লাখ টাকার স্বপ্ন

দিগন্ত এর ছবি
লিখেছেন দিগন্ত (তারিখ: শুক্র, ১১/০১/২০০৮ - ৬:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoকালকে টিভিতে বসে দেখলাম দিল্লীর প্রগতি ময়দানে টাটার এক-লাখি গাড়ির উদ্বোধন। সত্যি কথা বলতে, গাড়িটা আমাকে একরকম চমকেই দিয়েছে। আমি ভেবেছিলাম একটা পলকা দুই সিট-ওয়ালা একটা মাথা গোঁজার গাড়ি। তার জায়গায় টাটা আমাকে যা দেখালো, তা হল রীতিমত একটা গাড়ি। কালকেই বাবা-মায়ের সাথে কথা হল - গাড়ি কিনছিই। আর কিছু না হোক হুজুগ তো বটে।

রতন টাটার কথামত একে “লাখ টাকার স্বপ্ন” বললে কমই বলা হয়। মধ্যবিত্তের চাহিদা আর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এত কম দামে গাড়ি ভারতের বাজারে আগে আসেনি। তাই কালকে টাটা ন্যানো বা টাটার এক-লাখি গাড়ি বাজারে আসতেই বাজার সরগরম। নতুন বছরে এই চমকের ফলে নড়ে বসেছে মধ্যবিত্ত, গাড়ি বিক্রেতা থেকে শুরু করে শেয়ার ব্রোকারেরাও। গাড়ির নাম ন্যানো কারণ গাড়ি বাজারে এটাই সবথেকে ছোট আকারে, আর গাড়িতে ব্যবহৃত হয়েছে আধুনিক ন্যানো-টেকনলজি।

টাটা সন্সের প্রধান রতন টাটা সাক্ষাতকারে বলছেন এটাই তার “একলা চলো রে” নীতির ফসল। উনি আগে এশিয়ানদের জন্য স্কুটারের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে “জনগণের গাড়ি”(Peoples' car) প্রস্তাব দিয়েছিলেন গাড়ি-নির্মাতাদের সম্মেলনে - যা ব্যবহৃত হতে পারে ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া বা চীনে। তখন কেউ সাড়া দেয়নি, হয়ত বা অবাস্তব বলে উড়িয়ে দিয়েছিল। তারপরে গত চার বছরে পাঁচশ জনের গবেষকদল এই গাড়ি বানিয়েছেন। পথ মসৃণ ছিল না, একদিকে ছিল দামের বাধা, আরেকদিকে গুণগত মান সুনিশ্চিত করার ইচ্ছা। আপাতদৃষ্টিতে, উনি সফল। সময় কিছুটা বেশী লাগলেও - সব টপকে এখন টাটা আবার সামনের সারিতে।

কতটা ভাল এই গাড়ি? সাধারণভাবে বললে মোটেও ভাল না। কিন্তু এই দামের কথা ভাবা হলে তা পুষিয়ে যায়। ডিজাইনের কথায় আসা যাক। গাড়ির বডি হবে অ্যালুমিনিয়াম আর প্লাস্টিকের। পাওয়ার স্টিয়ারিং থাকবে না। থাকবে না নিরাপত্তার জন্য এয়ার কন্ডিশনার, এয়ার ব্যাগ বা সেফটি বিম। গাড়ির সর্বোচ্চ গতিবেগ ধরা হচ্ছে ১০৫ কিমি প্রতি ঘন্টা, যদিও আদর্শ গতিবেগ বলা হয়েছে ৭০ কিমি/ঘন্টা। ভারতের শহুরে রাস্তার জন্য এই গতিবেগ আদর্শ। ৬২৩ সিসির ইঞ্জিন তৈরী হবে জার্মান কোম্পানী বস (Bosch) এর কারখানায়। প্রতি লিটার তেলে ২০-২৫ কিমি গাড়ি চলবে।

এই গাড়ি ব্যবসা করবে কি ভাবে? সাধারণ হিসাবে টাটার বাজার আসবে মূলত মারুতি আর মোটরবাইকের বাজার থেকেই। প্রতি বছর দেশে প্রায় ১৫ লাখ মারুতি অল্টো আর মারুতি ৮০০ বিক্রি হয়। প্রাথমিক সমীক্ষায় বলা হচ্ছে, মোটরসাইকেল বাজারের ১০% লোকে এবার টাটার গাড়ি কিনবে। মূলত তিনটি মডেল বাজারে আনছে টাটা। প্রথমটি টাটার বেসিক মডেল, যার দাম হবে ১ লাখ টাকা - ট্যাক্স আর পরিবহন মিলে রাস্তায় নামাতে আরো তিরিশ হাজার। এ ছাড়াও থাকছে আরো দুটি একই রকম দেখতে ডিলাক্স মডেল। autoসেগুলোতে থাকছে বাকি নিরাপত্তা সম্পর্কিত সুবিধা গুলো আর সাথে এয়ার কন্ডিশনার। রতন টাটার বক্তব্যমতে, টাটার বেসিক মডেল থেকে নগণ্য লাভ হবে, যা পুষিয়ে যাবে ডিলাক্স গাড়ির বিক্রি থেকে। টাটার এই গাড়ির উতপাদন মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র ৬৫,০০০ টাকা। বিক্রির বাজার ধরা হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়াও পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ব্রাজিল সহ লাতিন আমেরিকা আর আফ্রিকা। টাটার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা বছরে আড়াই লাখ গাড়ি বেচা।

এসব সত্ত্বেও সমালোচনা পিছু ছাড়ে নি টাটা ন্যানোর। ইংল্যান্ডের টাইমস অনলাইন গাড়িটার সমালোচনা করে লিখেছে যে দাম কমাতে টাটা গাড়ির নিরাপত্তাও কমিয়ে দিয়েছে। রতন টাটা অবশ্য বলেছেন যে ব্রিটিশ বাজারের জন্য তার গাড়ি নয় - তাই ব্রিটিশ সেফটি স্ট্যান্ডার্ডের কথা উনি ভাবেন নি। ভারতেও পরিবেশবিদেরা আগে থেকেই সতর্ক করে দিচ্ছেন যে এর ফলে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা হু হু করে বেড়ে যেতে পারে। ফলে বাড়তে পারে পরিবেশ দূষণ আর সাথে ট্র্যাফিক জ্যাম। ভর্তুকি দেওয়া পেট্রোলের চাহিদা বাড়ার কারণে লোকসান করবে তেল আমদানীকারক সংস্থাগুলোও। আর আছে রাস্তায় ঝুঁকি - বাড়বে দুর্ঘটনা। টাটার এই গাড়ি যে কারখানায় তৈরী হবার কথা, সেই সিঙ্গুরের গণ্ডোগোল তো আগেই সমস্যা বাধিয়েছে। অনেক মানুষকে নিজের জায়গা থেকে তুলে দিয়ে শুরু হয়েছে কারখানা।

কালকেই টাটার প্রতিদ্বন্দী সংস্থা বাজাজ (এরা অটো বিক্রেতা হিসাবে খ্যাত) ঘোষণা করেছেন তারা বাজারে ২০১০ এর মধ্যে ১,২০,০০০ টাকার গাড়ি আনবেন - যার নাম হবে "হামারা"। এর জন্য তারা হাত মিলিয়েছেন বিশ্বখ্যাত সংস্থা রেনল্ট ও নিশান-এর সাথে।

কিছুকাল আগে দেখলাম পাকিস্তানও নিজস্ব এক লাখ টাকার গাড়ি বানিয়েছে - হাবিব মোটরসের এই গাড়িটির বর্তমান দাম ১,৫৯,০০০ পাকিস্তানি রুপি। autoসিতারা নামের এই গাড়ি পাকিস্তানের রাস্তায় খুব একটা চলেনি। তবে সম্প্রতি পাকিস্তানের রাস্তায় ট্যাক্সি হিসাবে ব্যবহারের অনুমতি দেবার পরে মনে করা হচ্ছে এর বাজার বাড়বে। বাংলাদেশের গাড়ি প্রথম কবে দেখতে পাবো?

তবে একটা ব্যাপার খুবই ঠিক, যে আজ থেকে ত্রিশ-চল্লিশ বছর আগে ইন্দিরা গান্ধীর আমলে স্বনির্ভরতার জন্য মারুতির হাত ধরে যে উদ্যোগ শুরু হয়েছিল, আজকের টাটা ন্যানো তারই ফসল। মারুতি প্রথমদিকে অত্যন্ত খারাপ গাড়ি বানাতো, সেই গাড়ির বাজার সুনিশ্চিত করতে সরকার উচ্চহারে শুল্ক বসিয়েছিল বিদেশী গাড়ি আমদানির ওপর। একটা সময় ছিল যখন ১০ লাখ টাকা দামের গাড়ি আমদানী করতে কর দিতে হত ৩০ লাখ টাকা, এখন কিছুটা কমলেও বিশেষ কিছু কমে নি। ভারতে এখনো যে দামী বিদেশী গাড়ি দেখা যায় তাও মূলত দেশে অ্যাসেম্বল্ড - মার্সিডিস থেকে লোগান। এর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে তৈরী হয়েছে অনেক দক্ষ শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার আর ব্র্যান্ড। আর দেশীয় গাড়ি নির্মাতার উতসাহ পেয়ে দেশে কম দামে গাড়ি তৈরীর চেষ্টা করে গেছে। গাড়ির মান প্রথমে অনেক খারাপ ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে উন্নতিও হয়েছে। টাটা ন্যানোর ইঞ্জিনিয়ারিং দক্ষতা এসেছে এই মারুতি থেকে সরিয়ে আনা ইঞ্জিনিয়ারদের হাত ধরেই।

আমি নিজে অবশ্য ধীরে চল নীতি নিচ্ছি। আগেরবারে টাটার ইন্ডিকা গাড়িতে প্রথম এডিশনে চাকায় ভুলত্রুটি ছিল। পরের এডিশনে অবশ্য তা শুধরে নিয়েছে। এবারেও একই ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? গাড়ি কিনলে হাইপের স্টেজটা কেটে গেলে তারপরেই কেনা ভাল।

বছরের শেষে এই গাড়ি বাজারে আসবে। কিন্তু বছরের শুরুতেই সেরকম হাইপ তৈরী হয়েছে যে টাটা এখন খুব সংকটে। যদি বছরের শেষে গ্রাহকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারে? তাহলে টাটার নাম বা ব্র্যান্ড কিছুদিনের জন্য একটা বড় ধাক্কা খেতে চলেছে। আর উল্টোদিকে সফল হলে সবটাই ইতিহাস হয়ে যাবে।

টাটার গাড়ির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান (ইউটিউব ভিডিও)
একনজরে টাটা ন্যানো ১
একনজরে টাটা ন্যানো ২
একনজরে টাটা ন্যানো ৩


মন্তব্য

বিপ্লব রহমান এর ছবি

এই গাড়ি ঢাকার রাস্তায় নামলে ... চোখ টিপি

লেখাটি একেবারে জাঝা ...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

দিগন্ত এর ছবি

"মারুতির খুবই দুর্নাম। "

- দুর্নাম সত্ত্বেও মারুতি তো সংখ্যায় কম দেখি না। কারা কেনে মারুতি? কিছু তো দেখেছি ট্যাক্সি হিসাবে আর পার্সোনাল কার হিসাবে প্রায় নেই-ই। বাংলাদেশে পার্সোনাল কার বলতে সবই টয়োটা - সে নতুন হোক বা রি-কন্ডিশনড।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

৯৮-৯৯ এর দিকে ভারতের মধ্যবিত্তদের দেখেছি ধুমসে মারুতি কিনতে । ওখানে বেশ ভালোই দেখায় এম্বসেডরের বিপরীতে । দামে কম । তখন বোধ হয় সহজ কিস্তিতে ও কিনতে পারা যেতো ।
৫০০০ রুপির চাকরীজীবিদের ও দেখেছি মারুতি ৮০০ কিনতে । ভালো তো । গাড়ী তো আজকের দিনে কোন ফূটানীর বিষয় না । জাস্ট এনাদার নেসেসিটি ।

আমাদের অবশ্য আলগা ফুটানীটা একটু বেশীই হাসি
----------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

দিগন্ত এর ছবি

এখানে কিস্তিতে কেনার চলটা খুব বেশী। গাড়ি, বাড়ি, জমি ছাড়াও এখন ফ্রিজ, টিভি সব কিছুই কিস্তিতে পাওয়া যাচ্ছে। ভাল কি খারাপ সেটা সুবিনয় মুস্তাফির ওপর ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আড্ডাবাজ এর ছবি

খুবই তথ্যবহুল লেখা। পড়ে ভাল লাগল। আসুন আমরা দলে দলে গাড়ী কিনি!!! রিকশার বিকল্প কি হতে পারে? কে জানে? ধন্যবাদ।

দিগন্ত এর ছবি

বাংলাদেশের গাড়ি প্রথম কবে দেখতে পাবো?

- এটা কি মনে হয়?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আড্ডাবাজ এর ছবি

না রে ভাই। ঐসব ছোটখাট গরীবি গাড়ীতে আমরা চলি না। কোটি টাকার নীচের গাড়ীতে আমরা উঠি না। আর ক'দিন পর ট্রাফিক জ্যামে গাড়ী পার্ক করে সবাই হেঁটে হেঁটে অফিস করব। রাগ করেন না। একটু মজা করলাম।

রেজওয়ান এর ছবি

এটা অনেকেরই প্রশ্ন। সরকারি গাড়ী বছরে যা লাগে সে চাহিদা মেটাতেই একটি গাড়ী কারখানা (নিদেন পক্ষে এসেম্বলিং প্লান্ট) দরকার। দুই দশক আগে বাংলাদেশের মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করে একদল জার্মান ইন্জিনিয়ার মন্তব্য করেছিলেন বাংলাদেশ পারবে - বলেছিলেন তার পরিচালক আমার এক আত্মীয়।

অথচ সরকারী পরিকল্পনায় এটি রাখা হয়না। সরকারী মন্ত্রী থেকে শুরু করে আমলারা চায় নতুন ঝকঝকে জাপানী গাড়ী। সরকারী প্রকল্প পাশ হলে প্রথম আইটেম থাকে ৩৫ লাখ টাকা দামী মিৎসুবিশী পাজেরো জীপ। কেন? কোন উত্তর নেই এটিই নর্মস।

ওখানেই কি শেষ? জাতীয় ক্যারিয়ার হিসেবে বিমানের অনেক দেশেই অপারেশন চালানোর সুযোগ হয় (এসব হয় রেসিপ্রোসিটি ভিত্তিতে)। অথচ দিনে দিনে সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন বিমান কেনার সাহস তত্তাবধায়ক সরকার করেনা (দুর্নীতির জন্যে)।

শুধুই প্রশ্ন-কোন উত্তর নেই।

আমি দেশে চালাতাম বিশ বছরের পুরোনো নিশান মার্চ - লাখ টাকার কম দামে কেনা। লাখ টাকার গাড়ীই বলুন বা আরও দামী - নতুন গাড়ী চালানো আমাদের অনেকেরই ভাগ্যে নেই।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

অলৌকিক হাসান, হাসান মোরশেদ ও আড্ডাবাজ আমাদের যে ফুটানির কথা বললেন, সেই কারণেই এই গাড়ি বাংলাদেশে বাজার পেতে পারে - রিকশার বিকল্প হিসেবে। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

অমিত আহমেদ এর ছবি

বাংলাদেশে চলে না এমন জিনিস আছে?

তবে ভারতীয় গাড়ি এসেছে সাইফুর রহমানের জন্য। সে নানান কেচ্ছা করে ট্যাক্সির জন্য ভারতীয় গাড়ির আগমন নিশ্চিত করলো। কয়েক বছরেই গাড়ি গুলো বসে যায়। যেগুলো চলে খুব কষ্ট করেই চলে।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

দিগন্ত এর ছবি

তা আর বলতে। এখানে মারুতি বাজার রাখার জন্য জায়গায় জায়গায় সার্ভিস সেন্টার খুলে রেখেছে। আয় দুদিকেই হয় - গাড়ি বেচে আর দুদিন পরে সেই গাড়ির সার্ভিস দিয়ে। যা হোক, এই মারুতির গাড়ি কেন কেনে লোকে বাংলাদেশে সে আমি বুঝি না। আমার তো মনে হয় না আমি হলে কিনতাম ... তবে দামে অনেক কম হলে সে ব্যাপার আলাদা। এখানে কৃত্রিম ভাবে দাম কমিয়ে রাখা হয় বলে ক্রয়যোগ্য।

বাংলাদেশে কোন গাড়ির কি রকম দাম জানা যাবে কি?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অমিত আহমেদ এর ছবি

ও বলা হলো না।
লেখাটা ভাল লেগেছে।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

তানভীর এর ছবি

একজন নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে আমি সবসময়ই গাড়ী নামক বস্তুটার সহজলভ্যতার বিপক্ষে এবং পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অধিক ব্যবহারের পক্ষে। গাড়ী নগর ব্যবস্থায় কি ক্ষতি করতে পারে তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই। ধরা যাক একটা গাড়ী সর্বোচচ চার জন মানুষ নিতে পারে এবং একটা বাস নিতে পারে সর্বোচচ চল্লিশ জন। একটা গাড়ীর প্যাসেঞ্জার কার ইউনিট (পিসিইউ) হচ্ছে ১ এবং বাসের পিসিইউ হচ্ছে 2.2. অর্থাৎ একটা গাড়ী রাস্তায় যে পরিমাণ জায়গা দখল করে একটা বাস তার চেয়ে মাত্র 2.2 গুণ বেশী জায়গা দখল করে। এখন তাহলে দেখুন, একটা বাস রাস্তায় মাত্র এইটুকু জায়গা নিয়ে চল্লিশটা লোক বহন করে ফেলল, অপরদিকে চল্লিশটা লোককে গাড়ীতে নিতে ন্যূনতম ১০টা গাড়ী এবং রাস্তায় দশগুণ জায়গা লাগবে। এর সাথে যোগ করুন দশটা গাড়ী, একটা বাসের তুলনায় কি পরিমাণ পরিবেশ দূষণ করবে, তাদের জন্য কি পরিমাণ তেল খরচ হবে ইত্যাদি।

গাড়ী যখন সহজলভ্য হয়ে যায় বা রাস্তায় বেশী নামে, তখন রাস্তার ক্যাপাসিটি যায় কমে, ফলে যানজট অত্যধিক বেড়ে যায়। আপনি রাতারাতি গাড়ী কিনতে পারেন, রাতারাতি রাস্তাঘাট তো আর বানাতে পারেন না। আর ইদানীং রাস্তাঘাট বানিয়ে আরো গাড়ী চলতে দেওয়ার চাইতে সাবওয়ে, রেল ইত্যাদি নির্মাণ এবং সেখানে পরিবহনকে বেশী টেকসই বলা হচ্ছে। মোট কথা, টেকসই উন্নয়নের কনসেপ্টের সাথে গাড়ী মোটেও খাপ খায় না। খোদ আমেরিকাতেই এ নিয়ে বিস্তর বাক-বিতন্ডা চলছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে গাড়ী-কেন্দ্রিক যে বিস্তর সাব-আরব আর হাইওয়ে গড়ে উঠেছিল, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। কেবল গাড়ী আর তেল কোম্পানীগুলোর দৌরাত্মের কারণেই কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। এক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান দেশগুলো পাব্লিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার ও টেকসই নগর উন্নয়নের ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে। যাই হোক, এসব জেনেও ভারত সরকার হয়ত অনেক কিছু বিবেচনা করেই লাখ টাকার গাড়ী বাজারে ছাড়ার অনুমতি দিয়েছে। এখন আরো ট্রাফিক জ্যাম, আরো জীবাশ্ম জ্বালানীর অপচয়, আরো পরিবেশ দূষণ এই 'লাখ টাকার স্বপ্ন'কে দুঃস্বপ্নে পরিণত না করলেই হয়! সেটাই আগামীতে দেখার বিষয়।

========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"

দিগন্ত এর ছবি

খুবই ভাল বলেছেন। আমি অধিকাংশ ব্যাপারে একমত তবে আরেকটু বিস্তৃত আলোচনা করব।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রাগিব এর ছবি

ঢাকার রাস্তাতে এলাকা বিশেষে ২ কিমি পথ যেতে লাগে ঘন্টা খানেকের বেশি। এই যানযটে আরো গাড়ী? মোটেও ভালো আইডিয়া না।

টাটা ন্যানো গাড়িটা বাংলাদেশে আদৌ চলবেনা বলে ভবিষ্যতবাণী করছি। কারণটা গাড়ির দাম না। কারণটা তেল।

বাংলাদেশে তেলে গাড়ি চালায় কে এখন? মানে তেলে চালানো afford করে কে? আমার পরিচিত সবাই এখন সিএনজিতে পালটে ফেলেছে গাড়ি। যেখানে এক লিটার তেল ৬৫+ টাকা, দিনে ঠিকমত গাড়ি চালালে ৬০০+ টাকার তেল লাগে, সেখানে সিএনজিতে বেশিপক্ষে লাগে এর এক-পঞ্চমাংশ। টাটা ন্যানোতে কি আদৌ সিএনজি সিলিন্ডার বসানো আর তার ভার নেয়ার জায়গা আছে? সন্দেহ হয় গাড়ির ইঞ্জিন সাইজ, আর গাড়ির ডিজাইন দেখে।

এটার বদলে ঢাকায় দরকার রেললাইন। এক বছরে ভাড়া থেকে রেলের লাইন বসানো আর জমি নেয়ার টাকা উঠে আসবে।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

দিগন্ত এর ছবি

"যেখানে এক লিটার তেল ৬৫+ টাকা, দিনে ঠিকমত গাড়ি চালালে ৬০০+ টাকার তেল লাগে"

- ২০০ কিমি গাড়ি চলে দিনে (১ লিটারে ২০ কিমি. চলে গাড়িটা)? গাড়িটা অফিসে যাওয়া/আসা + মার্কেটিংএর কাজে ভাল হবে, মানে দিনে ধরুন ২০ কিমি চললে (১০০-১৫০টাকা)। তবে মেনে নিচ্ছি সি-এন-জি অনেক সাশ্রয়ী আর গাড়িতে সি-এন-জি রাখার প্ল্যান আপাতত দেখছি না (পরে হতে পারে)।
ট্রেনের ব্যাপারটা তানভীরের সাথে আপনি-আমি একমত। ট্রেনে চড়া অভ্যাস আছে বাংলাদেশের লোকজনের? আমার বৌ তো এখানে চড়তেই চায় না। আমার তো ট্রেনই ভাল লাগে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

রাবাব এর ছবি

আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি ঢাকায় যেসব ভারতীয় নাগরিক আছেন চাকরি সূত্রে কিংবা ব্যবসা করতে (হোক না সে বাপ-দাদার বংশ পরম্পরার ব্যবসা) তাদের মধ্যেই টাটা বলুন বা হোন্ডা গাড়ি বলুন ভারতীয় মেড গাড়ীই তাদের চাই। এমনকি যারা একটু বিলাসিতা পছন্দ করেন, তারা একটি টয়োটা কিনলেও একটি মারুতী তাদের চাই-ই চাই। আমি ব্যক্তিগতভাবে এক ভারতীয় পরিবার চিনতাম যাদের একটি মার্সিডিজ গাড়ি থাকা সত্ত্বেও একটি মারুতি সুযুকি ব্যবহার করতেন।

ঢাকাস্হ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত কিন্তু একটি টাটা গাড়ীতে চড়েন। হয়ত এটি তাদের একটি স্ট্রং জাতীয়তাবোধের পরিচয়।

.if I could wake up at a different place, at a different time, could I wake up as a different person?.

সৌরভ এর ছবি

আমি উপর থেকে দেখতে দেখতে তানভীরের মন্তব্যটা এক্সপেক্ট করছিলাম।

লাখটাকার গাড়ির থেকে এই ব্যাপারটা জরুরি।
জীবাশ্ম জ্বালানির ফুরিয়ে যাবার কথাই বলুন আর দূষণের কথাই ধরুন, লাগাম টেনে ধরা দরকার।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

পাঠক এর ছবি

আপনি যাই বলেন টাটার গাড়ি এত খারাপনা আমার একটি টাটা ইন্ডিকা গত ৭ বছর ধরে চলছে একবারের জন ও ঠিক করতে হয়নি এখন ও প্রায় নতুন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।