চলুন, আমরাও যোগ দেই আমেরিকানদের শান্তির যুদ্ধে।

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: মঙ্গল, ০৫/১০/২০১০ - ৮:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গাছগাছালির বাড়াবাড়ি থেকে একটু দূরত্ব রেখে নদীর তীরে গড়ে উঠেছে গ্রামটা। বাচ্চাগুলো সবুজ ধানক্ষেতের ভেতর থেকে লাফ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নদীতে, আবার উঠে আসছে, এভাবেই চলছিল। হঠাৎ বিকট এবং বীভৎস রকমের একটা ড্রাগন আগুনের শিখা ছড়িয়ে দিলো সবুজ বন আর ধান ক্ষেতের উপর। বাচ্চাগুলো ছোট বলে ড্রাগনটার চোখ এড়িয়ে গেছে। অগ্নিবোমায় বনের গাছ, ক্ষেতের ফসল জ্বলে ছাই হওয়ার পড়ে অগ্নিদগ্ধ বাচ্চাগুলোর দিশেহারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি এবং বিস্ফোরণের শব্দ মিলিয়ে গেলে, আর্তচিৎকার আমাদের গোচরে আসে।
 
ভিয়েতনাম যুদ্ধের এমন অনেক ছবি আমরা দেখেছি অসংখ্যবার। তখন যুদ্ধের বিপক্ষে অনেক গান কবিতা রচিত হয়েছে। যুদ্ধের বিরোদ্ধে চীৎকার করে কোন লাভ হয় নি দেখে এখন শান্তির পক্ষে যুদ্ধকে আমরা অবশ্যম্ভাবী করে নিয়েছি। যা এড়ানো যাবে না, তাকে মেনে নেয়াই মঙ্গল।
 
এমন একটা শান্তি শান্তি ভাব নিয়েই, গমের রস পান করতে গিয়েছিলাম একটা সরাইখানায়। বয়সে আমার চেয়ে অনেক বড়, কিন্তু কেমন যেনো একটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাব ভেতরে নিয়ে পাশে বসা লোকটা আধা ভাঙ্গা জার্মানে আমাকে জিজ্ঞেস করলো; বাড়ি কৈ?
 
বিরক্তি নিয়ে বাংলাদেশ জবাব দিয়ে পড়লাম আরেক বিপদে। সৈয়দ সাহেবের আব্দুর রহমানকে না দেখেও আফগানদের প্রতি একটা সহানুভূতি ছিল মনে। কিন্তু এখন একটু বিরক্তই লাগছে। এখানে এসেছি একান্তভাবে নিজের সাথে নিজের কিছু বোঝাপড়া করতে। কী চেয়েছিলাম, আর কী পেলাম জীবনে? শখের বশে এই সব ভাবতে ভাল লাগে আমার। কিন্তু; আমি আফগানী, বলে ভদ্রলোক যে খেজুরে আলাপের শুরুটা করলেন তা খুব সহজে শেষ হবে বলে মনে হচ্ছে না। আফগানিস্থানে ট্রাক চালাতেন। জার্মানে সে পেশারই কাজ পেয়েছেন। পাশের জুয়াখেলার মেশিনে সিকি-আধুলি ফেলে, স্টার্ট বাটন চাপলেন।
 
এবার আমার দিকে মুখ করে বললেন; বুঝলেন, সবাই আফগানদের বন্ধু। সমাজতন্ত্র নিয়ে এলো রাশিয়া। সেই উন্নত সমাজ ব্যবস্থাকে বাঁচাতে তাদের যুদ্ধ বহর দেখলে পিলে চমকে যায়! এদিকে আল্লাহর আইন নিয়ে নাজিল হলো মুজাহিদ। মাঝে পড়ে... এখানে এসে একটু ভাবলেন ভদ্রলোক। এ্যাশট্রে থেকে সিগারেট নিয়ে লম্বাটান দিলেন একটা। ছাদের দিকে তাকালেন তারপর আমার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন; বুঝলেন, মাঝে পড়ে তুলোধূনো হলো আফগান জনগন। আমার ছেলেটা... বলে আবার বিয়ারের গ্লাস মুখে লাগিয়ে কাত করে দিলেন গ্লাসটা। তরলটুকু আফগান মরুভূমির বালিতে মিলিয়ে গেলো যেনো। বুঝলেন আমার ছেলেটা...
 
মাথা দোলালেন কিছুটা আক্ষেপের ভঙ্গিতে। মনে হয় অনেক বিয়ার খেয়েছেন ভদ্রলোক। কথার খেই হারিয়ে ফেলেন ঘন ঘন। অনেক সময় বাক্যের পরের শব্দ খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। জার্মান ভাষাটাও খুব ভাল রপ্ত হয় নি। তাই আগের বলা শব্দ গুলো কয়েকবার বলে, অনেক ভেবে চিন্তে বাক্যের শেষের শব্দগুলো বলতে হয়। তোতলামির মতো।
 
আবার শুরু করলেন; আমার ছেলেটা... আসলে কোন ছেলে নয়। তার কোন লিঙ্গ নেই।
আমি ভাবলাম হয়তো সমকামী। তাই শান্তনা দেবার ভান করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম।
 
আমার কাঁধ চাপড়ে ভদ্রলোক বললেন; বুঝলেন, ল্যাণ্ড মাইনে পা পড়ে আমার ছেলেটার লিঙ্গ কিমা হয়ে গেছে। জার্মানরা চিকিৎসার কোন ত্রুটি করে নি। কিন্তু আমার ছেলেটার লিঙ্গ তারা কি করে লাগাবে? এই সবই আমাদের বন্ধুরা করেছে। আমাদের ভালোর জন্য, আমাদের শান্তির জন্য।
 
শান্তির দূত জর্জ ডব্লিও বুশ দাবী করেছেন পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা আমেরিকানদের উপর ঈশ্বর প্রদত্ত একটা দায়িত্ব। সাংঘাতিক রকম অভ্রান্ত অত্যাধুনিক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জ্বিত এই শতাব্দীর শান্তির যুদ্ধ। এমন নিখুঁত তাদের নিশানা যে, তৃতীয় ব্যক্তি বা নিরীহ জনগনের ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু যুদ্ধে নিরীহ জনগনের ভোগান্তিই তো সব চেয়ে বেশী। যারা আমাদের পক্ষে নয়, তাঁরা আমাদের বিপক্ষে। নিরপেক্ষতা বলে কোন শব্দ যুদ্ধে  নাই।
 
ওসামা-বিন-লাদেনকে জীবিত বা মৃত মার্কিন প্রশাষনের হাতে তুলে দিতে শুরু হয় আফগান যুদ্ধ। মিলিয়ন ডলার তাঁর মাথার মূল্য। কিন্তু আজ অবদি বিন-লাদেনের মৃত্যু নিশ্চিৎ হয় নি। বিন-লাদেন বা আল কায়দা, মুজাহেদিন যে নামেই তাদের ডাকা হোক না কেনো, এক সময় তাঁরা আমেরিকার বন্ধু ছিলো। মহা ভারতের এই ভূ-খণ্ডে আমেরিকার প্রাণপ্রিয় বন্ধু পাকিস্তান। পাকিস্তান লাখে লাখে আফগান শরনার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। আর যুদ্ধে আমেরিকার তাবেদারী করেছে? রাশিয়ার বিরোদ্ধে মুজাহিদ গেরিলাদের যুদ্ধে প্রয়োজনীয় সব রকমের সহযোগীতা তখন মৌলবাদের পক্ষে ইন্দন বলে গন্য হতো না। যুদ্ধের নীতি সব সময় এমনই হয়। যুদ্ধ যেহেতু জয়ের নীতি, তাই সেখানে জয়ই বড় কথা। নীতি তার পরে। এভাবেই চীন, আরব, তাজেখ সহ আফ্রিকান মুলসমানরা গেরিলা যুদ্ধের অনেক উপকরণ আমেরিকার কাছেই পায়। রুশ বিতারণের পর মুজাহেদিনরা বেকারত্ব গোছাতে শুরু করে আফগানিস্থানে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের যুদ্ধ।
 
সে সময় এক বন্ধুর বাসায় (জার্মানীতে) বেড়াতে গেলাম। বিদায়ের একটু আগে সে বন্ধু বলল; আমার কাছে আফগানিস্থানের একটা ভিডিও আছে। ভয়ের চোটে আমি একা সেটা দেখার সাহস করি না। আপনি রাজি থাকলে আমরা সেটা দেখতে পারি। মানুষের ক্ষমতা সম্পর্কে আমার অগাধ বিশ্বাস থাকায় আমি রাজী হই। ভিডিওতে দেখলাম কেবলামূখী করে একজন মানুষকে জবাই করা হচ্ছে, আল-কায়েদা বা তালিবানের নির্দেশে। আমার মতো একজন আম জনতার আগে সেটা পৃথিবীর তাবৎ গোয়েন্দা সংস্থা দেখেছে এই ব্যাপারটা আন্দাজ করতে কষ্ট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তখন পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার ওহী জর্জ ডব্লিউ বুশ পান নি! কাজেই শান্তির জন্য যুদ্ধ শুরু হয় নি।
 
টুইন টাওয়ার ট্র্যাজেডির পর বুশ আল-কায়েদার খবর পান এবং তখন একটা যুদ্ধের পরিবেশ তৈরী হয়। কিন্তু সেটা আল-কায়েদা, তালিবান আর তাদের সমমনা টেরোরিস্ট গ্রুপের বিরোদ্ধে। আফগান জনগনের জন্য আকাশ থেকে খাদ্যদ্রব্য নিক্ষিপ্ত হতে লাগলো। রুশ যুদ্ধে বিধ্বস্ত আফগানদের খাদ্য যোগানের চিন্তা এতদিন আমেরিকানদের মাথায় ছিল না। আকাশ পথে খাদ্য বিতরণের এই সহজ পথে এগিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থলমাইনে পা পড়েছিল সরাই খানায় আমার শান্তি বিঘ্নকারী আফগান ভদ্রলোকের ছেলের।
 
যুদ্ধের অনেক লক্ষ্যভ্রষ্ট আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি গোপন থাকে কৌশলগত কারণে। তালেবান কমাণ্ডো লুকিয়ে আছে একটা মাদ্রাসায়। বিমান হামলার পরে Task force 373-র সদস্যরা সেই এতিম খানায় খুঁজে পায় পাঁচটি শিশুর মৃতদেহ। আহত শিশুটি হাসপাতালে নেয়ার পথে প্রাণ হারায়। আফগানিস্থানে মার্কিন হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে পঞ্চাশ হাজার বেসামরিক আফগান জনগন। মাদ্রাসাই অনেক আফগান শিশুর শিক্ষার শেষ আশ্রয়। এইসব মাদ্রাসা তালেবানদের নিয়ন্ত্রনে। সেখানে তাদের আসা-যাওয়া থাকবেই। তাদের উদ্দেশ্যেই বোমা হামলা। কিন্তু প্রাণ হারালো হতভাগ্য শিশুগুলো।
 
এমন ঘটনাতো যুদ্ধে ঘটেই। এদিকে আছে তালেবানদের অর্তকিত হামলা। সৈন্যদের কনভয়ে হামলা চালিয়ে তালেবানরা ছিনিয়ে নেয় তেলের ট্যাঙ্ক। জনগনের বন্ধু তালেবানরা গ্রামের মানুষদের মন জয় করতে খুলে দেয় তেলের ট্যাঙ্ক। যে যতো পরো, তেল নাও। রাতে তালেবান দিনে ইসাফ । এই অবস্থায় কী কাজে লাগবে সে বিবেচনা দূরে রেখে যা পায়, তাই নিতে তেলের ট্যাঙ্কের পাশে জড়ো হয় গ্রামের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। এদিকে হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারে বদ্ধপরিকর ইসাফের জার্মান শরীক। মার্কিন টাক্সফোর্স ৩৭৩-র উৎসাহ উপেক্ষা করতে অপারগ জার্মান ইউরো ফাইটার নিঁখুত নিশানায় বোমা নিক্ষেপ করে তালেবান কর্তৃক ছিনিয়ে নেয়া তেল ট্যাঙ্কের উপর। দেড়’শ জনের প্রাণ হানি। একটা গ্রামের প্রায় সব মানুষ নিহত। লোভে পাপ, পাপের কারণে তাঁদের মৃত্যু! এমন ঘটনা এই একটাই?
 
লোভ? লোভটা কার? বুশ প্রশাষণের সদস্য ডিক চেনি-র ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি ইরাক যুদ্ধে সামরিক সরঞ্জাম পৌঁছে দিতে নিয়েছিল দশ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। দুই’শ নতুন সামরিক বিমান কেনা হয় যুদ্ধোপলক্ষে। তার একটারা দাম দুই’শ মিলিয়ন ডলার। তেলের হিসাবটা বাদ দিলেও যুদ্ধে লাভ/লোভ কার বেশী সেটা অনুমান করা খুব কঠিন নয়।
 
ইরাক যুদ্ধ অকারণ। তৎকালিন জার্মান পররাস্ট্রমন্ত্রী ইয়স্কা ফিসার তা খুব ভাল করেই জানতেন। ন্যাটো পররাস্ট্রমন্ত্রীদের মিউনিখ সম্মেলনে রামস ফেলডকে তুলোধূনো করতে দেখে ভেবেছিলাম, যুদ্ধে জার্মানদের সর্মথন শেষ। সম্ভবত পৃথিবীর সব চেয়ে স্বল্প শিক্ষিত জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিসার হার্বার্ডে অতিথি প্রভাষক পদ অলংকরণের আগে যুদ্ধের গুরুত্ব বুঝতে পারেন। কোন রোমাঞ্চ নয়, আফগান জনগনের চিরস্থায়ী শান্তি নিশ্চিৎ করতে আপাত পেসিফিক ফিসার খেমটা নাচেন আফগান যুদ্ধের তালে।
 
তালিবান এবং আল-কায়েদার কবল থেকে আফগানদের রক্ষা করতে শান্তির যুদ্ধে অবতীর্ণ ইসাফ বাহিনীর প্রাথমিক সাফল্য ভালই। সমস্যা শুরু হয়েছে তালেবানদের চোরাগুপ্তা হামলার পরে। অর্তকিতে যখন তখন যেখানে সেখানে চোরাগুপ্তা এবং আত্মঘাতি বোমা হামলায়, মার্কিন মিত্ররা দিশেহারা। তাদের কাছে যে কোন আফগানই এখন তালেবান। এই অবস্থায় মিত্রদের আক্রমন হয় বেপরোয়া। প্রতিটা আক্রমনে নিহত বেসামরিক নাগরিকদের সংখ্যার সাথে আফগানদের আস্থা কমে মিত্র বাহিনীর উপর। সে জন্য মিত্র বাহিনী চেষ্টা করে প্রতিটা বেসামরিক মৃত্যু গোপন রাখতে।
 
[url=www.wikileaks.org] উইকিলেকস [/url] নাক গলানের আগ পর্যন্ত গোপন রাখার ব্যাপারটা গোপনই ছিল। এখন অর্ন্তজালে আফগান এবং ইরাক যুদ্ধের অনেক অনৈতিক এবং লোমহর্ষক খবর যে কোন মানুষের জন্য উম্মুক্ত। কিন্তু ইরাক যুদ্ধের আগে দশ লক্ষ্য মানুষের সমাবেশ হয় লণ্ডন শহরে। মানুষ উইকিলেক্সের আগেই জানতো; যুদ্ধে অকারণে প্রাণ দেয় নিরিহ মানুষ।
 
আফগান যুদ্ধে মার্কিনদের নির্ভরশীল বন্ধু পাকিস্তান। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোদ্ধে পাকিস্তানের সর্বাত্বক সহায়তায় গড়ে উঠেছে তালিবান। মার্কিন বন্ধুদের জন্য মুখে মিঠা, কিন্তু পুরানো প্রেমিক তালেবানদের সাথেও গোপন অভিসার অব্যাহত রাখছে পাকিস্তান। আফগানিস্থানের বাইরে একমাত্র পাকিস্তান থেকেই যুদ্ধের দিকনির্দেশনা পায় তালিবান। তালিবানদের মিটিংএ পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোপন সংস্থা উপস্থিত থাকেন। তালিবানের পক্ষে লোকবল প্রশিক্ষণ সহ মিত্রশক্তির সমর্থিত হামিদ কার্জাইকে হত্যা করার নির্দেশ পর্যন্ত আসে পাকিস্তান সরকারী সংস্থার পক্ষ থেকে। ১৪ জানুয়ারী ২০০৮এ তালিবানের ইউএন কর্মী অপহরণ পরিকল্পনা করেছেন পাকিস্তান রাষ্ট্রীয় গোপন সংস্থার প্রধান হামিদ গুল। এক হাজার মোটর বাইক, সাত হাজার অস্ত্র; যার মধ্যে কালাস্নিকফ রাইফেল, মর্জার এবং স্ট্রেলা রকেট রয়েছে। তালেবান তা পেয়েছে হামিদ গুল এর কাছ থকে। এ সবই উইকিলেকস-এর কল্যানে আমাদের নখদর্পনে।
 
ইরাকে পরাজয় মেনে নিয়েছে ওবামা। সব জায়গা থেকে লেজ গুটিয়ে নেয়া আমেরিকানদের জন্য অসম্মান জনক। অথচ এই যুদ্ধে জেতার কোন সম্ভাবনা নাই। মিত্রশক্তির প্রতি সাধারণ আফগানদের বিরক্তি সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বিরোধী মনোভাবে অবনত হচ্ছে। যুদ্ধের কারণে অচল নাগরিক জীবন। যারা বেঁচে আছে তাদের দৈনন্দিন জীবনের চাহিদা মেটাবার মতো অবস্থা যুদ্ধ দিয়ে সম্ভব না। রাতের বেলা আসে তালেবানদের দেশপ্রেমী ডাক; বিদেশী শত্রুরা বলাৎকার করছে তোদের মাতৃভূমি, হত্যা করছে তোদের বাপ-ভাই-নারী-শিশু, চেয়ে দেখবি রে নাদান, না রক্ষা করবি মাতৃভূমিকে। সাথে লোভ। ইসাফ কর্তৃক ব্যবহৃত যে কোন রাস্তায় একটা বোমাপুতে রাখলে সাত’শ ডলার পুরস্কার!
 
সংগতি সম্পন্ন আফগানরা বহু আগেই পিঠ দেখিয়েছে আফগানিস্থানকে। এখন যারা যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্থানে আছে, তাঁদের বেশীর ভাগের আর্থিক অবস্থা দেশটার মতই। আর একটা আফগান দল আছে, যারা যুদ্ধে লাভবান হচ্ছে। সিআই-এর মতে বর্তমান কার্জাই সরকারের যে কোন আমলার কাছ থেকে একটা সাধারণ তথ্যের জন্যও ঘুষ দিতে হয়। অনেক লোভ দেখিয়েও তালেবানদের কাছ থেকে কোন তথ্য বের করা সম্ভব হয় না। সিআইএ-র মতে আফগান যুদ্ধে এখনো সৎ আছে কেবল তালিবান। এমন অবস্থায় পরিবারের দায়িত্ব মাথায় নিয়ে একজন গরীব আফগান কতবার তালেবানদের লোভ পায়ে ঠেলবে! কাজেই ধীরে ধীরে শক্তিশালী হচ্ছে তালেবান। কাবুলের রাস্তায় মার্কিন বিরোধী মিছিলে আমেরিকার পতাকায় আগুন দিচ্ছে সাধারণ জনগন।
 
ব্রিটেন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রত্যাহার করছে নিজেদের সৈন্য। এমতাবস্থায় পরাজয়ের গ্লানি মিলেমিশে মাখার জন্য নতুন শরীক দরকার। সামরিক শক্তিতে গুরুত্ব না থাকলেও, জাতি হিসাবে বাঙ্গালীদের সাথে পেলে ক্ষতি কী! এই নীতিতে আমেরিকানরা কথাটা তোলেন দীপু মনির কানে। আমরাও গা করি। চলুন, যোগ দেই আমেরিকানদের শান্তির যুদ্ধে। পাকিস্তানের মতো বন্ধুর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আফগানদের বিরোদ্ধে বীরচিত যুদ্ধের মজাই আলাদা।
 
আরো জানতে নীচের লিংকে ক্লিক করুন। 
 
[url=www.guardian.co.uk/world/the-war-logs] গার্ডিয়ান[/url]
 
[url=www.nytimes.com/2010/07/26/world/26wiki.html?_r=1] নিউইয়র্ক টাইমস [/url]


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

আজকের জার্মান কাগজেই মুশারফের ইন্টারভিউ বেরিয়েছে, যে হ্যাঁ, আমরা তো জঙ্গীদের তৈরী করেই থাকি পাকিস্তানে।
http://www.bbc.co.uk/news/world-south-asia-11474618
আসুন, তাদের মহান ব্রতেও যোগ দিই।

পুতুল এর ছবি

SPIEGEL: Why did you form militant underground groups to fight India in Kashmir?

Musharraf: They were indeed formed. The government turned a blind eye because they wanted India to discuss Kashmir.
ভারত ভাগ হয়ে লাভ যা হলো‌‌‍‌‌‌-
এই জানোয়ারগুলো পাকিস্তান নামক খাঁচায় বন্দী।

Nobody was bothered that Pakistan got split in 1971 because of India's military backing for Bangladesh (which declared independence from Pakistan that year).

এই হল পাইক্যাদের মনোভাব!

স্পিগেলের ইংলিশ ভার্সান আছে, জানাছিল না। লিংকটা শেয়ার করার জন্য ধইন্যাপাতা বস।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সাঈদ আহমেদ এর ছবি

ভালো বলেছেন... অনেক লম্বা ইতিহাস তাদের সাথে আমাদের হাসি

সত্তরের দশকে আমেরিকা যখন আফগানিস্থানে দুধ-কলা রপ্তানি করছিল, তখন তো আমাদের দরকার হয়নি... এখন কেন সাপুরের খোজ? নিজের সাথে তর্ক করেছি অনেক, কিন্তু এই বিষয়ে আমেরিকার সাথে লাভ-ক্ষতির হিসাব মেলেনা মন খারাপ

-----------
চর্যাপদ

-----------
চর্যাপদ

পুতুল এর ছবি

আফগানদের ভাগ্যবিধাতা আফগানরাই হোক। অন্য কারো নাক গলানোর দরকার মনে হয় নাই।
আফগানযুদ্ধে লাভ/ক্ষতির হিসাব কিছু নেই অন্তত আমাদের জন্য।
ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকানদের ফিরিয়ে নিয়েছিল কেনেডী। তার কিছুদিন পরেই কেনেডী নিহত হয়।
আমিরাকার অস্ত্র ব্যাবসায়ীরা অস্ত্র ব্যাবসার জন্য ইসু বানায়। এই ব্যাবসায় নীতি বলে কিছু নেই। কত জন মরল বাঁচল সেই বিবেচনা করলেতো অস্ত্র বানানোই অনৈতিক।
গোটা কয়েক মানুষ আরো ধনী হওয়ার জন্য যুদ্ধ বানিজ্য করে। করুনা হয় আমেরিকার জনগনের জন্য। টাকাটা তো তাঁরাই দিচ্ছে। তিন বিলিয় ডলারের বারুদ দিয়ে পঞ্চাশ হাজার মানুষের জীবন পুড়িয়ে, এখন ভাবছে এই যুদ্ধে জয় নাই।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

পুতুল এর ছবি

এতো নিখুঁত ভাবে এতো অল্প শব্দে এই যুদ্ধের বর্ণনা কেবল আপনিই দিতে পারেন। ধইন্যাপাতা, গুর কোন কিছু দিয়াই আপনার অভ্রান্ত পর্যবক্ষেণের যথেষ্ট মূল্যায়ন সম্ভব না। তাই বিস্ময়ে অবাক হয়ে রই।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নাজনীন খলিল এর ছবি

এসব পড়লে খুব কষ্ট হয়।ভাবতে অবাক লাগে সভ্য পৃথিবী আমাদের কি ভয়াবহ -নিষ্টুর বর্বরতা উপহার দিচ্ছে।

সাফি এর ছবি

উইকি লিক্স এর ফাউন্ডার কেও পদে পদে নাজেহাল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।