প্রবাসের কথা...[০৭]

বিপ্রতীপ এর ছবি
লিখেছেন বিপ্রতীপ (তারিখ: রবি, ১৫/০৩/২০০৯ - ১:২৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১।
এবার রেজিনায় দীর্ঘ শীতকাল। মার্চের শুরুতেও রীতিমতো ভয়াবহ ঠান্ডা। মাঝে একদিন সকালে যখন ইউনিভার্সিটিতে যাই, তখন উইন্ড চিল সহ তাপমাত্রা মাইনাস সাতচল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ইউনিভার্সিটিতে যাবার পথে বরফে আছাড় খেলাম, তবে ভাগ্য ভালো ব্যাথ্যা তেমন পাইনি। ওয়ালমার্ট থেকে সস্তায় কেনা স্নো-বুট এক শীতেই কাবু। সেদিন সন্ধ্যায় দেশে এক মামার কাছে ফোন দিলাম। কথাপ্রসঙ্গে ঠান্ডা, বরফে আছাড় খাবার কথা বললাম। আমার সেই মামা আবার কিছুটা বিটলা কিসিমের এবং অনেকটা বন্ধুর মতোই। বরফে আছাড় খেয়ে ব্যাথ্যা পেয়েছি কিনা সেটা জিজ্ঞেস করার বদলে বললেন, তোদের ওখানে তো তাও ভালো... দেশে আছাড় খেলে বরফ লাগাতে হতো, বরফে আছাড় খেলে নিশ্চয়ই আলাদা বরফ লাগাতে হয় না। কস্কি মমিন!

২।
ঠান্ডা যখন বাড়ে তখন কেন জানি কাজের চাপও বাড়ে। তখন মন মেজাজও খারাপ থাকে। অনেকগুলো রিপোর্ট, প্রেজেন্টেশন সামনে। আগামী সপ্তাহে প্রজেক্ট স্পন্সর সিটি অব রেজিনার সাথে মিটিং থাকায় সুপারভাইজার রীতিমতো পাগলা ঘোড়া হয়ে গেছেন। প্রতিদিন গাদাখানেক নতুন কাজ ধরিয়ে দিচ্ছেন। যে ল্যাবে সিমুলেশনের কাজ করি সেখানে আবার কিছু পোলাপানের একটা দল ড্রিল মেশিন, হাতুড়ি দিয়ে মহাউৎসাহে কি একটা মডেল বানাচ্ছে। এদের কিচির মিচিরে, হাতুড়ির শব্দে মন মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। সেই দলে আবার দুই বালিকা। ইচ্ছে হয় বলি, এসো সুন্দরী…কাঠের বদলে আমার মাথায় দুইখান হাতুড়ির বাড়ি দিয়ে যাও!

গতকাল ভয় পাচ্ছিলাম আবার সুপারভাইজার নতুন কাজ চাপিয়ে দেন কিনা। মুখটা যথাসম্ভব হাসি হাসি করে বললেন, এখন তো আমরা একটা ইউনিট রান করছি, বাকী দুইটা ইউনিট নিয়ে কিছু বলা গেলে ভালো হতো…বাকী দুইটা ইউনিট নিয়ে কি ভাবছো? বুঝতে পারলাম এতো অল্প সময়ে বাকী দুটা ইউনিট রান করার মতো অসম্ভব কাজ চাপিয়ে দেবার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছেন!

৩।
গতকাল রাতে বাসায় আড্ডা বসেছিল। অনেকগুলো সিগারেট ধ্বংস করে মধ্যরাতে ঘুমাতে গেলাম। এক ঘুমে সাড়ে দশটা। গত কদিনের ক্লান্তিতে বেশ ভালো ঘুম হয়েছে। উঠে দাঁতব্রাশ, শেভ, গোসল সেরে কয়েকজন মিলে এক আফগানী রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম। গত সপ্তাহেও গিয়েছিলাম। কিন্তু যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল, ততোক্ষনে রেস্টুরেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে এক ইথিওপিয়ান রেস্টুরেন্টে খেতে গেলাম। সেদিন ভেড়ার মাংসের গন্ধে খেতে পারিনি, পুরো টাকাটাই পানিতে। আজ আফগানী রেস্টুরেন্টে রীতিমতো পেট ভরে খেলাম সবাই। ওদের খাবারও বেশ ভালো। এখানে ভিয়েতনামিজ রেস্টুরেন্টের খাবারও খারাপ না।

এ শহরে আগে বাংলাদেশের মাছ-টাছ পাওয়া যেতো না। সম্প্রতি শাহ স্টোর নামে এক নতুন দোকান খুলেছে, কাচকি থেকে ইলিশ সহ প্রায় সব ধরনের বাংলাদেশী মাছ পাওয়া যায়। সেদিন প্রায় সাড়ে সাত পাউন্ড ওজনের একটা মৃগেল মাছ আনা হলো এপার্টমেন্টে। গতকাল আড্ডা উপলক্ষ্যে সেই মাছ রান্না করলাম। মাছ ভাজতে গিয়ে গরম তেল ছিটকে পড়লো বেশ কয়েকবার। মাছ রান্না করা আসলেই ব্যাপক ঝামেলার ব্যাপার।

বিকেলে ঘুম থেকে উঠে দেখি এপার্টমেন্টে প্রথমবারের মতো শুটকি রান্নার আয়োজন হচ্ছে। মিনাম ক্যালগেরি থেকে গতকাল লইট্টা শুটকি নিয়ে এসেছিল। এখানে অবশ্য শুটকি পাওয়া যায় না এখনও। আজ আর রান্নায় হাত লাগালাম না…

৪।
গতকাল থেকে ঠান্ডা অনেক কমেছে। আজ দুপুরে দেখলাম বরফ গলতে শুরু করেছে। সেই বরফের নিচ থেকে ক্লান্ত অবসন্ন কিছু ঘাস উঁকি দিচ্ছে। মনে হচ্ছে ওদের মাথা থেকে বিরাট এক বোঁঝা নেমে গেছে।

এখন প্রায় মধ্যরাত। বাইরে তাপমাত্রা মাইনাস ২/৩ হবে। জানালা অল্প খুলে দিয়েছি। রুমে একটু একটু করে ঠান্ডা ঢুকছে। ‘জাগো’ ছবির একটা গান শুনছি…

keno dure chole ge...


মন্তব্য

স্বপ্নাহত এর ছবি

মাছ জিনিসটা কেন যেন আমার একদম ভাল লাগেনা হাসি
বরফ জিনিসটা ভাল লাগে। কিন্তু ফ্রিজ ছাড়া অন্য কোথাও দেখার সৌভাগ্য হয়না।
আর সুন্দরী জিনিসটাও ভাল লাগে। আর মাঝে মাঝে দেখাও হয়। দেঁতো হাসি

দিনলিপি ভাল লাগলো।

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

বিপ্রতীপ এর ছবি

থ্যাঙ্কু...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার মামার সেন্স অভ হিউমার চরম! দেঁতো হাসি

মাছ-সুন্দরী-বরফ - সবই আমার ভাল্লাগে। যদিও ফ্রিজের বাইরে কোথাও বরফ আমারও দেখা হয়নি এখনো।

লেখা ভালো লাগলো।

বিপ্রতীপ এর ছবি

থ্যাঙ্কস...আমার এই মামার সেন্স অভ হিউমার আসলেই চ্রম... দেঁতো হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গানটা সুন্দর... শ্রাবন্তীর (নায়িকা না, গায়িকা) গাওয়া, অর্ণবের কাজ...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বিপ্রতীপ এর ছবি

আমি প্রথমে ভাবছিলাম অর্নব আর শাহানা বাজপেয়ী...পরে দেখলাম নতুন শিল্পী...গানটার কম্পোজিশন আসলেই চমৎকার হয়েছে চলুক
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বিপ্র, মে-তে এখানে আসার প্ল্যান করো। তারপরে টরন্টোর দুইটারে নিয়ে অটাওয়াতে টিউলিপ ফেস্টিভালে যাওয়া যাবে।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

আমি যদি অন্টারিওতে থাকি তাহলে আমিও আছি দেঁতো হাসি
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধূগো আসিলে বড়ই মজা হইতো।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

কিং আপনি কি এখনো নোভাস্কোশিয়াতে নাকি অটোয়াতে? দেখেন সুযোগ সুবিধামত একটা প্রোগ্রাম করলে খারাপ হয়না কিন্তু। অবশ্য নোভাস্কোশিয়া থেকে বেশ দূর হয়ে যায়। এবারের টিউলিপ ফেস্টিভাল মে ১-১৮ তারিখ। সামার সেমিস্টার শুরু হবে মে ১১ তারিখে। এর আগেই সেরে ফেলতে পারলে ভালো হয়।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

এখন অটোয়ায় আছি ... আশা করি পারা যাবে, দেখা যাক ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...

বিপ্রতীপ এর ছবি

ভাইয়া,
আমার তখন ওন্টারিওতে থাকার সম্ভাবনা প্রবল...খুব বড় ধরনের অনাকাঙ্খিত ঝামেলা না হলে আছি... দেঁতো হাসি
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ভাইরে খবরদার খান, ভুলেও কোনো সুন্দরী বালিকারে মাথায় বাড়ি দেয়াওয়ার কথা বইলেন না। ওরা সত্যি সত্যি বাড়ি দিয়া বসবে কিন্তু! ওগো দিলের জায়গায় হৃদয় নাই, আছে ইয়া বড় স্ট্যান্ডার্ড সাইজের একটা পাত্থর। মন খারাপ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রাগিব এর ছবি

মাছ আমার অত্যন্ত প্রিয়, বিশেষত মাছ ভাজা। প্রফেসর শঙ্কুর প্রতিবেশী অবিনাশবাবুর মতোই আমিও মাছ ভাজার গন্ধ পেলে নিউটনের মতো হয়ে যাই। হাসি

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

বিপ্রতীপ এর ছবি

ঐদিন মাছের একটা ফটুক তুলে রেখেছিলাম দেঁতো হাসি
auto
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

শামীম এর ছবি

মাছ দেখে ক্ষুধায় পেটটা মোচড় দিলো ... অথচ নাস্তা করার পর ১০ মিনিটও হয়নি।

লেখা ভালৈছে .... রেজিনা থেকে ভেগে যাওয়ার পরিকল্পনার শানে নযুল বুঝতে পারলাম মনে হয় ... ...
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

rifa  এর ছবি

বিপ্র,
লেখা পড়ে ভালো লাগলো । আগের ব্লগ গুলো ও পড়েছি , সুন্দর ।
চালিয়ে যাও ।

বিপ্রতীপ এর ছবি

ধন্যবাদ... হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

মাইনাস সাতচল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস...

কন্কী!
এই ঠাণ্ডার দেশে পড়ে আছি কতো বছর হলো, অথচ মাইনাস ৩০-৩৫-এর নিচে তাপমাত্রা নামতে দেখিনি কখনও। তবে উষ্ণ ঘরের ভেতরে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে তুষারপাত দেখার মজাই কিন্তু আলাদা! আর পাশে তেমন কেউ থাকলে তো কথাই নেই!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

বিপ্রতীপ এর ছবি

মাইনাস সাতচল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস কিন্তু উইন্ডচিল সহ। এম্নি উইন্ডচিল ছাড়াই এবার সর্বনিম্ন মাইনাস ৪৩/৪৪ এ নেমেছিল। আর উইন্ডচিল সহ সর্বনিম্ন মাইনাস ৫১ তে মন খারাপ

উষ্ণ ঘরের ভেতরে দাঁড়িয়ে জানালা দিয়ে তুষারপাত দেখার মজাই কিন্তু আলাদা!

প্রথম প্রথম মজা লাগতো, এখন আর ভাল্লাগেনা...বিরক্ত লাগে...

আর পাশে তেমন কেউ থাকলে তো কথাই নেই!

সবার কপাল কি আর এক হয় রে ভাই... চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

টুশকি [অতিথি] এর ছবি

এখানে দেখি মাছ হওয়া হচ্ছে। কৈ আমাকে তো কোন কিছু কখনো খেতে দিতে দেখলাম না। (রাগের দুঃখের শোকের ইমো হবে)
লেখা মজার হইসে। বরফে আমিও পড়সি কয়েকবার, সাদা বরফ হলে ঠিকাসে, কিন্তু ময়লা বরফে আছাড় খাওয়ায় মজা নাই।
আপনার মামাকে জাঝা!

বিপ্রতীপ এর ছবি

কে কয় টুশকিদিদির জন্য মাছ নাই... দেঁতো হাসি
auto

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

-৪৭ দেখেই আমি বাই-বাই দিয়ে দিলাম। মাছ রেঁধেছি আমিও সেদিন। আজ আবার রান্না বসিয়ে আসলাম। দেশি মাছ এখানেও নেই, ডিসি থেকে আনাতে হয়।

গানটা আমার খুব, খুব পছন্দের। পুরো অ্যালবামটাই, কম-বেশি। বিশেষ করে বৃষ্টির গানটা... আহা! ক'দিন আগে ড্রাইভ করে লুইভিল গিয়েছিলাম। আসা-যাওয়ার ৮০০ মাইলের অনেকটা পথ ছিল ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার পাহাড়ের তুমুল বৃষ্টিতে। বাজছিল জাগো'র এই গানগুলোই। অপূর্ব অভিজ্ঞতা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।