২০০৯১২২০

ফাহিম এর ছবি
লিখেছেন ফাহিম [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২০/১২/২০০৯ - ৮:২৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১.
রাত চারটায় ঘুমটা বেরসিকের মতো ভেঙে গেলো। অবশ্য এটা এখন আর নতুন কিছু না, প্রায়ই হচ্ছে এমন। বাকি রাত আর দু'চোখের পাতা এক হবে না, অবশ্য সমস্যাও নেই তেমন, কাল ছুটি। একটু ক্ষিদেও পেয়েছে। শেলফে দেখি, কী পাওয়া যায়। বাহ, মুড়ি দেখা যাচ্ছে। একটা চানাচুরের প্যাকেট কয়েকদিন আগে কোথায় যেন উকিঝুকি মারতে দেখেছিলাম! এইতো পাওয়া গেছে! বেশ, বেশ, একটা অ্যাডভেঞ্চার হয়ে যাক!

"মুড়ি ছিলো, চানাচুরও, ব্যাকরণ মানি না
হয়ে গেল মুড়িমাখা, কেমনে তা জানি না"

পানি ফুটিয়ে চা করতে ইচ্ছা করছে না, একটা মগে পানি দুধ মিশিয়ে মাইক্রোওয়েভে মিনিট তিনেক গরম করে একটা টিব্যাগ আর দু'টা চিনির কিউব ছেড়ে দিলাম। যদিও অখাদ্য চা, তাও একটু দেশি দেশি গন্ধ আসছে, মন্দ কী?

২.
গামলা ভর্তি মুড়িমাখা আর চায়ের মগ পাশে নিয়ে কোলের উপরে আমার ব্ল্যাকবিউটিকে নিয়ে বসে পড়লাম। কী করা যায়? সারাদিন গান শুনেছি, আর এখন গান বাজালে পড়শিরা পরদিন আমাকে রাস্তায় বের করে দিবে। ঘুরতে ঘুরতে বাংলা নাটকের সাইটে গেলাম। "সাকিন সারিসুরি" নাটকটা দেখা হয় মাঝে মাঝে, নতুন পর্বদু'টা দেখলাম। ভালো খারাপ কিছুই লাগলো না। অনির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে অর্থহীন যাত্রা, অনেকগুলো মেধাবী অভিনেতা ও একজন মেধাবী পরিচালকের সামর্থ্যের বিপুল অপচয়। সালাউদ্দিন লাভলু কি তবে বার্নড আউট হয়ে গেলেন?

ঈদে মোটামুটি বানের জলের মতো নাটক আসতে থাকে, দেখার মতো নাটক খুজে বের করাটা কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের মতোই মনে হয়। অসংখ্য নাটক দু এক মিনিট করে দেখে বন্ধ করে পরেরটায় যাওয়া, এমন করতে করতে কপাল ভালো থাকলে একটা দু'টা দেখার মতো নাটক পাওয়া যায়। আগে অনেক উদ্যম ছিলো, খুজতাম, এখন আর ভালোও লাগে না। একটু ঘুরেই বের হয়ে আসি। এবারও তাই হলো। "মুখোশ" নামের একটা নাটক মনে ধরলো, ইটিভিতে দেখিয়েছে, ইটিভির নাটকগুলা মাঝে মধ্যে ভালোই হয়। কিন্তু কিসের কী, অবস্থা করুণ! ৫ মিনিটের বেশি দেখা গেলো না। আচ্ছা, এরা এই নাটকগুলা বানাতে কতো সময় নেয়? এক ঘন্টা? এক দিন? নাকি এক সপ্তাহ? একদিনের বেশি সময় নেয় বলে তো মনে হচ্ছে না।

৩.
বিবিসির নিউজে দেখলাম জিএম তাদের সুইডিশ ব্র্যান্ড "সাব" বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রায় ৪ হাজারের মতো লোক চাকরি হারাবে। এদিকে জার্মানীতে তাদের "ওপেল" নিয়েও চলছে বিরাট নাটক। দুইবার প্রায় বেচতে বেচতেও বেচলো না। কী হবে এর ভবিষ্যৎ কেউ জানে না, তবে খুব একটা আশাবাদী কাউকেই মনে হচ্ছে না। ভাবে মনে হচ্ছে সাবের ভাগ্যই অপেক্ষা করছে ওপেলের জন্য।

বিশাল এক সাম্রাজ্য আস্তে আস্তে ধ্বসে পড়ছে, খারাপই লাগছে। আমাদের পাট, চিনি শিল্পগুলোর ঘটনাও তো প্রায় একই। এক একটা শিল্পকে ঘিরে কতো হাজার হাজার মানুষের জীবন জীবিকা জড়িয়ে থাকে, এর পতন মানে সেই মানুষগুলোর জীবনে অনিবার্য বিপর্যয় নেমে আসা। লাভ ক্ষতির নিক্তিতে মাপলে হয়তো বন্ধ করে দেয়াটাই যুক্তিযুক্ত মনে হয়, কিন্তু একটা ব্যর্থ শিল্পের ব্যর্থতার দায় তার সাধারণ শ্রমিকদের কতটুকু? এই যে ক্রেডিট ক্রাঞ্চের শিকার হয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া সাব, তার চাকরি হারানো সেই লাইন কর্মচারী কতটুকু হারালো, আর ভুড়ি বাগিয়ে বসে থাকা ওপরওয়ালারা কতটুকু হারালো, তার তুলনামূলক বিচার কি কেউ কোনদিন করবে? মনে হয় না। পৃথিবীতে আমাদের মতো উলুখাগড়ারাই সবার আগে বলি হয়, এটাই আমাদের নিয়তি।


মন্তব্য

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনার লেখাটি ভাল লেগেছে। সাব আর ওপেলের ঘাড়ের ওপর খাঁড়া সেই ডট কমের সময় থেকেই ঝুলছে। গত দশ বছরের তারা নিজেরা কোন গাড়ী ডিজাইন করেনি। দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের পর তিল তিল করে গড়ে তোলা এই দুটি ব্র্যান্ডকে একদম চুষে খেয়ে ছিবড়ে করে ফেলেছে জি এম।
যদি নতুন প্রান না আনা যায়, তাহলে এই ব্র্যান্ডগুলোর মরে যাওয়াই ভাল।
তবে যাদের কাজ যাবে, তাদের জন্য খারাপ লাগে।

ফাহিম এর ছবি

নতুন কোন ডিজাইন করেনি, এটা মেনে নিতে একটু কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে ওপেল গত কয়েক বছরে বেশ ভালো ভাবেই বাজারে ছিলো তাদের কোরসা আর আস্ত্রা সিরিজ দিয়ে। ভক্সহল তাদের আস্ত্রা সিরিজকে রেপ্লিকেট করে ভক্সহল আস্ত্রা ব্রিটেনের মার্কেটে ছেড়েছিলো, যা বেশ জনপ্রিয় হয়েছিলো, অন্তত টপ গিয়ারের মতামত অনুযায়ী। তাছাড়া ওপেল তাদের নতুন ইনসিগনিয়া মডেলে যথেষ্ঠ পরিমান রিসোর্স ইনভেস্টমেন্ট করেছে, এবং ফলাফলও খারাপ নয়, বেশ প্রমিজিং। এই সময় যদি তাদের থামিয়ে দেয়া হয়, খুবই খারাপ কাজ হবে।

জিএমের ব্যপারে একমত, আমেরিকান আর ইউরোপিয়ান বিজনেস মডেলের মূল পার্থক্যটা এদের দিয়েই বোঝা যায়।

=======================
দাদ্খানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দু’টা পাকা ডাল, ডিম-ভরা দৈ!!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

দুর্দান্ত এর ছবি

আপনি হয়তো জানেন যে বড় গাড়ী বানানেওয়ালারা সবাই এই প্লাটফর্মের ভিত্তিতে গাড়ী তৈরী করে। এক প্লাটফর্মের সব মডেলের গাড়ীর মূল কাঠামো মানে মনোকক (ঢাকায় যেটা এখনো চেসিস নামে পরিচিত), হুইলবেস, স্টিয়ারিং, পাওয়ার ট্রেন এসবই এক থাকে। তবে বাহ্যিক আকার, এঞ্জিন, গাড়ীর ইলেক্ট্রনিক্স ও বিলাসিতায় এ কিছু হের ফের হয়। টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার আর লেক্সাস এলএক্স ৫৭০ একই জিনিস, ঠিক যেমন চামড়া তলায় আউডি কু-৭, পোরশা কায়েন আর ফোক্সভাগেন তুয়ারেগ - এরাও এক (দাম আর মালিকের ভাব বাদে)।

মানলাম ইন্সিগনিয়ায় কিছু বাহ্যিক নতুনত্ব আছে। কিন্তু এটি কোন মৌলিক নকশা নয়। আর মূল নকশা মানে এপ্সেলন - ২ প্লাটফর্মে বানানো আরসব গাড়ী মানে সাব ৯-৫ থেকে শুরু করে, চীনা বুইক রেগাল, আমরিকান বুইক লা'ক্রস বা ক্যাডিলাক বি এল এস এর কোন পার্থক্যই নেই। শোনা যাচ্ছে দায়উর নতুন টোস্কাও এই প্লাটফর্ম থেকেই ছাড়া হবে। জি এম এর প্লাটফর্ম প্রযুক্তি যে ১৯৮০ সাল এর নাইটরাইডার (এফ প্লাটফর্ম) থেকে খুব বেশীদূর সরে আসতে পেরেছে, সে দাবী জি এম নিজেও করবে না।

---

জেরেমি ক্লার্কসনের সব কথা সত্য নয়।

ফাহিম এর ছবি

জেরেমি ক্লার্কসনের সব কথা সত্য নয়।

একমত চলুক

=======================
দাদ্খানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দু’টা পাকা ডাল, ডিম-ভরা দৈ!!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

গৌতম এর ছবি

সালাউদ্দিন লাভলু কি তবে বার্নড আউট হয়ে গেলেন?

পুরোপুরি। কোনো সন্দেহ আছে?

সেই লাইন কর্মচারী কতটুকু হারালো, আর ভুড়ি বাগিয়ে বসে থাকা ওপরওয়ালারা কতটুকু হারালো, তার তুলনামূলক বিচার কি কেউ কোনদিন করবে?

করে না বলেই এটার নাম পুঁজিবাদ।

লেখা ভালো লেগেছে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ফাহিম এর ছবি

পুরোপুরি। কোনো সন্দেহ আছে?

না হলেই ভালো হত, এই লোকের কাজে একটু ভিন্নতার স্বাদ পাওয়া যেত।
দুঃখজনক!

করে না বলেই এটার নাম পুঁজিবাদ।

দোষ কি পুরোপুরি পুঁজিবাদেরই? কোন "বাদ"টা তাহলে আমাদের মতো উলু-খাগড়া-বান্ধব হবে, বলতে পারেন? এই বঞ্চনার শেষ কোথায়??

=======================
দাদ্খানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দু’টা পাকা ডাল, ডিম-ভরা দৈ!!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

গৌতম এর ছবি

দোষগুণ না, পুঁজিবাদের বৈশিষ্ট্যই এটা।

কোন 'বাদ' উলুখাগড়াবান্ধব হবে জানি না, সমাজতন্ত্র অনেকটা মানুষবান্ধব বলে আমি মনে করি যদি এর মধ্যকার 'একনায়কতন্ত্র'টা এড়ানো যায়।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ফাহিম এর ছবি

সমাজতন্ত্র অনেকটা মানুষবান্ধব বলে আমি মনে করি যদি এর মধ্যকার 'একনায়কতন্ত্র'টা এড়ানো যায়

ইতিহাসের দিকে তাকিয়ে পুরোপুরি একমত হতে পারছি না রে ভাই...

=======================
দাদ্খানি বেল, মুসুরির তেল, সরিষার কৈ,
চিনি-পাতা চাল, দু’টা পাকা ডাল, ডিম-ভরা দৈ!!

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

গৌতম এর ছবি

না-ই হতে পারেন। তবে একমত না হওয়ার আগে বক্তব্যের 'এর মধ্যকার একনায়কতন্ত্র' শব্দগুলো খেয়াল করুন। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সচল জাহিদ এর ছবি

পানি ফুটিয়ে চা করতে ইচ্ছা করছে না, একটা মগে পানি দুধ মিশিয়ে মাইক্রোওয়েভে মিনিট তিনেক গরম করে একটা টিব্যাগ আর দু'টা চিনির কিউব ছেড়ে দিলাম। যদিও অখাদ্য চা, তাও একটু দেশি দেশি গন্ধ আসছে, মন্দ কী?

একটি রেসিপি দিচ্ছি, একদম দেশী চায়ের স্বাদ পাবেনঃ

১) মগে ৩/৪ পানি নিয়ে মাইক্রোওয়েভে ১ মিনিট গরম করুন
২)মগ বের করে দুইটা টি ব্যাগ, চার চা চামচ ইভ্যাপোরেট মিল্ক ( টিনের কৌটায় পাওয়া যাবার কথা কন্ডেন্সেড মিল্ক না কিন্তু) আর দেড় থেকে দুই চা চামচ চিনি দিয়ে আবার দেড় মিনিট মাইক্রোওয়েভে দিন।
৩)টিব্যাগটা বের করার আগে চামচ দিয়ে চেপে ভেতরে থাকা চায়ের রস বের করে নিতে ভুইলেন না।

কেমন হয় জানাইয়েন।

----------------------------------------------------------------------------
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।