একটি ইত্তেফাকীয় রম্যরচনা...

বিপ্লব রহমান এর ছবি
লিখেছেন বিপ্লব রহমান (তারিখ: শুক্র, ০৮/০২/২০০৮ - ৩:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..আজ দৈনিক ইত্তেফাকে পাহাড়ের কথিত বিপ্লবী পার্টি ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত বিকাশ খীসার একটি সাক্ষাৎকার পড়ে বড়ই কৌতুক বোধ করলাম। ...

ইত্তেফাকের ওই সাক্ষাতকারে প্রসিত বলছেন, আমরা শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছি। জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য এই পার্বত্য শান্তি চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু এই চুক্তির মাধ্যমে তা অর্জিত হয়নি। তাছাড়া এই চুক্তির কোন আইনগত বৈধতা নেই। অর্থাৎ কোন সরকার না চাইলে চুক্তি বাতিল করতে পারে। চুক্তি অনুযায়ী বাঙালি সেটেলারদের ফিরিয়ে আনার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা করা হয়নি। সাংবিধানিক ভিত্তি নেই বলে বর্তমানে পুরো চুক্তিটিই কোর্টে ঝুলে আছে। এজন্য বর্তমানে চুক্তির পক্ষের লোকদের মধ্যে হতাশা ও বিতর্ক দেখা দিয়েছে।...

প্রসিত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বা শান্তিচুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন, যারাই পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পের্কে খোঁজ-খবর রাখেন, তারাই জানেন, এ নিয়ে গত এক দশকে শান্তিচুক্তির পক্ষের-বিপক্ষের পাহাড়িদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী দ্বন্দ্ব - সংঘাত কম হয়নি। কিন্তু 'এই চুক্তির কোন আইনগত বৈধতা নেই।' প্রসিত এই তথ্য কোথায় পেলেন? শান্তিচুক্তি অনুয়ায়ী সংসদে পাশ করা তিন জেলা পরিষদ আইন, ১৯৯৮ এবং আঞ্চলিক পরিষদ আইন, ১৯৯৮ অনুযায়ী পরিষদগুলো গত ১০ বছর ধরে চলছে। তাহলে এই মিথ্যাচার কেনো?

তাই 'কোন সরকার না চাইলে চুক্তি বাতিল করতে পারে' প্রসিতের এই কথার বাস্তবায়নও এতো সহজ নয়; এ জন্য ওই অন্তত ওই চারটি আইন বাতিল করতে হবে।

'জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য এই পার্বত্য শান্তি চুক্তি করা হয়েছে। কিন্তু এই চুক্তির মাধ্যমে তা অর্জিত হয়নি।' এটিও প্রসিতের আরেক মিথ্যাচার। 'বাংলাদেশের সংবিধানের ওপর অবিচল আস্থা রেখেই' চুক্তি সাক্ষরিত হয়, এটি ওই চুক্তিটিতেই বলা আছে। তবে ভূমি অধিকারসহ চুক্তির মৌলিক শর্তসমূহ এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় সাধারণ আদিবাসী পাহাড়ি জীবনের তেমন কোনো পরিবর্ত আসেনি; সেটি অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে কোর্টে ঝুলে থাকার জন্য নয়, পাহাড়ি জনপদে হতাশা দেখা দিয়েছে এই কারণেই।

সাক্ষাতকারে আরো কৌতুকময় বিষয় আছে। প্রসিত বলেন, আমি মনে করি পাহাড়ের প্রতিরক্ষা পাহাড়ের যুবক ও জনগণ করতে সক্ষম। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রশ্নে এই দিকটিই বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে।

প্রশ্ন হচ্ছে, প্রতিরক্ষার এই কাজ কী পাহাড়ের সাবেক গডফাদার, বিএনপির কারাবন্দী সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূইঁয়ার মদদপুষ্ট অস্ত্রধারী প্রসিত বাহিনী করবে? একটি স্বাধীন দেশে এ ধরণের কথা বলার ধৃষ্টতা তো রাষ্ট্রদ্রোহীতারই সামিল। আর 'জাতীয় ঐক্য ও সংহতি'! এ যেনো ভুতের মুখে রাম নাম! সন্তু লারমার সঙ্গে যিনি গত ১০ বছরে একটিও সমঝোতা বৈঠকই করতে পারলেন না, তিনি বলছেন এই কথা!

কৌতুক এখনো শেষ হয়নি। ওই সাক্ষাতকারে প্রসিত নিজেই বললেন, কেন্দ্রীয় প্রশাসনের হাতে হিলের একটি আলাদা প্রশাসনিক ইউনিট রাখা দরকার। অর্থ, পরিকল্পনা, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও ভারি শিল্প এই চারটি বিষয় রেখে প্রশাসনের সমস্ত বিষয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিশেষ প্রশাসনিক ইউনিটের কাছে হস্তান্তর করা যায়।...

প্রসিতের মস্তিস্ক প্রসুত কল্পরাজ্যের ওই শাসন ব্যবস্থার তাত্ত্বিক ভিত্তি কী? কোথায় এর বিস্তারিত রূপ রেখা? ইউপিডিএফ শান্তিচুক্তির বিরোধীতা করতে গিয়ে যে হাওয়াই 'পূর্ণ স্বায়ত্ব শাসনের' কথা বলছে, গত এক দশকে তারা তো এর তাত্ত্বিক রূপরেখাই হাজির করেন নি!

ইত্তেফাকের ওই প্রতিবেদক ডেট লাইনে বলছেন, 'খাগড়াছড়ি থেকে ফিরে'। কিন্তু আমি নিশ্চিত, এই সাক্ষাতকারটি ঢাকাতেই বসে নেওয়া হয়েছে, যেহেতু সাক্ষাতকারের বিষয়বস্তু পাহাড়ের রাজনীতি, সেহেতু কৌশলে ডেট লাইন লেখা হয়েছে, ওই রকম। গত এক দশক ধরেই প্রসিত আঞ্চলিক দল ইউপিডিএফের সদর দপ্তর ঢাকায় বসিয়ে পাহাড়ের রাজনীতি করছেন! এই কিছুদিন আগে শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের তিন তলায় তাদের একটি অফিসও ছিল!

তাহলে নাবালক বিপ্লবী কী আর গাছে ফলে?

পুনশ্চ: ইত্তেফাকের সাক্ষাতকারটি পড়তে পড়তে আরেকটি পুরনো কথা মনে পড়লো। ১৯৭৩ - ৭৪ সালের কথা। সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টির তৎপরতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সরকার বিপাকে আছেন। এই সময় ইত্তেফাকে সংবাদ প্রকাশিত হলো, সিরাজ সিকদার নাকি পার্টির অন্তর্কলহে নিহত হয়েছেন!

সিরাজ সিকদার পার্টির মুখপত্র 'স্ফুলিঙ্গে' ছড়া লিখে নিজেই এর জবাব দিলেন:

সব খবরের মাঝে থাকে
একটি করে মিথ্যেফাক,
সিআইএ গুজব রটায়
খবর ছাপে ইত্তেফাক!

(ছবি: ফিলিপ গাইন, সেড।)


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

দারুণ লেখা। চলুক
আর ছড়াটা পড়ে ব্যাপক মজা পাইলাম।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

বরাবরের মতোন একটি উপকারী লেখা।

সিরাজ শিকদারের মৃত্যুর আসল ঘটনাটা কোনওদিন লিখবেন আশা করি।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

বিপ্লব রহমান এর ছবি

পাঠের জন্য, মতামতের জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

সিরাজ সিকদারের ওপর লেখালেখির জন্য বেশকিছু বইপত্র ও তথ্যসূত্র হাতের কাছে দরকার। যা এখন যোগাড় করা আমরা জন্য বেশ কিছুটা কষ্টকর ও সময় সাপেক্ষ @ লুৎফুল আরেফীন।

শুধু এই দেশপ্রমিক বিপ্লবী সম্পর্কে এইটুকু মনে করিয়ে দেই, পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যূর পর বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে সংসদ অধিবেশনে দম্ভ করে বলেছিলেন, কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

কথাটা আমারও জানা আছে। সেজন্যই আরেকটু জানার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছি। কখনও পারলে গরীবের শখটা মিটাবেন আশা করছি।

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই দেশপ্রমিক বিপ্লবী

বিনীতভাবে একটি প্রশ্ন করি, কোন দেশের প্রমিক ছিলেন সিরাজ সিকদার? জীবৎকালে তিনি বাংলাদেশ স্বীকার করেছেন বলে জানি না। তাঁর পার্টির নামও ছিলো পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

সিরাজ সিকদারকে দেশপ্রেমিক বিপ্লবী বলার কারণ তার যাবতীয় বিপ্লবী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছিলো এ দেশের সর্বহারা মানুষের মুক্তির সংগ্রামে @ মুহম্মদ জুবায়ের ।

এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত; আপনি এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন। এ জন্য আপনাকে সাধুবাদ জানাই।

জুবায়ের ভাই,

বিনীতভাবে মনে করিয়ে দেই, সর্বহারা পার্টির প্রতিষ্ঠা হয় কিন্তু পাকিস্তান আমলের শেষভাগে। সে কারণেই বোধহয় পার্টির নাম ছিলো 'পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি। আর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সর্বহারা পার্টি বরিশাল, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্নক প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তুলেছিলো। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্নক সংগ্রাম চালানোর জন্য ব্যক্তিগত চিঠিও দিয়েছিলেন। এ সব আদর্শিক কারণেই তাকে দেশপ্রেমিক বিপ্লবী বলেছি।

তবে সিরাজ সিকদারের গণযুদ্ধের রণনীতি ও কৌশল ভ্রান্ত ছিলো কি না, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ।

আর একই সঙ্গে এ কথাও সত্যি, সর্বহারা পার্টি ভারতের সরাসরি হস্তক্ষেপে বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি। এ কারণে ১৯৭২ সাল থেকে পর পর কয়েক বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সর্বহারা পার্টি হরতালের ডাক দেয়। তাদের ভাষায়, ১৬ ডিসেম্বর হচ্ছে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদীর কাছে আওয়ামী লীগের আত্নসমর্পন দিবস। ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সর্বহারা পার্টির প্রতিষ্ঠা হয় কিন্তু পাকিস্তান আমলের শেষভাগে। সে কারণেই বোধহয় পার্টির নাম ছিলো 'পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি।

পাকিস্তান আমলে প্রতিষ্ঠিত প্রায় সবগুলো দলই কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যথারীতি নাম বদলে নিয়েছিলো। এমনকি জামাতও। সর্বহারারা পারলো না!

আপনার পোস্টের মূল বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতিহীন এই পার্শ্ব-প্রসঙ্গটি না হয় আপাতত থাক। পরে সিরাজ সিকদার বিষয়ে আলাদা করে লিখবেন বলেছেন, তখনই না হয় এই প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাবে। কী বলেন?

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

ধ্রুব হাসান এর ছবি

প্রিয় বিপ্লব রহমান আপনি বলেছেন, '......১৯৭২ সাল থেকে পর পর কয়েক বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে সর্বহারা পার্টি হরতালের ডাক দেয়।'[......আমিতো মনে করি শুধু এই কারণে শিরাজ সিকদার ও তার গংকে পুরো দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন করাটা দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ফরজ কাজ ছিলো; ঠিক যেমন মূলসহ নিশ্চিহ্ন করা উচিত ছিলো জামাত ইসলামী বাংলাদেশকে গোড়াতেই...। ১৬ ডিসেম্বরকে অস্বীকার করা আর বাংলাদেশকে দেশ হিসেবে অস্বীকার করার মাঝে তফাতটা কি? এসমস্ত প্রতি বিপ্লবীরাও কি কম দায়ী আজকের বাংলাদেশের জন্য? এমন কি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি তাদের নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করেনি!......এটা অবশ্য তাদের দেশ প্রেমের একটা বড় নজীর বৈকি!

অতিথি লেখক এর ছবি

এ ধরণের ভ্রান্ত কথাবার্তার উপযুক্ত প্রত্যুত্তর দেয়া উচিত। নইলে হিলট্র্যাক্সের অধিবাসীরা তাদের সাধারণ বাংলাদেশী ভাববে কিভাবে? সত্যিই তো, দেশে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে আলাদা বাহিনী আছে। স্থানীয় লোকেরা তা নিয়ন্ত্রণ করা মানে তো দেশদ্রোহীতা। সাথে আছে আবার বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তাধারা। লেখাটা খুবই বাস্তবানুগ।

মুহাম্মদ২০১৭

রায়হান আবীর এর ছবি

বান্দরবন এ আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। এমন সময় এক পাহাড়ি তার পিচ্চি বাচ্চাকে নিয়ে আসল। গাছের কস লেগে ছেলেটির সম্পূর্ণ মুখ বিকৃত। ক্যাম্পের কর্মরত সৈনিক তাকে বেশ কিছু ঔষধ ধরিয়ে দিল। এখন যদি হিল থেকে সেনা সনস্যদের উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে এই ধরণের প্রয়োজনীয় সাহায্য কারা করবে। ঢাকায় বসেই খালি বড় গলায় কথা বলা যায়। এই ধরণের লোকদের জুতিয়ে সাইজ করা দরকার।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আপনাদেরও কৃতজ্ঞতা জানাই।

তবে আপনার সঙ্গে ভীষনভাবে দ্বিমত পোষন করছি@ রায়হান আবীর ।

আপনি যে উদাহরন টেনেছেন, সেটি একটি বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রমী ঘটনা।

আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করবো, দেড় দশকের পাহাড়ের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতার কিছু কিছু কথা আমি এই ব্লগে লিখছি; পারলে আমার পুরনো লেখাগুলো পড়বেন। আশাকরি, সেনা শাসনের ভয়াল রূপ খানিকটা হলেও এসব লেখা থেকে পাবেন -- যা আমি এখনো ঘটতে দেখি চোখের সামনে।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অয়ন এর ছবি

ক্যাম্পের কর্মরত সৈনিক তাকে বেশ কিছু ঔষধ ধরিয়ে দিল। এখন যদি হিল থেকে সেনা সনস্যদের উঠিয়ে নেয়া হয় তাহলে এই ধরণের প্রয়োজনীয় সাহায্য কারা করবে।

চিকিৎসা সহায়তার জন্য হাসপাতালের বদলে সেনাক্যাম্পে যাওয়াটাকে কি আপনার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে?

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আমারও তো সেই একই প্রশ্ন: এই জাতীয় সাহায্যের জন্য সামরিক বাহিনীর প্রয়োজনটা কী? পার্বত্য অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছে, পরিচিত এমন কিছু সামরিক অফিসারের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, পার্বত্য অঞ্চলটি তাদের পিতার আর স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের অনুগত দাস।

সামরিক বাহিনীর সকলের ক্ষেত্রেই কথাটা সত্য - তা অবশ্যই নয়। তবে অস্ত্র হাতে নিয়ে ব্লাডি সিভিলিয়ানদের (আর তারা যদি হয় আদিবাসী, তাহলে তো কথাই নেই!) শাসন করার সুযোগটি হাতছাড়া করতে চায় না তাদের অনেকেই।

@ বিপ্লব রহমান
ছড়ার জন্য জাঝা

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

হিমু এর ছবি

প্রিয় রায়হান আবীর,

আশা করবো ভবিষ্যতে সচলে বিভিন্ন পোস্টে আলোচনা, বিতর্ক এবং যুক্তিবিনিময়ের সময় আপনি ভাষার ব্যবহারের প্রতি আরো মনোযোগ দেবেন। সচলে বড় বড় কথাবার্তা প্রায়ই হয়। ঢাকা, ঢাকার বাইরে, দেশের বাইরে, বিভিন্ন জায়গায় বসে। পরবর্তীতে জুতিয়ে সাইজ করার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করার আগে আশা করি ভেবে দেখবেন।

আর একটা ব্যাপার, সচল সদস্যরা সাধারণত বিতর্কের সময় কিছু স্বাভাবিক ভব্যতা বজায় রাখেন। এ ব্যাপারটি নিয়েও চিন্তার অবকাশ আছে আপনার। ধন্যবাদ।


হাঁটুপানির জলদস্যু

স্নিগ্ধা এর ছবি

ওই চমৎকার ছবিটা কি আপনার তোলা ?

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আবারো আপনাদের কৃতজ্ঞতা।

পাহাড়ের ওই ছবিটি ফিলিপ গাইনের তোলা@ স্নিগ্ধা।
লেখার শেষে আলোকচিত্রীর নাম দেওয়া আছে।

বন ও আদিবাসী সর্ম্পকিত এ পর্যন্ত যতো আলোকচিত্র দেখেছি, তার মধ্যে ফিলিপ দার কাজই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ মনে হয়।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

মির্জা এর ছবি

চমতকার একটি লেখা, খুব ভাল লাগলো।
পাহাড়ি এলাকায় সেনা অত্যাচারের খুব সামান্য রুপ হলেও আমি দেখেছি, বিশ্বাস করুন আমি যে ঘৃনা নিয়ে একজন পাকিস্তানি আর্মির দিকে তাকাই একই দৃষ্টি আমি দেখেছি কিছু পাহাড়ি মানুষের চোখে। আমি বাংলাদেশ আর্মির কেউ না কিন্তু সেই মানুষগুইলোর চোখে আমিও সেই আর্মির ''জাতির''ই একজন
আমার খুব কষ্ট হয় এটা ভাবতে এটা আমার দেশের আর্মি। আবার অন্যদিকে প্রসিত টাইপ ধান্দাবাজেরা অবস্থাটাকে আরো ঘোলা করে ফেলছে।
শুভ বুদ্ধির উদয় হোক আমাদের সবার, আরো একবার ধন্যবাদ বিপ্লব আপনাকে।

পরিবর্তনশীল এর ছবি

যখন একটা লেখা স্বপ্নের জগতে না নিয়ে বাস্তবকে চোখের সামনে ঠেলে দেয়। সেটাই সত্যিকারের লেখা।
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ

---------------------------------
-মহিব
ভাবসাব দেখে মনে হইল "উনি একজন মানুষ"

সুজন চৌধুরী এর ছবি

ইত্তে - ফাঁকীয় ই বটে।
___________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আবারো সবাইকে ধন্যবাদ।

...ওরে চোখ টিপি @ সুজনদা।
ফুটোস্কোপ দিয়ে দেখি আজকাল বানানরীতিও দেখা যায়!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

রায়হান আবীর এর ছবি

আচ্ছা আমি মানলাম ওখানে সামরিক শাসন চলছে। কিন্তু বাংলাদেশের সিভিল কমিউনিটে এখনো ঐ পর্যায়ে আসেনাই যে হিলে গিয়ে প্রয়োজনীয় সাহায্য সহায়তা করতে পারবে।

চিকিৎসা সহায়তার জন্য হাসপাতালের বদলে সেনাক্যাম্পে যাওয়াটাকে কি আপনার স্বাভাবিক মনে হচ্ছে?

অবশ্যই মনে হচ্ছে। বগালেক থেকে আশে পাশে কোন হাসপাতাল নেই। ব্রাকের একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে তাও রুমা উপজেলায়। আসা-যাওয়ায় প্রায় ৮ ঘন্টার মামলা। আর বগা লেকের পরও তো আরও জনপদ আছে। রুমানা পাড়া, দার্জিলিং পাড়া। রুমানা থেকে ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাবার জন্য প্রায় ১০ ঘন্টা হাটতে হয়।
বাংলাদেশ আর্মিকে পাকিস্থান আর্মির সাথে কোন তুলনা হতে পারেনা। আমি জানি তাদের অনেকের আচার ব্যবহার খারাপ। এটা শুধু পাহাড়িদের জন্য না। ক্যাডেট কলেজে আমাদের এডজুটেন্ট আমাদের দিকে এমনভাবে তাকাতেন যেন আমরা নরকের কিট। বাংলাদেশের পোশাক পরিহিত সব বাহিনীর সদস্যদের আচার ব্যবহারের কোর্স করানো দরকার।

Man can do what he wants, But he can't want what he wants

অতিথি লেখক এর ছবি

হিলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রাথমিক কারণ ছিল শান্তিবাহিনী দমন। শান্তি চুক্তি হওয়ার পরও সেনাবাহিনী রয়ে গেছে। এর কারণ আমার সঠিক জানা নেই, তবে কয়েকটি কারণ যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে: প্রথমত, বাংলাদেশের সিভিল নিরাপত্তা রক্ষীদের অবস্থা হল, কোন কাজ করেনা, দুর্নীতিবাজ আবার ব্যবহারও খারাপ; অপর দিকে সেনাবাহিনী কিছু কাজ করে, অপেক্ষাকৃত কষ্টসহিষ্ণু এবং ব্যবহার খারাপ (পুলিশের ব্যবহার সেনাদের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়), সেক্ষেত্রে সেনাবাহিনীই ভাল বলে মনে হয়। দ্বিতীয়ত, পাহাড়ী এলাকায় যে উন্নতি হয়েছে, তার কৃতিত্ব শতকরা ৮০ভাগই সেনাবাহিনীর (রাস্তা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন)। বগা লেকে টুরিস্টদের থাকার ঘরগুলোও তাদের বানানো যেখানে সোলার সেল দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

তৃতীয়ত, আদিবাসীদের কাছে সামাজিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার কাজ আপামর বাঙালি জনের দ্বারা হবার নয়, যা কিছু হতে পারে খ্রিস্টান মিশনারি দিয়েই। তাহলে খ্রিস্টান মিশনারিদের উপর পাহাড়ের মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হবে। নিশ্চয়ই নয়। এদেশের ডাক্তারদের উন্নত এক গ্রামে পোস্টিং দিলেও কান্নকাটি করতে দেখা যায়। আত্মত্যাগী ডাক্তার হয়তো ১০ জন আছে, কিন্তু আমাদের দরকার ১০ হাজার। তাই পাহাড়ে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়ার আগে সিভিল সমাজকে সেখানে সার্ভিস দেয়ার উপযোগী করে গড়ে তোলা প্রয়োজন।

সেনাদের পাকিস্তান আর্মির মতো খারাপ- বিষয়টি আমি মানি না। নিজে বান্দরবন গিয়ে অন্তত তেমনটা বুঝিনি। আর্মির মধ্যেও খারাপ ভাল আছে, সবার ব্যবহার এতোটা খারাপ বলা ঠিক হবেনা। বগা লেকে আর্মি চিকিৎসার যে বিচ্ছিন্ন ঘটনাটি আমরা দেখেছি, অন্যদের দুর্ব্যবহার দেখার ঘটনাটাও তো তেমনই বিচ্ছিন্ন হতে পারে।

মুহাম্মদ২০১৭

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আপনাদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই খুব সংক্ষেপে বিনীতভাবে বলছি @ রায়হান আবীর @ মুহাম্মদ২০১৭।

কোনো তুলনামূলক বিচার ছাড়াই পাহাড়ে সেনা বাহিনী গত আড়াই দশক ধরে একটি দুঃসহ সামরিক শাসন কায়েম করেছে। গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, জমি - জমা লুঠপাঠ, আদিবাসী জমিতে বাঙালি সেটেলারদের বসতি স্থাপন, ধরপাকড়, নির্যাতন -- ইত্যাদি সব ধরণের অপরাধের সঙ্গে সেনা বাহিনী প্রতিষ্ঠানিক ও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

আর্মির মধ্যেও খারাপ ভাল আছে, সবার ব্যবহার এতোটা খারাপ বলা ঠিক হবেনা।

কাজেই বিচ্ছিন্নভাবে এ কথা ঠিক নয়। আর পাহাড় সম্পর্কে সম্যক ধারণার জন্য বোধহয় পাহাড়ের রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস এবং প্রত্যক্ষজ্ঞান খুব জরুরি। আজকের বগালেক কিন্তু পুরো পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়। আমি একই সঙ্গে জোর দিচ্ছি, দৃষ্টিভঙ্গী ও মানসিকতার ওপর।...

সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মন্তব্য প্রতিমন্তব্যে অনেক অজানা বিষয় জানলাম। ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে যতটুকু জানি তার চেয়ে লিখেছি অনেক বেশী। পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত অবস্থা খুব একটা জানিনা। কিন্তু সব বাংলাদেশীরই তা জানা দরকার। এ বিষয়ে সূত্রসহ তথ্যমূলক ব্লগ আশা করছি।

মুহাম্মদ২০১৭

বিপ্লব রহমান এর ছবি

আপনাকেও ফিরতি ধন্যবাদ। @আনোয়ার সাদাত শিমুল

কিন্তু পোস্ট সম্পর্কে কিছুই বললেন না! মন খারাপ

পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রকৃত অবস্থা খুব একটা জানিনা।

আপনার সরল স্বীকারোক্তির জন্য সাধুবাদ @মুহাম্মদ২০১৭।

আসলে জানা/ জ্ঞান তো অসীম, তাই না? 'সূত্রসহ তথ্যমূলক ব্লগ' পাবেন কি না, জানি না।

তবে আমি এই ব্লগে চেষ্টা করছি, পাহাড়ের ওপর কিছু সংবাদ-নেপথ্য লিখতে; একে আপনি রিপোর্টারের ডায়রিও বলতে পারেন। ধন্যবাদ।


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পোস্ট নিয়ে কিছু না বলার কারণ, ঐ একটাই, পার্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে জানার সীমিত গন্ডি। তাই আপনার পোস্ট কিংবা প্রতি মন্তব্যে অনেকগুলো নতুন বিষয় দেখে আগ্রহ জাগে। সে আগ্রহেই পড়ি। মন্তব্যের কারণ - 'পড়ছি' ব্যাপারটা জানিয়ে রাখা। ধন্যবাদ।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

পোস্ট নিয়ে কিছু না বলার কারণ, ঐ একটাই, পার্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে জানার সীমিত গন্ডি।

হুমম। ... আর পাহাড় নিয়ে আমার জানাশোনা বুঝি অসীম? চোখ টিপি


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

রায়হান আবীর এর ছবি

হিমু ভাই,

কিন্তু আমি নিশ্চিত, এই সাক্ষাতকারটি ঢাকাতেই বসে নেওয়া হয়েছে, যেহেতু সাক্ষাতকারের বিষয়বস্তু পাহাড়ের রাজনীতি, সেহেতু কৌশলে ডেট লাইন লেখা হয়েছে, ওই রকম।

যিনি সাক্ষাতকার দিয়েছেন আমি তাকেই উদ্দেশ্য করে এই কথাটি বলেছিলাম। সচলে যারা মন্তব্য করছেন কিংবা ব্লগ লিখছেন তাদের উদ্দেশ্য করে নয়। আপনি আমার কথায় মর্মাহত হয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তাছাড়া এই ধরণের মন্তব্য করাও যে ঠিক হয়নি তা মানছি।
আপনার উপদেশ মাথা পেতে নিলাম এবং আবার ক্ষমা প্রার্থনা করলাম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।