রাতের গল্প------(১)

ক্যামেলিয়া আলম এর ছবি
লিখেছেন ক্যামেলিয়া আলম (তারিখ: শনি, ১৯/০৪/২০০৮ - ১০:০৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

রাতের গল্প নিয়ে আমার জীবনের শোনা ও অভিজ্ঞতার কিছু কথন লেখার ইচ্ছে ছিল অনেক দিন। ইতিমধ্যে শুভাগমনের দিনই একটি গল্পের দু'টি অংশ পোস্ট করে ফেলেছিলাম। লীলেনের ভয়ংকর ঝাড়ির বাড়ি খেলাম কানে যে একদিনে দু'টো লেখা আহাম্মকে দেয় সেখানে আমি তিনটে দিয়ে ফেললাম?জিব কেটে লেখাটি বাদ দেবার পথ পাচ্ছিলাম না---কোনমতে বাদ-ও দেয়া হল। আজ তার এক অংশ দিলাম। (আগের দু'টা সেদিন দিয়েছিলাম ভয়ে----কারণ গত দু'দিন আমি বাড়ি ছিলাম না----ভাবলাম এ দু'দিনে লেখা না পেলে যদি আবার স্মৃতির যুগে ফিরিয়ে দেন সম্পাদকেরা!)

রাত্রি ঝমাঝম-(ক)
ঝমাঝম ঝমাঝম এক তানে চলছে আর চলছে। থামাথামির বিরাম নেই। তার মাঝেই ঝক্কি পেরিয়ে রিহার্সেলে আসা। জঘন্য লাগছে এই সাতদিনের বৃষ্টিটা। সাতকন্যা না কি যেন নাম এর-। ধুত্তেরি! জঘন্য!

এই শব্দগুলো অবাক করছে যেন বৃষ্টিকে। কারণ মিলা কোনকালেই ছিলনা এমন। আর রাতের বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। সারারাত কেমন এক অদ্ভুত আবেগে থরথর করত বুক আর কেমন এক বেদনা মাখানো ভালবাসায় সিক্ত রাখত চোখের পাতা। বৃষ্টির সেই রাতগুলো কত কত আকাশ কুসুম কল্পনা দিয়ে যে সাজাত সে।

রিক্সার ব্রেক কষার সাথে সাথে মনের সাথে মনের কথপোকথনের জের কেটে গেল। ফিরে এল শহরের রাস্তায়। সংসদ ভবন ঐ সামনে। এই পথটা এত রাতে পাড়ি দিতে প্রায়ই বুক ধড়ফড় করে এখন মিলার। কিন্তু কি আর করা! থিয়েটারে কাজ করতে গেলে এ রাত ছাড়া বিকল্প নেই। থিয়েটার বড় ভালবাসার জায়গা ওর। অনেকের অনেক জগৎ থাকে জীবনে। আর ঐ স্টেজ--চোখ ধাঁধানো আলোর সামনে গুণে গুণে পা ফেলে সংলাপ বলা-- একের পর এক আদল নিয়ে প্রজ্বলিত আলোর সামনে বসে রঙ মেখে চলা মিলার বড় প্রশান্তির জায়গা। কেমন এক অদ্ভুত শিহরণ লাগে সময়টায় যখন সে হয়তো খুশি--কখনও জয়নাব আবার কখনও বা মিসেস সেন। বাড়ির চোখ রাঙানীতেও থিয়েটারের জ্বর কখনই সরেনা মন থেকে। তাই তো ক্লান্তিময় এই জীবন বয়ে বেড়ানো।

পুনরায় ব্রেক কষে রিক্সা থামাতে বিরক্ত হয়ে তাঁকাতে না তাঁকাতে দেখে পাশে বসা পনির উধাও। পনির কে আজ থিয়েটার থেকে সঙ্গী করে দিয়েছে বাড়ি পৌঁছাবার দায়িত্ব দিয়ে। ছেলে কো-আর্টিস্টেটের প্রতি এ ধরণের দায়িত্ব অর্পিত থাকে থিয়েটারে সকল সময়েই। তবে এ নিয়ে সাধারণত কোন গোলযোগ বাঁধেনা। কারণ থিয়েটারে মেয়ে বরাবরই কম। ত্রিশ চল্লিশ জন ছেলের বিপরীতে মেয়ে থাকে চারজন থেকে পাঁচজন হয়তো বা সাতজন------তাদের কারও কারও থাকে নিজের গাড়ি। কিন্তু মিলার মত অনেকেই আসে টেম্পু না হয় বাসে চেপে আর প্রতিদিনই রাত্রি হবার যাতনায় সেই টেম্পু বা বাস মিস করে যেতে হয় ধীর বাহন রিক্সায়--------নিরাপদহীন এই শহরে!

সেই পনির ঠিক এই সংসদ ভবনের বিশাল অন্ধকার রাস্তায় কোথায় গেল---কেন গেল---কোন উদ্দেশ্যে গেল কিছুই মাথায় এল না মিলার। একদিকে বৃষ্টির রাত-------রাত্রি প্রথম প্রহরই তৃতীয় প্রহরের মত শুনশান। কেউ কোথাও নেই! ঠান্ডা এক শীতল স্রোত নেমে গেল মিলার বুক চিরে। ভয়ার্ত চোখে আশেপাশে তাঁকাতেই চোখ পড়লো দূরে হেঁটে আসা কতগুলো ছেলের উপর। পাগল আর কুকুরের থেকে ভয়ে চোখ সরালে যেমন টের পায় তেমনই মিলার ভয়ার্ত সরিয়ে নেয়া চোখ কি দূর থেকেই টের পেল ছেলেগুলো?

থমকে ওরা শিকারী কুকুরের চাহনীতে গাঁথলো মিলাকে। আর মিলার আর্ত চোখ তখন খুঁজে ফিরছে পনিরের আবির্ভাবের। ধর্মহীনতাকে স্বীকার করে নেয়া মিলা সমস্ত শক্তি দিয়ে সাহায্য কামনা করল সৃষ্টিকর্তার। ইতিমধ্যেই আবিষ্কার করল ওর রিক্সা রুদ্ধ----পাঁচ পাঁচটি ছেলে দাঁড়ানো মুখের সামনে। দাঁড়াচ্ছে না তো কিঞ্চিৎ টলছে-------একটি হলে ঘুষি মেরে উল্টো দিকে দৌড়াতে পারত------রিক্সার চাকা উঠিয়ে দেবার চেষ্টা করতে পারত------কিংবা ব্যাগে থাকা ছাতার ডান্ডি দিয়ে মাথা ফাটাতে পারত। কিছুই করার নেই এখন। বাস্তবতা বলছে ওর জীবনের বড় কোন বিপর্যয় ঘটবে আজ রাতেই।


মন্তব্য

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভালো লেগেছে সেদিনও।
আবার পড়লাম।
দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায়।
ওটা কালকেই নামিয়ে দিলে কি আবার ঝাড়ি হবে?

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সেখানে আমি তিনটে দিয়ে ফেললাম?

তিনটা নয় ম্যাডাম
চারটা
একই দিনে আপনি চারটা পোস্ট দিয়েছিলেন
এর একটা গেছে অতিথি লেখক হিসেবে
আর তিনটা স্বনামে

০২
যা
সকল বদনাম আমার
আর সকল প্রশংসা তোর

০৩
গল্পটা চমৎকার

রায়হান আবীর এর ছবি

বেশী জোশ!!

চলুক

---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍ভাল্লাগ্লো।
ঢোল বাজতে থাকুক হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
নিজেকে জয় করার অর্থ বিজয় না পরাজয়? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখা আমার ভাল লেগেছে।

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

উত্তম!

___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

এইসবের সাথে আমরা কিছু খান-কাহিনী শুনতে চাই। কয় চামচ ভালো-কয় চামচ ন্যাকা আর কতটুকু ব্যাকা!

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

সবুজ বাঘ এর ছবি

এইবার বুঝা গেল। গুড হৈছে।

সবুজ বাঘ এর ছবি

তবে বস বলতেই হয়, শিরোনামে রাতের গল্প-১ এর ভিতর আরেকটা ১ রাইখ্যা আমারে ভুল পথে হাঁটাইছেন। ১এর ক, খ করলে এই বিপত্তিতে পড়তাম না। কিংবা ১ এর বাকি অংশ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।