কাঁশ বনের বাঘ মূলঃ হেরমান হেসে, প্রকাশকের কথা ১

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: সোম, ০৮/০৬/২০০৯ - ৩:৪২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের কাছে রেখে যাওয়া এই পান্ডুলিপির লেখক নিজেকে অনেক সময় কাঁশ বনের বাঘ বলতেন, তার মুখ থেকে শুনে শুনে, আমরাও তাকে এ নামে ডাকতে অভ্যস্ত হয়ে যাই। লেখকের পান্ডুলিপিতে ভূমিকার প্রয়োজন আদৌ আছে কিনা, বলা মুস্কিল! কিন্তু তার একটা স্মৃতিচিত্র আঁকার লোভ সংবরণ করতে পারছিনা। তার সম্পর্কে আমি খুব সামান্যই জানি। বিশেষ করে অজ্ঞাত কুলশীল এই মানুষটির অতীত, আমার কাছে এখনো অন্ধকারে আবৃত। তারপরেও, লোকটির ভদ্র এবং বিনয়ী স্বভাব আমার মনে গভীর রেখাপাত করেছে।

বছর কয়েক আগে, প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়সের ভদ্রলোকটি, আমার খালার বাড়িতে আসেন, আসবাব পত্রে সুসজ্জিত, একটা বাসার খোঁজ পেয়ে। ছাদের দুটো রুম ভাড়া নিলেন। দিনকয়েক পর দুটো স্যুটকেস আর একটা বইয়ের বাক্স নিয়ে বাসায় উঠলেন। রুম দুটোর একটা বসার আর একটা শোয়ার ঘর হিসাবে ব্যবহার করতে লাগলেন। ভদ্রলোক এই বাসায় নয় কি দশমাসের মত ছিলেন। লোকটা খুব নিরিবিলি এবং নিজেকে নিয়েই মগ্ন থাকতেন। আমাদের রুমগুলো পাশাপাশি হওয়ায় সিঁড়ি বা করিডোরে মাঝে মধ্যে মুখোমুখি হাওয়ার কারনে একটু কুশল বিনিময় হতো। এরকম প্রতিবেশী না হলে হয়তো ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয়ই হতো না। এমন নিরিবিলি মানুষ আর দেখেছি বলে মনে হয় না। ভদ্রলোক অতিমাত্রায় একাকীত্বে আসক্ত ছিলেন বলেই নিজেকে “কাশ বনের বাঘ” বলতেন বোধ হয়। অচিন বনের মনুষ্যভীত নিরীহ পশুর মতই ছিল তার আচরণ। কোন ভাবেই আমার অভ্যস্ত জগতের সাথে তার মিল ছিল না। স্বভাব এবং দৈবচক্রে নিঃসঙ্গতার কত গভীরে তিনি তলিয়ে গিয়েছিলেন, সেটা কিছুটা অনুধাবন করতে পারি তার রেখে যাওয়া পান্ডুলিপিটি পড়ে। তার সাথে মাঝে মাঝে ক্ষুদ্র আলাপের টুকরোগুলো মিলিয়ে আমি ভদ্রলোকের যে ছবিটি তৈরীর চেষ্টা করছি, সেটা খুব স্পষ্ট না হলেও কিছুটা মিলতো পাওয়াই যায়।

ঘরভাড়া দেয়ার সময় ঘটনাক্রমে আমি সেখানে ছিলাম। ভদ্রলোক লাঞ্চের ঠিক পরেই আসলেন। টেবিল থেকে এঁটো থালা-বাটি তখনো সরানো হয়নি। অফিসে আরো আধা ঘন্টা পরে গেলেও তেমন মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, কাজেই আমি রয়ে গেলাম; কিছুটা কৌতূহলতো ছিলই। কারণ কে আমার প্রতিবেশী হবেন, সেটা আগে থেকে জানা থাকা ভাল। প্রথম দর্শণে লোকটাকে যেমন দেখলাম, সেটা এখনো পরিস্কার মনে আছে। গেট দিয়ে ভেতরে এসে ভদ্রলোক যে জায়গায় দাঁড়ালেন, সেখানে যথেষ্ট আলো ছিলনা। দিনের বেলায় কি আর কেউ বিজলী বাতি জ্বালায়! খালা লোকটার সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন; আপনি কাকে চান? “কাশ বনের বাঘ” আমার খালার প্রশ্নের কোন জবাব না দিয়ে, মাথাটা ডানে-বাঁয়ে দুলিয়ে নাক টানলেন। তারপর খালার দিকে তাকিয়ে পরিমিত হাসলেন। ওমা! আমার খালাও দেখি লোকটার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলেন! তারপর ভদ্রলোক বললেন: এখানকার গন্ধটাতো দারুণ! আমার কাছে প্রথম দেখার সম্ভাষন হিসেবে ভদ্রলোকের আচরণ বেশ খাপ ছাড়া লাগল। হয়তো সে কারনেই লোকটাকে পছন্দ হলনা তেমন।
ও হ্যাঁ, আমি এসেছি আপনার “বাসা ভাড়া হইবে” বিজ্ঞাপন দেখে। শান্ত ও ভদ্র ভাবেই তিনি বললেন।
ছাদে উঠার সময় আমি লোকটাকে একটু ভালমত দেখার সুযোগ পেলাম। লম্বা মানুষদের মত হাঁটার ভঙ্গি হলেও ভদ্রলোক তেমন লম্বা নন। রুচিসম্মত শীতের পোষাক পড়নে, কিন্তু ভদ্রলোক খুব মনোযোগ দিয়ে কাপড় পরেন বলে মনে হয়না। দাড়ি-গোঁফ কামানো, ছোট করে ছাটা চুলের এখানে ওখানে পাঁকা শুরু হয়েছে। লোকটার হাঁটার ভঙ্গিটা কোন ভাবেই আমার পছন্দ হচ্ছিল না। কেমন যেন ক্লান্তিকর, অনিশ্চিৎ পদক্ষেপ গুলো কথা বলার আত্মবিশ্বাসী আওয়াজ আর স্পষ্ট উচ্চারণের সাথে মিলছিল না। অনেক পরে জেনেছিলাম; ভদ্রলোক কিছুটা অসুস্থ থাকায়, ভাল করে হাঁটতে পারছিলেন না।

এক ধরনের তাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে সিঁড়ি, দেয়াল এবং দেয়ালে হেলান দেয়া আলমারি দেখছিলেন। সব কিছু পছন্দ হলেও হাস্যকর মনে হয়ে থাকবে ভদ্রলোকের কাছে। দেখে শুনে মনে হল ইনি অন্য জগৎ-এর মানুষ। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে আসা লোকটার কাছে আমাদের এখানকার সব কিছুই সুন্দর, তবে অযৌক্তিক। তার পরেও সত্যি কথা বলতে হলে বলব; লোকটা মার্জিত এবং ভদ্র ছিল। বাসার আসবাব পত্র আকার আকৃতি ভাড়ার পরিমান, সব কিছুর সাথে একমত হলেন কোন “কিন্তু” ছাড়াই। তার পরেও লোকটার ভেতর কেমন যেন শত্রু শত্রু একটা গন্ধ পাচ্ছিলাম। বাড়িতে থাকার নিয়ম কানুন, পানি-গ্যাস-বিদ্যুতের ব্যবহার মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। সব কিছু মেনে নিয়ে আগাম ভাড়া পরিশোধের প্রস্তাব করলেন। তারপরেও সব কিছু কেমন যেন তাচ্ছিল্যের সাথে করে গেলেন। মনে হল জার্মান ভাষায় কথা বলতে বিব্রত বোধ করছেন আর এই সব ঘর-বাড়ি-ভাড়া ব্যাপার গুলো যেন অদ্ভূত লাগছে ভদ্রলোকের কাছে। এর মাঝে থেকেও অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েই যেন বেশী ভাবছেন। লোকটা সর্ম্পকে আমার ভুল ধারনাই বদ্ধমূল থেকে যেত, যদি মাঝে মাঝে অপরিকল্পিত দেখা সাক্ষাতের মাধ্যমে তার সর্ম্পকে আর কিছু জানার সুযোগ না হতো। লোকটার চেহারাটা আমার প্রথমেই বেশ ভাল লাগে। খুব গভীর ভাবনায় মগ্ন থাকতেন বলেই বোধ হয় ভদ্রলোকের অবয়বে একটা স্নিগ্ধ প্রশান্তির ভাব ছিল। কোমল অথচ অকমনীয় নির্বাক শোকের ছায়ায় আচ্ছন্ন মুখমন্ডলটি অগাধ জ্ঞানের প্রতীক মনে হতো। ভদ্রলোকের শিষ্ট ও বন্ধু সুলভ আচরণ দেখে মনে হতো, এমন ভাবে চলন-বলনে তার কষ্ট হচ্ছে। তার ভাবনার জগৎ এবং অসুখী মনের ভেতর থেকে আসা ভদ্র ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারের আড়ালে এক ধরনের কাতর অনুনয় ছিল। যার কারন আমি অনেক পরে খুঁজে পেয়েছিলাম। কিন্তু তাৎক্ষনিক ভাবে তার এই সংযত বিনয় প্রচেষ্টা, লোকটার প্রতি আমার মনে একটু মমতা জাগালো।

বাড়ি ভাড়ার সব কিছু শেষ হতে আরো সময় লাগবে দেখে, ভদ্রলোককে আপাতত খালার হাতে দিয়ে আমাকে ছুটতে হল কাজে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে খালার কাছে শুনি ভদ্রলোক অগ্রিম ভাড়া দিয়ে চলে গেছেন। দিন কয়েকের মধ্যে বাসায় উঠবেন। তবে একটা বিশেষ অনুরোধ করে গেছেন। ভদ্রলোক আমাদের বাড়িতে ভাড়া থাকেন সেটা পুলিশকে খালা যেন না জানান। অসুস্থ শরীরে পুলিশের অফিসে ছুটোছুটি তার পক্ষে খুব কঠিন বলে তিনি এই বিশেষ অনুরোধ করেছেন। এবার আমার চমক ভাঙ্গল। আমার কাছে লোকটার অসংলগ্ন আচরণের কারন স্পষ্ট হল। আমি পরিস্কার বলে দিলাম; খালা সাবধান! এই ধরনের লোককে বাড়িতে উঠানো কোন অবস্থাতেই ঠিক হবে না। কিন্তু খালা লোকটার ছলে, গলে গিয়ে কথা দিয়ে ফেলেছেন। পুলিশকে না জানিয়েই তিনি আমাদের বাড়িতে থাকতে পারবেন। এক ধরনের মমতার কারনেই খালা নতুন ভাড়াটে বাসায় তোলেন। অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা এ নিয়ে তিনি সঞ্চয় করেছেন। কিন্তু এই মমতার হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি। প্রথম কয়েকটি দিন এভাবেই গেল। আমি লোকটার ব্যাপারে যাই বলি না কেন! খালা বিভিন্ন অজুহাতে লোকটাকে রক্ষা করে চলেছেন। নতুন জায়গায় এলে প্রথম প্রথম এমন হতেই পারে। খালার সরল উত্তর।

পুলিশকে ভদ্রলোকের এত ভয় কেন? ব্যাপারটা কোন ভাবেই আমার মাথায় ঢুকছিল না। তাই খালাকে জিজ্ঞেস করলাম; লোকটার অতীত এবং বর্তমানের চাল-চলন সম্বন্ধে তুমি কিছু জান? খালা সব জানে। যদিও আমার কাজে যাওয়ার পর মাত্র মিনিট কয়েক লোকটা আমাদের বাসায় ছিল। খালা এর মধ্যেই সব জেনে ফেলেছেন! লোকটা খালাকে বলেছে কয়েক মাস আমাদের পুরোনো শহরটাতে থাকবেন আর বাসার কাছের লাইব্রেরীটা থেকে বই পত্র এনে পড়বেন। খালা অনেক দিন থাকবেন এমন ভাড়াটেই চাচ্ছিলেন। তবুও এই লোক কিভাবে যেন মাস কয়েকের জন্য খালার মন জয় করে ফেললো! আমার সব আপত্তি শোনার আগেই খালা কথা দিয়ে ফেলেছে!

-এখানকার গন্ধটাতো দারুণ! এই কথা লোকটা কেন বলেছিল?
-কোন কোন মানুষের এমন গুন আছে। অল্প সময়েই ভাল মন্দ বিচার করতে পারে। আমাদের বাড়ির সাজানো গুছানো পরিচ্ছন্ন পারিবারিক পরিবেশ তার ভাল লেগেছে। হয়তো এমন পরিবেশে লোকটা কখনো থাকার সুযোগ পায়নি। সে জন্যই আমাদের বাড়িতে থাকতে চায়।

-কিন্তু লোকটা যদি তোমার সাজানো গুছানো পরিচ্ছন্ন পারিবারিক পরিবেশ নোংড়া করে ফেলে। প্রতি রাতে মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে। হাউ কাউ করে রাতবিরাতে পাড়ার মানুষের ঘুম হারাম করে?

-সে তখন দেখা যাবে।
এর পর আমি আর এ নিয়ে কথা বাড়াইনি।

পরে আমার আশংকা গুলো অমূলক প্রমানিত হয়েছিল। কোন ভাবেই শান্ত সুবোধ আমাদের এই ভাড়াটেকে বলা যায় না। কিন্তু কখনো তিনি আমাদের পরিবেশ নষ্ট করে বা অন্য কোন ভাবে আমাদের ক্ষতির কারন হন নি। এখনো আমরা শ্রদ্ধার সাথেই তাকে স্মরণ করি। কিন্তু খালা এবং আমার প্রচলিত ভাব ধারার ভেতর তিনি একটা ক্ষয় ধরিয়ে দিয়ে গেছেন। সত্যি বলতে কি; আমি এখনো সে ভাঙ্গনের ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারিনি। আমি এখনো কোন কোন রাতে লোকটাকে স্বপ্নে দেখি। এবং আমার মনে হয়; এই লোকটার সংর্স্পশে আমার স্বাভাবিক চিন্তার জগতে একটা বিরাট ভূমিকম্প ঘটে গেছে। অথচ লোকটা আমাকে পছন্দই করতো!

দুদিন পর “হারি হালার” নামে ঐ অচেনা ভদ্রলোকের মাল-পত্তর পৌঁছে দিয়ে যায় একটা ভ্যান। সুন্দর একটা চামড়ার স্যুটকেস আমার খুব পছন্দ হল। সাথে বিশাল একটা সিন্দুক। সিন্দুকের গায়ে বিদেশী সব জাহাজ কোম্পানীর সিল-ছাপ্পর দেখেই বোঝা যায়; ভদ্রলোক অনেক ভ্রমন করেছেন।
তার পর তিনি আসলেন এবং আমি ধীরে ধীরে একজন ব্যতিক্রমী চরিত্রের মানুষ চিনতে লাগলাম। প্রথম দেখার পর থেকেই হারি হালারের প্রতি খুব আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু প্রথম কয়েকটি সপ্তাহ নিজে আগ বাড়িয়ে কোন আলোচনায় গেলাম না। সামনা-সামনি কথা না বলে; গুপ্তচরের মত তার ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র দেখেছি আর দূর থেকে তার উপর নজরদারি করেছি।

হারি হালার দেখতে কেমন, সেটা প্রথম সাক্ষাতের পর আপনাদের একটু আভাস দিয়েছিলাম। লোকটা দেখলেই মনে হয় একজন গুরুত্বপূর্ণ, সচরাচর চোখে পড়ে না এমন জ্ঞানী ব্যক্তি। প্রগাঢ় পান্ডিত্যের স্পষ্ট ছাপ চেহারায়। অবিচলিত প্রশান্তির মোলায়েম এবং আন্তরিক আহবানের একটা রেশ মুখে থাকায়, মানুষ অতি অল্পেই হারি হালারের প্রতি আগ্রহী হতে বাধ্য। আলোচনায় ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং ভাবনা খুব কম ব্যবহার করতেন। কিন্তু মাঝে মাঝে প্রচলিত রীতি ভেদ করে হারি হালার “কাঁশ বনের বাঘ” হয়ে যেতেন এবং আলোচিত বিষয়ে তার মতামত শুনে শ্রদ্ধায় মাথা আপনা থেকেই নুয়ে আসতো। কিন্তু তার প্রকাশ ভঙ্গিতে জ্ঞানের কোন অহংকার থাকতো না। নিজের পান্ডিত্য প্রচার বা অন্যকে মূর্খ প্রমানের জন্য কখনো হারি হালারকে কথা বলতে আমি শুনিনি।
{ ডেয়ার ষ্টেপেন বল্ফ প্রথম প্রকাশ হয় ১৯২৭ সালে। পঞ্চাশ শব্দের নীচে খুব কম বাক্য পাওয়া যাবে ষ্টেপেন বল্ফ বা কাঁশ বনের বাঘ বইয়ে। পঞ্চাশটা শব্দের কম পক্ষে দশটা শুধুই বিশেষণ। এবার বুঝেন ঠেলা! আপনারা কষ্ট করে যদি এ পর্যন্ত পড়ে থাকেন, তাহলে অনুরোধ করব একটু খোঁজ নিতে, বইটি বাংলায় অনুবাদ হয়ে গেছে কিনা? কারণ তিনশ পৃষ্ঠার একটা বই দ্বিতীয় অনুবাদ করতে কার ইচ্ছে হয়! কিন্তু বইটি আমার কাছে এত ভাল লাগে যে সেটা অনুবাদ করার লোভ সামলাতে পারলামনা। আপনাদের আন্তরিক সহযোগীতা কামনা করছি।}


মন্তব্য

অনার্য্য সঙ্গীত [অতিথি] এর ছবি

সিদ্ধার্থ বইটার অনুবাদ পড়েছিলাম। সেখানে লেখকের নাম ছিল হেরমান হেস। 'হেসে' কি ওনার নামের জার্মান উচ্চারণ? প্রতিবাদ নয়, নিছক নিজেকে শুধরে নেয়ার জন্যেই জিজ্ঞাসা করলাম।

হাসিব এর ছবি

সঠিক উচ্চারণ হেরমান হেসে । আনন্দাবাজারীয় ভুতেদের মতো "হেস" লিখলে সেটা ভুল হবে ।

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ হাসিব ভাই।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

পুতুল এর ছবি

অনার্য্য সঙ্গীত, সিদ্ধার্থ দেখেছিলাম বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অনুবাদ এক বন্ধুর হাতে।
খুব ইচ্ছে ছিল বইটি অনুবাদ করার। কিন্তু বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র করেফেলেছে। হাতে নিয়ে দেখলাম। অনুবাদটা এমন যে, এটা হেসের রচনা বলে স্বীকার করতে কষ্ট হচ্ছিল।
হেসেই হবে। হেস উচ্চারণটা ভুল। ধন্যবাদ আপনাকে।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

গৌতম এর ছবি

অনুবাদটা এমন যে, এটা হেসের রচনা বলে স্বীকার করতে কষ্ট হচ্ছিল।

বলেন কি! আমি তো ওই অনুবাদ পড়েই মুগ্ধ। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকেই বইটি নিয়ে পড়েছি। কতোবার সিদ্ধার্থের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করেছি! আমি আজও মনে করি, এই জীবনে যতোগুলো বই আমি পড়েছি, এই বইটি তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।

তবে অনুবাদ একজন করলেই যে আরেকজন করতে পারবে না সেরকম তো কথা নেই। বিশেষত যেখানে আপনার কাছ থেকে আরও ভালো অনুবাদ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে, সেখানে আপনাকে আমি অনুবাদটা করে ফেলতেই বলবো।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

পুতুল এর ছবি

গৌতমদা,
সিদ্ধার্থ বইটা মনে হয় (জার্মান ভাষায়) তিন বার পড়েছি। সিনেমাটা পাঁচ বার দেখেছি। আবার পড়ার আবার দেখার ইচ্ছে হয়। সুযোগ হলে দেখব এবং পড়ব। এমন একটা সময় গেছে (যখন একটু চলন সই জার্মান শিখলাম) যখন হেসের সব পড়েছি। আলোচনা সভায় গিয়েছি। এত মুগ্ধ ছিলাম। এখনো আছি।
সিদ্ধার্থ অনুবাদ করার সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়ে ফেলেছি, এমন একটা সময় এক পরিচিত লোক সিদ্ধার্থের বাংলা অনুবাদ দেখতে দিলেন। এবং জানালেন তিনিও অনুবাদের সাথে যুক্ত ছিলেন। তর সইছিল না, খুব দ্রুত বইটা হাতে নিয়া একটু পড়লাম। আমার চেহারা দেখে সেই পরিচিত মানুষটি তার অনুবাদ কর্মের মান জানতে চাইল। তখন তাকে শুধু বললাম মাফ করবেন; আমার পক্ষে কিছু বলা সম্ভব না। এত মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সাথে পাল্লা দিয়ে আবার অনুবাদ করার উৎসাহ হারিয়ে ফেললাম।
ধরলাম খোকা বাবু, অনুবাদ শেষ করে শুনি; সেটার কম পক্ষে আরো পাঁচটি অনুবাদ হয়ে গেছে।
বেশীর ভাগ পাঠক মনে করে, ঘটনাতো জানি আর পড়ে কি হবে। সে জন্য আর উৎসাহ থাকে না।
তবে কাঁশ বনের বাঘ অনুবাদ করবো। বইটা এত ভাল লাগে যে আমার সিগনেচারে কাঁশ বনের বাঘ কথাটি জুড়ে দিয়েছি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্পর্শ এর ছবি

এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। এবং এখন এইটার পুরোটা অনুবাদ না করলে আপনার খবর আছে।
সিদ্ধার্থ পড়ে আমি হেসের আরো লেখা খুঁজছি। আপনি এটা অনুবাদ করলে কৃতজ্ঞ থাকবো।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

পুতুল এর ছবি

স্পর্শ,
ভাই একটু সময় লাগবে। উৎসাহ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। আশা করি সাথে থাকবেন।
হেসের অনুবাদ বাংলায় এত কম! তাহলে অনুবাদ করতেই হবে। আমার কাছে হেসের কাঁশবনের বাঘের যে কপিটি আছে; সেখানে লিখেছে হেসে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে বহুল পঠিত ইউরোপিয়ান লেখক। অথচ বাংলায় তার অনুবাদ পাওয়া যায়না! একটু অবাক হলাম!
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাধারণ ! সচলায়তনে আমি নতুন। পুরো বইটির অনুবাদ পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। হেরমান হেসে কে জানি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের অনুবাদকৃত সিদ্ধার্থ বইয়ের কল্যাণে। আর তাই গৌতমের মত আমিও আপনাকে একই অনুরোধ করব। বলতে গেলে আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে এই সিদ্ধার্থ বইটি। অনুবাদের জন্য শুভকামনা রইল। ধন্যবাদ।

পুতুল এর ছবি

অতিথি লেখক, সচলায়তনে স্বাগতম।

লোকটা খালাকে বলেছে কয়েক মাস আমাদের পুরোনো শহরটাতে থাকবেন আর বাসার কাছের লাইব্রেরীটা থেকে বই পত্র এনে পড়বেন।

আমাদের এক বন্ধু বাঙ্গালী কিন্তু লিখেন জার্মান ভাষায়। সেই প্রভুদা বলেছেন যে শহরে বসে লেখক বইটা লিখেছে অনুবাদ করার আগে সেই শহরটা ঘুরে আসতে। ভাগ্যটা বেশ ভাল জার্মানের সব চেয়ে পুরানো শহরে থাকার বদৌলতে, একটা পুরানো শহরের বর্ণনা বুঝতে শহরটা গিয়ে আর দেখে আসতে হবে। বইটা পড়ে মনে হয়, এই তো আমার বাসার তিনটা গলির পরে যে মোড়টা, সেখানেই তো ঐ বারটা, যেখানে হারি হালার একা বসে লাল ওয়াইন গিলছে, গেলে হয়তো আজো দেখা হবে।

কিন্তু বাংলায় কতটা সেই অনুভূতি জাগাতে পারব জানি না তবে চেষ্টা করব। উৎসাহের জন্য ধন্যবাদ।
পরের বার মন্তব্য লিখতে যেখানে নাম লেখা বাধ্যতা মূলক সেখানে আপনি যে নামে সচলায়তনে পরিচিত হতে চান, সে নামটা লিখলে আপনাকে আপনার পছন্দের নামে ডাকতে পারব।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।