এভিয়ান ফ্লুর মতই সুয়াইন ফ্লুর উৎপাত শুরু

জিজ্ঞাসু এর ছবি
লিখেছেন জিজ্ঞাসু (তারিখ: শনি, ২৫/০৪/২০০৯ - ১০:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মেক্সিকোয় গত দু'মাসে ইনফ্লুয়েঞ্জায় এক হাজার লোক আক্রান্ত হয়ে ৬৮ ব্যক্তির মৃত্যুর প্রেক্ষিতে নতুন এক ফ্লু ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে যা ইতিপূর্বে বিজ্ঞানীরা দেখেননি। এর পরিচয় হল সুয়াইন ফ্লু (শূকর বাহিত ইনফ্লুয়েঞ্জা) ভাইরাস। যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়ায় এ পর্যন্ত আট ব্যক্তির আক্রান্ত হবার খবর মিলেছে যারা আবার সুস্থ হয়ে গেছে। এর ফলে সাধারণ জ্বর, গলাব্যথা, কাশি এবং কারো কারো বমি ও ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা গেছে।

একটি ভিন্ন ধরনের ভাইরাস যা পাখি, শূকর ও মানুষের দেহে সংক্রমিত হয়ে বিভিন্ন হোস্ট থেকে যৌগিক জেনেটিক উপাদানে সমৃদ্ধ এক ধরনের হাইব্রিড ভাইরাসে রূপান্তরিত হয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা। মানুষের দেহে প্রাকৃতিকভাবে এই নতুন যৌগিক জেনেটিক রেফারেন্স সমৃদ্ধ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার মত এন্টিবডি না থাকায় তা দ্রুত সংক্রমিত হতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বজুড়ে মহামারীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে রাজধানী মেক্সিকো সিটির সবধরনের জনসাধারণের চলাচল সীমিত করতে গতকাল শুক্রবারে স্কুল, শপিং মল, সিনেমা, থিয়েটার ইত্যাদি বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। শেষবার ১৯৮৫ সালে ভূমিকম্পে সেখানে হাজার হাজার লোকের মৃত্যু হলে এ ধরণের পাবলিক প্লেস বন্ধ ঘোষিত হয়েছিল। মৃত ৬৮ জনের মধ্যে ২০ জনের মৃত্যু নতুন সুয়াইন ফ্লু ভাইরাসের আক্রমণে হয়েছে বলে সরকার নিশ্চিত হতে পেরেছে। তার মধ্যে ১৩ জন মারা গেছে মেক্সিকো সিটিতে। অন্য মৃত ৪৮ জনের মৃত্যুর কারণও সুয়াইন ফ্লু বলে ধারনা করা হচ্ছে। বিশ্বের অন্যতম কর্মচঞ্চল এ নগরীতে এ ভাইরাসের আক্রমণ বিশ্বজুড়ে মহামারীর আশঙ্কাকে আরও যৌক্তিক করে তুলেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র টমাস আব্রাহাম বলেছেন, ভাইরাসটি নতুন এবং তা মানুষের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে সক্ষম। তারা এ ব্যপারে ভীষণ উদ্বিগ্ন এবং মহামারী অ্যালার্ট জারী করবে কিনা তা খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের একজন খ্যতিমান ফ্লু মহামারী বিশেষজ্ঞ বলেছেন প্রথমেই এতলোকের মৃত্যুর মাধ্যমে যেহেতু বিষয়টা প্রকাশ পেয়েছে তাতে মনে হচ্ছে মহামারী ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তার মতে ফ্লু খুব দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ইতিমধ্যে সম্ভবত এই ভাইরাস বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বাসা বেঁধে ফেলেছে।
মেক্সিকো সিটিতে প্রতিদিন হাজার হাজার লোক যাতায়াত করে এবং এরইমধ্যে সম্ভবত মানুষের অজান্তেই তা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রচলিত ফ্লু ভ্যাকসিন নতুন এই সুয়াইন ফ্লু ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর না। আমেরিকার রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিচালক বলেছেন তারা এই ভাইরাসের সাথে জেনেটিক্যালি মিল রয়েছে এমন একটি ভাইরাসের সিডস্টক উৎপাদন করেছে যাতে ভ্যাকসিন উৎপাদনে তা কাজে লাগানো যায়।

মেক্সিকোর সরকার জনগণকে পারতপক্ষে হাসপাতাল এড়িয়ে চলতে বলেছে যেহেতু হাসপাতাল থেকে সুয়াইন ফ্লু ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। এমনকি একে অপরকে করমর্দন বা আলিঙ্গনের মত সম্ভাষণগুলো আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছে।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন ফ্লু বিশেষজ্ঞ বলেছেন আমাদের সতর্ক হতে হবে, তবে ভীত হলে চলবে না। কারণ সুয়াইন ফ্লু আগেও দেখা গেছে তবে এখনকার ভাইরাসটা একটু ভিন্নতর। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে tamiflu এবং relenza নামক দু'টো ওষুধ এই নতুন ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর। এ ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি 'রোশ' বলেছে তারা প্রয়োজনে অধিক পরিমানে এই ওষুধের উৎপাদন বাড়াতে তৈরি আছে। আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক দিকে এ ওষুধগুলোর প্রয়োগ বেশি কার্যকর।

কেউ অসুস্থ হলে ছুটি নিয়ে বাসায় থাকতে অনুরোধ করেছে মেক্সিকোর সরকার যাতে কোনভাবে সংক্রমণ ঠেকানো যায়। সাবওয়ে ও বাসে সরকার বিনামূল্যে মুখোশ সরবরাহ করছে। লাইব্রেরি, মিউজিয়াম এবং সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এর আগে বেইজিংয়ে ২০০৩ সালে এভিয়ান ফ্লু ভাইরাস বা সার্সের (SARS) আক্রমণের মুখে স্কুল, কলেজ, সিনেমা, থিয়েটার বন্ধ ঘোষিত হয়।

সুয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীতে ১৯১৮-১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি সহ বিশ্বজুড়ে প্রায় চার কোটি মানুষ মারা যায়। ১৯৫৭ এবং ১৯৬৮ সালেও ছোট আকারে ফ্লু মহামারী দেখা দেয়।

তথ্যসূত্র ১
তথ্যসূত্র ২

আপডেটঃ
ইতিমধ্যে মেক্সিকোর জনগণকে ভীতি পেয়ে বসেছে। সাধারণ জ্বর হলেও তারা ভয়ে হাসপাতালে দৌড় লাগাচ্ছে। এজন্য হাসপাতালে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ভীড় হচ্ছে। বাস, সাবওয়েতে স্বাস্থ্যকর্মীরা কাউকে অসুস্থ দেখলে তাকে সরিয়ে নিচ্ছে। জনগণের মধ্যে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, উত্তেজনা এবং ভীতি সঞ্চারিত হচ্ছে। এটাই মহামারীর সবচেয়ে বড় সমস্যা। জনগণকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, ভীত হলেই বিপদ।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

প্রকৃতিকে একদিকে জয় করছে মানুষ আর অপরদিকে নিত্যনতুন রোগবালাই শুরু হচ্ছে। আশা করতে চাই এটি সার্স-এর মত ভয়াবহ রূপ নেবেনা।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

আমাদের মত দরিদ্র দেশে একবার সংক্রমিত হলে তা দ্রুত ব্যাপক আকার ধারণ করবে বলে সরকারকে এখনই ভ্রমণ, পর্যটন, ট্যুরিস্ট বিষয়ক ব্যাপারগুলোতে নজরদারির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দোয়া করি দেশে যেন কিছুতেই এটা না যায়। সরকার ও জনগন এমনিতেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর উপর নতুন উৎপাত হলে খুবই খারাপ অব্স্থা হবে।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

দেশে যে পিরানহা চাষ হয় তা নাকি বাজারে রূপচাঁদা বলে বিক্রি হয়। অথচ এ জাতীয় শিকারী মাছ চাষ বন্ধে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কখনও ভেবেও দেখেনা কে কখন, কী উদ্দেশ্যে পিরানহা আমাদের দেশে ছড়িয়েছে - তাদের খোঁজ করা দরকার। ভুলক্রমেও যদি কেউ এমন কাজ করে তাহলে দেশের এতবড় মৎসভবনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কোন আলামত আমরা দেখি না। এটা খুবই দুঃখজনক। পৃথিবীতে নানা গোত্রের পিরানহা আছে। দেশে যেটা চাষ হচ্ছে তা নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করে এর ক্ষতিকর দিকগুলো জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। বাঙলাদেশে মাছের অভাব হয়েছে যে পিরানহা চাষ করে খেতে হবে? পিরানহা, রাক্ষুসে মাগুর, আর ক্রসব্রিড পাঙ্গাস (ক্যাটফিশ) চাষ করা কতটা যৌক্তিক!!
দেশে কৃষি অফিসার বলেন, ফিসারিজ এক্সটেনশন অফিসার বলেন, তারা কোন কাজ করে বলে মনে হয় না। আমি লোক পাঠালাম কৃষি অফিসে ইপিলইপিল গাছের বীজ কীভাবে সংগ্রহ করব জানতে, কৃষি অফিসার কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। কৃষকের প্রয়োজনে তারা কোন কাজে আসে বলে মনে হয় না। অফিসারের রুদ্রমূর্তি ধারন করে বসে থাকে, কৃষক সাহসই পায়না কাছে ভীড়তে। আর ট্রেনিং এর নামে সরকারের পয়সায় পর্যটন করাই হয়তো তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

ফ্লু নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উচিত আগেভাগে সতর্কতা অবলম্বন করা।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।