সমাপনী পরীক্ষা: কিছু প্রশ্ন ও প্রস্তাব

গৌতম এর ছবি
লিখেছেন গৌতম (তারিখ: সোম, ২৩/১১/২০০৯ - ৯:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

’সমাপনী পরীক্ষা’ নামে দেশে প্রথমবারের মতো প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলো। একধরনের উৎসবমুখর পরিবেশে পরীক্ষা-কার্যক্রম চললেও পরীক্ষা ও এর পরবর্তী প্রভাব নিয়ে এখনও দ্বিধা কাটে নি। অনেকে এ পরীক্ষাকে স্বাগত জানিয়েছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন এর কিছু বিরূপ প্রভাবও রয়েছে-- যা ভবিষ্যতে আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হবে।

সমাপনী পরীক্ষা গ্রহণের পক্ষে যেসব যুক্তি দেখানো হচ্ছে সেগুলো খুবই খাঁটি। প্রথমত, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান কীরূপ, তা বোঝার জন্য এডুকেশন ওয়াচের দু-একটি গবেষণা ছাড়া আর কোনো স্বীকৃত পরীক্ষা ও মানদণ্ড নেই। এর আগে বৃত্তি পরীক্ষা থাকলেও সেখানে মাত্র ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারতো। এই পরীক্ষা সে অভাব ঘুচাতে পারবে। দ্বিতীয়ত, বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফলের সাথে যেহেতু বিদ্যালয়ের ভৌত সুবিধা ও সম্মান জড়িত, তাই চতুর্থ শ্রেণী বা পঞ্চম শ্রেণীর শুরু থেকেই শিক্ষকরা বাছাইকৃত শিক্ষার্থীদের প্রতি আলাদা মনোযোগ দিতেন। এতে অন্য শিক্ষার্থীদের সাথে যে বৈষম্য সৃষ্টি হতো, তা কোনো কোনোক্ষেত্রে প্রবলতর রূপ ধারণ করতো বলে জানা গেছে। কোথাও কোথাও সব শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দিষ্টকৃত কার্যক্রমকে বাদ দিয়ে বৃত্তি কোচিংকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হতো। এতে দেখা যায়, যারা ভালো শিক্ষার্থী, তাদেরকে সযত্নে বিকশিত করে তোলা হলেও দুর্বলরা অবহেলিত থাকছে-- যদিও হওয়ার কথা ছিলো উল্টোটা। তাছাড়া যারা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে, তাদেরকে বিদ্যালয়ের পরীক্ষা ও বৃত্তি পরীক্ষা দুটোতেই অংশ নিতে হতো যা তাদের জন্য ছিলো একটা বাড়তি চাপ। এরকম নানা যুক্তি শোনা গেছে সমাপনী পরীক্ষার পক্ষে।

বিপক্ষে থাকা যুক্তিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে জোরালোভাবে যেটি এসেছে তার সঙ্গে শিশুর বয়স ও সামর্থ্যের বিষয়টি জড়িত। অনেকেই মনে করেন, এ বয়সের শিশুদের পাবলিক পরীক্ষা নেয়া উচিত নয়। শিশুর বয়স ও বিকাশ, মানসিক গঠন, এক জায়গায় বসে থাকার ধৈর্য্য বা স্থিরতা এগুলোর শিশুর পক্ষে যায় না। আবার এই পরীক্ষা সনদসর্বস্ব একটি পরীক্ষা হয়ে যায় কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ আছে অনেকের। এই পরীক্ষার ফলাফল দিয়ে কী হবে অর্থাৎ এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল ভর্তি, চাকুরি কিংবা অন্যান্য ক্ষেত্রে কাজে লাগে-- এই পরীক্ষার সনদ সেরকম কোনো কাজে লাগবে কিনা সে বিষয়েও কথাবার্তা হচ্ছে। তার মানে পরীক্ষার সার্বিক উদ্দেশ্য সম্পর্কে অনেকে এখনও অবগত নন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই ভেবেচিন্তে পঞ্চম শ্রেণীর পর পাবলিক পরীক্ষার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত তিন-চার বছরে দেশের নানা জায়গায় এ নিয়ে পাইলটিংও করা হয়েছে। গত বছর সফলভাবে প্রায় ২৫% শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিয়ে মন্ত্রণালয় সারা দেশে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো যা হয়, এখানেও সমাপনী পরীক্ষার ঘোষণাটা এসেছে হুট করে-- এ বছরের আগস্ট মাসে। যেকোনো বিষয়ে তাড়াহুড়া করা, হুট করে সিদ্ধান্ত নেয়া বা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা না বলে, নিদেনপক্ষে না জানিয়ে উপর থেকে চাপিয়ে দেয়ার যে সংস্কৃতি বিদ্যমান, এই পরীক্ষার ক্ষেত্রেও তা দেখা গেলো ভালোভাবেই। মন্ত্রণালয় যদি পরীক্ষাগ্রহণ করবেই, তাহলে উচিত ছিলো এ বছরের শুরুতে তা জানিয়ে দেয়া। সেটি করা সম্ভব না হলে এর জন্য আরও এক বছর অপেক্ষা করাই সমীচিন ছিলো। এর মধ্যে মন্ত্রণালয় সবাইকে বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে জানাতে পারতো, মতবিনিময় করতে পারতো, জনগণকে সরাসরি এর সাথে সম্পৃক্ত করে বিষয়টিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারতো। এই কথাগুলো বলার সময় অনেক আগেই পার হয়ে এসেছে, কেউ কেউ বলেছেনও ইতোমধ্যে; কিন্তু আবার বলতে হলো এ কারণে যে, ভবিষ্যতে এ ধরনের বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় যেনো স্থৈর্য্যের পরিচয় দেয়। পদ্ধতি শুধু ভালো হলেই হয় না, সেটা যে ভালো, তা সবাইকে উপলব্ধি করানোরও প্রয়োজন থাকে। কিছুটা আশঙ্কা কিংবা উদ্বিগ্নতা থাকলে জনগণ শেষ পর্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়েই এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। সবসময় কিন্তু এমনটা নাও হতে পারে, যেটা কিছুদিন আগেই সৃজনশীল পদ্ধতি চালুর সময় দেখা গেছে। তাছাড়া বর্তমান সরকার প্রাথমিক শিক্ষাকে ধাপে ধাপে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাড়াতে চায়। সেটা হলে এই সমাপনী পরীক্ষার ভবিষ্যৎ কী হবে? তখন কি পঞ্চম শ্রেণীর বদলে অষ্টম শ্রেণীতে সমাপনী পরীক্ষা হবে? তাই সবমিলিয়ে একটু ধীরস্থিরে বিষয়টি চালু করলে বোধহয় ভালো হতো।

যা হোক, এবারের সমাপনী পরীক্ষায় প্রায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এই সংখ্যা দ্বারা প্রতি বছর প্রাথমিক স্তরে শেষ করে কতো শিক্ষার্থী তার একটি ধারণা পাওয়া যায়। এডুকেশন ওয়াচের গবেষণা থেকে দেখা যায়, যতোজন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়, তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত উঠতে পারে তার ৭৭.৬%, পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত উঠতে পারে ৫৮.৪% এবং পঞ্চম শ্রেণী শেষ করতে পারে এর মাত্র ৫০.১% শিক্ষার্থী, বাকি অর্ধেক নানা স্তরে ঝরে যায়। তার মানে আরও প্রায় বিশ লাখ অর্থাৎ মোট চল্লিশ লাখ শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছিলো। বাকি শিক্ষার্থীদের কী হলো? তারা কেন সমাপনী পরীক্ষা পর্যন্ত আসতে পারলো না? আগামী বছরগুলো থেকে সমাপনী পরীক্ষাকে সার্বিক অর্থেই সফল করতে হলে এ প্রশ্নগুলোর উত্তর বের করা দরকার। তাছাড়া প্রথম দিনের পরীক্ষায় প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে উপস্থিত হয় নি কেন? সে প্রশ্নের উত্তরও জানা দরকার। বাংলাদেশের অনেক জায়গা আছে, বিশেষত হাওর, চর ও পাহাড়ি এলাকা যেখান থেকে শিক্ষার্থীদের একই উপজেলার সংশ্লিষ্ট সেন্টারে যেতে ভৌগলিক ও অন্যান্য কারণে খুব ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। কিংবা নিজ গ্রাম থেকে শিক্ষার্থীকে পরীক্ষার জন্য উপজেলা সদরে পাঠানো, তিন দিন রাখা, খাওয়ানো ইত্যাদি খরচের সামর্থ্য অনেক অভিভাবকের নেই। সমাপনী পরীক্ষার প্রথম আয়োজনের আগে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চয়ই এগুলো নিয়ে ভেবেছেন। তারপরও দেড় লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার অর্থ কিন্তু একপ্রকার ঝরে পড়া। এসব প্রশ্নের ফয়সালা ছাড়া সমাপনী পরীক্ষাকে কোনোভাবেই কার্যকর করা যাবে না।

এবারের সমাপনী পরীক্ষায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের অংশগ্রহণ বেশি দেখে অনেকে খুশি হয়েছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাতে পারবে দেশে এই বয়সী জনসংখ্যায় ছেলের চেয়ে মেয়ের সংখ্যা বেশি কিনা। যদি বেশি হয়, তাহলে এটা আদৌ খবর নয় বা বলা ভালো-- এটাই স্বাভাবিক। আর যদি না হয়, তাহলেও খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ এ দ্বারা বুঝা যায়, যেকোনোভাবেই হোক মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা ও তাদের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করার দিক দিয়ে বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করেছে। কিন্তু সেক্ষেত্রে ছেলেদের পরিপ্রেক্ষিতে সফলতা কম। উপবৃত্তিসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি মনোযোগ দিতে গিয়ে ছেলেরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কিনা সেটা দেখা দরকার। নাকি এ বয়সী ছেলেশিশুরা পড়ালেখার বদলে কাজে ঢুকে পড়ছে, তাও জানা দরকার। সেটা হলে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। এ কাজগুলো যে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোও করতে পারে। সমাপনী পরীক্ষার উদ্দেশ্য সফল করতে হলে এগুলোর নিষ্পত্তি ছাড়া এগুনো যাবে না।

আলাদা কোনো বৃত্তি পরীক্ষা না নিয়ে সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে বৃত্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি খুবই ভালো। শুধু বৃত্তির জন্য বিদ্যালয়ে যে বৈষম্যের পরিবেশ সৃষ্টি হতো, এতে সেটি কমবে বলে আশা করা যায়। শিক্ষকদের এখন শুধু মেধাবী শিক্ষার্থীদের নজর দিলে চলবে না, সবাইকে সমানভাবে গড়ে তুলতে হবে। তারপরও কিছুটা যে হবে না, তা না। এ পরীক্ষায় ফলাফলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিভাগ থাকছে। প্রথম বিভাগ পাওয়ার সম্ভাবনা যাদের আছে, তাদেরকে আলাদা যত্ন নেয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তবে এই পর্যায়ে এই ধরনের বিভাগ না করলেই ভালো হতো। নম্বরের ওপর ভিত্তি করে একদলকে বৃত্তি দেওয়া হবে, একটি দল শুধু পাশ করবে, আরেকটি দল ফেল করবে-- এরকমটা করাই বোধহয় সমীচীন ছিলো। না হলে প্রথম থেকেই গ্রেড পয়েন্ট চালু করার দরকার ছিলো। আর যারা ফেল করবে, তাদেরকে নিয়ে কী চিন্তা? বিভাগভিত্তিক ফলাফল প্রাথমিক স্তর থেকেই বৈষম্য বাড়াতে থাকে কিনা, তা এখন দেখার বিষয়।

তবে কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার প্রশ্ন সরবরাহের সিদ্ধান্তটি আখেরে ভালো হয় নি। সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম যখন শুরু হয়, তখন সংশ্লিষ্ট জেলার শিক্ষা অফিসগুলো আলাদাভাবে এ কাজটা করতো। এতে শিক্ষা কর্মকর্তা, বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ অনেকেই জড়িত থাকতেন। এর খারাপ ফলাফল তো দেখা যায় নি! শিক্ষাকে যেখানে দিন দিন বিকেন্দ্রীকরণের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে এই সিদ্ধান্ত উল্টোদৌড়ের শামিল। মূল্যায়নের বিষয়টি নিয়েও আরেকটু চিন্তাভাবনা করা উচিত। মূল্যায়ন পুরোটাই পরীক্ষাকেন্দ্রিক না করে শিক্ষার্থীরা গত পাঁচ বছরে পড়ালেখা ছাড়াও নানা ধরনের যে কর্মকাণ্ড করেছে বা নানাক্ষেত্রে তাদের পারফরম্যান্স দেখিয়েছে, সেগুলোকেও মূল্যায়নের আওতায় আনা দরকার। প্রয়োজনে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-অভিভাবক-ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্যদের দিয়ে বিদ্যালয়ে একটি কমিটি করা যেতে পারে যারা প্রতিবছর শিক্ষার্থীদের সার্বিক কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে নম্বর দিবে যা পরবর্তী সময়ে সমাপনী পরীক্ষার নম্বরের সাথে সমন্বয় করা যাবে। সমাপনী পরীক্ষার মোট নম্বরের ২০ শতাংশ এ বাবদ বরাদ্দ রাখলে শিক্ষার্থীর অন্য গুণগুলো যেমন মূল্যায়িত হয়, তেমনি পরীক্ষার দিন নানা কারণে যারা ভালো করতে পারে না, তারাও উপকৃত হয়। এটা নিয়ে আরও ভাবা দরকার, কারণ এ কাজের জন্যও আমাদের বিদ্যালয়গুলোকে তৈরি করতে হবে। তবে সমাপনী পরীক্ষা উপলক্ষে চালু করলে নিশ্চয়ই এর একটি ম্যাকানিজম তৈরি করা সম্ভব যাতে নম্বর-দুর্নীতিজাতীয় ঘটনা ঘটতে না পারে।

যেহেতু এই পরীক্ষাটি চালু হয়েই গেছে, সেহেতু পরীক্ষা পদ্ধতিকে সুচারূ করা ও এর ফলাফলকে কার্যকর করার জন্য উপর্যুক্ত বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করা ও সে অনুযায়ী সমাধান খোঁজা জরুরি এখন থেকেই। প্রথম কয়েকবার হয়তো নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অভিজ্ঞতা ও গবেষণার দ্বারা সেগুলোর সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি সমাপনী পরীক্ষার উসিলা ধরে আরও বেশ কিছু কাজ এগিয়ে নিতে হবে। যেমন, একটি উপজেলায় সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে। বছরপ্রতি কেন্দ্রগুলো যেন পরিবর্তিত হয়। এ ব্যাপারে স্থানীয় পর্যায়ে আগেথেকেই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। এতে যেসব বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত ভৌত অবকাঠামো নেই, সেসব বিদ্যালয়ে সমাপনী পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে ভৌত অবকাঠামো সুবিধা সহজেই বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে। এই কাজটি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। তাছাড়া শিশুরা নিজেদের বিদ্যালয়ের পরিবেশের বাইরে গিয়ে অন্য বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিবে। এই বয়সী শিশুদের কাছে এটি একটি সাংঘাতিক ঘটনা। সমাপনী পরীক্ষার পরপরই পরীক্ষার বাইরেও শিক্ষাসফর কিংবা শিশুদের দিয়ে বিভিন্ন সহপাঠক্রমিক কর্মকা- করানোসহ অনেককিছুই করা যেতে পারে। একদল ভবিষ্যৎ নাগরিককে এক জায়গায় জড়ো করে তাদের মধ্যে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার মতো কিছু প্রয়াস গ্রহণ করাটা একটা দারুণ কাজ হতে পারে। পড়ালেখার বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে বোধ জাগানোর জন্যও সমাপনী পরীক্ষাকে একটা উসিলা হিসেবে দেখা যেতে পারে। একটা পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের ঘিরে নানা কর্মকাণ্ড শুরু হতে পারে-- সমাপনী পরীক্ষাকে এই দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে বোধহয় এ থেকে সর্বাধিক উপকার পাওয়া সম্ভব।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

গৌতম ভাই, লেখা বেশ বিস্তারিত হয়েছে। এ লাইনে যারা কাজ করছেন তাদের মতামত কি? এধরনের পরীক্ষার আয়োজন কেন করা হলো সেটা আমার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। ক্লাস ফাইভের একটা বাচ্চার উপর এর প্রভাব কি সেটা নিয়েও আমি সন্দিহান।

গৌতম এর ছবি

অ.
ধন্যবাদ পিপিদা। চেষ্টা করেছি বিস্তারিত লেখার।

আ.
এ ধরনের পরীক্ষা কেন আয়োজন করা হলো, সেটি বলার চেষ্টা করেছি। আমার জানামতে, পোস্টে বলা কারণগুলোর জন্যই সমাপনী পরীক্ষা চালু করা হয়েছে। ছয়-সাত বছর আগে থেকেই এটা নিয়ে চিন্তাভাবনা হচ্ছিলো, এতোদিনে তা চালু করা হলো। তবে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ওপর এর প্রভাব নিয়ে আমিও সন্দিহান। তার ওপর, জানেন কিনা জানি না, অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে এই সমাপনী পরীক্ষাতেও অনেক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। চিন্তিত

ই.
এ লাইনে যারা কাজ করছেন, তাদের মতামত জানি না— কার এ নিয়ে কারও মতামত তেমনভাবে পাওয়া যায় নি। তবে যাদেরটা পাওয়া গেছে, অধিকাংশই একে স্বাগত জানিয়েছেন। যারা সন্দিহান, তারা বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন, যে প্রশ্নগুলো এই পোস্টে আমিও করেছি।

ধন্যবাদ।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অবাঞ্ছিত এর ছবি

আমিও বুঝিনি.. আমাদের দেশে এমন পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতার অবতারনা হয় সে বিবেচনায় খুব কি দরকার ছিলো?

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...

গৌতম এর ছবি

বিবেচনার বিষয় তো একটা না— অনেকগুলো। সব মিলিয়ে মনে হয়েছে এরকম একটা পরীক্ষা দরকার, তাই তারা পরীক্ষার আয়োজন করেছে। তবে যে বিষয়গুলো নিয়ে সমস্যা রয়েছে, পরীক্ষা চালুর আগে সেগুলো নিয়ে আরও ভাবা দরকার ছিলো বলে আমি মনে করি।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

গৌতম ভাই, অনেক ভালো লাগল লেখাটা।

গৌতম এর ছবি

ধন্যবাদ, রাজিব মোস্তাফিজ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই সমাপনী পরীক্ষার আওতায় কারা আছে? শুধু সরকারী স্কুলগুলো? প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পড়ে অন্য মাধ্যমে। বিশেষ করে মাদ্রাসা মাধ্যমে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের অভিভাবকেরা সন্তানদের প্রাথমিক ভিত্তিটা ইসলামের উপর দাঁড় করান, মাধ্যমিক থেকে ভর্তি করান স্কুলে।
এছাড়া একটা বড় অংশ আছে কিন্ডারগার্টেনে। এখন প্রত্যন্ত গ্রামেও কিন্ডার গার্টেন গজিয়েছে। ইংরেজি মাধ্যমগুলো তো আছেই।

নম্বরের উপর ভিত্তি করে বৃত্তি দিলে দেখা যাবে শহরের ভালো ভালো স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীরাই কেবল বৃত্তি পাচ্ছে। ধরা যাক ঢাকায় ভিকারুন্নেসা আইডিয়াল ওয়ালারাই সব বৃত্তি দখল করে নিলো। অথচ এখানকার অভিভাবকরা লাখ টাকা খরচা করে পড়ানোর সামর্থ্য রাখে। কিন্তু গরীব স্কুলগুলোর গরীব ছাত্ররা বৃত্তি পেলোনা, অথচ শিক্ষা চালিয়ে যেতে হলে তাদেরই বৃত্তিটা বেশি দরকার... সেক্ষেত্রে কী হইবো?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

গৌতম এর ছবি

অ.
মাদ্রাসা ছাড়া এই পরীক্ষার আওতায় সবাই আছে। সরকারি, বেসরকারি, রেজিস্টার্ড, কমিউনিটি, উপানুষ্ঠানিক— সব ধরনের বিদ্যালয়ই আছে। তবে মাদ্রাসা নেই কারণ মাদ্রাসার লেখাপড়া নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা বোর্ড আছে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের অভিভাবকেরা সন্তানদের প্রাথমিক ভিত্তিটা ইসলামের উপর দাঁড় করান

এটা ঠিক না। সর্বশেষ জরিপ থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

আ.
এই বৃত্তির সাথে কিন্তু ধনী-গরীবের সম্পর্ক নেই। এখানে মেধাকে বৃত্তি দেওয়া হয়। আর মেয়েদের যে বৃত্তিটা দেওয়া হয়, সেটাকে উপবৃত্তি বলা হয়। পিইডিপি-২-এর ৬৪ ভাগ টাকাই এই উপবৃত্তি পিছনে যায়।

আর বৃত্তি দেয়ার ব্যাপারেও ভুল ধারণা করলেন বস। এই সিস্টেমটা আলাদা। এখানে বৃত্তি দেওয়া হয় উপজেলাভিত্তিক। একটা উপজেলায় বিদ্যালয় সংখ্যা, শিক্ষার্থী সংখ্যা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে বৃত্তির কোটা ঠিক করা হয়। ওই উপজেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যেই ওই বৃত্তিগুলো দেয়া হয়। এক উপজেলার বৃত্তি আরেক উপজেলায় দেওয়া হয় না। সুতরাং আপনি যেটা বললেন সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে একটা উপজেলায় ভালো স্কুল একটাই থাকলে সমস্যা হয়।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সৈকত চৌধুরী [অতিথি] এর ছবি

ভালো লাগল আপনার লেখাটি।
বিষয়টি নিয়ে আমিও ইদানিং আপনার মতই ভাবছি।

গৌতম এর ছবি

ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম। তবে আপনি কী কী ভাবছেন, সেগুলো যদি লিখে ফেলেন তাহলে ভালো হয়। অপেক্ষায় থাকলাম।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নজমুল আলবাব এর ছবি

প্রয়োজনীয় লেখা।

------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

গৌতম এর ছবি

ধন্যবাদ আলবাব ভাই। হাসি

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

রণদীপম বসু এর ছবি

প্রথম দিনের অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে দু-লাখের বেশি ছাত্র-ছাত্রী নাকি দ্বিতীয় দিনের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি, পত্রিকায় পড়লাম। এটা ভাবনার বিষয়।

লেখাটা ভালো হয়েছে গৌতম। কেবল সিস্টেম দাঁড় হচ্ছে বলে সিস্টেমের ফাঁক বা ভুলের মাশুল যেন আমাদের নিষ্পাপ কচি সন্তানদেরকে দিতে না হয় কোনোভাবেই, সেদিকে কর্তৃপক্ষের সতর্কতম দৃষ্টিটাই কামনা করি।

আমি এই সিস্টেমটাকে সাপোর্ট করছি। তবে কেন যেন মনে হচ্ছে এই পদ্ধতিতে স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হারটা একটু বেড়ে যাবে। আমার আশঙ্কা কি খুব অযৌক্তিক ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

গৌতম এর ছবি

আশঙ্কা অযৌক্তিক নয়, তবে সেটা নির্ভর করছে এই সিস্টেমটাকে পরবর্তী সময়ে কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার ওপর। এই যেমন দেড় লাখ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয় নি, প্রথম দিনের পর দু'লাখ ঝরে পড়লো-- এগুলো হলো সতর্ক সংকেত। আমি আগেও যেটা বলেছি, তাড়াহুড়ার ফল ভালো হয় না, এখানেও তাই হচ্ছে। এখন সামনে আরও একটি বছর সময় আছে। কর্তৃপক্ষ যদি এবারকার অভিজ্ঞতা থেকে সেগুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করে, তাহলে সিস্টেমটা সার্বিকভাবে দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে উপকার বয়ে আনতে পারে।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আমার কাছে জিনিসটা পজিটিভ মনে হচ্ছে। সামগ্রিক সাফল্যের কোনো শর্টকাট নেই। আর এখানে প্রতিযোগিতাটা ফেয়ার, একে কোনোভাবেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা মনে হচ্ছে না। বিশেষ করে, প্রাথমিক শিক্ষার ওপরে অন্তত গত দুই দশক ধরে যে জোর দেয়া হচ্ছে, তাতে শিক্ষার মান কতোটা এগিয়েছে, তা পরিমাপ করতে হলেও এ ধরনের পরীক্ষা দরকার।

শিক্ষা বিষয়ক আলোচনায় আমি সবসময়ই যে বিষয়টার ওপর জোর দেই, তা হলো গরু-গাধা-ঘোড়াকে এক ঘানিতে জুড়ে না দেয়া। যার যেরকম যেদিকে মেধা আছে, যতো আগে থেকে সম্ভব, সেদিকে মেধাকে বিকশিত হতে সাহায্য করা উচিত। এই নীতিটা গ্রহণ করলে এরকম পরীক্ষার ফলাফল কোন কাজে লাগবে, তারও একটা সমাধান পাওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞান, মানবিক, বাণিজ্যের ভাগটা প্রাথমিকের পরেই হয়ে যেতে পারে। এতে পড়াশোনা ফোকাসড হবে। কোন ছাত্রটা ইউনিভার্সিটিতে গেলে গবেষণায় ভালো করবে আর কে খেলাধুলায় ভালো, কে প্র্যাকটিক্যাল কাজকর্মে, তাও ক্লাস ফাইভের পরে মোটামুটিভাবে গ্রোসলেভেলে বিচার করা যায়।

তবে প্রশ্ন থাকে আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে এটা আমাদের দেশে ফিজিবল কিনা। শিক্ষাবাজেট বাড়ানো এক্ষেত্রে একটা সমাধান হতে পারে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

গৌতম এর ছবি

একটু দ্বিমত করি বলাই দা। যার মেধা যেদিকে, তার গন্তব্য সেদিকেই হওয়া উচিত-- এর সাথে একমত হলেও সেটা প্রাথমিক স্তর থেকেই করা উচিত বলে মনে করি না। শিক্ষার কিছু বেসিক সাবজেক্ট আছে-- একটা পর্যায় পর্যন্ত সবারই সেগুলো পড়া উচিত। প্রাথমিক শিক্ষা যদি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত হয়, তাহলে প্রাথমিক স্তরের পরই এ বিভাজনটা করা যেতে পারে।

কোন ছাত্রটা ইউনিভার্সিটিতে গেলে গবেষণায় ভালো করবে আর কে খেলাধুলায় ভালো, কে প্র্যাকটিক্যাল কাজকর্মে, তাও ক্লাস ফাইভের পরে মোটামুটিভাবে গ্রোসলেভেলে বিচার করা যায়।

যায় না। শুধু যদি স্কিলের ওপর গুরুত্ব দিতে চান, তাহলে অন্য কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাথমিক স্তরেই শিক্ষার্থীদের শারীরিক কাঠামো, হাড়ের গঠন, মানসিক অবস্থা, শিক্ষার্থীর ঝোঁক ইত্যাদি বিষয়ের ওপর বিবেচনা করে প্রাথমিক স্তরেই শিক্ষার্থীদের কে কোন খেলায় পারদর্শী হতে পারে, সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু গবেষণায় কে ভালো করবে, সেটা কিন্তু অন্য ব্যাপার-- এ ব্যাপারে মোটামুটি ইন্টারমিডিয়েট লেভেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। না হলে শিক্ষার্থীর বিষয়ে ভুল রিডিঙের আশঙ্কা থাকে।

বাকি বিষয়গুলোর ব্যাপারে আপনার সাথে একমত।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

গবেষণায় কে ভালো করবে, সেটা কিন্তু অন্য ব্যাপার-- এ ব্যাপারে মোটামুটি ইন্টারমিডিয়েট লেভেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। না হলে শিক্ষার্থীর বিষয়ে ভুল রিডিঙের আশঙ্কা থাকে।

শিক্ষার পদ্ধতি ও যাচাইয়ে সমস্যা না থাকলে অন্তত গ্রোস লেভেলে এটা খুবই সম্ভব। এমনকি আমাদের এক্সিস্টিং শিক্ষা ব্যবস্থায়ও অধিকাংশ শিক্ষার্থীই, যারা ইউনিভার্সিটিতে যায়, তারা ছোটবেলা থেকেই ভালো করে। [তবে ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। কেউ কেউ পরের দিকে গিয়ে ভালো করে, আবার কেউ কেউ নানা কারণে 'গোল্লায়' যায়। এই গোল্লায় যাওয়া জিনিসটা আবার বিভিন্ন স্তরে হয়ে থাকে। কেউ মাধ্যমিকে গিয়ে, কেউ কলেজে গিয়ে আবার কেউ এমনকি ইউনিতে গিয়েও পথ হারায়। আমার অভিজ্ঞতামতে, এই পথ হারানোর পিছনের কারণ মেধা নয়, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বা প্রত্যাশার চাপ বা ওই টাইপের অন্য কিছু। পরের দিকে গিয়ে ভালো করা ব্যতিক্রমদেরকে ইনক্লুড করার জন্য স্পেশ্যল ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।]

আমার প্রস্তাব মূলত মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশে যেটা হচ্ছে, প্রাইভেট ইউনির কল্যাণে হোক আর টিউটরের ঘসামাজায় পাবলিক ইউনির ভর্তিতে ভালো করার জন্য হোক, টাকা থাকা না থাকার সাথে উচ্চতর পড়াশোনা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। পথ হারানো মেধার পিছনে অর্থনৈতিক কারণটাও একটা বড়ো নিয়ামক। প্রাইমারি লেভেলে এই বৈষম্যটা তুলনামূলকভাবে কম। সুতরাং রাষ্ট্র যদি এক্ষেত্রে মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসে, তাহলে অনেক মেধার অপচয়ই রোধ করা যাবে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

গৌতম এর ছবি

আপনি লেভেলে এটা যে সম্ভব সে ব্যাপারে নিশ্চিত হচ্ছেন কীভাবে বুঝতে পারছি না, তবে সব দেশেই একটা লেভেল পর্যন্ত— অন্তত প্রথম আট থেকে দশ বছর সবাইকে একই লেভেলে বেসিক এডুকেশন দেওয়ার কথা বলা হয়। বিভাজনটা তার পরই শুরু করতে বলা হয় যখন শিক্ষার্থী নিজে সে বিভাজন থেকে নিজের গন্তব্য বেছে নিতে পারে। আমাদের দেশে এটা আরও পরে করা দরকার, কারণ শিক্ষার মান। নানা গবেষণা থেকে দেখা গেছে, আমাদের দেশে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পর শিক্ষার্থীরা গড়ে তৃতীয় শ্রেণীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে। আবার পঞ্চম শ্রেণী পাশ করার পরও এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী সাক্ষরতার দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। সুতরাং এই পর্যায়ে আমাদের দেশে এই বিভাজনটা করা উচিত নয় বলেই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি।

তবে মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার যাতে নিশ্চিত করা যায়, সে ব্যাপারে আপনার সাথে একমত। সেটার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটা মেকানিজম তৈরি করা দরকার। আমাদের যে সমস্ত সিস্টেম আছে, সেখানে নানা ধরনের ফাঁকফোকর রয়েছে, যার কারণে মেধার সর্বোচ্চ ব্যবস্থাটা করা যাচ্ছে না। সেটাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

বইখাতা এর ছবি

সমাপনী পরীক্ষার চিন্তাভাবনা যারা করেছেন, তারা নিশ্চয় এর অনেক সম্ভাব্য সুফল ভেবেই করেছেন, যদিও পঞ্চম শ্রেণীর বাচ্চাদের ওপর একটা পাবলিক পরীক্ষার চাপ দেয়াটা আমার কেন জানি ঠিক পছন্দ হয়নি - নিজে পঞ্চম শ্রেণীতে থাকতে কেমন বোধ করতাম সেটা চিন্তা করেই বললাম। তবে আখেরে এর ফল ভাল হবে এমনটাই আশা করি। কিন্তু কিছু প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে ঠিক পরিষ্কার না। যেটা আপনার লেখাতেও এসেছে দেখলাম। এদেশের অনেক অভিভাবকেরই হয়তো সামর্থ্য নাই উপজেলা সদরে ছেলেমেয়েদের পাঠিয়ে, আনুষাঙ্গিক অন্যান্য খরচ বহন করে সমাপনী পরীক্ষা দেওযানোর। তাদের ছেলেমেয়েদের কী হবে ? তারা কি স্রেফ ঝরে পড়বে? সমাপনী পরীক্ষা দিতে পারলো না বলে ? এটা কি ঠিক হলো ? আর এই পরীক্ষার সনদই বা ঠিক কী কাজে লাগানো হবে ? বুঝতে পারছি না, অষ্টম শ্রেণীতে কি এরকম পাবলিক পরীক্ষা নেয়া যায় না ? পঞ্চম শ্রেণীর বদলে ? হয়তো যেটা এখন চালু হলো, এর ভালো কোনো বিকল্প পাওয়া যায়নি। তবে আশা করছি, এর ফলাফল ভালোই হবে, এই পরীক্ষার কারণে কারো শিক্ষা জীবনে কোনো জটিলতা আসবে না।

গৌতম এর ছবি

এই পরীক্ষার কারণে শিক্ষাজীবনে কোনো জটিলতা না আসুক, সেটাই আশা করি। এমনিতে সিস্টেমের উদ্দেশ্যটা ভালো, কিন্তু উদ্দেশ্য ভালো থাকা আর উদ্দেশ্য অনুযায়ী সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্যে পার্থক্য অনেক। ফলে সম্ভাব্য সুফলের কথা চিন্তা করে সমাপনী পরীক্ষা চালু করা হলেও লিমিটেশনগুলোর কথা ভাবা দরকার আরও গভীরভাবে। মানুষের সামর্থ্যকে আমলে নেওয়া এসব ক্ষেত্রে বড় ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। কর্তৃপক্ষ সেটা বিবেচনা করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে খুব ভালো একটি কাজ হতো সেটা।

আপনাকে ধন্যবাদ।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।