অর্থনৈতিক মন্দায় কাঁপছে যুক্তরাষ্ট্র

ফকির ইলিয়াস এর ছবি
লিখেছেন ফকির ইলিয়াস (তারিখ: মঙ্গল, ০৬/০৫/২০০৮ - ৬:৫৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অর্থনৈতিক মন্দায় কাঁপছে যুক্তরাষ্ট্র
ফকির ইলিয়াস
===================================
প্রেসিডেন্ট বুশ স্বীকার করে নিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দাভাব কাটাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কিছু করার আছে। তিনি বললেন, গোটা বিশ্বে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি খুবই শংকার কারণ। যুক্তরাষ্ট্রে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যে প্রতিদিন বাড়ছে তা কাঁপিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে। গেল ২৯ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসের লনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন।
একজন সাংবাদিক জানতে চান, আমেরিকা চালের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল। সেই যুক্তরাষ্ট্র চালের দাম এমনভাবে হু হু করে বাড়ছে কেন? প্রেসিডেন্ট বলেন, বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট চলছে। আমরা তা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছি। প্রেসিডেন্ট মিডিয়া, জনগণ এবং রাজনীতিকদের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, এ সংকট মানবতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আসুন আমরা তা সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করি।
জর্জ বুশ বলেন, আমি প্রতিটি ক্রেতা সংস্থাকে অনুরোধ করি, আপনারা স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে ফলমূল, শাকসবজি কিনে তা বাজারজাত করুন। প্রতিটি ফার্মের মালিক যাতে তার প্রোডাক্ট বিক্রী করে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আনতে পারেন সেদিকে নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, আমি ইতিমধ্যেই কংগ্রেসকে অনুরোধ করেছি, কংগ্রেস যেন ফেডারেল সুদের হার কমানোর বিলটি শিগগিরই পাস করে। এছাড়া খাদ্য মন্ত্রণালয়কে মোটা অংকের বরাদ্দ দিয়ে মার্কিনিদের খাদ্য সমস্যা ও সাময়িক সংকট পুষিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও যেন করে কংগ্রেস।
রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার মাত্র কয়েক মাস আগে বুশ প্রশাসনকে যে এমন সংকটে পড়তে হবে তা অনুমান করেননি প্রেসিডেন্ট বুশ নিজেও। চাল, আটা, ময়দা এবং এসবের দ্বারা নির্মিত খাদ্যদ্রব্যগুলোর চড়ামূল্য মারাত্মকভাবে ভাবিয়ে তুলেছে মার্কিনি জনজীবনকে। ‘কস্টকো’, ‘জেটরো’, ‘ওয়ালমার্ট -প্রভৃতি হোলসেলার কোম্পানি সাপ্লাই দিতে হিমশিম খাচ্ছে। তারা সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়ে চাল, ময়দা, আটা, সয়াবিন তেলসহ এরকম নিত্যব্যবহার্য কিছু খাদ্যদ্রব্যের ‘হাই ডিম্যান্ডের’ কারণে খুচরো বিক্রেতাদের সীমিত সাপ্লাই দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। খুচরো বিক্রেতাদের আগের ক্রয় তালিকা অনুসারে এখন সাপ্লাই দেওয়া হবে। অর্থাৎ এক মাস আগে যে খুচরো বিক্রেতা দু’শ বস্তা চাল কিনেছেন, এখন তিনি হঠাৎ একসঙ্গে পাঁচ শ’ বস্তা কিনতে পারবেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও বাণিজ্য বিভাগের ইন্সপেক্টররা ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছেন জোরেশোরে। কেউ সুযোগ নিয়ে মজুদ করে মুনাফা লুটতে চাইছে কি-না তা তারা যাচাই করে দেখছেন। বিভিন্ন সুপার মার্কেটে মেয়াদোত্তীর্ণ জিনিসপত্র বিক্রি করা হচ্ছে কি-না তাও তল্লাশি করে দেখার প্রবণতা বেড়েছে। কারণ মনে করা হচ্ছে, সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ পুরনো খাদ্যসামগ্রী বিক্রির চেষ্টায় লিপ্ত হতে পারে। পাকা কলার পাউন্ড যেখানে ছিল ৫০ সেন্ট, তা এখন হয়েছে ১ ডলার। শাক ৭০ সেন্ট পাউন্ড থেকে এখন হয়েছে ১ ডলার ৩০ সেন্ট। দুধ, ব্রেড, ফলমূল, সবকিছুর দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশি কমিউনিটিতে নেমে এসেছে চরম মন্দাভাব। বাংলাদেশ থেকে আমদানিকৃত হিমায়িত মাছ, মসলাপাতি, শুকনো খাবারসহ সব আইটেমের দাম বেড়ে গেছে মাত্র ক’সপ্তাহের ব্যবধানে। সে তুলনায় নিম্নবিত্তের আয় বাড়ছে না। বেকারের সংখ্যা বেড়েছে ছ’মাসের ব্যবধানে ২৭ শতাংশ। চলতি বছরের এ সংকট মার্কিনিদের ‘দ্য গ্রেট ডিপ্রেশনের’ (১৯২৯-১৯৪১) কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আয়-ব্যয়ে অসঙ্গতি, অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা নির্মাণে ব্যর্থতা, স্টক মার্কেটে তীব্র অদূরদর্শিতা, পুঁজিবাদের একক দাপট, যু্দ্ধ খাতে অনর্থক ব্যয়, কৃষিক্ষেত্রে সমস্যা, ট্যাক্সের বাড়তি চাপ এবং রাজনৈতিক অবহেলাকে এ মন্দার কারণ বলে চিহিক্রত করেছেন মার্কিনি বিশেষজ্ঞরা।
বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ইভান ইয়েনসের মতে, দীর্ঘ ৮ বছরে বুশ প্রশাসন তিলে তিলে ধস নামিয়েছে মার্কিন অর্থনীতিতে। এদিকে টাইম ওয়ার্নার, ডেল কম্পিউটার্স, আর্থলিংক, সিটি ব্যাংক, চেজ ব্যাংক, আমেরিকা অনলাইনসহ বেশকিছু বড় কোম্পানি আরো কয়েক হাজার লোক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টিকে হারিয়ে ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় আসতে পারবে কি-না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্ধ বাড়ছে প্রতিদিনই। হিলারি-ওবামা দু’জন আক্রমণ-পাল্টাআক্রমণ করেই চলেছেন। অন্যদিকে শক্তি সঞ্চয় করে চলেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী জন ম্যাককেইন।
-------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক সমকাল / ঢাকা/ ৬ মে ২০০৮ মংগলবার প্রকাশিত।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

বুশকে কানাডা আক্রমণের বুদ্ধি দেয় কি না কেউ ভাবছি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

বুশের কি সেই আয়ু আছে !!!!!

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ধন্যবাদ ইলিয়াস ভাই।
এক মন্দা থেকে আরেক মন্দায় লাফিয়ে চলে পুঁজি। একদিকে নিঃস্বকরণ অন্যদিকে বাজার বিস্তারের দ্বন্দ্ব। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফটকা পুঁজির দৌরাত্ম্য। আসল টাকার ওপর যখন হাওয়াই টাকা রাজত্ব করে, শিল্পের ওপর যখন বণিক পুঁজির নিয়ন্ত্রণ আসে তখনই এরকমটা ঘটে। বারবারই তা দেখা গেছে। আর বণিকেরা ক্ষমতায় থাকা মানে মুনাফার টানে সবকিছু অস্থির হয়ে ওঠা। তারাই বারবার পৃথিবীকে অস্থির করে পরিবর্তন ঘনিয়ে আনে।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

একমত আপনার সাথে। সহসা পরিবর্তন হবে বলে মনে হচ্ছে না ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমার কেন জানি আমেরিকান জাতিটার উপরে এত ভরসা নাই... তাগোরে এত লিবারেল ভাবতে পারি নাই এখনো... তাই মনে হয় হিলারী ওবামার লাফালাফি মনোনয়ন পর্যন্তই... তারপরের খেইল ম্যাককেইনের। কোনও কালা বা কোনও অবলা নারীরে (কালা বা অবলা নারী আমার ভাষ্য না... আমেরিকানগো ভাবনা) মসনদে বসাইবো বইলা মনে হয় না কেন জানি। ______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আমার কাছেও তাই মনে হয় । যেদেশে কোন নারী পাইলট হলে প্লেনে পাইলটের নাম উচ্চারন করে না যাত্রীরা ভয় পাবে বলে , সেই দেশে নারীকে দেশের পাইলট বানিয়ে ফেলাটা কষ্টকর হবে ।

আর ওবামা হলে তো কথাই নেই , কালারড পাবলিক ।

কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

কালারড পাবলিক
জটিল হইছে... মজা পাইলাম
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

আমি ও বলতে চেয়েছি - জয় বাবা ম্যাকেইন । যদিও আমি
রেজিস্টার্ড ডেমোক্র্যাট ।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আশা করি প্রাইমারির ভোটটা হিলারিকে মারেন নাই! তাইলে কইলাম ঝগড়া লাগায় দিমু! দেঁতো হাসি

ফকির ইলিয়াস এর ছবি

ঝাড়ি মারেন আর যাই করেন , ভোট টা কিন্তু হিলারি আপারে ই
দিছি !!!!!
দিন ( রাত) বদলে বিশ্বাস করি কি না তাই !!!!!!

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আসলেই চিন্তার বিষয়। সবকিছু হুড়মুড় করে ভেঙ্গে না পড়লেই হয়।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অয়ন এর ছবি

হুড়মুড় করে ভাঙ্গবে না। এইরকম কোন সম্ভাবনা দেখা দিলে সারা পৃথিবী এগিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করতে।

তীরন্দাজ এর ছবি

পৃথিবী এগিয়ে যাবে না যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করতে। যুক্তরাষ্ট্র ধ্বংস করবে সারা পৃথিবীকে!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন্যবাদ ইলিয়াস ভাই। বুশ একটা চিজ বটে, পুরো বিশ্বসহ সারা আমরিকাবাসীরে বুড়ো আঙ্গুল দেখাইয়া ক্ষমতায় আসছিলো। আর এখন পর্যন্ত কচ্ছপের মতো ক্ষমতায় টিকেও আছে। বুশের বক্তৃতা শুনলে বোঝা মুশকিল এটা সন্ত্রাস দমনের জন্য নাকি সন্ত্রাস কায়েমের। সারাদিন যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ততা, দেশের আভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার সময় কই।

আপনার লেখা হিট হইছে।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।