বাজার বড়ই মন্দা

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: শনি, ২২/১২/২০০৭ - ১০:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গতকাল চ্যানেল আইতে ঈদের অনুষ্ঠান দেখছিলাম। দুপুরের দিকে বেশ ভালো বাংলা ছবি দেখাচ্ছিলো নাম নিরন্তর, আবু সাঈদের চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা। বেশ জমিয়ে বসেছিলাম --- অবশ্য জমিয়ে বসতে যা বোঝায় তা ঠিক হয়ে উঠছিলো না। ১৫ মিনট অন্তর দীর্ঘমেয়াদী বিজ্ঞাপণ দেখতে গিয়ে স্বল্পমেয়াদী ছবি দেখা একটা কসরৎ হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো। তবে গতকালই আবিষ্কার করলাম এই দীর্ঘমেয়াদী বিজ্ঞাপণ প্রদর্শনেরও একটা উপকারী দিক আছে। আসলে সময়টা তো ছিলো দুপুর সাড়ে তিনটার পর --- আর খেয়াল করলাম ছবিটা চলবে প্রায় সন্ধ্যা সাতটা অব্দি। একটু ভাবনায় পড়েছিলাম, ছবিটা যে দেখতে বসলাম তো রাঁধবো কখন। কিন্তু মুশকিল আসান করলো বিজ্ঞাপণ ব্রেক। প্রতি ১৫ মিনিট পর চার কি পাঁচ মিনিটের ব্রেক। এই ব্রেকে-ব্রেকেই মোটামুটি ডাল একটা ভাজি আর ভাত নামিয়ে ফেললাম, অথচ ছবির কিছুই মিস করলাম না।

যাই হোক, এই প্রসঙ্গে কিন্তু লিখতে বসিনি, লিখতে বসেছিলাম একেবারেই অন্য চিন্তা মাথায় নিয়ে। মানে ছবি দেখার মধ্যেই খবর-বিরতি হলো। খবরের একটি অংশে চোখ এবং কান আটকে গেলো। খবরটা ছিলো কোরবানীর গরুর বাজার। এবারে কোরবানীর বাজার নাকি বড়ই মন্দা, তাই ক্রেতাদের হাসি আর বিক্রেতাদের বেজার মুখ। তো খবরে প্রসঙ্গিকভাবেই বাজার মন্দার নমুনা দেখানো হলো। একটা বিশাল দেহী কালো গরু দেখিয়ে বিক্রেতা যার পর নাই মুখ কালো করে বললেন যে, এই গরুটার দাম ১০ লাখ টাকা ছিলো কিন্তু বিক্রি বাট্টা নাই বলে তাকে ৭ লাখে নামিয়ে আনতে হয়েছে। দাম এতোটা কমানোর পরেও সকাল থেকে এই দামে মাত্র একটা গরু তার বিক্রি হয়েছে।

খবর প্রচারে একটা ঘাটতি আমাকে পীড়া দিলো। আসলে এই ৭ লাখ টাকার গরুটা দেখানোর পাশাপাশি যে এরকমই আরেকটি গরু একই দামে কিনে এই ঈদে দাও মারলেন তাকেও দেখানো উচিৎ ছিলো। একবার মনের সাধ মিটিয়ে দেখতাম।

কি বিচিত্র দেশ আমাদের। যেদেশে এক বিশাল সংখ্যক মানুষ প্রতি রাতে আধপেটা বা শূন্য-পেটা হয়ে ঘুমাতে যায় সেই একই দেশে কিছু সংখ্যক মানুষের রুচি হয় ৭ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানীর গরু কিনতে। তাও তো এখন বাজার মন্দা বলে কথা, নয়তো ১০ লাখেই রফা হতো। কী অশ্লীল!
আমরা এতোটা লাজ-লজ্জাহীন হলাম কবে --- সেটা ভাবতে গিয়ে মনে পড়লো, কোরবানীর গরুর দরদাম নিয়ে সূক্ষ্ম প্রতিযোগিতা তো ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি। গরু কিনে বাড়ি ফেরার পুরো পথটুকুই নাকি ‘কত দিয়া লইলেন’ টাইপ প্রশ্নের ভিতর দিয়ে যেতে হয়। মনে পড়ে আমার ভাই যখন ১৫/১৬ বছরের হলো সেও আমাদের দ্বারোয়ান ভাইয়ের সাথে গরু কিনতে যেতো মহা উৎসাহে। কিন্তু আমার ভাই যেতে চাইলেই দ্বারোয়ান ভাইয়ের মেজাজ-মর্জি ভালো থাকতো না। কারণটা হলো ভাইয়া নাকি দাম কমিয়ে বলে আর সেটা তার একেবারেই পছন্দ না; সে বেচারা চেষ্টা করে দামটা একটু বাড়িয়ে টাড়িয়ে বলতে। কিন্তু ভাইয়া যে দাম কমিয়ে বলতো সেটা লজ্জায় না বরং আরেক ধরেনর বাহাবা পাওয়ার লোভে। দাম কমিয়ে বললেই লোকে বলতো, ‘জব্বর জিতসেন, এতো শস্তায় পাইলেন কেমনে’ --- আর তাতেই সে পরম আত্মপ্রসাদ লাভ করতো। কিন্তু এতে দ্বারোয়ান ভাইয়ের মন ভরতো না, যতোই বলা হোক ‘দাম বাড়ায়া বলেন কেন... এতো দাম দিয়া এই গরু কিনলে তো মানুষ আমাদের বেকুব ভাববে’। তার উত্তরে সে অম্লান বদনে বলতো, ‘বেকুব ভাবলেও টাকাঅলা বেকুব ভাববো’।

টাকাঅলা বেকুবে আমাদের দেশ ছেয়ে গেছে নাকি লাজ-লজ্জাহীন টাকাঅলায় দেশ ছেয়ে গেছে সেটাই ভাবছি, নইলে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ এই সিডার আক্রান্ত সময়েও কিছু মানুষ ৭ লাখ টাকা দিয়ে কোরবানীর গরু কেনে, খায়, আত্মীয়-স্বজন আর বন্ধু-বান্ধবদের খাওয়ায় এবং অত্যন্ত আত্মতুষ্টির সাথে গরুর দামটা বয়ান করে। ধিক্!

লেখক: অতন্দ্রিলা


মন্তব্য

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।