দর্শক বেশী , পাঠক কম

ফকির ইলিয়াস এর ছবি
লিখেছেন ফকির ইলিয়াস (তারিখ: বুধ, ০২/০৪/২০০৮ - ৮:০৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছাপার অক্ষরে নাম দেখার বাতিক ছিল না আমার কখনোই।
লিখতাম, পড়তাম। পড়তাম , লিখতাম। ছাপা হলে খুঁটিয়ে পড়তাম, কি লিখেছি । লেখা ছাপা হলে , অনেক স্বজন - সুধিজন
শুভেচ্ছা জানিয়ে বলতেন , আপনার একটা লেখা দেখলাম।
কথাগুলো আমাকে খুব বেশী টানতো না। বরং বেশী খুশি
হতাম , যদি কেউ বলতেন - আপনার লেখাটা পড়লাম।
অবস্থার যে উন্নতি হয়েছে তা কিন্তু নয়। আমাদের চারপাশে
দর্শক সংখ্যা বাড়ছে। পাঠক- পাঠিকা সংখ্যা বাড়ছে না।
তরুণ প্রজন্মের অনেকে প্রকৃত পঠন-পাঠন থেকে দূরে দাঁড়িয়ে
গোষ্টি চর্চায় ব্যস্ত। গ্রুপিং ঠিক রাখলে লেখা যাই হোক তা ছাপা
হবেই - এমন একটা বোধ কাজ করে নেপথ্যে।কিন্তু তা সুস্থ
সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার জন্য কতোটা অনুকূল ?
আমার একজন প্রিয় মার্কিনী কবি ফ্রাংক ও'হারা -এর
একটি বাণী সবসময় ভাবি আমি। তিনি বলেছিলেন, আগে পাতা
কুড়ান । তারপর সে কুড়ানো পাতা দিয়ে নৌকা , কিংবা ঘর
যা ইচ্ছেই বানাতে পারেন।
আমাদের পাতা কুড়াবার সময় হয় না। চেয়ার দখল করার
প্রতিযোগিতায় নেমে আমরা খেই হারিয়ে ফেলি।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমাদের চারপাশে
দর্শক সংখ্যা বাড়ছে। পাঠক- পাঠিকা সংখ্যা বাড়ছে না।

ইলিয়াস ভাই, ঠিক কোন অর্থে বললেন বুঝলাম না। আমার তো মনে হয় দৈনিক পত্রিকার দিকে তাকালেই বোঝা যায় - পাঠক বাড়ছে। গত দশকে বাংলা পত্রিকার নতুন প্রকাশ এবং পাঠক দখল করে বাজারে টিকে থাকা কি সে ইংগিত দেয় না?
আর প্রকাশিত বইয়ের ক্ষেত্রে, এবারের বই মেলায় রেকর্ড পরিমাণ বই বিক্রি হয়েছে। এমন কি নতুনদের বইও পাঠক কিনেছে। তাহলে!

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

১৪ কোটি মানুষের দেশে ১ লাখ পত্রিকা পাঠক !
বই ছাপা হয় ১ হাজার !!
তা কি খুব বেশি ?
আমি চাই আরো পাঠক- পাঠিকা বাড়ুক। বোদ্ধা সংখ্যা বাড়ুক।
ধন্যবাদ।

এস্কিমো এর ছবি

হুমম

লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

ইয়েস স্যার । আপাতত এখানে ই প্রতিদিন পাবেন।
আপনারা না ফিরলে আমিও ফিরবো না !!!!

নগর বাউল এর ছবি

পড়লাম। কেমন আছেন কবি?

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

ভালো , আপনি ?

অমিত আহমেদ এর ছবি

গ্রুপিং ঠিক রাখলে লেখা যাই হোক তা ছাপা হবেই - এমন একটা বোধ কাজ করে নেপথ্যে।

একদম খাঁটি কথা।

(ভাই পোস্টে লিলিপুটিয়ান ছবিটার মাজেজা কি?)


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

ছবি টা ছোট হয়ে গেল কেন, জানি না । ধন্যবাদ

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

এটা ঠিক। এখন পাঠকের চে দর্শকের সংখ্যা বেশী। এমনকি খোদ বইমেলাতেও মানুষ বইয়ের চে রেডিও জকিদের ছুঁয়ে দেখতে বেশী আগ্রহী। আর দৈনিক পত্রিকায় তো পড়ার চে দেখার বিষয় বেশী।

---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

পাঠক সংখ্যা বাড়লেই মংগল হতো ।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আগে চেয়ারটা ধরে রেখে তারপর পাতা কুড়ানোটাই আমার মতে ঠিক। নাইলে আগে পাতা কুড়াতে গেলে কালিদাস এসে আমার চেয়ার দখল করে ফেলতে পারে, ব্যাটা বড়ই বদ!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

খুব চমৎকার বলেছেন ।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমার অবজারভেশন কিন্তু বলে পাঠক বেড়েছে
কিন্তু এখন যেহেতু পাঠকের কাছে পড়ার অনেক অনেক বেশি অপশন
সেহেতু হয়তো আমাদের অচল রচনাগুলো পড়ার তেমন একটা সুযোগ হয় না তাদের
(আগে তো পাবলিক সারা মাস জুড়ে একটা মাসিক পত্রিকাই পড়তো। তাও পরের মাসে এসে পৌঁছাতো তাদের হাতে)

পাঠকরা না পড়লে প্রতি বছর যে বইয়ের প্রকাশনার সংখ্যা বাড়ছে ওগুলো যায় কই?

আর সবাই আমার লেখা পড়বে এটা আশা করাটা কি ঠিক?
কেউ দেখবে- কেউ জানবে- কেউ পড়বে- কেউ ফেলে দেবে আর কেউ দেবে গালাগাল...

এইভাবেই লেখালেখির রাস্তায় একজন লেখকের যাওয়ার কথা; তাই না?

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

আপনার পর্যবেক্ষণ হয়তো কিছুটা ঠিক। অবশ্য সবাই পড়বে - সে আশা করা ঠিক না , খুবই বাস্তবিক।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দর্শক বেশি পাঠক কম যেভাবে বলা যায় , তেমনি এটাই বলা উচিত যে কলমবাজ বেশি , লেখক কম ।
সাম্প্রতিক সময়ে বইমেলায় ধাক্কা খেলেই দেখবেন সেখানে সবাই লেখক , এই যে সবাই লেখক হয়ে যাওয়ার বিষয়টা সেটা কিন্তু পাঠককে দর্শক করে দেয় অনেক সময় ।
পত্রিকা বেড়েছে বলেই ভালো লেখার সংকট । দেশে প্রতি শুক্রবারে কমপক্ষে ১৫টি সাহিত্য সাময়িকী বের হয় বিভিন্ন পত্রিকাগুলো মিলিয়ে । দেশে কি প্রতি সপ্তাহে ১৫টি ভালো গল্প লেখা হচ্ছে ? (আর হলেও তার মাঝে অনেকগুলোই আবার লিটিলম্যাগের মানুষদের হাতে , তারা যেগুলো বড়ো পত্রিকায় পাঠান না ।) দেশে যদি ১৫টি ভালো গল্প লেখা না হয় তাহলেও কিন্তু প্রতি সপ্তাহে ১৫টি গল্প ছাপা হয়ে যাচ্ছে মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় । সেই গল্প তো পড়ে দেখার কিছু নেই । কিন্তু নামটা হয়তো আরিফ জেবতিকের , তাই আপনি তাকে দেখে বললেন , আরিফ , আপনার গল্পটি "দেখেছি।"

পাঠকের দায় আছে সত্যি , কিন্তু পাঠককে আকৃষ্ঠ করার জন্য লেখকেরও দায় আছে সমভাবে ।

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

আমি মর্মাহত হই , যখন মেধাবীদের কে আউট করে , কলমবাজদের
কে ইন করেন তাদের বান্ধব রা। দায় তো লেখকের থাকেই।
কিন্তু সুযোগ ও তো দিতে হবে।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ইলিয়াস ভাই ,
আমি মনে করি মেধাবীদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই । শর্টকাটে অর্জন করতে চাইলে সাহিত্যে না আসাই ভালো । মেধার জোর থাকেই , সেটা একসময় সামনে আসবে ।

বইমেলা উপলক্ষে প্রতিবছর দুই লক্ষ টাকার বিজ্ঞাপন দিতেন কাস্টমস কর্মকর্তা প্রণব ভট্ট । উনার বই বিক্রীও হতো কিছু কিছু ।
অন্যদিকে শহীদুল জহির এর বিজ্ঞাপন দেখি নি কোনদিন । না প্রকাশনী থেকে না উনার নিজের পয়সায় । এমনকি সাহিত্যবাজীর নামে যে ভন্ডামিগুলো হয় , সেগুলোতেও উনাকে দেখা যায় নি । অধিকাংশ লেখক পর্যন্ত শহীদুলকে সামনা সামনি দেখেন নি কোনদিন ।

তো ?
প্রণব ভট্ট মারা যাওয়ার পরে কেউ দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে বলে আমার চোখে পড়ে নি , শহীদুল জহিরকে হারানোর ব্যথাটা অনেকে বুকে বাজঁতে দেখছি গত কয়দিন ধরে ।

-----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

আপনার সাথে আমি সম্পূর্ণ একমত।
শহীদুল জহির আমাদের সময়ের শ্রেষ্ট উদাহরণ।
তাঁর ' ডলু নদীর হাওয়া ---- খুবই ভালো সংকলন।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।