ঈশ্বরের প্রকৃতি

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: শনি, ২৪/০৭/২০১০ - ১২:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঈশ্বরের পৃথিবী হচ্ছে 'ফ্ল্যাট ওয়ার্ল্ড' - পুরাই সমতল পৃথিবী, এর উপর সবাই সমান, অন্তত সে রকমই শেখানো হয়েছে আমাদের। ঈশ্বরই নাকি সবকিছুর নিয়ন্তা। তাহলে তিনি নিশ্চই চাইবেন সবকিছু স্বাভাবিকভাবে চলুক। কিন্তু জগতে কত কিছুই না আছে - অস্বাভাবিক, অকল্পনীয়, ক্রুঢ়। কেন জগতের সবাই একই প্রিভিলেজ নিয়ে জন্মায় না? কেন কেউ কেউ সুস্থ হয়ে জন্মাবে আবার কেউ জন্মান্ধ হবে? কার দোষে কোনো কোনো হতভাগ্য মানুষ কখনই জানতে পারবে না - শিশুর হাসি কতটা নির্মল, আকাশ কতটা নীল, জোছনা কতটা মায়াময়, কতটা সুন্দর প্রেমিকার গালের ছোট্ট তিল! কেন নিজের সৃষ্টিকে ঈশ্বর জন্মান্ধ করে জগতে পাঠাবেন? কেন নিষ্পাপ শিশুকে বঞ্চিত করবেন স্নেহ-মায়া-মমতা থেকে? কেন তাকে ভোগাবেন রোগে-শোকে-তাপে?

এই সব ভাবায়। আমি নিয়ত ব্যাখ্যা খুঁজে বেড়াই। একটা যুক্তি চাই, কিংবা নিদেনপক্ষে একটা সান্ত্বনা। একটা সময় মনে হয়েছিল, এমনও তো হতে পারে - হয়তো প্রতিটা আলাদা মানুষের রোগ-শোক-দৈন্যন্দিন কষ্টের মতন এতটা মাইক্রো লেভেলে তিনি নামেন না, ফালতু অযাচিত হস্তক্ষেপ তাঁর পছন্দ নয়। জগতটা এত বড় আর এর ব্যাপ্তি এত বিশাল যে এতে ঘটমান ছোটখাটো সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলোকে নিজের মত করেই ঘটার ক্ষমতা দিয়েছেন ঈশ্বর। একে আমরা বলি প্রকৃতির খেয়াল। হয়ত ব্যতিক্রম না রাখলে স্বাভাবিক ব্যাপারটাই ব্রাত্য হয়, খুঁত না থাকলে হয়ত সবকিছু একঘেয়ে লাগে, হয়ত সবাইকে সুখী করলে জগতের কোনো ভারসাম্য নষ্ট হয়। হয়ত ঈশ্বর তা করতে পারেন না সামগ্রিক ভালোর জন্যই।

ব্যাপারটা অনেকটা আইজ্যাক আসিমভের ফাউন্ডেশন ট্রিলজিতে বর্ণিত সাইকোহিস্ট্রির একটা অনুমিতির মত। উপন্যাসের মহান হ্যারি সেলডন যিনি কিনা গ্যালাক্সির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ মনোবিদ এবং সাইকোহিস্ট্রির জনক, যিনি তার আবিস্কৃত বিজ্ঞানের মাধ্যমে মানুষের প্রায় এক হাজার বছরের ভবিষ্যতকে একটি নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করতে পারেন। আসিমভের ভাষায়, এই সাইকোহিস্ট্রি বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা ইতিহাস ও বর্তমানের গতি প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে নির্ভুলভাবে ভবিষ্যত গণনা করতে পারে। কিন্তু কয়েকটা অনুমিতি মেনে চললেই কেবল তা সম্ভব। তার প্রথমটি হচ্ছে, গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণের জন্য যে স্যাম্পল নেয়া হবে সেটা হতে হবে অনেক বড়। মাত্র একজন বা গুটিকয় মানুষকে বিশ্লেষণ করে নির্ভুলভাবে ভবিষ্যতকে দাড় করানো যায় না। দ্বিতীয় অনুমিতিটা হলো, সাইকোহিস্ট্রি যে ভবিষ্যতকে অনুমান করবে তা আগেভাগে প্রকাশ করা যাবে না। সেটা প্রকাশিত হলে অযাচিত কিংবা অস্বাভাবিক কিছু চলকের আবির্ভাব ঘটতে পারে, কেউ কেউ ভবিষ্যতকে পালটে দেবার চেষ্টা চালাতে পারে এবং এর ফলে প্রকৃত ভবিষ্যতের গতি-প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।

ঈশ্বরের ধারণাটা কি মহান হ্যারি সেলডনের চরিত্রের মত কিছু? যিনি আগামীকাল কি হবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, কিন্তু পুরো গ্যালাক্সির হাজার বছরের সম্মিলিত ভবিষ্যতের দিক প্রয়োজনে বদলে দিতে পারেন। সেটা তাঁকে পারতেই হবে, তা না হলে তিনি ঈশ্বর হবেন কীভাবে?

কল্পবিজ্ঞানের কাছ থেকে ধার করে হলেও আমি খুশি যে ঈশ্বরের খামখেয়ালিকে এরকম দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবা যায়। মনে হয়, যদি ঈশ্বর বলে কোনো ধারণা কিংবা কেউ থাকে তাহলে তিনি হয়তো ততটা নিষ্ঠুর নন। অনন্ত নক্ষত্রবীথির তুচ্ছ তুচ্ছ ব্যাপারগুলো তিনি ছেড়ে দিয়েছেন প্রকৃতির উপরে।

কিন্তু এই পর্যায়ে এসে অবধারিতভাবে এই প্রশ্নটি এসে যায়, ঈশ্বরের না হয় জগতের তুচ্ছ ব্যাপারে কোনো মাথাব্যথা নেই, কিন্তু জগতের অন্য সেই মহান, বৃহৎ ব্যাপারগুলো আসলে কি যা নিয়ন্ত্রণ করে ঈশ্বর নামের কোনো সর্বময় সত্ত্বা? খোদার যে কুদরত, ভগবানের যে লীলা, ঈশ্বরের যে মহিমা – তার ভিত্তিমূলে আসলে কার বসতি?

সুখ নিয়ে ভাবতে গিয়ে মনে হলো, যদি এবসোলিউট সুখ বলে কিছু থাকে তাহলে তার অধিকারি হবার একজন শক্ত ক্যান্ডিডেট হতে পারেন ঈশ্বর নিজে। ঈশ্বর কী সুখী? তাঁর সব আছে, বলা হয়ে থাকে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারি তিনি, সর্ব জ্ঞানী। সুখের সন্ধানও নিশ্চয়ই তার জানা আছে।

এই জায়গাটায় একটা ‘কিন্তু’ আছে বোধহয়। ততটা সুখী বোধহয় ঈশ্বর হতে পারেন নি। একজন সুখী ঈশ্বর কেন এমন একটা জগত তৈরি করবেন যেখানে এত কষ্ট, এত ক্লান্তি, এত জরা, এত ভেদ, এত ক্রোধ, এত জিঘাংসা, এত অসহিষ্ণুতা!

বলা হয়, স্বমহিমায় ভাস্বর ঈশ্বরের মনের বাসনা থেকেই এই জগতের উদ্ভব। সেই বাসনা হলো নিজের অস্তিত্ব কে নিজের বাইরে গিয়ে দেখা - to experience itself from outside. গুরু নানক ভালো ব্যাখ্যা দিয়েছেন এর – বুদ্বুদ যেমন জলের ভেতর থেকে ভেসে উঠে, তেমনি আমরাও ভেসে উঠি খোদার consciousness থেকে। তিনি বললেন, হও। হয়ে গেল। কিন্তু তিনি যদি এতই স্বয়ং-সম্পূর্ণ হবেন তাহলে তার এই 'বড়ই সৌন্দর্য' টাইপ জগত তৈরি করে তারপর সেই জগতের সুন্দর ফল, সুন্দর ফুল, মিঠা নদীর পানির মধ্যে নিজেকে খোঁজার মাহাত্ম্যই বা কী?

আমাদের ঈশ্বর কি তাহলে অসুখী? ঈশ্বর কি নিঃসঙ্গ?

হয়তো জগতের যে মহত্তম উদ্দেশ্য সেটা কেবল ক্রমাগত নিঃসঙ্গ হতে থাকা কোনো এক ঈশ্বরের সুখী হবার প্রাণান্ত চেষ্টা। যে চেষ্টাকে সফল করতে গিয়ে তার চোখে পৃথিবীর আর সব নগণ্য বিষয়গুলো ধরা পড়ে না। তাতে কী! চূড়ান্তরকম বোরড একজন ভগবানকে যে কোন মূল্যে চীয়ার আপ করতে গিয়ে আমরা মানে তার সৃষ্টিজগতের সবাই না হয় 'গুরুত্বহীন' কিছু কষ্ট সহ্য করলামই। সবার সৃষ্টিকর্তা হিসেবে এতটুকু দাবি তিনি করতেই পারেন। যে বৃহত্তম উদ্দেশ্য পূরণের পথে আমরা সবাই ধীরে ধীরে এগুচ্ছি তার বিশালতার কাছে আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাওয়া-পাওয়াগুলো ধুলিকণাবৎ। অন্যদিকে, ঈশ্বর মহান। তাই তার কি এত নিচে নামা সাজে? সাজে না। বরং না হয় আমরাই স্বীকার করে নেই কিছুটা ত্যাগ।

সুতরাং আমরা সবকিছু তাঁর হাতে সঁপে দেই। আর বলি, যাই করেন ঈশ্বর, করেন সবার মঙ্গলের জন্যে।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

ঈশ্বর অসুখী ছিলেন। এরপর উনি একটা নিক খুললেন, "স্যাটান"। তারপর ঐ নিকে সক পাপেটিং করতে লাগলেন। ভালোই কাটছিলো দিন। কিন্তু মানুষ এত বড় পগেয়া পাজি, ঈশ্বর স্যাটান দুই নিককেই ইয়ে মেরে দিচ্ছে।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

ফারুক হাসান এর ছবি

মানুষের ইয়ে মারার বিষয়টা নিয়া আপাতত ভাবতেছি। গোছাইতে পারলে লেখার আশা রাখি অচিড়েই।

অনিকেত এর ছবি

হুমমমম.........

লেখাটা বেশ ভাবাল ফারুক ভাই।

আমি নিজে ঈশ্বর বিশ্বাসী নই। কিন্তু ঈশ্বর-বিশ্বাসীদের কার্যকারণের ফলাফল আমাকেও বইতে হয়। সকলকেই হয়। কাজেই এড়িয়ে যেতে চাইলেও এড়ানো সম্ভব নয়।

আপনার লেখাটা পড়ে মনে হল দু'টো জিনিসঃ

১) আপনি প্রথমে একটা স্বীকার্য মেনে নিয়েছেন যে আমাদের একজন ঈশ্বর আছেন।
২) ঈশ্বর যদি থাকেন, তাহলে কেন তিনি আমাদের সুখ-দুঃখ-হাসি-কান্নার অংশীদার নন? কেন তিনি আমাদের প্রতি এমন উদাসীন?

"শূণ্যে মহা আকাশে, তুমি মগ্ন লীলা-বিলাসে
হাসিছ খেলিছ তুমি ক্ষনে ক্ষনে
নিরজনে প্রভু নিরজনে---"

দ্বিতীয় প্রস্তাবনায় আসলে আমাদের যেতে হয় না---যদি আমরা প্রথম প্রস্তাবনাটা মেনে না নেই।সেক্ষেত্রে 'কেন ঈশ্বর আমাদের খেয়াল রাখেন না'-- এই প্রশ্নটা করতে হয় না। যিনি নেই তিনি দেখ-ভাল করবেন কী করে?

আসল প্রশ্নটা হল, আমার মতে, আমাদের কেন ঈশ্বর একজন আছেনই---এই ধারণাটা মানতে হয়?

কারণ আমরা প্রকৃতিগত ভাবে দুর্বল বলে,অশক্ত বলে? আমাদের বিপদে আমরা একটা আশ্রয় খুঁজি। খুঁজি এক প্রবল পরাক্রমশালী বন্ধু যে আমাদের উদ্ধার করবে বিপদ থেকে।

যতখন আমাদের শক্তিতে কুলায়, সাধ্যে কুলায় আমরা সাধারনত তাঁর সাহায্য চাই না। জগ থেকে পানি ঢেলে খাবার জন্যে ঈশ্বরের সাহায্যের দরকার হয় না (যদি না আপনি শারীরিকভাবে 'সীমাবদ্ধ' হয়ে থাকেন)। কিন্তু পরীক্ষা পাসে তাঁর সাহায্য দরকার, আপনজনের অসুস্থতায় তাঁর দরকার হয়, অনেক সময় প্রেমিকার মন পাওয়ার জন্যে তাঁকে দরকার হয়--এমনি আরো কতশত কারণ।

আমার মতে, যখনই আমাদের এমন একটি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হয় যেটা আমাদের সাধের মধ্যে কিন্তু সাধ্যের একটু বাইরে এবং যেটার ফলাফল আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে তখনই আমাদের একজন সাহায্যকারীর দরকার হয়ে পড়ে। ভেবে দেখুন ছোট যে ছেলেটা পেয়ারা পাড়তে গেছে---যতক্ষণ পেয়ারাটা তার হাতের নাগালের মধ্যেই আছে, সে কিন্তু তার বড়ভাইকে ডাকতে যাচ্ছে না। যখন পেয়ারাটা তার হাতের নাগালের একটু বাইরে--তখনো কিন্তু সে বড় ভাই কে ডাকতে যাচ্ছে না। সে খুঁজছে আড়-কাঠি যেটা দিয়ে টেনে গাছের ডাল নামাতে পারবে।

আমার মনে হয়---ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেকের জীবনের এক অদৃশ্য আড়-কাঠি। আমাদের হাতের নাগালের বাইরে কিন্তু স্বপ্নের ডালে ঝুলে থাকা কিছু মহার্ঘ্য ফল আমাদের নাগালে এনে দেবার জন্যে তাকে আমাদের দরকার। ছেলেটা তার বড়ভাইকে ডাকে না কারণ সে জানে বড় ভাই স্রেফ গাট্টা মেরে ভাগিয়ে দেবে অথবা যদিওবা আসে---পেয়ারাতে ভাগ বসাবে।

হয়ত খুব সরলীকরণ হয়ে গেল---কিন্তু কেন জানি আমার মনে হয় মোটের উপর এইরকম কিছু 'সরল' কারনের জন্যেই ঈশ্বরের বাজার-দর সব সময়েই এত চড়া। আমাদের অক্ষমতার অপারগতার সীমানায় ঈশ্বরের তাঁবু খাটানো।

ঈশ্বর আমাদের শৈশবে শোনা ভূতের গল্পের ভূত। ঠাকুমা'র ঝুলির রাক্ষস। অথবা হ্যান্স ক্রিশ্চিয়ান এন্ডারসনের রূপকথার সে রাজকুমার।বন্দী রাজকণ্যে কে সে উদ্ধার করে। ঈশ্বরের গল্পের শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।

আমার ব্যক্তিগত মতামত হল---যদি কখনো মানুষ জয় করতে পারে তার নিজের ভেতরের ভয়, যদি মানুষ এই ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে যে জীবন আসলে সীমাহীন স্বপ্নভঙ্গের ফাঁকে ফাঁকে অল্প কিছু স্বপ্ন পুরণের আখ্যান, যদি মানুষ সে ছোট ছেলেটার মত আড়-কাঠির খোঁজে সময় নষ্ট না করে তার ভাইকে ডাকতে যায়---এটা জেনেও যে সে হয়ত পেয়ারায় ভাগ বসাবে, কিন্তু আদ্দেকটা তো পাওয়া যাবে---যদি মানুষ শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারে ঈশ্বরের স্রষ্টা আসলে কে----আমার মনে হয় সেদিন আমাদের ঈশ্বরের প্রয়োজনও ফুরাবে!!!

ফারুক হাসান এর ছবি

অনিকেত দা, আপনার ভাবনা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

ঈশ্বর আদৌ আছে কি নেই - সে নিয়ে আমি আসলে খুব বেশি টেনসিত নই। তার থাকা না থাকা বিশ্বাসের ব্যাপার, যেহেতু নিজে কখনো কাউকে দেখা দেন নাই। আমি সবার বিশ্বাসকেই শ্রদ্ধা করি।

তবে মানতেই হবে, ঈশ্বরের ধারণাটি কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং।

আমার ভাবতে ভালো লাগে, সবকিছুরই কোনো না কোনো ব্যাখ্যা আছে। জগতের সবকিছুই যদি মিনিমাম কিছু প্যারামিটার দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেত! এই থেকেই ভাবনাটা পাখা মেলল। আমার প্রস্তাব- মোটা দাগে দুটি জিনিস দিয়ে জগতের সবকিছুকে ব্যাখ্যা করা যায়। এক- প্রকৃতির নিয়ম কিংবা তার খেয়াল এবং দুই- কোনো এক নিঃসঙ্গ ঈশ্বরের নিঃসঙ্গতা কাটানোর চেষ্টা।

বলতে পারেন, হাস্যকর ভাবনা। হতে পারে। তবে এর চেয়ে আরো কত হাস্যকর ধারণা নিয়ে আমরা বেঁচে থাকি! থাকি না?

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আলাদা মন্তব্য করলাম না। বিশেষভাবে যেহেতু অনেক কথা অনিকেতদাই বলে দিয়েছেন।

আমি সময় পেলেই চিন্তাশুদ্ধি অভিযানে নেমে পড়ি। আর কারো না হোক, নিজের চিন্তাটা আরো শুদ্ধ হয়। আর এর জন্য এধরনের লেখা মোক্ষম।

আপনি যে ব্যাখ্যাসাধ্য জগতের স্বপ্ন দেখলেন, এই স্বপ্ন কিন্তু সকল বিজ্ঞানীর।

আমরা জগতটাকে বুঝতে চাই। তাই একে ব্যাখ্যাসাধ্য করে তুলতে চাই। কিন্তু ব্যাখ্যা কিন্তু ওভার-রেটেড। এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। মূল সীমাবদ্ধতা হলো, এটা ঘটে যাবার পরে করা হয়। ব্যাখ্যা যখন কেবলি ঘটে যাবার পরে করা হয়, তখন সেটাকে আর যাচাই করা যায় না। বারবার নতুন ঘটনা ঘটে, আর ঘটে যাবার পরে সুবিধা মত ব্যাখ্যা করা হয়। বিজ্ঞানের একটা দর্শনের মতে একটা ব্যাখ্যা শূন্য জ্ঞান প্রদান করে, যদি সেটা ঘটে যাবার আগে কি ঘটবে সে সম্পর্কে অনুমান প্রদান করতে না পারে। অর্থাৎ predict করতে পারে না, এমন ব্যাখ্যা অর্থহীন।

এটা বেশ গুরুত্ব সহকারে বিচার্য। বিজ্ঞানে একারণে falsifiability এর এতো মহান স্থান। আজ আমাদের ঘিরে বিজ্ঞানের যা কিছু অবদান বিরাজমান, সেগুলো এসেছে এমন ব্যাখ্যাপূর্ণ প্রকল্প থেকে যার অনুমান তৈরির ক্ষমতা আছে। যেমন, হাত থেকে আপেল ফেলে দিলে কি হবে, নদীতে কত ফুট বাঁধ দিলে কি হবে, দুটি যৌগের বিক্রিয়ায় কি হবে, একটা বিশেষ জিনের মিউটেশানে কি হবে, আমেরিকা থেকে সিগন্যাল পাঠালে কতক্ষণ পরে তা বাংলাদেশে পৌঁছাবে। এখানে যেসব সূত্র জড়িত, তাদের জন্যে ঘটে যাবার আগে অনুমান তৈরী করা বাধ্যবাধকতা।

অন্যদিকে, যেসব ব্যাখ্যা অনুমান তৈরী করতে পারে না, সেগুলো বিশ্ব সম্পর্কে আমাদের কতটুকু জ্ঞান প্রদান করেছে, সেটা আমরা ভেবে দেখতে পারি।

একটা ব্যাখ্যা হচ্ছে, ঈশ্বর দিয়ে মহাবিশ্বের অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা। আপাত দৃষ্টিতে এটা বেশ শক্তিশালী এবং মিনিমাল ব্যাখ্যা মনে হলেও, আমরা যদি খুঁজতে যাই, তবে দেখব যে এই ব্যাখ্যা ঠিক শূন্য জ্ঞান তৈরী করছে। কারণ এই ব্যাখ্যা থেকে কোনভাবেই একটি অর্থপূর্ণ অনুমান তৈরী করা যাচ্ছে না, যেটা কোনো কিছু ঘটার আগে বলতে পারে কি ঘটবে। ফলে, এই ব্যাখ্যা যাচাই সম্ভব না। এ কথা শুনে কেউ বলবে, সে কারণেই এগনসটিসিজ্ম হলো সবচেয়ে যৌক্তিক। আর বিজ্ঞানের ওই দার্শনিক বলবেন, এর চেয়ে নিউটনের সূত্র অনেক বেশি জ্ঞান তৈরী করে।

ফারুক হাসান এর ছবি

চমতকার মন্তব্য করেছেন।

বিজ্ঞানের যে দর্শন বলে শূন্য জ্ঞান প্রদানকারী ব্যাখ্যা অর্থহীন - সেই দর্শনকে ভালো পাই, তবে পুরোটা একমত নই। প্রথমত, ব্যাখ্যার মধ্যেই তো জ্ঞানের সমাবেশ। জ্ঞান বলতে আমরা কি কোনো কিছুকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করাকেই বুঝি না?

তবে এটা ঠিক, মানুষ যত জ্ঞানী হচ্ছে ততই ঈশ্বরের মত ধারণার প্রয়োজনীয়তা জীবনে কমে আসছে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

ব্যাখ্যার মধ্যেই তো জ্ঞানের সমাবেশ। জ্ঞান বলতে আমরা কি কোনো কিছুকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করাকেই বুঝি না?

ধরুন এভাবে চিন্তা করা যায়: দুই রকম ব্যাখ্যা আছে। একটা ব্যাখ্যা কোনো ঘটনাকে ঘটে যাবার আগে ব্যাখ্যা করে বা পূর্ব-ব্যাখ্যা, আর আরেকটা ব্যাখ্যা কোনো ঘটনা ঘটার আগে কখনই ব্যাখ্যা করতে পারে না, যদি কোনো ব্যাখ্যা করে, তবে কেবল ঘটে যাবার পরে করে। এটা হচ্ছে, সনাতন ব্যাখ্যা, যেটাতে আমরা অভ্যস্ত।

পূর্ব-ব্যাখ্যা জিনিসটা সনাতন-ব্যাখ্যার চেয়ে গুণগতভাবে ভিন্ন দেখে একে অনেকে বলে "prediction".

এখন যে তত্ত্ব কিছু ঘটে যাবার আগে বলতে পারে কি ঘটবে, সেটা যে জ্ঞান তাতে কোনো সন্দেহ নাই। ফলে বলা চলে "পূর্ব-ব্যাখ্যার" মধ্যে অবশ্যই জ্ঞানের সমাবেশ।

এখন সনাতন ব্যাখ্যা, যেটা ঘটে যাবার আগে কোনভাবেই বলতে পারে না, কি ঘটবে, সেটা কি জ্ঞান? ধরুন কারো Cystic fibrosis আছে, আমি বললাম এটা তার আগের জন্মের দোষ, অথবা বললাম মা বাবার পাপের ফসল, অভিশাপ। এটা কিন্তু একটা ব্যাখ্যা, ঘটে যাবার পরে দিচ্ছি। অনেক সিম্পল, অনেক মিনিমাল। কিন্তু জ্ঞানের সমাবেশ কি? আমি কি কারো জন্মের আগেই বলে দিতে পারব যে বাচ্চাটা তার বাবা মার পাপের ফসল-স্বরূপ Cystic fibrosis রোগ বহন করবে কিনা? বা কেউ মারা গেলে বলতে পারব যে পরের জন্ম তার কবে হবে আর তখন তার Cystic fibrosis হবে কিনা?

অন্যদিকে, আপনি বললেন বাচ্চা জন্মের পূর্বেই কয়েকটি টেস্ট করে বের করা সম্ভব যে বাচ্চার Cystic fibrosis হবে কি হবে না। অর্থাৎ আপনার কাছে রোগটার একটা ব্যাখ্যা আছে (জেনেটিক) যেটা কেবল Cystic fibrosis হলে কেন হয়েছে ব্যাখ্যা করে না, বরং কারো হবার আগে বলতে পারে কেন হয়েছে।

আমার ব্যাখ্যাটা সনাতন টাইপের ব্যাখ্যা, ঘটার আগে ঘটনা সম্পর্কে কিছু বলতে পারে না। এটা কি জ্ঞানের সমাবেশ, নাকি না, সেটা দর্শনের বিষয়। আমার মতামত হলো জিরো জ্ঞান ও অর্থহীন।

আর আপনারটা হলো পূর্ব-ব্যাখ্যা। খাঁটি জ্ঞান প্রদান করে সেটা।

একইভাবে, আমি বিশ্ব-প্রকৃতির ব্যাখ্যা দিলাম ঈশ্বর দিয়ে। নাও হোয়াট? আমার এই ব্যাখ্যাটা বিশ্ব সম্পর্কে একটু বেশি বুঝতে কিভাবে সাহায্য করছে? এই ব্যাখ্যার উপর ভর করে বিশ্বের কোনো ঘটনা কি আমি এতটা ভালো বুঝে উঠতে পারলাম যে ঘটে যাবার আগেই অনুমান দিয়ে দিতে পারি কি ঘটবে? যদি না পারি, তাহলে এই ঈশ্বর-কেন্দ্রিক ব্যাখ্যা আমাকে বিশ্ব সম্পর্কে জানতে ঠিক কিভাবে সাহায্য করলো? এই ঈশ্বর-কেন্দ্রিক ব্যাখ্যা দিয়ে আমি ঠিক কতটুকু বা কি জ্ঞানলাভ করলাম তাহলে? ঠিক কি জানলাম?

এটা বিজ্ঞান আর অধিবিদ্যার ক্লাসিক্যাল লড়াই হাসি

লড়াইয়ের একটা অংশ চলে দার্শনিক পর্যায়ে, আরেকটা প্রায়োগিক পর্যায়ে। দুটার কোনটাতেই অধিবিদ্যার শক্ত খুঁটি নেই। তবে বেশ পোক্ত অবস্থান আছে মানুষের আবেগে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

জ্ঞান বলতে আমরা কি কোনো কিছুকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করাকেই বুঝি না?

একমত। তবে সঠিকতার সংজ্ঞা কি? কিভাবে বোঝা যাবে যে আমার Cystic fibrosis এর ব্যাখ্যাটা (বাবা মার পাপের ফসল) সঠিক না আপনার ব্যাখ্যাটা (জেনেটিক) সঠিক?

আপনার ব্যাখ্যাটার সঠিকতা নিরূপণ সম্ভব, কেননা আপনি বলছেন কারো Cystic fibrosis হবে কি না সেটা আগে থেকে কিছু টেস্ট করে বলা যাবে। ফলে আপনার prediction কারেক্ট হলেই আমরা বলতে পারি আপনার ব্যাখ্যাটা সঠিক। অন্যদিকে আপনি যদি সঠিক prediction দিতে ব্যর্থ হন, তবে আমরা বলব আপনার ব্যাখ্যাটা বেঠিক।

অন্যদিকে আমার ব্যাখ্যাটা কোনো prediction-ই তৈরী করছে না যে সঠিকতা যাচাই করবেন। আমার ব্যাখ্যাটা সঠিকতা যাচাইয়েরও অযোগ্য।

মানুষ যাচাই-অযোগ্যতাকে আগে কোয়ালিটি মনে করত (এখনো অনেকেই করে)। জীন, ফেরেস্তা, শয়তান, ঈশ্বর, এরা সবাই যে যাচাই-অযোগ্য সেটা মানুষ অনেক আগে থেকেই জানে। কিন্তু এই যাচাই-অযোগ্যতাকে মানুষ কোয়ালিটি মনে করে এসেছে দেখে এই রহস্যময়তার একটা অস্তিত্ব মানুষের মনে রয়ে গেছে।

কিন্তু যাচাই-অযোগ্যতা প্রকৃত অর্থে একটা pejorative টার্ম। যাচাই-অযোগ্যতা গুণগতভাবে বেঠিকতার চেয়েও তুচ্ছ

ফলে, সনাতন ব্যাখ্যার (যেসব ব্যাখ্যা ঘটে যাবার আগে বলতে পারে না কি ঘটবে) সঠিকতা যাচাই করা যায় না। আমরা কোনো ধরনের সনাতন ব্যাখ্যাকেই সঠিক ব্যাখ্যা দাবী করতে পারব না। তারা বেঠিকতার চেয়েও তুচ্ছ।

অন্যদিকে পূর্ব-ব্যাখ্যা, যেসব ব্যাখ্যা ঘটে যাবার আগেই অনুমান করতে পারে কি ঘটবে, তাদের সঠিকতা নিরূপণ সম্ভব। হতে পারে বেঠিক। কিন্তু তারা সঠিক না বেঠিক বলা সম্ভব।

ফলে জ্ঞানের সংজ্ঞা আমরা এভাবে বলতে পারি, জ্ঞান বলতে কোনো কিছুকে যাচাইযোগ্যভাবে ব্যাখ্যা করাকে বোঝায়।

ঠিক জ্ঞানের সংজ্ঞা নিয়েই আমার এই লেখায় আলোচনা করেছিলাম।

ফারুক হাসান এর ছবি

অসাধারণ মন্তব্য। আপাতত আপনার মন্তব্য দুটি এবং দেয়া পোস্টের লিংক আমার খুব কাজে লাগছে এবং এক কথায় বললে আমি কিছুটা প্রভাবিতও। পরবর্তী লেখায় খুব কাজ আসবে।
ধন্যবাদ।

সিরাত এর ছবি

তবে বেশ পোক্ত অবস্থান আছে মানুষের আবেগে।

তো সেটা কেন কম হবে? হাসি

সমস্যা হল যখন আবেগ ইনকোয়ারির পথ রুদ্ধ করে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আবেগ আর যুক্তির absolute কোনো কম্প্যারিজন আমি করি নি। কম্প্যারিজনটা আলোচ্য কনটেক্সে। আলোচ্য কনটেক্স হলো ঈশ্বরের প্রকৃতি। তিনি সুখ নিয়ে কি ভাবেন। সেটার অনুমিতি হলো, ঈশ্বর আছেন। তো আমি আলোচনা করছি এই অনুমিতির সঠিকতা নিয়ে। কোনো কিছু সঠিক কিনা সেটা জ্ঞানের প্রশ্ন, আবেগের প্রশ্ন নয়। এই অর্থে আবেগ এখানে irrelevant.

সিরাত এর ছবি

এখানে কিন্তু খালি জ্ঞান প্রদানের মাপকাঠি আমার কাছে সীমিত মনে হয়। মানসিক আরামের একটা ব্যাপারও আছে, যেটা পরবর্তীতে জ্ঞানকে এনাবল করে। সেভাবে দেখলে ঈশ্বরের ধারণা অনেককে এনাবল করে। আমার নিজের বোনকেই ধরেন না কেন? হাসি সে ঈশ্বর ছাড়া দুনিয়া কল্পনা করতে পারে না।

এখন যদি বলেন এই মানসিক আরাম ভ্রান্ত ধারমা, বা লিমিটেশন, তো সেখানে আমার কথা হল, এখানে অবশ্যই একটা থ্রেশোল্ড আছে, কিন্তু এ ধরনের ভিত্তিহীন অনুমিতি আমাদের জীবনের অনেকক্ষেত্রেই করা লাগে। এটা এলিমিনেট করা অসম্ভব।

তবে কেবল জ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে আপনি দেখছেন বলেই দিসেন। সেখানে তো কথা বলার নাই। তবে আমার সেই দৃষ্টিভঙ্গীটাকে অসম্পূর্ণ লাগে। হাসি

ইউ ক্যান্ট এন্ড দিস ডিবেট। হাসি

ফারুক হাসান এর ছবি

মানসিক আরামের জন্যেই যদি ঈশ্বরকে লাগে তাহলে তাকে এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই তো হতো। তাকে দিয়ে জগতের সবকিছু তৈরি করার ঝামেলায় যাওয়ার দরকার কী! এখন তো দেখা যাচ্ছে সে সেটা করতে গিয়ে কারো কারো কষ্টও বাড়িয়ে দিচ্ছে!

সিরাত এর ছবি

মানসিক আরামের পয়েন্টটাই তো সেটা, ডিসক্রিমিনেট করতে গেলে মানসিক আরাম কিসে? ধারনাটা হল যে ঈশ্বর সব পারেন, শেষ। চরম আরাম। হাসি সীমাবদ্ধ রাখলেই তো ইল্যুশন প্রমাণিত।

এখন তো দেখা যাচ্ছে সে সেটা করতে গিয়ে কারো কারো কষ্টও বাড়িয়ে দিচ্ছে!

তাতে ধার্মিকদের কি? একই অবস্থার উল্টা অধার্মিকদের ক্ষেত্রেও, আমরা ধর্ম নিয়া যা ইচ্ছা কমু, তগো কি? কিন্তু ধার্মিকদের সত্যের 'সত্যতা'-টা মনে হয় কিছুটা কমে যায় এসব উল্টাপাল্টা অধার্মিক দুষ্টামির কারণে। হাসি

ফারুক হাসান এর ছবি

তাহলে তো শেষমেষ এইটাই দাড়ালো - সবাইরে সুখী করলে ঈশ্বর সুখী হয় না। তার দরকার ভেরিয়েশন যাতে মজা লুটতে পারে - কারণ এই বুইড়া ব্যাটা ব্যাপক নিঃসঙ্গতায় ভুগে। দুনিয়া শ্যাষ হয়ে গেলেও যাতে মজা শেষ না হয় এইজন্য সাতটা বোরিং বেহেশতের লগে এক্সট্রা আটটা ভ্যারাইটির দোজখও রাখছে চোখ টিপি

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আমার আবেগকে সাহায্য করে, এটা দিয়ে কি ঈশ্বরের অস্তিত্ব যাচাই করা যায়? Cystic fibrosis যে আগের জন্মের দোষ, এটা ভাবতেও আমার মানসিক উপকার হয় ও পরবর্তীতে প্রাকটিক্যাল কাজে জ্ঞানকে এনাবল করে (অনেক দুঃখ ভুলে এক মনে পড়াশুনা করতে পারি)। আবার শয়তানের উপর আস্থার কারণে আমার শুধু বাস্তবিক জ্ঞানই এনাবল হয় না, অনেক পার্থিব অর্জনও ঘটে। হাসি

এটা তো জানা ব্যাপার সিরাত যে irrational চিন্তা মানুষ ধারণ করতে এবং তাকে utilize করতে মানুষ সক্ষম। কিন্তু সেটার সাথে irrational এর rationality খোঁজাকে গুলিয়ে ফেলার fellacy তে খামোখা কেন জড়াচ্ছেন? ভ্রান্ত ধারমা কেন হবে, এটা তো কোনো ধারমাই না। আপনার নিজের বোন ঈশ্বর কল্পনা ছাড়া চলতে পারে নার সাথে ঈশ্বরের অস্তিত্বকে জাস্টিফাই করার আলোচনার relevance কোথায়? মন খারাপ

আর এলিমিনেটের তর্কও বা আসছে কেন। বারী স্যার যে ভাবেন সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, সেটাও তো এলিমিনেট অসম্ভব। আমি তো কারো বিশ্বাস এলিমিনেট করার তর্ক করছি না। ঈশ্বর টপিকটা নিয়ে যৌক্তিক আলাপ করছি। দুর্বল যুক্তির একটা বিষয়কে "এলিমিনেট করা সম্ভব নয়" অজুহাত দেখিয়ে যুক্তির মাঠে ছাড় দেবার কারণটা বোধগম্য নয়। আবার একটা বিষয়ের যৌক্তিক দৌর্বল্য চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি মানেই মানুষের মন থেকে এলিমিনেশন সাজেস্ট করছি, এটা ভাবাটাও রং ইনফারেন্স।

কথা হচ্ছে প্রকল্পের সঠিকতা নিয়ে, সেটা বিশ্বাসের উপযোগিতা নিয়ে না।

It helps me believe "X is true".
Therefore, "X is true". WRONG

nytimes এর লেখকরাও এই ফ্যালাসি করা না হাসি

আমি সঠিকতা নির্ধারণের একটা ডেফিনিশন প্রভাইড করেছি। সেই ডেফিনিশন নিয়ে বরং প্রশ্ন, তর্ক চলতে পারে।

আমিও মনে করি আমার মাপকাঠিটি সীমিত, কারণ এটা নিয়ে যথেষ্ঠ আলোচনা হয় নি। আমার সঠিকতার সংজ্ঞা নিয়ে আলোচনার দরকার আছে। ফারুক ভাইয়ের সাথেও যথেষ্ট আলোচনা হয় নি এ নিয়ে, এটাও একটা সীমাবদ্ধতা। ওনার আগামী লেখার অপেক্ষায় আছি।

কিন্তু আমার মাপকাঠির সীমাবদ্ধতাটা দেখাতে আপনার fallacy গুলো অবশ্যই সাহায্য করে নি।

লজিক্যাল আলাপ হলে আশা রাখি তখন সাহায্য করবে এবং আমার সংজ্ঞাগুলোকে সিস্টেমেটিক্যালি সম্পূর্ণ করে নেয়া যাবে।

ধ্রুব বর্ণন এর ছবি

আসিমভের foundation পড়সেন? হাইলি রিকমেন্ডেড। একটা ভিত্তিহীন জিনিসকে ভিত্তিহীন জানা আর তাকে utilize করা সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। আমি যদি একটা পারফেক্ট AI মেশিন বানাতাম, আমি নিশ্চিত সে মানুষকে কন্ট্রোল করার জন্য তার বিশ্বাসকে ulitize করত। প্রয়োজনে বলত সে নিজেও ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, যাতে অন্যের আস্থা অর্জন করতে পারে। সে যেহেতু সাইন্সের প্রডাক্ট, তার প্রতিটা আয়্ক্শান যেহেতু প্রিসাইস সাইন্টিফিক থিওরির আউটকাম, তাহলে বলা চলে যে তখন একটা সাইন্টিফিক প্রসেস বিশ্বাস বা ধর্মকে প্রেডিকশান বা কন্ট্রোলের কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু তার মানে কিন্তু এই না যে ঈশ্বরে বিশ্বাস বিশ্বকে ব্যাখ্যা করতে পারল।

সিরাত এর ছবি

পাঁচ এবং শেয়ারড।

আলোচনা শুরু করলে আজকে দিন যাইবো গা। তবে এতটুকু বলাই যায়:

আরো চাই আরো চাই আরো চাই! হাসি

ফারুক হাসান এর ছবি

দিন তো ভাই এমনিতেই যাবে চলে। পরেরবার থেকে আলোচনা করতে ভুলবেন না কিন্তু!

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আইডিয়াটা মনে ধরসে, সাইফাই টাইপ...

আচ্ছা, ইয়ে- ঈশ্বর নিয়ে এই ধরণের কথাবার্তা বলার বিষয়ে ধর্মে এতো বিধিনিষেধ ক্যান ?? ...

_________________________________________

সেরিওজা

ফারুক হাসান এর ছবি

ঈশ্বর নিয়ে কথা বলায় ধর্মে নিষেধ আছে কিনা জানি না তবে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যারা ধর্মকে অবলম্বন করেছে তাদের মধ্যেই একটা ঢাকগুড়গুড় ভাব।

অতিথি লেখক এর ছবি

তিব্র সহমত।

ঈশ্বর বিশ্লেষণে এখন পর্যন্ত কোন ধর্মের মূল গ্রন্থগুলোয় নিষেধ আছে বলে জানা নেই। তবে ধর্মের পুঁজিবাদ অবশ্যই দেয়াল তুলে দেওয়ার কাজ করে যাচ্ছে প্রতিদিন।

---- মনজুর এলাহী ----

তিথীডোর এর ছবি

হুমম...
ভাবছি... চিন্তিত

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সুরঞ্জনা এর ছবি

ঈশ্বরের গতি-প্রকৃতি বুঝতে হচ্ছে কল্পনার আশ্রয় নিয়ে।
যার উৎস কল্পনায়, তার ব্যাখাও কল্পনা করেই পাওয়া সম্ভব হয়ত।

সবটাই যার কল্পনা
আদতে কি শুধু গল্প না? হাসি
............................................................................................
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয়

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

ফারুক হাসান এর ছবি

দারুণ মন্তব্য!

অতিথি লেখক এর ছবি

সত্যিই অসাধারণ লিখেছেন। নিচে আমার কিছু মতামত জানালাম। একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত অবশ্য। হাসি

অন্যদিকে, ঈশ্বর মহান। তাই তার কি এত নিচে নামা সাজে? সাজে না। বরং না হয় আমরাই স্বীকার করে নেই কিছুটা ত্যাগ।

ঈশ্বর শুধু মহানই নন, সর্বব্যাপীও। তাঁর নিচে নামার প্রয়োজন নেই, তিনি তো ওপরে, নিচে সবখানেই আছেন। আমরা যে ত্যাগ করি তাও কিন্তু ভোগের আশায়। কোনো কিছুই আমরা বিনা কারণে ত্যাগ করি না। অথচ আমরা না চাইতেই ঈশ্বর অনেক কিছু দিয়েছেন আমাদের, তিনি এসব কিছু না দিলেও বলার কিছু তো ছিল না।


একজন সুখী ঈশ্বর কেন এমন একটা জগত তৈরি করবেন যেখানে এত কষ্ট, এত ক্লান্তি, এত জরা, এত ভেদ, এত ক্রোধ, এত জিঘাংসা, এত অসহিষ্ণুতা!

জগতে এত আনন্দ, এত ফূর্তি, এত পূর্ণতা, এত ঐক্য, এত মায়া, এত মানবিকতা, এত ধৈর্য আমরা টের পেতাম না হলে কীভাবে? আমরা আশরাফুল মাখলুকাত---ভালো-মন্দের, শুভ-অশুভের তফাত না করতে পারলে তা আমাদেরই ব্যর্থতা, এর জন্যে ঈশ্বরকে দায়ী করা যাবে না।

যা হোক, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য। আরও পড়ার আশায় থাকলাম।

কুটুমবাড়ি

ফারুক হাসান এর ছবি

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তবে

আমরা যে ত্যাগ করি তাও কিন্তু ভোগের আশায়।

পুরোটা মানতে পারলাম না। আর সে কারণেই তো এই পোস্ট। একজন জন্মান্ধ মানুষের যে ত্যাগ যে কষ্ট তা কি কেবল ভোগের আশায়? এই সিদ্ধান্তটাই বা নিল কে?

অতিথি লেখক এর ছবি

একজন জন্মান্ধ মানুষের যে ত্যাগ যে কষ্ট তা কি কেবল ভোগের আশায়? এই সিদ্ধান্তটাই বা নিল কে?

একজন জন্মান্ধ মানুষ একটি ইন্দ্রিয় কম নিয়েই জন্মেছেন। তার মানে তিনি কিছু ত্যাগ করেননি, একটি ইন্দ্রিয় কম ভোগ করছেন মাত্র। তাঁর কষ্ট অনুমান করতে পারি, কিন্তু জগতের সব লোকই যে কষ্টহীন জীবনযাপন করছেন তাও তো নয়। হয়তো একেক জনের কষ্ট একেক রকম। যেহেতু প্রতিটি মানুষই অনন্য, তাই তাদের সবারই স্বতন্ত্র দুঃখ-কষ্ট থাকবে বলে অনুমান করা যায় (ঠিক যেভাবে থাকবে সবার স্বতন্ত্র সুখ-ভালো লাগা)।

আমরা যে ত্যাগ, যে কষ্ট সয়ে চলেছি তা জীবন ভোগের আশায়। এই কষ্ট ভোগের সিদ্ধান্ত আমরাই নিচ্ছি, জীবন রক্ষার খাতিরে বা পরকালের আশায়। যদিও এই জীবন প্রাপ্তির কৃতিত্ব আমাদের নয়। ঈশ্বরের।

কুটুমবাড়ি

ফারুক হাসান এর ছবি

একজন জন্মান্ধ মানুষ একটি ইন্দ্রিয় কম নিয়েই জন্মেছেন।

একজন মানুষ কেন একটি ইন্দ্রিয় কম নিয়ে জন্মাবে? আমার প্রশ্নটা সেখানেই।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার ভাবনাগুলো ভাবালো।

সুমিমা ইয়াসমিন

a00achalaina এর ছবি

ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন আউটরেজাস নাস্তিক, তাই আস্তিকতার দার্শনিক স্কলারি বিশ্লেষণে যেতে ক্লান্তি বোধ করি। আপনার প্রবন্ধ ভালো লাগলো, প্রশান্তিময় ভাব পেলাম যেনো একটা। আল্লা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। এক মূহুর্তের জন্য যদি ভুলেও যাই যে এশিয়া আর ল্যাটিন আমেরিকা নামক আরও দুটি গরিব মহাদেশের অস্তিত্ব পৃথিবীতে আছে- তারপরও শুধু আফ্রিকাতেই প্রতিবছর মশার কামড়ে মারা যায় দুই মিলিয়ন মানুষ। কিছু মশা নিধন করে কিছু মানুষের প্রাণ যদি আল্লা বাঁচিয়ে দিতো, খুউউউউব ভালো হতো!

ফারুক হাসান এর ছবি

পোস্ট ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগলো। কিন্তু আপনি বোধহয় ধরে নিচ্ছেন যে পোস্ট যিনি লিখেছেন তিনি ঘোর আস্তিক। আমি কিন্তু কোথায়ো যুক্তি দিয়ে কোনো বিশ্বাসের পক্ষে সাফাই গাই নি যে ঈশ্বর থাকতেই হবে এবং তিনি যা করেন তা ভালোর জন্যই করেন। পোস্টের শেষ দুটি লাইন হচ্ছে স্যাটায়ারিক উপলব্ধি, আমাদের এই বোঝানো হয়েছে যে ঈশ্বরকে নিয়ে কিছু ভাবা যাবে না, বলা যাবে না এবং মেনে নিতে হবে যে জগতের সব কিছুই ঘটে তার ইশারায় এবং কোন মহত্তম কারণে। এই একটা ফাঁক রেখে দেয়া হয়েছে।

জন্মান্ধ মানুষের যে উদাহরণ আমি দিয়েছি, কিংবা ধ্রুব বর্ণন যে রোগের কথা বলেছেন, কিংবা আফ্রিকার দুই মিলিয়ন মানুষের দুর্দশার কথা যেটা আপনি বললেন - সবই তো একই প্রশ্নের সামনে আমাদের দাড় করায়। ঈশ্বর যদি থাকবেনই তাহলে কেন এত বৈষম্য। লক্ষ্য করলে দেখবেন, শুরুতেই আমি সেটা তুলেছি।

এই সব কেবল একটা উপসংহারের দিকেই আমাদের টেনে নিয়ে যায়। আর সেটা হলো - ঈশ্বর থাকুক বা তাকে বানানো হোক, সে এইসব কষ্টের ধার ধারে না। যে ধার ধারে তা হলো প্রকৃতি, আমরা যার সন্তান। এরপর ঈশ্বরের উপর বিশ্বাস রাখা না রাখা মানুষের নিজস্ব চয়েস।

সৈকত চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

ঈশ্বর মানুষের কল্পনাসাধ্য সবচেয়ে বড় অশ্বডিম্ব বৈ কিছু নয়।

ফারুক হাসান এর ছবি

হতে পারে। আপনার মতামত জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

ফারুক হাসান এর ছবি

মানুষ সবকিছুর ব্যাখ্যা চায়। ব্যাখ্যার বাইরে কোনো কিছু হজম করা কষ্টকর তো বটেই। আমার কথা বললে বলবো -নিজের মত করে আপাতত (as a start) একটা ব্যাখ্যা আমার আছে- ধরে নেই জগতের সবকিছুর পেছনে আছে হয় প্রকৃতির খেয়াল, না হয় কোনো নিঃসঙ্গ ঈশ্বরের বাসনা। আমার মনে হয় শুরু হিসেবে এই যে দুইটি কারণ অনুমিতি হিসেবে আমি নিয়েছি তা যথেষ্টই ‘রিপ্রেজেন্টেটিভ’। অনেকটা সেফ সাইডে থাকার মতোও। ঈশ্বরে বিশ্বাস এবং অবিশ্বাস – দুটোই থাক। যুক্তিতে জয়ীর পাল্লাই তো দিন শেষে ভারী হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।