রেলভবনের ফাইল চুরি: শেয়ালের কাছে মোরগ বর্গা

জিজ্ঞাসু এর ছবি
লিখেছেন জিজ্ঞাসু (তারিখ: মঙ্গল, ২০/০১/২০০৯ - ৬:১০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঢাকায় সচিবালয়ের দক্ষিণ পাশের রাস্তা আব্দুল গণি রোডের অপর পাশে অবস্থিত রেলভবনের ৫৬ টি কক্ষের তালা ভেঙে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল চুরি হয়েছে। আজকের ইত্তেফাকের রিপোর্ট অনুযায়ী রেলভবন থেকে প্রায় পঞ্চাশটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও নগদ ছিয়াশি হাজার টাকা গায়েব হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে।

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) সদর দপ্তরে একই সময়ের মধ্যে চুরি হয়েছে দেড়শ ফাইল এবং দশটি রেজিস্টার ও বিপুল পরিমান দাপ্তরিক দলিল (কাগজ)।

চুরি যাওয়া দাপ্তরিক দলিলের মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে কাজের দরপত্রের ফাইল, এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ফাইল ছিল বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে কী খোয়া গেছে তা এখনও নিরূপন করা যায়নি।

অতপর রেলভবনের দায়িত্বে নিয়োজিত নিরাপত্তা রক্ষীদের সাময়িক বরখাস্ত করে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। রেলভবন তথা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অফিসে চুরির ঘটনা তদন্তে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়েরই যুগ্মসচিব এবং রেলওয়ের যুগ্মপরিচালককে প্রধান করে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বিষয়টাকে প্রথমেই যেভাবে হাল্কাভাবে নেওয়া হল তাতে চুরির ঘটনাটাই চুরি করার পায়তারা বলে মনে হচ্ছে।

শেয়ালের কাছে যদি মোরগ বর্গা দেই তাহলে মোরগ সময়মত ফেরত পাওয়া যাবে কি? বিভাগীয় তদন্ত আমাদের দেশে রুটিনওয়ার্ক। ঘটনার আলামত ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার আগেই সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি।

ঘটনা যেভাবে ঘটেছে তার প্রকৃতি দেখে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সন্দেহ করছেন এর সাথে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত। বাঙলাদেশের রেলওয়ে বিভাগ হল সব সাধু পুরুষদের আখড়া। রেলওয়ের সব ক্ষতির জন্য দায়ী হল বিনা টিকেটে রেল ভ্রমনকারি দেশের দরিদ্র জনগণ। জনগণের অত্যাচারে তাদের রেলগাড়ি সময়মত গন্তব্যে পৌঁছুতে পারে না। অনেক স্থানীয় ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের জায়গা সব জনগণ(!) দখল করে ফেলে।

সবই জনগণের দোষ। আমাদের সাধুপুরুষ কর্মকর্তারা ধোয়া তুলসীপাতা। দেশের এমন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যদি সরকারি দপ্তরে এমন শয়তানি কাণ্ড সংঘটিত হতে পারে। তাহলে আমি বলি, দেশ যেখানে ছিল আগে, সেখানটাতেই আছে। ম্যাডাম হাসিনা! আপনি সাবধান। এদেশের কর্মকর্তারা এতই এলেমদার চোর যে তারা চুরির আলামতও চুরি করে ফেলতে পারে আবার সেই চুরির ঘটনাকে চুরি করার জন্য শেয়ালের কাছেই মোরগ বর্গা দিয়েছে।

এমন চলতে থাকলে তারা ম্যাডামের প্রধানমন্ত্রীত্বও সন্তর্পনে চুরি করে নেবে।


মন্তব্য

সজারু এর ছবি

"এমন চলতে থাকলে তারা ম্যাডামের প্রধানমন্ত্রীত্বও সন্তর্পনে চুরি করে নেবে।"

ভালো বলছেন।

_________________________

সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র

_________________________

সর্বাঙ্গ কন্টকিত-বিধায় চলন বিচিত্র

BICCHU [অতিথি] এর ছবি

চোর যদি হয় শিক্ষিত তাহলে তার সাথে পারা যাবে কি করে?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সাধুসন্ন্যাসী রেল আর যোগাযোগ কর্মকত্তাদের বিরুদ্ধে চুরির অপবাদের দিক্কার জানাই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

রণদীপম বসু এর ছবি

আলামত সুবিধা মনে হচ্ছে না...!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তানবীরা এর ছবি

মাঝে মাঝে রদ্দি হিন্দী ফ্লিমকেও এসব ঘটনা হার মানায়। অবিশ্বাস্য।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

দুর্দান্ত এর ছবি

"রেলভবন থেকে প্রায় পঞ্চাশটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও নগদ ছিয়াশি হাজার টাকা গায়েব হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে।"

রেল ভবনের যে কক্ষটি থেকে ল্যাপটপ ও টাকা চুরি গেছে, তা প্রাইস-ওয়াটারহাউজ-কুপার (PWC)নাম্নী কম্পানীর কন্সাল্ট্যান্টদের ব্যাবাহারের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। খোয়া যাওয়া ল্যাপটপ আর টাকা দুটোই PWCএর।

বিশ্বব্যাপী PWC একাউন্টিং/অডিটের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও, ভারতীয় PWC এই অংশটি ম্যানাজমেন্ট কন্সাল্টেন্সি করে থাকে, বিশেষ করে সরকরযন্ত্রের আধুনিকায়ন ও যন্ত্রায়ন। গত অক্টোবর মাসে ADB, WB ইত্যাদির ঋনের টাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের আধুনিকায়ন ও যান্ত্রায়ন প্রকল্পের প্রথম ধাপ হিসাবে সারাদেশে মাঠপর্যায়ে ওয়ার্কশপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ভারত থেকে আগত PWCএর ওই দলটি। ৪৪ মাসের একটি বেশ সুদুরপ্রসারী ও ডিটেইল প্রকল্প ছিল এটি।

ঘটনা গভীরও হতে পারে, আবার সোজাসাপ্টা চুরিও হতে পারে। কিন্তু এতে করে রেলের আধুনিকায়ন যে অনেকটা পিছিয়ে গেল, তাতে সন্দেহ নেই।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।