দ্বীপবাসী দিন ১২

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: বুধ, ২৮/০৪/২০১০ - ১:৩১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
এইমাত্র পড়ে শেষ করলাম এবারের বইমেলায় প্রকাশিত হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস "মাতাল হাওয়া"। কিছু মজার ব্যাপার লক্ষ করলাম এই বইতে। হুমায়ূনীয় স্টাইল। যেমন পেছনের ফ্ল্যাপে লেখকের ছবির নীচের লেখাটা- আমি হুমায়ূন আহমেদ, ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে নানাবাড়ি মোহনগঞ্জে (নেত্রকোনা জেলা) জন্মগ্রহন করেছি। পাসপোর্ট এবং সার্টিফিকেটে লেখা ১০ এপ্রিল ১৯৫০, কেন এই ভুল হয়েছে জানি না।

উপন্যাসের পটভূমি হিসেবে আছে ঊনসত্তর সাল। উপন্যাসের বিভিন্ন জায়গায় হুমায়ূন নিজের গল্প বলেছেন। এই ব্যাপারটা শুরু হয়েছে এভাবে- '৬৮ এবং '৬৯-এর মাতাল হাওয়া আমার গায়ের ওপর দিয়ে গিয়েছে। কিছু অভিজ্ঞতা উপন্যাসের ফাঁকে ফাঁকে ঢুকিয়ে দেব। উপন্যাসের কাঠামো নির্মাণে এই বিষয়টা চলে না, তবে মাতাল হাওয়া কখনোই নিয়ম মানে না। এই জবাবদিহিতার কোন প্রয়োজন আসলে ছিল না।

উপন্যাস নিয়ে বেশি কিছু বলতে এই মুহূর্তে ইচ্ছে করছে না। শুধু বলবো, মাতাল হাওয়া ভালই লাগলো পড়তে। তবে পড়তে ভালো লাগা আর মনে দাগ রেখে যাওয়ার মত ভালো লাগার মধ্যে একটা পার্থক্য তো অবশ্যই আছে। সেক্ষেত্রে আমি নিশ্চিত নই, এই উপন্যাসটি আদৌ সেরকম কিনা। সবেমাত্র পড়লাম, এখনই বলতে পারছি না দীর্ঘমেয়াদে এর রেশটা থাকবে কি থাকবে না।

আরেকটা কথা, ইদানিং গল্পের মাঝে হুমায়ূন হুটহাট করে ইতিহাস নিয়ে টানাটানি করছেন। "মধ্যাহ্ন"তে, "মাতালা হাওয়া"তেও। শেষেরটাতে আমার কাছে অনেক জায়গাতেই বেখাপ্পা লেগেছে। পরিচ্ছদের একেবার শেষে সন তারিখ উল্লেখ করে দু-চার লাইনে ঐতিহাসিক ঘটনা বলার কোন মানে হয় না।

হুমায়ূনের লেখা সবচেয়ে ভালো লেগেছে তার প্রথম দুই উপন্যাসে, নন্দিত নরকে এবং শঙ্খনীল কারাগার। অনেকদিন পরে আরেকটি উপন্যাস পড়ে চমৎকৃত হয়েছিলাম, নামটা সম্ভবত "অচিনপুর"। "মধ্যাহ্ন" পড়ে তার সাহিত্যগুণে যতটা না মোহিত হয়েছিলাম তার চেয়ে এই ভেবে ভালো লেগেছিল যে একসময়ের এই প্রিয় লেখক এখনও মুগ্ধ করার মত লিখতে চান। "মাতাল হাওয়া"কে আমি হয়তো এই চারটি উপন্যাসের মত প্রিয়র তালিকায় রাখবো না, কিন্তু তিথীর নীল তোয়ালে, হলুদ হিমু কালো ড়্যাব, রূপার পালঙ্ক জাতীয় অখাদ্যর চাইতে তা অনেক ভালো। বিশেষ করে, ব্যস্ত দিন শেষে রাতে ঘুমানোর আগে পড়ার জন্য বেশ যুৎসই। সেটাই করলাম গত কয়েকদিন।

২.
আবহাওয়া পাল্টাচ্ছে না। দিনে পালা করে একবার তুমুল গরম আর একবার বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি ভাল পাই, কিন্তু গরমটা অসহ্য।

ফাইয়াজ এখন বসতে পারে কারো সাহায্য ছাড়াই। তবে বসার চাইতে মনে হয় তার দাড়ানো শেখার শখটাই বেশি। একটু একটু দুষ্টামিও শিখে যাচ্ছে। তার একটা হলো, সে কোল থেকে নেমে সহজে বসতে চায় না। এমনকি আগে যেখানে খুশিমনে স্ট্রলারে বসে থাকতো, এখন সেখানে বসাতে গেলেও মেরুদন্ড সোজা করে থাকে। গোসল করাতে গেলেও একই ব্যাপার। সাথে একটা মুচকি হাসি। আমি একে দুষ্টামি না বলে নাম দিয়েছি মিষ্টুমি। সে মহা উৎসাহে মিষ্টুমি করে যাচ্ছে।

৩.
প্রতি সপ্তাহে মনে হয়, এই সপ্তাহ গেলেই বোধহয় কাজের চাপ কমবে। কোথায় কী! শনি-রবিবারগুলোও রেহাই পাচ্ছে না। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, যখন অবসর থাকে তখন আলসেমিতে ব্লগ লেখা হয় না, এখন এই ব্যস্ত সময়ে দেখলাম উল্টো ঘটনা ঘটছে। প্রায়শই কিছু লিখছি, ঘুমানোর আগে। যদিও ফালতু টাইপ সব, তবু।

দুয়েকটা গল্পের প্লট মাথায় এসেছিল। সেগুলোর খসড়া লিখে রাখছি। দেখা যাক।

৪.
ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি ঘুমাবো। বইটা শেষ করতে করতে দেরি হয়ে গেল। বাইরে তাকিয়ে দেখি, একটা গোল ঝলমলে চাঁদ ঝুলে আছে আকাশে। কয়েকটা স্থবির মেঘ, মিয়ম্রান নক্ষত্র আর দূরে মেরুন রংয়ের আলো। কারো চোখেই বোধহয় ঘুম আসে নি আজ।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

৬৯ নিয়ে চিলেকোঠার সেপাই আছে। এরচেয়ে ভালো কিছু লেখা কঠিন কাম হয়। তবু মাতাল হাওয়াটা পড়ে দেখতে হবে কী লিখলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

সেভেনে থাকতে হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস সমগ্রের প্রথম খন্ডটা টানা পড়ে সাত দিনে শেষ করেছিলাম। ঐ সাত দিনের আগে পরে লোকটার লেখা কখনো ভাল পাইনাই।

মিষ্টুমি.........হুমম।

*দীর্ঘশ্বাস*

নহক

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হুমম। জানিনা এখন হুমায়ূন পড়তে কেমন লাগবে। বিশেষ করে ব্লগে এখন এত ভিন্ন মাত্রার লেখা পড়া হয় যে গতানুগতিক উপন্যাস কেমন লাগে কে জানে।

অতিথি লেখক এর ছবি

নন্দিত নরকে আমার অতি পছন্দের একটা উপন্যাস।এখন হুমায়ূন আহমদের বই পড়তে ভাল লাগেনা।একঘেয়ে ............।তবে মাতাল হাওয়া পড়া হয়নি।

ফাইয়াজ বাবুর দুষ্টমি মজা লেগেছে।

মিতু
রিফাত জাহান মিতু

তিথীডোর এর ছবি

বইমেলায় প্রকাশিত 'রূপা' পড়ে যথারীতি হতাশ হয়েছিলাম, 'মাতাল হাওয়া' পড়া হয়নি এখনো...
"হুমায়ূনের নুতন বইগুলো কেনার চাইতে সে পয়সায় আইসক্রিম খাওয়া ঢের ভালো" খাইছে

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মূলত পাঠক এর ছবি

ফাহা, এই লেখাটা তো ভালো লাগলো বটেই, তবে আগেরটা আরো ভালো লেগেছিলো। অপিসে বাংলায় লেখা যায় না বলে মন্তব্য করা হয় নি। লিখতে থাকুন।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

এখন সেখানে বসাতে গেলেও মেরুদন্ড সোজা করে থাকে। গোসল করাতে গেলেও একই ব্যাপার। সাথে একটা মুচকি হাসি।
পোলার বিয়ার বয়স হৈছে। জলদি বিয়া করায়ে দেন মিয়া। মাইয়ার বাপ মেম্বর কী কয়?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

মামুন হক এর ছবি

একটা গোল ঝলমলে চাঁদ ঝুলে আছে আকাশে। কয়েকটা স্থবির মেঘ, মিয়ম্রান নক্ষত্র আর দূরে মেরুন রংয়ের আলো। কারো চোখেই বোধহয় ঘুম আসে নি আজ।

--এত চমৎকার করে লেখেন আপনি, হোক গদ্য বা পদ্য--মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকেনা।

ফাইয়াজ বাবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা হাসি

জোহরা ফেরদৌসী এর ছবি

নন্দিত নরকে ও শঙ্খনীল কারাগার তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ । আপনার সঙ্গে একমত । এখন কেমন লিখেন জানি না, অনেকদিন পড়া হয়নি । তবে, শেকড় থেকে বিচ্ছিন্য হয়ে কতটা জীবন ঘনিষ্ট লেখা সম্ভব জানি না ।

.......................................
তোমারই ইচ্ছা কর হে পূর্ণ ....

__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

১। এই উপন্যাসটা সাম্প্রতিক (কয়েক বছরের মাঝে) হুমায়ুনের ভালো লেখার একটা। তবে শেষের অংশ এবং ব্যক্তি হুমায়ুন এর মাঝে মাঝেই উপন্যাসে চলে আসা ভালো লাগে নাই। ... সম্ভবতঃ মাস্টারপিস উফার দেবার ক্ষমতা উনার চলে গেসে।

২। পিচ্চির দুষ্টামি নিয়া পুস্টান...

_________________________________________

সেরিওজা

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমায়ুন আহমেদ এর লেখা ভাল লাগে না।তিনি কথাশিল্পী।কিন্তু তিনি মোটেও সুন্দর করে গল্প বলেন না।তার এখনকার লেখা পুরোপুরি বাণিজ্যিক।এবং আগেকার লেখাগুলো ও আহামরি লাগেনি।

অতিথি লেখক এর ছবি

হুমায়ুন আহমেদ এর লেখা ভাল লাগে না।তিনি কথাশিল্পী।কিন্তু তিনি মোটেও সুন্দর করে গল্প বলেন না।তার এখনকার লেখা পুরোপুরি বাণিজ্যিক।এবং আগেকার লেখাগুলো ও আহামরি লাগেনি।

অক্ষ

দ্রোহী এর ছবি

১.
মাতাল হাওয়া পড়িনি। পড়ার জন্য হাতে পাইনি। "সানাহউল্লাহর মহাবিপদ" নামের একটা বই পড়তে শুরু করেছিলাম। অনেক জোরাজুরি করেও ৩০ পৃষ্ঠার বেশি পড়তে পারলাম না। সুতারাং, "মাতাল হাওয়া" পড়ার তেমন কোন আগ্রহ পাচ্ছি না।

২.
ওর জন্মের আগের চুক্তিটা খেয়াল আছে তো? চুক্তি খেলাপ করলে খবরই আছে কিন্তু!

৩.
আমার মতো অবস্থা দেখি। যখন ব্যস্ত ছিলাম দুই/একটা পোস্ট লিখতাম। কতদিন ধরে বেকার বসে আছি! একটা অক্ষর ও লেখা হয়নি। মনে হয় ব্যস্ত থাকলেই লেখার জন্য হাত নিশপিশ করে।

৪.
কবিদের লেখায় সবসময় কবিতা কবিতা গন্ধ থাকে।

যাচিত বিবেক [অতিথি] এর ছবি

নন্দিত নরকে ও শঙ্খনীল কারাগার সবচেয়ে ভাল লেগেসে। পরের লেখা গুলো বেশি বানিজ্যিক। সস্তা আবেগ,সহজ ভাষআতে অল্প সময়ে নামিয়ে ফেলা, এমন লাগে এখনকার লেখা গুলো ।

অরিন্দম [অতিথি] এর ছবি

ফাইন লেখার জন্য ফারুক কে ধন্যবাদ।

সহজিয়া ধরণের লেখা ভাল লাগে বলে হুমায়ুন আমার পছন্দ। 'মাতাল হাওয়া' ভাল লেগেছে, তোর 'দ্বীপবাসী দিন' ভাল লাগার কারণ ও সহজিয়া ধরণ। ঈশ্বর এর রুপ বিশ্লেষণ করা আমার জন্য টাফ।

ফাইয়াজ কে লেগ স্পিন শেখানো শুরু কর।

ফারুক হাসান এর ছবি

কিন্তু পোলা তো ইদানিং মনে হয় মেসি হইতে চায়, যে হারে ফুটবলে লাত্থি মারে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।