পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাজনৈতিক কুইজ

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি
লিখেছেন ধ্রুব বর্ণন (তারিখ: বুধ, ২০/০৪/২০১১ - ১২:০৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আপনি রাজনৈতিকভাবে ডানপন্থী নাকি বামপন্থী? এমন প্রশ্ন আপনাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে আপনি হয়তো তখন হিসেব করে উত্তর দেন, আপনি মধ্য-বামপন্থী। কিন্তু আসলে আপনার জিজ্ঞেস করা উচিত, কিসের সাপেক্ষে ডান আর কিসের সাপেক্ষে বাম? চলকটা কি? অনেক জিনিসেরই আপনি বামপাশে আছেন, কিন্তু কিছু কিছু জিনিসের আপনি ডানেও বাস করেন নিশ্চয়ই।

ব্যক্তি ও দলের রাজনৈতিক অবস্থানকে এভাবে একটা রেখায় কল্পনা করে আমরা অভ্যস্ত। কিন্তু সত্যি কথা হলো জাতীয় জীবনে প্রভাব ফেলে এমন চলক বহু। একরৈখিক এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বের হবার প্রচেষ্টায় পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম রাজনৈতিক কুইজটি তৈরি হয় যেখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থানকে উপস্থাপন করা হয় একটা আয়তাকার চার্টে। মোটাদাগে চলক এখানে দু’টোঃ সামাজিক জীবন এবং অর্থনৈতিক জীবন। এতে যেটা হলো, বিভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থানকে আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা গেলো। অনেক বিভ্রান্তিও দূর হলো। যেমন দেখা গেলো, যারা নিজেদের উদারপন্থী বলে দাবী করে, তারা সামাজিকক্ষেত্রে উদার দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, কিন্তু অর্থনৈতিকক্ষেত্রে হয়তো প্রবলভাবে কর্তৃত্বপরায়ণ।

অ্যাডভোকেট ফর সেল্ফ গভর্মেন্ট নামক একটি অলাভজনক শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান নতুন এই রাজনৈতিক অবস্থান নির্ণয়করণ পদ্ধতিটি তৈরি করে। এটা মাত্র দশ প্রশ্নের কুইজ। পাঁচটা প্রশ্ন সামাজিক বিষয় নিয়ে। পাঁচটা প্রশ্ন অর্থনৈতিক। প্রত্যেক প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ, হয়তো অথবা না এবং এগুলোর পয়েন্ট হলো যথাক্রমে ২০, ১০ এবং । ফলে সামাজিক বিষয়ে মোট ১০০ নম্বর আর অর্থনৈতিক বিষয়েও তেমনি মোট নম্বর হলো ১০০। এই দুই বিষয়ে আপনার নম্বর দিয়ে একটা আয়তাকার চার্টে আপনার রাজনৈতিক অবস্থান নির্ণয় হবে। চার্টটা ভাগ করা আছে পাঁচটি রাজনৈতিক অবস্থানেঃ মধ্যপন্থী, বাম-উদারপন্থী, ডান-রক্ষণশীল, কর্তৃত্ববাদীস্বাধীনতাবাদী

এই কুইজের ব্যাপারে সাধারণভাবে যেসব প্রশ্ন তৈরি হতে পারে, যেমন - কুইজটা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক কু-উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার কিনা বা কেনো না, এই কুইজটা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও কেনো প্রযোজ্য হতে পারে, ইত্যাদির উত্তরের জন্যে এই পাতায় দেখতে পারেন। আজ পর্যন্ত ১ কোটি সত্তর লক্ষ বারের উপরে কুইজটি নেয়া হয়েছো। কুইজটার উইকিপিডিয়া পাতা এখানে

কুইজ!


কুইজটা শুরু করে দেয়া যাক তাহলে। কুইজটাতে অংশ নিতে পারেন অ্যাডভোকেট ফর সেল্ফ গভর্মেন্টের পাতায়। সবগুলো প্রশ্ন দেয়া আছে। উত্তর বাছাই করার পর score now-তে চাপ দিলে আপনাকে আপনার রাজনৈতিক অবস্থান নির্ণয় করে দিবে।

আমি কুইজটা সরাসরি এই লেখাতে নেয়ার ব্যবস্থাও করেছি। অ্যাডভোকেট ফর সেল্ফ গভর্মেন্টের কুইজটা অবলম্বনেই বাংলায় দশটা প্রশ্ন আর একটা আয়তাকার চার্ট তৈরি করেছি। নিচে প্রশ্ন দশটা দিলাম। আপনার কাজ কেবল পয়েন্টগুলোকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের জন্যে আলাদা করে যোগ করা।

সামাজিক বিষয়ে অবস্থানমূলক প্রশ্ন: (মোট ১০০ নম্বর)

১) রাষ্ট্র বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্র, মিডিয়া ও ইন্টারনেটকে সেন্সর করতে পারে না - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

২) রাষ্ট্র কোন অবস্থায় নাগরিককে সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণ বা অংশগ্রহণের জন্যে বাধ্য করতে পারে না - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

৩) পূর্ণবয়স্কের সম্মতিমূলক যেকোন প্রকার যৌন আচরণের ব্যাপারে রাষ্ট্র কোন বিধিনিষেধ জারি করতে পারে না - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

৪) পূর্ণবয়স্ক মানুষের মাদক বহন বা গ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয়া উচিত বলে মনে করি - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

৫) জাতীয় পরিচয় পত্র বলে কিছু গ্রহণের বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত নয় বলে মনে করি - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

অর্থনৈতিক বিষয়ে অবস্থানমূলক প্রশ্ন: (মোট ১০০ নম্বর)

১) রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কর্পোরেটগুলোকে রক্ষা করতে প্রণোদনা প্যাকেজের মত কোন ব্যবস্থা থাকা উচিত নয় বলে মনে করি - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

২) আন্তর্জাতিক মুক্ত বাণিজ্যে রাষ্ট্র প্রতিহত করতে পারে না বলে মনে করি - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

৩) রাষ্ট্র নয়, ব্যক্তি নিজেই তার অবসর বাছাইয়ের অধিকার রাখে বলে মনে করি - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

৪) দরিদ্রসেবা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় নয়, কেবল ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে হওয়া উচিত বলে মনে করি - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

৫) রাষ্ট্রের কর ও অর্থব্যয় ৫০% বা ততোধিক হারে কমিয়ে আনা উচিত বলে মনে করি - হ্যাঁ (২০) / হয়তো (১০) / না (০)

উত্তর

উপরের চার্টটিতে বামদিকে নিচে সামাজিক বিষয়ে স্কোরের দাগগুলো দেয়া আছে আর ডানদিকে নিচে দেয়া আছে অর্থনৈতিক বিষয়ে স্কোরের দাগ। দুইদিকের দাগগুলো একটা গ্রিড তৈরি করেছে। আপনার স্কোরগুলো দু’পাশের দাগের স্কোরের সাথে মিলিয়ে আপনার অবস্থান বের করে নিন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার সামাজিক স্কোর যদি ৩০ এবং অর্থনৈতিক স্কোর যদি ২০ হয়, তবে আপনার রাজনৈতিক অবস্থান হচ্ছে তুলনামূলকভাবে কর্তৃত্ববাদী। আপনি শক্তিশালী ও বৃহদাকার সরকারের পক্ষে। এভাবে কেবল ব্যক্তির নয়, একটা দলেরও রাজনৈতিক অবস্থান এই কুইজের মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব।

সব কয়টি অবস্থানের একটা পরিচিতি নিচে দেয়া হলোঃ

বাম উদারপন্থী

উদারপন্থীরা সাধারণত সামাজিক ও ব্যাক্তিগতক্ষেত্রে স্বাধীনতার পক্ষে; নাগরিক স্বাধীনতা, মত-প্রকাশের স্বাধীনতা, সমতা এবং বৈচিত্র্যকে তারা প্রাধান্য দেয়। তবে অর্থনৈতিক্ষেত্রে রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপকে সমর্থন করে। তাই তারা বাম। মানে বাম উদারপন্থী নামকরণটা একটা ডান উদারপন্থীরও অস্তিত্বকে নির্দেশ করে না। বরং একরৈখিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যে এরা বামপন্থী হিসেবেই নির্ণীত হতেন, সেটাকেই বোঝায়। বাম উদাররা ব্যবসাকে রাষ্ট্র দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করে। তারা দুর্বল শ্রেণীর জন্যে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বিশেষায়িত সাহায্য-সেবাকে সমর্থন করে।

স্বাধীনতাবাদী

স্বাধীনতাবাদীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মানুষের সর্বোচ্চ স্বাধীনতার পক্ষে। তারা ছোট সরকারের পক্ষে। সেই ছোট সরকারের দায়িত্ব কেবল ব্যক্তিকে জোর-জবরদস্তি, আক্রমণ, শারীরিক অত্যাচার থেকে রক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। তারা ব্যক্তির বৈচিত্র্য, মত-প্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য সামাজিক এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে সমর্থনের পাশাপাশি ব্যক্তির দায়িত্বকে তার নিজের উপরই সমর্পণের পক্ষে। তারা রাষ্ট্রের আমলাতান্ত্রিকতা ও অতিরক্ত কর গ্রহণের বিপক্ষে। রাষ্ট্র-উদ্যোগের বিপরীতে ব্যক্তি-উদ্যোগের দরিদ্রসেবাকে এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতিকে তারা সমর্থন করে। ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ হিসেবে না দেখে স্বাধীনতাবাদীরা রাষ্ট্রকে ব্যক্তির আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখে।

মধ্যপন্থী

মধ্যপন্থী বলে পরিচিতরা সামাজিক ও অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপের ক্ষেত্রে মাঝামাঝি একটা অবস্থান নেয়। কিছু সামাজিক ক্ষেত্রে তারা ব্যক্তির সামাজিক স্বাধীনতার পক্ষাবলম্বন করলেও দেখা যায় অন্য কিছু ক্ষেত্রে তারা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে। একইভাবে, অর্থনৈতিকক্ষেত্রেও তারা একতরফা রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের পক্ষে না, আবার পুরোপুরি মুক্ত অর্থনীতিকেও তারা সমর্থন করে না। তাদেরকে যেকোন দিকের রাজনৈতিক একমুখীতার বিপক্ষে থাকতে দেখা যায়, আবার সকল মতের প্রতি উদারতাও চোখে পড়ে।

ডান রক্ষণশীল

রক্ষণশীলেরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতার পক্ষে, কিন্তু ব্যক্তির সামাজিক স্বাধীনতাকে সে আইন দ্বারা সীমিত ও নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে চায়। এর পেছনে তাদের “ঐতিহ্যকে ধরে রাখার” প্রেরণা কাজ করে। ঐতিহ্যগতভাবেই ব্যক্তির সামাজিক স্বাধীনতা যেহেতু সব সমাজেই রাষ্ট্র দ্বারা সীমিত, ব্যক্তির স্বাধীনতার বিপক্ষে তাদের কাজ করে এই ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাবার ভয়। তারা রাষ্ট্রের মাধ্যমে ব্যবসাকে নিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে। তারা শক্তিশালী সামরিকবাহিনীকে সমর্থন করে, কিন্তু আমলাতান্ত্রিকতা ও উচ্চহারের করের তারা বিরোধী। আবার অন্যদিকে সরকারি পদক্ষেপের মাধ্যমে নৈতিকতা এবং সনাতনী পারিবারিক কাঠামোকে রক্ষা করার পক্ষে। ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও মত-প্রকাশের অবাধ অধিকারের তারা বিপক্ষে। মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং আইন দ্বারা শক্তিশালীভাবে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, উভয়েরই তারা পক্ষে।

কর্তৃত্ববাদী

কর্তৃত্ববাদীদের সরকার সকল ক্ষমতার অধিকারী ও অতিকায় আকারের হয়ে থাকে। তারা রাষ্ট্রে নাগরিকের অজস্র সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করে। তারা প্রায়শই প্রচার করে যে অর্থনৈতিক ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা রাষ্ট্রে এখনো প্রয়োগ করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় নি। তারা মুক্ত অর্থনীতিকে অবিশ্বাসের চোখে দেখে, উচ্চহারে কর গ্রহণ করে এবং সামাজিক বৈচিত্র্যকে অস্বীকার করে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তারা একটি কেন্দ্রমুখী পরিকল্পনার পক্ষাবলম্বন করে। ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও মত-প্রকাশের অধিকারের তারা বিপক্ষে। রাষ্ট্রকে ব্যক্তির আজ্ঞাবহ হিসেবে না দেখে কর্তৃত্ববাদীরা ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখে।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলো

যুক্তরাষ্ট্রে মূলত দুটি রাজনৈতিক দলঃ রিপাব্লিকান ও ডেমোক্র্যাটিক। রিপাব্লিকানরা ঐতিহ্যকে ধরে রাখার পক্ষে। ফলে তারা মত-প্রকাশকে, ব্যক্তির যৌনাচারকে এবং ব্যক্তির স্বাভাবিক অনেক স্বাধীনতাকেই আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে থাকে। অন্যদিকে, ব্যবসায়িকক্ষেত্রে তারা বেশ উদারদৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন। তারা বরাবরই করের হার কমানোর পক্ষে, রাষ্ট্র দ্বারা ব্যবসায় যৎসামান্য হস্তক্ষেপই তারা করতে চায়।

অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা একেবারে যাকে বলে বাম উদারপন্থী। ব্যক্তি-স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের রক্ষাস্থল হলো ডোমোক্র্যাটিক পার্টি। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সেবা, ব্যবসাকে বাঁচানোর জন্যে কর্পোরেটগুলোকে অর্থসাহায্য দান এবং ফলত নাগরিকের কাছ থেকে উচ্চহারে সুদ গ্রহণ এসবকে তারা বরাবরই সমর্থন করে। অর্থাৎ রাষ্ট্র দ্বারা অর্থনীতিতে হস্তক্ষেপ সমর্থন করতে তাদের বরাবরই দেখা যায়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো

আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই চার্টে ঠিক কোন জায়গাটাতে অবস্থান করে, সেটা বেশ আগ্রহের বিষয় হতে পারে। আওয়ামী লীগকে তুলনামূলকভাবে বাম উদারপন্থী বলেই মনে হয়েছে। মত-প্রকাশ ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার পক্ষের মানুষদের বরাবরই আওয়ামী ঘরানার হতে দেখা গিয়েছে। এ নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ থাকতে পারে অবশ্য। কিন্তু অর্থনৈতিকক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তুলনামূলকভাবে মধ্য থেকে বাম-ঘরানার। ব্যবসায় রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের ব্যাপারে আওয়ামী লীগই বলতে গেলে এগিয়ে।

বিএনপি মতাদর্শগতভাবেই ডান রক্ষণশীল। এটা তাদের সরাসরি ঘোষিত নীতি। তারা আচার-আচরণেও তাই। বিএনপির অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এবং সমর্থক ঐতিহ্য ও প্রচলিত নৈতিক মূল্যবোধকে অটুট রাখার পক্ষে। সামাজিক পরিবর্তনকে তারা সদাই সন্দেহের চোখে দেখে। তবে অর্থনৈতিকক্ষেত্রে তারা মুক্ত বাজারের পক্ষে। ব্যবসায় রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অধিক অনুপস্থিতি অনুভূত হয় বিএনপি আমলে।

জামায়াতে ইসলামি হলো ইসলামি শাসনের পক্ষে। সামাজিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অধিকাংশ প্রচলিত ইসলামি-শাসন মতবাদের দৃষ্টিভঙ্গি একই - নিয়ন্ত্রণ। জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গিও এর থেকে ভিন্ন নয়। কিন্তু অর্থনৈতিকক্ষেত্রে জামায়াতের ইসলাম কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে সে বিষয়ে নিশ্চিত নই। এর উপর নির্ভর করে জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান হয় ডান রক্ষণশীল নয়তো কর্তৃত্ববাদী।

জাতীয় পার্টির ব্যাপারে কোন ধারণা নেই। আদর্শগতভাবে বিএনপির সাথেই বেশি মেলে বলে একসময় এরশাদ বলেছিলেন। আর বামপন্থী দলগুলো সাধারণত হয় বাম উদারপন্থী, নয়তো কর্তৃত্ববাদী ঘরানার।

পৃথিবীতে বহুল পরিচিত বিভিন্ন তন্ত্রকেও এই চার্টে ফেলা যায়। সোভিয়েত সমাজতন্ত্র যেমন ছিল কর্তৃত্ববাদী। রাষ্ট্র দ্বারা সর্বতোভাবে তারা ব্যক্তির সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। ফ্যাসিবাদ বলতে আমরা যা বুঝি, সেটাও কর্তৃত্ববাদী ঘরানার। ব্যক্তিকে সে একটা আদর্শ ছাঁচে তৈরি করার পক্ষে। বৈচিত্র্যকে সে অস্বীকার করে। আওয়ামী লীগের বাকশালও ছিল অনেকটা কর্তৃত্ববাদী। তাই, অনেকেই বাকশালকে ফ্যাসিবাদী সরকার হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে। তবে, ফ্যাসিবাদের যে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য, বিশুদ্ধ জাতি গঠন, সেটার সাথে বাকশালের কতটুকু কি মিল ছিল, সেটা দেখার বিষয়।

পৃথিবীতে মধ্যযুগের অধিকাংশ শাসনব্যবস্থাই ছিল কর্তৃত্ববাদী। মানব সভ্যতার অগ্রগতির সাথে ধীরে ধীরে শাসনতন্ত্রগুলোর অবস্থান চার্টটিতে উর্ধ্বমুখী হচ্ছে।


মন্তব্য

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বাহ, চমৎকার পোষ্ট। কবি শামসুর রাহমানের "মধ্যপন্থার বিড়ম্বনা" কবিতাটির কথা আচম্বিতে মনে পড়ে গেল। কিন্তু গ্রীডটিতে 'সুবিধেবাদী'দের অবস্থান দেখছি না যে? ঠিক ঠিক বলে দিন না চটজলদি, নিজের অবস্থান না জানলে কি করে চলে? হো হো হো

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ঠিক বলেছেন স্যার। গ্রীডে নিজের অবস্থান না দেখে হতাশ। একে modify করতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

হাসিব এর ছবি

স্কুলবয় কুইজ। শোষণ, নয়া ঔপনিবেশিকতা, ধর্ম অনুপস্থিত।

সিরাত এর ছবি

কেন স্কুলবয় কুইজ হবে? আপনি যেসব চলকের নাম বললেন সেগুলো তো উপরের অনেক চলক দিয়েই কাভারড হয়। আর বিশেষত আপনার দ্বিতীয় চলকটিতো আমার আরবিট্রারি মনে হল।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

১, ৩, ৪ দিয়ে ধর্ম অনেকখানি কাভার হয়ে যায়।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ইন্টারেস্টিং! আমি কুইজ দিলাম। অবস্থান কমুনা। চোখ টিপি

সিরাত এর ছবি

ডানপন্থী নাকি? চোখ টিপি

আমার আসছে লিবারটারিয়ান। নো সারপ্রাইজ। খাইছে

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বুঝেছি,
"পথ বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি
মুর্শেদ সাব চলতি হাওয়ার পন্থী।" চোখ টিপি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

স্বাধীন এর ছবি

দিলাম কুইজ। মধ্যপন্থা এবং স্বাধীনতাবাদীর কাটিং এইজে আছি। দেখলাম অর্থনৈতিক বিষয়ে মোটামুটি মধ্যপন্থী আর ব্যক্তিস্বাধীনতার বিষয়ে স্বাধীনতাবাদী। দু'মিলিয়ে একদম মাঝামাঝি। যে প্রস্নগুলো আছে সেগুলোর সাপেক্ষে আমার পয়েন্ট ৬০/৬০ ৭০/৬০ ৬০/৭০ এবং ৭০/৭০ এর মাঝে থাকে। ভেরিয়েশনটা আসছে কারণ কিছু প্রশ্ন ঠিক মন মতো হয়নি। তাই উত্তর নিশ্চিত নয়। কিন্তু অবস্থানটা বুঝা যাচ্ছে। বাস্তবেই আমি মধ্যপন্থী।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

বাম কর্তৃত্ববাদী আসছে


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নৈষাদ এর ছবি

অ্যাঁ

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অবাকের কী? আমি রাষ্ট্রবাদী।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নাশতারান এর ছবি

আমারো

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আহমেদ হুসেইন এর ছবি

স্কোর ৮০/৭০, তবে ২টা প্রশ্নে নিজের অবস্থান ঠিক করতে পারিনি চিন্তিত

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আন্ডারগ্র্যাডে থাকবে একবার পথে থামিয়ে একজন এই কুইজ পূরণ করিয়েছিলো। একই রকম আছি দেখি এখনও... ৫০/২০, বামঘেঁষা মধ্যপন্থী।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

স্কোর আসছে ৯০/৪০ চিন্তিত

অতিথি লেখকঃ অতীত এর ছবি

আমার একটা প্রশ্ন ছিলো, কমন লাইনের উপর স্কোর পড়লে কী হইবো? যেমন, ৬০/৩০ কিংবা ৯০/৫০ চিন্তিত তাইলে কী দুই মতবাদের???

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

সুবর্ণ অতীত,
খাইছে, ভাই আপনি মনে হয় আমার গিন্নীর দেশের মানুষ। যারা কিনা হুজুরদের জিজ্ঞেস করে, "অর্ধেক ডাঙ্গায় আর অর্ধেক পানিতে পড়লে পাতার কি দশা হবে?" চোখ টিপি

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

ashraf.bsk এর ছবি

৭০ এবং ৪০ আসছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।