ছুটাগল্প ২: বিকেল থেকে গোধূলি বাদ দিলে যা থাকে, তা-ই জীবন

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৭/০১/২০০৮ - ৩:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

নির্মলেন্দু গুণ পরীর প্রিয় কবি।

রমনা পার্কের লেকে এই বিকেলবেলাতেও গোসল করছে কয়েকটি নারী-পুরুষ। পরী বসে আছে একটু দূরে। ইউনিভার্সিটিতে এখনো ক্লাশ শুরু হয়নি, কবে থেকে শুরু হবে তা দেখতে এসেছিলো। ভেবেছিলো, পাপনের সাথে দেখা করে বাসায় চলে যাবে। অফিসের কাজে আটকা পড়ে পাপন আসতে পারেনি। তবে ভালো একটি সাজেশন দিয়েছে- রমনা পার্কে চলে যাও। ভালো লাগবে। যে বেঞ্চের ওপর রোদ পড়বে, সেই বেঞ্চটিতে বসো। অন্যরকম লাগবে।

তাই হুট করে এখানে চলে আসা। পরী অবশ্য রোদপড়া বেঞ্চে বসেনি। ছায়াঢাকা বেঞ্চে বসে দেখার চেষ্টা করছে রোদপড়া বেঞ্চটিকে কেমন দেখায়। সরু একটা রোদ বেঞ্চে কোনাকুনিভাবে শুয়ে আছে। পরী চিন্তা করলো, ওখানে পা দুটো মেলে দিয়ে বসলে কেমন হয়! রোদটা তার কোলের ওপর দিয়ে যাবে, যেভাবে পাপন শুয়ে থাকে তার কোলে।

আগেই বলেছি, নির্মলেন্দু গুণ পরীর প্রিয় কবি। পরী যতোবার তাঁর অগ্নিসঙ্গম কবিতাটি পড়েছে, ততোবার শিহরিত হয়েছে। মনে মনে চেয়েছে, পাপন হোক অগ্নিসঙ্গমের সেই অবাধ্য পুরুষ, পরীর সাথে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষিত অপরাধে যাকে পরী একটি আনন্দদায়ক শাস্তি দিবে। কিন্তু লজ্জ্বায় সে কিছু বলতে পারে না কখনো। একদিন পাপনকে কবিতাটি পড়তেও দিয়েছিলো। কিন্তু হাঁদারামটা কিছু বুঝতে পারেনি। পরীর লজ্জ্বা যে পাপনের আমন্ত্রণ- সেটা ও কবে বুঝবে!

নির্মলেন্দু গুণের কামের কবিতাগুলো পাপনও পছন্দ করে। কিন্তু তার চাইতে বেশি পছন্দ তার রাজনৈতিক কবিতাগুলো। দু’জন মিলে যখন কবিতা পড়ে, তখন কাম-রাজনীতি মিশে একাকার হয়ে যায়। পরী-পাপন ভার্চুয়াল কামে মত্ত থেকে রাজনীতি চালিয়ে যায় দুটি শরীরে- একবার উপরে তো পরেরবার নিচে, একবার ডানে তো পরেরবার বামে। রাজনীতি তো উপরে উঠার, নিচে নামার, ডানের আদর্শ, বামের আদর্শ ইত্যাদিরই তো ব্যাপার!

লজ্জ্বায় পরী এবারো রোদে পা মেলে বসতে পারলো না। কিন্তু পাপনরোদে পিঠ পেতে দিলো। যেন পিছন থেকে পাপন জড়িয়ে আছে তার পিঠজুড়ে। পরী চাইলেই এখন সারাজীবন নিশ্চিন্তে হেলান দিয়ে থাকতে পারবে। এই নির্ভরতা পরী পেয়েছে পাপনের চোখ দেখে, পাপনের আকুলতা দেখে। পরী শিহরিত হয়েছে অগ্নিসঙ্গমের মতোই। নিজের পুরো ভার পাপনের ওপর ছেড়ে দিয়েছে পরী, পাপন তাই তাকে নিচ থেকে ওপরে তুলে নেয় প্রায়ই। আবার এই ভারমুক্ত হওয়ার কারণেই অধিকাংশ সময় পরী পাপনকে ওপরেই রাখতে চায়। ভারমুক্ত হতে পারলেই অনেক ভার বহন করা সম্ভব।

পরীর জীবনের এই ছোট ছোট ক্ষণগুলো আসে প্রায়ই, প্রতিনিয়ত। একটা ছোট সুখক্ষণ সারাদিনের খাবার। পুরো জীবনটাই তাই পরীর কাছে রঙীন বিকেল। মাঝে মাঝে অবশ্য গোধূলির দেখা মিলে, তখন অবশ্য ভালো লাগে না। কিন্তু নাগরিক জীবনে গোধূলিই বা কতোক্ষণ থাকে! তাই জীবন নিয়ে পরী এখন অনেক নির্ভর- গোধূলির দেখা মিললেই পাপন যে রাতের অগ্নি জ্বালিয়ে নিয়ে আসবে!


মন্তব্য

মাহবুব লীলেন এর ছবি

ভালো একটি সাজেশন দিয়েছে- রমনা পার্কে চলে যাও।

বেটা বেক্কল
বান্ধবীকে কেউ একা একা রমনা পার্কে যেতে বলে?

নিজে সঙ্গে নিয়ে গেলেও কে কোন দিকে টেনে নিয়ে যায় টের পাওয়া যায় না
আর একা একা...

গৌতম এর ছবি

গল্পের মধ্যে বাগড়া দিয়েন না তো ভাইজান। গল্প তো গল্পই। হাতে কিছু টাকাপয়সা থাকলে লন্ডনের হাইড পার্কে পাঠাইতাম। নাই বইলা রমনা পার্কে পাঠাইছি। আর পাপনের পরীকে টাচ করব, এই সাহস কারোরই হয় নাইক্যা।

গল্পটা পইড়া আপনার মেজাজ কতটা বিলা হইছে সেইটা কন।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

বাগড়া দেবার জায়গা রাখেন নাই তো। অসাধারণ হয়েছে এই পর্বটা!

বিপ্লব!

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আপনি কাউকে লন্ডনে পাঠান না স্বর্গে পাঠান তাতে আমার আপত্তি নেই
(মাঝেমাঝে আমার বাসায়ও পাঠাতে পারেন। নিরিবিলি। আমি প্রায়ই একা থাকি)

কিন্তু আপনার পাপন বেটা যে জানে না রমনা পার্ক পার্ক না
সেজন্যই দুঃখ হচ্ছে
আর জানতে ইচ্ছে হচ্ছে মেয়েটার কি দশা হলো

অন্দ্রিলা এর ছবি

ছুটাগল্পের দ্বিতীয় ইনস্টলমেন্টের যেই জিনিশটা সবচাইতে বেশি ভালো লাগলো, তা হলো, এইখানে পরী আর পাপন দুইজনই ভালো, দুইজনই ভালোবাসে। প্রেমের গল্প পড়তে গেলে সবসময় ভয় লাগে, লেখক আসলে কার দিকে বায়াসড সেইটা বোঝার চেষ্টা করি অনেকসময়। আশা করি এখানে সেই ভয়ে থাকতে হবেনা।

লেখাটা সুন্দর লেগেছে। কিন্তু পরীকে একেবারে রমনা পার্কে পাঠায়ে দিলেন? লেখকের মনে দয়ামায়ার বিশেষ অভাব। বেচারি মেয়েটাকে ধানমন্ডি লেকেও কী পাঠানো যেতো না? কিংবা চারুকলাতে?

রমনাতে গেলে পরী কি একা একা বসে বসে এতোকিছু চিন্তা করার অবকাশ পেতো আদৌ? এখন ভালোয় ভালোয় বাসায় ফেরত যেতে পারলে হয়...

গৌতম এর ছবি

এইখানে পরী আর পাপন দুইজনই ভালো, দুইজনই ভালোবাসে।

আসলেই তাই। এ নিয়ে কোনোই সন্দেহ নেই।

প্রেমের গল্প পড়তে গেলে সবসময় ভয় লাগে, লেখক আসলে কার দিকে বায়াসড সেইটা বোঝার চেষ্টা করি অনেকসময়। আশা করি এখানে সেই ভয়ে থাকতে হবেনা।

আমিও সেটাই আশা করি। তবে সমস্যা হচ্ছে কি, লেখক যখন পাপনের আবেগ-অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হয়ে লেখেন, তখন কিছুটা বায়াসড আসলে হয়েই যান। আবার পরীর সাথে কথা বলে যখন লিখেন, তখনও তিনি পরীর দিকে বায়াসড হন। এক্ষেত্রে উপায় হলো, দু'জনের সাথেই কথা বলে লেখা। তাহলে যে সেটি আর গল্প থাকে না। গবেষণা হযে যায়!

তবে ব্যক্তিগতভাবে লেখকের পাপন-পরী কারোর দিকে বিশেষ কোনো পক্ষপাত নেই। সেটির প্রতিফলন বজায় রাখার চেষ্টা করা হবে। আপনাকে ধন্যবাদ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সবজান্তা এর ছবি

আমিও অন্দ্রিলার সাথে একমত। ইয়ে মানে, ধানমন্ডি লেকে পাঠলে চলতো না ? রমনা পার্কের কথা শুইনা ক্যামন ক্যামন জানি বোধ হইতাসে।

তয় লেখতাসেন বড়ই চমৎকার !
--------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

গৌতম এর ছবি

রমনা পার্কে পাঠানো নিয়ে আপনাদের মন্তব্যগুলো পড়ে একটু চিন্তায়ই পড়ে গিয়েছিলাম গত বৃহস্পতিবার। পার্কটি আমার বাসার কাছেই। তাই শুক্রবার গিয়ে একটুখানি ঘুরে আসলাম। পার্কের পরিবেশ কিন্তু আসলেই বদলে গেছে। ওখানকার কয়েকজন পাহারাদারের সাথে কথা বলে জানলাম- বছর দেড়েক আগে থেকেই পার্কের পরিবেশ বদলে গেছে। এখন রাত নয়টা পর্যন্ত যে কেউই পার্কে থাকতে পারেন। কোনো সমস্যা হবে না।

নারী দর্শনার্থীদের সাথেও কথা বলে জানলাম, পার্কটি এখন আগের চাইতে অনেক নিরাপদ। অনেকেই একা একা আসেন। আর একা একা হাঁটতে আসা নারীদের সংখ্যা তো বাড়ছেই।

তারপরও পরীকে পার্কে পাঠানোর ব্যাপারে আপনাদের সাথে একমত হওয়ার সুযোগ আছে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অন্দ্রিলা এর ছবি

তাই নাকি? যাইতে হবে তো তাইলে একদিন রমনাতে!

btw গৌতমদা কঠিন সিগনেচার লাগাইসেন, আমার সবচাইতে পছন্দের কবিতা।

গৌতম এর ছবি

আমি কিন্তু লিখেছি - পার্কটি এখন আগের চাইতে অনেক নিরাপদ। তারমানে পুরোপুরি নয়। ভালো হয় কয়েকজন বন্ধুবান্ধব মিলে একবার গিয়ে দেখে আসা। তারপর একা যাবেন কি-না, সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তবে আমি কয়েকজন নারীকে পার্কে ঘুরতে দেখেছি। একজনের হাতে তো ফুল ছিল!

কবিতার পছন্দটা মিলে গেলো।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।