্যক্ত ধারণা ইথারেরই মিল খুঁজে পাই বেশি। হ্যা- ইথার খুঁজে পাওয়া যায় নি - তারপরেও কেউ কেউ বলতে পারেন, এটা 'থাকতে পারে নাও থাকতে পারে'। কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানীরা ইথারের অনুকল্প ছারাই আলোর সঞ্চালনকে ব্যাখ্যা করতে পারছেন । ইথার বাহুল্যমাত্র। তেমনি জীববিজ্ঞানীরাও আত্মার অনুকল্প ছারাই প্রাণের অস্তিত্ব এবং এর বিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে পারছেন।

কিন্তু তার পরেও কারো মনে হতে পারে - আত্মা থাকতে পারে নাও থাকতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আমার মতে, এ সংক্রান্ত প্রমাণ হাজির করার দায়িত্ব দাবীদারের।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

খুব ভাল লাগছে অভিজিতদা ,,, সবগুলো পর্ব পড়লাম ,,,

তবে আমার মনে হচ্ছে আপনি যে আত্নাকে এখানে এ্যাড্রেস করেছেন সেটা খুবই লিটেরাল ,,, বিভিন্ন মিথ বা ধর্মগ্রন্থে হয়ত আত্নাকে কোন বস্তু হিসেবে কল্পনা করা হয়ে থাকতে পারে ,,,, তবে সেগুলোও আসলে সবসময় লিটেরালি নেয়া যায়না, কারণ হয়ত শুধু বোঝানোর জন্যই সেভাবে ব্যাখ্যা করা ,,,, আসলে "আত্না কি" বা "আত্না বলতে কি বুঝি" এটা দিয়ে শুরু করা যায় ,,,
যেমন আমি মনে করি আত্না হলো তথ্য টাইপের কিছু যেটা আমাদের জেনেটিক প্যাটার্নকে ডিফাইন করে ,,, যেমন ধরুন, খুব সহজ করে বললে ,,, অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করা আছে এবং নেই এমন দুটো কম্পিউটারের মাঝে পার্থক্য কি? ,,, হার্ডড্রাইভের কিছু ইলেকট্রনের স্পিনের প্যাটার্নের পার্থক্য, তাইনা? বস্তু হিসেবে ভাবলে কিন্তু একই, এদের ওজনও একই ,,,, কিন্তু ফাংশনের পার্থক্য আকাশ পাতাল ,,, এই স্পিনের প্যাটার্নটাকেই আত্না ভাবলে কেমন হয়? ,,,যেমন জীবের বেলায়ওতো প্রমাণিতই, আমাদের একেকজনের একেকটা অপারেটিং সিস্টেম (ডিএনএ প্যাটার্ণ)আছে ,,, সেটাকেই সোওল বলে ভাবা যায় ,,, সেটার যে বস্তু হিসেবে অস্তিত্ব থাকতেই হবে এমন কোন কথা নেই ,,,
যেমন ধরুন, আমি যখন জন্মেছিলাম, তখন আমার দেহে যে অনু-পরমাণুগুলো ছিল, আজ ৩১ বছর পর সেগুলোর কোনটাই হয়ত আমার দেহে নেই ,,,, শুধু ডিএনএ প্যাটার্ণটা রয়ে গেছে ,,, তাই এখনও আমি সেই আমিই ,,,বস্তু প্রতিস্থাপিত হয়েছে, ভাবটা রয়ে গেছে ,,, সেটাই আমার আত্না ,,, মাইকেল শেরমারের চমৎকার আর্টিকেল আছে এ নিয়ে ,,, সোওল অভ সাইয়েন্স বইটাও পড়তে পারেন কয়েনের অপর সাইডের বক্তব্যটা একবার দেখার জন্য ,,,

মাইকেল শেরমারের লেখাতেই দেখেছিলাম, একটা গ্রীক উপকথা ,,, গ্রীক বীর থিসিউস(সম্ভবতঃ) যুদ্ধ জয় করে ফেরার পর তার জাহাজটিকে বিজয়ের চিহ্ন হিসেবে সাগরের পাড়ে বেঁধে রাখা হয় ,,, কালের সাথে সাথে জাহাজের কাঠকে প্রতিস্থাপন করে সমুদ্রের প্ল্যাংকটন, নতুন প্ল্যাংকটন প্রতিস্থাপন করে পুরোনোগুলোকে ,,, এভাবে একসময় জাহাজটিতে আর কোন কাঠের কণাও থাকেনা, পুরোটা হয়ে যায় প্ল্যাংকটনের তৈরী এক জাহাজ ,,, এখন এটাকে লোকে কিভাবে নেবে তা দিয়ে আত্নার পারসেপশনের একটা এ্যানালজি দেখানো যায় ,,,, যেমন, আয়নীয় বস্তুবাদি পন্ডিতরা হয়ত বলবেন "থিসিউসের জাহাজ"টি আর নেই ,,, কারণ জাহাজটিতে বিদ্যমান কোন বস্তুই এখন আর নেই ,,, কিন্তু সক্রেটিস/প্লেটীয় ভাবের পন্ডিতেরা হয়ত বলবেন, "থিসিউসের জাহাজ"টি ঠিক যেমন ছিল তেমনি আছে হাসি
"উইড়া যায়রে পঙ্খী, তাহার পইড়া থাকে ছায়া"

যাইহোক, প্রচুর তথ্য সম্বলিত লেখাটা পড়ে খুবই ভাল লাগল ,,, চলুক ,,,বিপ্লব দাগাইলাম
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

দিগন্ত এর ছবি

ডি-এন-এ প্যাটার্ন টা ঠিকঠাক আত্মার পর্যায়ে পড়ে না, তাহলে ক্লোনেরা আত্মা 'শেয়ার' করত। সেটা তো ঘটে না ... সংজ্ঞা অনুসারে, একটি জীবের একটিই আত্মা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

"সংজ্ঞা অনুসারে, একটি জীবের একটিই আত্মা। " -- এটা কি ধ্রুবসত্য টাইপের কিছু ? ,,, আত্না বলতে যে মাংসপিন্ড বা প্রজাপতি টাইপের কথাগুলি বলা হয়, সেগুলো এখন আসলে সবই রূপকথা লেভেলে চলে গেছে ,,, সেটা নিয়ে কারো দ্বিমত নেই ,,, এখন যে আলোচনাটা হয় সেটা হলো, অস্তিত্ব বা আইডেনটিটি নিয়ে ,,, যেমন, এখানে শুধু ডিএনএ প্যাটার্ন নিয়েই ভাবব কেন ,,,আরো তথ্যও তো যোগ করা যায় ,,, যেমন অভিজ্ঞতা ,,, দুটো মানব ক্লোনকে আফ্রিকা আর সাইবেরিয়ায় ছেড়ে দিলে তাদের অভিজ্ঞতা দুরকম হবে ,,, দুটো ভিন্নসোওলে পরিণত হবে ,,,সেভাবেও ভাবা যায় ,,, এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি আত্মা বলতে কি বোঝেন? ,,, সেইতো, ঘুরেফিরে থিসিউসের জাহাজের প্রশ্নে চলে আসছি ,,, জাহাজটি কি আছে? না নেই? ,,, সেখানেই প্রশ্ন, সেখানেই উত্তর হাসি
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

দিগন্ত এর ছবি

ঘুরেফিরে সবটাই সংজ্ঞার খেলা। সংজ্ঞা নির্দিষ্ট না করতে পারলে প্রমাণসাপেক্ষ হবে না। আর যেখানে সংজ্ঞা নির্দিষ্ট নয় সেখানে আলোচনাই বৃথা।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমার মনে হয়না আলোচনাই বৃথা ,,, একটা জিনিসকে বরং সংজ্ঞায়িত করতেই সবচেয়ে বেশী আলোচনা দরকার হয় ,,, আমার কাছে তো টপিকটা খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হয় ,,, সোওল বলুন বা আইডেন্টিটি বলুন, এটাকে লোকে কে কিভাবে নিচ্ছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

বজলুর রহমান এর ছবি

শিশু বয়সে বাড়ীতে আমার অদ্ভুত সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার কেউ ছিল না, আর ক্যাথলিক স্কুলের শিক্ষকদের জিজ্ঞেস করার সু্যোগ ছিল না। কিছুদিন অনেক চিন্তা করে কুল-কিনারা না পেয়ে সিদ্ধান্ত নেই যে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জিনিস এবং যুক্তিনির্ভর বিষয় সম্পর্কে ভাবা যেতে পারে; যা প্রমাণের অতীত (পক্ষে বা বিপক্ষে) তা নিয়ে চিন্তা করা সময় নষ্ট করা মাত্র। প্রথম শ্রেণীতে পড়েঃ মস্তিষ্ক, চিন্তা প্রক্রিয়া ও অনুভুতি, ইহলোক, সৃষ্টির সব কিছু ; দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে আত্মা, পরলোক , সৃষ্টিকর্তা।

অভিজিত বাবুর মস্তিষ্ক সম্পর্কিত টেকনিকাল কাজের লিঙ্ক পেলে (যেমন তাঁর থিসিসের) অবসর সময়ে পড়ে দেখতাম। আমার মনে হয় এতে অনেক আকর্ষণীয় উপাদান আছে।

আমরা এক দেহে একাধিক সত্ত্বা, এমন একটা সন্দেহ বিভিন্ন কারণে স্কুল জীবন থেকেই আমার আছে, এবং সে সময় "The Three Faces of Eve" বইটা রীডার্স ডাইজেস্টের কন্ডেনসড বুক ভলিউমে পড়ে নিশ্চিত হই। স্কিতসোফ্রেনিয়া দুর্ভাগ্যজনক অসুখ হলেও অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছে।

এম,আই,টিতে কগ্নিটিভ সায়েন্স একটি বিভাগ ছিল । এখনো আছে নি না জানি না। তবে মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনদের অধিকাংশ থেকে যেমন হাজার হাজার ডেন্ ড্রাইট অন্যান্য নিউরনের সাথে পরিবর্তনশীল সংযোগ স্থাপন করে (যার কিছুটা জন্মগত, কিছুটা অভিজ্ঞতা নির্ভর) বর্তমান টেকনোলজী ব্যবহার করে তার অনুরূপ কিছু তৈরী করা সম্ভব না।

দিগন্ত এর ছবি

"যা প্রমাণের অতীত (পক্ষে বা বিপক্ষে) তা নিয়ে চিন্তা করা সময় নষ্ট করা মাত্র। প্রথম শ্রেণীতে পড়েঃ মস্তিষ্ক, চিন্তা প্রক্রিয়া ও অনুভুতি, ইহলোক, সৃষ্টির সব কিছু ; দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে আত্মা, পরলোক , সৃষ্টিকর্তা। "

- আপনি হয়ত ভুলে যাচ্ছেন যে কোনো কিছুই ১০০% নিশ্চয়তা নিয়ে প্রমাণ করা সম্ভব নয় - প্রমাণ পর্যবেক্ষ্ণ ও পর্যবেক্ষক-সাপেক্ষ। বিজ্ঞান এভাবেই সংজ্ঞায়িত। সুতরাং আপনার শ্রেণীবিভাগে আমি সবকিছুকেই দ্বিতীয় শ্রেণীতেই ফেলব।
"তবে মানুষের মস্তিষ্কের নিউরনদের অধিকাংশ থেকে যেমন হাজার হাজার ডেন্ ড্রাইট অন্যান্য নিউরনের সাথে পরিবর্তনশীল সংযোগ স্থাপন করে (যার কিছুটা জন্মগত, কিছুটা অভিজ্ঞতা নির্ভর) বর্তমান টেকনোলজী ব্যবহার করে তার অনুরূপ কিছু তৈরী করা সম্ভব না। "
- এটা অ্যাডাপ্টিভ কানেক্টিভিটি। আমি এ নিয়ে লিখেছিলাম আমার একটা সিরিজে, সচলায়তনেই। পড়ে দেখতে পারেন। আমি টেকনলজিকালি এটা অসম্ভব কেন হচ্ছে সেটা বুঝতে পারলাম না।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

ধূপছায়া এর ছবি

পর্বগুলি আমি নিয়মিত পড়ছি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।