আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা কৌশলের ক্রমবিকাশ-১

দুর্দান্ত এর ছবি
লিখেছেন দুর্দান্ত (তারিখ: শনি, ০৩/১২/২০১১ - ৯:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ তাদের সেনাবাহিনীর পরিচালনা কৌশল। আর সেই দেশটি যদি পাকিস্তান হয়, তবে সেখানে সেনাবাহিনীর পরিচালনা কৌশলই আদতে দেশটির পররাষ্ট্রনীতি। এটা ৪৭, ৬৫, ৭১ এ যেমন সত্য ছিল, এখনো আছে। এবছরের নভেম্বরের ২৬ তারিখের ঘটনা ও তারপরের বহুল প্রচারিত কেচ্ছাকাহিনিতে সেটাই দেখা গেছে।

বেশ ক'বছর আগে ‘গেরিলা থেকে সম্মুখযুদ্ধ’ বইটি যখন প্রথম বারের মত পড়ি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে মাঠ-পর্যায়ে দেখতে পেয়েছি। তবে মাঝে মাঝেই পেছনের একটি প্রচ্ছন্ন পরিচালনা কৌশলের উপস্থিতি টের পেয়েছি। তার থেকেই ৭১ ও এর আগে পাকিস্তানী, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর পরিচালনা কৌশল নিয়ে আগ্রহী হই। এখানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ক্ষন পর্যন্ত এই তিনটি দলের রণ-পরিচালনা কৌশলের ক্রমবিকাশ নিয়ে কিছু কথা লিখছি। এই কথাগুলো ঘটনার বর্ণনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আলাদা করে কোন কিছু প্রমাণ করার ইচ্ছে নেই।

টিকটিকি বিপদে পড়লে লেজ ফেলে পালায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা যুদ্ধক্ষেত্রের ঠিক পেছনেই অবস্থিত বাংলার প্রতিরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্রিটিশ ফিল্ডমার্শাল অকিনলেক এখানের সমতল ভূমি, নরম-সরম মানুষজন আর এখানের মাটির নিচে সোনাদানার অভাব বিবেচনা করে এদেশটাকে টিকটিকির লেজ সাব্যস্ত করল। জাপানি আক্রমণ এলে এদেশটাকে তাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে ভাগীরথীর ওপারে বসে সে ও তার সাথীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। একটা লেজ খসলে আরেকটা গজাবে। বাংলায় অগণিত মানুষ। এর কিছু মারা পড়লে পড়বে, তারপর আবার কিছু জন্মাবে। সুতরাং এখানে সামরিক বিনিয়োগ করা হল না। বরং খাদ্য-নিয়ন্ত্রণের নামে যুদ্ধ ছাড়াই প্রচুর বাঙ্গালীকে অনাহারে মেরে ফেলা হল। অকিনলেক আরো কিছুদিন ছিল। কিন্তু একদিন যাবার সময় হল ওরা গেল। যাবার আগে ওরা মালিকানার চাবির সাথে সাথে পাকিস্তানের হাতে ৬ টি পদাতিক ডিভিশন রেখে গেল। তার মাত্র একটি রইল পূর্ব পাকিস্তানে। এই ডিভিশন আবার বাবুরাম সাপুড়ের দুবলা সাপ। এর শিং নেই, নখ নেই। ভারী অস্ত্র বা আর্মার্ড বাহনও নেই।

৪৭ এ ঢাকায় পূর্বাঞ্চলের সেনাপ্রধান হয়ে এলো ব্রিগেডিয়ার আইয়ুব খান। এখানে সে তার ইংরেজ প্রভুদের ‘টিকটিকি’ ধারনাটি মনে প্রাণে ধারণ করল। যদি তার জানি দুশমন ভারত কোনদিন পাকিস্তান আক্রমণ করে বসে, তার প্রতিক্রিয়ায় সেই লেজ খসানো কৌশল বলবত রাখার ব্যাপারে সে দৃঢ়-কল্প হল। কাশ্মীর যুদ্ধের সময়ে সে ও তার সাথীরা প্রচার করল ‘The defense of the East pakistan lies in the West’. আসলে ব্রিটিশরা যুদ্ধবাজ জাত বলে বলে পাঞ্জাবী-পাশতুন-বালুচদের মাথাটাই বিগড়ে দিয়েছিল। অনেকদিন হাঁটুসর্বস্ব থাকলে একদিন ঠাস করে তো আর কেউ হাঁটুর বাইরে ভাবতে পারেনা। কিন্তু ‘৫৮ সালে ঢাকার মার্কিন কনসুলার পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক সমস্যা পরিষ্কার ভাবে দেখেছিল। ২৯ মে ১৯৫৮ সালে স্টেট ডিপার্টমেন্টে পাঠানো এক টেলিগ্রামে সে বলে দিল, “পূর্ব পাকিস্তানকে ধরে রাখতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে হবে। এখানের একটি দুর্বল ডিভিশনে দুটি বাঙালি ব্যাটেলিয়ন আছে যারা বিদ্রোহ করে বসতে পারে। এখানে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করা মানে পশ্চিম পাকিস্তানে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা।" আমেরিকার বদৌলতে হাঁটুর ভেতরেই রয়ে গেল পাকিস্তানের সেনাধ্যক্ষরা।

চীন ভারত যুদ্ধ না লেগে গেলে ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় সেনাবাহিনীর সদস্যদের কোমর মেদহীন রাখাটা বেশ কষ্টকরই হত। চৌকশ যোদ্ধার কাছে শান্তিকালীন অনুশীলন তো ছুটির মতই। এই যুদ্ধের সময়ও পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধানের কাছে ‘মুর্গীর গলা’ শিলিগুড়ি করিডোরে চীনা আক্রমণ আর মিজোরাম-নাগাল্যান্ড-পশ্চিমবঙ্গের গণ অভ্যুত্থান মোকাবেলার যতটুকু অগ্রাধিকার ছিল, তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান নিয়ে অতটা ভাবা-ভাবি তার বা দিল্লীতে তার ওপরওয়ালা, কারোরই খুব একটা করা হয়ে ওঠেনি। ৬৫র এই যুদ্ধের সময়ে ওই টিকটিকির মাথারা দেখিয়ে দেয়, ওদের চোখে, লেজটি কোথায়। বিনোদনের বিষয়, পশ্চিম ফ্রন্টে উন্নত সরঞ্জাম থাকা সত্ত্বেও কোনও বিশেষ আঞ্চলিক দখল ছাড়াই পাকিস্তান হেরে বসে। এই যুদ্ধের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তান দুপাশ থেকেই পূর্বাঞ্চল নিয়ে নতুন করে ভাবা শুরু হয়। ভারতের কৌশল নিয়ে পরে বলছি। আগে পাকিস্তানের কৌশল নিয়ে কিছু বলা যাক।

এদিকে দেশবিভাগের পর থেকে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর যাকিছু প্রবৃদ্ধি, তার প্রায় পুরোটাই ঘটেছে পশ্চিমে, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতিরক্ষার স্বার্থে। পাকিস্তান দেশটির সেনাবাহিনী ৬ ডিভিশন থেকে বেড়ে ১৩টি হলেও, পূর্বপাকিস্তানে থেকে গেছে একটিই। ইয়াহিয়া এসে সেনাবাহিনীতে কিছু রদবদলের ভান করেছিল বটে। তার পাঠানো ইয়াকুব খান পূর্ব পাকিস্তানের সেনাধ্যক্ষ হয়ে এসে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিরক্ষায় একটি রণ-পরিচালনা কৌশল গঠনের কাজ শুরু করে। তারই লোক কর্নেল রাও ফর্মান আলী ৬৮-৬৯ এর নভেম্বর-জানুয়ারিতে ‘অপারেশন এক্স-সুন্দরবন-১’ পরিচালনা করে। ইয়াকুবের আরেক করিতকর্মা অফিসার মেজর জেনারেল মোজাফফর হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত হয় ‘অপারেশন তিতুমীর’ ১৯৭০ এর জানুয়ারি মাসে। এই দুটি অনুশীলনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলের প্রথম পরিচালনা কৌশল।

পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পরিকল্পনাবিদের যেসব অনুসিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে তাদের পরিকল্পনা করেছিল সেগুলো হলঃ

১. বছরের একটি অল্প সময় পূর্বপাকিস্তানে স্বাভাবিক যুদ্ধ পরিচালনা করা যায়। এর বাইরে, পূর্বপাকিস্তান বস্তুত একটি জলাভূমিতে পরিণত হয়। সে সময়ে এখানে সুসজ্জিত সৈন্যবাহিনীকে গন্তব্যে এগিয়ে নেয়া কষ্টসাধ্য।

২. যুদ্ধ পরিচালনার যোগ্য সেই কয়েকটি মাসেও এই ভূখণ্ডের নদীবহুলতা এখানে যুদ্ধ পরিচালনার একটি বড় অন্তরায়। শেষ পর্যন্ত আকাশ ও নদীপথ যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার জয় নিশ্চিত।

৩. পূর্ব পাকিস্তান বস্তুত ভারতের ‘ভেতরে’ অবস্থিত।

৪. ভারতের মূল আক্রমণ পশ্চিম দিক থেকে আসবে, যেটা যমুনা নদী পর্যন্ত দখল করে নেবে। পূব থেকেও গৌণ আক্রমণ আসতে পারে, যেগুলো অনায়াসে সিলেট ও চট্টগ্রামকে দখল করে নেবে।

৫. পশ্চিম পাকিস্তান বা চীনা আক্রমণ না ঘটলে ভারতের ঢাকা সহ পূর্বপাকিস্তান পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে বড়জোর ২-৩ সপ্তাহ লাগবে।

এই ধরনের পরিস্থিতিতে ভারতের আগ্রাসন থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষা করার বাস্তব চেষ্টা করতে হলে পূর্ব পাকিস্তানে এরকম সংখ্যায় পদাতিক সৈন্য রাখতে হবে, যা ভারতের পূর্বাঞ্চলের প্রত্যাশিত সেনা-সংখ্যার চারগুণ। তদুপরি ভারতীয় বিমান ও নৌবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য যথেষ্ট এন্তেজাম ও থাকতে হবে। এইসব যোগাড়যন্ত্র করার সামর্থ্য পাকিস্তানের থাকলেও সেগুলো করার ইচ্ছা পশ্চিম পাকিস্তানের কোনদিনই ছিলনা। তাই এইসব পূর্বধারণা ও অপারেশন এক্স-সুন্দরবন-১ ও তিতুমীরের ফলাফলের ভিত্তিতে যে রণকৌশল রচিত তার উদ্দেশ্য সেই পুরাতন টিকটিকির লেজ ফেলে পালানোর চাইতে বেশী দূরে এগুলো না। এই ভূখণ্ড ও এর জনগণকে যথোচিত রক্ষা করার বদলে সেনাবাহিনীর ক্ষয়ক্ষতি কমানো ও ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকা থেকে ভারতীয় আক্রমণ যতদিন সম্ভব ঠেকিয়ে রাখাই হল এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।

পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে ভারতের পুরো সীমানা জুড়ে সেনা মোতায়েনের তো প্রশ্নই আসেনা, এই পরিকল্পনার যে ফরওয়ার্ড লাইন, বা সম্মুখবুহ্য সেই খুলনা- যশোর-রাজশাহী-হিলি-দিনাজপুর-রংপুর-জামালপুর-ময়মনসিংহ-সিলেট-কুমিল্লা –চট্টগ্রাম বরাবর এলাকায়ও সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা পাকিস্তান রাখল না। দ্বিতীয়বুহ্যটি ধরা হল মধুমতী-পদ্মা-রাজশাহী-হিলি-বগুড়া-জামালপুর-ময়মনসিংহ-ভৈরব-কুমিল্লা-মেঘনা-ফরিদপুর – এই বরাবর। সিলেট আর চট্টগ্রামকে এর বাইরে রাখা হল। ইনারলাইন বা গর্ভবুহ্য চিহ্নিত করা হল যমুনা-পদ্মা-মেঘনা-পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদীর মাঝের মানে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকাকে। যদি ভারত আক্রমণ করে, তাহলে সৈন্যরা রংপুর থেকে সরে এসে হিলি-বগুড়া হয়ে গর্ভবূহ্যের ভেতরে চলে আসবে। একইভাবে যশোরে অবস্থানরত সৈন্যেরা থেকে মধুমতীর এপারে চলে আসবে। ঢাকায় অবস্থিত সৈনিকেরা উত্তরে গিয়ে জামালপুর-ময়মনসিংহ-ভৈরব সামলাবে। আর কুমিল্লা থেকে সেখানের সৈন্যেরা পশ্চিমে সরে এসে চাঁদপুর-দাউদকান্দিতে শত্রুর মোকাবেলা করবে।

১৯৭০ এর অক্টোবর মাসে এই পরিকল্পনা রাওয়ালপিন্ডিতে পাশ করা হয়। এর কিছুদিন পরেই সেবছরেরই নভেম্বরে অপারেশন ব্লিটজের আওতায় পূর্বপাকিস্তানে নিযুক্ত সামরিক বাহিনী থেকে সম্ভাব্য বিদ্রোহীদের আগাম দমন শুরু হয়ে যায়।

(চলবে)


মন্তব্য

ফারুক হাসান এর ছবি

দুর্দান্ত পোস্ট! পড়ছি।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

'বাংলাদেশের স্বাধীনতা আসলে একটি অপরিকল্পিত গনবিস্ফোরনের ফল'- এইরকম একটা বহুল ব্যবহৃত ছাগুপ্রচারনার বিরুদ্ধে এরকম তথ্যসমৃদ্ধ পোষ্ট কাজ দেবে।
ধন্যবাদ, অপেক্ষায় থাকলাম।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

তথ্যসমৃদ্ধ একটি প্রয়োজনীয় পোস্ট। বিশ্লেষনও মানসম্মত। আগামী পোস্টের অপেক্ষায়..।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

অসাধারণ কাজ! আগে কেউ মুক্তিযুদ্ধকে এই কনটেক্সট থেকে বিস্তারিতভাবে বিশ্লেষণ করেছেন বলে দেখিনি। সিরিজ দৌড়াক।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার কাজ হচ্ছে। পরবর্তী পর্বগুলোর অপেক্ষায় থাকলাম।

অন্যকেউ এর ছবি

চমৎকার পোস্ট। চলুক।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর নজরে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির ক্রমবিবর্তন কীভাবে চিত্রায়িত হোত, এই বিষয়টা নিয়ে কিছু পাবো আশা করি। পাশাপাশি, যুদ্ধের শেষে ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্ট্র্যাটেজি, বা তাদের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ করা হয়, সে বিষয়েও সিরিজটা বিস্তৃত হতে পারে।

এসব কিছু ছাড়াই, 'আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা কৌশলের ক্রমবিকাশ' দেখার জন্য এই সিরিজের সাথে থাকবো।

_____________________________________________________________________

বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।

হিমু এর ছবি

চলুক!

দ্রোহী এর ছবি

সিরিজ পড়ার জন্য চা নিয়ে বসলাম।

তাপস শর্মা  এর ছবি

চলুক চলুক

পথিক পরাণ এর ছবি

চমৎকার বিশ্লেষণ। দ্বিতীয় কিস্তির অপেক্ষায় থাকলাম।

-----------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ...

সজল এর ছবি

চলুক দারুণ হচ্ছে।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অনেকদিন হাঁটুসর্বস্ব থাকলে একদিন ঠাস করে তো আর কেউ হাঁটুর বাইরে ভাবতে পারেনা।

পোস্টে পাঁচ তারা। ম্যাপ থাকলে আরও ভালৈত। কিন্তু বর্ণনাতেও কাজ চলে যাইতেছে।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

সাফি এর ছবি

আগ্রহ নিয়ে পড়ছি। লেখায় ৫তারা

রানা মেহের এর ছবি

একদম অন্যরকম জরুরী একটা লেখা।
সিরিজ চলুক

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

খুবই আগ্রহ নিয়ে পড়ছি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

সাথে আছি, জানান দিলাম।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

চলুক।

স্বাধীন এর ছবি

সিরিজে নিয়মিত হলাম। দুর্দান্ত!

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

একটি দেশের পররাষ্ট্রনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ তাদের সেনাবাহিনীর পরিচালনা কৌশল।

শুরুতেই খটকা লাগলো। আপনি কি সেনাবাহিনী পরিচালনার কৌশলের (military tactics) কথা বলছেন নাকি সমর কৌশলের (military strategy) কথা বলছেন? সাধারণ পাঠকের কাছে বিষয়টি আরেকটু বিশ্লেষনের অপেক্ষা রাখে।

বিষয়টি স্পষ্ট করতে একটি উদাহরণ দিই। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হলো, "Friendship to all, malice to none". এটি বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রসমুহের প্রতি আমাদের দেশের জনগনের শ্রদ্ধার মনোভাব ও আন্তরিকতাসঞ্জাত, মোটেই সেনাবাহিনী পরিচালনার কৌশল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। মূলত সম্ভাব্য বৈরীতার (potential adversaries) চুলচেরা বিশ্লেষণ ও যুদ্ধপরিচালনার ক্ষেত্রে নিজ শক্তিমত্তার পাশাপাশি অর্থনৈতিক আনুকূল্যের (logistics) পরিমাপ করেই একটি দেশের সমর কৌশল নির্ধারণ করা হয় বলে জানি। শক্তিপ্রয়োগের সামর্থ্য (Projection of power) ও সমর কৌশলকে এক করে দেখা ঠিক হবে না। শক্তিপ্রয়োগের সামর্থ্যের আছে নানারূপ। তা হতে পারে কুটনৈতিক, অর্থনৈতিক কিম্বা সামরিক। কবুল করি, সত্তর-পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক জান্তা পরিচালিত একটি যুদ্ধবাজ সরকারের ক্ষেত্রে জনগণের আশা আকাংক্ষার বিপরীতে গিয়ে সমর উন্মাদনার দ্বারা পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করার প্রবণতা ছিল করালগ্রাসী। সেটি হয়ত অনেকাংশে তার প্রতিরক্ষানীতিকে প্রভাবিত করেছে সেকথাও সত্যি, কিন্তু পররাষ্ট্রনীতিকে কতটুকু করেছে সেটি বিশ্লেষণ সাপেক্ষ। রণাঙ্গনের ভূমির গঠন, আবহাওয়া, শত্রুর শক্তিমত্তা ও অবস্থান, নিজস্ব বাহিনীর শক্তিমত্তা ইত্যাদি একটি বাহিনীর রণকৌশল (tactics) নির্ধারনের ক্ষেত্রে মুখ্য ভুমিকা রাখে। এই রণকৌশলই মুলতঃ সেনাবাহিনীসহ অন্যান্য বাহিনীর ফিল্ড ফর্মেশনগুলো পরিচালনার কৌশল। আর সেটি সমন্বিত একটি সমরকৌশলকে (strategy) মাথায় রেখেই প্রয়োগ করা হয়। সমরকৌশল গড়ে উঠে প্রতিরক্ষানীতির (defense policy) উপর ভিত্তি করে।

আপনার সিরিজটি যথেষ্ট আগ্রহ সঞ্চারী। তবে পর্যাপ্ত রেফারেন্সের অভাবে আপনার বক্তব্য গ্রহণযোগ্যতা নাও পেতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বার্মা সেক্টরের ক্যাম্পেইন প্ল্যানিং-এর উপর অনেক বই লেখা হয়েছে। তেমনি লেখা হয়েছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্পেইন প্ল্যানিং-এর উপরও। 'দি লাইটেনিং ক্যাম্পেইন' এর একটি গ্রহণযোগ্য উদাহরণ। সমরকৌশল কিম্বা রণকৌশলগত বিষয়গুলো যেহেতু আপনার লেখায় তুলে আনতে চেয়েছেন, সেহেতু এইসব রেফারেন্স বই থেকে লাগসই উদাহরণ কিম্বা উদ্ধৃতি আপনার লেখাকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলতে পারে। সার্বিকভাবে আপনার ও বিশেষভাবে আপনার এই সিরিজটির সাফল্য কামনা করি।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

দুর্দান্ত এর ছবি

ধন্যবাদ। সেনাবাহিনীর পরিচালনা কৌশল বলতে আমি military strategy বুঝিয়েছি।

" সত্তর-পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক জান্তা পরিচালিত একটি যুদ্ধবাজ সরকারের ক্ষেত্রে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে গিয়ে সমর উন্মাদনার দ্বারা পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করার প্রবণতা ছিল কালগ্রাসী। সেটি হয়ত অনেকাংশে তার প্রতিরক্ষা-নীতিকে প্রভাবিত করেছে সেকথাও সত্যি"

এ পর্যন্ত সহমত। কিন্তু যখন আপনি বলছেন

"(পাকিস্তানের সামরিক জান্তার সমর উন্মাদনা তার)পররাষ্ট্রনীতিকে কতটুকু (করেছে সেটি বিশ্লেষণ সাপেক্ষ।"

তখন প্রশ্ন করি যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা-নীতি ও পররাষ্ট্রনীতি ভিন্নতা কি? দেশটির জন্মলগ্ন থেকে এর উল্লেখযোগ্য পররাষ্ট্র সম্পৃক্ত যেকোনো ঘটনা পর্যালোচনা করুন। বারুদের গন্ধ এড়াতে পারবেন না। সংসদে বা সরকারে যেই থাকুক, পাকিস্তানের বিদেশনীতি যে নির্ধারিত হয় পিণ্ডীর COAS এর অফিসকক্ষে, সেটা কে বেঠিক?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।