এইডস প্রতিরোধে তামাক!

পুতুল এর ছবি
লিখেছেন পুতুল (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/০৯/২০১২ - ৩:৩৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংসকারী (Human Immunodeficiency Virus) ভাইরাস, এইচআইভি-র প্রতিষেধক এখন আমাদের হাতের নাগালে! এইচআইভি-র হাত বেঁধে দেয়ার দড়ি (পড়ুন এন্টিবডি) এতদিন তৈরী হতো টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং বা সেল কালচারে। খরচ সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে আমাদের শরীরেই সাধারণত তৈরী হয় এই এন্টিবডি। তার জন্য আমাদের দেহে রয়েছে এক ধরণের বিশেষ কোষ। এই এক ধরণের বিশেষ কোষের বাইরের দিকে একটি প্রটেইনের বৃন্ত আছে। আর এই বৃন্তটি ধরার জন্য এইচআইভি-র আছে একটি হাত (gp 120)।

এইচআইভি আমাদের শরীরের রোগ জীবাণুর বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরীর সেলে ঢোকে; সেলটির ডিএনএ দিয়ে তৈরী করে নতুন এইচআইভি। কোষটি ধ্বংস করে বেরিয়ে আসে অসংখ্য নতুন ভাইরাস। ঢোকে আরো অনেক সুস্থ রোগ প্রতিরোধকারী কোষে।

এক সময় রোগ প্রতিরোধকারী কোষ শরীরে কমে যায় বা একেবারেই থাকে না। রোগ প্রতিরোধের কোন ক্ষমতাও আর থাকেনা। এই অবস্থায় এমন কী সর্দি-কাশি হলেও বাইরে থেকে এন্টিবডি বা অন্য কোন ঔষধ না দিলে রোগ ভাল হয় না। স্বাভাবিক অবস্থায়ও কিছু ব্যাকটেরিয়া থাকে শরীরে। যারা সুস্থ অবস্থায় কোন রোগের সৃষ্টি করতে পারতো না। সুযোগ পেয়ে তারাও রোগ বাঁধায়। শরীর দুর্বল হলে যা হয় আর কী। আইচআইভি-র কাজ হল শুধু পিছ মোড়া করে আমাদের হাত বেঁধে রাখা, হাতি কাঁদায় পরলে চামচিকা-ও যেমন মারতে আসে, সেভাবে রোগ বাঁধায় অন্য রোগ জীবাণু।

Pg12 নামে এইচআইভি-র হাত বাঁধার দড়ি বিজ্ঞানীরা তৈরী করেছেন, যার নাম (2G12) এন্টিবডি। এইডস আক্রান্ত রোগীর শরীরে যেহেতু এন্টিবডি তৈরী সম্ভব না, সে জন্য তৈরী হয় টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং বা সেল কালচার করে রোগীর শরীরের বাইরে। প্রাণীর বা মানুষের শরীরের ভেতরের অবস্থা বজায় রেখে, শরীরের বাইরে একটি পদ্ধতি চালানো বেশ কঠিন এবং সংগত কারণে খরচও অনেক অনেক বেশী।

এইচআইভি আক্রান্ত বেশীর ভাগ মানুষ এত দামী ঔষধ কিনতে পারে না। তাই উৎপাদন খরচ কমিয়ে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ সব মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় আনার জন্য কাজ শুরু করেন প্র: রাইনার ফিসার। “ফার্মা প্ল্যানেট” নামে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের জেনেটিক মডিফাইড উদ্ভিদে এন্টিবডি উৎপাদন একটি যুগান্তকারী পদ্ধতি। লণ্ডন সাঙ্কট জর্জ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসা বিজ্ঞানী প্র: জুলিয়ান মা-এর সাথে সম্মিলিত ভাবে এই পরিকল্পনা হাতে নেন প্র: ফিসার ২০০৪ সালে।

তামাক বাছাই করার অনেক কারণের মধ্যে প্রধান কারণ গুলো; তামাক উদ্ভিদ জেনেটিক ভাবে মডিফাই করা বেশ সহজ। পৃথিবীর প্রায় সব জায়গায় উদ্ভিদটি হয়, বিশেষ কোন পরিচর্যা ছাড়াই। মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণী ধূমপান করে না। মানুষ তামাক পুড়িয়েই সেবন করে বলে মডিফাইড জিন অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কম।

পাঁচবার মডিফিকেশনের পর কাঙ্ক্ষিত(2G12) এন্টিবডি উৎপাদন শুরু করেছে তামাক। উৎপাদিত এন্টিবডি ২০০৮ সালে প্রাক ক্লিনিক পরীক্ষা শেষ করেছে কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরো সহজ সাধ্য পদ্ধতিতে বিশ্বের যে কোন মানুষের সেবায় তাদের হাতের নাগালে পৌঁছে দেয়া হবে তামাক এবং উদ্ভিদজাত এন্টিবডি তৈরীর কৌশল- ঘোষণা করেন প্র: ফিসার।
আগ্রহীরা বিস্তারিত পাবেন এখানে।


মন্তব্য

প্রতিফলন এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে লিখা। শুরুতেই ধন্যবাদ।

আচ্ছা, সাধারণ এন্টিবডির ধারণা এইডসের ক্ষেত্রেও খাটে কি? এইচআইভি ভাইরাসের বংশগতির গাঠনিক একক - আরএনএ (ডিএনএ নয়)। এই ভাইরাসের বংশবৃদ্ধির সময় ট্রান্সক্রিপ্টেজ এনজাইম দরকার হয়, যা খুবই দুর্বল। এবং এই কারণে এর জেনেটিক কোড কপি করার সময় প্রচুর পরিমাণ ভুল হয় অর্থাৎ প্রচুর মিউটেশন ঘটে। এই মিউটেশনের মধ্যে ভ্যারিয়েশনও প্রচুর। কোন প্রতিষেধক এইডসের বিরুদ্ধে কাজ করলেও, প্রচুর পরিমাণ মিউটেশনের কারণে ভাইরাস সাধারণত এমন কোন বৈশিষ্ট্য পেয়ে যায়, যা তাকে বেঁচে থাকতে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে। তখন আর সেই প্রতিষেধকটি কাজ করে না। এইডসের এমন বৈশিষ্ট্যের কারণে এর প্রতিষেধক তৈরি করা বিশেষ ঝামেলার কাজ বটে। তামাক থেকে প্রস্তুতকৃত প্রতিষেধকটি তাই কতটুকু কার্যকর সেদিকে আরো বিস্তারিত আলোচনা করলে ভাল হতো।

লেখাটার শিরোনামের ব্যাপারে ছোট্ট আপত্তি আছে (যদিও এক্ষেত্রে লেখকের ইচ্ছাই শেষ কথা), কারণ এমন শিরোনাম কাউকে কাউকে তামাক বা সিগারেট খেতে উৎসাহিত করতে পারে। কারণ, অনেকেই কেবল শিরোনাম পড়ে, ভিতরের লেখা পড়ে না।

ভাল থাকবেন।

আবছায়া এর ছবি

লেখক সম্ভবত এইডস এর প্রতিষেধক নয়, এইডস আক্রান্ত রোগীর, বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়/তাকে সুস্থ রাখার পদ্ধতি নিয়ে লিখেছেন।।

পুতুল এর ছবি

প্রতিফলন সচলায়তনে স্বাগতম।

জেনেটিক কোড কপি করার সময় প্রচুর পরিমাণ ভুল হয় অর্থাৎ প্রচুর মিউটেশন ঘটে।

এই মিউটেশনটাই মনে হয় এইচআইভি-র ক্ষমতা। সে জন্যই এই লাইনে এখনো একে বন্ধ বা বিনাষ করতে পারে নাই এখনো। কিন্তু মিউটেশন যতই হোক জিপি ১২০ তো বহিরাবরণে একই থাকেই। সেটাই আপাতত টার্গেট মনে হয়।
লেখার শিরোনাম লাবর জার্নালের প্রিন্ট ভার্সানে জার্মান ভাষায় এইটাই (ইংরেজী লিংক পেলাম না)। তাই বিশেষ কিছু ভাবি নাই। ভাল কিছু মনে আসলে বদল করে ফেলব। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ভালো মানুষ এর ছবি

লেখাটা শিরোনামের সাথে বেকাপ্পা লাগছে। আশা করেছিলাম বিস্তারিত পাবো। শেষ দিকে এসে একটু চেষ্টা করেছিলেন কিছু বলার তামাক নিয়ে।
আচ্ছা এখানে কোন রেফারেন্স দেননি। রেফারেন্স কি দেওয়া যায়? আর সেটা নিশ্চয়ই কোন বিজ্ঞান প্রবন্ধ হলে খুবই ভালো।
২জি১২ নিয়ে আগ্রহটা বেড়ে গেল
ধন্যবাদ লেখার জন্য ।

পুতুল এর ছবি

শিরোনাম নিয়ে ভাবছি। বিস্তারিত লেখার ইচ্ছা ছিল না আসলে। আমার কাছে খবরটা আকর্ষণীয় মনে হয়েছে, তাই সবার সাথে শেয়ার করার জন্য লেখা। আমি যে লেখাটা পড়ে লিখেছি সেই লেখাটার ইংরেজী ভার্ষন পেলাম না। লেখার নীচে একটা ইংরেজী লিংক দিলাম। এখানে বিস্তারিত পাবেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

স্যাম এর ছবি

সুখবর!
ক্যান্সার নিরাময় এর খরচ সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকত! মন খারাপ

পুতুল এর ছবি

সেই সুখরও একদিন নিশ্চই আসবে।
অট: এত সুন্দর সুন্দর ব্যানার বানান কেইমনে!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অতিথি লেখক এর ছবি

এইচএইভি নিয়ে এমন গবেষনা প্রচুর হয়। এই ভাইরাসের মিউটেশন রেট এত বেশি যে কার্যকর এন্টিবডি/ভ্যাক্সিন এখনো আসেনি। লেখায় রেফারেন্স দিলে খুব ভাল হয়। হাসি

ইফতি

পুতুল এর ছবি

ঠিকই বলেছেন। এমন ফাও খবর আমিও আগ্রহ নিয়ে পড়েছি। কিন্তু পরে ফাও বলে প্রমানিত হয়েছে। এবারেরটা মনে হয় ফাও না। কারণ ২জি১২ তো আছেই। নতুন হচ্ছে তা তামাক উদ্ভিদ থেকে তৈরী হচ্ছে।
লেখার নীচে একটা রেফেরেন্স যোগ করেছি।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।

পুতুল এর ছবি

পড়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

অমি_বন্যা  এর ছবি

ভালো একটা বিষয় । তবে প্রতিষেধকটি যদি বের হয় তাহলে তা হবে এক বড় আবিস্কার।

পুতুল এর ছবি

সেটাই লক্ষ মানুষের আশা। ধন্যবাদ অমি_বন্যা।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

ক্লোন৯৯ এর ছবি

HIV প্রতিষেধক আমাদের হাতের নাগালে!! অ্যাঁ

প্রধাণ সমস্যার কথা ১ং মন্তব্যেই এসেছে তারপরেও আর একটু ডিটেলস এবং রেফারেন্স দিলে আলাপে সুবিধা হত।

চলুক

পুতুল এর ছবি

ধন্যবাদ ক্লোন৯৯। প্রধান সমস্যা জানি কিন্তু সমাধান অজানা। বিস্তারিত আলোচনা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। তাই সেদিকে যাইনি। মূল (যেটা দেখে আমি লিখেছি) লেখাটা ইংরেজীতে পেলাম না। একটা রেফেরেন্স দিলাম। আশা করি যথেষ্ট তথ্য পেয়ে যাবেন। ইংরেজীতে মলিকুলার ফার্মিং লিখে গুগল করেও বেশীর ভাগ তথ্য জার্মান ভাষাতেই পেলাম!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।