Warning: Creating default object from empty value in theme_img_assist_inline() (line 1488 of /var/www/sachalayatan/s6/sites/all/modules/img_assist/img_assist.module).

ভূত ও ভাবী - বোধের ভারে ভারি হয়ে ওঠে নিঃশ্বাস

জিজ্ঞাসু এর ছবি
লিখেছেন জিজ্ঞাসু (তারিখ: মঙ্গল, ২১/০৪/২০০৯ - ৯:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

'তুমি কি কখনও রেপড্ হয়েছ?' এক আমেরিকানকে (ব্রিটিশ- আইরিশ এনসেস্ট্রি) জিজ্ঞেস করলাম। সে প্রথমে স্মিত হেসে বলল 'না'। আমি বললাম তাহলে কখনও উৎপীড়িত বা নিপীড়িত, বা থ্রেটেনড্ হয়েছ কি? সে বলল 'হ্যাঁ'। কী ধরনের? বলল- 'স্কুলে আমি আমার বন্ধুদের দ্বারা উৎপীড়িত এবং bullied বা hazed হয়েছি'। এর অনুভূতি বলতে গিয়ে সে বলল, এটা মোটেও সুখকর নয়। এ ধরনের ঘটনা নিজেকে অনেক ভীত ও দুর্বল করে ফেলে। স্কুলে যাওয়ার সময় হলে তার ভয় হত যে তার সহপাঠীরা বা সিনিয়ররা তাকে আবার চটাবে, বিরক্ত করবে বা বলপ্রয়োগে হাস্যকর কিছু করতে বাধ্য করবে। তার মতে 'এধরনের পরিস্থিতির শিকার হলে ফলত তুমি হয়ে উঠবে একটা অথর্ব মানুষ, ‌(You will turn to be an a~hole, if you cannot pass it) যদি তুমি বিষয়টা উতড়ে যেতে না পার।' এখন অবশ্য আমেরিকায় স্কুলগুলোতে এ ধরনের অ্যাবিউজের ঘটনা ঘটলে তা রিপোর্ট করার নিয়ম রয়েছে। রিপোর্ট করার সুনির্দিষ্ট ফরম পাওয়া যায় স্কুল এবং শিক্ষাবোর্ডের অফিসে।

মানসিকভাবে এধরনের অ্যাবিউজের শিকার হলে তা অনেককে সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়। অন্যদের উপর অনাস্থা তৈরি হয় বেশি। এবং সামাজিক মিথষ্ক্রিয়ায় এধরনের লোকেরা তখন খুব বেশি অংশগ্রহন করে না। ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অনেকে জীবনের তরে অকর্মন্য হয়ে পড়তে পারে, এমনকি তাদের মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু করার বা অস্বাভাবিক কোন প্রবণতাও তৈরি হতে পারে ধীরে ধীরে। প্রায়ই পত্রিকায় আমরা খবর পাই স্কুলে শুটআউটের ঘটনায় কোন স্টুডেন্টের নির্বিচার গুলি চালানোর খবর। এগুলো নানা ঘটনায় মানসিক বৈকল্যে ভোগাদের দ্বারা সংঘটিত হয়। তারা নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখে এবং হঠাৎ ভেঙে পড়ে। সহপাঠী বা বন্ধুদের দ্বারা ইনটিমিডেটেড হওয়া ছাড়াও অনেক সময় পড়া না পারলে শিক্ষকের দ্বারা তিরস্কৃত হয়েও অনেকে আত্মবিশ্বাস হারাতে পারে।

সামাজিক বন্ধনের যে সুতাটা সমাজে কাজ করে তা হল বিশ্বাস, নিরাপত্তা ও পারস্পরিক সৌহার্দ্যের সুতা। ভয়ভীতি, পীড়ন ও ধর্ষণের মত ঘটনা ভিকটিমকে এসব কিছুর বাইরে সরিয়ে দেয়। ভিকটিমের মধ্যে সামাজিক বিশ্বাস, নিরাপত্তাবোধ এবং স্বাভাবিক সৌহার্দ্যবোধ হারানোর প্রবণতা দেখা দেয়। আত্মবিশ্বাসে ভাটা পড়ে। 'ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘকে ভয় পায়।' ফলে তারা অনেক নির্দোষ বিষয়কেও থ্রেট মনে করে। এজন্য তাদের আচরণে অস্বাভাবিকতা প্রকাশ পায়। জীবনের উদ্দীপনা, উৎসাহ, morale হারাতে বসে এবং অনেকে হারায়। তখন তাদেরকে সমাজে অস্বাভাবিক মনে হয়। তারা আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের সাথে আর ভালভাবে মিশতে পারে না। সন্দেহের বীজ মনে রোপিত হয় যা থেকে প্যারানয়ার জন্ম এবং ফলত একধরনের মানসিক বৈকল্যগ্রস্ত (প্যারানয়েড) হয়ে পড়ে ভিকটিমের জীবন। যে কোন ধরনের সহিংসতা, সন্ত্রাস মানুষের মনে এসব বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

চাইল্ড অ্যাবিউজ এ ধরনের সমস্যার জন্ম দিতে পারে। সাধারণত শিশুরা তাদের নিকটাত্মীয়ের দ্বারা শারিরীক বা মানসিকভাবে অ্যাবিউজড্ হয়ে থাকে। শিশুদের ধমক-ধামক, সব কথায় বাধা দেয়া, সব কাজে বাধা দেয়া, মারধর করা ইত্যাদি মানসিক অ্যাবিউজের অন্তর্গত। শারিরীকভাবে শিশুরা মারধর ছাড়াও সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের শিকার হতে পারে। কোন সেক্সুয়াল প্রিডেটরদের পাশাপাশি এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে আপাতদৃষ্টে নির্দোষ সঙ্গ যেমন - শিক্ষক, নিকটাত্মীয় এবং পাড়া-প্রতিবেশীর দ্বারা, এমনকি চাইল্ড অ্যাবিউজের শিকার অন্য কোন শিশুর দ্বারাও তা হতে পারে।

তেমনি কেউ যখন চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির শিকার হয় তাতেও এ ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে জীবনে। আমি নিজে কখনও রেপড্ হইনি, কিন্তু তেমন অনুভূতি বা অনুভব হয়েছে অন্য অনেক কারণে। আপনি যদি কখনও প্রতারিত হন বা অনভিপ্রেত পুলিশি হয়রানির শিকার হন, বা ছিনতাইয়ে আক্রান্ত হন তাও অনুরূপ চাপ সৃষ্টি করতে পারে মনের উপর। একবার হল কি, এক দোকানে কাজ করি - স্টোরক্লার্ক হিসেবে। সে দোকানের ডিলার আবার বাঙলাদেশি। তিনি গত দু'বছর ধরে যে ব্যবসা করেন তার কর ঠিকমত পরিশোধ করেন না। কর বিভাগ তার এহেন ডেলিংকোয়েন্সির ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে কোর্ট থেকে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে পুলিশ পাঠিয়েছে সকল হিসাবনিকাশের কাগজপত্র জব্দ করার নিমিত্তে। ভাল কথা, সেদিন কপালগুণে আমিই শুধু একা ছিলাম স্টোরে। অকস্মাৎ দুজন স্টেট পুলিশ (বিশাল জোয়ান তাগড়া সাইজের) গান পয়েন্টে আমাকে বলল হাত উপরে করে বেরিয়ে আস। এটুকুই যথেষ্ট; আমার সারাদিন সেদিন খিদেই পেল না। তারপর তারা অবশ্য সার্চ ওয়ারেন্ট দেখাল এবং বলল কাগজপত্র সীজ করতে এসেছে। কিন্তু আমার তো প্রথমে মনে হয়েছিল ওয়েপনস্ অব ম্যাস ডেসট্রাকশন উদ্ধার করতে এসেছে। তা না হলে প্রথমেই এমন ইনটিমিডেশন কেন? আরও ভয় পেয়েছিলাম ওরা বার বার আমাকে জিজ্ঞেস করছিল আমার কাছে বন্দুক (গান) আছে কি না। সে জিনিস আমি চোখে দেখলেও কোনদিন ছুঁয়ে দেখিনি। সেদিন আমার রেপড্ হওয়া থেকে শুরু করে যত ধরনের অপমান হওয়ার অনুভূতি আছে হয়েছিল। প্রথম দিন সারাদিন আমার খিদে পায়নি। দ্বিতীয় দিন সেই স্টোরের সুপারভাইজারের সাথে কথা বলে মনটা একটু হাল্কা হল। তবে মনে যে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল তা আর বলতে! কথা হল আমি পূর্ণবয়স্ক একজন হয়েও যে ভীতি সঞ্চারিত হয়েছিল মনে, তার জন্য দু'তিন দিন ভোগতে হয়েছিল। যেহেতু ব্যাপারটা অনভিপ্রেত এবং আকস্মিক ঘটেছিল। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়েছিলাম। এবং শেষ পর্যন্ত স্টোরের সে কাজ ছেড়েছি।

আমাদের দেশে এবং বিশ্ব জুড়েই এ ধরনের হিউমিলিয়েশনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। সব ধরনের ঘটনার প্রভাব এক নয়। ধর্ষিত হওয়া এবং অন্যান্য নিপীড়নের ঘটনাগুলো এক নয়। প্রভাবও এক নয়। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি; সেদিন পিলখানায় যে হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল তা কিছু লোক প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা অনেকে দূর থেকে অবলোকন করেছি, বোঝার চেষ্টা করেছি। নানা মন্তব্য করেছি। কিন্তু সব কি অনুধাবন করা গেছে? এখনও সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে যা কিছু ঘটছে তা আমাদের মগজের অজান্তে ঘটে চলেছে। কিছুদিন আগে বাঙলাদেশের একজন বিদগ্ধ রাজনীতিবিদ সংসদে যেভাবে কাঁদলেন- তার গোয়েন্দা সংস্থার দ্বারা হেনস্তা হওয়ার কথা বলতে গিয়ে তাতে কি কিছু বোঝা গেল যে ভয়ভীতি, হিউমিলিয়েশান এবং ইনটিমিডেশন মানুষের মনের উপর কেমন চাপ তৈরি করে! ব্যাপারটা অনেক ভয়ঙ্কর। আজই ইন্টারনেটে একটা খবরে পড়লাম যে যুক্তরাষ্ট্রে এক স্টুডেন্টকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ড্রাগ আছে সন্দেহে নার্স দ্বারা কাপড় খুলে তাকে সার্চ করার অপমানজনক পরিস্থিতির কথা সে ছয় বছর পরও ভুলতে পারছে না। এ নিয়ে আজ আদালতে শোনানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পিলখানায় যে বিদ্রোহ হল তা একাধিক জঘন্য ঘটনার জন্ম দিয়েছে। একেতো দেশের সামরিক বাহিনীর অর্ধশতাধিক অফিসারকে অনেক বেশি নৃশংসতার আশ্রয় নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার উপর হয়েছে লুটপাট, সংঘটিত হয়েছে ধর্ষণের মত জঘন্য ঘটনা, তারপর ভয়ভীতি, উৎপীড়ন, নিপীড়ন, ইনটিমিডেশান, বুলিয়িং ইত্যাদি অপমানজনক, অসম্মানজনক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে; যেমন হয়েছে প্রাপ্তবয়স্কদের সাথে তেমনি শিশুদের সাথেও, কিংবা শিশুরা তা অবলোকন করেছে। প্রাপ্তবয়স্করা কেউ কেউ এর প্রভাব হজম করতে পারলেও শিশুরা আপাতদৃষ্টে পারবে না। কেউ কেউ হয়ত সময়ের আবর্তে উতড়ে যাবে বিষয়টা, তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম হওয়ার কথা। বেশিরভাগ শিশুরাই সারাজীবন বয়ে বেড়াবে মনের উপর এ ধরনের চাপ। সমস্যাটা শুরু হওয়ার অনেক পরে এই লেখাটা লিখছি বলে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। কিন্তু সময়ের অভাবে সবকাজ সময়মত করা যাচ্ছে না।

যে উদ্দেশ্যে এসব বর্ণনা করা তা হল এসব শিশুদের সাবইকে (প্রত্যেককে) সনাক্ত করে সরকারি উদ্যোগে (বা বেসরকারি উদ্যোগেও হতে পারে) তাদেরকে সঠিক কাউন্সেলিং দেওয়া। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমরা প্রতিনিয়ত ইগনোর করে আসছি। সেজন্য সমাজেও মানসিক বৈকল্যগ্রস্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাতে সর্বিকভাবে আমাদের জনগণের কর্মদক্ষতা হ্রাস পাচ্ছে, মেধার বিকাশ বিঘ্নিত হচ্ছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এ ধরনের ঘটনার শিকার শিশু বা পূর্ণবয়স্করা তা কাউকে প্রকাশ করতে চায় না। মনের মধ্যে চেপে রেখেই প্রথম সর্বনাশের পথটা পরিস্কার হয়। এ ধরনের ঘটনায় প্রথমেই যে কাজটা করা উচিত ঘটনা অন্যকে প্রকাশ করা উচিত। তারা বিশ্বস্ত কেউ যেমন - বাবা-মা হতে পারে, ঘনিষ্ট বন্ধু হতে পারে, বড় ভাইবোন হতে পারে, বা বিশ্বস্ত আত্মীয়স্বজনদের কেউ হতে পারে বা কাউন্সেলর হতে পারে। দ্বিতীয়ত, যে কাজটি তাদের জন্য উপকারি তা হল তাদেরকে একা থাকতে না দেয়া। কারণ এ ধরণের ভয়ভীতি ও জঘন্য ঘটনার শিকার হলে প্রথমেই মানুষের আত্মবিশ্বাসে আঘাত আসে। আত্মবিশ্বাস দুর্বল হয়ে পড়ে এবং আত্মহত্যার মত ভুল ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তৃতীয়ত, যে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে তা হল ব্যক্তিগত বা গ্রুপ কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে তাদেরকে সম্পূর্ণ দুর্ঘটনাটাকে উতড়ে যেতে এবং নিজেদের মধ্যে কনফিডেন্স বিল্ডআপের প্রয়াস চালাতে হবে।

পিলখানার ঘটনায় ইনটিমিডেশানের ভুক্তভোগীদের উপর বিশেষ আলোকপাত করলেও এ ধরনের কাউন্সেলিং সবধরনের ভিকটিমের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তাহলে সমাজের সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে। সম্ভাবনাময় মেধাবীরা আমাদের অজান্তে হারিয়ে যাবে না।

বিঃদ্রঃ এ লেখায় শিশু বলতে ১৮ বছরের কম বয়সী বোঝানো হয়েছে।


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

দেশে থাকতে আমি অনেক উজ্জ্বল বুদ্ধিদীপ্ত লোককে স্কুল-কলেজের ragging সমর্থন করতে দেখেছি। নবাগতদের স্মার্ট করে তোলার এই পদ্ধতি কার্যকর কতোটা, এই নিয়ে তাদের জ্ঞান গজালো কোত্থেকে, এই সব প্রশ্ন তোলার আগে আমি একটাই কথা জিজ্ঞেস করি তাদের মুখের উপর, এই মহান দায়িত্ব তোমা-হেন পুঙ্গির পুতকে দিলো কে? উত্তর মেলে না, বলাই বাহুল্য। আমি নিজে মাস্টার্স করেছি ভারতের এক প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেখানে ragging সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সেশন শুরুর পর প্রথম কয়েক মাস কোনো সিনিয়রকে যদি কোনো নবাগতের সাথে রাস্তাতেও দেখা যায় কথা বলতে তো দুজনেরই শুনানি হবে, শাস্তি হওয়াও আশ্চর্য নয়। দেখে প্রচন্ড আনন্দ হয়েছিলো, যদিও আমাদের সিনিয়ররা (এবং পরের বছর আমার মহান কিছু সহপাঠিও) এই নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলো, তাদের বক্তব্য ছিলো, দেখি আমাদের নোটস ছাড়া এরা চালায় কী করে। ওদের নোটস ছাড়া দিব্যি চলেছে, কিন্তু যেটা আসল মনোভাব সেটা বেরিয়ে এসেছে এই উক্তি থেকে, তোমরা আমাদের অত্যাচার করতে দাও, আমরা বিনিময়ে নোটস দেব! অসাধারণ ! সুখের কথা এই দেশের বিদ্যাস্থানে সেই বজ্জাতি দেখতে হয় নি। সরোরিটি হাউসে হয় জানি, কিন্তু সে বস্তু দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য হয় নি আমার।

লেখাটি ভালো লাগলো, দরকারি বিষয়ও। তবে একটা কথা বলতেই হয়, "সেক্সুয়াল অ্যাবিউজের শিকার" খোঁজে যে সব "প্রিডেটর" তারা "হোমোসেক্সুয়াল, লেসবিয়ান" হবে কেন? সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন দিয়ে মানসিক বিকৃতি বা বজ্জাতির মাত্রা নির্ণীত হয় কি? এই তথ্যটি তো এমনকি স্টাটিস্টিক্যালিও সঠিক নয়, এবং নিশ্চিতভাবেই প্রোফাইলিং বা ডিসক্রিমিনেশনের পর্যায়ে পড়ে।

আনিস মাহমুদ এর ছবি

ভাল বিষয়, সুন্দর করে লেখা। গভীর চিন্তার বিষয় আছে। কিন্তু যারা চিন্তা করলে কিছু হবে, তাদের যে চিন্তা করারই ক্ষমতা নেই।

.......................................................................................
Simply joking around...

.......................................................................................
Simply joking around...

জিজ্ঞাসু এর ছবি

ধন্যবাদ।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

স্নিগ্ধা এর ছবি

জিজ্ঞাসু, পিলখানা ঘটনায় জড়িত বাচ্চাদের বা বলা ভালো সাধারণভাবে এবিউজ নিয়ে আপনার উদ্বেগ ভালো লাগলো। শুধু লেখার কয়েকটা জায়গা উল্লেখ করছি - ঠিক নিশ্চিত নই এটা লেখার ভঙ্গির বা প্রকাশভঙ্গির কারণে এরকম শোনাচ্ছে নাকি আসলেই আপনার মতই এটা -

শিশুদের ধমক-ধামক, কোন কথা বলতে বাধা দেয়া, কোন কাজে বাধা দেয়া, মারধর করা ইত্যাদি মানসিক অ্যাবিউজের অন্তর্গত।

এই অংশটুকু পড়লে মনে হবে বাচ্চাদের ধমক টমক দেয়া বা কোন কাজে বাধা দেয়া মানেই চাইল্ড এবিউজ, তা তো নয় আসলে! এগুলো মানসিক এবিউজের 'অন্তর্গত' ঠিকই, কিন্তু এগুলোর ক্ষেত্রে একটা সীমা অতিক্রম করলে তবেই তা এবিউজ হিসেবে ধরা হয়।

কোন হোমোসেক্সুয়াল, লেসবিয়ান প্রিডেটরদের পাশাপাশি এ ধরণের ঘটনা ঘটতে পারে শিক্ষক, নিকটাত্মীয় এবং পাড়া-প্রতিবেশীর দ্বারা।

এটা পড়লে মনে হচ্ছে যেন প্রধানত সমকামীরাই পেডোফাইল হয়, মোটেই তো তা নয়! বরং উল্টোটাই!

আমাদের দেশে সমস্যা কোথায় জানেন? শুনতে হয়তো খুব খারাপ শোনাবে, এবং আমার সাথে হয়তো বেশীরভাগই দ্বিমত পোষণ করবেন - তারপরও বলছি - আমরা খুব 'ইনসেনসিটিভ'! পিলখানা হত্যাকান্ডে আমার চেনা কিছু মানুষ মারা গেছেন, এবং তাদের মৃত্যু নিয়ে, ঘটনার খুঁটিনাটি বর্ণনা নিয়ে যেভাবে তাদেরই কাছের লোকজনরা কথা বলেন তাতে রীতিমতো বিবমিষা জাগে!

আমরা এতোটাই অগভীর, যে এমনকি মৃত্যুকেও একটু সম্মান করতে জানি না?

আর তাদের ছেলেমেয়েরা? হায় রে ...! সাধ্য থাকলে ওইদেশ থেকে, ওই পরিবেশ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসতাম ......

আমার একটি সাত বছরের মেয়ে আছে। আমি মানুষটা খুবই দুর্বিনীত, অ-স্নিগ্ধ ধরনের বলে আমার মেয়েটা রক্ষা পেয়েছে (এখন পর্যন্ত), নাহলে আহা-উহু শুনতে শুনতে ওর মাথাটা যেতো!

অতিরিক্ত সমবেদনাও কিন্তু একধরনের এবিউজ হতে পারে!

কাউন্সেলিং যেমন জরুরী, সহমর্মিতা যেমন প্রয়োজনীয়, যাদের কাউন্সেলিং করা হচ্ছে সারাক্ষণ তাদের 'অন্যরকম' ভাবে ট্রিট না করাটা আমার মতে সমান জরুরী। আপনি যে লুকোছাপা না করে এসব ব্যাপার নিয়ে সচেতন এবং সোচ্চার হতে বলেছেন, সেটা খুবই ভালো লাগলো।

মূলত পাঠক এর ছবি

সহমত, খুব ভালো লিখেছেন স্নিগ্ধা । আমরা পরিবেশগত বা অন্য যে কোনো কারণেই হোক, কম সেনসিটিভ। এখনো কতো শিক্ষিত মানুষজনকে দেখবেন অপমানসূচক বা জাতিবিদ্বেষী শব্দ ব্যবহার করতে, অথচ তাঁরা যে লোক খারাপ তা কিন্তু নয়। ভারতে এখনো মেড়ো (মারওয়ারি-অর্থে), খোট্টা (হিন্দিভাষী বা কোনো ক্ষেত্রে বিহারীদের), উড়ে (ওড়িয়া না বলে এটা বললে কটা সিলেবলের পরিশ্রম বাঁচে?), ইত্যাদি বলা হয়। আবার আমাদের বং বললে আমরা রেগে যাই, যদিও এটা আমার মতে ততো কিছু ডেরোগেটারি কথা নয়, অনেকটা গুজ্জু পাঞ্জু বলার মতো। বিদেশেও আমাদের নিজস্ব শব্দ সৃষ্টি হয় অন্য রঙ-গোত্র ইত্যাদির মানুষদের জন্য। ইনসেনসিটিভিটির আরেক দিক আমাদের অন্ত্যেষ্টিকর্মে তারস্বরে চীৎকার ইত্যাদি। ত্রুটি বিচ্যুতি সব সমাজেই থাকে, কিন্তু সেগুলো সারানোর ইচ্ছার অভাবটা খুব আশঙ্কাজনক।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

স্নিগ্ধা ও পাঠকের বক্তব্যের সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করছি না। বাক্যের গঠনের কারণেই মূলত একটু ভাবের তারতম্য হয়েছে। এখানে একটু সম্পাদনার চেষ্টা করছি। ধন্যবাদ সবাইকে মন্তব্যের জন্য।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- জাতিসংঘের নিয়ম অনুসারে ১৮ বছরের নিচে সকল মনুষ্য সন্তানকেই শিশু বুঝানো হয়, যাইহোক।

লেখাটাকে ওখ*চ কথায় আনিস ভাই সুন্দর করে ব্যক্ত করে গেছেন। তাঁর সঙ্গে সহমত জানিয়েই বলি, এটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি লেখা। চলুক
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ক'দিন আগে বিবিসি বাংলায় শুনছিলাম পশ্চিম বাংলায় কলেজে র‌্যাগিং'এর মাত্রা এত বেড়ে গেছে রাজ্যসরকার এর জন্য আইন প্রণয়ন করার কথা ভাবছে...

তুলিরেখা এর ছবি

এখানে আসার আগে আরেক বাঙালি কমুনিটিতে ছিলাম কিছুদিন, প্রধানত তথ্যপ্রযুক্তির লোকজনে ভরা সে জায়গা। মানীধনীজ্ঞানী সব! আমার শুধু দেখে অবাক লাগতো সুস্থসবল শিক্ষিত(তথাকথিত) সব লোকজন কি অনায়াসে ragging সমর্থন ই শুধু করতো না, পক্ষ নিয়ে গলা ফুলিয়ে তর্ক করতো! নাকি খুবই ভালো জিনিস, স্মার্ট করতে নাকি দরকার। নানারকম যৌন গালাগাল, মদখাওয়া ও মাতাল হয়ে নানাবিধ ঝামেলা করা, কাউকে জোর করে মদ খাইয়ে দেওয়া ও বাকসে আটকে রাখা নাকি মানুষের পরিণত মনের পরিচয়! সবচেয়ে বিশ্রি যেটা লাগতো সেটা হলো যারা এর বিপক্ষে তারা কিছু বলতো না পাছে দলের বাইরে পড়ে যায়!
আসলে আমাদের সমাজে ছোটো থেকেই মানুষে দেখতে থাকে শক্তিমানের পাচাটা আর দুর্বলের উপরে অত্যাচারের কালচার! প্রতিবাদের কোনো গল্প নেই ওভার-অল(অলপ যা হয়, তা ব্যতিক্রম )। সবচেয়ে ভয়ের হলো সামাজিকভাবে চলে আসছে তো আসছেই, একে নির্মূল করার দরকারটাও কেউ দেখে না।
ইসকুলে বাচ্চাদের মারা সভ্য দেশে বে-আইনি, আমাদের উপমহাদেশে দেখুন, যারা ভুক্তভোগী তারাই বলে আহা ঐভাবেই (শ্রদ্ধেয়!)শিক্ষকেরা স্নেহ ঢেলে দিয়েছেন! আরে স্নেহ ভালো কথা, কিন্তু না মেরে শেখানো তার চেয়েও ভালো! কড়া আইন হলে কবে এসব মুছে যেতো! স্নেহ দেখাতে গিয়ে তখন জেলে যেতে রাজী হত কে?
মুশকিল হলো কোনো মানদন্ডই আমরা ঠিক করতে পারিনি, না পশ্চিমা না পুবী! মাঝখান থেকে তৈরী হচ্ছে বিকৃতি!

-----------------------------------------------
কোন দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তীরন্দাজ এর ছবি

যে যেভাবে চলতে চায়, তাতে করো কোন ক্ষতি না হলেও তাকে সেভাবে চলতে দিতে চাইনা আমরা। উদাহরণ: আমাদের সমাজে একটি মেয়ে যে কোন কারণেই হোক না কেনো, বিয়ে না করলে, তাকে নিয়ে নানা ধরণের কুকথা ছড়িয়ে আনন্দ পাই। আমাদের সমাজে প্রতিটি মেয়েকেই কোন না কোন ভাবে "এবিউজ" করা হয়। দূর্বলের ঘাড়ে চেপে বসতে আমরা আরাম পাই সবচেয়ে বেশী। এসব কথা বলে শেষ করা যাবে না।

আপনাকে ধন্যবাদ, সচেতনতার ডাকের জন্যে।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।