জিপিএ-৫, উচ্চশিক্ষা এবং একটা প্রশ্ন

ফারুক হাসান এর ছবি
লিখেছেন ফারুক হাসান (তারিখ: শুক্র, ৩১/০৮/২০০৭ - ৭:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এবার এইচএসসি পরীক্ষায় সারাদেশে জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১১ হাজার ১৪০ জন।
অত্যন্ত আনন্দের কথা।
আমার ছোট বোনও ৫ পেয়েছে। ওর জন্য বিপ্লব!
চারিদিকে মিষ্টির ছড়াছড়ি। ময়রাদের পোয়া বারো, সাথে মেধাবীর প্রতিবেশীদেরও।
আকাশে বাতাসে আনন্দ। মেধাবীর বাবা-মায়ের বুক ভরা গর্বে।

যারা এবার পাশ করেছে তাদের সবার জন্যই খুলে গেছে উচ্চশিক্ষার দ্বার।
যারা জিপিএ-৫ পেয়েছে তাদের সবার মনের সুপ্ত বাসনা খুব ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া। শখটা বুয়েট, মেডিকেল পর্যন্ত ছড়ানো; স্বপ্নটার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে আটকে থাকা।

আমাদের সময়ে জিপিএ পদ্ধতি ছিল না। তখন ডিভিশনের যুগ। মেধাতালিকার যুগ। ছেলে-মেয়ের কেউ মেধাতালিকায় স্থান পেলে বাবা-মার গলা জড়িয়ে পত্রিকায় ছবি আসার যুগ।
সে যুগ পুরাতন।
তখন এইচএসসির ফল দেখেই বলা যেত কোন বোতলে কী মাল।
এখন ১১ হাজার বোতলের গায়ে একই লেভেল। ভর্তি পরীক্ষার আগে বোতল নিজেও নিশ্চিত নয় যে সে কাংখিত বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে কিনা।
এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশী প্রতিযোগিতা।

এটা কি কারণে?
আমি জানি না।
কেন জিপিএ-৫ এর লেভেল আটা ভর্তিযুদ্ধের সেনানী বাড়ানো হচ্ছে বছর বছর?
আমার জানা নেই।
আমি হিসাব করতে চাই। বুয়েট-মেডিকেল কয়টা জিপিএ-৫ শুষতে পারবে?
সর্বোচ্চ ৩ হাজার।
জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১১ হাজার ১৪০ জন। বাকী ৭ হাজার স্বপ্নের কী হবে?

আমার বোকা মাথায় প্রশ্ন জাগে- এত এত জিপিএ-৫ কি কারনে?
কার লাভ?

দুটো নাম মাথায় আসে- কোচিং সেন্টার আর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি।
ভর্তি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত টাকা চুষে নেবে কোচিং সেন্টারগুলো ভর্তির মুলো ঝুলিয়ে।
আর ভর্তি যুদ্ধ শেষে মাঠে থাকবে কেবল প্রাইভেট ভার্সিটি। পরাজিত সৈনিকদের ইগো বাঁচাতে স্থান হবে প্রাইভেটে। চার বছরের ব্যবসা তাদের রমরমা হবে একবছরে জিপিএ-৫ এর বাম্পার ফলনে।

আমি ভাবছি আমার বোনের কথা- এত এত কোচিংয়ের পর ঢাকা-ময়মনসিংহ-চট্রগ্রাম-সিলেটে চান্স পাবে তো?
নাকি শেষমেশে বাংলাদেশ মেডিকেলই ভরসা?


মন্তব্য

অয়ন এর ছবি

এইবার নাকি গ্রেড দেখে ভর্তি করাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে?

ফারুক হাসান এর ছবি

অয়ন,
তাহলে একই গ্রেড পয়েন্টের একাধিক প্রার্থীকে ক্রমান্বয়ে সাজাবে কিভাবে?

আরেকটা কথা বলতে ভুলে গেছি পোস্টে- এখনকার ছেলেমেয়ে সব বিষয়ে জিপিএ-৫ পায় কিভাবে? আগে তো বাংলায় ৮০ নম্বর পাওয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। আমাদের বেলায় পেয়েছিলো বোধহয় ১ কি ২ জন।
১১ হাজার ছেলেমেয়ে কিভাবে A পায় সে এক প্রশ্ন বটে।
রাতারাতি মার্কিংয়ের সিস্টেম বদলে গেল!

-----------------------
জানেনিতো, ইহা নিতান্তই নিজস্ব মতামত

হিমু এর ছবি

বাংলায় ১১ হাজার ছেলেমেয়ে ১০০তে ৮০ পেয়েছে শুনে আমার টাষ্কি লেগে গিয়েছিলো। আমি ইন্টারমিডিয়েটে বাংলায় পেয়েছিলাম ২০০ তে ১২১ [৫০ + ৭১]। এই ১১ হাজার অশীতিপরকে আমার সালাম। আশা করি তারা অনেকেই বাংলায় ব্লগিং শুরু করবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ফারুক হাসান এর ছবি

আমার বেলায় একটা ব্যাপার ঘটেছিলো। বাংলা ২য় পত্রে মার্ক এসেছিলো ২৬। পরে বোর্ডে চ্যালেঞ্জ করলে তা হয় ৬২। মোট নম্বর গিয়ে দাড়ায় ১২৩। হিমু,দেখা যাচ্ছে যে আপনার আমার মত এভারেজ পাপীরাই বাংলায় ব্লগিং করছে!
তবে আমরা আরো কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখতে পারি; এবার ভর্তি যুদ্ধ শেষ হলে এইচএসসিতে বাংলায় ৫ পাওয়া বাংলালেখী ব্লগারদের পরিমাণ বাড়তে পারে।
এরকম কেউ আসলে তাদের পোষ্টে সর্বনিম্ন রেটিং ৫ করার দাবি জানাচ্ছি।

-----------------------
জানেনিতো, ইহা নিতান্তই নিজস্ব মতামত

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বেশি পাওয়াওয়ালাদের বাংলা লেখার সময় কোথায়? ৮০% পেলে আপনিও লিখতেন না.. খাইছে

অয়ন এর ছবি

ফাহা লিখেছেন:
অয়ন,
তাহলে একই গ্রেড পয়েন্টের একাধিক প্রার্থীকে ক্রমান্বয়ে সাজাবে কিভাবে?

ভাইয়া, গতবার নটরডেমে ভর্তির সময় কি করেছিলো মনে আছে? একই গ্রেডের প্রার্থীর ভর্তির ক্ষেত্রে বিবেচ্য ছিল বয়স!!! এইরকম গর্দভমার্কা সিদ্ধান্ত যদি আবার নেয় তাহলে আমি আশ্চর্য হবো না।

ফারুক হাসান এর ছবি

বাংলায় একটা শব্দ আছে-
কিংকর্তব্যবিমূঢ়!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এইটা নটরডেমের দোষ নয়। নটরডেম এমন অযৌক্তিক কাজ করতেই পারেনা। এই সিদ্ধান্ত বোর্ড কর্তৃক নেয়া হয়েছিল এবং নটরডেম তা মানতে বাধ্য।

ফাদার পিশোতো ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি করতে মোটেই উৎসাহি ছিলেননা। তিনি মন্ত্রণালয়েও অনেক দৌড় ঝাঁপ করেছেন বলে শুনেছি। পরে শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে কড়া নির্দেশ দেয় যে, যারা তাদের নিয়ম না মানবে সেসব প্রতিষ্ঠানের মঞ্জুরি/অনুমোদন বাতিল করা হবে। এসব অনেক দিন আগের কথা।

...........
যত বড় হোক সে ইন্দ্রধনু দূর আকাশে আঁকা
আমি ভালবাসি মোর ধরনীর প্রজাপতির পাখা

ফারুক হাসান এর ছবি

উচ্চমাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভর্তি প্রক্রিয়া অনেক সহজ, স্বচ্ছ ও গলদহীন (গলদের উদাহরণ-বয়সভিত্তিক বাছাই) হত যদি এসএসসি ও এইচএসসি এই দুই পাবলিক পরীক্ষার অনুষ্ঠান ও মূল্যায়ন পদ্ধতি আরো গ্রহনযোগ্যভাবে করা যেত।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয় তার অনেকটাই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের গ্রহনযোগ্যতার উপর বিশ্বাস না থাকার কারনে।

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

ফাহা লিখেছেন:
বাংলায় একটা শব্দ আছে-
কিংকর্তব্যবিমূঢ়!

আমার নাম শুনলাম মনে হয়? দেঁতো হাসি

প্রকৃতি ভাইজানের কথা সইত্য ... এইরকম উজবুকি বুদ্ধি নটরডেমের না, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ... এনডিসি এইটা না মাইনা নিজেরা পরীক্ষা নিতে চাওয়ায় বহুত ক্যাচাল হইছিল ...

ঐসময় শিক্ষামন্ত্রী কালা ফারুক অথবা মুরগী মিলন একটা বাণী দিছিলেন, বয়সের মাধ্যমে ভর্তি করা হইলে বাপ মা আর স্কুলে ভর্তির সময় পোলাপানের বয়স কমাবে না ...

কি দূরদর্শী চিন্তাভাবনা ভাইবা দ্যাখেন ... আপনার আমার মাথায় আসবে এইরকম বুদ্ধি?

যা বুঝতাছি এখন থেইকাই না হওয়া পোলাপানের নামে বার্থ সার্টিফিকেট নিয়া রাখা লাগবে ...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

হ,শেষমেশ তো বেশির ভাগই গর্দভ হইব।
তবে ৫ পাওয়ায় লাভ আছে।

কয়েক বছর বাসায় আদরযত্ন পাওয়া যায়।
(অভিজ্ঞতা)

-----------------------------------
ঢাকার ভূমে ফিরেছে একাত্তর/প্রস্তুতি নে,সময় হলো তোর..

ফারুক হাসান এর ছবি

বয়সের হিসাবে ভর্তি- ভারী মজার কনসেপ্ট।
আমাদের নীতি নির্ধারকদের বুদ্ধি সত্যি বলিহারি।

-----------------------
জানেনিতো, ইহা নিতান্তই নিজস্ব মতামত

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

হ্যা, বয়সবিবেচনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত। এত জিপিএ বাস্তবিকই চিন্তার বিষয়। '৯২ এ এসএসসিতে ৫০০ নৈর্ব্যক্তিক চালু হলে সেবছর আগের তুলনায় অনেক বেশী স্টার মার্কস আসে, আমরা তখন ক্লাস সিক্সের ছাত্র; এক স্যার ক্লাসে এসে বললেন‌- হায়রে আকাশের তারা ধুলায় গড়াগড়ি যাচ্ছে। অবস্থা ছড়াছড়ি গড়াগড়ির পর্যায়েই চলে যাচ্ছে।
--------------------------------------
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।