মন কেনো এতো কথা বলে?...

বিপ্লব রহমান এর ছবি
লিখেছেন বিপ্লব রহমান (তারিখ: সোম, ৩০/০৬/২০০৮ - ১০:৪৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

..জীবনের অনেকটা বাঁক পেরিয়ে আমি আমার ছোট্ট বন্ধু মানিকের কথা ভুলতে বসেছিলাম। বছর আটেক আগে বিবিসির বাংলা বিভাগের (এখন দৈনিক প্রথম আলোতে) কুররাতুল আইন তাহমিনা, আমাদের মিতি আপার টেলিফোনে এক লহমায় মনে পড়ে যায় হারিয়ে যাওয়া সেই কালো মানিকের মায়াময় মুখ।

মিতি আপা জানতে চান, আপনার কী মানিকের কথা মনে আছে?

আমার প্রথমেই সাংবাদিক মানিকের নাম মনে পড়ে।

মিতি আপা বলেন, আরে না, আমি টোকাই মানিকের কথা বলছি, ওই যে সে নাকী এক সময় আপানাদের সাথে দলবেঁধে ঘুরতো। আর খুব সুন্দর গান করতো।...

হ্যাঁ, মনে আছে। কিন্তু কেনো?

সময় থাকলে আপনি এখনই বিবিসির ইন্দিরা রোডের অফিসে চলে আসুন। খুব জরুরী।

সে সময় বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ফ্রান্সিস হ্যারিসনের সঙ্গে কিছু নিউজ করেছিলাম। এ জন্য বিবিসির ঢাকা অফিসের বাংলা বিভাগের প্রধান মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অনেকের সঙ্গেই আমার সখ্যতা ছিলো।

আমি ইন্দিরা রোডের ধানসিঁড়ি অ্যাপার্টমেনেন্টে গিয়ে স্টুডিওতে মিতি আপার মুখোমুখি বসি। ধূমায়িত এক কাপ ব্ল্যাক কফি সামনে রেখে মিতি আপা ছোট্ট সিডি রেকর্ডার বাজান, হেড ফোন গুজে দেন কানে। বলেন, আপনি আগে এটি শুনে বলুন তো, এটি মানিকের ভয়েস কী না!

রেকর্ডে এক বালক কোকিল কন্ঠে গেয়ে চলে:

প্রথম দেখার কালে রে বন্ধু কথা দিয়াছিলে/ আসি আসি বলে রে বন্ধু ফাঁকি দিয়াছিলে/ যদি না পাই তুমারে/ এই জীবনের তরে/ তখন কিন্তু বলবো রে আমি/ প্রেম কিছু না রে...

ঝাঁ করে আমি ফিরে যাই কৈশর-প্রথম যৌবনের উড়াল দেয়ার দিনে।

*

সন্ধ্যা ঘনালে চারুকলার শুকনো পুকুর পাড়ে গাব গাছের নীচে বসে নগর-বাউলের আসর। পাগলা জাহিদ, বিপ্লব চক্রবর্তী, বাহার, ইংরেজীর ছাত্র মিল্টন, চারুকলার মৃনাল আর একেবারে পাত্তা না পাওয়া নবী (এখন পথিক নবী নামে স্টার!) -- ঢোল, দোতারার সঙ্গে গাইছেন একের পর এক সদ্য লেখা গান, জমেছে গাঁজার আসর। রব বাউলসহ আরো দু-একজন নাম বিস্তৃত বাউলও আছেন সেই আড্ডায়।

জাহিদ ভাই আমার উপস্থিতিতে খুশী হন। হাত ধরে টেনে এক পাশে বসান। পরিচয় করিয়ে দেন হাবাগোবা, লুঙ্গী পরা এক কালো মতো বালকের সঙ্গে। বলেন, ওর গলায় গান আছে।...

এরই মধ্যে এক বিঘতি গাঁজার কল্কে ঘুরে ঘুরে আসে।

একটু পরে আমি প্রস্তাব করি, জাহিদ ভাই, এবার মানিকের গান হোক না!

সবাই হইহই করে আমাকে সমর্থন দেয়।

এই মানিক, গান ধর তো! ওই যে, ওই গামছার গানটা গা।...

কোনো রকম দ্বিধা ছাড়াই বালক ময়মনসিংহের আঞ্চলিক উচ্চারণে গেয়ে ওঠে:

পিরীতেরই রঙিন সুতায় মনের গামছার বানাইছি/ সেই গামছা দিয়া তোরে বাইন্ধা ফালাইছি/তোরে যাইতে দিমু না/ মান করিয়া মানিনিয়া যাইতে দিমু না...

এর পর মানিক আমাদের আড্ডাবাজীর দলে, মানে জাহিদ ভাইয়ের গানের দলে ভীড়ে যায়। জাহিদ ভাইয়ের গান ওর গলায় প্রাণ পেয়ে পাখনা মেলে:

কোন বা বন্ধনে বান্ধিয়াছো ঘর, কারিগর?/ফাগুনের মাতাল হওয়ায়/ ঘর লড়বড় করে রে আমার/ ঘর লড়বড় করে/ ডাইনে বায়ে দুই জানালা/ ছাঁদ জুড়ে তার দরজা খোলা/ বাউল মনে দিয়া তালা/ থাকি কেমনে ঘরে?...

...এর পর নব্বইয়ের এরশাদ বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আমার ব্যস্ততা বাড়ে। আমি জাহিদ ভাইয়ের কাছ থেকে দলছুট হয়ে পড়ি। আগের মতো আর চারুকলা-টিএসসি যাওয়া হয় না। হঠাৎ হঠাৎ মানিকের সঙ্গে ঢাবির ক্যাম্পাসে দেখা হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তার আকুতি, স্যার একটা টাকা দেন, রুটি খামু।...

আমি অবশ্য এমনি এমনি ওকে টাকা দেই না। বন্ধু-বান্ধব জুটিয়ে ওর দু-একটা গান শুনে চাহিদার চেয়ে অনেক বেশী টাকা দেই। কখনো ১০, কখনো ২০টাকা দিলাম, আবার কখনো বা হয়তো ওকে এক বেলা পেটপুরে খাওয়ালাম, এ রকম আর কী!

এরই মধ্যে শুনতে পাই, ওর গান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।

*

নব্বইয়ের পরে আমি পুরোপুরি ব্যস্ত হয়ে পড়ি পেশাগত সাংবাদিকতা জীবনে। ব্যস্ততার ঘেরাটোপ আমাকে এতটুকু অবসর দেয় না। ...কোনো কাজ ছাড়া ঢাবি এলাকা, শাহবাগ, পাবলিক লাইব্রেরি, কী চারুকলায় যাওয়া হয় না।

তবে শুনতে পাই, জাহিদ ভাই, মিল্টন, বিপ্লব, মাসুদ--ওরা পুরোপুরি ভবঘুরে হয়ে পড়েছে...আর ভয়ংকর রকম হেরোইন আসক্ত! রাস্তা-ঘাটে এখানে-সেখানে কাটাচ্ছে ছন্নছাড়া মাদকাসক্তের জীবন!

আর সঙ্গ-দোষে মানিকও নাকী ওই বয়সেই সিগারেট-গাঁজা খাওয়া শুরু করেছে। এক সহৃদয় ব্যক্তি মানিককে নাকী নিজের বাসায় রেখে গান শিখাতে চেয়েছিলেন। ও সেখান থেকে পালিয়ে আবার চলে আসে ঢাবির বন্ধনহীন ভাসমান জীবনে। জাহিদ ভাইকেও জনে জনে সুস্থ জীবনে ফেরাতে ব্যর্থ হন। সব জ্ঞানই এখানে অসাড় হে!

আমি খবরেরই লোক...কিন্তু এইসব খবরে বুকের মধ্যে হাহাকার করে। অসহায় সামান্য মানুষ, আমার তখন কিছুই করার থাকে না!

আরো পরে ১৯৯৩-৯৪ সালের কথা। ঢাকার সব রাস্তায় তখন রিকশা চলতো। আমি শাহবাগ থেকে রিকশা করে জিগাতলায় আজকের কাগজের অফিসে যাবো। কিছুতেই রিকশা পাচ্ছি না। হঠাৎ এক অল্প বয়সী রিকশাওয়ালা আমার সামনে এসে অনেকটা পরিচিত কণ্ঠে ডাকে, স্যার, ও স্যার, আমার রিকশায় আহেন। আপনি বালা আছেন? হাড্ডিসার চোয়াড়ে চেহারার কিশোর রিকশাওয়ালাকে আমি চিনতে পারি। এ আমার সেই ছোট্ট বন্ধু মানিক!

প্রথমে ওর রিকশায় বসতে একটু সংকচ হলেও পরে আমি তাতে চেপে বসি। পথে টুকটাক কিছু কথা হয়। মানিক জানায়, ওর এখনো রিকশার লাইসেন্স হয়নি। সে 'নিশা' করা পুরোপুরি ছেড়েছে। আর তার রাতটুকু কাটছে সূর্যসেন হলের ক্যান্টিন বয়দের সঙ্গে। আমি জাহিদ ভাইয়ের কথা জানতে চাই। মানিকের অকপট স্বীকারোক্তি, হে অহন গ্যাস লয়, আর পাবলিক লাইবরির বারান্দায় বইয়া ঝিমায়। তারে বাড়ি থিকা খ্যাদায় দিছে!

আরো কোনো ভয়ংকর কথা শুনতে হবে, এই ভয়ে আমি কথা বাড়াই না। গন্তব্যে পৌঁছে ওকে ৮-১০ টাকার জায়গায় ৫০ টাকার একটা চকচকে নোট দেই। মানিক 'স্লামালাইকুম স্যার' বলে কেটে পড়ার আগে স্বাভাব সুলভ হাসিতে জানায়, টিএসসিতে যে কোনো সন্ধ্যায় রবির চায়ের দোকানে এলে তাকে পাওয়া যাবে। এখনো সে গান করে। অনেক নতুন নতুন গানও শিখেছে।...

সেটাই ছিলো মানিকের সঙ্গে আমার শেষ দেখা। কেনো? বলছি...

*

আরেক কাপ কফি শেষ করে আমি ফিরে আসি মিতি আপার মুখোমুখি, ধানসিঁড়ি অ্যাপার্টমেন্টে, বিবিসির স্টুডিওর হিমঘরে। মিতি আপা প্রতিভাবান পথশিশুদের ওপর বিশেষ ধারাবাহিক প্রতিবেদন করছেন ‌'প্রবাহের' জন্য। এ জন্য মানিকের সূত্রধরে খোঁজ পড়েছে আমার। শুরু হয় আমার সাক্ষাতকার গ্রহণ। আমিও আবেগ ঝেড়ে ফেলে পেশাদারের মতো গড়গড় করে বলতে থাকি:

নব্বইয়ের দশকে কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ 'মন্দিরা' নামে ছোট একটি নগর বাউলদের গানের দল করেছিলেন। বিপ্লব চক্রবর্তী, জাহিদ হাসান ও বাহার ছিলেন সেই গ্রুপের। এদিকে ময়মনসিংহের রেল স্টেশনে গান গেয়ে ভিক্ষে করে বেড়াতো এক টোকাই ছেলে মানিক। সে কোনো বাউল দলে গান শিখেছিলো। ট্রেনে ট্রেনে ভিক্ষে করে বেড়াতে বেড়াতে মানিক চলে আসে ঢাকায়। ...

মন্দিরা-গ্রুপের সঙ্গে কিছুদিন গান করে বেড়ায়। মঞ্চেও সে বেশ কয়েকবার গান করে প্রশংসা পেয়েছে। এক ব্যাক্তি বাসায় রেখে তাকে গান শেখাতে চেয়েছিলো। কিন্তু মানিক সেখান থেকেও পালায়...ভাসমান পথশিশুদের বেলায় যেমনটা হয় আর কী। এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর সে একটু বড় হলে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করে। তখন সে রাতে থাকতো সূর্যসেন হলের ক্যান্টিন বয়দের সঙ্গে।

আমি শুনেছি, এক রাতে ওর খুব জ্বর হয়েছিলো। কিন্তু ছাত্রদলের ক্যাডাররা ওর কোনো কথা শোনেনি। ওকে তারা জোর করে ডাব পাড়তে গাছে ওঠায়। মানিক ওই অসুস্থ অবস্থায় বাধ্য হয়ে গাছে চড়ে। দূর্বল শরীরে হাত ফস্কে সে গাছ থেকে পড়ে যায়। ছাত্ররা ধরাধরি করে ওকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানান, মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যূ ঘটেছে।। ...

*

সম্প্রতি একটি সংস্থা 'তিনচাকার গান' নামে এক আয়োজনে রিকশাওয়ালাদের গান রেকর্ড করার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই বাছাই পর্বের ওপর আমার এক সময়ের সহকর্মী মুন্নী সাহা 'এটিএন বাংলায়' করেন একটি বিশেষ প্রতিবেদন। নিউজটি দেখতে দেখতে এক কিশোর রিকশাওয়ালার উদাত্ত গানের গলা শুনে আমার মানিকের কথা মনে পড়ে যায়। মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকে, ওরই করা সেই গান:

কে বলে পাগল, সে যেনো কোথায়, রয়েছে কতই দূরে/ মন কেনো এতো কথা বলে?/ পাগল মন, মন রে, মন কেনো এতো কথা বলে?/ আশি তোলায় সের হইলে, চল্লিশ সেরে মন/ মনে-মমনে একমন না হইলে, মিলবে না ওজন/ পাগল মন, মন রে, মন কেনো এতো কথা বলে? ...
---
ছবি: বিমল দাস বাউল, সাহাদাত পারভেজ।


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

মনটা খারাপ হয়ে গেল ।


কি মাঝি? ডরাইলা?

শ্যাজা এর ছবি

মনটা ভার হয়ে গেল বিপ্লবদা। কত প্রাণ যে অকালেই শেষ হয়ে যায়, কেউ খবরও রাখে না। কার দোষে, কি অপরাধে কে জানে..

একটু যত্ন , একটু মনুষত্য মানুষের কাছ থেকে পেলে মানিক কি এভাবে মারা যেত??


---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)

এহেছান লেনিন এর ছবি

বিপ্লব ভাই,
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম। সেই সঙ্গে মন্তব্যও অনেকদিন পর। সেই সূত্রে আপনার ব্লগে লেখা আর আমার নিতান্ত অলেখকসুলভ মন্তব্য আপনার ভালো লাগবে না। যা কিছু ভালো লাগলো তা আপনার লেখা।

সত্যি বিপ্লব ভাই আপনি পারেনও। খুবই ভালো লাগলো।

ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। সবসময়।

লেনিন
********************************************
রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

রক্তে নেবো প্রতিশোধ...

অতিথি লেখক এর ছবি

মনটা কেন যে এতো ভাবে। মনটা একটু ভার হলো বিপ্লব ভাই।

- একরামুল হক শামীম

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কবের ঘটনা এইটা?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আকতার আহমেদ এর ছবি

আমার মায়ের সব করেছে যে লুট
তাকেই এখন দিচ্ছি সবাই স্যালুট !

বিপ্লব ভাই , কী বলবো বুঝতে পারছিনা । নতজানু আমি.. অপরিসীম শুভ কামনা আর শ্রদ্ধা আপনার জন্য ।
ভালো থাইকেন

সবজান্তা এর ছবি

মন খারাপ করা লেখা। ঠিক এরকমই মন খারাপ হয়েছিলো জাহিদ ভাইকে নিয়ে লেখাটা পড়ে। অফুরন্ত সম্ভাবনার কি নিদারুন অপচয় !

সুন্দর একখানা লেখার জন্য যথারীতি (বিপ্লব)


অলমিতি বিস্তারেণ

রণদীপম বসু এর ছবি

লেখায় কোন আবেগ খরচা করেন না আপনি। হয়তো রিপোর্টিং ধাচটা রয়ে গেছে এখনো। তবু কেমন একটা কষ্টময় আবেগ ছড়িয়ে আছে লেখাটায়।
ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাহবুব লীলেন এর ছবি

মানিকের গান বোধ হয় আমিও শুনেছি
নবীর গানতো অনেক

আর জাহিদ

জাহিদ এখনও ভার্সিটি কেন্দ্রিক
বেশিরভাগ সময়ই থাকে ছবির হাটের কাছাকাছি
কিছুদিন আগে পর্যন্ত ধানমন্ডির একটা মিডিয়া প্রডাকশন হাউজে থাকতেন জাহিদ
ওখানে ছিল একজনের হাজার হাজার বইয়ের কালেকশ ছড়ানো ছিটানো
সারাদিন বসে বসে জাহিদ ওগুলো পড়তো আর রাতে ঘুমাতো

এখন মাঝে মাঝে শাহবাগে দেখা হয়
বোধহয় নেশা থেকে কিছুটা সরে এসেছে

০২
সংরক্ষণের অভাবে জাহিদের অনেকগুলো গান চুরি হয়ে যাচ্ছে
বিভিন্নজন এ্যালবামে কেউ নিজের নামে কেউ সংগ্রহ বলে চালিয়ে দিচ্ছে জাহিদের গান
আর মুখে মুখে যারা তার গানগুলো গায় তারা জানেই না তাদের পাশেই হয়তো দাঁড়িয়ে আছে এইসব দুর্দান্ত গানের গীতিকার জাহিদ

কিছুদিন আগে বলেছিলাম কয়েকটা গান একসাথে করে কপিরাইট রেজিস্ট্রি করে নিতে

বলেছিল করব

তারপর একদিন বলল- চিন্তা করছি মোবাইল নেবো। নম্বরটা দেনতো নিলে ফোন করে আমার নম্বর দেবো

এখনও জাহিদের কোনো ফোন পাইনি
দেখাও হয়নি বেশ কিছুদিন

বিপ্লব রহমান এর ছবি

সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
---
লীলেন ভাই,

আমার কবিতার মাস্টার জাহিদ ভাই, অনেকবারই মাদক ছাড়তে চেয়েছেন। একাধীকবার কিছুদিন ভালো থেকেছেন। আমাকে বলেছেন, বিপ্লব, অর্ধেক জীবন শেষ। বাকী অর্ধেক জীবন ভালো হয়ে কাটাবো। নেশাড়ে জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি লিখবো...ইত্যাদি।

কিন্তু আমি তার কথায় মোটেই বিভ্রান্ত হইনি। কেননা এরপরে তাকে বার বার দেখেছি সেই আগের অবস্থায় নেশার জীবনে ফিরে যেতে। গত প্রায় দেড় দশকে এরকমই চলছে।

এ যেনো তারই সেই গানের মতোন:

আমি যারে ভালোবাসি/ তারে আবার বাসি না/ তারে ভালো লাগে না, লাগে না গো/ যে মোরগের আজান শুনে/ রোজ সকালে ঘুম ভাঙিলে/ তারে আবার না খাইলে/ তোমার মগজ বাড়ে না/আমি যারে ভালোবাসি গো...

---
তার গান সংরক্ষণের বিষয়ে এর আগের এই পোস্টে কিছু লিখেছিলাম। তাই এখানে আলাদা করে কিছু বলছি না।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অতিথি লেখক এর ছবি

মনটা ভীষণ ভারী হয়ে গেল! মাদকের ছোবল কিভাবে মানুষকে শেষ করে দেয়! আর রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা কিছু মানুষরূপী পশু কিভাবে একটা ছোট্ট ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়! ধিক!

আপনার ছোট্ট বন্ধু 'মানিক' আকাশের সবচেয়ে সুন্দর তারাটি হয়ে জ্বলে থাকুক।

~ ফেরারী ফেরদৌস

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চাঁদ ডুবেছে নদীর জলে... ভোমড়া ফুলে ফুলে... আমার গান বন্ধু কেন বোঝে না... না রে... আমার গান বন্ধু কেন বোঝে না... চোখে তার মাতাল হাওয়া মন যেন তার গহীন বন... এ কোন রঙে রঙিন হইলা বাউল মন... মন রে...

আহা...

নব্বইয়ের শুরুর দিকে কি জাহিদ ভাই কোনও লিটল ম্যাগ সম্পাদনা করছিলো? 'এবং' টা কি তার? স্মৃতি আউলায়...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বিপ্লব রহমান এর ছবি

উহু...জাহিদ ভাই কখনো কোনো লিটল ম্যাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তবে সে সময় রাইসুসহ আরো দু-একজন তার কিছু কবিতা লিটল ম্যাগে ছেপেছিলো।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

তানবীরা এর ছবি

এরকম আড্ডার গল্প শুনলেই, ছেলে হয়ে না জন্মানোর জন্য আফসোস হতে থাকে।
কতো প্রতিভা আমাদের দেশের পথে - ঘাটে ছড়িয়ে থাকে। মমতাজ, কাঙ্গালীনি সুফিয়া কিংবা বিউটি, নোলক ইত্যাদি ইত্যাদি।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সুজন চৌধুরী এর ছবি

মানিককে চিনতাম। চোখের পানি আটকাতে পারলাম না। বড় কষ্ট দিলেন।


লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ

ধ্রুব হাসান এর ছবি

বিপ্লব'দা মন আসলেই খারাপ হয়ে গেল। ......না, মানিক বা জাহিদ বা বিপ্লব ইনারা জীবন থেকে হারিয়ে গেল বা যাওয়ার পথে বলে নয়; খারাপ হয় এই কারনে যে আমরা প্রায় এসব মানুষকে বুঝতে চেষ্টা করিনা বলে। জানি না আমি ঠিক কিনা! দুনিয়া শুদ্ধ মেজোরিটি মানুষ নেশা'র বিপক্ষে , কিন্তু এই নেশা আর কিছু দিক না দিক এই জগতটাকে দেখার একটা ভিন্ন দৃষ্টি দেয় (যা ঠিক এক কথায় বোঝানো মুশকিল)! যারা নেশা করেন (ভালোবেসে) তাদের অনেকে জীবনের ঐ দৃষ্টিভঙ্গিটার ভেতরে বেচেঁ থাকতে ভালবাসতে শুরু করেন। কেউ কেউ বাস্তবতা আর পরাবাস্তবা/ বাস্তবের বাস্ততার মাঝামাঝি দাড়িঁয়ে স্বন্ধি করতে পারেন; কেউ কেউ পারেন না, হারিয়ে যান অতলে। জীবনের কোন একসময় এসে হয়তো রিয়্যালাইজ করেন, সবচেয়ে যে বড় বাস্তবতা, নিজের শরীর, তা সে খুয়ে বসেছে! নিজেকে বাচাঁতে তখন ফিরতে চাইলেও উপায় থাকেনা! তবে জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি যে জীবনটা, মানে সময়ের প্রতিটি ক্ষণ'কে উপভোগ করতে করতে যা বাচেঁ তার আয়ু দীর্ঘ হলেই বা কি, আর ক্ষণস্থায়ী! বড় অদ্ভূত এই সময় বা জীবন!! সবই যেন মিছে মায়া......বড় বেশী ফাকাঁ আর ফাপাঁ যেন চারদিক!

মুশফিকা মুমু এর ছবি

ইসস মনটা প্রচন্ড রকম খারাপ হয়ে গেল মন খারাপ
......আর কিছু বলতে পারছি না মন খারাপ মন খারাপ মন খারাপ
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

এই পৃথিবীর পরে... কত ফুল ফোটে আঁধারে... সে কথা কি কোনোদিন কখনো কারো মনে পড়ে...
কথাগুলো খুব সত্য, তাই না...
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

মনটা হঠাত্ বিষাদে ভরে গেলো।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

সবাইকে আবারো অনেক ধন্যবাদ।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

আহারে মানিক!
টিএসসসিতে আর বকুল তলার অনুষ্ঠানে ওর গান শুনেছিলাম। কী অসাধারণ কণ্ঠ আর গায়কী ছিলো ক্ষুদে বালকটির। মানিকের মৃত্যুর কাহিনী লিখে মনটা বিষন্ন করে দিলে বিপ্লব।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

মনে কেনো এত ব্যাথা বাজে.....

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

স্বপ্নাহত এর ছবি

বিপ্লব ভাই যে সময়ের কথা বললেন তখনো আমার স্কুলের পথ ধরা হয়নি । চেনার কথা নয় সেই সময়ের টিএসসি শাহবাগ এর সেই মানুষগুলোকেও আপনি যাদের কথা বলে গেলেন।

তারপরও... পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল ওদের কেউই আমার অচেনা নয়।

আর গানগুলো খুব খুব শুনতে ইচ্ছে করছে...

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

কিছুই আসছে না
নয়নের জলে
কি কিবোর্ড চলে

*******************************************
A life unexamined is not worthliving.-Socrates

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

বিপ্লব রহমান এর ছবি

সচলের জন্মদিনে বোধহয় আনন্দময় কিছু লিখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু স্মৃতির ভার সত্যিই খুব মারাত্নক!


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

হিমু এর ছবি

ছাত্রদলের ঐ ক্যাডার কুত্তাগুলির পেছন দিক দিয়ে ডাব প্রবেশ করানো উচিত।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শেখ জলিল এর ছবি

অসাধারণ লেখা।
চোখে জল এসে গেলো। এভাবে কতো মানিক যে ঝরে যাচ্ছে কার খোঁজ কে রাখে?

কে বলে পাগল, সে যেনো কোথায়, রয়েছে কতই দূরে/ মন কেনো এতো কথা বলে?/ পাগল মন, মন রে, মন কেনো এতো কথা বলে?/ আশি তোলায় সের হইলে, চল্লিশ সেরে মন/ মনে মনে একমন না হইলে মিলবে না ওজন/ পাগল মন, মন রে, মন কেনো এতো কথা বলে? ...
এ গানটাও বোধ হয় চুরি হয়েছে। কারণ নব্বই দশকের হিট দিলরুবা খানের ক্যাসেটে আমি গীতিকার হিসেবে মানিকের নাম দেখিনি।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

পাগল মন গানটি চুরি হয়নি মোটেই। গানটির গীতিকার মানিক হতে যাবে কেনো?
এই গানটি আমার জানা মতে লিখেছিলেন আহমেদ কায়সার। সুরও তাঁরই করা।

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কথা সত্য
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বিপ্লব রহমান এর ছবি

একমত@ রিটন ভাই@ নজরুল ইসলাম।

সম্ভবত '৯০এর ডিসেম্বরে এরশাদ সরকারের পতনের পর '৯১এর ফেব্রুয়ারিতে একুশের বই মেলায় 'পাগল মন' গানটি দিলরুবার ক্যাসেটে খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। আর পরের বই মেলায় দিলরুবার ক্যাসেটে তুমুল জনপ্রিয়তা পায় রাধারমনের গান 'ভ্রমর কইও গিয়া'।
---
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। কৃতজ্ঞতা।


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

রাবাব এর ছবি

মন খারাপ হয়ে গেল বিপ্লবদা। আপনার এই মন খারাপ করা লেখাগুলো পড়তেই বারে বারে সচলে ফিরে আসি। মানিক বেঁচে থাক আমাদের সবার মাঝে।

senjuti এর ছবি

অদ্ভূত আবেগ নিয়ে তুমি লেখো....জীবনে অনেক কথাই হয়তো যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা যায়..কিন্তু আবেগ ছাড়া মানুষ অসম্পূর্ণ....বেশ ভালো লাগছে তোমার লেখা পড়ে, তবে মনটাও খারাপ হলো মানিকের মত ঝড়ে যাওয়া ফুলদের জন্য, আর জাহিদ ভাই-বা কেনো এমন করে ধ্বংস হয়ে গেলো ...? এমনই কি কথ ছিলো ?............... উত্তর আছে কি? মানিকতো চলেই গেছে............ ছুটে যেয়ে জাহিদ ভাইকে বাঁচাতে ইচ্ছে করছে.....তা কি সম্ভব না...? হয়তো এটাও একটা আবেগেরে কথা....চাইলেই সব পারা যায় না....তা আমার চেয়ে ভালো কে জানে.......? অসাধারণ লেখা.....ধন্যবাদ............লেখককে

senjuti এর ছবি

অদ্ভূত আবেগ নিয়ে তুমি লেখো....জীবনে অনেক কথাই হয়তো যুক্তি দিয়ে খন্ডন করা যায়..কিন্তু আবেগ ছাড়া মানুষ অসম্পূর্ণ....বেশ ভালো লাগছে তোমার লেখা পড়ে, তবে মনটাও খারাপ হলো মানিকের মত ঝড়ে যাওয়া ফুলদের জন্য, আর জাহিদ ভাই-বা কেনো এমন করে ধ্বংস হয়ে গেলো ...? এমনই কি কথ ছিলো ?............... উত্তর আছে কি? মানিকতো চলেই গেছে............ ছুটে যেয়ে জাহিদ ভাইকে বাঁচাতে ইচ্ছে করছে.....তা কি সম্ভব না...? হয়তো এটাও একটা আবেগেরে কথা....চাইলেই সব পারা যায় না....তা আমার চেয়ে ভালো কে জানে.......? ধন্যবাদ............লেখককে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।