সফটওয়্যারের স্বাধীনতাযোদ্ধা রিচার্ড স্টলম্যান

বিপ্রতীপ এর ছবি
লিখেছেন বিপ্রতীপ (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৬/২০০৮ - ৮:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

স্বাধীনতার আকাঙ্খা প্রতিটি মানুষের মাঝেই আছে। মানবসভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই মানুষ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুদ্ধ করে আসছে। তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বেও এখন বিচিত্র এক যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ সফটওয়্যারের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ। বিচিত্র এই যুদ্ধের মহানায়কের নাম রিচার্ড ম্যাথু স্টলম্যান। লোভী সফটওয়্যার ব্যবসায়ীদের কালো থাবার মুখে তিনিই বিশ্ববাসীকে উচ্চারণ করতে শিখিয়েছিলেন এক সাহসী শ্লোগাণ-সফটওয়্যারের স্বাধীনতা চাই!

১৯৫৩ সালের ১৬ মার্চ নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্ম নেয়া এই রিচার্ড স্টলম্যান প্রথম প্রোগ্রামটি লিখেন হাই স্কুল গ্র্যাজুয়েশনের কিছুদিন পরে। তখন তিনি রকফেলার ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞান বিভাগের গবেষনাগারে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতেন। তবে ইতোমধ্যে তার ক্যারিয়ার গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের পথেই এগিয়ে গেছে, যদিও তার তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষকরা মনে করতেন তিনি হয়তো জীববিজ্ঞানেই উচ্চশিক্ষা গ্রহন করবেন।

১৯৭১ সালের জুন মাসে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে তিনি ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষনাগার একজন প্রোগ্রামার হিসেবে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। একজন হ্যাকার হিসেবেও তার হাতে খড়ি হয় সেখানেই। হ্যাকিংয়ের কথা শুনে মোটেও চমকে উঠবেন না যেন। তখনকার দিনে হ্যাকিংয়ের সংজ্ঞা ছিল একেবারেই অন্যরকম। তখন কম্পিউটার এবং এর নিরাপত্তা সম্পর্কে যারা খুব দক্ষ ছিলেন তাদেরকে হ্যাকার বলা হতো। হ্যাকিংয়ের যাত্রা শুরু এমএইটি’র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষনাগারেই। স্টলম্যান ‘RMS’ নামে খুব অল্প দিনের মাঝে এমআইটি’র হ্যাকার সমাজে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। উল্লেখ্য, ‘RMS’ তার পুরো নাম রিচার্ড ম্যাথু স্টলম্যানের সংক্ষিপ্ত রূপ। হ্যাকার হিসেবে তার বেশ কিছু আলোচিত ঘটনাও আছে। ১৯৭৭ সালে এমএইটির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবে প্রত্যেক ছাত্রদের কম্পিউটারে লগইন করার জন্য আলাদা আলাদা পাসওয়ার্ড দেয়া হয়। যথারীতি স্টলম্যানের এই পাসওয়ার্ডের শৃঙ্খল মোটেও পছন্দ হলো না। তিনি পাসওয়ার্ড ভেঙ্গে সবার পাসওয়ার্ড তুলে দিয়ে সবাইকে ই-মেইলে জানিয়ে দিলেন। এরই মাঝে স্টলম্যান এমআইটি-তে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর শুরু করেছেন।

আশির দশকের শুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের বিকাশের সাথে সাথে কপিরাইটের বাড়াবাড়ি শুরু হয়। এর ফলে অনেক দাম দিয়ে সফটওয়্যার কিনেও ক্রেতারা তা স্বাধীনভাবে ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে শুরু করেন। শুধু তাই নয় ব্যবসায়ীরা সফটওয়্যার কপি করা বা না কিনে বন্ধুর কাছ থেকে নিয়ে সফটওয়্যার ব্যবহারের মতো বিষয়গুলোকে ‘চুরি’র মতো নোংরা কাজের সাথে তুলনা করতে শুরু করে। এর মাঝে এমআইটি’র গবেষনাগারেও একটি ঘটনা ঘটে। ১৯৮০ সাল। একদিন স্টলম্যান ৫০ পাতার একটি জরুরী ফাইল প্রিন্ট করতে দিয়েছেন। লেজার প্রিন্টারটি অন্য তলায়। স্টলম্যান গিয়ে দেখেন প্রিন্টারের ট্রে-তে মাত্র চারটি পাতা পড়ে আছে, তাও অন্য আরেকজনের। তার ফাইলের একটা পাতাও প্রিন্ট হয়নি। জ়েরক্স ৯৭০০ মডেলের এই প্রিন্টারটি এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থেকে বিনামূল্যে পাওয়া। স্টলম্যান এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রিন্টার সফটওয়্যারের সোর্স কোডে কিছু পরিবর্তন করলেন যেন প্রিন্টারে ফাইল প্রিন্ট হয়ে গেলে বা প্রিন্টার ব্যস্ত থাকলে ল্যাবের কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা তাৎক্ষনিক বার্তা আকারে দেখায়। এমআইটি’র ল্যাব স্টলম্যানের রূপান্তর করা এই সফটওয়্যারটি প্রত্যাখান করে, কারন এটি অন্য একটি সফটওয়্যারকে রূপান্তর করে তৈরি করা। এই ঘটনাটি সফটওয়্যারের ভবিষ্যত স্বাধীনতাযোদ্ধা স্টলম্যানের উপর বেশ বড়সর প্রভাব ফেলে।
auto
এরই মাঝে এমএইটি’র হ্যাকার সমাজেও ভাঙ্গন ধরেছে। এমএইটির হ্যাকার সমাজের শেষ সদস্য হিসেবে তিনি নন-ডিসক্লোসার এগিমেন্ট স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন। এই চুক্তির শর্ত ছিল নিজের ডেভোলপকৃত সফটওয়্যারের সোর্স কোড কাউকে দেয়া যাবে না। রিচার্ড স্টলম্যান এই চুক্তিকে ‘অনৈতিক’ এবং ‘অসামাজিক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। একটি নিশ্চিত জীবনযাপনের হাতছানিকে দূরে ঠেলে ১৯৮৪ সালের জানুয়ারি মাসে এমআইটি’র প্রোগ্রামারের চাকুরি ছেড়ে দেন। মুক্ত সফটওয়্যার তৈরির লক্ষ্যে পুরোটা সময় গনুহ (GNU) প্রকল্পে ব্যয় করা। গনুহ প্রকল্পের ঘোষনা অবশ্য আগের বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই দিয়েছিলেন। সফটওয়্যারের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর গল্প মোটামুটি এই। কিন্তু শুধু যুদ্ধ শুরু করলে তো হবে না, চাই অস্ত্র, চাই মানুষ...। স্টলম্যান বুঝতে পারছিলেন মানুষের হাতে শুধু উন্মুক্ত সফটওয়্যার তুলে দিলেই হবে না, সেই সফটওয়্যারগুলো চালানোর জন্য একটি উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেমও তো চাই।

১৯৮৫ সাল। মার্চ মাসে প্রকাশিত হয় গনুহ প্রকল্পের ইশতেহার । এই ইশতেহারে গনুহ প্রকল্পের বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরার পাশপাশি জানানো হয় ইউনিক্স ভিত্তিক একটি ফ্রি অপারেটিং সিস্টেম তৈরির কথা। ইউনিক্সের মতো হলেও এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করা যাবে একদম বিনে পয়সায়। এছাড়াও মুক্ত সফটওয়্যারের আন্দোলনকে ছড়িয়ে দিতে সে বছরের ৪ অক্টোবর গঠন করেন ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। মুক্ত সফটওয়্যারের বিতরন এবং রুপান্তর যেন কপিরাইটের হুমকির মুখে না পড়ে সেজন্য স্টলম্যান এক নতুন ধারনার জন্ম দেন যার নাম ‘কপিলেফট’। কপিলেফটের ফলে একটি সফটওয়্যার স্বাধীনভাবে ব্যবহার করা ছাড়াও ব্যবহারকারী এর পরিবর্তন করতে পারবেন, এমনকি এই সফটওয়্যারকে রূপান্তর করে একটি নতুন সফটওয়্যারও তৈরি করা যাবে। এজন্য কারো অনুমতি নিতে হবে না বা এর জন্য কোন প্রকার অর্থও প্রদান করতে হবে না। কপিরাইটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়, আর অন্যদিকে কপিলেফট ব্যবহারকারীর স্বাধীনতা বজায় রাখতে সদা সচেষ্ট। তবে এর মূল উন্নয়নকারীর অবদান যেন ক্ষুন্ন না হয় সেজন্য কিছু শর্তও থাকে। উল্লেখ্য, কপিলেফটের ক্ষেত্রে এখন বেশ কিছু লাইসেন্স আছে-GPL, LGPL, FDL। স্টলম্যানের এসব নিত্যনতুন ধারনা অনেকেই আকৃষ্ট করে তুলে। ফলে এ প্রকল্পে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে।

নব্বই দশকের শুরু... গনুহ অপারেটিং সিস্টেম উন্মুক্ত হবার অপেক্ষায়। তবে এর একটি বড় অংশ তখনও বাকী, আর সেই অংশটি হলো অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল। সেই কাজটিকে সহজ করে দেন ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লিনাস টরভেল্ট। ইউনিক্স ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ‘মিনিক্স’ নিয়ে শখের বশে কাজ করতে করতে ১৯৯১ সালের মার্চ মাসে লিনাস তৈরি করে ফেলেন একটি অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল। ফলে গনুহ অপারেটিং সিস্টেমের কার্নেল হিসেবে একেই বেছে নেয়া হয়, জন্ম নেয় মুক্ত সফটওয়্যার যুদ্ধের সবচেয়ে কার্যকরী অস্ত্র-‘লিনাক্স’! লিনাসের নামানুসারেই এর নামকরন করা হয়। ফলে অনেকেই ধারনা করে বসেন লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের পুরোটাই বোধহয় লিনাসের তৈরি করা। আসলে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের বেশির ভাগ অংশ তৈরি না করেও লিনাক্সের সাথে সাথে লিনাক্সের জনক হিসেবে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন লিনাস টরভেল্ট। লিনাক্স আসার পরপরই মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলন একটি নতুন মাত্রা পায়। উন্মুক্ত সোর্সকোড ভিত্তিক এই অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটার ব্যবহারকারী এবং প্রোগ্রামারদের সামনে নতুন দ্বার উন্মোচন করে।

স্টলম্যান একজন সাধারন ছাত্রের মতো সস্তা জীবন-যাপনই বেশি পছন্দ করেন। মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং, নেলসন ম্যান্ডেলা, অং সাং সুচি’র মতো মানুষেরাই তার জীবনে বেশি প্রভাব ফেলেছেন বলে মনে করেন তিনি। ব্যাক্তিগত জীবনে নাস্তিক; জন্মসূত্রে খ্রিষ্টান হলেও ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা কখনও পালন করা হয় না। কাজ শেষে অফিসেই ঘুমিয়ে পড়েন। মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। তার ব্যাক্তিগত সম্পদ বলে তেমন কিছুই নেই। আসলে প্রায় গত তিন দশক ধরে তার ধ্যান-জ্ঞান একটাই, আর তা হলো মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

তথ্যপ্রযুক্তির মতো বিশ্ব রাজনীতিকেও বানিজ্যের আওতামুক্ত করার পক্ষপাতী স্টলম্যান। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক ক্ষমতা সর্বাগ্রে লোভী ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাওয়াতেই গণতন্ত্রের মুক্তি সম্ভব হচ্ছে না। তাই ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রাজনৈতিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব না হলে গনতন্ত্র তথা মানবতার মুক্তি সম্ভব নয়। এছাড়াও মুক্ত সফটওয়্যার আন্দোলনের অগ্রদূত স্টলম্যান মনে করেন সফটওয়্যারের বানিজ্যিকরন পৃথিবীর প্রধান সমস্যা নয়। তাঁর মতে, বর্তমানে বিশ্বের এক নম্বর সমস্যা হলো পরিবেশ দূষন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন (Global Warming)।

মুক্ত সফটওয়্যার সম্পর্কে স্টলম্যান প্রচুর প্রবন্ধ লিখেছেন। তার সবেচেয়ে বিখ্যাত প্রবন্ধের নাম-কেন সফটওয়্যারের মালিক থাকা উচিত নয়? অনেকেই বলেন, মুক্ত সফটওয়্যার মানে হচ্ছে মেধার অপচয় বা মুক্ত সফটওয়্যার তৈরি করে কোন লাভ নেই । তাদের এসব প্রশ্নের সব জবাব আছে এই প্রবন্ধে। এ পর্যন্ত অনেক ভাষায় এই প্রবন্ধটি অনুবাদ করা হয়েছে। সায়েন্স ফিকশনের ভক্ত স্টলম্যান দুটি সায়েন্স ফিকশনও লিখেছেন। সফটওয়্যার কপিরাইট এর প্যাটেন্টের বিরূদ্ধে মানুষকে সচেতন করতে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ২০০৬ সালে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেরলায় রাজ্য সরকারের স্টলম্যানের এক বৈঠকের পর সরকার এই রাজ্যের প্রায় সাড়ে বারো হাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম মাইক্রোসফট উইন্ডোজের বদলে উন্মুক্ত অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার সিদ্ধান্ত নেয়।

সফটওয়্যার কপিরাইট আর প্যাটেন্টের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে তিনি প্রথম বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছিলেন মুক্ত সফটওয়্যারের স্বপ্ন। তার স্বপ্ন ছুঁয়ে গেছে সমস্ত বিশ্বকে। এর বড় উদাহরন সম্ভবত আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রযুক্তি বিমুখ একটি জাতি হিসেবে আমাদের দুর্নাম থাকলেও আমাদের তরুন সমাজ এখন স্টলম্যানের মন্ত্রে দীক্ষিত। আসলে যেকোন যুদ্ধে অনেকেই অংশগ্রহন করে, তবে সেই যুদ্ধ কাউকে না কাউকে শুরু করতে হয়। সেই শুরুটা তিনিই করেছেন। তাহলে এই সফটওয়্যার যুদ্ধের মহানায়ক তিনি ছাড়া আর কে হবেন?

[লেখাটির রসকষ চিপে বের করে পরবর্তীতে বাংলা উইকিতে যুক্ত করে দেবো। ]


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

স্বাধীন সফটঅয়্যারের সুবিধা আমি যেটা দেখি তা হলো বিনে পয়সায় পাওয়া যায় আর কমিউনিটির সাপোর্ট থেকে যদি কোন সমস্যা হয় সেটা মেটানো যায়। সেই সমাধান সবসময় যে কাজ করে এমনও নয়। কিন্তু একজন একটা সফটঅয়্যার বানিয়ে কেন সেটা অন্যের চাপে পড়ে মুক্ত করে দেবে সেটা আমার বুঝে আসেনা। কেনই বা তিনি কষ্ট করে সফটঅয়্যার বানিয়ে তা বিক্রি করতে পারবেন না? কেউ যদি টাকা দিয়ে বেচে ব্যবসা করতে পারে আর কেউ যদি বিনে পয়সায় দিয়েও বাজার ধরতে না পারে তাহলে কার কী করার আছে?

আর তাই সফটওয়্যার মুক্ত করে দেয়া বিষয়ক আন্দোলন আমার কাছে কেমন যেন (পড়তে হবে ফালতু) মনে হয়। মানুষ যদি মুক্তটা খায় তো ভালো কিন্তু কেউ যদি পয়সা দিয়ে অন্যেরটা কিনে খায় নিশ্চয় সেটা তার ব্যাপার। আমি সফটওয়্যার বানিয়ে মুক্ত করে দিতে পারি, সেটা যদি ঠিক হয় তো আমি সেই সফটওয়্যার বেচতেও পারি। সেখানেও কোন সমস্যা থাকা উচিত না। এটা তো ক্রিয়েটরের নিজস্ব ব্যাপার।

বিপ্রতীপ এর ছবি

প্রকৃতিপ্রেমিক ভাই,
ওপেনসোর্স আন্দোলন মানে কিন্তু এই নয় যে সফটওয়্যার বিনে পয়সায় দিতে হবে। এর মূখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে সোর্স কোড ওপেন থাকবে এবং স্বাধীনভাবে ব্যবহার করা যাবে (যেমনঃ মোডিফাই করা বা অন্যের সাথে শেয়ার করা)। আর এখন কিন্তু অনেক বানিজ্যিক সফটওয়্যার আছে যেগুলো ওপেনসোর্স(যেমনঃ মাইএসকিউএল)। প্রধান সমস্যা বানিজ্যে নয় মনোপলিতে, আসলে ওপেন সোর্স নিয়ে যারা কাজ করেন তারা বেশির ভাগেরই মানসিকতা এমন যে তা তারা বিনে পয়সায় ব্যবহার করতে দেন। তাই অনেকেই ধারনা করেন ওপেন সোর্স মাত্রই ফ্রি...

ফ্রী সফটওয়ারের’ মূল বিষয়টি হল ব্যবহারের স্বাধীনতা, সফটওয়ারের মূল্য নয়

এই লেখাটি দেখতে পারেন

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

লিংকটা থেকে অনেককিছু জানলাম। মুক্ত হলেই আমাদের সুবিধা। বাংলাদেশে মুক্ত সফটওয়্যারের (যেমন লিনাক্স) ব্যবহার সরকারিভাবে করা হলে নতুন সফটওয়্যারে তৈরি ও তার বাজার সৃষ্টির সুযোগ হবে সেটা আমার মত মানুষও বোঝে। কিন্তু সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বোঝেনা কেন? অনেকদিন আগে পত্রিকায় পড়েছিলাম ঢাবির কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ মাইক্রোসফট-এর সাথে কি একটা চুক্তি করেছে। মুক্ত নিয়ে যাদের প্রোমোট করার কথা তারাই যদি এমন করে তাহলে আর সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ কি।

স্নিগ্ধা এর ছবি

ধন্যবাদ বিপ্রতীপ ! অনেক অর্ধস্বচ্ছ ধারনা পরিষ্কার হলো এটা পড়ে।

বিপ্রতীপ এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

দ্রোহী এর ছবি

রিচার্ড স্টলম্যান সম্পর্কে প্রথম জানতে পেরেছিলাম — হ্যাকিং এর গল্প পড়তে গিয়ে।

হায়রে কপাল! জীবনে কত শখ ছিল হ্যাকার হবার দেঁতো হাসি
বাঁধভাঙার আওয়াজে কিছু ফুটফাট ছাড়া কিছুই করতে পারলাম না!


কি মাঝি? ডরাইলা?

বিপ্রতীপ এর ছবি

তাওতো বস কিছু ফুটফাট করছেন...জীবনে তো কিছুই করতে পারলাম না মন খারাপ

রাগিব এর ছবি

বিপ্র, আপত্তি না থাকলে এটা উইকিতে স্ট্লম্যানের নিবন্ধে যোগ করে দিতে পারো।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

বিপ্রতীপ এর ছবি

রাগিব ভাই,
এখন বাংলা উইকিতে রিচার্ড স্টলম্যান নিয়ে যে নিবন্ধ আছে তা এক লাইনের। আসলে লেখাটা বাংলা উইকি'র কথা মাথায় রেখেই লিখেছি হাসি । তবে বিশ্বকোষীয় ধাঁচ বজায় রাখার জন্য কিছু অংশ বাদ দিয়ে আগামীকাল যুক্ত করে দেবো।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

লেখাটিতে একটা বড় সমস্যা আছে। ওপেন সোর্স সংক্রান্ত কোন বিষয় আসলে পুরো বিষয়টার কৃতিত্ব রিচার্ডকে দিয়ে দেয়া হয়। অথচ সেসময়কার আরো অনেক পাইওনিয়ার যারা এই ধরনের কনসেপ্টে সফটওয়্যার প্রচার করে আসছিলেন তাদের ইগনোর করা হয়। সমসাময়িক লিনাস টোরভাল্ডের কথা না বললেই না। তাছাড়া C++ এর জনক ব্রায়ান, মিনিক্সের জনক (নাম ভুলে গেলাম) এরা তো আছেনই। রিচার্ডের পরবর্তী সময়কার আরো অনেক যোদ্ধা আছেন তাদের কথাও তুলে ধরা দরকার।

আসলে পুরো ওপেন সোর্সের কনসেপ্টটা অনেক বড় এবং গভীর। ওপেন সোর্সও একটি দারুন বিজনেস মডেল হতে পারে। এর উদাহরন হিসেবে, ডেবিয়ান, মোজিলা, গুগলের নাম না করলেই না।

তবে লেখা চমৎকার হয়েছে। এরকম লেখা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

বিপ্রতীপ এর ছবি

ধন্যবাদ মুর্শেদ ভাই...
আসলে কারো জীবনী লিখতে গেলে তাকে কিছুটা বেশি হাইলাইট করতেই হয়। এখানেও যথারীতি তাই হয়েছে। আর লিনাস টরভেল্টকে কিন্তু আমি খাটো করিনি। তবে এটাতো ঠিক লিনাক্সের বড় অংশ GNU প্রকল্পেই করা। আর বড় কথা হলো এই লেখায় ওপেন সোর্সের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করার কোন ইচ্ছে ছিল না। রিচার্ড স্টলম্যানের জীবনী লিখতে গিয়ে ঠিক যতটুকু বলা প্রয়োজন ছিল ঠিক ততোটুকুই লিখছি...ওপেন সোর্সের খুঁটিনাটি নিয়ে আগেও একটি লেখা লিখেছি কিন্তু পুরাতন বলে এখানে দেয়া গেলো না...। ওপেন সোর্স বিষয়ে আমারও অনেক ভুল ধারনা ছিল, বেশ কিছুদিন অনলাইনে এসব নিয়ে পড়াশুনা করার পর এ সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম...আপনার ব্লগেও লিনাক্স সম্পর্কে বেশ ভালো কিছু তথ্য জেনেছি...।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি

গৃহান্তরী এর ছবি

আসলে পুরো ওপেন সোর্সের কনসেপ্টটা অনেক বড় এবং গভীর। ওপেন সোর্সও একটি দারুন বিজনেস মডেল হতে পারে।

উহু, শুরুতেই একটা ভুল আছে। ওপেন সোর্স আর স্টলম্যানের ফ্রি সফটওয়্যার আন্দোলন এর মূল সুর মোটেও এক নয়। স্টলম্যান বা তাঁর সতীর্থদের আন্দোলন একটি সমাজবাদী আন্দোলন। আর ওপেন সোর্স কনসর্টিয়াম হল স্টলম্যানদের গড়া আন্দোলনের আদর্শিক দিক বাদ দিয়ে শুধু প্রযুক্তিগত দিকটি ব্যাবহার করে একটি ব্যবসায়িক মডেল দাড় করানো। ওটার আদর্শিক ভিত্তি হল নতুন তথ্য-প্রযুক্তির উদ্ভব যে অবাধ তথ্য-প্রবাহের গতিকে আবশ্যম্ভাবী করে তুলেছে, কপিরাইট ভিত্তিক সফটওয়্যার বাণিজ্যকে যেভাবে হুমকির মুখে ফেলছে, তা থেকে বাণিজ্যকে বাচানোর জন্য সমন্বয়ধর্মী একটা মডেল তৈরি করা।

এখানে দেখতে পারেন।

কনফুসিয়াস এর ছবি

চমৎকার লেখা। অনেক ধন্যবাদ।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

বিপ্রতীপ এর ছবি

ধন্যবাদ কনফু ভাইয়া...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি

স্পর্শ এর ছবি

তথ্যবহুল একটা মজাদার লেখা। পড়তে ভাললাগলো! শিখলামও অনেক। হাসি
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

বিপ্রতীপ এর ছবি

ধন্যবাদ স্পর্শ...তোর অনু সায়েন্স ফিকশন লেখার খবর কি? দশ মাস দশ দিনটা কিন্তু চরম হইছিলো... হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি

রিদওয়ান এর ছবি

O'reilly রিচার্ড স্টলম্যানের ওপর লেখা একটা বই ওপেন করে দিয়েছে । বইটার নাম Free as in Freedom. এই বইয়ে (Free Software Foundation)FSF আন্দোলনের ব্যাখা পেতে পারেন যে কেউ ।

http://oreilly.com/openbook/freedom/index.html

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।